Love Triangle part 6

Love Triangle part 6
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

ঘুম ভাঙল রাতে। নয়টা বাজি বাজি করছে।আপু ডেকে ঘুম থেকে তুললো আমাকে। আড়মোড়া ভেঙে উঠতে বললো,
‘ ইফাদ ভাইয়া রা চলে এসেছে।চল চল,দেখ ড্রেস পছন্দ হয় কি-না।’
আমি দুহাতে চোখ কচলাতে কচলাতে বেড থেকে নেমে আপুর পিছনে পিছনে গেলাম। ঘুম এখনও পুরোপুরি হয়নি আমার। ওষুধ খেয়েছিলাম দুপুরে। প্রচন্ড ঘুম ঘুম পাচ্ছে এতক্ষণ ঘুমিয়েও। আপু আমাকে ধরে ধরে নিয়ে গেল ড্রইং রুমে।বাড়ির আন্ডা বাচ্চা সব আছে। খালাদের ছেলেমেয়েরা, মামাদের ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে রুম গিজগিজ করছে।ওল্ড সিটিজেন রা কেউই নেই অবশ্য। ছেলেপুলে দের ব্যাপারে ওরা ইনক্লুড হয়নি। আমি আর রিমি আপু সেখানে যেতেই সবাই হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠলো।ইফাদ ভাইয়া বললো,

‘ আরে আহি পাখি যে! তুই আসবি আমাকে বললি না কেন? আমি নিজে গিয়ে তোকে নিয়ে আসতাম।’
‘ তাইইইই?’
মৌ আপু অবাক হবার ভান করে ইফাদ ভাইয়ার দিকে তাকাল।ভাইয়া একটু থতমত খেয়ে বললো,
‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই। আমি যেতাম তো।’
আমি হাসলাম। সবাই মজা শুরু করেছে ইতিমধ্যে।সবার হাসাহাসি তে ঘুম কেটে গেল অনেকটাই।রিমি আপু সবাইকে সাইড দিতে বলে আমাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে নিজে ফ্লোরে বসলো।সবাই সোফা,ফ্লোর মিলিয়ে বসেছে, কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। বসেই রিমি আপু বললো,
‘ আ ভাইয়া!আহি কে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। একটু দেখাও ড্রেস গুলো।বেচারী কে নিয়ে যাওনি দেখে রাগ করে ঘুমিয়েছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ দেখাচ্ছি বাবা দেখাচ্ছি।’
এই বলে ইফাদ ভাইয়া একটা ব্যাগ থেকে লেহেঙ্গা সেট বের করলো একটা। এরপর মেলে ধরলো। কাঁচা হলুদ রঙের সেমি ব্রাইডাল লেহেঙ্গা। আমি অবাক চোখে কিছুক্ষণ ধরে ধরে দেখলাম।এত সুন্দর যে চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করছে না। আমার রিয়েকশন দেখে ইফাদ ভাইয়া চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আহি! পছন্দ হইছে তো?’
‘ হ্যা!খুব।অনেক সুন্দর তো।’
‘ দাঁড়া, তাহলে মেহেদি আর বিয়ের ড্রেস গুলো ও দেখাই।’
ডার্ক গ্রীণ রঙের শাড়ি আর মেরুন রঙের থ্রি পিস বের করলো ভাইয়া। আমার এসব দেখে মনে হচ্ছে my brain is not braining !গালে হাত দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ বিয়েতে কি সবাই এই সেইম থ্রি পিস পরবে?’

ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।যেন বুঝতে পারছে না তার সামনে মানুষ নাকি মানুষরূপী গাধা বসে আছে। সেইম ভাবে তাকিয়েই বললো,
‘ না।এটা শুধু তোর জন্য।বাকিরা ওদের পছন্দ অনুযায়ী কিনেছে যার যেটা ভালো লাগে।তোকে থ্রি পিসে খুব সুন্দর লাগে,আর কালার টা দেখ।রিমির ব্রাইডাল লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে। এজন্যই এটা এনেছি তোর জন্য। পছন্দ হয়েছে তো?’
‘ হু। আমার ড্রেস, কসমেটিকস সব আমাকে দাও। নষ্ট করে ফেলবা তো।’

আমার এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠল। আমি কাচুমাচু হয়ে ঘাড় চুলকাতে লাগলাম। ইফাদ ভাইয়া হাসতে হাসতে ই সব ড্রেস ভাঁজ করে গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে আমার হাতে দিলো। পাঁচটা ব্যাগ। এতে অর্নামেন্টস সেট আছে, ড্রেস গুলো আর জুতা। সবকিছুই ওর পছন্দের। কি আর করা। আমি যেহেতু যাই নি।তার উপর ইফাদ ভাইয়া আমার নিজের ভাইয়ার থেকেও বেশি কেয়ার করে আমাকে। মাঝেমধ্যে ভাবি এ আমার নিজের ভাই হলে মন্দ হতো না। সেজন্য ভাইয়ার পছন্দের পরতে বাধা নেই। আমি ব্যাগ গুলো নিয়ে বসে রইলাম। ভাইয়া আর সবাইকে তাদের ড্রেস গুলো বুঝিয়ে দিল। এরপর আমাকে বললো,
‘ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। খাওয়া শেষ হলেই ছাদে চলে আসবি। মেহেদি, হলুদের জন্য বিভিন্ন প্ল্যানিং করা লাগবে।আর জানিস তো রিমির বর ক্যাপ্টেন?’

