More than love part 1 || মেঘলা আহমেদ

More than love part 1
মেঘলা আহমেদ

-“স্টুডেন্টের বাড়িতে বার্থডে পার্টিতে এসব ছেঁড়া পোশাক পড়ে আসতে লজ্জা করলো না তোমার? আর তুমি কি করে ভাবলে তোমার দেয়া এসব থার্ডক্লাস গিফট, ওহ সরি এইসব কোন গিফটের কাতারেই পরে না। তোমার কি মনে হলো, এইসব কাপ গ্লাস আমরা রাখবো? ওহ তুমি বোধহয় খেতে এসেছো তাই না মিস? এই ওয়েটার এই মেয়েকে খাবার দিয়ে বিদেয় কর! এসব অভুক্ত অনাহারী রা যে কিভাবে পার্টি তে এলো? আমি সেটাই বুঝিনা!

লিপির হাতে কাপটা দিতে গিয়ে কোন পুরুষের কথায় থমকে গেলো রোজা। লজ্জায় অপমানে, কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ড্রেস ছেঁড়া মনে পড়তেই মুহূর্তেই মুখটা লাল হয়ে গেলো তাঁর। রোজা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো পেছনের মানুষটার দিকে। মুহূর্তেই অবাক হয়ে গেলো রোজা। এত সুন্দর একটা মানুষ এইরকম নোং*রা কথা কি করে বলতে পারে? পার্টি ভর্তি লোকজন সবাই রোজার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুরের এসব কথা শুনে লিপি বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” চাচ্চু তুমি মিস কে এসব কি বলছো? এই কাপ তো..
লিপি কিছু বলার আগেই থামিয়ে দিলো রোজা। লিপির আঙুলে একটা স্বর্ণের কারুকাজ করা আংটি পড়িয়ে দিলো। পায়ে একজোড়া রূপোর নুপুর পড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। সবাই অবাক হয়ে রোজা কে দেখছে। রোজা নিজেকে সামলে বলল-
-” থামো লিপি। আমি গেলাম। তোমার আম্মুকে বলে দিও। কাল থেকে আমি আর পড়াতে আসবো না‌।
লিপি রোজার কথা শুনে ঠোঁট উল্টে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে রোজার ড্রেস টেনে ধরে বলে-

-” ও মিস প্লিজ। আমি চাচ্চুকে খুব ব*কবো। প্লিজ তুমি এভাবে চলে যেও না।
রোজার কান্না পাচ্ছে। তাকে এত অপমান কেউ জীবনেও করেনি। লিপি কে তার চাচ্চু রোদ্দুর এসে নিয়ে যায়। তার দৃষ্টি দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। এতকিছু করেও তার মন ভরছে না। মেয়েটাকে সে আরো শাস্তি দিবে। রোজা দৌড়ে লিপিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় যেতেই একটা রিকশা দেখতে পায়। রোজা রিকশা ওয়ালা কে ডেকে রিকশায় উঠে বসে। রিকশাওয়ালা মধ্যবয়স্ক একজন লোক। সে ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে-

-” আপা কোথায় যাইবেন?
রোজা চোখ মুছে বলে-
-” বিবি পুকুরের কাছে চলুন।

তারপর আবারো অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে রোজা। বাবা অনেকবার বলেছিল গাড়ি নিতে, কিন্তু রোজা নাছোড়বান্দা। সে রিকশায় করেই এসেছে। এ বাড়িতে এসেই যখন বান্ধবীর কল এলো তখন রোজা কথা বলতে বলতে পার্কিং লটে চলে যায়। কিন্তু তখনই বিপত্তি ঘটে। রোদ্দুর হন্তদন্ত করে ঐদিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই রোজা সামনে চলে আসে। আর দূর্ঘ*টনাবসত দুজনের ধা*ক্কা লেগে যায়। রোজা পড়ে যায়, আর কোন কিছুর সাথে লেগে তার ড্রেস টা ছিঁ*ড়ে যায়। রোদ্দুর চোখ মুখ কুঁচকে বলে-

