Tell me who I am part 12

Tell me who I am part 12
আয়সা ইসলাম মনি

কারান ছায়ার আকার দেখে বুঝল, সেখানে কে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে, দেখেও না দেখার ভান করে আলয়ের দরজা পার হয়ে সামনে এগিয়ে গেল। রোমানা ভেবেছিল, কারান তাকে দেখেনি। তাই নিঃশব্দে কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করল।
কিন্তু ঠিক তখনই কারান থেমে, কয়েক কদম পিছনে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, “ভাবী, এই কথাগুলো তো আপনার হাসবেন্ডের কাছ থেকেই শুনতে পারতেন, অযথা দাঁড়িয়ে পা ব্যথা করলেন।”

রোমানা চমকে উঠল। অপ্রস্তুত হয়ে এক মুহূর্তের জন্য চোখ বুজল। তারপর চোখ খুলে কিছু বলার জন্য পিছন ফিরতেই দেখল, কারান ততক্ষণে চলে গেছে। এরপর রোমানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কক্ষে প্রবেশ করল।
ভেতরে ঢুকেই দেখল, আরিয়ান দুশ্চিন্তার ভারে নুয়ে পড়েছে। ভয়ের চিহ্ন তার মুখের প্রতিটি রেখায় গভীর ছাপ এঁকে দিয়েছে। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে, টিশার্টটি সেই ঘামের ভারে গায়ের সঙ্গে লেগে আছে। রোমানা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে এসির তাপমাত্রা কমিয়ে বিছানার একপাশে গিয়ে বসল।
আরিয়ান কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল, “এব..এবার কি হবে, রোমানা? এ যাত্রায় কি বাঁচতে পারব আমি?”
রোমানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “কি আর হবে! জেলের জন্য প্রস্তুত হও।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা আরিয়ানের কানে পৌঁছানো মাত্রই, তার চোখে রাগের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠলো। কারানের দেওয়া হুমকির দুঃস্বপ্ন থেকে সবে একটু মাথা তুলতে চেয়েছিল সে। অথচ তার নিজের বউ-ই তাকে শান্ত করার বদলে সেই আগুনে ঘি ঢালল!
আরিয়ান ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে রোমানাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে মাটিতে ফেলে দিল। রক্তিম চোখে গর্জে উঠে বলল, “তুই একটা নির্বোধ! বলদ বউ আমার! পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দেওয়ার বদলে উলটো আমাকে ক্ষেপাচ্ছিস? চোখের সামনে থেকে সরে যা তুই! ছাগল পালি আমি।”
এদিকে রোমানা পড়ে গেলেও মনোবল হারাল না। নিজেকে স্থির রেখে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে, গভীর চোখে আরিয়ানের দিকে তাকাল। এরপর সে চুপচাপ টেবিলের ভাঙা কাঁচের একটি টুকরো তুলে, হঠাৎ আরিয়ানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে শিরার উপর সজোরে আঘাত করে বসল। আরিয়ান যন্ত্রণায় আর আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল, “আআআ! এটা তুই কি করলি, গাধার বাচ্চা!”

অথচ রোমানার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। চোখে বিদ্রুপের দৃষ্টি এনে বলল, “তোর জন্য এটাই যথেষ্ট। আমার সাথে যেমন ব্যবহার করবি, তেমনই প্রতিদান পাবি। যা, গিয়ে ওষুধ লাগা।”
এটুকু বলে সে নিজের চুলে ঝটকা দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। আর আরিয়ান ক্ষতবিক্ষত হাত চেপে ধরে বিছানায় বসে রইল। রাগে তার মুখের শিরাগুলো ফুলে উঠলো।
আগুনের মতো দৃষ্টি নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আরিয়ান বলল, “এই শাস্তি তোকে আমি সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেব, সাওদা রোমানা। আমার কথা মনে রাখিস।”

