Tell me who I am last part
আয়সা ইসলাম মনি
কারান কালো জ্যাকেট, কালো রাবার গ্লাভস, কালো হেলমেট, গাঢ় শেডের সানগ্লাস এবং বাইক চালানোর জন্য উপযুক্ত কালো বুট পরে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর মিরাও কালো বোরকায় আবদ্ধ হয়ে নিচে গেটের সামনে চলে এলো।
মিরাকে দেখেই কারানের মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। কারান মিরার হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“সো, আপনি ড্রাইভ করতে প্রস্তুত?”
মিরা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। একটুপর মিরা চাবিটা নিয়ে গাড়িতে বসে স্টিয়ারিং ধরে অ্যাক্সিলেটরের ওপর পা রাখে। পাশে দাঁড়িয়ে কারান তার বাইক প্রস্তুত করে নেয়।
টেক্সাসের রাতের নীরবতায় মিরা গাড়ি চালাতে শুরু করেছে, আর কারান বাইক নিয়ে তার পাশে পাশে চলছে। রাস্তার দুপাশে গাছপালাও যেন জীবন্ত সঙ্গী হয়ে তাদের সঙ্গে চলেছে। রাতের অন্ধকারে তাদের মুখে তৃপ্তির গভীর হাসি ফুটে ওঠে। অর্থাৎ তারা একটানা একসাথে পথচলার মজা অনুভব করছে।
হেডলাইটের আলো আঁধারের মধ্যে উজ্জ্বল রেখা সৃষ্টি করছে। তারা একে অপরের সঙ্গে গতি বাড়িয়ে উন্মুক্ত পৃথিবীর বুকে ছুটে চলেছে।
এদিকে কারান মিরার ড্রাইভিং স্কিল দেখে অবাক হয়ে যায়। তার চোখে প্রশংসার ঝলক ফুটে ওঠে। কিঞ্চিৎ পরিমাণে হেসে কারান নিজের মনে বলে, “কারান চৌধুরীর পারফেক্ট ওয়াইফ। হোয়াট আ ট্যালেন্ট, বেইব! উফফ, আরেকবার আপনার নেশায় পড়ে গেলাম।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিরা আরো গতি বাড়িয়ে তার বাইকের পাশে চলতে থাকে।
অনেকক্ষণ পর কারান বাইক থামিয়ে, হেলমেট খুলে মিরাকে ফোন করে। পাশের সিটে রাখা ফোনের পর্দায় কারানের নাম ভেসে ওঠে। মিরা হেসে ফোন তুলে নেয়। তার গলায় মিষ্টি অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে, “উফফ! বেস্ট নাইট এভার, হানি।”
কারান হেসে শান্ত স্বরে বলে, “এবার ব্যাক করো, সুইটহার্ট। অনেক দূর চলে এসেছি।”
“ওকে ওকে, আসছি।”
তবে যখন মিরা গাড়ির ব্রেকে চাপ দেয়, অদ্ভুতভাবে ব্রেক কাজ করে না। এদিকে কারান দ্রুত জিজ্ঞেস করে, “কি হলো? থামাচ্ছ না কেন? তোমাকে তো দেখতেও পাচ্ছি না সোনা, অনেক দূর চলে গেছ।”
মিরা ভয় পেয়ে আতঙ্কিত গলায় বলে, “কারান, ব্রেক কাজ করছে না।”
তৎক্ষণাৎ সেই ভয়ের আবহ উভয়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কারান এক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যায়, তারপর দ্রুত কপাল কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “কি…কি বলছো? মজা করো না, মিরা।”
মিরা আতঙ্কিত হয়ে কাঁপানো গলায় বলে, “কারান, তোমার মনে হয় আমি মজা করছি? প্লিজ, কিছু করো।”
কারান হেলমেট পড়ে দ্রুত বাইকে উঠে, ব্লুটুথ ইয়ারপিসে গলা ভারী করে বলে, “বেইব, আমি আসছি। চিন্তা করো না, কিচ্ছু হবে না।”
“কারান, আমার এবার সত্যিই ভয় হচ্ছে। কোনোভাবেই গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।”
মিরা বার বার ব্রেক কষে, কিন্তু কোনো অশুভ শক্তি যেন ব্রেককে অকার্যকর করে দিয়েছে। তার হাত কাঁপছে, চোখে আতঙ্কের ছায়া। তাই সে দোয়া পড়তে শুরু করে। মিরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “হে আল্লাহ রক্ষা করো। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়া ইয়ামুতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির। আল্লাহ, তোমার বান্দাকে বাঁচিয়ে নাও। হে আল্লাহ!”
এদিকে কারান তার বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। সে মিরাকে আশ্বস্ত করে বলে, “এই সুইটহার্ট, কিচ্ছু হবে না। তুমি শুধু গাড়িগুলোকে পাশ কাটাও। কারান থাকতে মিরার কিছু হবে না। আমি আছি, সোনা।”
তবে তার নিজের ভিতরেই আতঙ্ক কাজ করে। কারান বাইকের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। মিরা তিক্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে কান্নার সুরে বলে, “কারান, তাড়াতাড়ি এসো। আমার ভয় তীব্র হয়ে উঠেছে।”
কারান মিরাকে বারবার শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। গলায় স্নেহ ও আশ্বাসের মিশ্রণ নিয়ে বলে, “মিরা, বেইব, চিন্তা করো না। আমি একটু পরেই পৌঁছে যাচ্ছি। আল্লাহ আছেন, সোনা।”
তবে তার মুখে অশান্তির সুর, ঢোক গিলতে গিলতে অন্তরে প্রশ্ন জাগে, কি হবে, যদি পৌঁছাতে না পারে!
“আর একটু, এই তো, প্রায় পৌঁছেই গেছি জান।”
একটু পর মিরার গাড়ি সামনে দেখে, উত্তেজনার সাথে স্নেহপূর্ণ কণ্ঠে কারান বলে, “সুইটহার্ট, আ’ম হিয়ার। জাস্ট ইউ’র বাহাইন্ড।”
কিন্তু মিরার কোনো শব্দ তার কানে আসে না। ইতোমধ্যে কারানের শরীর বেয়ে ঘাম পড়তে শুরু করেছে। তার সমস্ত রক্ত সঞ্চালন যেন থেমে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না, ঠিক কি করা উচিত কিংবা কীভাবে মিরাকে বাঁচানো যাবে? তার মধ্যে শুধু অস্বস্তি আর ভয় বিস্তার লাভ করছে।
“মিরা, জান! এই মিরা! কোথায়? কথা বলছো না কেন? বউ… মিরা!”
কিন্তু মিরার কোনো সাড়া মিলে না। ঠিক তখনই, তার সামনেই বিশাল একটা ট্রাক আছড়ে পড়ে মিরার গাড়িটিকে উড়িয়ে দেয়।
এ দৃশ্য দেখে কারানের নিশ্বাস একেবারে আটকে যায়। কারানের সমস্ত পৃথিবী এখানেই স্তব্ধ হয়ে যায়। আচমকা এমন দৃশ্য অবলোকন করে কারান নিজের বাইকের গতি সামলাতে না পেরে তীব্র গতিতে ছিটকে পড়ে। মাথায় হেলমেট থাকায় সরাসরি গুরুতর ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়, তবে তার হাত ও পায়ের মাংস ছিলে যায়।
কিন্তু সে সেসব ভুলে গিয়ে করুণ চিৎকারে বলে, “মিরাআআআআ!”
এই চিৎকারের গতি এমন ছিল যে মনে হচ্ছিল কারানের গলা ছিঁড়ে যাবে। কারানের সারা শরীর অসম্ভব আতঙ্কে কাঁপছে। কারান দ্রুত দৌড়ে গাড়ির দিকে ছুটে যায়, তার চোখে অন্ধকার শোকাবহ হাহাকার স্পষ্ট। চোখের কোণ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।
“মিরা… বউ, আমার বউ… বউ…” বলে হেলমেট সরিয়ে দিয়ে দৌড়াতে থাকে। গাড়ির কাছে পৌঁছে দেখে, গাড়িটি আগুনে জ্বলছে।
অথচ সে থেমে যায় না, একহাতে গাড়ির গ্লাসে বারবার আঘাত করতে করতে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “বউ… মিরা… আমার বউ…”
তার চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে, কিন্তু হাত দুটো বারবার কাচে আঘাত করে চলে। গাড়ির কাচও তার হাতের রক্তে ভিজে যাচ্ছে। আর গাড়ির কাচ ভেঙে তার হাতের মধ্যে কাচের টুকরো ঢুকে পড়েছে। আগুনের তাপে তার গায়ের জ্যাকেট পুড়ে যাচ্ছে। হাতেও পোড়া চিহ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এসবের দিকে একটুও নজর নেই কারানের। কারান তীব্র গলায় চিৎকার করে চলে, “বউ…আমার বউ…মিরাআআআ…”
চারপাশের লোকজন দ্রুত এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু সে তাদের কোনো কথাই শোনে না। সে আরও তীব্র কণ্ঠে বলতে থাকে, “My wife. My wife is inside the car. Let me go. I will die, I will die!”
তখনই একটানা হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করে। লোকটা গলায় কষ্টের গভীরতা নিয়ে বলে, “She may no longer be alive, sir. Please compose yourself.”