-” ম্যা*নারলেস! ছেলে দেখলেই কি গাঁয়ে পড়তে ইচ্ছে করে?
রোজার এত শখের দামি ড্রেস নষ্ট হওয়ায় সে ভীষণভাবে রেগে আছে। তার উপর রোদ্দুরের কথায় তা গা জ্বলে ওঠে। একে ড্রেস ছিঁ*ড়ল, ব্যাথা দিলো এখন সরি না বলে চেঁচাচ্ছে! রেগে রোদ্দুরের গালে চ*ড় বসিয়ে দিয়েছিলো রোজা। তারই ফলস্বরূপ রোদ্দুর এত অপমান করলো তাকে।‌

আর কাপটা সে লিপিকে দিয়েছে কারণ, লিপি একবার রোজার বাসায় গিয়েছিলো। তখন রোজার রুমে একটা কাপ দেখেছিলো। যেটাতে রোজার ছবি প্রিন্ট করা ছিল। লিপি কে যখন রোজা জিজ্ঞেস করলো, তার জন্মদিনে কি চাই? তখন লিপি নিজের ছবি প্রিন্ট করে একটা কাপ চায় রোজার কাছে। আসলে বাবা মায়ের থেকে রোজার সাথেই লিপির সখ্যতা বেশি। তার বাবা মা নিজেদের চাকরী জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

তারা এই চাকরির জন্য মেয়েটা কে টাইম দিতে পারেনা। তারা মেয়ের ভালো থাকার জন্য টাকা তো ইনকাম করছে। কিন্তু আসলেই কি লিপি বাবা মায়ের সঙ্গ ছাড়ার ভালো আছে? আজ জন্মদিনেও মেয়েটার পাশে নেই বাবা মা! লিপির যত আবদার সব রোজার কাছেই। রোজা তো অন্য গিফট ও এনেছিল। কিন্তু কাপটা ও লিপিই চেয়েছিল! আর কে এই ছেলে? আগে কখনো তো দেখেনি রোজা এই বাড়িতে।

-” রোদ্দুর তুই এসব কি শুরু করেছিস? আমি কিন্তু বাধ্য হবো তোকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
বাবার কথা শুনে অবাকের সপ্তাকাশে পৌঁছালো রোদ্দুর। কোথাকার কোন মেয়ের জন্য তাকে তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেবে? এত বছর দুরে রেখেছে। এখন এই কথা কি করে বলল। রোদ্দুর অবাক হয়ে বলল-

-” বাবা তুমি এসব কি বলছো? আমি যা করেছি ঠিক করেছি। ওই মেয়ে আমাকে চড় মেরেছে, তাই ওর এটুকু শাস্তিতে কিছুই হবেনা। ওকে আরো শাস্তি দিতে হবে।
আরমান রিসাদ রেগে গেলো ছেলের কথায়। সে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল-
-” তুমি জানো তুমি কাকে অপমান করেছো?
রোদ্দুর সোফায় আরাম করে বসল। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-

-” হ্যা জানি। লিপির সো কল্ড হোম টিউটরের গায়ে। আমি বুঝলাম না বাইরের একটা মেয়ের জন্য তোমাদের পুরছে কেন? বাই দা ওয়ে বাবা বুড়ো বয়সে তুমি আবার মেয়েটার উপর ক্রাশ টাস খেয়ে ফেলেছো নাকি?
আরমান হতভম্ব হয়ে গেলো ছেলের কথায়। এ কেমন ছেলে তার। সে ধমক দিয়ে রোদ্দুর কে বলে-
-“‌ দিন দিন বড্ড বেয়াদব হচ্ছো তুমি। বিদেশে গিয়ে এইসব শিখেছো। ফালতু ছেলে। স্টু*পিড। এখন এইসব বলছো। যখন ও কে জানতে পারবে না জানি তোমার কি হাল হবে‌।

রোদ্দুর তার বাবার দিকে সিরিয়াস ভাবে তাকিয়ে বলে-
-” ওহো ও কে বাবাই? প্রিন্সেস ডায়ানা? নাকি রানী ভিক্টোরিয়া? বাবা চিন্তা করো না মা কে আমি কালই পার্লারে নিয়ে যাবো। তারপর তাকে এমন সাজিয়ে আনবো না। তুমি দিনের আকাশেও চাঁদ দেখবে!
বলে হাসতে শুরু করে। আরমানের গা জ্ব*লে যাচ্ছে ছেলের হাসি দেখে। আসলেই এটা তার ছেলে নয়। নিশ্চয়ই এর সব মাথা কেউ ফ্রা*ইপ্যানে ফ্রাই করে ছেড়ে দিয়েছে। আরমান রেগে উঠে দাঁড়ায়। গমগমে গলায় বলে-

