Love Triangle part 21

Love Triangle part 21
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

কাল রাতে কখন ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই। সকালে ঘুম ভাঙল।অলস ভঙ্গিতে ঘুম থেকে উঠে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম সাড়ে নয়টা বাজছে।এত সময় অব্দি ঘুমিয়েছি!!!5 missed call from Arko হয়ে আছে স্ক্রিনের উপর।উনি কল করেছিলেন।দু ঘন্টা আগে। আমি! তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।মুখ,হাত মুছে ফোন হাতে নিয়ে কল ব্যাক করলাম। দু’বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো,
‘ হ্যালো!’
‘ Good Morning Ahi!’
‘ Good Morning!আপনি কল করেছিলেন?’
‘ হ্যা। বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি তখন কল করেছিলাম।এখন রোডে।’
আমি চুপ করে রইলাম।কি বলব মাথায় আসছে না। আমাকে বেশি নার্ভাস হওয়ার সুযোগ না দিয়ে উনি নিজেই বললেন,

‘ আপনার ঘুম কি এখন ভাঙল ম্যাডাম?’
‘ হু ওই আর কি ‘
‘ খেয়েছো কিছু?’
‘ না। মাত্র ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম।আপনি খেয়ে বের হয়েছেন?’
‘ হ্যা। সবকিছু কমপ্লিট করেই বের হয়েছি। তুমি গিয়ে কিছু খেয়ে নাও। এরপর কলেজে যাও। আমি ফোন রাখছি। বান্দরবানে পৌঁছে কল দিবো।ওকে?’
‘ ওকে। রাখছি তাহলে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি সাথে সাথে কল কেটে দিয়ে হাফ ছাড়লাম। শীতকালীন ট্রেনিং নিয়ে অনেক কিছুই শুনেছি আমি।দুর্গম এলাকায় যেই ট্রেনিং গুলো হয় সেগুলো তে মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মিশনে যাওয়া‌ হয়।রিস্কি ট্রেনিং।বেছে বেছে আমাকে বিয়ের পরই এই ট্রেনিং এ গেলো!কি কি ট্রেনিং যে করে কে জানে।
ফোন রেখে বাইরে বের হলাম।মা মুন কে খাইয়ে দিচ্ছিলেন। আমাকে দেখে খাবার টেবিলে বসতে বললেন। আমি চেয়ার টেনে বসলাম।বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলাম।মা বললো বাবা স্কুলে চলে গেছে। আমি কথা না বাড়িয়ে প্লেটে ভাত নিতে লাগলাম চুপচাপ।মা নিজ থেকেই বললো,

‘ জামাই ফোন দিয়েছে তোকে?’
‘ হু।’
‘ তুই কি বিয়েতে রাজি না আহি?’
মা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।আমি এক পলক তার দিকে তাকিয়ে আবার খাবার নিতে লাগলাম। আমি আবার জিজ্ঞেস করলো একই কথা। আমি খাবার নেওয়া শেষ করে ভাত মাখিয়ে মুখে দিতে দিতে বললাম,
‘ উনি ভালো মানুষ।সৎ।একটা সুন্দর পরিবেশে থাকেন। উনার সাথে বিয়েতে রাজি না হওয়ার কি আছে?’
‘ অনেক কিছুই আছে। আমার বাপের বাড়ির লোকজন তো তোকে বশ করে রাখছে। ওদের জন্য ই আবার বিয়েটা করলি কি-না ভাবছি আমি।’

‘ না। যারা সুযোগ বুঝে পল্টি খায় তাদের আমি পছন্দ করি না।আর তাদের কথা রাখা তো দূরের কথা।’
‘ এটা সবসময় মনে রাখবি।তাহলেই হবে।’
আমরা আর কোনো কথা বললাম না।মা মুন গল্প করতে করতে খেতে লাগল। আমি চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে এলাম ফের। নিরুৎসাহিত আমি সবকিছুতেই। কেমন জানি অবসাদ ঘিরে ধরেছে আমাকে।রুম এ এসে চুপচাপ বসে রইলাম কিছুক্ষণ।কলেজে যেতে হবে।ন্যাশনাল ভার্সিটির আন্ডারে আমাদের কলেজ। সেজন্য ঝামেলা।সেশন জট লেগেই থাকে।এক্সামের ডেট কবে থেকেই হচ্ছে হচ্ছে হচ্ছে না।আজ গিয়ে ফাইনাল ডেট শুনতে হবে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে রেডি হলাম।