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।ভাইয়া এরপর বললো,
‘ ক্যাপ্টেন দুলাভাই এর জন্য কিন্তু আলাদা থেরাপির ব্যবস্থা করা হবে শ্যালক শ্যালিকা দের পক্ষ থেকে।যা যা, তাড়াতাড়ি খেয়ে ছাদে আয়।’
আমি হেসে মাথা নাড়িয়ে উঠে এলাম।আপু ততক্ষণে থেরাপি কি এইসব নিয়ে বকবক শুরু করেছে ইফাদ ভাইয়ার সাথে। আমি চলে আসার পর আমার পিছু পিছু আরিফিন ভাইয়া ও এলো।এই একটা মাত্র মানুষ,যাকে দেখলেই আমার অস্বস্তি হয়। কেমন যেন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে,সেইম ভাবে ই কথাও বলে।নিতে পারি না আমি। এতক্ষণ সেখানে বসেছিলাম,আমি বেশ বুঝতে পেরেছি ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল।আপু ভাইয়া রা জানে সবাই, কিন্তু কিছু বলে না। পাত্তা দেয় না অতটা। রুমের দরজার সামনে আসতেই ভাইয়া পিছন থেকে ডাকলো,

‘ আহি শোনো।’
আমি হাত বাড়িয়ে দরজা খুলতে যাচ্ছিলাম।হাত থেমে গেল।বুক ঢিপঢিপ করছে। পিছনে ঘুরে স্বাভাবিকভাবেই বললাম,
‘ কিছু বলবা?’
‘ না না তেমন কিছু না। আস্তে কোনো সমস্যা হয়নি তো না?’
আমি তাকিয়ে রইলাম ভাইয়ার দিকে। শুধু এই প্রশ্ন করার জন্য পিছনে পিছনে এলো। অদ্ভুত মানুষ!মুখে বললাম,
‘ না।কোনো সমস্যা হয়নি।’
ভাইয়া কাঁধে হাত দিলো নিজের।হাত ঘষছে।কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না হয়ত। মিনিট খানেক চুপ করে থাকার পর বললো,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।ব্যাগ রেখে এসো। একসাথে ডিনার করব।’
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।ভাইয়া বললো,
‘ আরে ইফাদ রা বাইরে থেকে ডিনার করে এসেছে। আমার ভালো লাগছিল না বলে করিনি।এখন ভাবলাম তোমার সাথেই ডিনার করি।’
‘ আচ্ছা।দু মিনিট দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তাহলে।’
রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা লক করে ব্যাগ গুলো ডেস্কের উপর রেখে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম।ব্রাশ করলাম। চোখমুখে পানি দিয়ে মুখ মুছে বের হয়ে এলাম। ঝরঝরে লাগছে এখন।ঘুম পুরোপুরি কেটে গেছে।দরজা খুলে বের হয়ে দেখি ভাইয়া দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বের হতে দেখে বললো,
‘ এসো।’

ভাইয়ার সাথে সাথে চললাম।রিমি আপুর রুম দোতলায়।একটু সাইডের দিকে রুম।আমরা হাঁটছি ধীরে ধীরে। সিঁড়ি ভেঙে নামলাম।ভাইয়ার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে দেখেছি হাত ঘষছে।এমনটা যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলে উঠতে পারছে না। আমার আশপাশে আসলেই এরকম করে ভাইয়া।ইফাদ ভাইয়া যেমন ভাই সুলভ আচরণ করে, আরিফিন ভাইয়া তা নয়। তার আচরণ টাই অন্য রকম।হজম করতে কষ্ট হয়। আমি ডাইনিং টেবিলে এসে চেয়ার টেনে বসলাম। আমার মুখোমুখি বসলো ভাইয়া।রিমি আপু খায়নি এখনও। আমাদের বসতে দেখে আপু উঠে এলো।আর সবাই ছাদে চলে গেছে। নানু, বড় মামী আর রিমি আপু ছাড়া কেউ নেই নিচে।আপু এসে প্লেট দিলো আমাদের সামনে।

‘ নানু,মামী খেয়েছে আপু?’
আমার প্রশ্নের উত্তরে আপু হ্যা বললো। প্লেটে ভাত দিতে দিতে বললো,
‘ মুনের ঘুম পাচ্ছিল খুব। সেজন্য ওর সাথেই বড়রা সবাই খেয়ে নিয়েছে।তুই ঘুমুচ্ছিলি তাই ডাকি নি।আমিও খাইনি তোর জন্য।’
‘ এখন আমাদের সাথে জয়েন হন বস।শিষ্য আপনাকে ছাড়া খাবে না।’
আপু আমাদের ভাত, তরকারি দিয়ে নিজের প্লেটে তুলে নিতে নিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। যেমন ভাবে আমি কথা বলি,না হেসে উপায় নেই। আমি ও ফিরতি হাসি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।