ওদিকে রোমানা তখন রান্নাঘরে গিয়ে হিমায়ক খুলে একটি কমলা বের করল। ঠান্ডা কমলার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে তার ঠোঁটের কোনে ক্রূর হাসি ফুটে উঠল। একা একাই বিড়বিড় করে বলল, “আরিয়ান, তুমি আমাকে চিনতে পারোনি। যেমন অসীম ভালোবাসা দিতে পারি, তেমনি কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা-ও আমি ভালোভাবেই জানি। শুধু এই মাতৃত্ব হারানোর যন্ত্রণাই আমাকে দুর্বল করেছে। নাহলে তোমাকে এমন দাপটের জায়গায় রাখতাম…”
তার মুখে হালকা বিদ্রূপের হাসি ফুটে উঠল। তারপর গলায় দৃঢ়তার সুর এনে বলল, “তোমার হাতে আর কোনো উপায় নেই, আরিয়ান। যার এক কোটি টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য নেই, সে আবার ২০০ কোটি টাকা কীভাবে ম্যানেজ করবে?”
এই বলে সে ডাইনিংয়ে গিয়ে চেয়ারে বসল। চোখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি নিয়ে কমলার কোয়া মুখে দিতে দিতে শান্তভাবে উপভোগ করতে লাগল তার নিজস্ব বিজয়ের স্বাদ।
একটুপর মিরা দুপুরের রান্নার উদ্দেশ্যে ধীরপায়ে সিঁড়ি থেকে নেমে রন্ধনশালায় প্রবেশ করলো। রোমানা একমনে খেতে খেতে আবেশভরা কণ্ঠে বলল, “তোমাকে দেখে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হয়। কখনো মায়া লাগে, আবার কখনো হিংসা হয়।”

মিরা ম্লান হাসি হেসে প্রত্যুত্তরে বলল, “রোমানা ভাবির মন অনেক উদার, তাই হয়ত আমার জন্য মায়া হয়।”
রোমানা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শুধালো, “উদার! উদার মাই ফুট! (তারপর আবার বসে) শোনো মিরা, তুমি তো এই বাড়িতে নতুন অতিথি, এখানকার মানুষজন বা পরিবেশের কিছুই এখনো বুঝে ওঠোনি। তাই তোমার মুখের এই নির্ভার ভাব। যদিও তোমাকে নিয়ে আমি বিশেষ কিছু ভাবি না। প্রথমে ভেবেছিলাম, নতুন বউ মানেই বুঝি অশান্তির সূচনা। মনে হয়েছিল, সংসারে চুলোচুলির লড়াই বাঁধবে। কিন্তু তুমি তো এতটাই সহজ-সরল যে তোমার সাথে ঝগড়া করাটাও মনে হবে নিজের বুদ্ধির অপচয়।”
মিরা হেসে নরম স্বরে বলল, “আমি তো আপনাকে বোনের মতোই দেখি। তাই আশা করি, আপনিই আমাকে পথ দেখাবেন। আমার খুব বেশি বুদ্ধি না থাকলেও, আপনি তো আছেন, বাকি সবকিছু নাহয় সামলে নিবেন। তা এই বাড়ি সম্পর্কে আমাকেও একটু ধারণা দিন।”

রোমানা এক ভ্রূ উঁচিয়ে ঠোঁটে ব্যঙ্গ মেশানো হাসি ফুটিয়ে বলল, “বাহ! তোমার কথায় তো বেশ জাদু আছে। এমন কথা সচরাচর কেউ বলে না আমাকে। শুনতে খারাপ লাগল না। যাই হোক, পাঁচ বছরে আমিই বা কতটুকু বুঝেছি যে তোমাকে বলব! (থেমে) তবে যা জানি, বলি। তুমি হয়ত খেয়াল করোনি, কিন্তু কারানের এই বাড়ির কারো প্রতিই তেমন কোনো মমতা নেই। এমনকি আসাদ চৌধুরীর প্রতিও না।”
মিরা সবজি কাটার কাজ থামিয়ে বিস্মিত চোখে তাকাল।
“এমনটা কেন?”

রোমানা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “কেন, তা আমি জানলে তো হতোই! তবে যতদূর বুঝি, বিদেশে দীর্ঘ ১৮ বছর কাটানোর কারণেই এই বাড়ির প্রতি টান কমে গেছে। তার ওপর আরিয়ান আর কারানের বয়সের ফারাকও মাত্র এক বছর। আর আরিয়ান…যাক, ওর কথা তোলা থাক। আচ্ছা মিরা, তোমার বাবা কি কখনো এই বাড়ি সম্পর্কে কিছু বলেননি?”
মিরা কাজের ফাঁকেই শান্ত গলায় বলল, “আমার বাবা এই বাড়ি সম্পর্কে জানবেন কীভাবে? হ্যাঁ, জানি, আমার শ্বশুর আর বাবা বন্ধু ছিলেন। শুনেছি, তারা স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়েছেন। তবে বাবার কাছ থেকে এসব নিয়ে কোনো দিন কিছু শোনা হয়নি।”
রোমানা হাসল।

