mad for you part 10

mad for you part 10
তানিয়া খাতুন

সকাল হয়ে গেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো রুহির মুখে পড়ছে।
বাইরে পাখির ডাক, মানুষের আওয়াজ, চারিদিকে হালকা কোলাহল।
রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি, ভোরের দিকে একটু ঘুম এসেছিল, তাই এখনো উঠতে মন চাইছে না ৱুহিৱ।
সূর্যের আলো মুখে পড়তেই রুহি চোখ কুঁচকে নিল।

শরীর ক্লান্ত, চোখে ঘুম ঘুম ভাব।
একটু পরেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল গত রাতের ঘটনা
ক্ৰিশের পাগলামি, তার রাগ, আর সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তগুলো।
ভাবতেই বুকটা ভারী হয়ে গেল।
রুহি বুকের উপর হাত রাখল, গভীর শ্বাস নিল, চোখের কোণে পানি চলে এলো।
ঠিক তখনই বাইরে থেকে দরজায় টোকা পড়ল।
সোহান: “আপু! এই আপু! তাড়াতাড়ি ওঠো, আব্বু তোমায় ডাকছেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুহি: “হ্যাঁ, তুই যা, আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে।”
রুহি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠল। আয়নার সামনে গিয়ে দেখল নিজের মুখ—চোখ লাল, মুখ ক্লান্ত। সে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল।
জলের শব্দে ঘরটা ভরে গেল।
বাইরে সূর্যের আলো বেড়ে চলেছে,
কিন্তু রুহির মনে এখনো রাতের অন্ধকারটা রয়ে গেছে।

রুহি ধীরে ধীরে এগিয়ে এল আব্বু আর আম্মুর ঘরের সামনে।
ভেতর থেকে নিচু গলায় কথা বলার শব্দ আসছে।
দু’জনের গলাতেই রাগ আর দুঃখ মেশানো টান।
রুহির বুক ধকধক করছে। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে।
সে আস্তে করে বলল,
“আসবো, আম্মু? আব্বু?”
ভেতর থেকে সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেল দু’জন।
কয়েক সেকেন্ড পর আম্মু শান্ত গলায় বললেন,
“আয় রুহি, ভিতরে আয়… দরজাটা বন্ধ করে আয়।”
রুহির বুকের ভিতর কেমন জানি কেঁপে উঠল।
ধীরে ধীরে দরজাটা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকল।
ঘরটা ভারী, যেন বাতাসও থেমে গেছে।

আম্মু সোফায় বসে আছেন, চোখে ক্লান্তি আর রাগ মেশানো চাহনি।
আব্বু চেয়ারে বসে আছেন, কপালে ভাঁজ, হাতে চা-এর কাপ—কিন্তু তাতে এক ফোঁটা চুমুকও দেননি।
রুহি এসে সোফার পাশে বসল।
“কি হয়েছে আম্মু? দরজা বন্ধ করতে বললে কেন?”
আব্বুর গলাটা হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল।
“হয়েছে অনেক কিছু, তাই দরজা বন্ধ করতে হয়েছে।
কারণ বাড়িতে একটা ছোট বাচ্চা আছে, তার সামনে তো আর তোমার কীর্তিকলাপ নিয়ে কথা বলা যায় না।”
রুহি থমকে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
“কীর্তিকলাপ মানে? আমি কি কিছু ভুল করেছি, আব্বু?”
আম্মু এবার ধীরে, কিন্তু গলায় রাগ মিশিয়ে বললেন,

“কাল রাতে তোমার ঘরে যে ছেলে ছিল, সে কে? ক’দিনের সম্পর্ক তোমাদের?”
রুহির মুখ হঠাৎ সাদা হয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেল।
আম্মু আব্বু জেনে গেছে!—এই ভাবনাটা মাথায় আসতেই শরীর কেঁপে উঠল।
আব্বু (রেগে): “চুপ করে আছো কেন?
পাশের বাড়ির আন্টি আজ সকালে এসে সব বলেছে—তুমি নাকি রাতে তোমার রুমে একটা ছেলেকে ঢুকিয়েছিলে!
এখন এই বয়সে এসে এসব শুনতে তোমাৱ জন্য?
এইজন্য তোমাকে মানুষ করেছি?”
রুহির চোখে পানি চলে এলো। সে কাঁপা গলায় বলল,
“না আব্বু! ও কেউ না, তোমরা ভুল বুঝছো!”
কথা শেষ হওয়ার আগেই ঠাস!—

