Love Triangle part 12+13

Love Triangle part 12+13
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

গাড়ি নানার বাসার অভিমুখে এগিয়ে চলেছে। আমি ড্রাইভারের সিটের পাশে মুর্তির মত বসে আছি। চোখের দৃষ্টি সামনের দিকে। ক্যাপ্টেন সাহেব ড্রাইভ করছেন।রিমি আপু আর ডাক্তার ফাইয়াজ ওরফে দুলাভাই পিছনের সিটে বসেছে। আমার মাথা বনবন করে ঘুরছে শুধু।একের পর এক শক,আপুর এরকম বেইমানি আমি কেন জানি না আর নিতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ আগে,

আপু যখন ডাক্তার ফাইয়াজ কে বিয়ে করেছে বললো তখন খুব বেশি অবাক হলাম।ও না ক্যাপ্টেনের হবু বউ! আমি ডাক্তারের দিকে তাকালাম। আপু কেই বিয়ে করার ছিল তাহলে আমার সাথে ওগুলো কেন করলো?বাবাকে আমার প্রতি বিষিয়ে তুললো কেন?পুরো এলাকায় আমার বদনাম করে ছাড়লো।ঐ নোট, প্রেসক্রিপশন,ফোন নাম্বার,বাসার সামনে দাঁড়ানো এসব কি শুধু শুধুই?কেন করলো এসব? আমার চোখে পানি চলে এসেছে। দুহাতে চোখ মুখ ঢেকে ফেললাম। ডাক্তার মেবি আমার মনের অবস্থা বুঝলো। যেহেতু সে নিজেই এসবের মূলে! আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে আসলো। এরপর থেমে থেমে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ আমাকে ভুল বুঝো না আহি। ইচ্ছে করে কিছু করিনি তোমার সাথে। আগেও বলেছি এখনও বলছি। তোমাকে আমি সবটা খুলে বলছি একটু সময় দিবে?প্যানিক করবে না প্লিজ!’
আমি চোখ তুলে তাকালাম।পানি মুছে মাথা নেড়ে বললাম,’ ঠিক আছে। বলুন। আমি শুনছি।কি কি মিথ্যাচার আর শক দেওয়া বাকি আছে সবই বলুন।’
ডাক্তার ফাইয়াজ ততক্ষণে কাচুমাচু হয়ে গেছে। পূর্বের চেয়েও নরম গলায় বললো,
‘ না আহি। মিথ্যাচার আর করছি না। সত্যি বলব সব।

আসলে আহি,রিমি আর আমি রিলেশনশিপে আছি গত তিন বছর যাবত।প্রপোজাল টা আমিই পাঠিয়েছিলাম তাই যখন তোমার নানা হুট করে অর্ক স্যারের সাথে রিমির বিয়ে ঠিক করলো তখন পাগল পাগল লাগছিলো।কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে তোমার নানা যেই পরিমাণ রাগি মানুষ,রিমি জানাতে ও ভয় পাচ্ছিল যে আমরা রিলেশনশিপে আছি। তুমি বোধহয় জানো,তোমার নানা ভালোবেসে বিয়ে করা পছন্দ করেন না।যার কারণে তোমার বাবা এখনও জামাই রূপে স্বীকৃতি পাননি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাচ্ছিলাম না আমরা। ভেবেছিলাম তোমার নানার সাথে দেখা করে রিমি কে বিয়ের প্রস্তাব দিব কিন্তু তার আগেই বিয়ে ঠিক করে ফেললো।

তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যা হয় হোক আমরা দুজনে দুজনকে ছাড়ব না কখনও। আমৃত্যু একসাথে থাকার পণ করেছি। এখন একটা মাত্র উপায় আমাদের কাছেই আছে। পালিয়ে যাওয়া নয়ত চুপিচুপি বিয়ে করে ফেলা। পালিয়ে যাওয়া আমাদের পার্সোনালিটির সাথে যায় না। চুপিচুপি বিয়ে করার সাহস ও করতে পারছিলাম না।তখন রিমি আমাকে বললো যেন এইসব কিছু আগে তোমাকে জানাই। তুমি রিমি কে খুব ভালোবাসো শুনেছি।রিমি শতভাগ নিশ্চিত যে তুমি ওকে চোখবন্ধ করে হেল্প করবা।