-” হাসো বাবা হাসো। যত পারো হাসো‌। আজ যাকে কাঁদালে, কাল তাকে হাসাতেই তুমি ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
আরমান গটগট করে ছেলের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আরমান কে দেখে তার স্ত্রী রুমানা রিসাদ ছুটে আসে। তিনি চিন্তিত গলায় বলে-
-” কি বললে রোদ্দুর কে?
আরমান প্রচন্ড রেগে বলে-

-” পা*গল হয়ে গেছে তোমার ছেলে। ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই। ওকে কেউ কিছু বলবেও না। মেয়েটা কাল থেকে আর আসবে না। লিপি কে কি করে সামলাবো? সময় হলে রোদ্দুর জানবে। তখন আমিও দেখবো কি করে বাছাধন! আর তোমার ছেলে তোমাকে নাকি কাল পার্লারে নিয়ে যাবে। সাজাতে।
রুমানা আলতো করে হাসে। রোদ্দুরের রুমের দিকে যেতে যেতে আরমান কে বলে-

-” তুমি তো আমাকে পার্লারে সাজাতে নিলে না‌। আমার রুপের কদর ও করলে না। ছেলে না হয় আমাকে সাজিয়ে এনে দেখাবে। তুমি তখন আমার আমার পিছে পিছে আগের মত ঘুরঘুর করিও‌।
আরমান মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে। যেমন বউ তার তেমন ছেলে‌। জীবনটা তেজপাতা করে দিলো রে। সে মৃদুস্বরে বলে-

-” আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার।
তখন কোথা থেকে লিপি এসে বলে-
-” দাদু তুমি কেন চিৎকার করবে?
আরমান ব্যথিত দৃষ্টিতে নাতনির দিকে তাকায়। না না তার কোন স্পেস নেই। একজন না একজন পিছনে লেগেই আছে। আহ জীবন!

রোজা তখন থেকে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে নিজের বিছানায়। ফোনের টুংটাং আওয়াজে সে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। বান্ধবীর মেসেজ দেখছি ফোনটা রেখে দেয়। এখন প্রিয়ার উপর সে ভীষণ রেগে আছে। প্রিয়া তখন ফোন না দিলে এতকিছু হতোই না। দরজায় নক করার শব্দ হয়। ওপাশ থেকে একটা মিহি কন্ঠস্বর বলে-

-” আপিয়া আসবো?
রোজার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফোটে। সে অনুমতি দিয়ে বলে-
-” এসে পড়।
রুহি ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রোজা আর রুহি জমজ দুই বোন। তাদের চেহারা পুরোই এক। তাদের দেখে নতুন কোন মানুষ বলতে পারে না, কোনটা রোজা কোনটা রুহি। রুহি বোনের পাশে বসে বলে-

-” কিরে পার্টি তে গেলি কেমন এঞ্জয় করলি? এসেই দরজা এঁটে আছিস কেন? কোন সমস্যা হয়েছে?
রোজার চোখজোড়া জ্বলে ওঠে ক্রোধে। সেই অপমান মনে পড়ে যায় আবারো। সে রুহির‌ থেকে কিছুই লুকোয় না। রুহি কে সব খুলে বলে রোজা। রুহি সব শুনে ফুঁসে উঠে বলে-

-” আরে এ কোন বা*টপার? একে তো ধা*ক্কা দিয়েছে। তার উপর সরি না বলেই উল্টাপাল্টা কথা শুনানো। তুই একটা চ”র মে”রেছিস। আমি হলে ঠাঁ*টিয়ে ওর গাল লা*ল করে দিতাম‌। শা*লা বেয়া*দব। আমি নেক্সট যাই খালি লিপিদের বাসায় ওর কা”চুম্বা*র বানিয়ে দিয়ে আসবো! বাই দা ওয়ে ছো”করাটার নাম কি রে?
রোজা অসহায় মুখ করে বললো-

-” জানিনা। লিপি ওকে কি জানি বলেছিল। দাঁড়া মনে করি। হ্যা চাচ্চু বলেছিস!
রুহি চোখ বড় বড় করে তাকায়। কথাটা রোজার খেয়াল হলে চমকে উঠে! দুই বোন একসাথে চিৎকার বলে-
-” রোদদদদদ?

More than love part 2