এই কথা শুনে কারান পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাথার চুল টানতে টানতে কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে বলে উঠে, “মিরা… নাআআআ… মিরা, আমি কিন্তু মরে যাব! সুইটহার্ট। মরে যাব আমি! বউউউ… ও বউ.. মিরা! আমি মরে যাব, মিরা।”
তার চিৎকারে চারপাশ গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কারান এক ঝটকায় সবার হাত সরিয়ে দিয়ে আবার আগুনের মধ্যে চলে যায়। সে পাগলের মতো মিরার মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে বেরিয়েছে। তার সমগ্র দেহ কাঁপছে। ঘাম ঝরতে ঝরতে পুরো শরীর ভিজে গেছে।
ক্ষণকাল পর চোখে তীব্র শোক নিয়ে স্তব্ধ হয়ে নিচে বসে পড়ে। ঢোক গিলে, চোখের কোণে অশ্রু নিয়ে, একটানা গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়িটির পুড়ে যাওয়া দৃশ্য দেখে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার অন্তরাল বেদনায় রূপান্তরিত হয়। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ এক দমে উঠে দাঁড়িয়ে, কনুই দিয়ে পুনরায় বারবার গাড়ির কাচে আঘাত করতে থাকে।
এরমধ্যেই হঠাৎ পিছন থেকে একটি কোমল গলার ডাক ভেসে আসে, “কারান।”
সেই শব্দে কারানের সারা দেহে বিদ্যুৎ খেলে যায়। সে তৎক্ষণাৎ পেছনে ফিরে তাকায়। মিরাকে দেখে তার চোখে আশার আলো জ্বলে ওঠে। মিরা ক্লান্ত আর অবসন্ন পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে আসছে। তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট, তবুও তার চোখে কারানের জন্য অফুরন্ত স্নেহের আভাস।
কারান আর দেরি করে না। দৌড়ে মিরার দিকে ছুটে যায়। তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এতটা শক্ত করে যেন আর কখনো আলাদা না হয়। তার চোখ থেকে ঝরতে থাকা অশ্রু মিরার নেকাবকে ভিজিয়ে দেয়।
কারান ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে, “বউ… আমার বউউ…”
মিরাও শক্ত করে কারানকে আঁকড়ে ধরে। কারান মিরার শরীরের প্রতিটি অংশে চোখ বোলাতে থাকে। পরে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে, “বউ, আমি মরে যেতাম। আরেকটু হলেই মরে যেতাম। বউ, তোমার কিছু হয়নি তো?”
এই বলে আবার মিরাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে। মিরাও কারানের আলিঙ্গনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দেয়। দুজনের চোখ থেকেই টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। ঘন ঘন নিশ্বাসের সঙ্গে তারা একে অপরের অনুভূতি আয়ত্ত করতে থাকে। মিরার বোরকার উপরেই মিরার মুখমণ্ডলে কারান একের পর এক চুমু খায়।
কিন্তু মিরা সহসা চারপাশের ভিড় দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তাই সে ফিসফিসিয়ে বলে, “সবাই দেখছে, কারান।”
এটা শুনে কারান তৎক্ষণাৎ নিজের হুঁশ ফিরে পায়। কারান জানে, মিরা বেশি মানুষের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব করে। তাই দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সে মিরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে, মিরাকে কোলে তুলে সামনে এগোতে থাকে। মিরা কারানের বুকের উষ্ণতায় মাথা গুঁজে শান্তির আশ্রয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
কারান ধীরে ধীরে বাইকের কাছে পৌঁছায়। এরপর বাইকের সামনে এসে থেমে যায়, কিন্তু তার চোখ মিরার মুখ থেকে সরছে না। কোনো প্রশ্ন করে না, কীভাবে বেঁচে ফিরলে বা কীভাবে এলে—শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মিরা কারানের বুকে মাথা রেখে তার দ্রুত হৃৎস্পন্দনের শব্দ শুনতে পায়। কারানের হৃদয়ের প্রতিটি ধাক্কা মিরার আতঙ্কিত হৃদয়কে শান্ত করে। অনেকক্ষণ পর কারান আস্তেধীরে মিরাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
তার দু’হাত দিয়ে মিরার মুখাবয়ব তুলে ধরে, গভীরভাবে চোখে চোখ রেখে বলে, “আমি মরে যেতাম, মিরা। আমি সত্যিই মরে যেতাম।”
কথা শেষ করার আগেই আবারও মিরাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয়। কারানের এই অশ্রুসিক্ত ভালোবাসার জবাবে, মিরার মুখ কান্না মিশ্রিত হাসিতে ভরে ওঠে। মিরা তার বুক থেকে মাথা তুলে, তার নরম হাত দিয়ে কারানের মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।
মিরার হাতের ছোঁয়ায় কারান কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিল। এরপর বাইকটি তুলে নেয়। মিরাকে সামনে বসিয়ে, হেলমেটটা পড়ে নিয়ে, একদম ধীরে ধীরে রাস্তা ধরে এগিয়ে চলে। চারপাশে ঝরে পড়া ম্যাপল পাতাগুলো পথকে আচ্ছাদিত করেছে। আর সেই ঝরে পড়া পাতার সৌন্দর্যে মিরা আর কারানের অনুভূতিগুলোও মিশে যায়।
কারানের মুখ সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেছে। কান্নার কারণে চোখের রং-ও রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। কারান নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে, “আমাকে শক্ত করে ধরো, মিরা। এতটা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরো, যেন তুমি আমার শরীরের অংশ হয়ে যাও।”
মিরা চুপচাপ আরো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কারান হাঁসফাঁস করতে করতে পুনরায় বলে, “আরো শক্ত করে, জান।”
এবার মিরা এতটা শক্ত করে তাকে আঁকড়ে ধরে যে, কারানের শরীরের কিছু অংশ কিঞ্চিৎ সংকুচিত হয়ে যায়। তবে এতে তার কোনো ব্যথা অনুভূতি হয় না। তার প্রতিটি রক্তবিন্দু, প্রতিটি শ্বাসে একমাত্র অনুভূতি– শান্তি, মিরাকে ফিরে পাওয়ার অমলিন শান্তি।
একটু পরে কারান যখন দেখে রাস্তায় বা তার আশেপাশে কোনো জনমানব নেই, তখন বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে ফেলে। তারপর মিরার নেকাব তুলে, দ্রুত ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। চুম্বনের আবেশে দুজনই বিভোর হয়ে যায়। ক্ষণকাল পর কারান মিরাকে ফুয়েল ট্যাংকের উপর শুইয়ে দিয়ে, তার গলায় চুম্বনের রেশ ছড়িয়ে দিতে থাকে।
মিরা তার গলা শক্ত করে ধরে হাসতে হাসতে কাঁপা কাঁপা শ্বাসে বলে, “আমরা রাস্তায়, হানি!”
কারান কাঁদো কাঁদো মুখে মাথা তুলে, মিরার মুখশ্রী দেখে ঢোক গিলে বলে, “আমি এখনো শান্ত হতে পারছি না, বউ।”
তার কথার মধ্যে তাদের নিশ্বাস একে অপরের গা ছুঁয়ে যায়। কারান মিরার মুখমণ্ডল দুই হাতে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ করে চোখে অশ্রু নিয়ে অশান্ত কণ্ঠে বলে, “আমার জান। আমার বউ। লাভ ইউ, বউ। অনেক বেশি ভালোবাসি, কলিজা।”
কারানের হাতের রক্ত মিরার মুখ বেয়ে টপটপ করে পড়তে থাকে। মিরা কারানের কান্নার শব্দে উঠে দাঁড়ায়। কারানকে শক্ত করে জাপটে ধরে।
এরপর কারানের চোখে, ঠোঁটে, গলায় ও সমস্ত মুখমণ্ডলে চুম্বন ছড়িয়ে দিয়ে, শান্ত গলায় বলে, “আমি সারাজীবন এভাবেই তোমাকে ভালোবাসবো, জান। কিচ্ছু হয়নি, কিছুই হয়নি আমার।”
কারান উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাসা করে, “তোমার কোথাও লাগেনি তো?”
“ট্রাকটা যখন সামনে আসছিল, তখনই আমি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু পায়ে সামান্য ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু তোমার অবস্থা তো বেশ খারাপ, কারান।”
পরে মিরা তার বাহু ধরে দেখে, জ্যাকেট ছিড়ে চামড়া খসে গেছে। এই দৃশ্য দেখে তার চোখে জল চলে আসে।
“দেখছো কি করেছ নিজের,” বলে কান্নাভেজা চোখে আবার কারানকে জড়িয়ে ধরে।
কারান মিরার মুখশ্রী বুক থেকে তুলে তার থুতনি ধরে বলে, “তোমার পায়ে ব্যথা পেয়েছ, চলো হসপিটালে যাই।”
“আমার তো সামান্য ব্যথা। কিন্তু তুমি আগে নিজের দিকে তাকাও।”
কারান নিজের দিকে এক নজর দেখে কিঞ্চিৎ পরিমাণে হেসে বলে, “আমার প্রাণ তোমার মধ্যে, মিরা।”
এই কথায় মিরা আর কোনো শব্দের প্রয়োজন অনুভব করে না। কারানের ঠোঁটে গভীর চুম্বন দিতে শুরু করলো। কিয়ৎক্ষণ পর কারান তার ওষ্ঠ যুগল আলাদা করে বলল, “চলো, হসপিটালে যাই।”
মিরা তার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমার স্বামীর চিকিৎসার দরকার।”
কারান গভীর শ্বাস ফেলে বলল, “আমার না, তোমার মিরা। তোমাকে বোঝাতে পারবো না, আমার ভিতরে ভিতরে কি চলছে। এখনো আতঙ্ক কাজ করছে। (থেমে) তোমার পা দেখি।”
সে মিরার পা থেকে বোরকা তুলতে উদ্যত হয়, কিন্তু মিরা তার হাত ধরে বলে, “আমরা রাস্তায়, কারান।”
কারান দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থেকে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, দেখলাম না। আগে বলো, খুব বেশি লাগেনি তো?”
