Love Triangle part 10

Love Triangle part 10
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

পাস্তার উপর চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করছি শুধু। খেতে পারছি না। ব্যাপারটা সবাই লক্ষ্য করেছে মনে হয়।আপু কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে,কি হয়েছে। আমি শুধু হেসেছি কিছু বলিনি মুখে। এমন সময় ক্যাপ্টেন অর্ক আমাকে বললেন,
‘ কি ব্যাপার?খাচ্ছো না যে?’
আমি মুখ তুলে তাকালাম।কি বলব বুঝতে পারছি না। কোনোরকমে মুখে হাসি টেনে বললাম,
‘ ক্ষিদে নেই তো সেজন্য ই। আচ্ছা আমি একটু ওইদিকে হাঁটাহাঁটি করে আসছি। আপনারা খান।’

এক মুহূর্ত ও নষ্ট না করে সাথে সাথে উঠে নিচে নেমে এলাম সিঁড়ি বেয়ে।বেশ বুঝতে পেরেছি সবাই এতে অবাক হয়েছে।হোক! আমার ভিতরে জ্ব’ল’ছে এটা কিভাবে বুঝাব।খাবার অর্ডার দেওয়ার পর, ক্যাপ্টেন অর্ক কথার এক ফাঁকে ডাক্তার ফাইয়াজ কে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ আজ নাকি দেখা করেছো উনার সাথে? আমি জানলাম না কেন?বাগড়া দিতাম নাকি ভাই?’
ডাক্তার ফাইয়াজ ও হাসতে হাসতে বলেছে, ‘ হুট করে হয়ে গেছে আর কি। পরেরবার অবশ্যই আপনি থাকবেন।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার বলতে কাকে বুঝিয়েছে এটা না বুঝলেও এটুকু বুঝেছি গার্লফ্রেন্ড হবে হয়ত।যদি উনার গার্লফ্রেন্ড ই আছে তাহলে আমাকে এভাবে এপ্রোচ করতে যাচ্ছিলেন কেন? বাসায় এসে কাহিনী করা, বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলতে চাওয়া এইসব কি নাটক নাকি?নিচে এসে চেয়ারে বসে পড়লাম। কান্না পাচ্ছে।এত ননীর পুতুল কেন হয়েছি কে জানে। অল্পতেই কষ্ট পাচ্ছি। প্রাণপণ কান্না থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে আসল আপনা থেকেই। আমি শুধু ভাবছি উনি যখন কমিটমেন্টে আছেনই কারো সাথে তাহলে আমার সাথে এমন করলেন কেন।তার উপর আমি আপুকে সব বলে দিয়েছি।আপু কোন রিয়েক্ট করেনি ক্যাপ্টেনের কথায়।তার মানে আপু ও জানে তার সিনিয়রের কমিটমেন্টের বিষয়ে।আপু ও কিছু বলেনি। এমন করলো কেন আমার সাথে।একে তো পরিবারের জন্য সারাক্ষণ কষ্ট ই পাচ্ছি, এখন এইভাবে আমাকে কষ্ট না দিলে চলত না তাদের?

‘ ম্যাডাম কি করছেন এখানে?’
ক্যাপ্টেনের গলা।চমকে উঠলাম একরকম। তড়িঘড়ি করে দুহাতে চোখ মুছতে গিয়ে কাজল লেপ্টে ফেলেছি খেয়াল করিনি। আঁচল দিয়ে চোখ মুখ ভালো করে মুছতে মুছতে উনি আমার পাশে এসে বসলেন। আমি স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করলাম।উনার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম,
‘ এইই প্রকৃতি দেখছি।কি সুন্দর ওয়েদার, ঠান্ডা বাতাস!’
ক্যাপ্টেন সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। দুষ্টুমির ভাব করে চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ প্রকৃতি দেখলে এভাবে সাজ নষ্ট হয় বুঝি? ভালোবেসে কাজল টুকু ও নষ্ট করে দিয়েছে দেখছি।অবশ্য খারাপ লাগছে না তোমাকে!’

আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে!ধুর! লজ্জায় পড়তে হলো এখন।ধরা পড়েই গেছি যখন তখন আর কথা বাড়ালাম না। চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন,
‘ মন খারাপ কি নিয়ে?’
‘ এমনিই। কোনো কারণ নেই। আসুন ওইদিকে। আপুদের কাছে যাই।’
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ক্যাপ্টেন সাহেব ও বাক্যব্যয় না করে চলে আসলেন আমার সাথে।আপু আর ডাক্তার ফাইয়াজ আমাদের দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।বাইরে বের হয়ে এলাম সবাই।গাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়েছি। ড্রাইভার বের হয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। আমি বসতে যাব এমন সময় ক্যাপ্টেন সাহেব বললেন,
‘ কিছু মনে না করলে আপনাকে ক্যাব ডেকে দিই? আমরা একটু ফাইয়াজের হসপিটালে যাব। আপনি বাসায় চলে যান। কেমন?’

