mad for you part 18
তানিয়া খাতুন
দশটা দিন কেটে গেছে।
ক্রিশ প্রতিদিন সকালে রান্না করে কাজে যায়, বিকেলে ফিরে আবার নিজেই রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রুহি অনেকবার বলেছে,
“আমি পারব রান্না করতে, আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না।”
কিন্তু ক্রিশের জেদেৱ কাছে পেৱে ওঠেনি।
রুহি সারাদিন পড়াশোনা আর ঘরের টুকটাক কাজ করে, তবুও তাৱ সময় কাটে না সাৱাদিন ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে ক্রিশকে ছাড়া।
কাল কলেজ খুলবে, কয়েকদিন পরেই পরীক্ষা — তবুও মনটা অজানা কেমন ভারী।
ভাবনার মধ্যে হঠাৎ দরজায় টোকার শব্দ।
রুহি একটু চমকে ওঠে —
“এত তাড়াতাড়ি ক্রিশ ফিরলেন? এই সময় তো উনি আসেন না…”
ক্ৰিশ—
“বাটারফ্লাই…”
ক্রিশের গলাটা শুনে রুহির বুকে প্ৰান আসে।
সে ছুটে গিয়ে দরজা খোলে, মুখে হাসি—
ৱুহিঃ “ক্রিশ, আজ এত তাড়াতাড়ি এলেন?”
ক্রিশ হেসে সরে দাঁড়ায়, পাশে থাকা মানুষটাকে সামনে নিয়ে আসে।
রুহি অবাক— চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
“রুহিঃ … আম্মু…”
এর পর আর কিছু বলতে পারে না।
রুহি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মায়ের গলা।
ৱুহিঃ “আম্মু! তুমি এসেছো… আমি কত খুশি! ভাবতেও পারিনি তোমাকে দেখব আবার!”
আম্মুঃ “খুশি হয়েছিস তো? কাঁদছিস কেন রে, পাগলি মেয়ে?”
রুহির গলাটা কাঁপে—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি… তুমি কি আমাকে ক্ষমা করেছো, আম্মু?”
“হ্যাঁ রে মা… ক্রিশ সবকিছুই আমাকে বলেছে।”
রুহি মুখ ঘুরিয়ে তাকায় ক্রিশের দিকে।
ক্লান্ত মুখে মৃদু হাসি নিয়ে ক্রিশ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ৱুহিঃ “আপনি একটু ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি খেতে দেব… আর আম্মু, ভিতরে আসো।”
ক্ৰিশঃ “আমি একটু দোকানে যাচ্ছি, কিছু নিয়ে আসি। তুমি তোমার আম্মুর সঙ্গে গল্প করো।”
বাইকের শব্দ মিলিয়ে যায় গলির ভেতর।
রুহি মাকে নিয়ে ঘরে ঢোকে, চৌকিতে বসায়।
ঘরে সন্ধ্যার আলো পড়েছে।
ছোট্ট ঘরটা নিঃশব্দ, শুধু জানালা দিয়ে হালকা হাওয়া ঢুকছে।
রুহি খুশি মুখে মাকে বসতে দেয় চৌকিতে।
কিন্তু মা চারদিকে তাকিয়ে কেমন চুপ করে যায়।
আম্মু: “সারা ঘরে চোখ বুলাই…
তুই এখানে থাকিস কীভাবে রে রুহি?
ঘরে তো তেমন কিছুই নেই।
এইটুকু চৌকি, কটা থালা–বাসন ছাড়া কিছুই তো চোখে পড়ছে না।
একটা পাখা পর্যন্ত নেই!”
রুহি হেঁসে বলে, “এখানে অনেক হাওয়া দেয়, আম্মু।
ঠান্ডা লাগে, তাই পাখার দরকার হয় না।
আর আমরা দু’জন মানুষ, এত কিছুরই বা দরকার কী?”
মা একটু থেমে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে—
“তুই সুখে আছিস তো মা?”
রুহি মৃদু হেসে বলে—
“হ্যাঁ মা, আমি খুব সুখে আছি।
উনি আমার অনেক যত্ন করেন।”
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন—
“আচ্ছা শোন, আমি একটা কথা বলি—
তুই আমার সঙ্গে ফিরে চল।
ওখানে থেকে পড়াশোনা করবি,এভাবে থাকতে হবে না তোকে।
আমি ভাবতেই পারছি না, আমার এত সুন্দর মেয়েটা এমন একজনকে বিয়ে করল
যে সিমেন্ট–বালি বয় দোকানে।”
রুহি হঠাৎ থেমে যায়, মুখ শক্ত হয়ে যায়।
ৱুহিঃ “কি বললে তুমি, আম্মু? ক্রিশ সিমেন্ট–বালি বয়?”
