Love Triangle part 9

Love Triangle part 9
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

সাজা শেষে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখলাম।আপু শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে‌ আমাকে। নিজের দিকে নিজেরই নজর লেগে যাবে।একটু লজ্জা পেলাম নিজেকে দেখে। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আপুকে দেখলাম।আপু ও শাড়ি পরেছে।কালো ব্লাউজ,নীল রঙের শাড়ি।যেন নীল পরী নীলাঞ্জনা!এত সুন্দর লাগছে আপু কে। লিপস্টিক দেওয়া শেষ করে আমার কাছে এলো আপু। কিছুক্ষণ আমাকে দেখে বললো,
‘ এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিলাম, তারপরও কপাল টা খালি খালি লাগছে কেন বলত?’
‘ কি জানি।’

আপু আরেকবার দেখে এরপর টিপের পাতা থেকে কালো রঙের ছোট একটা টিপ খুলে আনলো। ঠিকঠাক বসিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এবার কমপ্লিট! আচ্ছা শোন।তুই গেইটের বাইরে গিয়ে দাড়া একটু। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।’
আমি আচ্ছা বলে রুম থেকে বের হয়ে এলাম।শাড়ি পরে অভ্যস্ত না বলে হাঁটতে একটু সমস্যা‌ হচ্ছে।ফ্ল্যাট জুতা পরেছি।হিল পরলে অনেক উঁচু লাগে।নরমালি আমার উচ্চতা ৫.৪! কিন্তু হিল পরলে মনে হয় কয়েক ইঞ্চি বেড়ে যায়।এই ভয়ে হিল পরি না। আমি গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে গেইটের বাইরে আসলাম। ড্রইং রুমে নানুর সামনে পড়ে গেছিলাম।নানু দেখে মুচকি হেসে বলেছে,পরীর মত লাগছে নাকি আমাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মুনের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো,বড় মামা ওকে আর তাহমিদ কে শপিং এ নিয়ে গেছে। ছোট মামার ছোট ছেলে তাহমিদ। মুনের বয়সী।দুটোর একটাও শপিং করেনি।তাই আজকে নিয়ে গেছে। আমি নিশ্চিন্ত হয়ে বাইরে আসলাম। আমার নানার বাড়ি টা মেইন রোড থেকে একটু ভিতরে।একটা অফ রোড আছে এই রোডের পাশে।বেশি একটা গাড়ি চলাচল করে না এই রোডে। সেজন্য গেইটের বাইরে বেঞ্চ পাতানো আছে। আমি বাইরে বের হয়ে ভাবলাম বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করব। সেদিকে এগুতেই চোখে পড়ল আরিফিন ভাইয়া কে আর ইফাদ ভাইয়া কে। দুজনে একসাথে বসে আছে চুপচাপ। আমি এগিয়ে গেলাম। আরিফিন ভাইয়া বেঞ্চের কিনারে বসেছে তাই আমি ইফাদ ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ দুই যুবক এখানে কি ধ্যান ধরেছে?’
ইফাদ ভাইয়া আমার প্রশ্নে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।বললো,
‘ না রে পাখি। আরিফিন এর মন খারাপ খুব।ওকে সঙ্গ দিতে বসে আছি।’
আমি কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে আরিফিন ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি হালকা লাল। এমন যেন, কান্না চেপে রাখছে।হুট করে ভাইয়ার কি হলো? আমি কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না তাকে।ঠিক হয়ে বসে ইফাদ ভাইয়া কেই শুধোলাম,
‘ ভাইয়ার কি হয়েছে হঠাৎ?’
‘ হয়েছে তো অনেক কিছুই।ওই যে বলে না? প্রেমের ম’রা জলে ডোবে না। আরিফিন এর অবস্থা ও তাই।ও বেচারা প্রেমে পড়েছে হয়ত। গার্লফ্রেন্ড নামক জীব হয়ত ঝগড়া করেছে। সেজন্য ই।’
‘ অ্যা?’

