mad for you part 8
তানিয়া খাতুন
হোস্টেলের সামনে এসে ক্রিশের বাইকটা থেমে যায়।
রুহি মনের অজান্তে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে — ও ভেবেছিল ক্রিশ হয়তো ওকে কোথাও অন্যত্র নিয়ে যাবে।
ক্রিশ (গম্ভীর গলায়): নামো।
গলাটার সেই কড়া সুরে রুহির মন কেঁপে ওঠে। ধীরে ধীরে বাইক থেকে নামে ও।
ক্রিশ: শাড়ি পরেছো কার জন্যে?
রুহি মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
ক্রিশ একটা ভারি নিঃশ্বাস ফেলে বাইক থেকে নামে। ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসে। রুহি ভয়ে পিছু হটে যায়।
ক্রিশ: পেছাচ্ছো কেন?
রুহি: আপনি… আপনি এগোচ্ছেন কেন?
ক্রিশ: Stop. I said stop!
ক্ৰিশের সেই ধমকে রুহি স্থির হয়ে যায়। ক্রিশ হঠাৎ এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি টেনে ধৱে।
ক্রিশ (রাগে): চুল খুলে রেখেছো কেন, হুঁ?
কার জন্যে সেজেছো এত? আমার জন্যে না অন্য কারও জন্যে?
রুহি ব্যথায় চোখ কুঁচকে চারদিকে তাকায়—রাত গভীর, আশেপাশে কেউ নেই। তবু সাহস করে বলে ওঠে—
রুহি: দয়া করে… রাস্তায় এমন করবেন না, ছেড়ে দিন আমাকে, কেউ দেখলে খাৱাপ ভাববে।
ক্রিশ আরও কাছে টেনে নিয়ে আসে ৱুহিকে, মুখটা ওর মুখের একদম সামনে এনে বলে—
ক্রিশ: So what?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাইলে এই রাস্তাটা আমি কিনে নিতে পারি… তারপর এখানেই তোমার সঙ্গে বাসর করতে পারি। বুঝলে?
রুহির চোখে পানি এসে যায়, ব্যথায় গাল বেয়ে নেমে পড়ে। তবু সে সাহস করে বলে—
রুহি: আপনি তখন কেন বলেছিলেন আমি আপনার স্ত্রী? আমাদের তো বিয়ে হয়নি!
ক্রিশ: হয়নি… কিন্তু হবে। চাইলে এখনই করে ফেলতে পারি। চলো।
এই বলে ও রুহির হাত টেনে ধরে।
রুহি ভয়ে কেঁদে ওঠে—
রুহি: না… আজ না, পরে প্লিজ…
ক্রিশ আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর নিচু গলায় বলে—
ক্রিশ: Butterfly…
রুহি: হুঁ?
ক্রিশ: একবার… আমায় জড়িয়ে ধরবে?
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, ক্ৰিশ কে আজ কে অন্ন ৱকম লাগছে, মনে হচ্ছে সে অনেক ক্লান্ত।
মুহূর্তের নীরবতার পর ৱুহি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে ক্রিশকে জড়িয়ে ধরে।
ক্রিশ হেসে ফেলে—একটা কষ্টভরা হাসি।
ও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, যেন ছেড়ে দিলে রুহি হারিয়ে যাবে চিরতরে।
ক্রিশ (নরম গলায়): আমায় ঠকাচ্ছো না তো, বাটারফ্লাই?
রুহি কিছু বলে না। চুপ করে ওর বুকের ভেতর মাথা গুঁজে থাকে।
ক্রিশ: যদি আমাকে ঠকাও… তাহলে তোমাকে শাস্তি দিতে আমার খুব কষ্ট হবে, জানো?
কাল কলেজেৱ ছুটি পড়ল, বাড়ি যাবে?
রুহিঃ হ্যাঁ… না মানে, না। আমি এখানেই থেকে পড়াশোনা করব।
(মনে মনে ভাবে — এখনই কিছু বলা যাবে না যে আমি বাড়ি যাচ্ছি।)
ক্রিশঃ কাল তাহলে তোমাকে নিতে আসব, রেডি থেকো।
রুহি ক্রিশের দিকে না তাকিয়ে শুধু মাথা নেড়ে চলে যেতে লাগল।
ক্রিশঃ আমি যেতে বলেছি তোমায়?