মা শান্তভাবে বলে— “হ্যাঁ রে, তা নয়তো কী!
তোর আব্বু দেখেই আমায় বলেছিল।
তারপর আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম,
ও তখন সব বলেছে।
শোন রে মা, এই বয়সে ভুল সবাই করে।
তোর আব্বু সব শুনে তোকে দোষ দেয় না।
চল, ফিরে চল আমার সঙ্গে।
আমরা তোকে একটা ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব।”
রুহির বুক কেঁপে ওঠে।
চোখ ভিজে যায়, কিন্তু গলাটা শক্ত করে বলে—
“এসব কী বলছো, আম্মু?
আমাদের বিয়ে হয়েছে, উনি আমার স্বামী।
এভাবে আমি কীভাবে চলে যাব?”
মা একটু বিরক্ত গলায় বলে—
“তাহলে কী করবি?
সারা জীবন এই ভাঙা বাড়িতে থাকবি?
তোর স্বপ্নের কী হবে?
এই ছেলে তোকে পড়াতে পারবে না, এত দূর পড়াশোনা চালাতে পাৱবি!”
রুহির চোখ থেকে নিঃশব্দে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তবু নিজেকে সামলে বলে—
“তুমি ফিরে যাও, আম্মু।
আব্বুকে বলো, আমায় যেন ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু আমি তোমাদের কথা শুনে চলে যেতে পারব না…”
রুহির গলাটা কেঁপে ওঠে,
চোখের পানি থামানোর চেষ্টা করেও থামাতে পারে না।
মা চুপ করে বসে থাকেন,
তার মুখে কোনো কথা নেই—
শুধু মেয়ের চোখের জল দেখে বোঝাৱ চেষ্টা কৱে মেয়ে টা কী চাই।
আম্মু ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল—
“চল মা, আমি তাহলে উঠি।”
রুহি কাঁপা গলায় বলে—
“তুমি রাগ কোরো না, আম্মু…
আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি, কিন্তু এখন ফিরতে পারব না।”
মা কিছু বলে না, শুধু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে হাঁসে,
তারপর চুপচাপ দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রুহি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে,
চোখের সামনে মায়ের ছায়াটা আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
ঘরটা হঠাৎ খুব নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়।
রুহি চোখ মুছে ধীরে দরজাটা বন্ধ করে,
চৌকির ধারে বসে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে।
ঠিক তখনই বাইরে বাইকের শব্দ শোনা যায়।
দরজা খুলে ক্রিশ ঢোকে, মুখে হালকা হাঁসি,
হাতে একটা ছোট প্যাকেট।
ক্ৰিশ: “একি, তোমার আম্মু কোথায় গেলেন?”
রুহি ধীরে বলে—
“ওনি চলে গেছেন, একটু আগেই।”
ক্রিশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর হালকা হেসে বলে—
“ওহ্… আমি তো তোমার আম্মুর জন্য মিষ্টি এনেছি।”
রুহির মাথায় এখনো ঘুরছে সেই কথাটা —
“ক্রিশ সিমেন্ট বালি বয়।”
কানে যেন বারবার বাজছে কথাটা।
তার বুকের ভেতরটা কেমন ভারী হয়ে আসছে।
রুহি কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়াল।
ধীরে ধীরে গিয়ে ক্রিশের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা টেনে নিল,
আর রাগে সেটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল।
ক্রিশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
তারপর ধীরে এসে রুহির দুই গালে হাত রেখে ঠান্ডা গলায় বলে—
“কি হয়েছে, বাটারফ্লাই?
কাঁদছো কেন?
বাড়ির কথা মনে পড়ছে?”
রুহির চোখ ভরে গেল পানিতে।
কিন্তু এবার তার কণ্ঠ কাঁপছে অন্য কারণে।
ৱুহিঃ “আপনি… আপনি সিমেন্ট বালি…..!”
ক্রিশ একটু চুপ করে রইল, তারপর হেসে ফেলল।
“কেন?
‘সিমেন্ট বালি বয়’ শুনে বুঝি তোমার লজ্জা লাগছে
আমাকে ‘হাসবেন্ড’ বলতে?”
