Love Triangle part 16
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
‘ তাহলে তুমি কি চাও?’
‘ আমি আহি কে বিয়ে করতে চাই।’
ক্যাপ্টেন সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে উত্তর দিলেন। উপস্থিত সবাই যেন মারাত্মক রকমের শক খেলো একটা। আমি ও অবাক।কালকেই না উনি না করলেন।বিয়ে করবেন না বলে আমাকে বাসায় রেখে আসলেন।আর এখন? ক্যাপ্টেন সাহেবের বাবা-মা কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আরিফিন ভাইয়ার গলা।সে চড়া গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘ আহি কে বিয়ে করবেন কেন?’
ক্যাপ্টেন সাহেব আরিফিন ভাইয়ার দিকে তাকালেন। শান্ত চোখের দৃষ্টি। কনফিডেন্ট চেহারা। চোখের থেকেও শান্ত গলায় বললেন,
‘ কারণ রিমি কে আমি ফাইয়াজের সাথে বিয়ে দিয়েছি আহি কে পাব বলেই।’
‘ মানে টা কি?’
‘ সহজ মানে।রিমি আর আমার মধ্যে ডিল হয়েছিল আমি আহি কে বিয়ে করব আর রিমি ফাইয়াজ কে।আর,যদি বলো আহির মতামতের কথা।আহি নিজেও রাজি এতে।বলো আহি, তুমি রাজি নও?’
আমি হকচকিয়ে গেলাম।এখানে কি ঘটছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।বুঝে উঠতে পারছি না কিছুই। মিনিমাম সময়টুকুও নেই বুঝার। আরিফিন ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। আমি উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার থেকে।আর সবাই ও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। গমগম করছে রুমের পরিবেশ।আমার দিকে সবার দৃষ্টি এখন। আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে আরিফিন ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়ার চোখের পাতা কাঁপছে। জানিনা কেন কিন্তু আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গেল।রাত থেকে না খাওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ মনে হয় নিতে পারছি না আর।আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিফিন ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ উনি কি বলছেন আহি? তুমি সত্যিই এইরকম ডিল করেছো রিমি আর ক্যাপ্টেনের সাথে?’
আমি কি উত্তর দিব বুঝতে পারলাম না। নানার দিকে তাকালাম,নানা রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ক্যাপ্টেন সাহেবের ঘোষণায় উপস্থিত কারোর মুখে খুশির চিহ্ন দেখলাম না।সবাই তীর্যকভাবে আমাকে দেখছে।শেষ ভরসা রিমি আপু।ও আমাকে পুরোপুরি শে’ষ করে ছাড়লো এবার।ওর দিকে তাকালাম।ও ইশারায় হ্যা বলতে বললো। ক্যাপ্টেন সাহেব কে দেখলাম। তিনি শান্ত। আমাকে এত বড় প্রশ্নের মুখে বিদ্ধ করে তিনি এখন উত্তরের অপেক্ষায়।রিমি আপু কি কি বলেছে, করেছে জানি না। এখানে আসার পর কিভাবে মানিয়েছে তা-ও জানিনা।এই দুজনের কথা এখন না চাইলেও মানতে হবে আমার।মিনিট দুয়েক সবাইকে দেখে শুকনো ঢোক গিললাম। এরপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ হ্যা। আমি রাজি ই।’
ভাইয়া ‘ কি!’ বলে দু পা পিছিয়ে গেল।ইফাদ ভাইয়া আরিফিন ভাইয়া কে ধরলো। আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়া।
সবাই এতক্ষণ চুপ থাকলেও আমার উত্তর পেয়ে যেন ড্রইং রুমে বোম ব্লাস্ট হলো।নানা চেঁচিয়ে উঠলেন,
‘ ইয়ার্কি করছিস আহি?কার মতামত নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিস তুই।আমরা কেউ তোকে এখন বিয়ে দিতে চেয়েছি?তোর বাপ চেয়েছে বিয়ে দিতে?ওই**** টার জন্য তুই বিয়েতে রাজি হয়েছিস কোন সাহসে?’
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। দৃষ্টি পায়ের দিকে। ক্যাপ্টেন সাহেবের বাবা-মা পুরোপুরি বিরুদ্ধে উনার।উনার পুরো পরিবার ও। ক্যাপ্টেন সাহেব কে জেরা করতে শুরু করলেন।কি দেখে আমাকে বিয়ে করতে ডিল করেছেন উনি?