আচমকা গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ায় মিরার পা অনেকটা মচকে গেছে। কিন্তু সে জানে, যদি কারানকে সত্যি বলে, সে পাগলের মতো অস্থির হয়ে উঠবে। এতক্ষণে বিপদের মধ্যে কারানের যে অবস্থা হয়েছে, তাতে মিরা তার চিন্তা আর বাড়াতে চায়না।
তাই মিরা কিঞ্চিৎ হেসে বলল, “একদমই সামান্য ব্যথা পেয়েছি, কারান। কিচ্ছু হয়নি আমার।”
কিন্তু কারান মিরার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “চলন্ত গাড়ি থেকে নেমেছ, আর বলছো কিচ্ছু হয়নি। তোমার কি আমাকে বোকা মনে হয়, মিরা?”
মিরা হেসে বলে, “আমার কাছে তো মনে হয়, পৃথিবীর দশটা বুদ্ধিমান পুরুষ থাকলে, তাদের মধ্যে একজন হবে কারান চৌধুরি। কিন্তু সত্যিই আমি তেমন বেশি ব্যথা পাইনি।”
কারান ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হেসে বলে, “ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম না। চলো, আগে হসপিটালে যাই।”
মিরা তার হাত ধরে, হাতের রক্তাক্ত জায়গায় একটা চুম্বন রেখে বলল, “এত চিন্তা করো না, কারান।”
কারান তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল, “করতে কোথায় দিচ্ছ? পায়ের ব্যথাও দেখতে দিলে না। তবে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে, তোমার ব্যথা দেখলে আবার তোমার আগে আমাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হতো।”
এ কথা শুনে এবার সত্যিই মিরা তৃপ্তি নিয়ে হাসে। তার হাসিতেই কারানের সমস্ত ব্যথা মুছে যায়। কারান তার বুকের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করে। এরপর মিরার মাথার পিছন অংশ ধরে মিরাকে নিকটে টেনে দীর্ঘক্ষণ তার ঠোঁটে চুম্বন দিতে শুরু করে। মিরাও কারানের চুম্বনে একইভাবে সায় দিতে থাকে।
বেশ অনেকটা সময় পর, কারান মিরার ঠোঁট ছেড়ে মিরার কপালে আলতোভাবে চুমু খেয়ে বলল, “এবার যাওয়া যাক।”
মিরা হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। তবে একদৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে অনুভব করল, তার সমস্ত অনুভূতি এখন কারানের দেহে মিশে গেছে। কিছুটা সময় পর, কারান বাইকের হ্যান্ডেল ধরল আর মিরা সামনে বসে তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে, কারানের বুকের মধ্যে মাথা চেপে রাখে।
বাইক চালাতে চালাতে কারান বলল, “অনেক ভালোবাসি তোমাকে, বউ।”
মিরা হেসে তার জ্যাকেট সরিয়ে, কারানের বুকের উপর আলতো একটা চুমু খেল।
প্রায় অনেকটা সময় পর তারা হাসপাতালে পৌঁছাল। কারান বাইক থামাতেই মিরা নামতে যায়, কিন্তু তার আগেই কারান তাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা এক হাতে কারানের কাঁধ আঁকড়ে ধরে।
পরে কারানের পায়ের ব্যথার দিকে তাকিয়ে বলে, “কারান, তোমার তো নিজেরই হাত পায়ে ব্যথা। আমাকে নামাও, আমি চলতে পারবো।”
“আমি চাই না আমার বউ আর এক পা হেঁটে তার পায়ের ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিক।”
সে কথা শেষ করেই দ্রুত এগিয়ে চলে। আর মিরা হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার পানে তাকিয়ে থাকে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাঁচের দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ঢুকল কারান। ভেতরের সাদা আলোয় তার মুখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠল। তার চোখজোড়া উদ্বিগ্ন, বুকের ভেতর থরথর কাঁপুনি চলছে। মিরাকে কোল থেকে নামিয়ে সোজা এক চেকআপ বেডে বসিয়ে দিল সে। সাদা চাদরে ঢাকা বেডটির পাশে সাজানো ছিল ইমারজেন্সি ট্রলিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম—গ্লাভস, ব্যান্ডেজ, ডিসইনফেকট্যান্ট, হেমোস্ট্যাট, আর অক্সিজেন মাস্ক।
তারপর ছুটে গিয়ে কাউন্টারের পাশে দাঁড়ানো এক নার্সের দিকে তাকিয়ে হড়বড় করে বলে উঠল, “প্লিজ, উই নিড এন অরথোপেডিক ডাক্টর; ফুট ইনজুরি।”
নার্স মাথা নাড়লেন। এরপর দ্রুত ইন্টারকমে কী যেন বললেন। মিনিটখানেকের মধ্যেই এক মাঝবয়সী নারী চিকিৎসক ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন। তার গায়ে হালকা ধূসর ওভারকোট, গলায় ঝুলছে স্টেথোস্কোপ, হাতে ধরা ক্লিপবোর্ড। চোখেমুখে প্রশান্ত দৃঢ়তা স্পষ্ট ফুটে আছে।
ডাক্তারকে দেখে কারান একপাশে সরে গেল। তিনি মিরার কাছে গিয়ে নরম কণ্ঠে বললেন, “ইয়োর নেইম?”
মিরা ব্যথার মাঝেও অসহায় হাসি হেসে বলল, “মিরা…মিরা চৌধুরী।”
ডাক্তার হালকা হেসে, চোখ টিপে কারানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওহ! ওখেই। মিসেস কারান চৌধুরী।”
কারান নামটা শুনে মুচকি হাসল। অর্থাৎ ডাক্তার তাকে চিনে ফেলেছেন। ডাক্তার মাটিতে বসে মিরার পায়ের ওপর থেকে ধীরে ধীরে চাদর সরালেন। গোড়ালির দিকটায় চোখ বুলিয়ে নিলেন। জায়গাটা ফুলে উঠেছে, নীচে একটা হালকা বেগুনি-নীলচে দাগ স্পষ্ট। তিনি শান্ত গলায় বলল, “ইট’স লাইকলি এ গ্রেড ওয়ান অর টু অ্যাংকল স্প্রেইন। মেবি ল্যাটারাল লিগামেন্ট স্ট্রেইন। উই নিড এন এক্স-রে টু বি শিওর।”
কারান তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করল, “ইট’স নট ব্রোকেন, রাইট?”
ডাক্তার মাথা নাড়লেন, “Doesn’t seem so at the moment. But we must rule out a fracture. Don’t worry, we’re taking good care of her.”
(বাংলা: “এই মুহূর্তে সেটা মনে হচ্ছে না। তবে আমাদের অবশ্যই ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করতে হবে না। চিন্তা করবেন না, আমরা ওর ভালো যত্ন নিচ্ছি।”
তারপর নার্সকে একবার চোখে ইশারা করে বললেন,
“Get the portable X-ray unit ready. We’ll need an AP and lateral view of the ankle.”
(বাংলা: “পোর্টেবল এক্স-রে মেশিনটা রেডি করো। আমাদের টাখনুর AP (অ্যান্টেরো-পোস্টেরিয়র) এবং ল্যাটারাল ভিউ দরকার হবে।”)
ডাক্তারের নির্দেশে এক নার্স পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন আনতে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেল। আরেক নার্স এগিয়ে এসে মিরার পায়ের নিচে হালকা কুশন দিয়ে সেট করল, যেন এক্স-রে নেওয়ার সময় পা না নড়ে। কারান চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি মিরার মুখে স্থির।
এদিকে এক্স-রে টেকনিশিয়ান এসে প্রস্তুতি শুরু করে দিল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ধাতব মেশিনের শব্দ ভেসে উঠল ঘরে। মিরার পা নিঃস্পন্দভাবে ধরে রাখা হলো। প্রথমে AP, তারপর ল্যাটারাল ভিউ করা হলো। তারপরই নার্স এসে দ্রুত রিপোর্ট আসবে বলে আশ্বাস দিয়ে রিপোর্ট নিয়ে রেডিওলজি রুমে চলে গেল।
রিপোর্ট আসতে কিছু সময় লাগবে। এই ফাঁকে ডাক্তার মৃদু কণ্ঠে বললেন, “We’re assuming it’s a Grade 2 sprain. You’ll need to apply a bandage, and initially, ice compression and rest are necessary. However, nothing can be confirmed without seeing the report.”
