কাশফুলের মেলা পর্ব ৩ || ভালবাসার গল্প

কাশফুলের মেলা পর্ব ৩
Nusrat jahan Sara

ইশানকে হঠাৎ এতোটা কাছে দেখে আরশি ঘাবড়ে গেলো।জলদি নিজের শাড়িটা ঠিক করে একটা শ্বাস টানলো।ইশান বেশ শান্ত গলাতেই বলল,
—-এই মেয়ে ভালো করে কাপড় মেইনটেইন করতে পারোনা।আর এই শাড়িটাই বা পড়েছো কাকে জিজ্ঞেস করে।আমি কী তোমার জন্য শাড়িগুলো কাবার্ডে সাজিয়ে রেখেছিলাম?এগুলো এক্ষুনি খুলে এসো আমি তোমার জন্য জামা নিয়ে আসছি।
ইশানের নরম কন্ঠস্বর শুনে আরশির মনের ভয় কিছুটা দূর গেলো।এতক্ষণ তো তার হৃৎপিণ্ড দ্রুতগতিতে কম্পন হচ্ছিলো এই না ইশান ওকে থাপ্পড় দিয়ে বসলো।ইশান মায়ের কাছ থেকে লাগেজটা নিয়ে এসে আরশির সামনে ছুড়ে মারলো।

—-এক্ষুনি শাড়িটা চেঞ্জ করে নিজের জামা বা শাড়ি পরে এসো।আর তোমার পরনের শাড়িটা যেখানে ছিলো সেখানে আবার আগের মতো রেখে দিবে। আমি বাইরে যাচ্ছি।
ইশান চলে যাওয়ার পর আরশি মুখটা গোমড়া করে নিলো।আরশির কেনো জানিনা শাড়িটা খুলতে একদমি মন মানছেনা।শাড়িটাতে ইশানের গায়ের গন্ধ লেগে আছে।হয়তো কাবার্ডের সব কাপড় ইশানের ছিলো তাই শাড়িগুলোতেও ইশানের গায়ের গন্ধ বসে গেছে। অনিচ্ছা থাকা সত্বেও আরশি শাড়িটা চেঞ্জ করে আগের জায়গায় রেখে দিলো।
সবকিছু ঠিকঠাক করে সে নিচে গিয়ে দেখলো ইশানের মা খাবার বেড়ে ডাইনিংয়ে রাখছেন। আরশি আর এগুলো না শাড়ির রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ইশানের মা একবার আরশির দিকে তাকিয়ে গোমড়া মুখ করে বললেন,,,,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

—-আরশি খাবার খেতে এসো সব রেডি হয়ে গেছে।আর ইশানকেও ডেকে দাও।
আরশি একবার নিচে আরেকবার উপরে তাকিয়ে ইশানে ডাকতে চলে গেলো।একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে ইশান।কী যেন গভীর ভাবে ভাবছে। আরশি একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,,,,
—-আপনার মা আপনাকে খাওয়ার জন্য ডাকছেন নিচে আসোন খাবেন।
—-খাবোনা।
—-সে কী কেনো খাবেননা???
তোমাকে কী সবকিছু বলতে হবে নাকি৷ যাও এখান থেকে।
আরশি মন খারাপ করে চলে গেলো। ইশান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো মনে করতে লাগলো তিনবছর আগের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।
সেদিন আরশিকে খুঁজে না পেয়ে ইশান বাড়ি ফিরে ঠিকি কিন্তু নিজেকে চারদেয়ালে বন্দি করে নেয়।দেয়ালে টাঙ্গানো আরশির বড়ো একটা ফ্রেমের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো সে৷ মা বাবার সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না।বন্ধুদের সাথে কথা বলতো না মিশতো না।সবকিছুতেই যেন ভালো না লাগা কাজ করতো। এভাবেই কেটে গেলো আরও তিন বছর ইশান সেরকমি আছে।ইশানের মা বাবা ঠিক করলেন নিজের ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরবেন ইশানকে এরকম অবস্থায় আর দেখতে পারছেননা উনারা।।দেশে ফেরার কিছুদিন পর ইশান একটা রেস্টুরেন্টের সামন দিয়েই যাচ্ছিলো হঠাৎ আরশিকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তারাতাড়ি কারটা আরশি সামনে থামিয়ে বেশ কয়েকবার হর্ন বাজালো।আরশি বিরক্ত হয়ে একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। এতে ইশানের কষ্ট হলেও সে কষ্টাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,,,