আমার মুখ হা হয়ে গেল।কি বলে ইফাদ ভাইয়া এইসব? আরিফিন ভাইয়া আর প্রেম?তার আবার গার্লফ্রেন্ড ও আছে? ব্যাপারটা এমন না যে আরিফিন ভাইয়া দেখতে খারাপ বা কোয়ালিফিকেশন ভালো না।ভাইয়া দেখতে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম আর কোয়ালিফিকেশন ও ভালো। ঢাবিতে ইংরেজি তে অনার্স কমপ্লিট করেছে।হায়ার স্টাডিজ এর জন্য এখন দেশের বাইরে যাওয়ার প্ল্যান চলছে তার। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে যে ভাইয়া বাইরের কোনো মেয়েদের সাথে কথা বলে না অত। খুব দরকারে কথা বলে। বাসায় এমবিভার্ট হলেও বাইরে পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট।তার গার্লফ্রেন্ড!! আকাশ ভেঙ্গে মাথার উপর পড়ে যাচ্ছে এরকম গুজবের মতই। আমাকে এত অবাক হতে দেখে ইফাদ ভাইয়া বললো,

‘ এত অবাক হচ্ছিস যে?সবাই কি আর আমার মত যে মেয়েদের পাত্তা পাবে না।ও হচ্ছে আরিফিন বুঝলি? মেয়েদের চোখের মণি একেবারে।’
আমি প্রতি উত্তরে কিছু বলতে যাব তখনি রিমি আপু চলে এলো।এসেই বললো ক্যাপ্টেনের ড্রাইভার কে পাঠিয়েছে।ও আসেনি এখানে।চল। আমি বললাম,
‘ গাড়ি কোথায়?’
আপু মেইন রোডে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা গাড়িটার দিকে ইশারা করে দেখাল। আমি উঠে দাঁড়ালাম।যেতে যেতে বললাম,
‘ তোমাদের কাহিনী আমি ফিরে এসে শুনব। তোমরা আবার ধ্যান শুরু করো।ওক্কে?’

আপু তাড়া দিল হাঁটতে।শাড়ির কুচি একটু উঠিয়ে ধরে হেঁটে হেঁটে গাড়ির কাছে এলাম। ড্রাইভার বাইরে বের হয়ে দরজা খুলে দিল।আপু আমি দুজনই পিছনে উঠে বসেছি। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিল আপু নিজেই। মিনিট পর গাড়ি চলতে শুরু করল।
মিডিয়াম স্পিডে গাড়ি চলছে।আপু আমি দুজনই চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আমি আপুকে বললাম, ‘ এইটা কি কি ক্যাপ্টেনের পার্সোনাল গাড়ি আপু?দেখে তো মনে হচ্ছে না।’
‘ না। উনাদের বাসার গাড়ি। ক্যাপ্টেনের গাড়ি ব্লাক কালারের।অনেক সুন্দর। বিয়ের পর দেখিস।’

আমি আবার চুপ করে গেলাম।গাড়ির কাচ অর্ধেক নামানো। আমি সেই ফাঁক দিয়েই বাইরের শহর দেখতে লাগলাম।
দেড় ঘণ্টা পর গাড়ি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামলো। ধানমন্ডি দ্য ফরেস্ট লং রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামলো। ড্রাইভার এসে দরজা খুলল। আমি আপু নামলাম।নেমে আপু আমার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিলো। এরপর আমার হাত ধরে ভিতরে ঢুকল। আমি চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। সুন্দর পরিবেশ। পিছনের দিকে দরজা দিয়ে বের হয়ে আসলাম বাইরের এরিয়া তে। এখানে কি সুন্দর চেয়ার টেবিল পাতানো হয়েছে।কেউ চাইলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ইনজয় করতে করতে খাবার খেতে পারবে। চারদিকে ঘুরে তাকাতে আমার চোখ পড়ল কর্ণারে টেবিলের উপর।দুজন মানুষকে একসাথে দেখে হকচকিয়ে গেলাম। নার্ভাস লাগতে শুরু করেছে।এরা একসাথে? বন্ধু নাকি দুজন? কিন্তু আমি যার থেকে একরকম পালিয়ে বেড়াচ্ছি সে এখানে কেন?কপাল ঘামতে শুরু করলো আমার।আপু কি যেন খুঁজছে দুচোখ দিয়ে।হুট করে আমার দিকে চোখ পড়তে অবাক হয়ে গেল।শুধালো কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
আমি ইশারায় কর্ণারে দেখালাম।মুখে বললাম,

