Love Triangle part 14+15

Love Triangle part 14+15
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে ঢুকেছি।মা নানার বাড়িতে কালকে সকালেই গেছে,বাবা কে হোটেল থেকে খেতে বলেছিল হয়ত।বাবা ঠান্ডা কিছু খেতে পারেন না। আমি আটটায় ঘুম থেকে উঠে বাড়িঘর ঝাড়ু দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। সারাদিনের জন্য রান্না করব। নানার বাড়িতে আর যাওয়া হচ্ছে না আমার এটা বুঝে গেছি।বিয়েও তো হবে না। এখন যা হবে তার নাম ঝামেলা।ওই বাড়িতে আপাতত না যাওয়াই আমার জন্য ভালো।ফাসতে ফাসতে একটুর জন্য বেঁচে গেছি।আর নিজের মান সম্মান খোয়ানোর ইচ্ছে নেই।
দশটা বাজছে। রান্না শেষ প্রায় আমার।এখন শুধু রান্নাঘর গুছানো বাকি। এমন সময় বাবা রান্নাঘরে ঢুকলেন। কোনো কিছু নিয়ে এক্সাইটেড খুব। উত্তেজনায় কথা ই বলতে পারছেন না।হাতে ধরে রাখা মোবাইল রীতিমতো কাঁপছে। আমি ভয় পেয়ে বাবার কাছে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

‘ কি হয়েছে বাবা? এভাবে কাঁপছো কেন?’
বাবা কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারলেন না। এরপর থেমে থেমে বললেন,
‘ একটু বাইরে আয়।দেখ তো এটা কার নাম্বার?কল দিলো দুইবার। আমি ফোন নিয়ে বাইরে যাই নাই।ঘরে এসে দেখি মিসড্ কল হয়ে আছে।’
আমি ফোন টা নিয়ে বাইরে এলাম।বসার রুমে আসলাম। আব্বু ও আসল পিছু পিছু।আনলক করে কল অ্যাপে গিয়ে দেখি নানার নাম্বার।দশ মিনিট আগে কল করেছে। এই দেখে আমার অবস্থা বাবার থেকেও খারাপ হলো!নানা কল করেছে আর বাবা কে? কিভাবে সম্ভব?নাকি মা নানার ফোন দিয়ে বাবাকে কল করেছে? আমি বাবাকে বললাম,
‘ যার নাম্বার ভেবেছো সেইই।কল ব্যাক করব?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কর।’
আমি কল ব্যাক করলাম। দুইবার রিং হতেই কল কেটে দিল ওপাশ থেকে। পরক্ষনেই কল এলো। আমি রিসিভ করলাম। নিজেকে একেবারে স্বাভাবিক করে বললাম,
‘ হ্যালো!’
নানা গমগম আওয়াজ তুলে বললেন,
‘ কে আহি?’
আমি ফোনে লাউড স্পিকার অন করেছিলাম। প্রশ্ন শুনে বাবার দিকে তাকিয়ে হ্যা বললাম।নানা সাথে সাথেই বললেন,
‘ ফয়সাল কোথায়?ওকে ফোন দে।’

আমি বাবার দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলাম।নানা বাবাকে নাম ধরে ডাকছে! উপরন্তু তার সাথে কথা ও বলতে চাইছে।আগে বাবার প্রসঙ্গ উঠলেই জঘন্য গা’লি ব্যবহার করত।ও বাড়িতে কি বড়সড় কোনো ঝামেলা হয়েছে? আমার ভয় করতে লাগলো।বাবা আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় নানা কে সালাম দিলেন।নানা ও সুন্দর করেই সেই সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
‘ আমি গাড়ি পাঠিয়েছি। তোমাদের বাসার সামনে আমার ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে।আহি কে এই মুহূর্তে আমাদের বাসায় এসো।’

বাবা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলেন নানা।বাবা আমার দিকে তাকালো। আমি একবার খুশিতে নেচে উঠছি আরেকবার ভয় হচ্ছে।বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ যাবো?’
‘ যাবা না কেন? এক্ষুনি চলো। আমি রেডি হয়ে আসতেছি। তাড়াতাড়ি রেডি হও। ফার্স্ট টাইম শশুরবাড়ি যাচ্ছো। সুন্দর করে সাজবা।হিহি!’
আমি হাসিমুখে দৌড়ে আমার রুমে চলে এলাম।ওয়ারড্রব খুলে সুন্দর একটা থ্রি পিস বের করলাম। মেরুন জর্জেট থ্রি পিস।হাত মুখ ধুয়ে এসে তাড়াতাড়ি করে পরে রেডি হয়ে নিলাম। এরপর জুতা পরে বাইরে এসে দেখি বাবা ও রেডি।সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরেছেন।শ্যু পরেছেন।শ্যামলা বর্ণের বাবা কে সাদা পাঞ্জাবি তে সুন্দর লাগছে। আমাকে বের হতে দেখে বললেন,
‘ চল, যাই।’