‘ তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে অর্ক।যাকে তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো।রিমি আর মিহি দুজনই তোমার যোগ্য বলে তাদের সাথে বিয়েতে আমরা রাজি হয়েছি,তাই বলে এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে? আর আমরা রাজি হবো?এটা ভাবছো কি করে?’
ক্যাপ্টেন সাহেবের মা বলে উঠলেন। ক্যাপ্টেন সাহেব উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলেন।কি জবাব দিবেন ভাবছেন হয়ত।উনার মা থামতেই মিসেস শায়লা তথা শানের আম্মু বললেন,
‘ তুমি নিজের, ফ্যামিলির স্ট্যাটাসের কথা একবার ভাববে না অর্ক?এই ক্যারেক্টারলেস মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হলে কিভাবে?’
আমি মাথা তুলে তাকালাম। ক্যারেক্টারলেস মেয়ে!বাক্য টা বুকে তীরের মত এসে বিধল যেন।চোখে পানি চলে এসেছে।হয়েছি তো রিমি আপুর প্ল্যানের ব’লি। চাইলেও এই রিং থেকে এত সহজে বের হতে পারব না।তাই হ্যা বলেছি। কিন্তু! ক্যাপ্টেন সাহেবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। নিজের ভাবীর দিকে ফিরে বললেন,
‘ মুখ সামলে কথা বলো ভাবী।ওর ক্যারেক্টারের সার্টিফিকেট তোমাকে দিতে হবে না।আহি এখন তৌকির হাসান অর্কের বাগদত্তা,আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্কের অর্ধাঙ্গিনী হবে।তাকে অসম্মান করার অধিকার তোমার এবং এই যে আপনারা! আপনাদের উপস্থিত কারোর নেই আহি কে অসম্মান করার। আর আপনি!’
নানার কাছে এগিয়ে গেলেন।নানা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ক্যাপ্টেন সাহেব নানার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। এরপর যতটা সম্ভব শক্ত গলায় বললেন,
‘ আহি বাংলাদেশের বিবাহ আইনে সাবালিকা। নিজের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার।সে কাকে বিয়ে করবে কি করবে না,কখন করবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার তার আছে।সো,আপনি তার সাহসের কথা জিজ্ঞেস তো করতে পারেন না।সে যতই আপনি তার গুরুজন হননা কেন।’
এরপর তিনি আর সবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। ডিক্লেয়ার করার ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ এখানে উপস্থিত যারা আছেন তারা আমার বিয়েতে মতামত দিবেন কি দিবেন তা আমি গোনা তেও ধরব না। আব্বু আম্মুর তো নয়ই।সংসার আমি করব,আপনারা না। আপনাদের পছন্দে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।যদি আমার সিদ্ধান্তে আপনারা খুশি হতে না পারেন তাহলে আমার বিয়ে দেখবেন না। কিন্তু আজ,এই মুহূর্তে যদি আমাকে কারোর সম্মান বাঁচাতে বিয়ে করতেই হয় তাহলে আমি আহি কেই বিয়ে করব এবং তার সম্মান রক্ষার সমস্ত দায়িত্ব নিব।’
সবাই চুপ। এমন সময় কলিংবেল বাজলো।সবাই তাকাল দরজার দিকে।কাজী সাহেব আর স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেব এসেছেন। সাথে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। উনাদের আগমন যেন রুমের আগুনে ঘি ঢাললো।কাজী সাহেব কে দেখে আরিফিন ভাইয়া মরিয়া হয়ে উঠলো। আমার কাছে এসে বললো,
Love Triangle part 14+15
‘ তুমি একবার বলো,এই বিয়েতে রাজি না তুমি।এই বেটা কে কিভাবে বের করতে হয় বাসা থেকে তা আমি বুঝে নিব।দাদু তুমি কিছু বলছো না কেন?জানো তো সব।থামাবে না ওকে?’
আমি আর কিছু নিতে পারলাম না। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। আরিফিন ভাইয়া আমার মুখ থেকে উত্তর শুনতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে যেন আমার। অতিরিক্ত দুর্বল লাগছে নিজেকে।ধরে রাখতে পারলাম না আর।আমি এতসবের মধ্যেই জ্ঞান হারালাম।