রুহি হঠাৎ কেঁপে উঠে জোরে ক্রিশকে ঠেলে দিল।
ক্রিশ খানিকটা পেছনে সরে গিয়ে দাঁড়াল, তবুও চোখে রইল সেই শান্ত দৃষ্টি।
রুহির গলাটা ভেঙে গেল কান্নায়।
ৱুহিঃ “এইজন্যই তো আপনার প্রতিরাতে
গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা হয়, ঘুমাতে পারেন না!
রোদে মুখ পুরে শুকিয়ে গেছে…
কেন এত কষ্ট করেন?
কেন আমায় বিয়ে করলেন?
আমায় না বিয়ে করলে আপনাকে তো এই ভাঙা ঘরে থাকতে হতো না!
কেন… কেন এত ভালোবাসেন আমায়?
কেন সত্যিটা বলেননি,
আপনি আসলে কী কাজ করেন?”
ক্রিশ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল।
রুহির চোখ দিয়ে তখনও অঝোৱে পানি ঝরছে।
বুকটা ভারী হয়ে আছে, গলাটা আটকে আসছে।
সে আস্তে আস্তে বলে—
“থাকব না আমি, আর না। আমার জন্য এত কষ্ট করছেন আপনি, আমি চুপ করে দেখতে পারব না। আমি চলে যাব, আপনাকে ছেড়ে।”
তবেই আপনি বাড়ি ফিৱবেন।
এই কথা বলেই রুহি দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করে।
কিন্তু ঠিক তখনই ক্রিশের মাথায় যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
তার চোখ লাল হয়ে যায়, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।
রুহির “চলে যাব” কথাটা যেন তার বুকের ভেতর ছুরি হয়ে বিঁধে যায়।
সে ঝট রুহির হাত চেপে ধৱে।
“তুই কোথায় যাবি?” — গলা ভেঙে যায় ক্রিশের,
কথাগুলো যেন ব্যথা আর রাগে মিশে আছে।
রুহি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, চোখে ভয় আর কষ্ট।
“আমাকে যেতে দিন ক্রিশ…”
রুহি আর একবার বলল, কণ্ঠ কেঁপে—
“আমি যাবো… আমাকে যেতে দিন।”
ক্রিশ ৱুহি কে সপাটে এ্কটা থাপ্পৱ মাৱে ৱুহি ছিটকে খাটেৱ কাছে পড়ে।
ক্ৰিশ চিৎকার করে ওঠে—
“তুই নাটক করিস! আমায় ছেড়ে যাবে তুই?”
রাগে সে পাশের থালা বাসনেৱ গামলায় জোরে লাথি মারে; থালা বাসন ছিটকে পড়ে, ঝন ঝন শব্দে কাঁপে ঘৱ।
রুহি ভয় পেয়ে পেছনে হটে দেয়ালে ঠেকে যায়।
ক্রিশ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে রুহির চুলের খোঁপা শক্ত করে ধরে টানে, আমাকে ছেড়ে যাবি বলেই আমাৱ সপাটে দু গালে দুটো থাপ্পৱ মাৱে ৱুহি চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
ক্রিশ কণ্ঠে কাঁপন মিশিয়ে চিৎকার করে—
“কিসের কমতি রেখেছি আমি তোর?
যে নিজে জল গড়িয়ে খেত না, সে তোৱ জন্য রোদে পুড়ে কাজ করে।
তুই বলার আগে সব জিনিস মুখের সামনে এনে ৱাখে—‘তাকে ছেড়ে চলে যাবি তুই?’”
রুহি কাঁদতে কাঁদতে আবার ছুটে উঠে দরজার দিকে যাবে—তখন ক্রিশ হঠাৎ একের পর এক থাপ্পড় বসায় ৱুহিৱ গালে।
প্রায় দশ — বারোটা থাপ্পড় পড়ে প্রতিটি আঘাতের পরে ৱুহিৱ জ্ঞান হাৱায় ক্ৰিশেৱ বুকে নেতিয়ে পড়ে।
“ক্রিশঃ যত দিন এই ক্রিশ খানের নিঃশ্বাস চলবে, ততো দিন প্রতিটা ঘণ্টা, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড তোমাকে আমাৱ সাথেই থাকতে হবে, বাটারফ্লাই।
আল্লাহ যেনো আমাদের মৃত্যুও একসাথে দেন আমৱা যেন কবরেও একসাথে থাকতে পারি।
রাত আটটা। রুহিৱ জ্ঞান ফেৱে হঠাৎ ।
সে উঠে বসে, চোখে ভয় আর মুখে আতঙ্কের ছাপ।
ঠিক তখনই ক্রিশের লাল হওয়া চোখ, রাগি মুখ রুহির চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
রুহি বড় করে নিশ্বাস নিয়ে চারপাশটা তাকায়—ক্রিশ ঘরে নেই।
বাসন থালা সব গোছানো, মাটির ওপর পরিষ্কার।
রুহি মনে মনে ভাবে, “আমি কি একটু বেশি বলে ফেলেছি।
ওনি কী ৱেগে কোথাও চলে গেলেন।
ধীরে ধীরে চৌকি থেকে নামে রুহি বাইরে চলে আসে।
সিমনে তাকায়—ক্রিশ উঠোনে, সামনে বসে আছে। আগুন জ্বলছে।
রুহি ভয়ে “পিছনে থেকে বলে আগুন নিয়ে কী করছেন?”