আমি গাড়িতে এসে বসলাম।বাবা গেইট লাগিয়ে এসে আমার পাশের সিটে বসার পর গাড়ি চলতে শুরু করল। স্পিডে চলছে।বাবা দেখি এক্সাইটেড অনেক বেশি। বারবার বলছে,
‘ কোনো সমস্যা ই হলো নাকি।রুমা আবার ওদের ঝামেলায় বা হাত ঢুকিয়েছে নাকি কে জানে!’
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে হাসলাম কিছু বললাম না। আমি নিজেও জানিনা কেন ডেকে পাঠিয়েছে। নানা যে কখনো বাবাকে ওই বাড়িতে ঢুকতে দিবে এটাও আমরা ভাবিনি কখনো।আজ কেন ডাকছে? আচ্ছা? ক্যাপ্টেন সাহেব কি সেখানে ও নানার সাথে এসব নিয়ে ঝামেলা করে মানিয়েছে? উনার কথা মনে আসতেই খানিকটা লজ্জা পেলাম। বেচারা আমার জন্য অনেক করেছে।এত বড় ঝামেলা থেকে বাঁচিয়েছে, বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে,রিমি আপু কে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে ওরে দিয়ে ক্ষমা ও চাইয়েছে।এর জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ উনার কাছে। ডাক্তার ফাইয়াজ!এসব কিছু রিমি আপু উনাকে দিয়ে করাইলো আর আমি উনার ব্যবহারে গলে গিয়ে মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটিয়ে ফেলছিলাম! ছিঃ! দুজনের প্রতি ঘৃণায় মুখ কুঁচকে এলো আমার।

আধ ঘন্টা পর গাড়ি থামলো। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম চলে এসেছি আমরা।গাড়ি থেকে নামার জন্য ড্রাইভার দরজা খুলে দিল। আমি আর বাবা নামলাম। বাবা বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি পাশেই।গেইটের সামনে তিনটা গাড়ি আরো কয়েকটা বাইক দাঁড় করানো। ভিতরের পরিবেশ মনে হচ্ছে ভালোই গরম।গেইটে ঢুকতে ঢুকতে বাবা বললেন,
‘ আমার ভয় হচ্ছে রে ফারিয়া!’
‘ ভয় পেয়ো না তো।দেখা যাক না কি হয়।’

বাড়ির বাইরে ছোট মামা দাঁড়িয়ে ছিলেন।বাবা কে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে সালাম দিলেন।বাবা সালাম নেওয়ার পর মামা আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন।বিশাল বড় ড্রইং রুমে আমরা ঢুকলাম। তাকিয়ে দেখি অনেক অনেক মানুষ।নানা সোফায় বসে আছেন।২০ জনের সোফা ড্রইং রুমে।বাবা ঢুকেই নানার কাছে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। আমি দেখলাম একটা সুন্দর দৃশ্য।নানা বাবার মাথায় হাত দিয়ে দুয়া দিলেন। আমার কাছে মনে হলো এটা এত সুন্দর কেন? বাবা কে নানার পাশে বসতে বললেন নানা।ডান পাশে বসলেন। চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিতে দেখি ক্যাপ্টেন সাহেব সোফার শেষ প্রান্তে বসে আছেন। আমার দিকেই দৃষ্টি তার।রিমি আপু আর ফাইয়াজ ক্যাপ্টেন সাহেবের পাশেই দাঁড়ানো।এলিট শ্রেণীর কিছু পুরুষ এবং মহিলা পুরো রুম জুড়ে এখানে ওখানে বসা দাঁড়ানো।শানের আম্মু কে দেখলাম ক্যাপ্টেন সাহেবের পাশে বসে থাকতে।

