love with a slap part 8
আশু
খান বাড়ির সবাই থমথম হয়ে আছে কারণ প্রতিবছর ঘুরতে যাওয়া হলেও এ বছর আশিসের দাদী স্পষ্ট বলে দিয়েছে কোথাও যাবে না। সবার মুখে হাসির এক মিনিটে গায়েব করে মিনারা খাতুন পান চিবোচ্ছে। অরশী সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। অরশীকে আরামে দেখে আশিসের দাদীর সহ্য হচ্ছে না। সে বলেই উঠল,,,”আমার নাতীর ঘাড় থেকে শাঁকচুন্নি না নামানো পর্যন্ত কোথা যাওয়া হচ্ছে না। ”
অরশী বুঝতে পারে ওকেই পিন মেরে কথা বলছে। অরশী কি চুপ থাকার মেয়ে নাকি। অরশী বলে উঠে,,,”ছোটমা যানো তোমাদের ছেলে নাকি আমাকে নিয়ে হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাবে আজকে সকালে বলল।”
দীপার মা বলে,,”ওমা তাই নাকি ভালোই হলো!!”
আশিসের দাদী রেগে বলে,,”হানিমুনরে গোষ্ঠী মারি কোথাও যাওয়া হবে না এই আমি বলে দিলুম”
অরশী বলে,,”কেন গো দাদী? দাদায় বুঝি তোমায় নিয়ে হানিমুনে যায় নি সেজন্য নাতীকে যেতে দিচ্ছো না?”
মিনারা খাতুন দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,”এই মাতারী মুখ সামলা জিহ্বা টাইনা কাইটা দিমু মোর শর্তা(সুপারি কাটার যন্ত্র) দিয়া বগীর বাচ্চা। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরশী নাক সিটিয়ে বলে,,,”ছিহ্ দাদী হানিমুন ছাড়াই এতগুলো পয়দা করে ফেললে হাহ্ তোমার পোড়া কপাল দেখে মোর বহুত কষ্ট লাগতাছে দাদী। মন চাইতাছে গাঙ্গে ডুইবা মরি”
“তোহ্ মর না মাতারী তরে আটকাইছে কেডা, আমি আরও বাঁচি লগে আমার ভোলাভালা নাতী ডাও”
অরশী একলাফে মিনারা খাতুনের সামনে গিয়ে বলে,,”কে আবার তোমার নাতী আটকে রাখছে গো দাদী ? তার জন্যই তোহ্ রয়ে গেলাম, সে বললো তোমার নাকি পুতিন লাগবে খুব শিগ্রই সত্যি নাকি দাদী আজকেই কি কাজে লেগে পড়মো দাদী,,,,,”
আশিসের দাদী ভয়ংকর রেগে বলে,,”এ নির্লজ্জ মাতারী শখ কতো তর কি মনে আজকা তরে একলা থাকবার দিমু আমার নাদান নাতী ডার লগে?”
অরশী বলে,, ‘”ওহ তাহলে তোহ্, তোমার সামনে আজকেে,,,,”
আর কিছু বলার আগেই আশিসের দাদী নিজের লাঠি উঁচিয়ে অরশীর পেছনে দৌড় লাগায় আর বলে,,”মাতারী দাঁড়া আজকে তর লাজলজ্জায় লাগাম দিমু বগীর বাচ্চা”
অরশী পেছনে ঘুরে বলে,,”আগে ধরো আমারে ডাইনী বুড়ি হি হি”
“কি কইলি মাতারী!!”
অরশী দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গেইটের কাছে আসামাত্রই আশিসের সাথে ধাক্কা লেগে পড়তে নেয়। আশিস কোনোমতো অরশীর কোমড় ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে। এরপর আশিস অরশী দিকে ঝুঁকে বলে,,”এতই মিস করছিলে সুইটবার্ড যে গেইটের সামনে এসে পড়লে?”
অরশী আশিসের থেকে সরে বলে,,”ফার্স্ট দুদিন পর পর উদ্ভট নামে ডাকা বন্ধ করুন। আর সেকেন্ড আপনার ডাইনী দাদী মারতে আসছে আমাকে বাঁচান গাম্বুস জি ”
তখনই আশিস পেছন থেকে নিজের দাদীকে লাঠি নিয়ে দৌড়াতে দেখে।
মিনারা খাতুন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,”ভাই ধর আজকা ওরে আমি উপরে পাঠামো”
অরশী আশিসের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,,”এহ্ প্রাণের সোয়ামী রাইখা উপরে যামু কোন দুঃখে? জামাইজান চলেন সরবত বানাই আনি”
আশিস বলে,,”কি হয়েছে দাদী তুমি ওর পিছে দৌড়াচ্ছ কেন লাঠি নিয়ে??ও তো এখন তোমারও নাতনীর মতো”
আশিসের দাদী মুখে পানের চিপটি পাশে ফেলে অরশী দিকে রেগে তাকিয়ে,,”মাঙ্গের নাতনী” বলে গরগর করে চলে যায়।
এটা শুনে আশিস আর অরশী হাসতে থাকে।
একটু পর আশিসের চোখ যায় অরশীর লাল শাড়ীতে। আশিস বলে,,”সুইটবার্ড ভীষণ মিষ্টি লাগছে মন তো চাইছে,,,,”
অরশী ভ্রুকুচকে আশিসের দিকে তাকালে। আশিস বুঝতে পারে এখনি গালি ছুটবে তাই কথা ঘুরিয়ে আশিস নিজের গলার টাই খুলতে খুলতে বলে,,,,
“ঠান্ডা পানি প্লিজ কিউটিপাই”
“তোমায় দেখলে আমার আত্না শুকিয়ে যায়”
অরশী একটা ভেঙচি কেটে চলে যায়। আশিস মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে অরশীকে যেতে দেখে মিনারা খাতুন অরশীর পিছু নেয়। অরশী সেটা খেয়াল করে না। রুমে গিয়ে অরশী আশিসের দিকে পানি বারিয়ে দেয়।
আশিস বলে,,”ভাবিও নি বউ আমার জন্য পানি আনবে?”