কিন্তু তার কথা ক্রিশের কানে পৌঁছায় না। ক্রিশ ঠিক সেইভাবে বসে আছে।
রুহি এবার এগিয়ে সামনে যায়, ক্রিশের সামনে দাঁড়ায়।
ক্রিশ তার হাতে আগুন ধরে বসে আছে, অনেকটা পুড়ে গেছে হাত টা।
রুহি চিৎকার করে দ্রুত ক্ৰিশেৱ হাত সৱিয়ে নিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে ক্রিশের হাতের ওপর ঢাকল।
হাতটা তখনও হালকা লালচে, আগুনের ছোঁয়া অনেকটা পোড়া।
ওড়না হাতে রাখতেই ক্রিশ একটু চমকে উঠল, কিন্তু ধীরে ধীরে হাতের জ্বালা কমতে শুরু করল।
হাতের লালচে দাগগুলো কিছুটা ফুলে আছে, তীব্র ব্যথা।
রুহি চোখে চোখ রেখে তার হাত সামলে রাখে, যেন গরমটা দ্রুত কমে যায়।
ক্রিশ প্রথমে একটু অবিশ্বাসে তাকাল, তারপর ধীরে ধীরে শান্ত হলো।
রুহির চোখ লাল, মুখে উদ্বেগ,
কাঁপা গলায় বলল,
— “ আপনি এরকম কেন করলেন বলুন তো? দেখুন হাতটা কতটা পুড়ে গেছে!”
ক্রিশ কিছু না বলে হঠাৎ রুহির দিকে এগিয়ে আসে, তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে।
বুকের ভেতর রুহির মুখটা টেনে নিয়ে, শান্ত গলায় বলে,
— “সরি, বাটারফ্লাই… I am so sorry,
আমি তোকে এই হাত দিয়েই আঘাত করেছিলাম, তাই এই হাতটাই আমি পুড়িয়ে ফেলেছি।”
রুহি হতবাক হয়ে তার বুকের ভেতর থেকে মুখ তুলে বলে,
— “আপনি সত্যিই পুরো একটা পাগল!”
ক্রিশ মৃদু হেসে বলে,
— “হ্যাঁ, শুধু…”
রুহি ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে ফেলে,
— “হ্যাঁ, আমার জন্যই, তাই তো?”
তারপর মুখটা একটু কুঁচকে রাগ মেশানো ভালোবাসার সুরে বলে,
— “ফালতু মানুষ! এখন হাতটার কী হবে? ঘরে তো কোনো ওষুধও নেই।”
ক্রিশ হেসে বলে,
— “তুই আদর করে দে, বাটারফ্লাই… ঠিক হয়ে যাবে।”
রুহি চোখে চোখ রেখে বলে,
— “ফালতু কথা বলবেন না।”
তবুও সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে পোড়া জায়গা টাম ছুঁয়ে দেয় তারপর ঠোঁট দিয়ে হালকা ছুঁয়ে দেয়।
আগুনের ছোঁয়ায় লালচে হয়ে যাওয়া হাতের ওপর তার ঠোঁটের ছোঁয়া যেন মিষ্টি শান্তি এনে দেয়।
রুহি হাতটা আস্তে আস্তে বুলিয়ে দেয়, চোখে চিন্তার ছাপ।
— “চলুন, ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন।”
ক্রিশ কিছু না বলে হঠাৎ রুহিকে কোলে তুলে নেই।
রুহি অবাক হয়ে বলে ওঠে,
— “আরে, আপনি কী করছেন? আপনার তো হাত ব্যথা করছে!”
ক্রিশঃ “আগের বার তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিলি, বাটারফ্লাই… আজ আমায় থামাস না, প্লিজ।”
“I can’t control myself anymore.”