নানু মা মামী রা এটাচড কিচেনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে।আমিই দরজার পাশে দাঁড়ানো। এমন সময় কোথা থেকে ইফাদ ভাইয়া আর আরিফিন ভাইয়া ও আসলো। আমার পাশেই দাড়াল ওরা। পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে নানা মুখ খুললেন,
‘ ফয়সাল! তোমার মনে হয় জানতে বাকি নেই আমার বড় ছেলের মেয়ে নিজে নিজে বিয়ে করেছে। তা-ও যার সাথে বিয়ে দিচ্ছিলাম তাকেই ব্ল্যাকমেইল করে নিজের বিয়ের সাক্ষী বানিয়েছে যেন কিছু বলতে না পারে কোনো পক্ষই। কিন্তু আমি বলেছি।এই মেয়ের মুখ দর্শনের এতটুকু ইচ্ছে ও নেই আমার। আজীবনের জন্য এই বাড়িতে ওর আসাযাওয়া নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবগুলো কুলাঙ্গার সন্তানদের জ্বালায় পারলাম না।পায়ে পরেছে সবকটা। এখন আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

নানার কথার এই পর্যায়ে একজন আধ বয়স্ক লোক অধৈর্য হয়ে বললেন,
‘ চাচাজি, আমার ছেলের সম্মান? আমার ছেলের কপাল পুড়ল যে।ও আর্মি অফিসার। চাকরিতে ওর একটা সম্মান আছে আর সমাজে তো আছেই।সবাই যদি জানে তার হবু বউ অন্যের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে তার সম্মান টা কোথায় যাবে বলুন তো!”
‘ আসাদ! তুমি এত অধৈর্য কেন হচ্ছো বাবা? আমাকে সবকিছু বলতে দাও।’
‘ বলেন চাচাজি।’
ক্যাপ্টেন সাহেবের বাবা চুপ করে গেলেন।নানা একটু সময় নিয়ে বললেন,
‘ আমার সিদ্ধান্ত টা এই যে এই মেয়ের বিয়ে মেনে নেওয়ার আগে আমি আমার মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের বিয়ে মেনে নিব।আগে নিজের সন্তান এরপর নাতনি।এই জন্যই তোমাকে ডাকা হয়েছে।আজ এই মুহূর্ত থেকে তুমি এই বাড়ির স্বীকৃত জামাই। তোমার সাথে আমি ওই দুটো জানোয়ার কেও মেনে নিচ্ছি। আমার মান সম্মান ডুবিয়েছে এতগুলো মানুষের সামনে।পুরো কর্পোরেশন আমার উপর ছি ছি করছে।এত সৎ ব্যক্তি নিজের নাতনি কে মানুষ করতে পারেনি।এই লজ্জা কোথায় রাখি আমি?’

ক্যাপ্টেন সাহেবের বাবা আবার বলে উঠলেন,
‘ চাচাজি এবার আমাদের দিকটা দেখুন। আমাদের বাসার লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ এখনও জানেনা এসব।আমরা কি করব?’
নানা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ এখন তোমরা কি সমাধান চাচ্ছো? রিমির তো বিয়ে হয়েই গেছে।ওকে তো আর তৌকিরের সাথে বিয়ে দিতে পারব না।’
এই পর্যায়ে একজন মহিলা কথা বললেন। বোধকরি উনি ক্যাপ্টেন সাহেবের মা ই হবেন।শাড়ি পরা শান্ত চেহারার মহিলা টি কাটা কাটা গলায় বললেন,
‘ এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবে চাইও না আমরা।আমরা এখন আমাদের সম্মান বাঁচাতে চাই। আপনার বাড়ির কোন মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়েটা দিয়ে দিন।রিমির থেকেও সুন্দরী,ভালো কোয়ালিফিকেশন এর মেয়ে চাই আমরা।যেন কেউ বউ বদল হওয়াতে কথা না শোনাতে পারে। আমাদের সম্মান যেন না যায়।সম্মানটুকু বাঁচান আমাদের।’

ওদের বাড়ি থেকে যারা এসেছে সবাই সেইম কথাই বললো। সম্মান চান।নানা কি বলবেন ভাবছেন। ক্যাপ্টেন সাহেবের দিকে তাকালাম আমি।উনি বিষণ্ণ মুখে বসে আছেন। চোখ মুখ শুকনো। আমার দিকে তাকিয়ে দেখেন আমি উনার দিকেই তাকিয়ে। ক্লান্ত মানুষ যেভাবে হাসে উনি ঠিক সেভাবেই হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে। আমার সাথে থাকা দুই ভাইয়াই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো।ইফাদ ভাইয়া কানের কাছে মুখ এনে বললো,
‘ বেটা দেখছি তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে রে আহি।’
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ভাইয়ার দিকে।ইফাদ ভাইয়া হাসি হাসি মুখ করে মাথা নেড়ে ফিসফিস করে বললো,
‘ হ্যা। সত্যি বলছি। তখন থেকে দেখছি বেটা তোর দিকেই দেখছে।’

