কাশফুলের মেলা পর্ব ৫ || রোমান্টিক গল্পের লিংক

কাশফুলের মেলা পর্ব ৫
Nusrat jahan Sara

তুর্ব একটা মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।এতটাই আপত্তিকর অবস্থা যে কুকুর দেখলেও মুখ ফিরিয়ে নিবে।ঘৃনায় আরশির শরীর রি রি করছে এগিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো সে।এতক্ষণ ধরে আরশিকে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশানের কিছুটা খটকা লাগলো সেও এগিয়ে গিয়ে দেখতে যাবে তার আাগেই আরশি ওকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
—-তুমি দরজা বন্ধ করে দিলে যে?
—-তো কী করব?আচ্ছা হানিমুনে মানুষ কেনো আসে?
—-রোমান্স করতে
—তাহলে আমরাও সেটাই করব।
—-পাগল হয়ে গেছো নাকি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
আরশি বাথরুমে চলে গেলো।শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে অনর্গল চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।চোখের সামনে আবারো ভেসে উঠছে সেই অতীত। যেদিন ইশানের সাথে আরশির বিয়ে হয় সেদিন তুর্বর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। বিয়ের কিছুক্ষণ আগে তুর্ব ফোন করে বলে ইশান নাকি তাকে খুব মেরেছে আর সে হসপিটালে আছে।এমন অবস্থা তার যে উঠতে পর্যন্ত পারছেনা । তাই সে বিয়েও করতে পারবেনা।সেদিন নিজের মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে আরশির বাবা ইশানের সাথে আরশিকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর তুর্ব প্রতিদিন আরশিকে ফোন করতো আর বলতো সে যেন ইশানের কাছে না যায় আর ইশানকে যেন স্পর্শ না করতে দেয়।সে নাকি সুযোগ বুঝে আরশিকে আবারও নিজের করে নিবে।কিন্তু আজ সে নিজেই একটা মেয়ের সাথে,,,,,,

অনেক্ষন হয়ে গেছে কিন্তু আরশি বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে না দেখে ইশান বেশ ঘাবরে গেলো। এভাবে বেশিক্ষন শাওয়ারের নিচে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
ইশান বাথরুমের দরজা চাপরে আরশিকে ডাকতে লাগলো।আরশি রোবটের ন্যায় হেঁটে হেঁটে এসে বাথরুমের দরজা খুলে দিলো। আরশিকে দেখে ইশান একদম ফ্রীজড্ হয়ে গেছে।আরশির শরীর ভিজে একাকার।পেটের উপর থেকে শাড়ি সরে যাওয়াতে তার ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে। ইশান আরশির পেটের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।আরশি ব্যাপারটা বুঝে শাড়ি টেনে পেট ঢেকে ফেলল। ইশান নিজের চোখ সংযত করে লাগেজ থেকে একটা শাড়ি এনে সেটা আরশির মুখের উপরে ছুড়ে মারল।
—-তারাতাড়ি শাড়িটা পড়ে এসো।
বেশ কিছুক্ষন পর একজন স্টাফ এসে খাবার দিয়ে গেলো।ইশান অনেক্ষন ধরেই ফলো করছে আরশি ওর দিকে বারবার তাকিয়ে থাকে।ইশান মুখে খাবার দিতেই আরশি ওর মুখে খাবার ভরে দিলো। ইশান শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছে এই মেয়েটা চাইছেটা কী?
—-এভাবে তাকানোর কী আছে? স্ত্রী তো স্বামীকে খাইয়ে দিতেই পারে।ইট’স নর্মাল।
—-হ্যাঁ স্ত্রী স্বামীকে খাইয়ে দিতেই পারে কিন্তু স্ত্রীও স্ত্রীর মতো হওয়া দরকার।আর এই যে আমার হাত দেখেছো? আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারব।তোমার কাছ থেকে এটেনশন পাওয়ার কোনো দরকার নেই।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আরশি কিছু বললনা সে মুখ ঘুরিয়ে খাবার খেতে লাগল।
রাতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ইশান হঠাৎ কপালে কারও ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে সে চকিতে তাকালো।আরশি ওর দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।ইশান একেরপর এক শক খেয়েই যাচ্ছে।
ইশান উঠে বসে আরশির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,,
—-তুমি কী চাইছো বলোতো?
—-রোমান্স
—-পাগল হয়ে গেছো তুমি? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমন করছো তাই না?
—-এসব আপনি কী বলছেন?
—-আমি কিছু বলতে চাইছিনা আরশি তুমি সরো আমি ঘুমাবো।
—-তো ঘুমান না আমি আপনাকে মানা করেছি নাকি?
ইশান একটা বালিশ হাতে নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো।
রাত বারোটা ছুঁইছুঁই ইশানের চোখে সবেমাত্র ঘুম এসে হানা দিয়েছিলো তখুনি আরশির ফোন বেজে উঠে। এতেরাত্রে ফোন দেখে ইশানের কিছুটা খটকা লাগলো।সে ঘুমানোর ভান করে রইলো।আরশি ফোনটা রিসিভ করে কী যেন বলল তারপর একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। আরশি রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সাথেসাথে ইশানও বেড়িয়ে গেলো।আরশি রিসোর্টের এক পাশে কতগুলো নারকেল গাছ আছে সেখানে গেলো।ইশান সবকিছুু উপর থেকে দেখছে একটা ছেলেকে আরশির সাথে দেখে সে ভীষণ ভাবে রেগে গেলো।ছেলেটি আরশির কাঁধে হাত রেখে কী যেন বলছে। ইশান মুখটা ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো এটা আর কেউ নয় তুর্ব। তুর্বকে দেখা মাত্রই ইশানের পায়ের রক্ত মাথায় চলে আসার উপক্রম। একরাশ রাগ আর অভিমানে সে পুনরায় এসে সোফায় শুয়ে পরলো। বেশকিছুক্ষন পর রুমে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে ইশান বুঝতে পারলো আরশি এসেছে তাই সে চোখ না খুলেই বলল,,,,