(অর্থ- “আমরা ধরে নিচ্ছি এটা একটা গ্রেড টু স্প্রেইন। আপনার একটা ব্যান্ডেজ করতে হবে, আর প্রাথমিকভাবে আইস কম্প্রেশন ও বিশ্রাম প্রয়োজন। তবে রিপোর্ট না দেখে নিশ্চিত বলা যাবে না।)
কারান জিজ্ঞেস করল, “শি ওন’ট নিড সার্জারি, রাইট?”
ডাক্তার হেসে বললেন, “It hasn’t reached that stage yet. In shaa Allah, it will heal. Just make sure not to put any pressure on the foot for a few days.”
(অর্থ- “ওই পর্যায়ে এখনও যায়নি। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে। শুধু পায়ের ওপর চাপ দেওয়া চলবে না কদিন।”)
এদিকে কারানের অবস্থা আরো বেশি খারাপ দেখে, ডাক্তার দ্রুত বলে ওঠেন, “রন্ডি!”
একটি লোক সামনে আসলে, ডাক্তার তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কাইন্ডলি এস্কর্ট মি. কারান টু ডক্টর ডেভিড ব্রাউন। হি রিকোয়ারস মেডিক্যাল কেয়ার।”
এ কথা শুনে কারান তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, “নো, আই’ম ওকে। লেট মিরা ফিনিশ হার ট্রিটমেন্ট ফার্স্ট।”
“বাট…”
“প্লিজ, ডক্টর,” কারান তার কণ্ঠে আকুলতা যোগ করে অনুরোধ করে।
এবার ডাক্তার মিরার পা পরীক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মিরা ব্যথায় আকুতি করে ওঠে, “আহ!”
মিরার আর্তনাদে কারানের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে উঠল। কারান নিজের জায়গায় স্থির থাকতে পারল না। এক লাফে মিরার পাশে ছুটে আসে সে। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ, চোখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
মিরার কাঁধে হাত রেখে গলা কাঁপানো উদ্বিগ্নতা নিয়ে সে বলে ওঠে, “কি হয়েছে, জান? খুব ব্যথা লাগছে? বলো না, কোথায় লাগছে?”
মিরা জিভ কামড়ে নিজের মধ্যে বলল, “ইশ! কেন যে শব্দটা করতে গেলাম।”
তারপর হেসে বলল, “কিচ্ছু হয়নি, তুমি যাও বসো।”
এদিকে ডাক্তার অদ্ভুত দৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই কারান আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসে।
এরমধ্যেই একজন নার্স এসে মিরার পায়ে আইস প্যাক বেঁধে দিলেন। ডাক্তার মিরার পায়ে কমপ্রেশন ব্যান্ডেজ লাগানোর কাজ শুরু করেন। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠা মিরার চোখ-মুখ দেখেই কারান টের পায়, তার প্রিয়তমা কষ্ট পাচ্ছে।
তাই কারান দ্রুত উঠে গিয়ে মিরাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, “অনেক হয়েছে। বাসায় চলো।”
মিরা চোয়াল শক্ত করে বলে, “কারান, নামাও। এমন করো কিছু না। শেষে তো তোমাকে পাগল ভেবে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো শুরু করবে।”
এ কথায় কারান কটমট করে অদৃষ্ট মিরাকে দেখতে থাকে। মিরা কারানের রাগ দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
এদিকে ডাক্তার কারানের দৃষ্টি আর মিরার হাসি দেখে, তার কণ্ঠে একটু তীব্রতা নিয়ে বলে, “মিস্টার কারান…”
এবার কারান বাধ্য হয়ে মিরাকে নামিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর মিরার পায়ে ব্যান্ডেজ সম্পন্ন হলে, শুশ্রূষায় নিযুক্ত ওয়ার্ডবয়েরা কারানকে অন্য শয্যায় স্থানান্তর করে। একে একে তার ছিন্নভিন্ন জ্যাকেটের অবশেষ টুকরো টুকরো করে কর্তিত হলে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে তার রক্তাক্ত কায়ার যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। বাম বাহুর উপরের অংশটি আগুনের তাপে দগ্ধ হয়ে রক্তিম-নীলাভ বর্ণ ধারণ করেছে; কোথাও কোথাও চর্মের আস্তরণ উঠে গিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কাঁচা মাংসের ক্ষতচিহ্ন। সেই পোড়া চিহ্নাবলী অবলোকন করে মিরার মুখাবয়ব পাথরের মতো কঠিন হয়ে ওঠে। শোক-শিলায় পরিণত হয় তার প্রতিটি রন্ধ্র। চোখের কোণে জলবিন্দুর চিকচিকে কণিকা জমে ওঠে, তবে সেই নীরব অশ্রু সে অন্যের দৃষ্টিপাতে প্রবাহিত হতে দেয় না।
একজন নার্স কারানের দগ্ধ অঙ্গগুলোর উপর আলতো হাতে ঔষধসঞ্জাত ক্রিম মেখে সাদা গজে আচ্ছাদিত করল। অন্য নার্সটি ব্যথা প্রশমনের জন্য নির্ধারিত ইনজেকশন প্রস্তুত করছিলেন। যখন ঔষধপুষ্ট কাপড়খণ্ড পোড়া চর্মে চেপে বাঁধা হচ্ছিল, তখনও কারানের মুখাবয়বে বিন্দুমাত্র বেদনার প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়নি। কীভাবে প্রকাশ পাবে? তার দৃষ্টি তো সীমাহীন একাগ্রতায় কেবল মিরার প্রতিচ্ছবির প্রতি নিবদ্ধ। মিরার উপস্থিতি যেন সমস্ত শারীরিক ক্লেশকে লুপ্ত করে অপার্থিব প্রশান্তিতে পরিণত করেছে।
মিরা সেই গভীর, অবিচল দৃষ্টি অন্তর দিয়ে অনুভব করে আপনমনে উচ্চারণ করে ওঠে, “পৃথিবীর একমাত্র ভাগ্যবতী নারীর নাম, আইদাহ আহসান মিরা।”
অল্প কিছু সময়ের নীরবতা ভেঙে, এক নার্স ধীর পদক্ষেপে ঘরে প্রবেশ করল। তার হাতে মিরার এক্স-রে রিপোর্ট। কারান মিরার পাশে দাঁড়িয়ে তার হাতটি ধরে রেখেছে। তার দৃষ্টি মিরার মুখে নিবদ্ধ, অথচ তার মন আশঙ্কায় পরিপূর্ণ। মনে মনে নিশ্চয়ই প্রার্থনা করছে, রিপোর্ট যেন আশাব্যঞ্জক হয়।
পরক্ষণেই কারানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, চোখে স্থিরতা ভর করল। সে নীরবে ডাক্তারের দিকে চেয়ে রইল। কারণ তার হাতে ভবিষ্যতের এক মুহূর্ত লুকানো আছে। কি জানি, কি বলে বসে চিকিৎসক?
অন্যদিকে বসে থাকা মিরা কারানের চেহারা থেকে চোখ সরাল না। তার উদ্বিগ্ন মুখের রেখা দেখে, মিরার ঠোঁটে নিজের অজান্তেই মৃদু হাসি খেলে গেল। এত উদ্বিগ্ন কেন কারান? তেমন কিছুই তো হয়নি! অথচ কি অদ্ভুত ভালোবাসার গভীরতায় ডুবে আছে এই মানুষটি! কেউ কি সত্যিই এতটা গভীরভাবে ভালোবাসতে পারে কাউকে? এমন প্রশ্ন মিরার মনজুড়ে ঘুরপাক খায়।
ডাক্তার ধীরে ধীরে রিপোর্টের পাতা খুললেন, আলোর নিচে তা তুলে ধরলেন। চোখে পরা ভারী ফ্রেমের চশমাটি কপালের দিকে ঠেলে দিলেন। তারপর গভীর মনোযোগে একের পর এক পৃষ্ঠা পর্যবেক্ষণ করলেন। কিছুক্ষণ পর তার ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল।
“The test results are reassuring. If things continue this way, she should make a full recovery in a few days. You may go home now.”
(বাংলা: “পরীক্ষার ফলাফল আশাজনক। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। এখন আপনারা বাড়ি যেতে পারেন।”)
এই কয়েকটি বাক্য যেন কারানের ওপর থেকে অদৃশ্য ভার খুলে নিল। তার দৃষ্টিতে স্বস্তির রেখা ফুটে উঠল। ঠোঁটের কোণে গোপন হাসি খেলা করলো। ডাক্তার রিপোর্টটি তার হাতে তুলে দিলেন।
এরপর টেবিল থেকে প্রিসক্রিপশনের ছোট প্যাডটি তুলে নিয়ে নিখুঁত হস্তাক্ষরে ওষুধ লিখে কারানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “These are the medicines both of you will need. Follow the dosage carefully. And make sure she gets proper rest.”
কারান মাথা ঝুঁকিয়ে কৃতজ্ঞতা সহকারে তা গ্রহণ করল। তার চোখে তখনো ক্লান্তি, কিন্তু সেই ক্লান্তির নিচে চাপা পড়ে থাকা গভীর ভালোবাসা ও স্বস্তির জ্যোতি স্পষ্ট।
গলায় গাম্ভীর্য মেশানো কোমল কণ্ঠে বলল, “Okay, doctor. Thank you so much. We’ll take our leave now.”
