Love Triangle part 23

Love Triangle part 23
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

ঝকঝকে একটা সুন্দর সকালে ঘুম ভাঙল। ঐশীর ডাকে।ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও রেডি হয়ে বসে আছে।ট্র্যাকস্যুট পরা। আমি আড়মোড়া ভেঙে বসে বললাম,
‘ জিম তো আশপাশে নেই।রেডি হয়েছিস কেন?’
‘ জিম নেই মানলাম। জগিং করব।তুই ও আয়।’
আমি বুঝতে পারলাম না। জীবনেও এসব করিনি।এখন টানছে কেন হুদাই?অবাক হয়ে বললাম,
‘ আমি? কেন?’
‘ তোর হাজবেন্ড আর্মি অফিসার, কত্ত ফিট।তুই?আলুর বস্তা। তোর ও তোর হাজবেন্ড এর মত হতে হবে। একজন ক্যাপ্টেনের বউ হওয়া কি এত ইজি?’
‘ হইসে বাপ।আমি জানিনা কিছু।’

‘ জানতে হবে না।তুই উঠ।ফ্রেশ হয়ে আয়। আমার আরেকটা ইনট্যাক্ট ট্র্যাকস্যুট আছে।ওইটা তুই পরবি।চল উঠ।’
ঐশী হাত ধরে টেনে উঠিয়ে ওয়াশ রুমে পাঠালো আমাকে। আমি অলস ভঙ্গিতে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।মুখ মুছে দেখি ঐশী ড্রেস হাতে দাঁড়িয়ে আছে।এই মেয়ে আমাকে দিয়ে কি করাতে চাচ্ছে কে জানে। একদিনে কিসের ভূত চাপল ওর মাথায়!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দু ঘন্টা ঐশীর সাথে দৌড়াদৌড়ি করে নয়টার দিকে বাসায় ফিরলাম। রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছি আমি।ফিরেই বসার রুমে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম।ঐশী পাশে বিরক্ত মুখে বসলো। এরপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘ এমন করার কি আছে? হাঁটার থেকে একটু জোরে দৌড়েছিস।এটা তো কিছুই না।’
আমি ওর দিকে তাকালাম।বলে কি! এতদূর দৌড়িয়ে এনেছে। এখন বলে কিছুই না।সেই সাতটার দিকে বের হয়েছিলাম।এখন ফিরেছি।এই মহিলা সারাক্ষণ এক্সারসাইজ আর হার্ড ডায়েট মেইনটেইন করে।এখন আমাকে দিয়েও করাতে চাচ্ছে।এখন বুঝতে পারছি ও এত স্লিম আর সুন্দর কেন! আমি ঐশীর দিকে এক পলক তাকিয়ে কোন উত্তর না দিয়ে মা’কে ডাকলাম,

‘ মা।কি রান্না করছো খাইতে দাও। বাবা আর মুন কই?’
মা রান্নাঘর থেকেই উত্তর দিলেন,
‘ স্কুলে গেছে।তুই ফ্রেশ হয়ে আয় ঐশীকে নিয়ে।’
আমি তড়িঘড়ি করে উঠতে যাব ঐশী হেঁচকা টানে আবার বসিয়ে দিলো। এরপর বললো,
‘ সকালে কি বলেছি?আজ থেকে আমি তোর ইন্সট্রাক্টর। আমি যখন যা বলব তাই করবি।’
‘ করছি না?’
‘ কোথায়? এখন খাইতে বলেছি আমি? ফ্রেশ হয়ে আয়, এরপর আমি তোকে যতটুকু যা খেতে দিব তাই খাবি।যা ভাগ!’
আমি মুখ কালো করে উঠে গেলাম।এ আমাকে আমার লাইফস্টাইল থেকে বের করে ওর মত করে ছাড়বে।

সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছে।ছাদে বসে আছি।ঐশী আমার পাশে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।রাগে ফোঁস ফোঁস করছে শুধু। যেকোনো সময় ছোবল বসাতে পারে।এই ভয়ে ওর সাথে কথা বলতে ও সাহস হচ্ছে না।বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আস্তে করে বললাম,
‘ চল নিচে যাই।আর কতক্ষন এখানে থাকব?’
‘ **** আর একটা কথা বললে তোকে আমি ছাদ থেকে ফেলে দিব।’

আমি ভয় পেয়ে চুপ করে রইলাম। আমি কিছুই করিনি তারপরও এত রেগে গেল কেন?একে তো এক সপ্তাহ ধরে ক্যাপ্টেন সাহেবের সাথে যোগাযোগ নেই। যেদিন বান্দরবান পৌঁছেছিলেন সেদিনের পর বিকেলে কল করে বলেছিলেন আউট অফ নেটওয়ার্ক থাকবেন কিছুদিন।টেনশন করতে মানা করেছিলেন। কিন্তু সাতদিন হচ্ছে উনার পাত্তা নেই।আর এদিকে এত এত প্রেশার পাচ্ছি সবকিছু নিয়ে।ঐশী স্কুলের অংক টিচারের থেকেও বেশি রুড ইন্সট্রাক্টর। সবকিছু কোনোরকমে ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু আজকে হুট করে কি হলো কে জানে! আরিফিন ভাইয়া এলো বিকেলে আমাদের বাসায়।

আমাকে নিয়ে যেতে।নানু নানা আমাকে দেখতে চাইছেন খুব।নানা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চিন্তা করতে করতে।আর এত এত ঝামেলা গেল আমার উপর দিয়ে,আমি কেমন আছি না আছি, দু’টো দিন সেখানে থেকে আসলে আমার ও ভালো লাগবে।এত এত মানুষের ভিড়ে আমি ভালো থাকব।এসবের চিন্তা করে আরিফিন ভাইয়া কে নাকি নানা পাঠিয়েছে। আমি সব শুনে সাথে সাথে ই যেতে চাইলাম। ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঐশী কে ব্যাগ গুছাতে বলে নিজেও যাচ্ছিলাম কিন্তু ও আরিফিন ভাইয়া,বাবা আর মায়ের সামনেই আমাকে থাপ্পর মে’রে বসলো। এরপর টানতে টানতে ছাদে নিয়ে এলো।সেই থেকে এখনও এখানে বসে আছি।ভাইয়া চলে গেছে না আছে তা-ও জানিনা।
রাত হয়ে গেছে।হাতের ফোনটা তে দেখলাম সাড়ে সাতটা বাজছে। ঠান্ডা লাগছে ভীষণ।পাতলা একটা সোয়েটার গায়ে শুধু।ঐশী ও সেইম। আমার সময় দেখার কিছুক্ষণ পর ঐশী বললো,

‘ আচ্ছা ফারু!তুই কোন ধাতু দিয়ে তৈরি?’
আমি ওর দিকে তাকালাম। শান্ত হয়ে বসে আছে।রাগ কমে এসেছে বোধহয়। আমি স্বাভাবিক হলাম। বললাম,
‘ এটা আবার কেমন কথা? আমি কোন ধাতু দিয়ে তৈরি মানে?’
‘ হু।বল।’
‘ জানিনা।’
‘ আমি জানি।বলবো?’
‘ বল।’
‘ তুই বেহায়া নামের একটা ধাতুতে তৈরি। যার শরীরে র’ক্ত মাংসের পরিবর্তে আগাগোড়াই আত্মসম্মানহীন একটা বস্তু আছে।’