তুমি যদি আমাদের হেল্প করো,আমরা নির্বিঘ্নে বিয়ের ঝামেলা সারতে পারব আর তোমার নানার কাছে বলতেও সহজ হবে। যেহেতু উনি ও তোমাকে খুব ভালোবাসেন।সেদিন বিকেলে রিমি আমাকে পাঠালো তোমাদের বাসায়,ও ভেবেছিল আঙ্কেল বাসায় নেই এই সময়ে আন্টির কাছে একটু অনুমতি নিয়ে তোমাকে আলাদা করে ডেকে সব বলব।প্ল্যান অনুযায়ী তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেখি গেইট খোলা। ভাবলাম আঙ্কেল বাসায় নেই। তোমার বাবা-মা কে আমি আগে কখনও দেখিনি।তাই সাতপাঁচ না ভেবে বাসায় ঢুকি। রাস্তায় দুতিনজন দেখছিল আমাকে কিন্তু আমি অতটা পাত্তা দিইনি।ভেবেছি বাসায় তো মানুষ আছে ওরা দেখলেই কি!এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল জানো? যদি আমি একটু থামতাম,বাসার ভিতরে ঢুকে না যেতাম তাহলে এতকিছু হতো না তোমার সাথে।

আমি রিমিকে তোমাদের বাসায় যাওয়ার আগে বারবার বলেছি ও যেন তোমাকে ডেকে পাঠায় তখন আমরা দুজনে সব বলব। কিন্তু নাহ!ও কারোর কথা কখনও শুনেনি। সেদিনের পর তুমি যখন চেম্বারে গেলে তখন আমার কাছে এসব বলার থেকে মাফ চাওয়া টা বেশি মুখ্য ছিল।মাফ চেয়ে কন্টাক্ট নাম্বার এজন্য দিয়েছিলাম যে তুমি কল করলে কলেই সব বলব। তুমি কল করলে না এটা জানার পর রিমি আমাকে আবার পাঠালো তোমাদের বাসায়।বললো একটু বুঝতেই পারছো কি বলেছে, সেভাবে বলে হলেও যেন তোমাকে রাজি করাই সব শুনতে।বাইকে করে যেন নিয়ে যাই। তুমি আসবে,আমার সাথে যেন ওই বাড়িতে যাও।

আমি বুঝতে পারলাম এটাতে যদি আঙ্কেল দেখে ফেলে তাহলে আর রক্ষে থাকবে না আমার ও।না করেছি কিন্তু রিমি! ভালোবাসি তো তাই ওর জেদের কাছে হার মেনে গেলাম তোমাদের বাসায়। ওর কথানুযায়ী আমি ব্যর্থ প্রেমিকের নাটক করেছি কিন্তু তুমি পাত্তাই দাওনি। আমাকে পুরোপুরি ইগনোর করে চলে গেলে সিএনজি তে।তুমি চলে যাওয়ার পর আমি রিমিকে ফোন করি।তখন রিমি তার ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে ক্যাপ্টেন মানে যার সাথে রিমির বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে দেখা করতে বলে।অর্ক স্যার কে আমি চিনতাম কোনো একভাবে তা বলতে চাচ্ছি না। যাক,রিমির প্ল্যান অনুযায়ী অর্কের সাথে দেখা করি তখনই।

উনি আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেননি।রিমির সাথে দেখা করতে চাইছিলেন। সেজন্য কাল সকালে রিমি মুন কে নিয়ে আসে দেখা করতে।আমি মুন কে নিয়ে ঘুরেছি আর ওরা কথা বলেছে।কি কথা তা জানিনা।কথা শেষ করে আমাকে রিমি জানায় বিকেলে ফাইনাল প্ল্যানিং করবে।অর্ক ও নাকি হেল্প করবে। আর তোমাকেও নিয়ে আসতে হবে। তুমি শুরুতে কাজে আসো নি দেখে রিমি নিজেই সবকিছু তোমার থেকে দূরে রাখতে বলেছিল কিন্তু পরে কেন আনতে চাইছে বুঝিনি। বিকেলে যখন তুমি রিমির সাথে এলে। তুমি উঠে নিচে যাওয়ার পর রিমি হুট করে বললো বাইরে যাওয়ার পর তোমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে। তোমাকে সবকিছু পরে জানাবে।

