Naar e Ishq part 7
তুরঙ্গনা
ভার্সিটির মিড ব্রেকে বাকিদের মতো সুহিন আর নিমরা মিলে একত্রে নিচে নেমে ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। উদ্দেশ্য হলো দানিয়েলকে খুঁজে বের করা। বেটাকে সেই কখন থেকে ফোন করা হচ্ছে, অথচ তার খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।
আজ প্রফেসর কেকের কোনো ক্লাস না থাকায়, সুহিন সবগুলো ক্লাস করে বেশ স্বস্তি পেয়েছে। তবে জোয়া নামক মেয়েটা ও তার গ্রুপ সার্কেল মিলে তাকে বারংবার অদ্ভুত নজরে পুরোটা সময় ঘুরে-ফিরে তাকিয়ে দেখেছে। বিষয়টা সুহিনের নজরে এলেও,সে এড়িয়া যায়। এবং তাদের থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে।
দানিয়েলকে আবারও ফোন করে না পেয়ে, নিমরা প্রচন্ড বিরক্ত হলো। রিং হচ্ছে, অথচ বান্দা কল রিসিভ করছে না৷ এটা কেমন ফাজলামো? মিড ব্রেকের সময় তো সেই বলেছিল,সুহিনকে নিয়ে ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করতে। অথচ এখন সেই গায়েব?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরিমধ্যে হুট করে সুহিনের নজর পড়ল দূরের এক কোণে। দানিয়েলের ন্যায় বলিষ্ঠ গড়নের ব্যাক্তিটি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। পরনে অফ-হোয়াইট লেদার জ্যাকেট, কালো টিশার্ট-কালো প্যান্ট। ডানহাতে রূপালী-কালো হাতঘড়ি। সিল্কি চুলগুলো জেল দিয়ে গোছানো ও পরিপাটি। সবমিলিয়ে সুসজ্জিত এক জ্যান্টালম্যান। অথচ সে তাদের খানিকটা কাছে আসতেই, সুহিন টের পায়—দানিয়েলের চোখেমুখে সর্বদা ফুটে থাকা হাসিখুশি ব্যাপারটা যেন নেই। কিছু তো একটা হয়েছে। নয়তো তাকে কেন এমন দেখাচ্ছে?
এরিমধ্যে নিমরার নজর সেদিকে পড়তেই,সে বেশ ক্ষিপ্ত হলো। দানিয়েল কাছে আসতে না আসতেই,সে ক্ষুব্ধ স্বরে বলে উঠল,
“ঘটনা কি বড় ভাই? এইসব তোমার কাজকর্ম? আমাদের আসতে বলে,নিজেই গায়েব হয়ে গিয়েছো। ফোনটা অব্দি ধরছো না!”
দানিয়েল মলিন হেসে আওড়ায়,
“সরি রে,ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।”
—“মানেহ্? সারাদিন আমাদের জ্ঞান দাও। অথচ…”
—“আহ্ নিমরা, সরি বললাম তো বোন। আবার কেনো…”
নিমরা থামল না। সে আবারও কিছু বলতে নেবে,তৎক্ষনাৎ পাশ থেকে সুহিন বলল,
“নিমরা বাদ দে না। হয়তো কোনো সমস্যা…”
—“হু সেটাই। তোরা এখানে থাক। আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছি। একটু পর ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
এই বলেই সে আর কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করল না।বরং বড়বড় পা ফেলে,গমগমে গম্ভীর্যের সাথে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেল। তার এহেন কান্ডে দানিয়েল মলিনভাবে ফিঁচকে হাসে। এই মেয়েটা এতো পাগলাটে আর রগচটা!
সুহিনও বিষয়টায় হতাশ হয়ে ভারী শ্বাস ফেলল। এদিকে দানিয়েল সুহিনকে লক্ষ করে,তার উদ্দেশ্যে মৃদু হেসে বলে উঠল,
“কি বউপাখি! তুমি ভালো আছো তো?”
সুহিন তার কথার প্রত্যুত্তরে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে, উৎসুক কন্ঠে আওড়ায়,
“আরহাম ভাই,সত্যি করে বলুন তো আপনার কি হয়েছে? আপনাকে এমন কেনো দেখাচ্ছে?”