“মিরা, তোমার এই সরলতা আমাকে প্রায়ই ভাবায়। আমার দেবরের সাথে কীভাবে চলবে সেটাই ভাবছি! তুমি এমন একটি বাড়িতে এসে উঠেছ, যার ইতিহাস কিংবা বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই জানো না! কারানকে আমি সবসময় ছোট ভাইয়ের মতো দেখে এসেছি। কিন্তু বিয়ের পর এই পাঁচ বছরে তার সঙ্গে তেমন সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। আসলে তা সম্ভবও হয়নি। আমি যখন এই বাড়িতে এলাম, তখন থেকে সে মাত্র দু’বার এখানে এসেছে। একবার আমাদের বিয়েতে, আরেকবার কে.ছি. টেক্সটাইল কোম্পানির নির্মাণকাজের সময়। তারপর তো একেবারে আসলো তোমাদের বিয়ের আগে ২০১৬ সালে। তবে কারান সম্পর্কে যতটুকু জানি, সে অসাধারণ বুদ্ধিমান। পরিস্থিতিকে নিজের মতো করে গড়ে নিতে সে খুব দক্ষ। নইলে ভেবে দেখো, যেখানে অনেকেই পঞ্চাশ বছর বয়সেও একটা কোম্পানি দাঁড় করাতে পারে না, সেখানে কারান মাত্র চার বছরের মধ্যে কে.ছি. কোম্পানিকে বিশ্বসেরাদের তালিকায় নিয়ে গেছে। আমার মনে হয় না, কেউ তাকে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে। এমনকি আসাদ চৌধুরি নিজেও তার ছেলেকে সম্পূর্ণ চিনতে পেরেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।”

মিরা সামান্য হাসল। অর্থাৎ এই কথাগুলো তার মনে বিশেষ কোনো ভাবনার উদ্রেক করেনি। মিরা গলার স্বর মোলায়েম করে বলে, “হুম, বুঝলাম। ছেলেদের বুদ্ধি থাকা তো স্বাভাবিক, আর তা থাকা উচিতও। তাছাড়া সে তো আমার স্বামী, আমার কোনো ক্ষতি করবে না।”
রোমানার ভেতরে অজানা বিস্ময় ফুটে উঠল, কিন্তু মুখে তা প্রকাশ না করে বলল, “বাহ, এতটা বিশ্বাস! সত্যিই অভাবনীয়। অথচ আমি এই পাঁচ বছরেও জা’নোয়ারটাকে..”
এটা শুনে মিরা রোমানার দিকে খানিকটা বিস্ময়ের সঙ্গে তাকালো। রোমানা তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে বিষয়টি হালকা করার জন্য কথার মোড় ঘুরিয়ে বলল, “মানে.. আরিয়ানকে চিনতে পারিনি, আর তুমি কিনা কারানের মতো একজন মানুষকে এক বছরেরও কম সময়ে চিনে ফেললে? বেশ ভালোই!”

মিরা হেসে ফের সবজি কাটায় মন দিল। রোমানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। এরপর এক পা উরুর উপর তুলে দোলাতে দোলাতে বলল, “তোমাকে আমি ঠিক বুঝি না, মিরা। চৌধুরি বাড়ির বউ হয়েছো, অথচ পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করার বদলে কাজ করছো। তোমার তো হুকুমদারী করার কথা।”
মিরা একটু গলা উঁচিয়ে জবাব দিল, “কাজ করা খারাপ কিছু না, ভাবি। বরং দেখবেন, কাজ করলে মন-মেজাজ ভালো থাকে।”
রোমানা হেসে বলল, “ওসব তুমিই করো। আমি বাবা অলস মানুষ, কাজ করার জন্য বড়লোক বাড়ির বউ হইনি। তবে যেহেতু বোন বলেছো, তোমাকে একটা কথা বলি। আর শোনো, আমি মানুষ চিনতে খুব একটা ভুল করি না। সেই হিসেবে মনে হলো, তুমি সত্যিই ভালো মনের মানুষ।”

