Love Triangle part 5
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা
ভয়ে ভয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি বেশ বুঝতে পেরেছি এই মানুষটা আমার জন্য ই এখানে এসেছে।কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।উনার কাছে দাঁড়িয়ে হালকা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আপনি এখানে কেন এসেছেন?’
‘ তুমি কোন উত্তর দিলে না তাই। ভেবেছি,লেখাটা দেখো নি।সত্যিই কি?’
‘ না।দেখেছি।’
আমার উত্তর শুনে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী।আহত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
‘ তাহলে কল করলে না কেন?
তোমার, তোমার কলের জন্য আমি কালকে দুপুর থেকে সারারাত অপেক্ষা করেছি। জানো এটা? কেন করলে না? তুমি কি রেগে আছো আমার উপরে? আমি ক্ষমা চাইলাম তো। এখন যদি তুমি বলো তাহলে তোমার বাবার কাছে গিয়েও ক্ষমা চাইবো।’
আমি কিছু না বলে উনার দিকে তাকালাম।আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।একবার পরখ করলাম উনাকে।ডাক্তার হলেও বেশ হ্যান্ডসাম তিনি।ব্ল্যাক শার্ট,গ্রে প্যান্ট এর কম্বিনেশনে সুন্দর লাগছে ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী কে। আমার থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে মরিয়া হয়ে আবার শুধোলেন,
‘ বলো না।রেগে আছো?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বললাম।গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।বাবা যখন তখন আসতে পারে।মনে হতেই আমার ভয় হলো।
ভয় পাওয়া গলায় বললাম,
‘ আপনি প্লিজ এখান থেকে চলে যান।বাবা যদি আমাদের এখানে দেখে ফেলে আপনি ভাবতেও পারছেন না আমার কি অবস্থা করবে।প্লিজ!আর আসবেন না এভাবে। আমি যাচ্ছি।’
পাশ দিয়েই খালি সিএনজি যাচ্ছিল একটা। আমি হাত বাড়িয়ে দাঁড় করালাম।মুন কে দ্রুত সিএনজি তে উঠে বসলাম ব্যাগ সহ।নানার বাসার ঠিকানা বলে বললাম নিয়ে চলেন সেখানে। সিএনজি চলতে শুরু করলো। আমি একবার পিছন ঘুরে তাকালাম মুখ বাইরে বের করে।দেখি উনি আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন।মনে হচ্ছে,কেউ মারা গেছে উনার। আমি ভিতরে ঠিক হয়ে বসলাম ফের।এসব দেখে মাথা ঘামাতে গেলে আমার বাড়ি ছাড়া হতে হবে।থাকুক উনি ওভাবেই। আমি রেসপন্স না করলে ঘাড় থেকে আমার ভূ’ত আপনাআপনিই নেমে যাবে।
নানার বাসার দূরত্ব আমাদের বাসা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট মত হবে।বাসা থেকে বের হয়েছিলাম দশটার দিকে।দশটা পঞ্চাশে এসে পৌঁছাল সিএনজি। আমার নানা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ডুপ্লেক্স বাসা।নানা বেশ ধনী হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেকটাই দরিদ্র।এখনো অব্দি নিজেদের একটা বাড়ি হয়নি।ভাড়া বাসায় থাকি।বাবা হাই স্কুলের সহকারী হেডস্যার।স্কুলের বেতনে সংসার চলে।অবশ্য মায়ের আর সব ভাইবোনদের ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে। মায়ের সেই সুযোগ ছিল না।বাবাকে মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।নানা মেনে নেননি।এখন পর্যন্ত।বাবা এখনও নিজের শ্বশুরবাড়িতে আসেই নি।যদিও এসবের রেশ আমাদের ভাই-বোন আর মায়ের উপর পড়েনি।নানা বাসার সবাইই আমাদের ভীষণ আদর করেন। নানা তো আহি বলতে অন্তপ্রাণ। আমি এসেছি শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ত নানা ই হবেন।