‘ ওই যে ডাক্তার!’
আপু হাসিমুখে বললো ওইতো ওখানে ওরা।চল চল।আপু হাত পূর্বের মতোই টানতে টানতে এগিয়ে গেল সেদিকে। আমার হার্টবিট এত দ্রুত পাম্প করছে যে যেকোনো মুহূর্তে ছিটকে বেরিয়ে আসবে। টেবিলের কাছাকাছি আসতেই ওরা আমাদের দিকে তাকালো। দুজনের মুখেই হাসি।আপু হাই বলে ডাক্তারের সামনের চেয়ার টেনে বসল। আমাকে তার পাশে একটা চেয়ার টেনে দিয়ে বললো বসতে।দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে আস্তে আস্তে বসলাম চেয়ারে। আমি ঠিক থাকতে পারছি না। কাঁপুনি চলে আসছে নার্ভাসনেস এর আমি কারণে।চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আছি। আমার সাথে সবাইই চুপ।কেউ কোন কথা বলছে না। কিছুক্ষণ পর আমার সামনে বসে থাকা মানুষটি নিরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনি শানের মিস,তাই না?’

আমি মাথা তুলে তাকালাম। আমার ঠিক সামনে শানের চাচ্চু বসে আছে। সেদিন উনাকে যতটা হ্যান্ডসাম লাগছিল আজ তার থেকেও বেশি লাগছে।ব্লাক, হোয়াইট কালারের পলো আর অফ হোয়াইট কালারের প্যান্ট। চুল জিরো কাট। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং।জো লাইনের জন্য মুখে হাসি লেগে থাকায় সুন্দর লাগছে অনেক।ইনিই কি আপুর হবু বর ক্যাপ্টেন?ঠিক অনুমান করার আগেই উনি ফের জিজ্ঞেস করলেন,
‘ আপনি শানের মিস না?’

আমি কোনোরকমে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। আমার রেসপন্স পেয়ে উনি সাথে সাথেই বললেন,
‘ আপনি আর পড়াতে আসছেন না কেন বলুন তো?শান তো আপনার জন্য পাগল হয়ে আছে। বারবার বলছে, আমি ফারিয়া মিসের কাছে পড়ব। তোমার কাছে পড়ব না।ওর পাগলামির জন্য আমি একবার ভেবেছিলাম আপনাদের বাসায় যাব যে আপনি আসছেন না কেন তা জানতে কিন্তু হলো কি! বিয়ের ডেইট এগিয়ে এলো আমার। সেজন্য গাজীপুর থেকে গুলশানে ব্যাক করতে হয়েছে।’

আমি উনার কথা শুনে আপুর দিকে তাকালাম।আপু হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি বুঝে আপু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো যে এটাই ওর হবু বর!ইশশশশশ্!তার মানে শান আপুর বরের ভাতিজা।আগে যদি জানতাম!
আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে স্বাভাবিক করতে করতে বললাম,
‘ আ আসলে আমার আপুর বিয়ে তো। সেজন্য ই আর কি যাইনি।’
উনি মুচকি হাসলেন। এরপর টেবিলের উপর দুহাত রেখে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললেন,
‘ আপনি অপস স্যরি,তুমিই তাহলে আমার আদরের শ্যালিকা আহি? আমি তৌকির হাসান অর্ক।রিমির সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হয়েছে।’

আমি বিড়বিড় করে বললাম ক্যাপ্টেন অর্ক।উনি শুনতে পেলেন মনে হয়।হাসি মুখে বললেন, ‘ হ্যা। আর এই যে দেখছ ডাক্তার স্যার? উনি আমার পূর্ব পরিচিত।’
ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরীর দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন। আমি তাকালাম উনার দিকে।উনি হাসি হাসি মুখ করে তাকালেন। ক্যাপ্টেন সাহেব ফের বললেন,

Love Triangle part 8

‘ আমি একা একা কি করব সেজন্য ভাবলাম উনাকে ও ডাকি। পরে তোমার আপুর কাছে শুনলাম উনি তোমার আপুর সিনিয়র আবার নাকি তোমার ডাক্তার ও। ভালোই হলো তাহলে , বলো?’
আমি কি বলব বুঝে উঠতে না পেরে চুপ করে সবার দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ডাক্তার বেটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,হ্যা খুউউউব বেশি ভালো হয়েছে।বেটা কে দেখলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে,এর সামনে নাকি নিজের দুলাভাই এর সাথে মজা করব!এত খারাপ ভাগ্য মানুষের ও হয়?

Love Triangle part 10