—-আরশি উঠবে?
—-তোমার মতো চরিত্রহীন লম্পটের গাড়িতে উঠবো ভাবলে কী করে। আমার জন্য কী গাড়ির অভাব পড়েছে নাকি? এক্সিডেন্ট করে মরে যাব তারপরও তোমার গাড়িতে উঠবনা আমি।
হঠাৎ একটা ছেলে কোথা থেকে এসে আরশির কাছে এসে দাঁড়ালো৷ আরশি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আরশির মুচকি হাসি ইশানকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
—-এখন এসেছো?? কতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম জানো।
—-স্যরি স্যরি।আচ্ছা এই ছেলেটা কে আর কী বলছিলো???
—-আর বলুনা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই এদের জিভে জল চলে আসে।দেখনো আমাকে লিফ্ট দিতে চাইছে একরকম সুযোগ নেওয়া যেটাকে বলে। চলো তুর্ব এখানে থেকে লাভ নেই।এমন ছেলেদের দেখলে ঘৃণায় শরীর রি রি করে৷
তুর্ব ছেলেটা ইশানের কাছে এসে গ্লাস দিয়ে উঁকি মেরে বলল,,,,,
—-কী ভাই সমস্যা কী আপনার? আমার গার্লফ্রেন্ডকে লিফট দেওয়ার কথা বলছিলে কেনো? মেয়ে দেখলেই সুযোগ নেওয়ার ইচ্ছে জাগে তাই না??
ইশান কিছু না বলে রেগে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।এমন অপমান সে চাইলেই ভুলতে পারবেনা৷ চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু মুক্তোর দানার মতো বিঁধে আছে।ইশান অনামিকা আঙুল দিয়ে চোখের জলটা মুছে নিলো ঝরার আগেই ।
ডাইনিংয়ে আরশি,আর ইশানের মা বাবা বসে আছেন৷ ইশানের বাবা অনেক্ষন যাবত কিছু বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু কী দিয়ে শুরু করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন,,,

—-আরশি তোমাকে একটা সিক্রেট বলি???
—-হ্যাঁ বলুন।
—-আমি তোমার বাবার আপন ভাই না৷
আরশি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা৷ ও অবিশ্বাস আর প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে ইশানের বাবার দিকে।উনি আবার বলতে শুরু করলেন,,,
—-আমি তোমার বাবার রক্তসম্পর্কহীন দূর সম্পর্কের এক ভাই। খুব কম বয়সেই আমি আমার মা বাবা হারাই।আর কোনো দিশা না পেয়ে তোমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেই।তোমার দাদাও আমায় ফেলে দিতে পারেননি নিজের ছেলের মতোই আমাকে আগলে রেখেছেন ভালোবেসেছেন।তোমার বাবা আর আমি বেশি দিনের ছোটবড় নই ওই ধরো ছয়মাসের ব্যবধান।আমি আর আশরাফ এক সাথে বড় হয়েছি। আমার মনে হলো বিষয়টা তোমার থেকে আর হাইড করা দরকার নেই তাই বললাম।
আরশি একেবারে নির্বাক হয়ে গেছে।সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা ইশান ওর আপন চাচাতো ভাই নয়। ইশানের মা এখনো ছেলেকে আসতে না দেখে ওকে ডাকতে চলে গেলেন। দুইহাত ভাজ করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে খাটের দিকে তাকিয়ে আছে ইশান। খাটের উপরে আরশির ওরনাটা পরে আছে। ইশানের মা ছেলের হাতে হাত রাখতেই সে মায়ের দিকে তাকালো।

কাশফুলের মেলা পর্ব ২

—-খেতে আসলে না কেনো।
—-এমনি মা।
—-চলো
ইশানের মা ইশানকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেলেন ডাইনিংয়ে। ইশান প্লেটে রুটি নিতে নিতে বলল,,,
—-মা এখন আর তোমার কাজ করার দরকার নেই।বাড়িতে তো এখন আরেকজন আছেই।এখন থেকে তুমি রেস্ট করবে।আর ও আজ দুপুর থেকে রান্না করবে।আশা করি ওর হয়ে কেউ সুপারিশ করবেনা।
আরশির ভিষণ রাগ হচ্ছে ইশান জানে যে সে রান্না করতে জানেনা তবুও জেনে বুঝে এমন করছে।অন্যসময় হলে ওকে বুঝিয়ে দিতো কিন্তু এখন সে পড়ে গেছে এক মহা মুসিবতে।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। পাতায় পাতায় ঝাপ্টা ঝাপ্টি করছে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।আরশি এক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে আর ইশান ওর থেকেই আরেকটু দূরে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ প্রচন্ড রকমে বাজ পরলো আরশি চিৎকার দিয়ে ভয়ে ইশানকে দুহাত দিয়ে ঝাপ্টে ধরলো।
—-প্লিজ আমাকে ছাড়বেননা বজ্রপাত খুব ভয় পাই আমি৷

বলার সাথে সাথে আরেকটা বাজ পরলো। আরশির আরও শক্ত করে ইশানকে জড়িয়ে ধরলো।আরশিকে বুকে পেয়ে ইশান ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে তাছাড়াও আরশির গরম শ্বাস ইশানের বুকের মধ্যে পরছে ইশান মুহুর্তেই এক ঘোরে চলে গেলো। সেও আস্তে আস্তে নিজের হাত আরশির পিটে রাখলো।ইশানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে আরশি কেঁপে উঠলো।কেমন এক শীতল শিহরণ বয়ে গেলো তার শিরায় উপশিরায়। ইশান অতি স্লো মোশনে আরশির মুখ ওর বুক থেকে তুলল আরশি এখনো তাকাচ্ছেনা ইশানের দিকে।ইশান আস্তে আস্তে আরশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। একরাশ আবেশে আরশি চোখ বন্ধ করে নিলো।আরেকটা বাজ পরার সাথে সাথে দুজনই চিটকে দূরে সরে গেলো। ইশান নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে আরশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আর আরশি কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফ্লোরে তাকিয়ে আছে।

কাশফুলের মেলা পর্ব ৪