রুহি কিছু না বলে তার দিকে চেয়ে থাকে। তার চোখে জল জমে উঠেছে, ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই।
ধীরে ধীরে সে ক্রিশের বুকের ভেতর মুখটা লুকিয়ে ফেলে।
ক্রিশ রুহিকে নিয়ে গিয়ে ঘরের ভেতর চৌকিটা বসায়, তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
“রুহিঃ আপনি আজ সেই সকালে খেয়েছিলেন।
একটু কিছু খেয়ে নিন, প্লিজ।”
ক্রিশ এগিয়ে এসে দু’হাত দিয়ে চৌকিটা রাখে, রুহির উপর ঝুঁকে পড়ে, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে —
“খাব তো, বাটারফ্লাই… কিন্তু খাবার নয়, তোকে।”
“I will eat your whole body.”
রুহিৱ গাল লাল হয়ে যায় সে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই ক্রিশ তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে —
“উঁমম… আর কোনো কথা নয়, “Just feel it butterfly.”
রুহি ভয়ে পিছিয়ে যেতে চায়, কিন্তু ক্রিশ তখনই তার ঘাড় চেপে ধরে, রুহির পাতলা নরম ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
রুহির চোখ একটুও বন্ধ হয় না, অবাক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে ক্রিশের দিকে।
ক্রিশের শার্ট আঁকড়ে ধরে দু’হাতে, রুহি অবাক হয়ে পড়ে, আর ক্রিশ গভীরভাবে রুহির ঠোঁট শুষে নিতে শুরু করে— যেন বহুদিনের ক্ষুধার্ত কোনো প্রাণী।
ক্রিশের দু’হাত ঘুরে বেড়াতে থাকে রুহির সারা শরীরজুড়ে।
অনেকক্ষণ অতিবাহিত হয়ে যায়,
রুহি ক্লান্ত হয়ে হেলে পড়ে বিছানায়।
রুহির নিঃশ্বাস কাঁপছে, বুকটা দ্রুত উঠানামা করছে।
ক্রিশের চোখে এখন এক অদ্ভুত মিশ্র আগুন— রাগ, ভালোবাসা, আর একরাশ অধিকারবোধ।
ক্রিশ রুহিকে চুম্বনের অবস্থায় তুলে নিয়ে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
তারপর নিজের শার্টটা অবলীলায় ছুঁড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে।
রুহি ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে—না, ক্রিশকে বাধা দিতে পারে, না নিজেকে সামলাতে পারে।
ক্রিশ রুহির বাধা না পেয়ে আরও বেসামাল হয়ে ওঠে।
রুহিকে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে তার সারা শরীরে নিজের স্পর্শ আর ঠোঁটে চুমু ছোঁয়ায়।
রুহি ছটফটিয়ে ওঠে, ক্রিশের অবাধ্য ঠোঁটের ছোঁয়ায়।
লজ্বাই আড়ষ্ঠ হয়ে ক্রিশের বড় বড় চুল আঁকড়ে ধরে।
রুহির অস্ফুট আহ্বানে ক্রিশ শেষ সীমানায় পৌঁছোয়।
রুহি আতঁকে উঠে চিৎকার করে — নিস্তব্ধ ঘরটা ভরে যায় তাদের দু’জনের নিঃশ্বাসে।
ক্রিশঃ… “প্লিজ, বাটারফ্লাই, আর একটু সয্য কৱে নে, শুধু অজ্ঞান হোস না আমাৱ লেদু শোনা…”
রুহির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে, সে নিজের সমস্তটুকু দিয়ে ক্রিশকে সামলানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু পারে না — এত লম্বা, সুঠাম দেহের মানুষটার নিচে নিজেকে তার একদম ছোট্ট বিড়ালছানা মনে হচ্ছে।
প্রায় সারা রাতটাই যেন থেমে গিয়েছিল সময়।
ঘরের বাতাস ভারী হয়ে আছে তাদের উষ্ণ নিঃশ্বাসে, জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের আলো ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে।
রুহি ক্লান্ত, চোখের পাতায় নিদ্রার ছোঁয়া, তবুও তার বুকের ওপর শুয়ে থাকা ক্রিশের নিঃশ্বাসের ছন্দটা শুনতে শুনতে সে এক অজানা শান্তিতে ভরে যায়।
mad for you part 17
ভোর তিনটার দিকে, ক্লান্ত দেহে ক্রিশ আলতো করে রুহিকে আরও কাছে টেনে নেয়, যেন তাকে ছেড়ে দেওয়া মানেই নিজের এক অংশ হারিয়ে ফেলা।
রুহি নিঃশব্দে মাথা রাখে তার কাঁধে, ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে — আর মুহূর্তেই ঘুমে তলিয়ে যায় দুজন।
