Love Triangle part 24
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
অনেক্ষণ পর ঐশী বললো,
‘ চল নিচে যাই।’
আমি চুপচাপ নেমে এলাম।এসে দেখি বাবা টিভি দেখছে।মা ও বসে আছে সাথে। আমাদের দেখে বললো,
‘ আরিফিন চলে গেছে।তোমরা খেতে বসো।’
আমরা রোবটিক পুতুলের মত খাবার টেবিলে বসলাম। কারোর মুখে কোন কথা নেই।মা খাবার দিলো। আমাদের মাপ অনুযায়ী। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম। ঐশী ও এলো কিছুক্ষণ পর।এসে দরজা বন্ধ করে বেডে বসলো। এরপর বললো,
‘ এভাবে চুপ করে গেছিস কেন?এসব কিছুই বাস্তব।মেনে নে।যত দ্রুত মানবি তত দ্রুত ওদের মায়াজাল থেকে বাঁচবি।’
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম জানালার পাশে।ওর কথা শুনে আমি ও এসে বেডে বসলাম। এরপর বললাম,
‘ আমি না খুব বোকা। কাউকে খারাপ ভাবতে পারি না।কেউ যে আমার ক্ষতি করতে পারে এটা কখনো মাথাতেই আসে না।’
‘ জানি আমি। এজন্যই তোকে ট্রেনিং দিচ্ছি। একজন আর্মি অফিসারের বউ হয়ে এরকম বোকামি করলে তো চলবে না। তখন পদে পদে রিস্ক। সবকিছু বুঝেশুনে চলতে হবে।আগে থেকেই ট্রেনিং নিলে সহজ হবে। যোগ্য বরের যোগ্য বউ।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি চুপ করে রইলাম। চিন্তাভাবনা ফের ক্যাপ্টেন সাহেবের দিকে এসেছে।উনি কল করছেন না।আমাকে কল করতে বারণ করে দিয়েছিলেন সেদিন।এখন খারাপ লাগছে।এই সময়টাতে উনাকে দরকার ছিল আমার। খারাপ সময়টাতে আমি উনাকে কেন চাচ্ছি জানিনা। শুধু মনে হচ্ছে উনি থাকলে আমার মন খারাপ এতটুকু হলেও কমে যেত। ঐশীকে বললাম,
‘ আমি কি একটা কল করবো?’
ঐশী সাথে সাথে বাঁধা দিলো।
‘ না।এই সাহস ভুলেও করিস না।যদি মিশনে থাকে আর ভুল করেও ফোন অফ করতে ভুলে যায় তাহলে তোর একটা কল অনেক বড় ক্ষতি করে দিবে।’
‘ কি করব তাহলে? এতদিন কেউ আউট অফ নেটওয়ার্ক থাকে?’
‘ থাকে।প্যারা নিস না।ভাইয়া ঠিক আছে একদম। আমার উপর বিশ্বাস রাখ।’
আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।ও আমাকে তাকাতে দেখে আবার বললো,
‘ দেখিস আজ কালকের মধ্যে ই কল দিবে। এক সপ্তাহ দীর্ঘ সময়।এর বেশি সচরাচর থাকে না।টেনশন না করে ঘুমা যা।’
আমি কথা বাড়ালাম না। এমনিতেও মন মেজাজ ভালো নেই।তার উপর ক্যাপ্টেন সাহেব! আমার ঘুমানো ই শ্রেয়। আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম। একবার মাথা বের করে দেখলাম,ঐশী ফোন দেখছে। আমি আবার মাথা ঢেকে নিলাম। ঘুমাতে হবে আমার। তাহলে একটু শান্তি পাব।
ঘুম ভাঙল বেশ দেরিতে। নয়টা বাজে। কিসের জন্য জানি এলার্ম সেট করেছিলাম নয়টার দিকে।সেই এলার্ম বেজে চলেছে। আমি অলস হাতে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নয়টা!!! তাড়াতাড়ি করে এলার্ম বন্ধ করলাম।উঠে দেখি আশপাশে ঐশী নেই।আজকে কি এক্সারসাইজ করবে না? ডাকলো না আমাকে। আমি দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে বের হলাম। রুমের বাইরে এসে দেখি কেউ নেই।পুরো বাসাতেই কেউ নেই। রান্নাঘর বাবা মায়ের ঘর কোথাও কেউ নেই।গেল কোথায় সব? আমি ফের রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে কল করলাম ঐশী কে। দু’বার রিং হতেই রিসিভ করলো,
‘ হ্যালো! কোথায় তুই?বাবা মা কোথায়?’
‘ বাজারে আসছি। আঙ্কেল তো স্কুলে। আমি আন্টির সাথে বাজার করতে আসছি।’
আমি কল কেটে দিলাম। চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। বসার রুমে এলাম।সোফাতে গা এলিয়ে বসে রইলাম। চোখের দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে। অপেক্ষা করতে লাগলাম ক্যাপ্টেন সাহেবের কলের। আশ্চর্য! এখন নয়টা পার হয়েছে। আমি জানিনা উনি আজ কল দিবেন কি-না। তারপরও উনার কলের অপেক্ষা করছি। ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগলো।কল আসবে না জেনেও অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভালো ই লাগছে অপেক্ষা করতে।৯:৩৪ বাজলো যখন তখন স্ক্রিন অন হলো হঠাৎ।দুই সেকেন্ড পর incoming call from Arko!! আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যাবার উপক্রম। কোনোমতে ফোনটা ঠিক করে ধরে কল রিসিভ করলাম।ভাবার সময় ও নেই। কানের কাছে নিয়ে এক্সাইটমেন্ট চাপা দিতে কাঁপা কাঁপা গলায় হ্যালো বললাম।অপাশ থেকে শান্ত, গম্ভীর একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
‘ ভালো আছো ম্যাডাম?’