ডাক্তার ঈষৎ হাসি ও মাথা নাড়ার মাধ্যমে বিদায় জানালেন। কারান রিপোর্টটি মিরার হাতে তুলে দিল। তারপর পরম যত্নে মিরাকে কোলে তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে হাসপাতালের কোলাহল ছেড়ে শান্ত আকাশের নিচে পা রাখল।
ঘণ্টাখানেক পর বাসায় ফিরে, কক্ষে ঢুকতেই মিরা কারানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কারানও মিরাকে একইভাবে আঁকড়ে ধরে।
কিছুক্ষণ পর কারান নিজেকে তার থেকে আলাদা করে মিরার বোরকা খুলে মিরার চুলগুলো কানের পাশে গুঁছিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার ঘুমের দরকার, মিরা।”
মিরা কারানের উর্ধ্বাংশের পোশাক খুলে, কারানের শরীরের সামনের এবং পিছনের অংশ ভালোভাবে দেখতে থাকে। কারান অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি দেখছ, সুইটহার্ট?”
“চুপ করো, দেখতে দাও।”
সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে মিরা শান্তি অনুভব করে। কারণ কারানের গায়ে কোথাও কোনো ক্ষত নেই, শুধু হাতের কিছু অংশ পুড়ে গেছে, যেখানে ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেছে।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে মিরা কারানের দিকে তাকিয়ে বলে, “কারান…”
“ইয়েস, বেবি।”
মিরা মুচকি হেসে রোমান্টিক আবেদনে জানায়, “চুমু দেই?”
কারান মিরার কথায় হালকা হেসে, দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বলে, “পুরো শরীরে দাও। একটা জায়গাও যেন তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া থেকে বাদ না পড়ে।”
মিরা তখনই কারানের চোখে, ঠোঁটে, পিঠে, গলায়, বুকে—সব জায়গায় চুমু ছড়িয়ে দেয়। এক একটি চুম্বনে কারান গভীর মধুরতা অনুভব করে। আর স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তার প্রেয়সীকে দেখতে থাকে।
একটু পর কারান মিরাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে, “আমি চাইনি আজকের রাত তুমি তন্দ্রাহীন থাকো। কিন্তু আর নিজেকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।”
মিরা অবাক হয়ে তার গলা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে, “কারান, তোমার হাত পায়ে ব্যথা। আগে সুস্থ হয়ে যাও।”
কারান চোখে গভীর প্রেমের ঝিলিক নিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার স্পর্শ ছাড়া আমি সুস্থ হবো না, সুইটহার্ট।”
তার কথা শেষ না হতেই সে মিরার ঠোঁটে তীব্র চুম্বন ছড়িয়ে দেয়। মিরার ঠোঁটের কোনে ক্ষীণ হাসির রেখা খেলে যায়। মিরার চোখ বুজে আসে, তার বুকের ধ্বনি ছন্দহীন হয়ে ওঠে। কারানের হাত মিরার গাল ছুঁয়ে ঘাড় বরাবর নেমে আসে। কারানের ঠোঁট এবার তার কপাল স্পর্শ করে। এরপর ধীরে ধীরে মিরার চোখের কোণে ঠোঁট ছুঁয়ে গলার কাছে নেমে আসে।
মিরাও থেমে ছিল না। সে কারানের চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে দিয়েছিল। চুম্বনের মাঝেই মিরার নিঃশ্বাস গাঢ় হয়ে আসে। তার শরীর শিহরণে কেঁপে উঠে। ভেতর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে শিরায় শিরায়। কারান মিরার ঘাড়ে, কানের পেছনে, কাঁধে একের পর এক চুম্বন এঁকে দেয়। তাদের নিঃশ্বাস একে অন্যের শরীর ছুঁয়ে মিলিয়ে যায়। মিরা হালকা হেসে ফেলে। তার আঙুল কারানের গলা ছুঁয়ে যায়। সেই রাতে, কুয়াশা ঢাকা জানালার পাশে, তারা দুজন ভালোবাসার আগুনে ছন্দে গাঁথা হয়ে যায়। প্রতিটি স্পর্শে যেন সমস্ত ক্লান্তি, যন্ত্রণার ভার মিলিয়ে যায়। আগুনের মতো উষ্ণতায় একে অপরের অস্তিত্বে তারা আশ্রয় খুঁজে পায়।
রাস্তার নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে টেক্সাসের দাবদাহময় বাতাসে এক উদ্দাম দৃশ্য ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হয়। দুই তরুণ প্রেমিক মোহাচ্ছন্ন আবেশে একে অপরকে আলিঙ্গন করে, ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে চুম্বনের অতল সুখে হারিয়ে যায়। ধুলিময় দমকা হাওয়ায় তাদের উষ্ণ নিঃশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
হঠাৎই ভয়াল চেইন শোর কর্কশ ধাতব ‘ক্রাং ক্রাং’ গর্জন বিদ্যুৎবেগে ছিন্নভিন্ন করে দেয় সেই মোহময় আবরণ।
মেয়েটি আঁতকে উঠে ভ্রূ কুঁচকে ঠোঁট সরিয়ে দ্রুত সোজা হয়ে পিছনে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে একটা রহস্যময়, অচেনা পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে।
মাস্কে ঢাকা নিষ্প্রাণ মুখ, গায়ে কালো ট্যাঞ্জ কোটের কঠিন আচ্ছাদন, এক হাতে ধরা টুলবক্স, অন্য হাতে চেইন শো। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গভীরভাবে তাদের দিকে নিবদ্ধ। চোখের ভাষায় স্পষ্ট হুমকির ছায়া। বাতাসও হঠাৎ আরও স্তব্ধ আর গুমোট হয়ে আসে।
ছেলেটি শঙ্কিত হয়ে মেয়েটির হাত আঁকড়ে ধরে।
মেয়েটি কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “হু আর ইউ?”
লোকটি নির্বাক। তার তীক্ষ্ণ, মগ্ন দৃষ্টি তাদের বুকে বিষাক্ত ছু*রি চালিয়ে দেয়। তার হাতে চেইন শোয়ের ব্লে*ড ধীরে ধীরে ঘোরে, সেই কর্কশ শব্দ তাদের হৃদকম্পন বাড়িয়ে তোলে। এসব দেখে ছেলেটি অশরীরী ঠান্ডা অনুভব করে চিৎকার করে বলে, “রান, বেবি!”
এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে মেয়েটির হাত শক্ত করে চেপে ধরে সে। দুজন মরিয়া হয়ে উন্মুক্ত রাস্তায় ছুটে যায়। হৃদয়ের স্পন্দন এত দ্রুত হয়ে ওঠে যেন শরীরের শিরাগুলো ছিঁড়ে যাবে।
তবে দৌড়াতে দৌড়াতে তারা পেছন ফিরে দেখে লোকটি এক পা-ও এগোয়নি। সে ঠিক আগের মতো অনড় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। শুধু তার চোখদুটি আরও নিষ্ঠুর, আরও পাষাণ হয়ে উঠেছে। এ দৃশ্য তাদের নিঃশ্বাস আরও দ্রুত, আরও অস্থির করে তোলে। এবার আর পেছন ফিরে তাকানো চলবে না। সামনে শুধু দৌড়াতে হবে।
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাতিগুলো মিটিমিটি করে জ্বলছে। দূরে অনিশ্চিত রাতের অন্ধকার থেকে ভেসে আসে কুকুরের কর্কশ আর্তনাদ। গরম বাতাসে ধুলোর ঝাপটা উঠছে।
তারা পালায়, কিন্তু মনে হয় অদৃশ্য এক ছায়া তাদের পেছন পেছন তাড়া করে আসছে। ঐ ছায়ার দৃষ্টির অদৃশ্য ভার যেন ঘাড়ের উপর পাথরের মত চেপে বসে আছে। ভয় আর অনিশ্চয়তার মরুপ্রান্তরে, রাতের নির্জনতায়, অশরীরী আতঙ্কের হাতছানিতে তারা ছুটে চলে অনন্ত অজানার দিকে।
তাদের শরীরের উপর অমঙ্গল ছায়া নেমে এলো। মুহূর্তের মধ্যে বিকট গর্জনে একটি গাড়ি তীব্র গতিতে ধেয়ে এসে তাদের উপর আছড়ে পড়ে। প্রচণ্ড আঘাতে দু’জনেই ছিটকে গিয়ে র*ক্তাক্ত দেহ নিয়ে রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে।
গাড়ির ড্রাইভিং সিটের লোকটি গাড়ির ভেতর থেকে সামান্য ঝুঁকে তাদের বিধ্বস্ত দেহের দিকে তাকায়। তার ঠোঁটে বিদঘুটে মুচকি হাসি দেখা যায়।
ছেলেটির হাত অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে গেছে। কনুইয়ের হাড় বাইরে বেরিয়ে এলো, মাংস ছিঁ*ড়ে ধমনী থেকে গরম র*ক্ত ফিনকি দিয়ে উঠলো। র*ক্ত এতটাই গরম ছিল যে পিচঢালা রাস্তার ওপর পড়তেই সাদা ধোঁয়া উঠতে লাগল।
তার কপাল ফেটে গিয়ে খুলির হাড় দেখা যাচ্ছিল, র*ক্ত নদীর মতো গড়িয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। মেয়েটি ছিটকে গিয়ে সংজ্ঞাহীন পড়ে আছে। তার শরীর থেঁতলে গিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ও ছিঁড়ে যাওয়া চামড়া র*ক্তে লাল হয়ে উঠেছে। পায়ের হাড় ভেঙে ত্বক চিরে বেরিয়ে এসেছে। মাথার পেছনে গভীর ফাটল, চুল আর র*ক্তে মিশে ভয়াবহ আবরণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তার নিস্তেজ দেহ একটু একটু করে কাঁপছিল।
হঠাৎই লোকটি গাড়ির দরজা ঠেলে নামল। ঠান্ডা, শীতল মুখে ব্যাগ খুলে বের করল একটি মোটা লোহার শিকল। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, কোনো দ্বিধা নেই। সে শিকল ছেলেটি আর মেয়েটির গলায় পেঁচিয়ে এমনভাবে টান দিলো, যেন দুটো মৃত কুকুরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
শিকলের লোহার কর্কশ শব্দ মিশে গেল ছেলেটির আর্তচিৎকারের সাথে। গলায় গভীর ক্ষ*ত তৈরি হলো, যেখানে শিকল চামড়া কেটে র*ক্তের ঝরনা বইয়ে দিল। রাস্তার ধুলায় র*ক্তের সঙ্গে গড়িয়ে চলতে লাগল তাদের শরীর।
ছেলেটি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠে। কাঁপতে থাকা চোখের কোণে জমা জল নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “হু… হু আর ইউ? হোয়্যার আর ইউ টেকিং আস?”