সিএনজি থেকে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম বাইরে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে রিমি আপুর বিয়ে উপলক্ষে। মানুষের আনাগোনা ও আছে। আমি সিএনজি থেকে ব্যাগ নিয়ে নামলাম।মুন নামলো।ভাড়া মিটিয়ে দেখলাম আশপাশে ভাইয়া আপু রা কেউ আছে কি-না। কাউকেই চোখে পড়ছে না তেমন। নতুন মুখ সব।যদিও সবাই অনেক বড়।মুন কে নিয়ে বাসার দিকে এগিয়ে গেলাম। গেইটের সামনে আসতেই দেখি রিমি আপু আসছে। আমার দিকেই আসছে হাসি মুখে। সুন্দর লাগছে খুব।আপুকে আগে এত সুন্দর লাগেনি দেখতে। শুনেছিলাম বিয়ের আগে মেয়েদের চেহারা গ্লো করে।আগে বিশ্বাস করিনি।এখন দেখছি সত্যিই। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপুকে দেখে এসবই ভাবছিলাম। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আপু কাছে এসেই মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,
‘ এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধ্যান করা হচ্ছে হু?’
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলাম।আপু আমাকে কাছে টেনে নিলো। এরপর বললো,
‘ ফুপি আমাকে কল করে বলেছে তুই বাসা থেকে বের হয়েছিস।আন্দাজ করেছিলাম এখনই আসবি।দেখলি? ঠিক হলো তো। আমার গেস কেমন বল এখন?’
আমি আপুকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
‘ পাক্কা বস। মা’রা’ত্ম’ক গেস আপনার।’
‘ আয় এখন বাসায়।সবাই আহি পাখি কে দেখতে অপেক্ষা করছে কখন থেকে।’
আপু আমার হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে মুন কে বললো,
‘ জামাই? এতদিন পর বউয়ের কথা মনে পড়লো বুঝি?’
মুন লজ্জায় আমার পিছনে লুকিয়েছে।আপু হাসতে হাসতে ওর হাত ধরে বাসার দিকে এগোলো।রিমি আপু আমার বড় মামার মেয়ে।মামার একটাই মেয়ে।এবার মেডিকেল ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট আপু। দারুণ ব্রিলিয়ান্ট।সেই তুলনায় আমি কিছুই না। ঠেলেঠুলে এইচএসসি পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।এবার সেকেন্ড ইয়ার।আমার পুরো নাম ফারিয়া আহি।নানার বাসায় আমাকে সবাই আহি নামেই চিনে।কেউ যদি হুট করে এসে জিজ্ঞেস করে, ফারিয়া আছে? আমি শতভাগ নিশ্চিত কেউই চিনবে না যে তাদের আহিই ফারিয়া। আপুর সাথে বাসায় ঢুকলাম। সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। ডেকোরেশন এর লোকজন পুরো বাড়ি জুড়ে।নানু বড় মামী কে কি যেন বলছিলেন, আমাকে দেখে একটু অবাক হয়ে পরক্ষণেই খুব খুশি হয়ে গেলেন।মা হয়ত নানু কে কিছু জানায়নি যে আমি আসছি। আমি নানুর কাছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
‘ কেমন আছো সাজিয়া বুড়ি? আমাকে মিস করছো একদিন ও?’
নানু আমার গাল টিপে দিয়ে বললেন,
‘ আমার আহি কে মিস না করলে কাকে করব? কিন্তু তুই আসছিস আমাকে রুমা বললো না কেন? সকালেও তো কথা হলো তার সাথে।কিছুই বললো না মেয়েটা।’
‘ সারপ্রাইজ!’