“বলতে থাকুন, ভাবি। শুনছি।”
রোমানা খানিকটা গম্ভীর হয়ে শুরু করল, “শোনো তাহলে। আমি তো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিলাম। তোমার বাবা যেমন নামি-দামি কলেজের শিক্ষক, আমার বাবা ঠিক তেমন নন। সরকারি চাকরির সাধারণ এক কর্মী ছিলেন। তবে সৌন্দর্য আমাকে অনেক কিছু এনে দিয়েছে। মোটামুটি সুন্দরী হওয়ায় কত ছেলেকে যে আঙুলের ইশারায় নাচিয়েছি, তার হিসেব নেই।”
এই কথা শুনে মিরা খিলখিল করে হেসে উঠল। রোমানা মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে রইল। মিরা একটু আগ্রহ মিশিয়ে বলল, “তারপর?”
রোমানা গলাটা খানিক নীচু করে বলল, “তারপর… তারপর তোমার ওই জাউরা ভাসুরকে বিয়ে করলাম। প্রথমে মনে হয়েছিল, জীবনের পথে নতুন আলো ফুটবে। কিন্তু ভাগ্যও বোধহয় ঠাট্টা করতে জানে। বিয়ের এক বছরের মাথায়ই আরিয়ানের প্রেম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।”

মিরার কণ্ঠে কৌতূহল আর বিস্ময়ের মিশ্রণ, “কেন ভাবি? কি হয়েছিল?”
রোমানা একটু থেমে বলল, “সে তো এক বিশাল গল্প মিরা, যা তোমাকে বলা যাবে না। তাছাড়া, আমি এখন সহজে কাউকে বিশ্বাসও করি না। কিন্তু তুমি তো এত সুন্দরী! বিয়ের আগে নিশ্চয়ই তোমার অনেকগুলো অ্যাফেয়ার ছিল?”
মিরা হালকা হাসি মিশিয়ে মাথা নেড়ে বলল, “না ভাবি, আমার প্রেমের শুরুটা আপনার দেবরকে দিয়েই।”
রোমানা চমকে উঠে বলল, “কি বলছো! তাহলে এই সৌন্দর্য দিয়ে কি করলে তুমি? আমি যদি তোমার মতো সুন্দরী হতাম, পুরো দুনিয়াটাই হাতের মুঠোয় নিয়ে নিতাম!”

মিরা মৃদু হেসে উত্তর দিল, “আপনার কথায় মনে হচ্ছে, আমি যেন বিশ্ব সুন্দরী!”
“ওমা! বিশ্ব সুন্দরী বললেও তো কম বলা হয়! আমি কোনোদিন কারো রূপের প্রশংসা করি না। কিন্তু তোমাকে যখন প্রথম দেখতে গিয়েছিলাম, শুধু মনে হয়েছিল, তুমি সত্যিই মানুষ তো? এতটা সৌন্দর্য কীভাবে কারো হতে পারে!”
মিরা একটু লজ্জায় মাথা নীচু করে বলল, “ভাবি, আপনার কথায় আমি নিজেই অবাক হচ্ছি। আমি তো এতোটাও সুন্দরী নই।”
রোমানা মুচকি হেসে বলল, “তুমি বুঝলে, চোখ থাকতেও অন্ধ। আচ্ছা, তোমাকে কি কখনো কেউ তোমার প্রশংসা করেনি?”

“না ভাবি, তেমনভাবে কেউ কখনো করেনি। আপনার কাছ থেকেই প্রথম এমন কিছু শুনলাম। আর এখনই নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। এতদিন এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি।”
রোমানা অবাক দৃষ্টিতে তাকাল, “কি আশ্চর্য! তোমার কেউ প্রশংসা করেনি? তাহলে বাকিরাও নিশ্চয়ই তোমার মতোই অন্ধ। (থেমে) যাই হোক, নিজের সৌন্দর্যটা ধরে রেখো, মিরা। আল্লাহ তোমাকে কতটা মমতা দিয়ে গড়েছেন, তা বোঝাই যায়। যেমন তোমার মন, তেমনি তোমার চেহারা।”
কথাগুলো বলে সে ধীরে ধীরে উপরের তলায় চলে গেল।
মিরা দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ রোমানার কথা ভাবল। পরে নিজের মনে বলল, “মানুষ চেনা কি সত্যিই এত কঠিন! বিয়ের পরের দিন যাকে দেখেছিলাম, আজ যেন সে আরেকজন মানুষ!”