ছেলেটি অনুভব করল তার কনুইয়ের হাড়ে বিদ্যুৎগতির যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছে। টানাহেঁচড়ার মাঝে তার মাংস ছিঁড়ে গিয়ে র*ক্তধারা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়তে লাগল। শরীরের ভারহীন যন্ত্রণা আর র*ক্তপাত মিলিয়ে যেন পৃথিবীটাই তার চারপাশে দুলে উঠছে।
প্রচণ্ড ব্যথায় ছেলেটি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে।
কিন্তু মুখোশপরা লোকটির কোনো সাড়া নেই। তার চোখ দুটি একটি মৃত মানুষের চোখের মতো ছিল শূন্য। সে একটুও দৃষ্টি ফেরাল না। ঠাণ্ডা, অনুভূতিহীন ভঙ্গিতে শুধু আরও জোরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
দুজনের পেটের চামড়া রাস্তার খসখসে পিচে ঘষে গিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছিল। ত্বক উধাও হয়ে গিয়ে, পাঁজরের হাড় সামান্য বেরিয়ে আসছিল।
ঠিক তখনই দূর থেকে একটি বাইকের গর্জন শোনা যায়। বাইক আরোহী এসে ছেলেটি-মেয়েটির বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ব্রেক কষল। আরোহী হতভম্ব দৃষ্টিতে চিৎকার করে ওঠে, “হেই, হোয়াট দ্য হেল ইজ গোয়িং…”
কিন্তু কথার মাঝপথেই কোটরের মতো শূন্য চোখে তাকিয়ে রিভলভার বের ।
কিন্তু তার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মুখোশধারী সেই ভয়ংকর ব্যক্তি পকেট থেকে ঠাণ্ডা রিভলভার বের করে গুলি চালায়। মুহূর্তের মধ্যে গুলিটি বাইক আরোহীর কপাল ভেদ করে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।
গুলির শব্দে রাতের নীরবতা ফেটে গেল।
বাইকারের দেহ ঢলে পড়ল মাটিতে, মাথার পেছন থেকে গরম র*ক্তের স্রোত গড়িয়ে আসতে লাগল। তার মৃ*ত চোখের কোণ বেয়ে শেষবারের মতো একটি অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ে মাটির সাথে মিশে গেল।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুখোশধারী ব্যক্তি মৃতদেহের দিকে একবারও তাকালো না।
রাস্তার উপর তখন র*ক্তের প্রবাহে ধুলোর সাথে মিশে তৈরি হয়েছে একটি গাঢ় লাল জলের হ্রদ।
এটা দেখে প্রেমিক ছেলেটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার শরীর জমাট বাঁধা র*ক্তের মতো ঠান্ডা হয়ে পড়েছিল, ঠোঁট কাঁপছিল, কিন্তু মুখ থেকে একটিও শব্দ বের হচ্ছিল না।
তার চোখের দৃষ্টি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। শুধু মৃ*ত্যুর হিমালয়ী নীরবতা তাকে গ্রাস করেছে।
মুখোশধারী লোকটি কোনো বিরতি না দিয়ে, শিকল ধরে দু’জনকে রাস্তার বুকে টেনে টেনে নিয়ে চলল।
পিচঢালা রাস্তায় তাদের বুকের উপর ঘর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
রুক্ষ পাথরের ধারালো খোঁচায় বুকের চামড়া ছিঁ*ড়ে ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে, লাল র*ক্তের দাগ দীর্ঘ সর্পিল রেখার মতো রাস্তায় আঁকা হয়ে রইল।
একসময় তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হলো এক ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা পুরোনো স্টোররুমে। চুনকাম খসে পড়া দেয়াল, ছাদের কোণায় ঝুলের দল, আর ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে ঢোকা শীতল হাওয়া—সব মিলিয়ে পুরো ঘর ছিল যেন কোনো পরিত্যক্ত মৃ*ত্যুপুরী।
একটি নোংরা বাল্ব ঝুলছিল ছাদের মাঝখানে, যেটি মাঝে মাঝে টিম টিম করে জ্বলছিল আর নিস্তব্ধতা আরও কর্কশ করে তুলছিল।
লোকটি কোনো শব্দ না করে তাদের টেনে নিয়ে গেল দুটি টেবিলের কাছে।
শিকল দিয়ে তাদের হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে ফেলা হলো।
মেয়েটির জ্ঞান তখনও পুরোপুরি ফিরেনি। ছেলেটি ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে কাঁপছিল, চোখ বড় বড় করে চেয়ে ছিল।
হঠাৎই মুখোশধারী লোকটি হিংস্র নেকড়ের মতো মেয়েটির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার পোশাক একের পর এক টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলা হতে লাগল। কাপড় ছিঁ*ড়ার শব্দ ঘরের বিষণ্ন নীরবতায় বিদীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ল।
তারপর শিকল দিয়ে মেয়েটির স্ত* দুটো বেঁধে টেনে উপরের হুকের সাথে ঝুলিয়ে দিল।
তার যৌ *না*র সাথে মোটা লোহার চেইন দিয়ে ঠাণ্ডা টেবিলের সাথে আটকে দেওয়া হলো।
এই বিভৎস দৃশ্য দেখে ছেলেটি, সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল, “আর ইউ ম্যা…”
কিন্তু তার শব্দপূর্ব মুহূর্তেই মাক্স পরিহিত লোকটি বিশাল এক পাথর তুলে এনে তার মুখের ওপর আছড়ে ফেলল।
পাথরের আঘাত এতটাই নির্মম ছিল যে ছেলেটির মুখ থে*তলে গিয়ে অস্বাভাবিক বিকৃত আকার ধারণ করল।
ঠোঁটের গোশত ছিঁ*ড়ে গিয়ে ঝুলে পড়ল, দাঁতগুলো একেকটা ফেটে ছড়িয়ে পড়ল।
র*ক্ত এমন জোরে ছিটকে বের হলো যে এক ঝাপটায় পাশের দেয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়ল।
ছেলেটির ছিন্নভিন্ন মুখ দিয়ে তখন আর কোনো চিৎকার বের হলো না। শুধু একটানা ফোঁপানো গোঁ গোঁ শব্দ শোনা গেল। আর অনবরত গাঢ় র*ক্তের ধারা বয়ে চলল।
তার মৃ*তপ্রায় চোখ দুটো তখনও বিস্ফারিত, কাঁপছিল ভয়ের চরম আতঙ্কে।
পরে লোকটি শেফের পোশাক পরে ফিরে এলো। তার হাতে গরম তেলে ভরা পাত্র। নির্দয় ভঙ্গিতে সে সেই তেল মেয়েটির মুখে ঢেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির জ্ঞান ফিরে এলো। গরম তেলের দহনে তার ত্বক পুড়ে যেতে লাগল, আর চেহারার সৌন্দর্য নিমেষে বিকৃত হয়ে গেল। র*ক্ত আর তেলের মিশ্রণ তার ত্বকে লেপ্টে গিয়ে অমানুষিক বেদনার জন্ম দিল।
“আআআআআআ!” যন্ত্রণার অসীম গভীরতা থেকে উঠে আসা চিৎকারে মেয়েটির কণ্ঠরোধ হয়ে গেল। সে বেদনায় হাত-পা ছিটকাতে থাকল, কিন্তু বাঁধনের কারণে তেমন নড়তেও পারল না। তার চোখে আতঙ্কের ছায়া স্পষ্ট, আর চেহারায় ফুটে উঠল গভীর যন্ত্রণার চিহ্ন।
“হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? লেট আস গো, প্লিজ। আই বেগ ইউ।” কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলে চলল।
অথচ লোকটি নির্দ্বিধায় দুটি ক্লিপ হাতে নিয়ে মেয়েটির দিকে এগিয়ে এলো। তার চোখে শীতলতা নিয়ে মেয়েটির দুই স্ত*বৃন্তে কাপড়ের ক্লিপ দুটো লাগিয়ে দিল। মেয়েটির ভেতর থেকে অস্বস্তিকর আর্তনাদ বের হয়ে আসল। মেয়েটার চোখ থেকে অনাবরত পানি ঝড়তে থাকে। এরপর লোকটা আচমকা তার মাক্সটি খুলে ফেলে। মেয়েটি চোখ মেলে দেখল, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক। তার ত্বক মোমের মতো উজ্জ্বল, কিন্তু চেহারার গম্ভীরতা দেখলে তার দিকে কেউ বেশিক্ষণ দৃষ্টি স্থির রাখতে পারবে না। তার ক্লিন শেভ মুখ তাকে বাহ্যিকভাবে আকর্ষণীয় করে তুললেও, সেই চেহারার অন্তরালে লুকিয়ে আছে শীতল নির্মমতা। এখানে সে কোনো মানুষ নয়, বরং নিষ্ঠুরতম পশুর প্রতিমূর্তি।