আম্মুর হাত এসে পড়ল রুহির গালে।
রুহি একদম স্থির হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আম্মু কোনোদিন তার গায়ে হাত তোলেননি।
চোখ ভিজে গেল, বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল।
আম্মু (চোখ লাল করে): “রাতে একটা ছেলে তোমার রুমে ঢুকেছে, আর তুমি বলছ সে কেউ না!
আমরা কি এতটাই বোকা?”
রুহি: “আম্মু, দয়া করে বিশ্বাস করো, আমি—”
আব্বু (কঠোর গলায়): “থামো! আর কিছু বলবে না।
আমি ঠিক করেছি—দুই দিনের মধ্যে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবো, প্রস্তুত থেকো।”
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

“কি বলছো, আব্বু? এখনই বিয়ে? আমার পড়াশোনা, আমার স্বপ্ন—সব?”
আব্বু: “যা করার, বিয়ের পর করো। অন্তত লোকের মুখ বন্ধ হবে। এই বাড়িতে তোমাকে আর রাখতে পারব না।”
ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে এল। শুধু রুহির কান্নার শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছিল।
আব্বু: “বিকেলে লোক আসবে তোমাকে দেখতে। তৈরি থেকো। এখন যাও, তোমার ঘরে যাও।”
রুহি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
চোখে পানি, গাল লাল, পা কাঁপছে।
দরজা খুলে বেরিয়ে এল, কিন্তু মনে হচ্ছিল, যেন দুনিয়াটা ফাঁকা হয়ে গেছে।
বাইরে সূর্যের আলো ঝলমল করছে, চারপাশে আলো,
কিন্তু রুহির মনে কেবল অন্ধকার।
সে আস্তে আস্তে নিজের ঘরের দিকে হাঁটল।
চোখে ভাসছে ক্ৰিশের মুখটা—গত রাতের সেই মুখ।

একটা ভুল মুহূর্ত, একটা ভুল সিদ্ধান্ত… আর এখন সেই রাতটাই তার জীবনটা বদলে দিচ্ছে।
রুহি আস্তে আস্তে নিজের ঘরে ফিরে এল।
দরজাটা বন্ধ করে দেয়াল ঠেসে বসে পড়ল।
বুকের ভিতরটা জ্বলছে, চোখে পানি আসছে, কিন্তু এবার সে কান্না আটকিয়ে রাখল।
সে ধীরে ধীরে বিছানার কোণে গিয়ে বসে পড়ল।
মাথা নিচু, চোখে পানি জমছে, গলা কাঁপছে।
হঠাৎ সব কথাগুলো আবার মনে পড়তে লাগল —

আব্বুর গলা: “দুই দিনের মধ্যে তোমার বিয়ে দিয়ে দেব। প্রস্তুত থেকো।”
আম্মুর গলা: “রাতে একটা ছেলে তোমার ঘরে ঢুকেছে, আর তুমি বলছ সে কেউ না!”
আব্বুর সেই কঠিন মুখ, আম্মুর চোখে রাগ— সব যেন আবার তার সামনে ফিরে এল।
রুহি দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরল, যেন শব্দগুলো না শুনতে হয়।
কিন্তু তবুও মাথার ভিতর গুমগুম করে বাজছে সেই কথাগুলো।
চোখের পানি এবার থামানো গেল না।
এক এক ফোঁটা করে গাল বেয়ে পড়ছে। বুকটা কাঁপছে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেছে।
“কেন এমন হলো…”

রুহি ফিসফিস করে বলল নিজের সঙ্গে।
“আমি তো কিছু ভুল করিনি… কেন কেউ বুঝল না?”
সে বিছানার উপর মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল।
বালিশ ভিজে গেল, গলাটা ব্যথা হয়ে গেল কান্নায়।
ভেতর থেকে মনে পড়ে গেল আম্মুর সেই থাপ্পড়টা — হঠাৎ করে, ব্যথায় গালটা যেন এখনো জ্বলে।
তারপর আব্বুর ঠান্ডা গলা —

