Love Triangle গল্পের লিংক || তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

Love Triangle part 1
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

‘ মিস ফারিহা!আপনি কিছু মনে করবেন না।আমরা আপনাকে শানের টিউটর হিসেবে রাখতে চাচ্ছি না। এখানে দুমাসের এডভান্স সহ মোট ১৫ হাজার টাকা আছে। এগুলো নিয়ে আপনি এখন আসতে পারেন।’
শান কে ম্যাথ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় তীরের মত কানে এসে বিধঁলো বাক্যগুলো।মাথা তুলে দেখলাম শানের মা মিসেস শায়লা রহমান আমার দিকে প্রচুর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।ফর্সা চেহারায় বিরক্তি ফুটে উঠেছে ভীষণভাবে।আমাকে উনার দিকে তাকাতে দেখে বিরক্তি রাখঢাকের চেষ্টা না করে ফের বললেন,

‘ নিন টাকাগুলো আর আসুন আপনি!’
আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিলাম। মিসেস শায়লা রহমান সরাসরি অপমান করছেন এটা অন্য সময় আমি হজম করার মত মেয়ে না হলেও আজ দাঁতে দাঁত চেপে হজম করার চেষ্টা করলাম।লজ্জায় অপমানে চোখ জ্বলতে শুরু করেছে ।কান্না চলে আসবে মনে হয়।সাথে আনা সাইড ব্যাগে টাকাগুলো রেখে উনার দিকে তাকালাম। এরপর ধীরে ধীরে বললাম,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ আজকের দিনটা পড়িয়ে যাই?ওর তো সামনে ফাইনাল এক্সাম আছে।’
‘ সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।শানের চাচ্চু আসছে আজ।ও এখন থেকে তার কাছেই পড়বে।আপনি দয়া করে আসুন এবার।’
এমব উত্তর শোনার পর কিছু বলার সাহস হলো না আর। এরপর কিছু বললে অভদ্র আচরণ হজম করতে হতে পারে।ব্যাগ টা হাতে নিয়ে শানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম।ও আমাদের দিকে তাকিয়ে কলম কামড়াচ্ছে।সাত বছরের শান এতকিছু না বুঝলেও এটা বুঝেছে আমি আর ওকে পড়াবো না। আস্তে করে শানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

‘ এখন থেকে ভালোভাবে পড়িয়ো হ্যা?আর দুষ্টুমি করিয়ো না।টপ রেজাল্ট করতে হবে কিন্তু।’
শান অস্পষ্ট ভাঙা ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ তুমি আর আসবে না মিস? আমাকে আর ম্যাথ পড়াবে না?’
আমি মাথা নাড়লাম।যার অর্থ না।ওর দিকে তাকিয়ে আরেকবার হাসলাম। এরপর ‘যাই’ বলে অতি দ্রুত পা চালিয়ে রিডিং রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফ্ল্যাটের দরজার দিকে এগোলাম। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে থেকে বের হতে হবে। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি। চোখ ফেটে পানি বের হয়ে আসছে।কান্না চেপে রেখে একরকম দৌড়ে থেকে বের হবো তখনই দরজার কাছে কারো সাথে সজোরে ধাক্কা লাগল। ধাক্কা খেয়ে দরজার উপরে পড়লাম। মাথায় লাগলো ও একটু। নিজেকে সামলে ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে দুহাতে চোখ মুছে তাকিয়ে দেখি একজন চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী যুবক অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।চোখে ব্লাক সানগ্লাস।ডিপ স্কাই ব্লু পলো আর প্যাল হোয়াইট প্যান্ট। আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখে সানগ্লাস টা খুলে চোখমুখে রাজ্যের অস্বস্তি‌ নিয়ে ভাঁজ করতে করতে বললো,

‘ এইই স্যরি স্যরি! তাড়াহুড়ো করে বাসায় ঢুকেছি তো সেজন্য খেয়াল করিনি আপনাকে।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে ঠিক আছে বললাম।চোখে পানি জমছে দ্রুত তাই ভালোভাবে খেয়াল করতে পারছি না তারপরও বুঝলাম এটাই হয়ত শানের চাচ্চু। ওড়নার আঁচলে চোখ মুছে বের হচ্ছি তখন পিছন থেকে সুদর্শন চেহারার মানুষটি জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কিছু মনে করবেন না,আপনি কি ভাবীর কোন রিলেটিভ? আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা আসলে।’
আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে পরক্ষনেই নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বললাম।

‘ তাহলে আপনি???’
‘ আমি শানের ম্যাথ টিউটর।আজকে এখানে শেষদিন পড়াতে এসেছিলাম।আসছি আমি।’
এইটুকু বলে ব্যাগ টা শক্ত করে ধরে বেরিয়ে এলাম। এই বিল্ডিং এ লিফট আছে যদিও, আমি লিফটে উঠলাম না আজ।ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগলাম।
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছে।এলোমেলো‌ পায়ে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছি।কান্না পাচ্ছে খুব।দুমাসের বেতন সহ তাড়িয়ে তো দিলো আমাকে।এরকমটাই কথা হয়েছিল শান কে পড়ানোর আগে।কলেজ খরচ চালানোর মত এই একটা টিউশনিই ছিলো। কালকের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত অভিশপ্ত ঘটনা আমার জীবনে কালবৈশাখীর ঝড় হয়ে নেমে এসেছে যেন।