কাশফুলের মেলা পর্ব ৪

—-কোথায় গেছিলে?
—-ইশানের কথা শুনে আরশি হকচকিয়ে গেলো।নিজেকে কোনো রকমে ঠিক করে বললল,,,,
—-বাইরে বাতাস খাওয়ার জন্য গেছিলাম।
আরশির কথা শুনে ইশান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলো।
—-তা বাতাসটা কে দিয়েছিলো শুনি?
—-মানে কে আবার দিবে?বাতাস তো আল্লাহ্ই দেন।
—-চুপ একদম চুপ।মিথ্যে কথায় আল্লাহকে টেনে আনো কেনো?তুর্বর কাছে কেনো গিয়েছিলে তুমি হুম কেনো গিয়েছিলে[চিৎকার করে]
আরশি কোনো কথা না বলে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।তাতে ইশানের রাগ আরও বাড়ছে।সে আরশির গালে চড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো।
—-তুর্ব যেন কী বলেছিলো তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে তাইতো।চিন্তা করোনা ডিভোর্স তুমি পেয়ে যাবে।
—-আপনি সব সত্যি না যেনে এভাবে বলতে পারেননা
—-সেটাপ।তাহলে আজ তুমিও প্রমান করে দিলে যে তুমিও আমার মতো চরিত্রহীন।যদিও আমি চরিত্রহীননা সেটা তোমার কাছেই মনে হয়।
এবার তাহলে দেখা যাক তুর্ব আর আরশির মধ্যে কী কথোপকথন হলো।
[বারোটার সময় আরশিকে তুর্বই ফোন করে আর নিচে যাওয়ার জন্য বলে।আরশিরও তুর্বর সাথে অনেক বুঝাপড়ার বাকি তাই সেও তুর্বর সাথে দেখা করার জন্য চলে গেলো। তুর্ব তখন একটা সিগারেট খেয়ে ধুঁয়া আকাশে উড়াচ্ছে।আরশি তুর্বর কাছে গিয়ে বললল””কেনো ডাকছিলে”””

—-কেমন আছো আরশি?
—-আমি কেমন আছি সেটা তুমি জেনে কী করবে?
তুর্ব এগিয়ে এসে আরশির কাঁধে হাত রেখে বলল
—-আমার উপরে এখনো রেগে আছো। বিশ্বাস করো আমি আজও তোমাকে ভালোবাসি এখন পর্যন্ত কেনো মেয়েকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখিনি। তুমি প্লিজ ইশানকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে চলে আসো। আমি আর পারছিনা তোমাকে ছেড়ে থাকতে।
তুর্বর মিথ্যা কথা শুনে আরশি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলনা চড় বসিয়ে দিলো তুর্বর গালে।
—-চরিত্রহীন, লম্পট আমাকে কী তোর এতটাই বোকা মনে হয়।তুই যা বলবি আমি তাই বিশ্বাস করবো।তোর আর কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আমি।তুই কেমন সেটা আমার জানা হয়ে গেছে।আর যদি তোকে আমার সামনে দেখি তাহলে কিন্তু অনেক বড় কিছু একটা হয়ে যাবে মাইন্ড ইট। কথাটা বলে আরশি সেখান থেকে চলে এলো]

আরশি এখনো কিছু বলছেনা শুধু চোখের জল ফেলে যাচ্ছে আর নাক টানছে।ইশান আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় নক পরলো।ইশান দরজাটা খুলে দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে।মেয়েটাকে দেখে আরশি অতিমাত্রায় শকড্।

কাশফুলের মেলা পর্ব ৬