“এই বাড়িতে তোমাকে আর রাখতে পারব না…”
রুহি চমকে উঠল, যেন কথাটা আবার কানে বাজছে।
তার বুকের ভিতরটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
সে চোখ তুলে তাকাল ছাদের দিকে, তারপর আস্তে বলল—
“আম্মু… আব্বু… আমি কি সত্যি এত খারাপ?”
জবাব আসল না।
রুহি উঠে দাঁড়াল, টেবিলের উপর রাখা বইগুলোর দিকে তাকাল।
মাথা নিচু করে বলল,
“তোমরা বলছো আমার বিয়ে হবে… কিন্তু আমি তো এখনো নিজের স্বপ্নটাই পূৱন কৱতে পারিনি।”

বিকেলটা যেন অদ্ভুত ভারী।
বাইরে রোদের তাপ কমে এসেছে, কিন্তু ঘরের ভেতরে যেন একটা অস্বস্তি ঘুরছে।
রুহি সারাদিন কিছু খায়নি। সকাল থেকে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলে গেছে, এখনো লালচে।
ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে আছে, মাথা নিচু করে।
ঠিক তখন আম্মু ঘরে ঢুকলেন। হাতে গোলাপি রঙের শাড়ি, সঙ্গে একটু গয়না।
চোখে রাগ নেই, কিন্তু মুখটা একেবারে কঠিন।
আম্মু (শান্ত অথচ দৃঢ় গলায়):
“উঠ রুহি, ওনাৱা চলে আসবে তোকে দেখতে। তাড়াতাড়ি তৈরি হো।”
রুহি তাকিয়ে রইল, মুখে কোনো কথা নেই।
গলা শুকিয়ে গেছে, বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠছে।
রুহি (ধীরে): “আম্মু… আমি কি পড়তে পারব? আমি এখনই বিয়ে কৱতে চাই না…”
আম্মু: “চুপ কর। এখন এসব বলার সময় না।
লোকজন আসবে, তোকে ভালোভাবে সাজতে হবে।”

যা ফ্ৰেশ হয়ে আয়।
আম্মু শাড়িটা রুহির দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
রুহি চুপচাপ সেটা হাতে নিল, কিন্তু চোখে পানি জমে উঠল।
সে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
“আম্মু, আমার মনটা চাইছে না…”
আম্মু (কঠিন গলায়):
“সব মেয়ের মনই চায় না, কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না।
তুই যা করেছিস , তার পর এখন শুধু চুপ করে থা। লোকের সামনে লজ্জা দিস না।”
এই কথা শুনেই রুহির বুকটা হঠাৎ ভারী হয়ে গেল।
সে মুখ নিচু করে ফ্ৰেস হয়ে আসে।

আম্মু এগিয়ে এসে নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে রুহির চুল আঁচড়ে দিলেন, মুখে পাউডার মেখে দিলেন, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে দিলেন।
রুহি আয়নার সামনে বসে আছে, কিন্তু নিজের মুখটা যেন চেনা লাগছে না।
চোখে কান্নার পানি শুকিয়ে গেছে, তবুও ভিতরে ভিতরে কাঁপছে সে।
আম্মু (নরম হয়ে):
“রুহি, চুপ করে থাকিস মা… সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন।”
রুহি কোনো উত্তর দিল না।
তার মুখের কোণে হালকা কাঁপুনি, চোখে হারিয়ে যাওয়া একরাশ বেদনা।
সে শুধু ভাবছে—
“সব ঠিক হবে? নাকি আমি আজকেই হারিয়ে যাচ্ছি নিজের ভিতর?”
বাইরে তখন কলিংবেলের শব্দ শোনা গেল।
আব্বুর গলা ভেসে এলো,

“ওনারা এসেছে!”
রুহির বুকের ভেতর ধপ করে উঠল।
তার হাত কাঁপছে, গলা শুকিয়ে গেছে।
আম্মু দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চলো, নীচে চলো।”
রুহি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।
শাড়ির আঁচল ঠিক করল, তারপর গভীর শ্বাস নিল।
আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল—চোখের ভেতর কান্না, মুখে জোর করে হাসি।