হঠাৎ তার এহেন অভিব্যক্তিতে দানিয়েল হকচকিয়ে গেল। মেয়েটা আবার কি বুঝে ফেলল? সে নিজেকে দ্রুত স্বাভাবিক করে, দৃঢ়কন্ঠে বলল,
“আমার? আমার আবার কি হবে? কিছুই হয়নি।”
—“মিথ্যে বলছেন আপনি। আপনাকে পুরোপুরি ঠিকঠাক লাগছে না আমার।”
দানিয়েল অনিমেষনেত্রে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা সুহিনকে দেখে। পরক্ষণেই নিস্পৃহে হেসে বলে,
“বউপাখি!তুমি কি মানুষের দেহপিঞ্জরের দ্বার খুলে, তার অন্তরাত্মার ভাষা পড়তে জানো?”
সুহিন তার এহেন কথায় অবাক হলো। সে কি জিজ্ঞেস করল,আর এটা দানিয়েল কি বলল?সুহিনের ভাবভঙ্গিতে, দানিয়েল আবারও মুচকি হাসে।
—“জানো না, তাই তো?তবে শোনো…যা জানে না তোমার চঞ্চল মন, তা কি ভোলে এই দেহপিঞ্জর? চোখ তোমার সরল, বউপাখি! আর সরলতা কখনো মিথ্যাকে আশ্রয় দিতে পারে না। তাই হয়তো আমার সবটুকু অসুখ তোমার নজরে এসে যায়। এখানে কোনো অলৌকিক মন্ত্র নেই। শুধু একটা অনাবৃত সত্য আছে—যা আমার এই খোলস লুকাতে পারল না।”
সহসাই সুহিনের কপাল কুঁচকে গেল। লোকটা সবসময়ই এমন! তার গুরুতর প্রশ্নের উত্তর এভাবে অদ্ভুত, দুর্বোধ্য কাব্যে ঢেকে দেয়। তার মনে হলো, তার আহরাম ভাই যেন ইচ্ছে করেই আসল বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইছে। তার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিচ্ছে। এসব দার্শনিক কথা দিয়ে যে মস্তিষ্কের ভেতরকার উৎসুক চিন্তাভাবনার পোকাগুলোকে যে দমানো যায় না—এই সাধারণ বিষয়টা লোকটা কেন বোঝে না? সবমিলিয়ে সুহিন বেশ হতাশ হয়ে,ভারী শ্বাস ফেলল।
—“আহরাম ভাই, আমি আপনাকে কবিতা আবৃত্তি করতে বলিনি। সত্যি করে বলুন তো, কী হয়েছে আপনার? আপনার হাসিও আজ কেমন যেন নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে।”
দানিয়েল সুহিনের বোঝার অক্ষমতায় এক লহমার জন্য ব্যথিত হলো।তার সমস্ত আবেগ সুহিনের কাছে কেবলই এক অকারণ কাব্য! কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল। এক মৃদু-মন্থর লুকানো হাসি ঠোঁটে এনে, শান্ত-দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“কিছু হয়নি আমার। আমি একদম ঠিক… ”
—“প্লিজ বলুন না!”
সুহিনের উৎসুক দৃষ্টিতে এখন অসহায়ত্বের ছাপ। দানিয়েল কি যেন বলতে চেয়েও,আর বলল না৷ বরং তার পরিবর্তে কথার সুর পাল্টে আওড়ায়,
“শোনো বউপাখি! আমার সব ব্যথা তোমার অজ্ঞতার আড়ালে থাকাই শ্রেয়। কারণ, যে ফুল শুধু আড়ালেই ফোটে,একবার তার সুবাস উন্মুক্ত হলে—অস্তিত্ব হারানোর ভয় থাকে।”
—“এই ফুল-পাতার উপমাগুলো রাখুন, আহরাম ভাই। আমি শুধু জানতে চাইছি, আপনি ঠিক আছেন কি না। এত প্যাঁচ কেন আপনার কথায়?”