অরশী বলে,,”পানি চাইলে তো গাধাকেও না করা যায় না আর আপনি তোহ্ আস্ত একটা জলহস্তি আপনাকে না করি কীভাবে?”
আশিস পানি রেখে বলে,,”শালী তুই ভালো হইলি না!!”
অরশী আশিসের দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,”শালা তুই খুব ভালো বুঝি?”
আশিস অরশীর আঙ্গুলসহ টেনে নিজের কোলে বসিয়ে ঝাপটে ধরে বলে,,,,
“না রে না আরো তোহ্ পারে না”
“মন আমার নাস্তানাবুদ একজনেরই দায়”,
“না রে না কারো ধার দারে না”
“দিন আমার যাচ্ছে ভালোই মিষ্টি যন্ত্রণায় ”
অরশী নিচু হয়ে আশিসের হাতে কামড় বসিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকায়। এদিকে আশিস দাদীও উঁকিঝুকি মারছে বার বার।
আশিসও দাঁড়িয়ে অরশীর হাত টেনে দোলাতে দোলাতে গায়,,
“বাড়িতে এখানে ওখানে সেখানে বানবাসি”
“গলিতে পাড়াতে ডাকেতে সারাতে ভালোবাসি”।
অরশী এবার বেরিয়ে যেতে নিয়ে অরশীর আঁচল ধরে আশিস গায়,,
“আমি তো ফ্রিতেই নাজেহাল”
“এক ললনা করেছে ইন্দ্রজাল”
“কে সামলায় আমায়। ”
আশিস অরশীকে টান মেরে নিজের কাছে আনতেই। আশিসের দাদী রুমে এসে বলে,,”কি হচ্ছে কি?”
আশিস তোহ্ বেচারা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় দাদীর পাণে। অরশী মুখ টিপে হাসেত হাসতে বলে,,,,”দাদী রোমান্স হচ্ছিল রোমান্স”
“এ বগীর বাচ্চা বিছানা ঝার রোমান্স বোমান্সের নিকুঁচি করি আমি ঘুমামো”
আশিস বলে,,”দাদী আজকেও?”
মিনারা খাতুন বলে,,”তরে না বলছি এই ছেমরিরে আমি মানি না, এরে ছাড় নয়ত তর লগে আমিই থাকমো শেষ কথা মোর। তুই জানোস মোর এক জবান”
অরশী বলে,,”তা ভালো, দাদী-নাতী ঘুমাবে বিছানা যার যার টা ঝেরে নিন আমি কেন ঝারবো হাহ্”
মিনারা খাতুন রেগে বলে,,”তর কি মনে হয় আমার কম শক্তি, তরে আছাড় মারার মতো শক্তি আছে এহনো সর মাতারী।”
অরশী আশিসের দিকে তাকিয়ে হাসছে, আশিস বেচারা বউ আর দাদী মাঝে একদম সিটিয়ে বম্বলদাস হয়ে তাকিয়ে।
অরশী সুর পাল্টে বলে,,,”দাদী তুমি আমার জন্য খান বাড়ির নিয়ম পাল্টে দিলে আহ্হা কত ভালোবাসা? “”
মিনারা খাতুন বলে,,”কি কস বগী কি পাল্টাইছি?”
অরশী বলে,,”এই যে দাদী ফ্যামিলি পিকনিকটা ”
মিনারা খাতুন নিজের মনে প্রশ্ন মিলিয়ে বুঝে সত্যি তেহ্ এত বছরের রীতি সে বাদ দিলো এই বগীর জন্য। মিনারা খাতুন বলে,,”আশিস কালকে কক্সবাজারে যাওয়ার ব্যবস্তা করবি এই হতচ্ছাড়ির জন্য বাড়ির নিয়ম বদলাবে কেন? ”
আশিস মাথা নাড়ায় বেচারা অরশীর দিকে একবার তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
অরশী নিজের প্লান সার্কসেসফুল করতে পেরে আরামে ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।
love with a slap part 7
রাত তিনটা বাহিরে বিদুৎতের হালকা ঝিলিক আসছে বৃষ্টি হয়ত নামবে। আশিস উঠে দেখতে পায় অরশী ওর দাদীকে ধরে রেখেছে আর মিনারা খাতুনও অরশীকে ধরে দুজন ঘুমাচ্ছে। আশিসের ঠোঁটের কোণে একঝলক হাসি উঠে।
এরপর আশিস ধীরপায়ে অরশীর পাশে দাঁড়ায়। তারপর একটা কাঁথা এনে নিজের দাদীর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে অরশীকে পাজকোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় ছাদের দিকে। অরশী ঘুমের তোপে একটু নড়েচরে আশিসকে ঝাপটে ধরে।