ঘরের বাইরে অনেক আওয়াজ—
হাসির শব্দ, চায়ের কাপের টুংটাং, আর মাঝেমাঝে আব্বুর গলার আওয়াজ ভেসে আসছে।
রুহি ধীরে ধীরে বারান্দার দিকে হাঁটছে, পায়ের শব্দও যেন খুব আস্তে।
তার হাতে কাঁপন, বুকের ভেতর জোরে ধুকপুক করছে।
বাইরে সোফায় পাত্রপক্ষ বসে আছে।
পাত্র — সাদা শার্ট পরা, শান্ত চেহারার একজন ছেলে, নাম রাফি।
পাশে তার মা-বাবা, সবার মুখে হালকা হাসি।
আম্মু বললেন,
“রুহি মা, এদিকে এসো।”
রুহি মাথা নিচু করে এসে ওদেৱ পাশেৱ সোফায় বসে পড়ল।
চোখ তোলা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
আম্মু চা এগিয়ে দিচ্ছেলেন সবাইকে।
রাফি নরম গলায় বলল,
“আপনি পড়াশোনা করছেন এখনো?”
রুহি একটু মাথা তুলল, চোখের কোণে দাগ স্পষ্ট—কান্নার দাগ।
সে হালকা গলায় বলল,

“হ্যাঁ…”
তার গলা আটকে গেল।
পরে আর কিছু বলতে পারল না।
রাফি একটু চুপ করে রইল। তারপর মৃদু হেসে বলল,
“ভালো, মেয়েরা এখন অনেক দূর পড়তে চায়।
পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান নিশ্চয়ই?”
এই কথাটা শুনেই রুহির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল।
তার মনে পড়ল আব্বুর কথা —
“বিয়ের পর যা করবি কর, কিন্তু এখন তোর আর পড়াশোনা নয়।”
রুহির চোখ ভিজে গেল, তবুও জোর করে হাসার চেষ্টা করল।
বলল,

“হ্যাঁ… চেষ্টা করব…”
আম্মু পাশে থেকে তাড়াতাড়ি কথাটা ঘুরিয়ে নিলেন,
“রুহি খুব শান্ত মেয়ে। সংসার করতে জানে, রান্নাও শেখে।”
রাফির মা মিষ্টি মুখে বললেন,
“মেয়েটা তো বেশ ভদ্র, শান্তও বটে। আমার ভালোই লেগেছে।”
রাফির বাবা হেসে বললেন,
“তাহলে একটু কথা বলুক ওরা।
রাফি, বউমার সঙ্গে এ্কটু আলাদা কৱে কথা বলে নাও।
ভবিষ্যতে তো দুজন কে একসাথে সংসার কৱতে হবে।”
রাফি একটু লজ্জা পেল,
চায়ের কাপটা নামিয়ে হালকা হাসল,
“ঠিক আছে।”

রুহি তখন পাশের ঘরে বসে আছে, মাথা নিচু করে।
তার মুখে এক ধরনের অস্বস্তি — জানে না এখন কী হবে।
দু’জনই চুপচাপ বসে আছে।
মাঝখানে চায়ের কাপ, কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
নিস্তব্ধতা এমন, যেন শ্বাস নিলেও শব্দ হবে।
রাফি আস্তে বলল,
“আপনি… মানে তুমি, কেমন আছো?”
রুহি একটু মাথা নাড়ল,
“ভালো।”
আবার চুপচাপ।
কিছুক্ষণ পর রাফি ধীরে বলল,
“আমি জানি, হঠাৎ এসব ঘটছে।

হয়তো তুমি এখনো প্রস্তুত না… কিন্তু আমি চাই না তোমার ওপর কোনো জোর হোক।”
রুহি অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে।
চোখে মৃদু বিস্ময়, আবার ভেতরে কোথাও একটুখানি শান্তি।
তার গলা একটু কেঁপে গেল,
“আমি বুঝি না এসব কথা… কিন্তু আমার জীবন হঠাৎ অনেক বদলে যাচ্ছে।”
রাফি মাথা নিচু করে হাসল,
“হ্যাঁ… জীবন অনেক সময় নিজের মতো করে পথ বদলে দেয়।
তবে একটা কথা বলি, আমি চাই তুমি স্বচ্ছন্দে থাকো। আমি সময় দিতে পারি।”
রুহি কিছু বলল না।