আমি থমকে গেলাম।কি জন্য এমন বলছে? আমাকে চুপ দেখে ও নিজেই বললো,
‘ যারা তোর এত বড় ক্ষতি করলো তুই তাদের জন্য এত উতলা কেন?তোকে নিতে আসলেই তুই চলে যাবি?তোর নানার বাড়ির মানুষ রা জানে তুই তোর বরের সাথে থাকিস নি। আরো বাজেভাবে বলতে বলিস না আমাকে।ওরা সুবিধার না। আরিফিন তোর পিছু এত সহজে ছাড়বে না। সেখানে গেলে তোর কপাল থেকে পরিবার,বর সবকিছুই হারিয়ে যাবে।এই সহজ জিনিসটা তুই বুঝতে পারছিস না কেন?’
‘ ঐশী ওরা আমার নানা নানু। আমার আপনজন।মানছি রিমি আপু আমার ক্ষতি করেছে কিন্তু উনারা তো কিছু করেনি।’

‘ চুপ ***। আর একটাও কথা বলবি না।কে ক্ষতি করেছে আর কে করেনি এই বোধ বুদ্ধি তোর এখনও হয়নি।এই তুই এই জিনিসটা ভাবলি না? যেখানে তোর বাবাকে মানতে তোর নানার বিশ বছর লাগলো সেখানে বিশ ঘন্টার আগেই ফাইয়াজ কে মেনে নিয়েছে।এটা তোর আত্মসম্মানে লাগে না?তোর বাপ যেখানে মূল্যহীন, সেখানে তুই এত ঢলাঢলি করিস। কেমন মেয়ে তুই? সবকিছু গভীর ভাবে না ভেবে এত সহজভাবে নিস কেন?এই অব্দি যা যা হয়েছে কিছু ভাবিস?এই তোর বর না ট্রেনিং এ আউট অফ নেটওয়ার্ক।তার জন্য না ভেবে তুই ঢলাঢলি করতে তোর নানা বাড়িতে যাচ্ছিস?ও তোকে যাওয়ার আগে বলে যায়নি ওই বাড়িতে না যেতে? নিজের বরের কথা না মেনে নাচতে যেতে চাচ্ছিস কোন সাহসে?আমি আছি, আমার পারমিশন ও নিলি না।এত সাহস আর নির্ভেজাল চিন্তাভাবনা আসে কোত্থেকে তোর?’

আমি একেবারে চুপ করে গেলাম।ঐশীর কথাগুলো ভিতর অব্দি নাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে।আসলেই তো!ও কিছু ভুল তো বলেনি। আমার বাবার কোনো দাম নেই ও বাড়িতে।রিমি আপুকে মানার জন্য আমার বাবাকে মেনেছে? আমি ওদের কত ভালোবাসি,আপন ভাবি। ওদের নিয়ে খারাপ কিছু মাথাতেই আসে না।এই দিকগুলো ভাবিই নি। অথচ এসবই সত্যি!সত্য এত খারাপ কেন? আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। খারাপ লাগছে খুব। সবকিছু সহজ করে ভেবে ভেবে এখন কঠিনভাবে কিছু ভাবতে পারি না।ঐশী আমার ভুল গুলো চিন্তাভাবনা গুলো সব ঠিকঠাক পথে নিয়ে যায় আর আমি একেকটা কঠিন সত্যের মুখোমুখি হই।

Love Triangle part 22

এতক্ষণ যা যা বললো সব আমার কানের মধ্যে দিয়ে গলিত সিসার মত গেছে। ক্যাপ্টেন সাহেবের সাথে থাকিনি বলতে ও কোনদিক দিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে খুব ভালো বুঝেছি।ঐশীর উপর আমার এতটুকু সন্দেহ ও নেই।ও আমাকে কখনো ভুল কথা, ভুল পথে চালিত করবে না।আমার নিজের নানা, নিজের মামা, আরিফিন ভাইয়া সবাই এত নোংরা মস্তিষ্কের? এত নোংরা ভাবে ভেবেছে? কিন্তু কেন? আমি ই কেন? সবসময় আমাকে কেন ওরা এসবের জন্য ভেবে নেয়?

Love Triangle part 24