রোমানা কক্ষে প্রবেশ করতেই আরিয়ান হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার হাত রোমানার গলায় লোহার শিকলের মতো চেপে বসে। রোমানা কাশতে কাশতে শ্বাসের জন্য লড়াই করতে করতে ফিসফিসিয়ে বলল, “আ.. আমাকে পরে মারবে, আরিয়ান। আগে ভাবো কীভাবে নিজেকে বাঁচাবে।”
কথাগুলো আরিয়ানের কানে ঢুকতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলো সে। ধীরে ধীরে রোমানার গলা থেকে হাত সরিয়ে নিল। রোমানা হাত দিয়ে গলা ডলতে ডলতে একগ্লাস পানি পান করল। ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের ছায়া ফুটিয়ে বলল, “দুইশ কোটি টাকা তোমার সাধ্যের বাইরে। তার চেয়ে প্রথম বিকল্পটাই তোমার জন্য ভালো।”

কথাটা বলেই সে হেসে উঠল। তারপর নিজের মনে স্বগতোক্তি করল, “তিন মাসের জেল।”
আবারও তার অট্টহাসি ঘরের নিস্তব্ধতাকে বিদ্ধ করল। আরিয়ান ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে তেড়ে এলো তার দিকে। এটা দেখে রোমানা হাসি থামিয়ে এক পা পিছনে সরে গিয়ে বলল, “তোমার ভালোর জন্যই বলছি। যুক্তির পথে চললে তোমারই উপকার। নিলে নাও, না নিলে তোমার ব্যাপার।”
আরিয়ান ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানায় বসে পড়ল। তার মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করল। চিন্তায় ডুবে যেতে যেতে তার চোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলজ্বল করে উঠল। পাশে রাখা রোমানার ফোনটা চোখে পড়তেই সে একঝটকায় ফোনটা তুলে নিয়ে দেওয়ালে সজোরে ছুড়ে মারল।
ফোনটি ছিন্নভিন্ন হয়ে মেঝেতে পড়ল। অথচ রোমানা পুরোটা সময় নির্লিপ্ত রইল। এক পলকও ভ্রূক্ষেপ করল না। মনে মনে বলল, “সমস্যা নেই। এই ছিঁচকে ক্রোধই আবার আমাকে নতুন ফোন কিনে দেবে। ভালোই হলো, এবার লেটেস্ট আইফোনটা চালানো যাবে।”
তার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। এদিকে ঘরের উত্তাপের মাঝেও রোমানার ঠান্ডা ভাব আরিয়ানের রাগকে আরো অগ্নিময় করে তুলল।

এদিকে রোমানার কথাগুলো মিরার মনের গহীনে নতুন আলো জ্বালিয়ে দিল। অপরাহ্ণের স্নিগ্ধ আলোয় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে দেখতে শুরু করল সে। এতোদিন নিজের অস্তিত্বকেই ঠিকমতো চিনতে পারেনি সে।
নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে স্বল্প হেসে বলল, “তুমি সুন্দর, মিরা।”
অর্থাৎ এতদিন ধরে নিজের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করা মিরার মনে হলো, সৌন্দর্যের আলো সবসময় চোখে ধরা পড়ে না, সেটা অনুভব করতে হয়। নিজের এলোমেলো চুলগুলো হাতের ছোঁয়ায় খোঁপায় বাঁধার চেষ্টা করল।
ঠিক তখনই কারান নীরবে এসে পিছন থেকে তার কাঁধে থুতনি রাখল। কণ্ঠে রিনরিনে সুর তুলে বলল, “আমার বউ তো দেখি আমাকে ভুলতেই বসেছে।”

মিরা একটু হাসির ছলে বলল, “আহ, চুলটা বাঁধতে দিন না।”
“না থাক,” বলে কারান তার হাত থেকে চুলগুলো আলতো করে ছাড়িয়ে নিল।
এক চিলতে দুষ্টু হাসি মুখে বলল, “তোমাকে খোলা চুলেই বেশি সুন্দর লাগে, মিরা। তবে আজ তোমার মুখটায় যেন অন্যরকম উজ্জ্বলতা। এতো খুশির কারণ কী, বেগম সাহেবা?”
মিরা চোখ নামিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে বলল, “খুশি নয়, একটু স্বস্তি আরকি।”
“কীসের স্বস্তি?”
মিরা ঘুরে কারানের চোখে চোখ রেখে বলল, “সে কথা থাক। বরং বলুন তো, ওদিকের খবর কি?”
কারান গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আরিয়ান ভাই কি বলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এছাড়া তো আর কিছু করার নেই।”