তার চোখে কেবল ক্ষুধা। সে মেয়েটির কাছে এসে, তার শরীরের প্রতিটি রেখাকে একে একে অনুসন্ধান করতে থাকে। এরপর যুবকটি হিং*স্রতার তাড়নায় মেয়েটির শরীর কু*কুরের মতো চা*টতে শুরু করল। কোমর থেকে স্ত*, আবার স্ত* থেকে যৌ*না* সব জায়গায় জিভের লে*হন দিতে থাকে। যৌনা*র মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে বার বার বের করতে করতে বলে, “লিটল ফায়ার। মাই ব্ল্যাকরোজ।”
এতে আঙুলের নখের আঁ*চড়ে মেয়েটার যৌ*না র*ক্তাক্ত হয়ে উঠে।
তার শরীরে জিভের গভীর স্পর্শ দিতে দিতে সে পুনরায় নেশালো গলায় বলে, “ওহ, মাই ব্ল্যাকরোজ।”
মেয়েটি অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। একটু পর তার শরীরের ওপর মদের ধারা বইয়ে দেওয়া হলো। লোকটি হিং*স্র তৃষ্ণায় জিভের লে*হন দিয়ে সেই মদ গ্রাস করল। এরপর মেয়েটার যৌ*না* থেকে স্ত* সম্পূর্ণ শরীরে কামড় দিয়ে দিয়ে মাংস ছিঁ*ড়ে আনতে থাকে। মেয়েটার শরীর র*ক্তাক্ত হয়ে উঠে। মেয়েটি ছট*ফট করতে করতে শুধু চিৎ*কার করে যাচ্ছিল।
আর লোকটা তার ভারী গলায় শুধু বলে যাচ্ছিল, “মাই ব্ল্যাকরোজ।”
সে মেয়েটার মুখে নিজের পুরু*ষা* ঢুকি*য়ে দিয়ে নিজেকে আবেশে ভরিয়ে তোলে। কিন্তু মেয়েটার শরীরের মধ্যে অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে, যে কারণে শ্বাস নেওয়া দায় হয়ে ওঠে।
লোকটা পুরুষা* সরিয়ে নিলে মেয়েটি অনুনয় করে বলে, “প্লিজ, লিভ আস।”
কিন্তু সে আরো গভীরভাবে তার কো*মর, স্ত*, যৌনা*, নাভিতে ন*খের আঁ*চড় দিতে থাকে। মেয়েটি ব্যথায় কুঁ*কড়ে উঠে। একটু পর ট্রেজার দিয়ে মেয়েটার যৌ*ঙ্গে বার বার শক দিতে থাকে। আর অন্য পাশে ছেলেটি বেদনাভরা চোখে প্রেমিকার এমন বীভৎস কষ্টের দৃশ্য দেখে। ছেলেটির মন ব্যথায় এক পীড়িত আত্মার মতো কাঁপতে লাগল। কিন্তু সে কিছুই করতে পারল না।
মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে কাতরাতে থাকে। একটু পর টংস দিয়ে মেয়েটার স্ত* বৃন্ত তুলে ফেলা হলো। মেয়েটি তীব্রভাবে চিৎকার করে ওঠে, তার গলা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো। মুহূর্তেই স্ত* বেয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু লোকটি ব্যান্ডেজ এনে স্ত* বৃন্তে লাগিয়ে দেয়। তবে ততক্ষণে মেয়েটির শরীর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
এবার লোকটি ছেলেটির কাছে চলে আসে। শুরু হলো নৃ*শংস যন্ত্রণার দানবিক খেলা। সে ছেলেটির মুখের ভেতর থেকে জি*ভ টেনে ছিঁ ড়ে ফেলে। ছেলেটির পেটের মধ্যে একে একে লোহার খ*ণ্ড গেঁথে দেয়। প্রতিটি আ*ঘাতে তার শরীর র*ক্তে স্নান করে। ছেলেটি কেবল কাঁপতে থাকে, কিন্তু মুখে কোনো শব্দ আসে না। কারণ তার গলা শক্তভাবে বাঁধা।
শেষে লোকটি দুটি লোহার শলাকা ছেলেটির চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। মুহূর্তেই ছেলেটির চোখে মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ছেলেটার স্ত *বৃন্তে দুইটা লোহা গেঁথে দিল। ছেলেটির হাতে, কোমরে একের পর এক লোহা গেঁথে দেওয়ার পর, ছেলেটির পা বরাবর হা*তুড়ি দিয়ে আ*ঘাত করতে থাকে। প্রতিটি আঘা*তে ছেলেটির অস্থি ভেঙে দেয়। লোহাগুলো তার শ*রীরে আরও গভীরে ঢুকে যায়। এতে তার তীব্র যন্ত্র*ণার আর্তনাদ বেরিয়ে আসে।
এদিকে মেয়েটি চিৎ*কার করতে করতে শরীরের শিকল ছিঁ*ড়ে ফেলার চেষ্টা চালাতে থাকে। অথচ অন্যদিকে লোকটা ছেলেটির পুরু* ষা*র মধ্যে গুনে গুনে পাঁচটি লোহা গেঁথে দিল। ছেলেটা ব্য*থায় কেঁপে কেঁপে উঠে। আরো দশটার মতো লোহা এনে তার অ*কোষ বরাবর হা*তুড়ি দিয়ে গেঁথে দেওয়া হলো। একটু পর ছেলেটির শরীরে সেই মসলাদার ক্যামিক্যাল ঢালা হয়, যা তাকে পাগল করে তোলে। তার চোখে হিং*স্রতার আগুন জ্বলতে থাকে। সে নিজেই নিজের দেহ কা*মড়ে খেতে উদ্যত হয়, কিন্তু শিকলে বাঁধা হাত-পা তাকে ব্যর্থ করে দেয়। অবশেষে লোকটি এসে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে ছেলেটির শিকল খুলে দেয়। মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে ছেলেটি অনুভূতিহীন নিজ শরীরের মাং*স ছিঁ*ড়ে ফেলে। লোহার ধাতব স্পর্শ তার হাতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। অঝোরে র*ক্তধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তবুও এই যন্ত্রণা ছাপিয়ে তার চোখে ফুটে ওঠে অদ্ভুত পরিতৃপ্তির ছায়া।
ছেলেটা নিজের পুরু *ষা টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলতে উদ্যত হয়। কিন্তু পারে না। তাই শরীরের অন্যান্য অংশে কা*মড় বসাতে থাকে। প্রত্যেকটি কাম*ড়ের সাথে লোহার শলাকা তার গালের ভেতর গভীরভাবে ঢুকে পড়ে।
তার আঙুলগুলো কাঁপছিল। ধীরে ধীরে সে নিজের শরীরের গভীর থেকে লোহার টুকরো টেনে বের করল। র*ক্তের স্রোত উপেক্ষা করে, সে অ *কোষের ভেতর সেই লোহাটি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ধাতব কঠোরতা ও মাংসের নরমতা একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে না। তাই অবশেষে অণ্ড *ষ ছিঁ*ড়ে গেল।
তার মুখের ভাষা তখন আর্তনাদে রূপ নিল না; বরং উন্মত্ত তৃষ্ণায় সে অ *ন্ডকো কা*মড়ে ধরল, ঠিক যেন বহুদিনের ক্ষুধার্ত এক পশু।
এদিকে র*ক্তাক্ত দৃশ্যের সাক্ষী থাকা ব্যক্তি বুঝতে পারল, তার শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে। তাই সময় নষ্ট না করে, সে দ্রুত ইনজেকশনটি তুলে নিল। সুঁচের ধারালো অগ্রভাগ ছেলেটার ত্বক ভেদ করতেই ধমনীতে তরল নিস্তব্ধতা প্রবাহিত হলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছেলেটার শরীর ঢলে পড়ল, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। জ্ঞান হারানোর আগে শেষবারের মতো সে দেখতে পেল, লাল রঙের বিভীষিকাময় মোহ।
ওদিকে এসব নীরবে অবলোকন করতে করতে মেয়েটির চোখে অন্ধকার ছায়া জমা হতে থাকে। সে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শিকল ছিঁ*ড়ে ফেলতে চেষ্টা করে, কিন্তু তার সমস্ত প্রচেষ্টা র*ক্তমাখা আশাহততায় ডুবে যায়। কিছুক্ষণ পর লোকটি তার দিকে এগিয়ে আসে। এরপর তার মুখে একটি বড় পাথর জোরে ঢুকিয়ে দেয়, যেন আর কোনো চিৎ*কারের সুর তার কানে না পৌঁছায়। ছু*রি দিয়ে প্রথমে মেয়েটির হাতের মাংস আলাদা করে ফেলে। ফিনকি দিয়ে র*ক্ত ছিটকে তার সমস্ত কাপড় ভিজিয়ে দেয়।