ওর উপর আর কারো কথা চলে না।অর্ক না করেছিলেন কয়েকবার কিন্তু রিমি শুনেনি। তোমাকে পাঠানোর পর আমাদের ফাইনাল প্ল্যান হয় হলুদের রাতে বিয়ে করব আমরা দুজন।রাতেই সবকিছু জানাব সবাইকে।এ অব্দি আমার কাছে সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে পরবর্তীতে যেই ঝামেলা টা হবে পুরোটাই তোমার উপর দিয়ে যাবে।অর্কের পরিবারের মান সম্মান আছে, তোমার নানার পরিবারের ও আছে। সেজন্য এই দু’জনে কি বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিনা।ওর পরিবর্তে বিয়ে তোমার হবে। সবকিছু তোমাকেই সামলাতে হবে। কারণ আমরা তোমার নানা কে সবকিছু বলার পর যে আমাদের উনি বাড়ি থেকে বের করে দিবেন এটা আমরা নিশ্চিত। রিমি তোমাকে এই দিকটাতে হেল্প করার জন্য স্ক্রিপ্ট ও সাজিয়েছে। তুমি বলবে অর্ক কে তুমি পছন্দ করো বা হ্যান ত্যান কিছু একটা।ও তাই বলবে যা বলা যায়।আর বিয়েটা ও যেহেতু অর্ক ও তাল মিলাবে সেহেতু খুব বেশি একটা ঝামেলা হবে না আই হোপ।’

এ পর্যায়ে এসে ফাইয়াজ থামলো। আমি আপুর দিকে তাকালাম। এতক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল কেউ যেন গরম সিসা গলিয়ে আমার কানে ঢালছে। রিমি আপু আমার এত বড় ক্ষতি করলো? তা-ও নিজের স্বার্থের জন্য।জানত তো আমার পরিবার কেমন! এতকিছু জেনে ও ও এরকম কিভাবে করলো? আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা। গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভারের সিটের পাশে বসলাম। আমাকে কোন রেসপন্স করতে না দেখে ওরাও কিছুক্ষণ পর গাড়িতে এসে বসলো।গাড়ি স্টার্ট নিলো। ক্যাপ্টেন সাহেব ড্রাইভ করছেন। আমি শুধু ভাবছি নানার বাড়ি থেকে পালাবো কোথায়।আপু আর ওরা মিলে যেই প্ল্যান করেছে এতে আমার সম্মতি দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না।আপুর জন্য আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।আর আমি নিজের কোনো ক্ষতি হতে দিব না। আমার পরিবার,নানা নানু কে আমি হারাতে পারব না। ক্যাপ্টেন সাহেবের দিকে তাকালাম আমি।

উনার চেহারায় বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। আচ্ছা উনি এরকম কিভাবে ভাবলেন?বিয়ে করছিলেন যখন তখন নিশ্চয়ই আপু কে ভীষণ রকমের পছন্দ করার পরই বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন। তাহলে নিজে সাক্ষী হয়ে নিজের হবু বউ কে আরেকজনের হাতে তুলে দিলেন কেন?উনার মান সম্মান, ফিলিংস সবকিছুই কি সস্তা?এসবের পরোয়া না করে কিভাবে করলেন এমন? কোথায় বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন ঐশ্বরিয়া কে, সেখানে এত প্ল্যান করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাজের বেটি জরিনা কে।এ তো যেন বিয়ে নয়, শুধু দুই পরিবারের সমাজের কাছে সম্মান রক্ষা। নিজের সম্মান কোথায় যায় যাক। আচ্ছা?মৌ ,মিহি আপু ওরা তো ক্যাপ্টেনের যোগ্য।আপু ওদের কেন বাছলো না। আমার সাথে এরকম বেইমানি কেন করলো। ক্যাপ্টেন সাহেব এতই যখন অন্যের ভালোবাসার দাম দিবেন তখন বিয়েটা ভেঙে দিতেন।তা না করে!আর কিছু ভাবতে ভালো লাগছেনা। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইলাম।