দানিয়েল এক মুহূর্তের জন্য যেন তার ভেতরের সমস্ত দেয়াল ভেঙে সুহিনের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চাইল। কিন্তু পরক্ষণেই তার শক্তপোক্ত স্বভাব তাকে কঠিন প্রাচীর গড়তে বাধ্য করল। সে হাসল, তবে সেই হাসি সুহিনের চোখে ধরা পড়ল না—বরং মনে হলো যেন এক স্বেচ্ছানির্বাসিত সম্রাট কথা বলছে।
দানিয়েল ধীরে ধীরে তার বুক-সমান উচ্চতার সুহিনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে—শান্ত অথচ মর্মান্তিক কণ্ঠে বলল,
”বউপাখি, তোমার মতো সহজ জলের কাছে আমার এই আগুন-ভরা হৃদয় কি আর স্বস্তি পাবে? তুমি যা খুঁজছ, তা আমার খাঁচার ভেতরের এক বন্দি আকাশ। তাকে মুক্ত করলে, সে উড়তে গিয়ে শুধু তোমারই আলো নিভিয়ে দেবে।”
সুহিন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল। খাঁচার ভেতরের বন্দি আকাশ!—এসবের মানে কী? সুহিনের সরল মস্তিষ্কে এই গভীর উপমা কোনোভাবেই প্রবেশ করল না। সে দানিয়েলের এই অন্ধকারময় দর্শন নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইল না।
”আপনার সঙ্গে কথা বলা আমার ভুল হয়েছে। আপনি কিছু বলতে চাইছেন না, অথচ এতগুলো কঠিন কথা বলছেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়।”, সুহিন অভিযোগ করল।
সুহিনের এই অজ্ঞাত অভিযোগ দানিয়েলের বুকে যেন আরও একমুঠো কষ্ট ভরে দিল। সে জানে, সুহিনের কাছে সে চিরকালই এমন অদ্ভুত-এড়িয়ে চলা মানুষ হয়ে থাকবে। কিন্তু এই দূরত্বই তো সুহিনের জন্য তার একতরফা ভালোবাসা রক্ষার ঢাল।
দানিয়েল তার বোকা হরিণীর উৎসুক দৃষ্টিজোড়া হতে নজর সরিয়ে, তার কাঁধের ওপর দিয়ে দূরের কোনো এক অদৃশ্য বিন্দুতে দৃষ্টি রাখল—যেখানে তার স্বপ্নগুলো নির্বাসিত। অতঃপর আনমনা হয়ে,মনে মনেই বিষন্ন স্বরে আওড়াতে লাগল,
”তোমার হৃদয়ের দোরগোড়ায় আমার ভালোবাসার এই নদী এনে ফেলেছি, বউপাখি। কিন্তু আমি জানি, এই নদীতে কোনো সেতু তৈরি হওয়া বারণ। আমি শুধু চাই—তুমিও ভালো থাকো। আর আমার এই একতরফা পথচলাও গোপনে পূর্ণ হোক।”
দানিয়েল আনমনা হতেই, সুহিন পুনরায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে আওড়ায়,
“ও আরহাম ভাই। আবার কোথায় হারালেন? আপনারা দুই ভাই-বোনই এক রকম৷ নিমরাটাও কোথায় চলে গেল,কে জানে।”
দানিয়েল নিজের ভ্রম থেকে বেরিয়ে, সুহিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। সুহিন পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করল,
“কি হলো,সত্যিটা বলবেন না তাই তো?”