রুহি ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরে মাথা নেড়ে বোঝাল “না”।
ক্রিশঃ তাহলে যাচ্ছো কেন?
ক্রিশ এগিয়ে গিয়ে রুহির কপালে আলতো করে চুমু খেল, তারপর পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে ওর হাতে দিল।
রুহি অবাক হয়ে বলল,
রুহি: এটা কী?
ক্রিশ: রুমে গিয়ে খুলে দেখবে। আর হ্যাঁ, সব সময় এটা সঙ্গে রাখবে, বুঝলে?
রুহি বাক্সটা হাতে নিয়ে চুপ করে রইল।
ক্রিশ ধীরে বলল,
এখন যাও…
রুহি কিছু না বলে ধীরে ধীরে চলে গেল।
পেছনে তাকিয়ে দেখল, ক্রিশ এখনও দাঁড়িয়ে আছে একই জায়গায় — চোখে গভীর এক চিন্তা আর শিকাৱিৱ দৃষ্টি।
রাতটা শান্ত, হোস্টেলের জানালার বাইরে হালকা বাতাস বইছে।
রুহি রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
হাতে ধরা ছোট্ট বাক্সটা টেবিলের ওপর রাখল।
সোনালি কাগজে মোড়ানো বাক্সটা দেখে ওর কেমন যেন অদ্ভুত লাগল — মনে হলো যেন ভেতরে কিছু খুবই বিশেষ জিনিস আছে।
ধীরে ধীরে বাক্সের ঢাকনাটা খুলে ফেলল রুহি।
ভেতরে নরম কটনের উপর একটা সুন্দর ছোট Butterfly বসানো — চকচকে ডানাগুলো নরম গোলাপি রঙের, আর মাঝে ছোট্ট একটা আলো ঝিলমিল করছে।
রুহি অবাক হয়ে মুচকি হেসে বলল,
রুহি: বাহহ, কী সুন্দর!
ওটা একটা হালকা পিনের মতো, যা দেওয়ালে আটকে রাখা যায়।
রুহি ভাবল — “এটা তো সাজানোর জন্যই হবে।”
তাই ও নিজের পড়ার টেবিলের পাশে দেওয়ালে সেট করে রাখল।
Butterfly-টার ডানাগুলো নরম আলোয় চকচক করছে, আর মনে হচ্ছে যেন সেটাও রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।
রুহি হাসতে হাসতে বলল,
রুহি: এত ভয়ানক মানুষেৱ চয়েস এত সুন্দৱ!
তারপর আলো নিভিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
চোখ বন্ধ হয়ে এল, কিন্তু ঘরে সেই ছোট্ট Butterfly-টার আলো ঝিলমিল করে জ্বলতে থাকল।
কেউ জানে না, রুহিও না — সেই সুন্দর পিনটার ভেতরেই লুকিয়ে আছে একটা ক্ষুদ্র হিডেন ক্যামেরা,
যেটা থেকে ক্রিশ তার “Butterfly”-কে দেখতে পাবে, প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে…
পরের দিন সকাল।
রোদটা হোস্টেলের জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকেছে, রুহির মুখে পড়ছে।
ও তখনো ঘুমিয়ে — চুলগুলো একটু এলোমেলো, মুখে শান্ত একটা হাসি।
ও জানেই না, দেওয়ালে ঝুলে থাকা সেই সুন্দর Butterfly আসলে ওর প্রতিটা নড়াচড়া নিঃশব্দে ধরে রাখছে।
ক্রিশ নিজের রুমে, ল্যাপটপ খুলে বসে আছে।
স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সেই ছোট্ট ঘরটা, যেখানে রুহি ঘুমিয়ে।
ওর ঠোঁটে ধীরে ধীরে একরাশ হাসি ফুটে উঠল।
চোখে অদ্ভুত এক শান্তি, কিন্তু সেই শান্তির ভিতরেও একটা দখলের আগুন জ্বলছে।
ক্রিশ (নিজের মনে ফিসফিস করে): ঘুমোচ্ছো, বাটারফ্লাই…
জানো, আমি… সবসময় তোমার কাছে আছি।
ক্ৰিশ হাত বাড়িয়ে স্ক্রিনে রুহির মুখের ওপর আঙুল রাখল, যেন ছুঁয়ে দিচ্ছে ওকে।