কতক্ষন ধরে গাড়ি চলছে এখনও পৌঁছাইনি। টোটাল এক ঘন্টা চলার পর গাড়ি থামলো। এতক্ষণ কেন লাগলো তা খেয়াল করতে বাইরে তাকালাম। তাকিয়ে যারপরনাই অবাক হলাম। আমাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেমেছে।অবাক চোখে ক্যাপ্টেন সাহেব কে দেখলাম।উনি মুচকি হাসলেন। ইশারায় নামতে বললেন আমাকে।আমি কোনোরকমে দরজা খুলে নামলাম।উনি ও নেমেছেন। আমাদের পর পরই রিমি আপু আর ডাক্তার ফাইয়াজ ও নামলো।নেমেই রিমি আপু বিরক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,

‘ এসব কি ঢং বলুন তো? এখানে কেন এসেছেন।ওর জামাকাপড় নিবেন? আমাদের বাসায় যথেষ্ট আছে।প্লিজ চলুন।দাদু আমাকে খুঁজতে এরপর লোক লাগিয়ে দিবেন।’
ক্যাপ্টেন সাহেব এত সময় ধরে একটা কথাও বলেননি। চুপচাপ ওদের কাজ আর কথা শুনে গেছেন।এখন মুখ খুললেন,

‘ আমাকে অর্ডার করবেন না। বিয়ের আগ অব্দি আমি আপনাদের কথা শুনেছি কারণ আমি নিজেও জানি ভালোবাসার মানুষ কে হারালে ঠিক কেমন লাগে। নিজের মানসম্মানের পরোয়া না করে নিজে আপনাদের বিয়ে দিয়েছি। আপনাদের বিয়ে দেওয়ার পর আপনার আর আমার সম্পর্ক এখন সম্পূর্ণ আলাদা। আমি সামরিক পার্সন আর আপনি সাধারণ মানুষ। আমি এখন যা বলব তা শুনতে বাধ্য আপনি। নাহলে কি হবে তা আপনি না জানলেও ফাইয়াজ জানে।কি ফাইয়াজ জানো তো?’

ডাক্তার ফাইয়াজ কে জিজ্ঞেস করলেন উনি।কি ভীষণ শীতল আর শক্ত গলার স্বর! ডাক্তার ফাইয়াজ কিছুটা মিইয়ে গেল যেন।মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। ডাক্তার কে সম্মতি দিতে দেখে আপু দমে গেল।ভয় ও পেয়েছে কিছুটা। এতক্ষণ তারস্বরে কথা বললেও এখন নরম গলায় বললো,
‘ কি করতে হবে আমাকে?’
ক্যাপ্টেন সাহেব হাসলেন। এরপর পূর্বের থেকেও শান্ত গলায় বললেন,

‘ আপনি আর ফাইয়াজ এখন আহির বাবা এবং আহি দুজনের কাছেই পা ধরে ক্ষমা চাইবেন।আপনারা যা করেছেন তা পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাইলেও ক্ষমার অযোগ্য! আপনি আমাকে আপনার এমন নোংরা কীর্তিকলাপ আগে বলেননি কেন? নিজের সুবিধার জন্য একটা মেয়েকে এরকম হেনস্থা করেছেন তার উপর আবার তার সম্মতি ছাড়াই বিয়ে দিচ্ছেন আমার সাথে।কালকে তো বলেছিলেন আহি আমাকে পছন্দ করে, সবকিছুই জানে,বিয়ে করতেও রাজি হবে। এখন তো সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখছি আমি। ভাগ্যিস, আপনার মত এমন থার্ড ক্লাস মেয়ে আমার বউ হয়নি। হাজারবার শুকরিয়া জানাই আল্লাহ কে। এখন চলুন ভিতরে গিয়ে দুজনের কাছে ক্ষমা চাইবেন।আহি,গেইট খুলতে বলো তোমার বাবা কে।’

আমার কেন জানি এখন ভালো লাগছে ক্যাপ্টেন সাহেব কে। আমার হয়ে আপু কে কিছু তো বললেন উনি।এখন বাবার মনে আমার প্রতি যেই ভুল ধারণা টা আছে সেটা যদি চলে যায়! আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব উনার কাছে। আমি গেইটের কাছে এসে শব্দ করলাম গেইটে।হালকা চেঁচিয়ে বললাম,
‘ বাবা গেইট খুলো!’