হালকা সবুজ রঙের একটা থ্রি পিস পরলাম আর ফ্ল্যাট হিল।হাতে ঘড়ি পরলাম।চুলে বেণী করেছি।মুখে তেমন কিছু একটা দিলাম না।একটু ময়েশ্চারাইজার আর ঠোঁটে লিপ ওয়েল।এরপর ব্যাগ আর ফোন নিয়ে বের হলাম।বের হওয়ার সময় মা’কে বলে বের হলাম আসতে কিছুক্ষণ দেরি হবে। অপেক্ষা না করে যেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে ঐশী কে কল করলাম।ঐশী আমার কলেজ জীবনের ফ্রেন্ড। খুব ভালো ফ্রেন্ড ই বলা চলে। এতদিন মায়ের ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতাম।এখন নিজের ফোন হয়েছে।বের হওয়ার সময় মা’র ফোন থেকে আমার ফোনে নাম্বার সেভ করে নিয়েছিলাম।এত এত ঝামেলার মধ্যে ওর সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ ই হয়নি।আজ হয়েছে।
সিএনজি তে উঠে কল করলাম। দু’বার রিং হতেই রিসিভ করলো। এরপর ককর্শ কন্ঠ ভেসে এলো একটা,

‘ কে ভাই এত সকাল সকাল জ্বালানোর জন্য কল করছিস?’
‘ ঐশী আমি!ফারিয়া।’
ঐশীর খুশি খুশি গলা টের পেলাম। খুশি হয়ে বলল,
‘ আরে দোস্ত তুই! ফোন কিনেছিস?বললি না।আল এতদিন কই ঘাপটি মেরে বসে ছিলি? আন্টি কে যতবার কল করেছি ফোন বন্ধ পাই।তোর বাসার ঠিকানা ও জানিনা যে চলে যাবো।কই তুই? কেমন আছিস?’
‘ আরে! একসাথে এত প্রশ্ন?বলছি।তার আগে বল কলেজে আসছিস তো?কলেজে আয় তখন সরাসরি সব বলব।অনেক অনেক কথা বলার আছে তোকে।’

‘ ওক্কে বস। আমি আসছি।ভাইয়া একটু পরেই অফিসের জন্য বের হবে।আমি তার সাথেই আসছি।টা টা।’
ঐশী কল কেটে দিল। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। সিএনজি তার গতিসীমা অনুযায়ী স্পিড বাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে কলেজের দিকে। খুব বেশি একটা দূরে না আমাদের কলেজ।কাছেই। সিএনজি তে যেতে বিশ মিনিট মত লাগে।কলেজ গেইটের সামনে এসে সিএনজি থামলো। আমি নেমে ভাড়া দিলাম। এরপর অপেক্ষা করতে লাগলাম ঐশীর জন্য।ও আসলে আমার জন্য গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতো। দাঁড়িয়ে নেই তার মানে আসেনি এখনও।
পাঁচ মিনিট হয়েছে কি হয়নি,ঐশীর দেখা মিললো।ওর ভাইয়ার সাথে এসেছে।ভাইয়া আমার সামনে বাইক দাঁড় করালো। পুলিশের সার্জেন্ট ওর ভাই। আমি ভাইয়া কে সালাম দিলাম।ভাইয়া হাসিমুখে সালাম নিলেন।ঐশী বাইক থেকে নেমেছে ততক্ষণে।ভাইয়া চলে গেল বাইক ঘুরিয়ে।

‘ দোস্ত!তোকে মিস করেছি খুব।’
‘ আমিও রে।’
আচ্ছা বল এখন। কাহিনী কি?’
‘ এখানেই? নাকি কোথায়ও একটা বসবি?’
‘ ক্যান্টিনে চল।’
ঐশী আমার হাত ধরে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেল। আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ গেলাম তার সাথে।কলেজ ক্যাম্পাসে কত কত স্টুডেন্ট। এদের বেশিরভাগই আমার অচেনা। রেগুলার কলেজে আসি না তাই নিজ ডিপার্টমেন্টের কাউকেও চিনি না তেমন একটা।

ক্যান্টিনে এসে বসেছি।ঐশী দুজনের জন্য কফি অর্ডার দিলো। এরপর বললো,
‘ এতদিন লাপাত্তা ছিলি কেন বল এখন।’
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম।কি বলব সাজিয়ে উঠতে পারছি না। আমার হাত টেবিলের উপর রাখা।ঐশী ফের শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘ কোনো সমস্যা ফারু? কিছু হয়েছে?’
আমি মাথা নাড়লাম।
‘ কি হয়েছে?বল তো সব।’