—“আহা রে আমার বোকা হরিণী! তুমি তো জানো না, এই শিকারীর হৃদয়ের সব সত্যের ভার নেবার ক্ষমতা তোমার নেই।”
সুহিন এবার রেগে গেল। সে বিরক্তির স্বরে আওড়ায়,
“যথেষ্ট হয়েছে। আগে বউপাখি সহ কিসব উল্টোপাল্টা নামে ডাকতেন।আর এখন এই বোকা হরিণী? আমি মোটেও ততটাও বোকা নই যতটা সবাই ভাবে। আমি আপনাকে ভালো ভেবেছিলাম,আরহাম ভাই। কিন্তু আপনিও…”
সুহিনের অযাচিত রাগে তার নাকের ডগায় লালচে আভা ফুটে ওঠে। সাদা গ্লাসের আড়ালে দৃশ্যমান, গভীর সমুদ্রের ন্যায় নীলচে চোখজোড়ায় সে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলল। অনিমেষেই তার ঠোঁটের কোণায় ফুটে ওঠে অদ্ভুত এক মনোমুগ্ধকর হাসি। সুহিন তা খেয়াল করতেই,বেশ ঘাবড়ে যায়। কিছু একটা ভেবে নিয়ে, ভীতু স্বরে আওড়ায়,
“আরহাম ভাই,আপনি কোথায় গিয়েছিলেন বলুন তো? এই দুপুর বেলায় আপনি আবার ক্যাম্পাসের পেছনের জঙ্গলের দিকে যাননি তো? শুনেছি,ওটা অনেক পুরোনো জঙ্গল। আপনাকে আবার কিছু…ঐসব ধরেনি তো?”
সুহিনের অভিব্যক্তিতে, দানিয়েল আর না হেসে পারে না। অভ্যাসগত কারণে, সুহিনের সরু নাকটা দু’আঙ্গুলে টেনে দিয়ে বলল,
“আরেহ পাগলি! কিসব বলছো তুমি। আমি ঠিকই আছি।”
—“তা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি গিয়েছিলেনটা কোথায়?”
—“প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছিল। সেখানেই…’
ভারী শ্বাস ফেলল দানিয়েল। সুহিন তার কথায় খানিক অবাক হয়ে বলল,
“প্রিন্সিপাল স্যার আপনাকে ডেকেছিল? কিন্তু কেনো?”
—“ঝাড়ি দিতে।”
—“মানে?”,বিস্ময়ের স্বরে সুহিন জিজ্ঞেস করল। দানিয়েল এবার বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলতে লাগল,
“জানি না, হুট করে কি হলো। কোনো কারণ ছাড়াই উনি হঠাৎ আমাকে ডাকলেন। এরপর বেশ অনেকক্ষণ ঝাড়াঝাড়ি করে বলল—এই ভার্সিটিতে থাকতে হলে,এখানকার রুলস্ ঠিকঠাক মতো মানতে। নয়তো… ”
—“সিরিয়াসলি? উনি আপনাকে এসব বলেছে? আপনাকে? আপনার মতো মানুষ, কবে কোন রুলস ব্রেক করতে পারে?”
দানিয়েল আনমনে শুষ্ক হেসে আওড়ায়,
“জানি না। বিশ্বাস করো বউ পাখি, আর মাত্র কয়েকটা মাস। এরপর মাস্টার্সটা শেষ হলেই আমি মুক্ত। অবশ্য পুরোপুরি মুক্ত বললেও ভুল হয়। তখন আবার শক্ত-পোক্তভাবে পরিবারের দায়িত্বটাও নিতে হবে। একটা টুকটুকে লাল-শাড়িতে মুড়িয়ে পিচ্চি বউ ঘরে তুলতে হবে। সংসার পাতাতে হবে। বছর বছর ছানাপানা আসবে।তখন আবার তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা। ইশ! আমার আবার মুক্তি হলোই বা কবে।”
তার এহেন সব কথাবার্তায়, সুহিন খিলখিল করে হেসে উঠল। তার হাসিতে দানিয়েল অপলক দৃষ্টিতে তাকে মুগ্ধ চাহুনিতে চেয়ে চেয়ে দেখতে রইল।
—“এখনই এতদূর চিন্তাভাবনা করে ফেলেছেন? আবার নিজে এতো দামড়া হয়ে,পিচ্চি বউ ঘরে তুলতে চাচ্ছেন?বছর বছর কিনা ছানাপোনাও…? ছিহ্ আরহাম ভাই ছিহ্,আপনাকে তো আমি ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি তো দেখছি শেয়ালের চেয়েও চালাক বের হলেন। আমি তো ভাবছি,আপনাকে বিয়ে করে আপনার পিচ্চি বউয়ের কি দশা হবে। বেচারী তো মরেই যাবে।”
হাসতে থাকা সুহিনকে, দানিয়েল ভ্রুকুটি করে সরু নজরে খানিকক্ষণ দেখল। পরক্ষণেই গলা খাকি দিয়ে বলল,
“উহুম,উহুম, আপনার হাসাহাসি একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না? আপনি দামড়া বলছেন কাকে?”