এক মুহূর্তের জন্য ওর চোখ নরম হয়ে এল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মুখের হাসিটা বদলে গেল এক ঠাণ্ডা দৃঢ়তায়।
ক্রিশ: তুমি আমার…
শুধু আমার।
কেউ তোমাৱ দিকে তাকালেও আমি পছন্দ করি না।
ক্ৰিশ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইল, চোখ স্ক্রিনে আটকে আছে।
রুহি ঘুমের মধ্যে হালকা নড়ে উঠল, চাদরটা টেনে নিল বুকের কাছে।
ক্রিশ: এমনিই থেকো, বাটারফ্লাই… কেউ যেন তোমায় ছুঁতেও না পারে।
স্ক্রিনে সূর্যের আলো রুহির মুখে পড়ছে, আর দূরে বসে ক্রিশ নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে —
যেন ওর পুরো পৃথিবী এখন একটা ছোট্ট ঘরের মধ্যে বন্দী।
রুহি তখন গভীর ঘুমে—চুপচাপ, নিঃশব্দ।
ক্রিশ উঠে দাঁড়ায়, নিঃশব্দে দরজার দিকে এগোয়, ফ্রেশ হতে যায় ওয়াশরুমে।
কিছুক্ষণ পর ফোন বেজে ওঠে।
স্ক্রিনে অচেনা নাম, কিন্তু কণ্ঠটা শোনামাত্রই ক্রিশের চোখে এক ঝলক সন্দেহের ছায়া নেমে আসে।
“হ্যাঁ… বল।” — গলা ঠান্ডা, কিন্তু চাপা রাগে ভারী।
ওপাশ থেকে কিছু কথা শোনার পর চুপ হয়ে যায় সে। কল কেটে ফেলে।
ধীরে ধীরে এসে বসে ল্যাপটপের সামনে।
স্ক্রিন অন করে—
আর ঠিক তখনই বুকের ভেতর কেমন যেন ধক করে ওঠে।
হোস্টেলেৱ ঘরটা ফাঁকা।
পুরো রুম নিস্তব্ধ, কোনো নড়াচড়া নেই।
রুহি কোথাও নেই।
চোখ স্থির হয়ে যায় স্ক্রিনের দিকে।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে ক্ৰিশেৱ।
তারপর—
মাথায় রক্ত চড়তে শুরু করে।
চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
এক ঝটকায় ল্যাপটপটা তুলে নেয়।
পরের মুহূর্তে বিকট শব্দে সেটা আছড়ে ফেলে দেয় টেবিলে।
স্ক্রিন চিরে ভাঙা কাচের টুকরো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
কিন্তু তাতেও রাগ কমে না।
চোখ লালচে হয়ে ওঠে, নিঃশ্বাস ভারী।
মাথার শিরাগুলো ফুলে উঠে স্পষ্ট দেখা যায়।
একটা পাগলামির ঝড় নেমে আসে তার চোখে—
সে হিশহিশিয়ে বলে ওঠে,
“Butterfly… তুই আবার মিথ্যে বললি?
ঠিক আছে…এবাৱ শাস্তিটা এমন হবে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে ৱাখবি।
Just wait and watch…”
তারপর হঠাৎ যেন আগুন ধরে যায় তার মধ্যে।
ডেস্কের ওপরের ফুলদানি, চেয়ার, —সব ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
রাগের চোটে ঘরের দেয়ালে ঘুষি মারে, রক্ত ঝরে কিন্তু থামে না।
তার নিঃশ্বাস গরম হয়ে ওঠে, যেন আগ্নেয়গিরির ভেতর দাউদাউ করছে আগুন।
চোখে তখন শুধু একটাই ছবি—রুহি।
আর মনের ভেতর একটাই কথা ঘুরছে—
“ও পালাতে পারবে না… কখনো পারবে না।”
রুহি আর সিমরান বাসে বসে আছে। এখনো প্রায় দুই ঘণ্টা লাগবে ওদের বাড়ি পৌঁছাতে।
জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে রুহি—চোখ স্থির, মনটা অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে।
সিমরান একটু হেলান দিয়ে বলল,
“কি রে, এত কি ভাবছিস?”
রুহি চমকে উঠে বলল,
“হুঁ? কিছু বললি?”