কারান মিরার দিকে অপলক চেয়ে রইল। এমনভাবে, যেন সারা দুনিয়ার সবকিছু ছাপিয়ে তার পৃথিবী এখন শুধুই এই নারী। মিরা চোখ কুঁচকে বলল, “কি দেখছেন এভাবে?”
কারান ঈষৎ হাসি দিয়ে বলল, “আমার বউকে।”
“আচ্ছা, হয়েছে। আর দেখতে হবে না। আমার একটু কাজ আছে।”
কারান কপট বিরক্তি নিয়ে বলল, “কি এমন কাজ যে আমার আসার সময়ই মনে পড়ে? তুমি কি আমার বউ, নাকি প্রেমের শত্রু?”
“কাকাইয়ের সাথে কিছু কথা বলব। ওনাকে তো ঘরে পাওয়া ভার। এখন যখন আছেন, একটু কথা বলাই ভালো।”
“কাকাইয়ের সঙ্গে কি কথা বলবে?”

“আছে কিছু। এমনিতেও তো তার সঙ্গে তেমন সম্পর্ক জমে ওঠেনি। কথা তো বলা উচিত, তাই না?”
কারান মৃদু হাসিতে মিরার মাথায় হাত রেখে বলল, “আমার বউ সত্যিই ভালো। বাড়ির সবার কথাই ভাবে। আচ্ছা যাও, কথা বলো।”
মিরা দরজার দিকে হাঁটা দিলে পিছন থেকে কারান আবার ডেকে উঠল, “মিরা!”
মিরা ঘুরে তাকাতেই কারান চোখে দুষ্টু উজ্জ্বলতা নিয়ে, “উম্মাহ!” শব্দে একটা উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিল তার দিকে।
মিরা স্নিগ্ধ হেসে প্রস্থান করলো।

মিরা ইসহাকের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। ভেতরে ইসহাক কাগজপত্রে ডুবে আছে, একাগ্রতা তার চেহারায় স্পষ্ট। কিছুটা সংকোচ নিয়ে মিরা ভাবল, ইসহাকের কাজের মাঝে ঢোকা কি ঠিক হবে কিনা। তবুও সাহস সঞ্চয় করে কণ্ঠে নরমতা নিয়ে বলল, “কাকাই, আসবো?”
ইসহাক মিরাকে দেখে একটুখানি অবাক হয়ে, হালকা হেসে নড়েচড়ে বসে, “আরে বৌমা! এসো এসো,” বলে কেদারাটি একপাশে টেনে দিল।
“বসো, বৌমা।”
“আহ কাকাই, কি করছেন? আমি টেনে বসছি।”

ইসহাক হেসে বলল, “এতটুকু তো কিছু নয়, মা। ঘরের পরীকে একটু যত্ন করতে হয়।”
মিরা বসে মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “কাকাই, আপনাকে কখনোই তো এক মুহূর্তের জন্যও বিরতি নিতে দেখি না। মনে হয় আপনি এই কাজের দুনিয়ায় তলিয়ে আছেন, ঘরেও তো আপনাকে তেমন দেখতে পাই না।”
“কি আর বলবো, মা রে। পুলিশের কাজের চাপ এত, অর্ধেক জীবন তো এখানেই চলে যায়। সেসব বাদ দাও, কারানের সাথে তোমার জীবনযাপন কেমন চলছে, সেটাই বলো? আমার যা ভাইপো!”
মিরা হেসে বলে, “এইতো আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুই ঠিকঠাক।”
কিছুক্ষণ এদিক-ওদিকের সাধারণ কথাবার্তা চলল। তারপর মিরা গম্ভীর হয়ে একেবারে মনোযোগ দিয়ে বলল,