রাত আটটার দিকে বাসায় পৌঁছালাম।গাজীপুর মেইন শহর থেকে একটু দূরে আমাদের বাসা।এক তলা একটা ভাড়া বাসায় থাকি আমরা।অটো, রিকশা কিছুই নিই নি যার দরুন ফিরতে এত দেরি হয়েছে।ভয়ে ভয়ে গেইটের ভিতরে পা রাখলাম। এমনিতেই কালকের ঐ ঘটনায় বাসার পরিবেশ গরম তার উপর আজকে এত দেরি। জানি না কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য!ঢুকেই বুঝলাম বাসায় ভূমিকম্প ঘটে গেছে এতক্ষণে।ভয়ে ভয়ে বাসার ভিতরে পা রাখতেই বুঝলাম কিছু একটা ঠিক নেই।বসার রুমে মা সোফার কাছে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।পাশেই মুন মা’কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।সেও ফোপাচ্ছে।

বাবা কোথায়? মা’কে কি মে’রে’ছে?মায়ের কাছে গিয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে মা?মা উত্তরে কিছু না বলে আরো শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।এমন সময় পিছন থেকে বাবার পায়ের আঙ্গুল পেয়ে ঘুরে দেখি বাবা তার শিক্ষক জীবনের সেই ভয়ঙ্কর বেত হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ব্যাগ টা শক্ত হাতে ধরে শুকনো ঢোক গিললাম একটা। দ্রুত পায়ে নিজের ঘরের দিকে যাব বাবা এসে চুল টেনে ধরলেন।
‘ আমি বলতেছি কি হইছে!বেজন্মা!কোন ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করে মাঝরাতে বাসায় আসছোস?তোরে আমি এইসব করতে পড়াশোনা করাই?তোর আর পড়াশোনার দরকার নাই।তোর মত বেজন্মারে বাঁচায় রাখব না আর।
মা হাউমাউ করে চিৎকা’র করে উঠলেন এসব দেখে। তাড়াতাড়ি উঠে এসে বাবার হাত থেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে গেলেন কিছুক্ষণ।

রাত দশটা পার হয়েছে কি হয়নি।রুম অন্ধকার করে জানালার কাছে টেবিলে মাথা এলিয়ে বসে আছি। চোখ থেকে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে সেদিকে খেয়াল নেই আমার। শুধু ভাবছি কালকের কথা!সেই অভিশপ্ত সময়টা যদি না আসত আমার জীবনে। তাহলে আজ বাবার এই রূপ আমাকে দেখতে হতো না হয়তোবা।কতক্ষন এভাবে ছিলাম জানিনা।হুট করে ট্রাকের তীব্র আওয়াজে ধ্যান ভাঙল।সোজা হয়ে বসে হাত দিয়ে চোখ মুছলাম।হাত নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। পুরো শরীরে ব্যথা করছে। মায়ের সাথে আমাকে যেভাবে পেরেছে বেত চালিয়েছে বাবা।চোর,ডাকাত কেও এভাবে কেউ মা’রে না।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি মুন শান্তিতে ঘুমুচ্ছে। আমার সাথে তখন ওকেও মেরেছে। ধীরে ধীরে শরীরটাকে টেনে এনে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।এক মুহূর্তের জন্য কালকের সেই দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো আবার!
কাল বিকেলে,

বৃহস্পতিবার হওয়ায় আমার টিউশন ছিলো না কাল। বিকেলের দিকে বাবা-মা মুন কে নিয়ে গেলেন শহরে শপিং করার জন্য। কিছুদিন পর ছোট খালার বিয়ে।সে উপলক্ষ্যে শপিং করার জন্য বের হয়েছে সবাই। আমি আগেই করে ফেলেছি বিধায় আর যাই নি।বাবা মা চলে যাওয়ার পর আমি বসার রুমে বসে টিভি দেখছি এমন সময় একটা ছেলে এসে ঢুকলো।ঢুকেই বললো ‘এক গ্লাস পানি পাওয়া যাবে?’
একে বাবা-মা কেউই বাসায় নেই।তার উপর এভাবে হুট করে একজন বাসায় ঢুকে পড়ায় যথেষ্ট ভয় পেয়ে গেছি।তারপরও নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,
‘ হবে। আমি দিচ্ছি দাঁড়ান।’

ডাইনিং টেবিলে পানির জগ মগ রাখা। সেখান থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলাম। ছেলেটা রুমের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে হাসিমুখে বললো ‘ ধন্যবাদ।’ আমি জবাবে কিছু বলব এমন সময় পাশের বাসার সোলেমান চাচা সহ আরও কয়েকজন হৈ হৈ করে ঢুকলো। চেঁচামেচি শুরু করলো আমাদের দুজনকে কথা বলতে দেখে। রোকসানা খালা এক দলা থুতু ফ্লোরে ফেলে বললেন,

‘ ছিঃ আস্তাগফিরুল্লাহ! এইসব কি! আমি তো আসমার মেয়েটাকে খুব ভালো মনে করতাম।মা তো জীবনেও এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করে না।আর তার মেয়ে এভাবে ফাঁকা বাড়িতে নাগর ডাকে।’
আর কিছু শুনার শক্তি পাচ্ছি না।মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।অকারণেই ফেঁসে গেছি।ছেলেটা ওদের সবাইকে শত বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।এরপর………..

Love Triangle part 2