‘ আসলে ঐশী! সেদিন তোর সাথে মিট করে বাসায় ফিরলাম না?তখন হয়েছে কি। আমার কাজিনের বয়ফ্রেন্ড আমাদের বাসায় আসে।সবাই ভাবে আমার কোন বাজে সম্পর্ক আছে।বাবা এসবের জন্য মারধোর করে অনেক। এরপর কাজিনের বিয়েতে যাই। সেখানে ও ঝামেলা হয়।কাজিন তার হবু বর কে সাক্ষী বানিয়ে নিজের বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে ্আর সমস্ত ঝামেলা আমার উপর চেপে দেয়।এই নিয়ে অনেক ঝামেলা।এখন শেষ অব্দি ওর হবু বরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।এই বিয়েও ঝামেলার বিয়ে। আমি রাজি ছিলাম না।উনি জোর করেই বিয়ে করেছেন।আর, আমার এক কাজিন আরিফিন ভাইয়া!চিনিস তো?ওর জন্য আরও ঝামেলা।ও নাকি আমাকে ভালোবাসে হ্যান ত্যান।
ওদের সবাই এক হয়ে আমারে ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে।অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি রে।’

‘ তোর বিয়ে হয়ে গেছে?তোর হাজবেন্ড কি করে?’
‘ হু। উনি আর্মিতে। ক্যাপ্টেন রেংক।’
‘ whattttttttt?’
ঐশী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলো খানিকটা। এরপর হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষনেই চাপা উত্তেজনা মিশ্রিত গলায় বললো,
‘ তোর বর ক্যাপ্টেন?এই নাম কি রে ভাইয়ার? মানুষ হিসেবে কেমন?’
‘ উনার নাম তৌকির হাসান অর্ক। মানুষ হিসেবে খুব ভালো। আমাকে এত এত ঝামেলার হাত থেকে উনিই বাঁচিয়েছেন।জানিস, আমি যতটা ডিজার্ভ করি না উনি তার থেকেও বেশি হেল্প করেছেন আমাকে।’
ঐশী এবার কটমট করে তাকালো আমার দিকে। এরপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ তাহলে জোর করে বিয়ে করেছে বললি কেন? এইরকম একজন ক্যাপ্টেন কে বিয়ে করতে কোন *** এর আপত্তি ছিলো?’
আমি ঐশীর দিকে তাকালাম। বললাম,

‘ আরিফিন ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে বলেছিল।আমি বিয়ে করলে সুই’সা’ইড করবে নাকি! আমার জন্য অহেতুক একজন জীবন কেন হারাবে? সেজন্য ই বিয়েটা এখন করতে চাচ্ছিলাম না।’
ঐশী আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। কেমন বিরক্ত তার দৃষ্টি।বললো, ‘ তুই এত লেইম?একটা থার্ড ক্লাস ছেলের জন্য নিজের লাইফ সেটেল্ড করতে চাইছিলি না? কিরে ভাই!আমি তোর সাথে এতদিন ঘুরেও তোর রুচি আর চিন্তাভাবনা এত নিম্ন মানের তা বুঝিনি কেন?’
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঐশী ফের বললো,
‘ তুই কি এখন ভাইয়া কে ছেড়ে ওই আরিফিন এর কাছে যাবি? তোকে ভালোবাসে বলে তারে দেহ মন সব দিয়ে দিবি?এই তুই ভাইয়ার নাম্বার দে।তোর মত এমন নিম্ন রুচির মেয়েকে উনি কেন বিয়ে করেছে আমি তা জিজ্ঞেস করব।’

‘ ঐশী!’
‘ চুপ থাক ****!’
আমি চুপ করে গেলাম। মারাত্মক রকমের রেগে গেছে ঐশী। এমন কিছু বলিনি যে এত রাগ করবে।আমি আগের কথা বললাম যে কেন বিয়ে করতে চাই নি।এখন তো না। আমি আগে যতটা পিউর ভাবছিলাম ওদের এখন তো ভাবছি না।ঐশী আমার উত্তরের আশা না করেই আবার বললো,
‘ দেখ ফারু।আমি তোকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবি। ভালোবাসি তোকে। কিন্তু তার মানে এই না আমি সবসময় চুপ করে তোর এই কাজিন দের সাথে ঢলাঢলি দেখব। তোকে আমি ওদের থেকে আগেও সাবধান করেছি তুই শুনিস নি।শেষে ওরাই তোকে বিপদে ফেলল।তার পরেও ঢলাঢলির চিন্তা বাদ দিচ্ছিস না।এখন আরেক মানুষের বউ তুই।তার পরেও ওদের প্রতি এত পিরিত উতলায় উঠে কেন?আর তোকে কি বললাম?ভাইয়ার নাম্বার দে। আমি আগে ওই বেটা কে ধরি এরপর তুই।’

Love Triangle part 20

‘ উনি ট্রেনিং এ গেছেন বান্দরবানে। এখন কল করলেও পাবি না তেমন একটা।’
ঐশী আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি আমার ভুল বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?ও পূর্বের চেয়েও রাগি গলায় বললো,
‘ তোর ***** হইছে শা/লি!’

Love Triangle part 22