“কাকাই, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম, কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম, কিন্তু কথা বলার সময় হয়নি।”
“কি ব্যাপার, বৌমা? তুমি মুক্ত মনে বলো।”
এবার মিরা একটু থেমে বলে, “কাকাই, ঐ যে একটা কেস নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো না? ঐ ফুচকাবিক্রেতার ঘটনাটা, তার কি হলো?”
ইসহাক শান্ত গলায় বলল, “ঐটা তো এখনো ঝুলে আছে। কিছুই বের করতে পারিনি; না কোনো এভিডেন্স, না কোনো ক্লু। উলটো রিপোর্ট দেখে আমার অবস্থা খারাপ। এমন একটা কেস এর আগে কখনো দেখিনি। পুরো বিষয়টাই একটা ধাঁধা। খুনটা মানুষের কাজ নাকি জন্তুর, সেটা নিয়েও ভেতরে একটা দ্বিধা রয়ে গেছে। কোনো সূত্র মেলে না। অথচ প্রতিটি পলকেই মনে হয় কিছু একটা চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। যেন এই রহস্যের ভেতরে লুকিয়ে আছে আরো গভীর কিছু।”

মিরা কপাল কুঁচকে সন্দেহের ছাপ নিয়ে বলল, “কিন্তু কাকাই, জন্তু তো আর আঙুল কাটতে পারে না।”
“ঠিকই বলেছো। খুনটা এমন নিখুঁতভাবে করা হয়েছে যে, যেকোনো মানুষের হুঁশ উড়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, তুমি এসব নিয়ে পড়লে কেন, বৌমা?”
“আসলে খুনের আগের দিনই ফুচকা খেয়েছিলাম ওনার কাছ থেকে, তাই মনটা তেমন মেনে নিতে পারছে না। (থেমে হেসে) আচ্ছা, যাই হোক, রাতে বাড়িতে খাবেন তো কাকাই?”
ইসহাক হাসতে হাসতে বলল, “সে আর বলতে! তুমি যতদিন বাড়িতে আছো, আমি খাবারের এক বেলাও ছাড়ছি না। তোমার রান্না তো আমি প্রতিদিন পেটপূর্তিতে খাই।”
মিরা ঈষৎ হেসে বলে, “ঠিক আছে, কাকাই। আপনি তাহলে কাজ করুন, আমি আসলাম।”
ইসহাক হেসে বলল, “আচ্ছা মা।”
মিরা চলে যেতে যেতে মনে মনে ভাবল, “আমার রান্না কি আর এমন! আপনার ভাইপোর রান্না তো খাননি কাকাই, সে তো মাস্টার শেফ! (হেসে) আপনার প্রেমে না পড়লেও, আপনার রান্নার প্রেমে পড়েছি, কারান চৌধুরি!”

ঘড়ির কাঁটা রাত প্রায় নয়টা বাজিয়ে দিয়েছে। কারান নিজের কক্ষে একাগ্রভাবে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছে। আরিয়ান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কক্ষে প্রবেশ করবে কিনা, সেই দ্বিধায় বিভোর। কারানের চোখ দরজার দিকে পড়লে, শান্ত গলায় বলে, “ভিতরে আয়।”
আরিয়ান কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে খানিক সময় পর উত্তরে বলে, “না থাক, তুই কাজ করছিস, পরে আসি।”
“আয়, সমস্যা নেই।”
একটুপর মিরাও কক্ষে প্রবেশ করে। আরিয়ান অসন্তোষভরে গলাটা একটু নীচু করে বলে, “মিরা, তুমি কি একটু বাহিরে যাবে?”
“হ্যাঁ ঠিকাছে, আমি বাহিরে যাচ্ছি।”

কারান এক হাতে ইশারা করে মিরাকে বসতে বলে। তারপর গলায় গম্ভীরতা নিয়ে বলে, “না, ওর বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই। মিরা সব কিছু জানে, তুই বল।”
আরিয়ান কণ্ঠে সামান্য সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করে, “তোর প্ল্যান কী? মানে.. জেল কি তিন মাসই…?”
কারান ঠান্ডা হাসি লুকিয়ে উত্তর দেয়, “তো ফার্স্ট অপশনটাই চুজ করলি? গ্রেট। ঠিকাছে, আমি তোকে সব বলছি। (থেমে) জেল যাওয়ার ব্যাপারটা আসলে শুধুই মিডিয়াকে দেখানো; আর কিছু না। আর কাকাই তো আছেই। তুই নিশ্চিন্তে তিন মাস কাটিয়ে আসবি। না তোর গায়ে কেউ হাত দেবে, না তোকে কোনো জেরা করবে। যেমন এখন খাওয়া-দাওয়া করে নিশ্চিন্ত আছিস, ওখানেও তেমনই থাকবি।”