বাবা জেগেই ছিলো হয়ত। মিনিট খানেক পরেই গেইট খোলার শব্দ পেলাম।বাবা গেইট খুলে দেখে আমি। এত রাতে আমাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছেন তার চেয়েও বেশি অবাক হলেন বাইরে রিমি আপু আর ওই দুজনকে দেখে।বাবাকে অবাকের রেশ কাটতে না দিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
‘ আঙ্কেল আসসালামুয়ালাইকুম।আমরা একটু কাজে আপনার কাছে এসেছি। ভিতরে‌ আসতে দিলে ভালো হতো!’
বাবা ওদের দিকে তাকিয়ে ই সালাম নিলেন। এরপর বললেন,
‘ আসো ভিতরে আসো।’

আমরা সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।বসার রুমে এসে সোফা দেখিয়ে বাবা ওদের বসতে দিলেন। ক্যাপ্টেন সাহেব বসলেন না।রিমি আপু আর ডাক্তার ফাইয়াজ কে ইশারা করলেন তাদের কাজ করতে।
বাবা কাঁদছেন। ক্যাপ্টেন সাহেব অনেক্ষণ বুঝিয়েও কাজ হলো না।হাল ছেড়ে দিয়ে বাবার কাঁধে হাত রেখে বসে রইলেন।বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
‘ আমি আমার মেয়েকে এত বড় ভুল বুঝলাম। সারাজীবন শিক্ষকতা করেও নিজের মেয়েকে চিনলাম না।কি করব বাবা বলো? আমাদের সমাজ টাই তো জঘন্য। যেভাবে মেয়েটাকে অপরাধী বানালো আমার চোখে,রাগ সামলাতে পারিনি। ছোটখাটো চাকরির কারণে সংসারে সারাজীবন অভাব লেগেই থাকে। এজন্য মাথা চড়া থাকে সবসময়। ছেলেমেয়ে দুটোকে আদর কম শাসন ই করেছি বেশি।সেই শাসনের মাত্রা এত খারাপ হবে বুঝিনি।’

সবাই চুপ করে আছে। আমি বাবার থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার পাশেই ডাক্তার ফাইয়াজ আর রিমি আপু দাঁড়ানো।তারা ক্ষমা চেয়ে সব বলার পরই বাবা নিজের কাজের জন্য কাঁদতে শুরু করেছেন। আমার নিজের ও খুব কান্না পাচ্ছে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি। ক্যাপ্টেন সাহেব আমাকে ইশারা করলেন যেন বাবার কাছে এসে বসি। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ আমরা আসছি এখন আঙ্কেল। ওই বাড়িতে এদের নিয়ে যেতে হবে।পরে এক সময় সুযোগ হলে আপনাদের বাসায় আসবো আমি।’

ক্যাপ্টেন সাহেব আর দাড়ালেন না। বেরিয়ে গেলেন।উনার পিছু পিছু এই দুজন ও বের হয়ে গেল। আমি ও আসলাম পিছু পিছু।ওরা চলে যাওয়ার পর গেইট লাগিয়ে দিয়ে আবার বসার রুমে আসলাম।বাবা এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে তার। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে কাছে এসে বাবার পাশে বসলাম।এক হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
‘ এত কষ্ট পাচ্ছো কেন? আমি সব ভুলে গেছি। তুমি তো জেনে কিছু করো নি না?’

Love Triangle part 11

বাবা কোন কথা বললেন না।বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে চুপ করে বসে রইলেন।আমি আর কিছু বললাম না। অনেক্ষণ পর বাবা ধীরে ধীরে বললেন,
‘ যা গিয়ে শুয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।’

Love Triangle part 14+15