সিমরান হেসে বলল,
“হ্যাঁ, বলছি—এত কি ভাবছিস?”
রুহি একটুখানি নিশ্বাস ফেলে নিচু গলায় বলল,
“আচ্ছা, আমি কি একটু বেশি করে ফেললাম?”
তার গলার স্বরে কেমন যেন অপরাধবোধ।
“আসলে তো আমার হাতে কোনো উপায় ছিল না। উনি তো আমার কোনো কথাই শোনেন না।
আমি কতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি—যে আমি উনাকে ভালোবাসি না। কিন্তু উনি তো আমার কথায় কানই দেননি।”
সিমরান ভ্রু কুঁচকে হালকা হাসল,
“ছাড় তো, দেখবি তুই না থাকলে তোকে না পেয়ে আবার নতুন মেয়েকে ফাঁদে ফেলবে।
বড়লোকের ছেলেরাই এমন হয়। আমি তো শুনেছি ক্রিশ নাকি শিক্ষামন্ত্রীর ছেলে!”
রুহি অবাক হয়ে তাকাল,
“কি? সত্যি? তাহলে এই কলেজে পড়ে কেন?
মানে, এত বড়লোক হলে বাইরে পড়াশোনা করতে পারত না?”
সিমরান হাসল,
“হাঁসালি বোন, ক্রিশ পড়াশোনায় খুব একটা ভালো না।
ব্যাক পেতে পেতে এগোচ্ছে। বাইরে পড়তে গেলে তো প্রথমেই বের করে দিত। পড়াশোনা শেষ করতে পারত না।”
রুহি একটু বিস্ময়ের সঙ্গে বলল,
“তুই তো অনেক কিছুই জানিস ওনার ব্যাপারে।”
সিমরান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“ছাড়, এখন রিল্যাক্স কর। অফ কতদিন পর বাড়ি যাচ্ছি—একটু চিল কর।”
রুহি চুপ করে গেল। জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকল।
তার মনে হচ্ছিল—সে যেন নিজেই কোনো অপরাধে দগ্ধ হচ্ছে।
সে কি সত্যিই নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে একটু বেশিই স্বার্থপর হয়ে গেল?
বাইরের রাস্তায় বাসটা দুলে উঠছিল, সূর্যটা ঢলে পড়ছিল পশ্চিমে।
সিমরান মোবাইলটা হাতে নিয়ে গান চালাল, অথচ রুহির মন তখনও আটকে আছে একটাই প্রশ্নে—
“আমি কি ঠিক করলাম? না কি আমি শুধু নিজের জন্য ওনাকে কষ্ট দিলাম?”
তার চোখে জল চলে এল—সে মুখ ফিরিয়ে ফেলল যাতে সিমরান না দেখে ফেলে।
চোখের কোণে তখন শুধু একটাই ভয় খেলা করছে—
ক্রিশের সেই লাল চোখ, আর রাগে ফেটে পড়া মুখটা।
ভেতর থেকে একটা শব্দ উঠল,
“আমি কি ওর থেকে সত্যিই মুক্তি পাব?”
রুহি দরজার সামনে এসে বেল বাজাল।
“টিং টং!”
ভিতর থেকে ছুটে এল তাৱ ছোট ভাই সোহান।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপিয়ে পড়ল দিদির গলায়—
“আপু! কেমন আছো?”
রুহি হেসে ওর চুল এলোমেলো করে দিল,
“এই এই, এত ভালোবাসা দেখানোর দরকার নেই, আমি কিন্তু তোর জন্য কিছু আনিনি!”
সোহান মুখ ফুলিয়ে বলল,
“ছিঃ ছিঃ আপু! তুমি আমাকে এমনভাবে নিচে নামালে?”
রুহি হেসে বলল,
“এই নাটক বন্ধ কর, সর! আমাকে ঘরে ঢুকতে দিবি না নাকি?”
দু’জনের হাসিঠাট্টার মধ্যেই রুহি ঘরে ঢুকল।
তারপর সোজা রান্নাঘরের দিকে গেল।
আম্মু সেখানে ব্যস্ত, গ্যাসেৱ পাশে দাঁড়িয়ে কিছু ভাজছেন।
রুহি পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল,
“কেমন আছো, আম্মু?”