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।নানার দিকে তাকালাম।এত সিরিয়াস মুহূর্তে আমার ইফাদ ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার!ভাইয়া বলার সুযোগ পেয়ে আবার বললো,
‘ দাদু যদি তোর সাথেই উনার বিয়ের কথা বলে তাহলে মন্দ হয় না। মানাবে দুজনকে।’
আমি খানিকটা বিরক্ত হবার ভান করে বললাম,
‘ ভাইয়া!অফ যাও প্লিজ। দেখো নানা কি বলে।’
নানা খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললেন,
‘ আমার নাতনি মিহি আর মৌ এদের মধ্যে কাকে পছন্দ হয় তোমাদের?’

আমার নিজের মুখ চুপসে গেল।ইফাদ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ও ফাটা বেলুনের মত মিইয়ে গেছে। আরিফিন ভাইয়া ইফাদ ভাইয়ার পাশেই।সিরিয়াস মুখ করে সামনে তাকিয়ে আছে।মুখ কিছুটা খুশি খুশি ওর। আমি মৌ আর মিহি আপুর দিকে তাকালাম।ওরা নানুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। দুইটাই আগুন সুন্দরী।মিহি আপু ঢাবিতে জ্যুলজি নিয়ে পড়ছে অনার্স থার্ড ইয়ারে আর মৌ আমার জুনিয়র। এইচএসসি দিলো এই বছর। দুটোরই বয়ফ্রেন্ড আছে। ওদের খারাপ লাগার কথা নানার এমন প্রস্তাবে কিন্তু ওদের দুজনের মুখেই হাসি দেখলাম।এই বেডার বউ হওয়া যেন ওদের একটা সৌভাগ্যের বিষয়। ক্যাপ্টেন সাহেবের মা কিছুক্ষণ ওদের পরখ করে বললেন,

‘ মিহি মা কে আমাদের পছন্দ হয়েছে।’
‘ তাহলে তাই সই।তার সাথে ই তৌকিরের বিয়ে দিব।’
‘ চাচাজি!’
নানা উঠতে যাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহেবের বাবার ডাকে আবার বসে পড়লেন।নানা কে বসতে দেখে উনি একটু নরম গলায় বললেন,
‘ বিয়েটা আজকে এখনই দিয়ে দিন। আমাদের সম্মান বাঁচান।’
নানা এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন কল করলেন। রিসিভ হলো। বললেন,
‘ কাজী সাহেব আর হুজুর সাহেব কে নিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে আমার বাড়িতে এসো।’

কল নামিয়ে রাখলেন নানা।সবাই চুপ করে গেল। আমার আর এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। কেন জানিনা বুকে চিনচিনে ব্যথা করছে।অথচ এটার কোন কারণ ই নেই। ক্যাপ্টেন সাহেব আমার সবকিছুই ফিক্সড করে দিয়েছেন।নানার বাড়ি, নিজের বাড়ি, সবকিছুই তো।এসবের জন্য ই প্যারা লাগত আমার। কষ্ট হতো।এখন আর কষ্টের কারণ নেই।আর কি ফিক্স হওয়ার বাকি আছে?আমি? নিজের অজান্তেই হাসলাম। আমার পরিবারের কাছে আমার চরিত্রের বিষয়টা ক্লিয়ার হয়েছে।আর প্রতিবেশিদের কাছে না।তারা আমাকে অনেক কষ্ট দিবে। সেসব হজম না করেই ফিক্স হতে চাইছি কেন?আগে রিমি আপুর বিয়ে হতো এখন মিহি আপুর হবে।সেইম ই তো। কিন্তু!কালকে উনি যেভাবে আমার মন জয় করলেন আমার মন সেখানেই আটকে আছে। উনাকে আগের দিন হাসিখুশি দেখে আর রিমি আপুর বিয়ে দিতে দেখে লেইম ভেবেছিলাম কিন্তু উনার পার্সোনালিটি কতটা স্ট্রং সেটা তো আমার সামনেই প্রমাণ হয়েছে।
সবাই চুপচাপ। ড্রইং রুমে পিনপতন নীরবতা।এই নীরবতা ভেঙে ক্যাপ্টেন সাহেব শান্ত দৃষ্টিতে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের মা’কে বললেন,