শুধু চুপচাপ তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, যেন খুঁজে বের করতে চাইছে—
এই মানুষটা সত্যি নাকি শুধু ভদ্রতার মুখোশ?
রাফি আর রুহি এখনো ছোট ঘরটার মধ্যে বসে।
বাইরে সন্ধ্যার আলো আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে, জানালা দিয়ে ঢুকছে হালকা বাতাস।
ঘরের ভেতর এক অদ্ভুত নীরবতা — কেউ কিছু বলছে না।
রাফি একটু হেসে বলল,
“তুমি চাইলে আমি এবার যাবো। তোমার নিশ্চয় বিশ্রাম দরকার।”
রুহি ছোট করে বলল,

“… ঠিক আছে।”
ওদের দুজনের চোখ এক মুহূর্তের জন্য মিলল।
রুহির চোখে ছিল ভয়, লজ্জা আর একটা অজানা অস্বস্তি।
রাফি শুধু বোঝার চেষ্টা করছিল — এই মেয়েটার মনে আসলে কী চলছে?
ঠিক তখনই—
ধাক্কা!
ঘরের দরজা হঠাৎ জোরে খুলে গেল।
রুহি চমকে উঠল।
তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো একটুখানি চিৎকার —
“ক্রিশ?!”

রাফি উঠে দাঁড়াল, অবাক হয়ে তাকাল সামনে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিশ — চোখে লালচে দৃষ্টি, মুখে রাগে শক্ত ভাব।
তার নিঃশ্বাস ভারী, যেন অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে সামলে রাখছিল।
রুহি এক পা পিছিয়ে গেল, বুকের উপর হাত চেপে ধরল।
“আপনি এখানে কেনো এলেন?”
ক্রিশ নিচু গলায় বলল,
“আমাৱ ব‌উ দরজা বন্ধ কৱে… পৱ পুৱুষেৱ সাথে কী কৱছে সেটা জানতে হবে না।”
রাফি এগিয়ে এল এক পা, শান্তভাবে বলল,
“দেখুন, আপনি কে? এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার, আপনি এমনভাবে ঢুকতে পারেন না।”
আৱ কে আপনাৱ ব‌উ?
ক্রিশ তার দিকে তাকিয়ে রইল, চোখে একরাশ তীব্র আগুন।
তারপর ধীরে ধীরে বলল,

“আমি কে, সেটা রুহি জানে।”
রুহির মুখ শুকিয়ে গেল।
তার গলাটা আটকে গেল, কথা বেরোচ্ছে না।
রাফি বুঝতে পারছে কিছু একটা গভীর ব্যাপার আছে এখানে।
সে শান্ত গলায় বলল,
“রুহি, তুমি চেনো এই মানুষটাকে?”
রুহি কিছু বলল না।
তার চোখে জল চলে এল, গলা কাঁপছে, কিন্তু শব্দ বেরোল না।
ক্রিশ তার দিকে এক পা এগিয়ে এল,
“তোৱ পাখনা গজিয়েছে না, আজকে যদি তোৱ পাখনা না কেটেছি , তো আমি ক্ৰিশ খান নয়?”
রুহি পেছনে সরে গেল, চোখ নামিয়ে ফেলল।
রাফি তখন দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়াল — দৃঢ়ভাবে,

“আপনি এখনই বাইরে যান। এভাবে কথা বলা যায় না।”
ঘরে বাতাস ভারী হয়ে গেল।
রুহির গাল বেয়ে একটা জল গড়িয়ে পড়ল,
সে আস্তে বলল,
“আপনি চলে যান ক্রিশ… দয়া করে…”
ঘরের ভেতর হঠাৎ ঝড় বয়ে যায়।
রুহির কথা শুনে ক্ৰিশের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।
সে হঠাৎ ছুটে গিয়ে রুহির গলা চেপে ধরে।
রুহি (কষ্টে): আহ… ছেড়ে দিন…!
ক্ৰিশ এত জোরে ধরে যে রুহির চোখ উল্টে যায়, কথা বের হয় না।
রাফি দৌড়ে এসে রুহিকে ছাড়াতে যায়।
রফি: ছাড়ুন ওকে!