একটুপর মেয়েটার শরীরে পুরু *ষা প্রবেশ করিয়ে একটাই নাম জপ করতে থাকে।
“হেই, লিটল ফায়ার, মাই ব্ল্যাকরোজ।”
তার ঠোঁট থেকে পাষাণের মতো হাসি বেরিয়ে আসে। কয়েক ঘণ্টা ধ *র্ষণ শেষে মেয়েটার চোখে দুটি তীক্ষ্ণ লো*হা ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটি মুখ থেকে শ্বাস ছাড়ার আগেই গরম তেল যৌ *ঙ্গে আর নিত* ম্বের রেকটামে ঢেলে দেওয়া হয়। মেয়েটি কণ্ঠে হাহাকার ছাড়তে থাকে।
পরে তার হাত পায়ের প্রতিটি আঙুলের মধ্যে একে একে লোহা গেঁথে দেয়। এবার মেয়েটির স্ত* আরও সাতটি লোহা গেঁথে দেয়া হলো। একটুপর সূক্ষ্ম হাতে মেয়েটির থেকে তার যৌ*না* আলাদা করা হলো। এই যৌনা* সেই ছেলেটার পুরু*ঙ্গের স্থানে সেলাই করে লাগিয়ে দেওয়া হলো। এরপর মেয়েটির শরীরে ধীরে ধীরে সেই কেমিক্যাল মিশ্রিত মশলা ঢেলে দেওয়া হলো। সেই মশলার ঘ্রাণে আক্রান্ত হয়ে মেয়েটা নিজের শরীরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। এক ক্ষণে তার হাত-পায়ের শিকল খুলে দিলে, সেও নিজের সত্তাকে ভুলে গিয়ে ক্ষুধার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নিজের হাত কা*মড়ে কা*মড়ে খেতে থাকে।
কান টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলে তৃপ্তি নিয়ে গভীর আনন্দে খেতে থাকে। নিজের র*ক্তের গন্ধে সে মাতাল। প্রতিটি কামড়ে যখন র*ক্ত বেরিয়ে আসে, সে সেই র*ক্ত গোগ্রাসে গিলতে থাকে। তার চেহারা সম্পূর্ণ রক্তা*ক্ত অন্ধকারে ডুবে গেছে।
নিজের নখ দিয়ে গভীরভাবে চাম*ড়ার পৃষ্ঠে আঁ*চড় কেটে, ফালাফালা করে ফেলে। প্রতিটি ছিন্ন থেকে র*ক্ত ঝরে, আর তাতে তার তৃষ্ণা আরও বাড়ে। চামড়া ফেটে যকৃৎ উন্মোচিত করে লোভী জা* নোয়ারের মতো সবটুকু গিলে খায়। অর্থাৎ সে নিজেরই নির্মম জয়কে উদ্যাপন করছে। এরপর নিজের স্ত* টেনে ধরে পাশে থাকা ছু*রি দিয়ে কেটে নিয়ে, কাম*ড়ে খেতে থাকে।
এদিকে লোকটা নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে কৌতূহল নিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটি এবার নিজের প্রেমিকের দিকে এগিয়ে যায়। ছেলেটার মশলাদার শরীরের গন্ধে সে আকৃষ্ট। প্রেমিকের ঘুমন্ত দেহে সে কা*মড় বসায়, আর সেই কা*মড়ে চেতনাবোধ ফিরে পেয়ে ছেলেটা জেগে ওঠে। এরপর দুজনই একে অপরের মাংস ছিঁ*ড়ে খেতে শুরু করে। তাদের নিঃসীম হিংস্রতায় র*ক্ত চারপাশে ছিটকে পড়ে। আর দুই দেহ রক্তা*ক্ত এক শৈল্পিক ক্যানভাসে পরিণত হয়। ছেলেটা মেয়েটার কিডনি বের করে খেতে থাকে। মেয়েটাও তার নাড়িভুঁড়ি বের করে কামড়ে কাম*ড়ে আয়েশে খেতে থাকে। অর্থাৎ নিজেদের ধ্বংস করতে তারা নিজেরাই জন্তু হয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই কাম*ড়ের রেশেই তাদের দেহ নিঃশেষিত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অর্থাৎ তারা মারা গেছে। তখনই লোকটা ধীরপায়ে তাদের কাছে এসে দাঁড়ায়।
তার চোখে গভীর আত্মপ্রশ্ন, আর তার হাতে একটা ধারালো ছু*রি। অত্যন্ত নিপুণ হাতে সে তাদের অবশিষ্ট মাংস কেটে বের করে আনে। পরে কাটা মাংস কিমা মেশিনে দিয়ে তৈরি করল র*ক্তমাখা কাবাব। এরপর গ্লাসে মদ ঢেলে চুমুক দিতে দিতে হাড্ডি গুড়িয়ে তুলতুলে পাউরুটি বানাল।
র*ক্ত দিয়ে তৈরি হলো এক বিশেষ সস, যা তার নির্লিপ্ত মুখে চরম আনন্দ এনে দেয়।
কাবাব আর রুটি সেই সসে ডুবিয়ে মুখে পুরে গভীর তৃপ্তি নিয়ে বলে ওঠে, “উমম, ডেলিসিয়াস।”
তার ঠোঁট থেকে গভীর, ঠান্ডা কণ্ঠে বেরিয়ে এলো র*ক্তশীতল দুটি শব্দ।
মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে সে ল্যাপটপ খুলল, আর স্ক্রিনে ভেসে উঠল দুইজন যুবক-যুবতীর কামনার উন্মাদ দৃশ্য। লোকটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে, তার চোখে ঘৃণার সাথে মিশে থাকে বুনো আকাঙ্ক্ষা। হঠাৎ মদের গ্লাসটা নিজের হাতে মেরে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে।
সেই রক্তমাখা আঙুল দিয়ে স্ক্রিনের মেয়েটির ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে, “হাই, লিটল ফায়ার।”
তার হাত বেয়ে র*ক্ত ঝরে ল্যাপটপের স্ক্রিনে পরতে থাকে। প্রতিটি ফোঁটা তার বোধহীন হিংস্রতার প্রমাণ। তার দৃষ্টি স্ক্রিনের মেয়েটির ন*গ্ন দেহে আটকে থাকে। একটু পর রাগে তার শরীর কাঁপতে থাকে। তার ভেতরে থাকা আগুন ধ্বংসের নির্জলা আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। অকস্মাৎ সে ছু*রি হাতে তুলে নিয়ে নিজের বাম হাত কেটে কেটে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে থাকে। আর হাত থেকে চিকন চিকন মাংস খসে খসে নিচে পড়তে থাকে। প্রতিটি পোচের সঙ্গে তার ঠোঁটে ভয়াবহ সন্তুষ্টির হাসি ফুটে ওঠে। আর তার র*ক্তমাখা আঙুল স্ক্রিনের মেয়েটির ঠোঁট, বু*ক, কোমরের উপর বুলিয়ে দেয়। অর্থাৎ সে একজন অন্ধকারের প্রেমিক।
আবার মদের বোতল নিয়ে নিজের ক্ষতবিক্ষত হাতে ভাঙতে থাকে। র*ক্তের স্রোতে মেঝে ভিজে যেতে থাকে। সাথে সাথে ল্যাপটপের স্ক্রিনেও তার র*ক্ত ছিটে ছিটে ছড়িয়ে পড়ে। লোকটা তার ক্ষতবিক্ষত হাতের র*ক্ত আঙুলে তুলে স্ক্রিনের মেয়েটির স্ত* লাগিয়ে দেয়।
তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে গভীর কণ্ঠে বলে, “when the day comes that my thirsty d**k enters you, and you beg me to stop, that will be the greatest victory of my life.”
পরে লোকটা আড়চোখে বিকৃত হাসিতে ভরে উঠল। তবে সেই হাসি দ্রুত মিলিয়ে গেল, যখন স্ক্রিনে ছেলেটির সাথে মেয়েটির অ*ন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখতে পেল, আর মেয়েটির মুখ থেকে ভালোবাসার উত্তেজনায় এক তৃপ্ত আওয়াজ বের হলো। রাগে ফুঁসে উঠে সে ল্যাপটপটা নিজের মাথায় মেরে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলল। তার মাথা ফেটে কপাল গড়িয়ে র*ক্ত পড়তে থাকে। কিছু কিছু কাচের টুকরো মাথায় গেথে রয়েছে।
অথচ সে এসবে অনুভূতিহীন থেকে ভাঙা স্ক্রিনের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল,
Tell me who I am part 34 (4)
“মিরাআআআআ!”
নামটি ঘরের নিস্তব্ধতা ভেদ করে প্রতিধ্বনিত হলো। তার দেহ ক্রোধে থরথর করে কাঁপছে। স্ক্রিনে তখনো চলছে কারান আর মিরার গভীর অন্ত*রঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও। অর্থাৎ এতক্ষণ ধরে ব্ল্যাকরোজ বলে যে নামটি উচ্চারিত হচ্ছিল, সেটা সে মিরাকে অনুভব করেই ডেকে চলেছিল।