আম্মু মৃদু হেসে মেয়ের গালে হাত রাখলেন,
“আমি ভালো আছি মা। তুই বল, তোর শরীর ঠিক আছে তো?”
রুহি হাসল,
“হ্যাঁ, আমি একদমই ঠিকঠাক আছি।”
আম্মুঃ “আচ্ছা, আগে তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোর পছন্দের সব খাবার বানিয়েছি।”
রুহি মুচকি হেসে মাথা নাড়ল,
“আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আব্বু কোথায়?”
আম্মুঃ “তোর আব্বু একটু কাজে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে।
ততক্ষণে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, ও আসলেই আমরা সবাই একসাথে খেয়ে নেব।”
রুহি শান্ত হাসি দিল,
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
রুহি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল, ভেজা চুলটা তোয়ালে দিয়ে মুছছে।
ঘরে ঢুকেই দেখে সোহান তার বিছানায় বসে তাৱ ফোনে গেম খেলছে।
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমি তোকে কতবার বলেছি না আমার ফোনে গেম খেলবি না! যা, নিজের ঘরে গিয়ে পড়াশোনা কর।”
সোহান গেম থেকে চোখ না সরিয়ে বলল,
“উফ আপু! হোস্টেলে তো পড়াশোনাই করি সারাদিন। এখন একটু গেম খেলতে দাও না!”
রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, চুল মুছতে মুছতে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু মাত্র দশ মিনিট। এর বেশি না।”
সোহান হাসল, “ঠিক আছে আপু।”
হঠাৎ কিছুক্ষণ পর অবাক গলায় বলে উঠল,
“আপু! তোমার ফোনে একটা নাম থেকে প্রায় এক হাজারটা মিস কল! তুমি দেখোনি কেনো দিয়েছে?”
রুহির হাত থেমে গেল।
চুলের পানি ফোঁটা ফোঁটা করে গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
মাথার মধ্যে যেন বজ্রপাত হল—ক্রিশ বিৱবিৱ কৱলো সে!
সে দ্রুত এগিয়ে এসে ফোনটা সোহানের হাত থেকে টেনে নিল।
ফোন খুলে কললিস্টে গেল—
“ভয়ানক মানুষ” নামটা একটানা ঝলমল করছে,
আর পাশে একের পর এক মিসকলের তালিকা—প্রায় এক হাজার।
রুহির বুকের ভেতর কেমন চাপা কাঁপুনি উঠল।
মনে হচ্ছিল, ক্রিশ যেন ওর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, নিশ্বাস নিচ্ছে খুব কাছে থেকে।
সোহান আবার বলল,
“শুধু মিসকল না, আপু—একশোটা এসএমএসও আছে!”
সোহান চোখ বড়ো কৱে বলছ,
“আচ্ছা, এটা কি তোমার বয়ফ্রেন্ড আপু?”
রুহি হতবাক হয়ে গেল।
ফোন খুলে এসএমএসে গেল, একটার পর একটা একই লেখা—
“Pick up the phone, Butterfly।
তার মুখ সাদা হয়ে গেল। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে।
সোহান কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হলো আপু? জিজু কি?”
রুহি ভয় পেয়ে তার দিকে তাকাল, গলায় কাঁপুনি,
“তুই একটু বেশি পেকেছিস না? যা, আমার ঘর থেকে বের হয়ে যা এখনই।”
সোহান হেসে বলল,
“আচ্ছা, তাহলে আমি এখন আম্মুকে গিয়ে এই খবরটা বলি!”
রুহি চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি সোহানেৱ হাত ধরে ফেলল,
“না না! তুই আম্মুকে কিছু বলবি না, প্লিজ সোহান! যা চাইবি আমি দিয়ে দেব, শুধু কাউকে বলবি না।”
সোহান মুচকি হেসে চোখ টিপে বলল,
mad for you part 7
“ঠিক আছে, তাহলে আমার জন্য একটা বড়ো চকলেট বক্স চাই।”
রুহি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“পেয়ে যাবি, এখন যা।”
সোহান হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দরজা বন্ধ হতেই রুহি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।
তার নিঃশ্বাস ভারী, চোখের পাতা কাঁপছে।
ফোনটা শক্ত করে ধরে নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,
“না… এই সিমটা এখনই বন্ধ রাখতে হবে। কিছুদিনের জন্য একদম বন্ধ…”