‘ তোমরা কি আমার ভালোর জন্যই আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছো আজ?’
ক্যাপ্টেন সাহেবের মা বললেন,
‘ হ্যা বাবা। চিন্তা করো না। তোমার রেপুটেশন এতটুকু ও কমবে না কোথাও।রিমির থেকে মিহি হাজার গুন ভালো আর সুন্দরী।’
‘ আম্মু প্লিজ।আর না। তোমার ইচ্ছেমত সবকিছু আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করো এবার। আমি একটা মানুষ। কোনো দাবা খেলার গুটি না। বারবার এমনভাবে আমার জীবন নিয়ে খেলার কি মানে বলো তো?’
ক্যাপ্টেন সাহেবের মা অবাক হলেন। কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারলেন না।পাশ থেকে ই শানের আম্মু শাসনের সুরে বললেন,

‘ এসব কি বলছো অর্ক? আম্মু তোমার ভালোর জন্যই বিয়ে দিতে চাচ্ছে।মিহি তো রিমির থেকে ভালো মেয়ে। এখানে তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার কি আছে? আম্মু কে কেন দোষ দিচ্ছ? আম্মু কি রিমি কে বলেছিল পালিয়ে যেতে?’
ক্যাপ্টেন সাহেব বাম হাতে কপালে ধরে নিচের দিকে তাকিয়েই বললেন,

‘ আমি কি একবারও বলেছিলাম আমি রিমি কে বিয়ে করতে চাই?ওকে আমার পছন্দ হয়েছে কি-না জানতে চেয়েছো কখনও? তোমরা নিজেরাই আমার বিয়ে ঠিক করলে। আম্মু বিয়েটা নিয়ে খুব খুশি তাই আমিও রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু কি হলো?মেয়ে আমাকে পছন্দ ই করলো না। আমাকে দিয়েই তার ভালোবাসার মানুষ কে বিয়ে করলো।একটা আঘাত নিতে পেরেছি। এখন আবার তোমরা আরেকজনের সাথে আমার মতামত না নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো তাও নিজেদের ঠুনকো সম্মান বাঁচাতে। আমি কি মিহি কে পছন্দ করি এটা বলেছি?ওকে বিয়ে করতে চাই বলেছি?সুন্দরী হলেই সবাইকে বউ বানানো যায় না ভাবী।আমার বিবাহিত জীবন তো আমি কাটাব তোমরা না।যাকে বউ হিসাবে ভাবতে পারবো না তার সাথে পুরো জীবন কিভাবে কাটাবো আমি? জীবন টা নষ্ট হতে হতে বেঁচেছে একবার।আবার কেন নষ্ট করে দিতে চাচ্ছো? তোমাদের সম্মানের জন্য? আচ্ছা? আমার জীবনের থেকেও কি তোমাদের সম্মান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ?এটা নাহলে বাঁচবে না তোমরা?’

উপস্থিত সবাই চুপ করে গেল। শান্ত গলায় বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হওয়া একটা অভিযোগ! আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কতটা স্ট্রং দেখায় বাইরে থেকে। কালকে অব্দি স্ট্রং ভেবেছিলাম। কিন্তু উনি ভিতর থেকে কতটা ভেঙে আছেন!এত অভিযোগ নিজের পরিবারের প্রতি?সব জমিয়ে রেখেছিলেন।আজকে সবটা উগড়ে দিলেন হয়ত। আসলেই তো। জীবনের থেকে কি সম্মান বড়? উনার দিকটা কেউ না ভেবেই আবার নিজেদের সম্মানের জন্য ব’লি দিচ্ছিল। মিহির দিকে তাকালাম।

Love Triangle part 12+13

এমন শান্ত রিজেকশনে ওর চোখ মুখ দেখার মত হয়েছে।রাগে ফেটে যাবে আর কিছু বললেই। “ সুন্দরী হলেই সবাইকে বউ বানানো যায় না ” কথাটা মারাত্মক ভাবে আঘাত করেছে সবাইকেই।সবাই চুপচাপ। ড্রইং রুম জুড়ে এখন শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ক্যাপ্টেন সাহেব নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন।আগের থেকে আরো বেশি বিমর্ষ লাগছে তাকে। খুব বেশি মানসিক চাপ পাচ্ছেন তিনি। আমার খারাপ লাগলো উনার জন্য।

Love Triangle part 16