‘ পাগলি আমার।’
নানু আমাকে আদর করে মুন কে কোলে নিলেন।মুন এতক্ষণ চুপ হয়ে ছিল কিন্তু নানুর কোলে উঠেই নানু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো।নানু ওকে সামলাবে ক্ষণ।রিমি আপু আমার ব্যাগ নিয়ে তার রুমে গেল।আর আমি মামীর সাথে কথা বলে বড় মামা ছোট মামা সহ আর সবার সাথে আলাপ করতে দৌড়ালাম।
দুপুরে খাওয়ার পর আমি রিমি আপুর রুমে বিছানায় শুয়ে আছি।দরজা লক।আপু আমার পাশে বেডে হেলান দিয়ে বসেছে। ভাই-বোন ব্যতীত বাকি সবার সাথে অলরেডি দেখা হয়েছে আমার। কিন্তু মামাদের ছেলেমেয়েদের সাথে এখনও দেখা হয়নি। আমি রিমি আপুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আচ্ছা আপু!ইফাদ ভাইয়া, আরিফিন ভাইয়া,মৌ, সুহান এরা সবাই কোথায়? দেখলাম না যে!’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ সবাই বিয়ের জন্য নিজেদের শপিং করতে গেছে।ব্রাইডের কাজিন কি-না।সবাই সেইম ড্রেস কোড করবে।’
‘ আমি বুঝি তোমার কাজিন না? আমাকে বাদ দিয়েই?’
মন খারাপ হয়ে গেল আমার।আপু আমার মাথায় চাটি মেরে বললো,
‘ মা’র খাবি? বান্দর মাইয়া।তোর জন্য তো কিনবে ই।টোটাল পঁচিশ জনের জন্য করবে।তুই হচ্ছিস প্রথমেই।তোর সাথে ম্যাচ করবে মেয়েরা।আর ইফাদ ভাইয়ার সাথে ছেলেরা।বলদ মহিলা।’
আমার মন ভালো হয়ে গেল।খু্শি খুশি হয়ে বললাম,
‘ তাহলে ঠিক আছে।আপুউউউউউ! তোমার বর সম্পর্কে বলো না। আমার দুলাভাই কেমন ,কি করে,বাসা কোথায় ব্লা ব্লা! সবকিছুই বলো। নাহলে হুহহহহহহ!’
‘ বাবারে!এত প্রশ্ন।বলছি বলছি।তোর দুলাভাই আর্মিতে আছে। ক্যাপ্টেন র্্যাংক। দেখতে আছে হ্যান্ডসাম। পছন্দ করার মত। বাসা গুলশান থানার কাছেই।’
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলাম আপুর দিকে। অবাক হয়েই দুষ্টুমির স্বরে বললাম,
‘ হ্যা???? ক্যাপ্টেন?কেইস কি আপু? ক্যাপ্টেনের বউ হয়ে যাচ্ছো চুপিচুপি।আর আমি জানতেও পারলাম না।স্যালুট বস!’
আপু আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। আপুও তাল মিলিয়ে বললো,
‘ ধন্যবাদ শিষ্য।’
আমি উঠে বসলাম। এরপর আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘ দুলাভাই কে দেখাও না একটু। আমিও দেখি আপুর হাবি দেখতে কেমন।’
‘ না। সারপ্রাইজ রইলো তোর জন্য।’
‘ কেনো?এটাতে আবার সারপ্রাইজ এর কি আছে?’
‘ আছে আছে।সময় এলেই সব বুঝতে পারবি।এখন চুপটি করে ঘুমা তো। টায়ার্ড হয়ে আছিস।রাতে অনেক প্ল্যানিং করতে হবে।তখন ঘুম ঘুম করলে চলবে না।’
Love Triangle part 4
আমি কিছুটা নিরাশ হয়ে আবার শুয়ে পরলাম।একটু খারাপ লাগছে আবার খুশি ও লাগছে।যাক,ফাইনালি কোনো আর্মি অফিসারের বিয়ে আমি নিজ চোখে দেখতে তো পাবো।হুফফফফফ,আপু নাম না জানা ক্যাপ্টেনের ব্রাইড।আর আমি তার অন্যতম শালিকা।ইয়েএএএএএএ,,,,,,,,,,!!!!!