আমি থেমে গেলাম। প্রচন্ড লজ্জা পেলাম গাড়িতে উঠতে গিয়ে।উনি হাত বাড়িয়ে একটা ক্যাব থামালেন। আমি একরকম দৌড়ে গেলাম ক্যাবের কাছে। ফাঁকা ক‌্যাব।উঠে বসলাম। ঠিকানা বলে বললাম সেদিকে যেতে দ্রুত। ক্যাব চলতে শুরু করেছে।এত পরিমাণ অপমানিত বোধ হচ্ছিল নিজের। লজ্জায়,অপমানে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।কান গরম হয়ে গেছে। কোনোরকমে নিজেকে ঠিক রাখতে চেষ্টা করলাম শুধু।
ঘন্টা দেড়েক পর ক্যাব নানার বাড়ির রাস্তার সামনে এসে থামলো। আমি নেমে বাইরে বের হলাম।ইফাদ ভাইয়া রাস্তায় কি জন্য দাঁড়িয়ে ছিল জানিনা।ভাইয়া কে কোনোরকমে বললাম ভাড়া টা দিয়ে দিতে। ভাইয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুই এভাবে একা কেন?রিমি কোথায়?’

আমি জানি না বলে প্রায় দৌড়ে বাড়ির দিকে গেলাম।বাসায় অনেক মেহমান।সবাই ব্যস্ত তাই আমাকে চোখে পড়লো না কারোর।সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একরকম দৌড়াতে দৌড়াতে রুমে এসে দরজা বন্ধ করলাম।বেডের উপরে আছড়ে শুয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। এতক্ষণ কান্না থামিয়ে রাখতে পেরেছিলাম এখন আর পারিনি। জীবনে অনেক অপমানিত হইছি আব্বুর কাছে কিন্তু এরকম অপমানিত কখনও হইনি।এত লজ্জা এত অপমান কেউ করেনি আমাকে।রিমি আপু ও কিছু বললো না। কেন বললো না? আমাকে কেন নিয়ে গেল সাথে?বাপ গরীব সেজন্য সুযোগ বুঝে এটা বুঝিয়ে দিলো হয়ত আমাকে ওরা।খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম।যত কান্না থামাতে চাইছি তত বেশি কষ্ট হচ্ছে।এমন সময় দরজায় ধাক্কা পড়লো।

‘ আহি দরজা খোল।’
ইফাদ ভাইয়ার গলা। পিছনে পিছনে উঠে এসেছে। আমি দরজা খোলার মত অবস্থায় নেই।না কান্না থামাতে পারছি আর না উঠতে। হেঁচকি উঠে যাচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে।আর একটা বাজে অসুখ আছে আমার। খুব বেশি কান্না করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।এখন হয়ত তাই হচ্ছে। ভাইয়া বেদম ধাক্কা মে’রে যাচ্ছে দরজায়।ভেঙেই ফেলবে এখন না খুললে। আমি উঠে চোখ মুছলাম। এরপর দরজা খুলে বললাম,
‘ ডাকছো কেন?’

ভাইয়া আমাকে আগাগোড়া লক্ষ্য করলো একবার। এরপর শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘ কি হয়েছে তোর?সত্যি করে বল।কেউ কিছু বলেছে?রিমি কোথায়?’
মায়ের পর ইফাদ ভাইয়া ই সবচেয়ে আপন আমার।ভাইয়া কে কিছু বলতে গিয়ে চোখে পানি জমছে শুধু। আমি কোনোরকমে নিজেকে সামাল দিতে বললাম,
‘ ও কিছু না। আমার খারাপ লাগছে খুব।একটু একা থাকতে চাই।প্লিজ!’
দরজা বন্ধ করে দিলাম আবার। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।কি করব না করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। গোসল করে আসলে যদি একটু ভালো লাগে এই আশায় কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম।

সন্ধ্যা হব হব করছে। আমি আমার রুমের বেলকনিতে দোলনায় দোল খাচ্ছি। কার্গো আর হুডি পরা। ঘন্টা লাগিয়ে গোসল করেছি।বের হয়েই নাপা এক্সট্রা খেয়েছি নাহলে জ্বর এসে যাবে।রিমি আপু ফিরেছে কিছুক্ষণ আগেই। আমার কাছে এসেছিলো সাফাই গাইতে আমি পাত্তা দিই নি। মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বেলকনিতে চলে এসেছি।দরজা ধাক্কাচ্ছিল খুব কিন্তু আমি পাত্তা দিইনি ওদিকে।যে দু দিনের বরের জন্য আমার মান সম্মান নিয়ে ভাবে না তাকে পাত্তা দেওয়ার কোনো কারণ নেই।আপু ফেরার আগেই আপুর রুম চেঞ্জ করে আমার রুমে শিফট হয়েছি।

Love Triangle part 9

এই বাড়িতে আমার আলাদা একটা রুম আছে।সেই রুমে থাকতাম না আমি।আপু ই আছে,সেই আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী।তার সাথেই থাকতাম।মিহি আপু,মৌ ওদের সাথে বেশি মাখামাখি ভাব ছিল না কোনোকালেই।অথচ সবাইই আমাকে আদর করে। রিমি আপুতে অন্ধ হয়ে গেছিলাম আমি।যার প্রতিদান সে এভাবে দিল। আমার অপমানের কথা ভাবলো ও না একটাবার।আর আমিও না!যার বাপ গরীব, এখনও নিজের শশুরবাড়ি দেখেনি তার আবার মান অপমান আছে নাকি?আপু এতদিন দয়া দেখিয়েছে আর আমি ভেবেছি আমি তার সবচেয়ে প্রিয়জন। ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসি, ডাক্তার ফাইয়াজ,আর আপু সবাই আজকে তাদের স্বরূপ দেখিয়ে আমার মন থেকে কর্পূরের মত উবে গেল। যাওয়ার সময় দিয়ে গেল এক বুক অসহ্য যন্ত্রণা!যা না সহ্য করা যায় আর না ভুলে ফেলা যায়!

Love Triangle part 11