খাওয়া শেষে ছাদে এসেছি তিনজন। আমি রিমি আপু আরিফিন ভাইয়া।আর সবাই ছাদের এক কোণে পাটি বিছিয়ে গোল হয়ে বসেছে।আমরা ওদের থেকে কিছুটা দূরে আছি। ঠান্ডা বাতাসে হালকা কাঁপুনি অনুভব করলাম।আপু বলেছিল চাদর নিতে।আমিই বীর সেজে নিই নি।এখন ঠান্ডা লাগতেই আপুকে বললাম,
‘ এই সময়ে বিয়ে না করলে হতো না?ঠান্ডা লাগে ধুর।’
আপু মাথায় আস্তে করে চাটি মা’র’লো একটা। এরপর হাতে ধরে থাকা চাদর টা আমার গায়ে দিয়ে দিতে দিতে বলল,

‘ নিজে জেদ দেখিয়ে পরিস নি এখন আমার বিয়ের দোষ না?পা’জি মেয়ে।’
‘ উফফ আপু। কতগুলো বিশেষণ আর লাগাবে আমার নামের সাথে? বলো তো দেখি?’
‘ যতগুলো ইচ্ছে।এখন চল ওইদিকে।আমরাও শুনি কি কি বলছে ওরা।’
আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললাম,
‘ না আপু।আমরা না যাই। ভাইয়া! তুমি গিয়ে বলো আমরা নিজেরা একটু গল্প করব।তোমরা সবাই প্ল্যান করো। আমাদের পরে সামারি করে দিলেই হবে।প্লিজ প্লিজ প্লিজ!’

আরিফিন ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি স্বাভাবিকভাবে বললেই সে শুনত কিন্তু যেভাবে প্লিজ প্লিজ বলা শুরু করেছি। কোনোরকমে হেসে বলল, ‘ ঠিক আছে।তোমরা গল্প করো। আমি ওদের মানিয়ে নিবো।’
আরিফিন ভাইয়া চলে গেল।ছাদে আমরা যেই সাইডে সেখানে রেলিংয়ের সাথে লাগোয়া বেঞ্চ বসানো আছে।আপু আর আমি সেখানেই বসলাম। আমি মূলত আপু কে রেখেছি ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী কে নিয়ে কথা বলার জন্য।আপু কে আমার সমস্ত কিছু শেয়ার করি।এটা না করলে শান্তি পাব না।হাতে প্রেসক্রিপশন থেকে নাম্বার টা নোট করে এনেছি।আপু অনুমতি দিলে কল দিবো আজ। কিছু টা সময় পার হলে এক হাতে আপুর হাত ধরে বললাম,
‘ আপু। আমার না তোমাকে কিছু বলার আছে।’

‘ হ্যা বল না।’
‘ কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না ঠিক।’
আপু আমাকে অভয় দিয়ে বললো,
‘ যেভাবে পারিস বলে ফেল তো।আমিই তো,অন্য কেউ তো না।বল কি হয়েছে?কোনো প্রেম ঘটিত সমস্যা নাকি মিস আহি?’
আমি অপ্রস্তুত হয়ে হাসলাম।

‘ না ঠিক। তেমন কিছু না। আসলে আপু আমাকে একটা ডাক্তার পছন্দ করে।তার জন্য আমাদের বাসায় অনেক বড় ঝামেলা হয়েছে। এখন সে চাচ্ছে আমি যেন তার সাথে যোগাযোগ করি।ফোন নাম্বার দিয়েছে। আমার ভয় লাগছে যোগাযোগ করতে।কি করব এখন?’
একদমে কথাগুলো বলে অন্যদিকে তাকালাম। আপু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কথাবার্তায় বুঝা যাচ্ছে আমি ডাক্তারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আদতে তা না।আপু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ তা বেশ তো। যোগাযোগ কর তাহলে। আমার ফোন থেকে কল কর।তুই কথা না বলতে পারলে আমি করব।এইইইই তার আগে বল আমাকে। ডাক্তার টা দেখতে হ্যান্ডসাম তো?’

Love Triangle part 5

আপুর এই প্রশ্নে আমি কেন জানিনা ভীষণ লজ্জা পেলাম। লাজুক হাসি হেসে মাথা নাড়িয়ে বললাম হ্যাঁ। আপু হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে ই তার ফোন আমার দিকে বাড়িয়ে দিল কল করার জন্য। আমি হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলাম।আনলক করে কল অ্যাপে গিয়ে ডায়াল প্যাডে নাম্বার তুলতে লাগলাম হাত থেকে।ছয়টা ডিজিট উঠানোর পর আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল।ফোনে ডায়াল প্যাডে সেইভ হয়ে থাকা নাম্বার টা আর আমার হাতে লিখা নাম্বার টা বারংবার মিলিয়ে দেখলাম।দুটো নাম্বার সেইম।মানতে কষ্ট হচ্ছে কেন জানি।উনার পার্সোনাল নাম্বার আপুর ফোনে ডায়াল প্যাডে কেন? কিন্তু….. আমি আপুর দিকে তাকালাম।

Love Triangle part 7