ক্ৰিশ রুহিকে ছেড়ে দিয়ে ৱাফিকে এক ঘুষি মারে যে সে উল্টে সোফায় পড়ে যায়।
বাড়ির সবাই দৌড়ে আসে — ৱাফির বাবা-মা, রুহির আব্বু-আম্মু।
ৱাফির বাবা: কী হচ্ছে এখানে! ছেলেটাকে মারছো কেন? আর এসব কী বলছো, “কে তুমি”?
ক্ৰিশ গর্জে উঠে ৱাফিকে আবার ধরে টানে।
ক্ৰিশ : ওৱ সাহস কী কৱে হয় আমার বউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার! ওকে আমি শেষ করে দেবো!
রফির আম্মু (চিৎকার করে): আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও! পাগল নাকি তুমি! কে তোমাৱ ব‌উ।
ৱুহিৱ‌ আব্বুঃ তোমাৱ ব‌উ কে?

ক্ৰিশ লাথি মেরে ৱাফিকে দূরে ফেলে দেয়, তারপর রুহির হাত ধরে টেনে সামনে আনে।
ক্ৰিশ(উত্তেজিত গলায়): শুনে রাখুন, আপনার মেয়েই আমার বউ! হ্যাঁ, আমি বিয়ে করেছি ওকে!
সবাই হতবাক হয়ে যায়। রুহির আব্বু-আম্মু স্তব্ধ।
রাফির বাবা (রেগে): কী বলছে ও? আপনার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে!
রুহির আম্মু: এই ছেলেটা মিথ্যে বলছে! এমন কিছু হয়নি!
রুহি (কাঁদতে কাঁদতে): আপনি কেন এমন বলছেন ক্ৰিশ?
কথা শেষ হবার আগেই ক্ৰিশ চড় মারে —
একটা প্রচণ্ড শব্দ, আর রুহি ক্ৰিশের বুকে ঢলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সবাই চমকে ওঠে।

রাফির বাবা: ওকে হাসপাতালে নিতে হবে এখনই! এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকা চলবে না!
তারা চলে যায় রাফিকে নিয়ে।
রুহির আব্বু চিৎকার করে ওঠে,
রুহির আব্বু: এখনই চলে যাও, না হলে আমি পুলিশ ডাকব!
ক্ৰিশ হেঁসে ওঠে —
ডাকুন! পুলিশ ডাকুন! আমি ভয় পাই না। আমার কাছে বিয়ের কাগজ আছে!
আর যদি কেউ আমায় থামায়, তাহলে—
রুহির আম্মু (রেগে): তাহলে কী করবে?
ক্ৰিশ পকেট থেকে পিস্তল বের করে রুহির আব্বুর মাথায় ধরে।
ক্ৰিশ (ঠান্ডা গলায়): তাহলে দুজনকেই শেষ করে দেবো।
আর আপনার ছেলে, ও তো আমার কাছেই আছে — ওকেও ওপরে পাঠিয়ে দেবো!
আম্মুঃ আমার ছেলে সোহান ওকে কী করেছো তুমি?

ক্ৰিশ বাঁকা হেসে বলে—ও আমার বন্ধুদের কাছে আছে, আমাকে যেতে দিলে ও বাড়ি ফিরে আসবে।
আব্বুঃ আমার মেয়েৱ সাথে তোমাৱ বিয়ে হয়ছে তার প্রমাণ কী?
ক্ৰিশ: আপনার ফোনটা দেখুন, সব ডকুমেন্ট পাঠিয়েছি।
আব্বু দ্রুত ফোন খুলে দেখে—সত্যি, রেজিস্ট্রি পেপারে রুহির সই আছে।
আম্মু: এগুলো মিথ্যে—আমার রুহি কখনো এমন কাজ করবে না।
আব্বু: বাস, আর কোনো কথা নেই—এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাও;
আর কোনো দিন এই বাড়িতে আসবে না।

mad for you part 9

আমি ওর মুখ দেখতে চাই না; আর আমার ছেলেকে লাগবে এখনই।
ক্ৰিশ: good, এই না হলে আমাৱ শ্বশুর মহাশয়…
আম্মু: কী বলছেন? আপনি কি আমার মেয়েকে এৱ হাতে ছেড়ে দেবেন?
আব্বু: তোমার মেয়ে ছোট নয়—নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে। আর আমি কী বলব?
ক্ৰিশ রুহিকে কাঁধে তুলে নিয়ে বেৱিয়ে যায়।
রুহি এৱ আম্মু যেতে গেলে তাকে আটকে, নেয় ৱুহিৱ আব্বু।

mad for you part 11

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here