আমি চুপ করে রইলাম।আর কথা বেরুচ্ছে না গলা দিয়ে। কি হলো আমার? আমাকে চুপ থাকতে দেখে ক্যাপ্টেন সাহেব আবার শুধোলেন,
‘ ম্যাডাম? কেমন আছো?’
কয়েক সেকেন্ড পর আমি ধীরে ধীরে বললাম,
‘ ভা ভালো।আপনি কেমন আছেন?’
উনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।নিজেই প্রশ্ন করলেন,
‘ আমার উপর রেগে আছো তাই না?ভাবছো এটা কেমন বিয়ে করলে,সাথে থাকা দূরে থাক এক মিনিট সময় ও হয় না কথা বলার।তাই না?’
‘ না না।রাগ করব কেন? আপনি ট্রেনিং এ আছেন জানি তো।’
‘ আ’ম স্যরি ম্যাডাম। আমি তোমাকে এতটুকু ও সময় দিতে পারছি না।হার্ড ট্রেনিং। এবছর জয়েন করেছে যারা তাদের হার্ড ট্রেনিং দিতে হচ্ছে।রিস্কি এলাকা।মিশনে নামতে হবে আর কিছু ট্রেনিং দেওয়া শেষ হলেই। আমি এত প্রেশারে আছি, ঠিকভাবে খাবার সময় অব্দি পাচ্ছি না।দিনে একবার খাচ্ছি তা-ও ঠিকঠাক মত না।
সবকিছু গলার
কাঁটা হয়ে বসে আছে। আমি তোমাকে সময় দিতে পারছি না আমার ও খারাপ লাগে।
তুমি রাগ করে থাকিও না আমার উপরে।প্লিজ?’
আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। আমি রাগ করি নি এটা কিভাবে বুঝাই। আমার খারাপ লাগছে এসব শুনে।উনার কন্ঠস্বর ভারি।এই কন্ঠস্বরে এসব নেওয়া সহজ ব্যাপার না। আমার খারাপ লাগছে খুব।চুপ করে রইলাম আমি। আমার থেকে রেসপন্স না পেয়ে ডাকলেন আমাকে।
‘ ম্যাডাম?আছো?’
‘ হু। আপনি প্যারা নিয়েন না।আমি রাগ করিনি। আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি। নির্বিঘ্নে ট্রেনিং শেষ করুন।একটু সাবধানে থাকবেন।’
‘ আমার অবস্থা আমি বুঝাতে পারছি না। খুব বাজে না স্যরি!প্রেশারে আছি অনেক। আচ্ছা শোনো।আমি কল করেছি এটা কাউকে বলবে না। কেমন?আর তুমি কখনও কল দিয়ো না। আমি এখন রাখছি। রাতে সুযোগ পেলে কল করব আবার।’
সাথে সাথে কল কেটে গেল। আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ট্যাচুর মত বসে রইলাম।উনি এমনভাবে কথা বললেন কেন? যেন খুব খারাপ লাগছে উনার। আমার নিজের আর কিছু ভালো লাগছে না এভাবে কথা বলে।আমি উনার স্ত্রী। স্রষ্টা প্রদত্ত টান কাজ করছে উনার প্রতি। আমার উনার জন্য খারাপ লাগছে। ট্রেনিং কি এবছর ই হার্ড করলো? নাকি প্রতি বছরই এমন হয়?কি এমন ট্রেনিং যে এত প্রেশার পরে?
আমি চুপচাপ কল লিস্ট থেকে উনার নাম্বার ডিলিট করে দিলাম। এরপর ফোন আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ই মা আর ঐশী ফিরে এলো।গেইট খুলে দিলাম।ওরা বাসায় এসেই হাসি হাসি মুখ করে বললো,
‘ আজকে অনেক বাজার করেছি।আমি নিজে। দরদাম শিখে গেছি।’
মা রান্নাঘরে বাজারের ব্যাগ টা নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
Love Triangle part 23
‘ আহির থেকে ভালো বাজার ঐশী ই করতে পারে।যা কান্ড করলো আজ।’
আমি এসবে আগ্রহ পাচ্ছি না।মনমরা হয়ে একটু হাসলাম। এরপর আবার চুপচাপ বসে রইলাম। আমার মন খারাপ খেয়াল করলো না দুজনের কেউই।তারা রান্নাঘরে ঢুকে গেল।মনে হচ্ছে ঐশী আজকে নিজেই রান্না করবে। আমার ধারণা সত্যি করে দিয়ে ঐশী রান্নাঘর থেকে গলা বাড়িয়ে বললো,
‘ আজকে একটু উপোস কর। আমি রান্না করব আন্টি শিখিয়ে দিবে। এরপর খাওয়া।তুই টিভি দেখ।’