সুহিন নিজের হাসি থামিয়ে বলল,”কেনো আপনাকে!” এই বলেই সে পুনরায় খিলখিল করে হেসে ফেলল। দানিয়েল পুনরায় নিজেকে,তার হাসির মুগ্ধতায় হারিয়ে ফেলে। একইসাথে মনে মনে প্রশান্তির সহিত ভারী শ্বাস ফেলে আওড়ায়,
“উহু! আমি আমার পিচ্চিবউকে কখনোই কষ্ট দেব না। তাকে সবসময় আদরে আদরেই রাখব।”
দুজনের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটুকু, ভার্সিটি ভবনের তিনতলার বারান্দা হতে একজোড়া শান্ত-গম্ভীর চোখ—অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। বেশ অনেকক্ষণ হতেই তাদের দুজনকে ব্যক্তিটি লক্ষ করছে। পরনে কালো ওভার কোট, ভেতরে হাইনিক ব্ল্যাক সোয়েটার। গলার চেইনটায় ঝুলছে ‘KK’ অক্ষর বিশিষ্ট ব্ল্যাক ম্যাটালের দামি একটা লকেট। ব্যক্তিটি যে স্বয়ং কেকে, তা আর বুঝতে কারো বাকি নেই।
প্রায় বেশ খানিকক্ষণ সময় বাদে, কেকে ভারী শ্বাস ফেলে নিজের ফোনটা বের করল। যদিও তার নজর এখনো সুহিন আর দানিয়েলের দিকেই। তার ভাবগাম্ভীর্যতে এটাও স্পষ্ট নয় যে—দানিয়েলের মতো একজন স্টুডেন্টকে প্রিন্সিপালের অকারণে ডেকে ঝাড়ি দেওয়ার বিষয়টা আদৌও স্বাভাবিক কিনা। কেননা দানিয়েলের উপর নজর তো তার শুরুতেই পড়ে গিয়েছিল।
আজ অবশ্য সুহিনের ক্লাসে তার কোনো ক্লাস না থাকায়, সুহিন তাকে দেখেওনি। তবে চতুর শিকারি নেকড়ের ন্যায় কেকের তীক্ষ্ণ নজর, ঠিকই বারবার তাকে খুঁজে নিয়েছে।
কেকে ফোনটা বের করেই কাউকে কল দেয়। এখন তার মাথায় ভিন্ন কিছু চলছে। এইসব বিষয় নিয়ে পড়ে থাকার চেয়ে,তাকে এরচেয়ে বড়বড় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। হাতে সময় কম। এতোবছর পর দেশেও এসেছে অনির্দিষ্ট স্বল্প সময়ের জন্য। যা করার এর মাঝেই করতে হবে।
কলটা রিসিভ হতেই, কেকে সুহিনের দিক হতে নজর সরিয়ে নেয়। এবং বেশ মনযোগ দিয়ে ফোনের ওপর প্রান্তের ব্যক্তির কথাগুলো শুনতে থাকে। এবং মিনিট পাঁচেক পর কলটা কেটে দিয়ে,পুনরায় সুহিনের দিকে নজর ফিরিয়ে তাকায়।
Naar e Ishq part 6
এখনোও দানিয়েল আর সুহিন হেসেই চলেছে। নিজেদের মাঝে ওরা কি বলছে তা কেকে শুনতে না পেলেও, দুজনের এমন ভাবভঙ্গিতে ক্রমাগতই তার চোখ-মুখ শক্ত হয়ে আসে। একটা পর্যায়ে সে চোয়াল শক্ত করে, দাঁতে দাঁত চেপে তির্যক হেসে আওড়াতে লাগল,
“দ্য ডটার অফ রাফায় আমিন—উম্মে হানি সুহিন! হাহ্…হানি,হানি,হানি। হানি মিনস্ সুইট। বাট আই প্রেফার মাই সুগার ইন চেইন্স।”