“সব বুঝলাম, কিন্তু ড্যাড?”
“ঐটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। কিন্তু একটা কথা, তোর টাকা লাগবে, আমাকে কেন জানাসনি? এটা কেন করলি?”
আরিয়ান চোখ নামিয়ে আমতাআমতা করে বলে, “না, মা.. মানে… আর্জেন্ট লাগছিল, তোকে বলতেও ভয় করছিল, চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তাই কিছু না বুঝেই কীভাবে কি করে ফেললাম…”
কারান আরিয়ানের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “অরিজিনালি কাজটা তুই নিজের মাথা দিয়ে করেছিস? আমার বিশ্বাস হয় না। (থেমে) হাউএভার, এখন যা, শান্তির একটা ঘুম দে। কাল সবকিছু কনফেস করলেই হলো।”
আরিয়ান দীর্ঘ এক ঢোক গিলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।

সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে কারান প্রস্তুত হয়ে মিরার কাছে দোয়া নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। কারান অফিসে পা রাখতেই সবার মধ্যে অদ্ভুত এক উত্তেজনা তৈরি হলো। নরেন রায় এবং প্রেস মিডিয়ার সদস্যরা ইতোমধ্যেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এখন তাদের সমস্ত দৃষ্টি এক মাত্র কারানের দিকে।
কারানকে দেখে নরেন রায় চেয়ার থেকে উঠে এক অপদস্থ হাসিতে মুখের কোণ সেঁটে বলে, “We were all eagerly awaiting your arrival. So, how have you been, Mr. Karan Chowdhury?”
(অনুবাদ: “আমরা সবাই অধীর আগ্রহে আপনার আগমনের অপেক্ষায় ছিলাম। তা, আপনি কেমন আছেন, মিস্টার কারান চৌধুরি?”)

কারান মুখে মেকি হাসি ছড়িয়ে, দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দেয়, “আলহামদুলিল্লাহ, আজকে কিছুটা বেশিই ভালো আছি। তবে আপনাকে নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে, কারণ আপনার এই হাসির বেশিরভাগটা হয়ত একটু পরেই উড়ে যাবে।”
নরেন রায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “এতকিছুর পরেও আপনার আত্মবিশ্বাসের কথা না বললেই নয়।”
কারান শান্ত মুখাবয়বে, ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলে,
“Let’s cut to the chase then. (মিডিয়ার দিকে ফিরে) Are you all set with your cameras?”
মিডিয়ার সবাই একযোগে বলে উঠে, “স্যার, আপনি শুরু করতে পারেন। আমরা তো এই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিলাম।”

“তাহলে আপনাদের অপেক্ষার অবসান ঘটাই। আর মিস্টার নরেন রায়, আপনার জন্যও একটা চমক রয়েছে। (গলা উঁচিয়ে) আরিয়ান ভাই!” বলতেই আরিয়ান সবার সামনে পদার্পণ করে।
আরিয়ানকে দেখে নরেন রায়ের চোখ মুহূর্তেই বিস্ময়ে প্রশস্ত হয়ে ওঠে।
কারান আরিয়ানের কাছে গিয়ে গভীর কণ্ঠে বলে, “Bro, it’s time to reveal what you wanted to show.”

আরিয়ান প্রজেক্টরের স্ক্রিন চালু করে সিসিটিভির ফুটেজ দেখাতে শুরু করল। ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আরিয়ান গোপনে কে.ছি কোম্পানির নকশা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি বেআইনিভাবে নরেন রায়ের হাতে তুলে দিচ্ছে। কারান ঠান্ডা স্বরে বলল, “Look at this, this is just the beginning.”
এরপর আরিয়ান তার কাছে থাকা কিছু নথি তুলে ধরে বলল, “এগুলো দেখুন, সই করা কাগজপত্র, যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে নকশাগুলো নরেন রায়ই কিনেছিলেন। আর এই লেনদেনের রেকর্ড দেখুন, যেখানে তিনি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেছেন।”

কারান একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়ে বলে, “এখানে আপনারা স্পষ্টভাবে দেখবেন যে নরেন রায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, যা কোনো বৈধ চুক্তির ভিত্তিতে হয়নি।”
আরিয়ান আরো একটি ই-মেইল দেখিয়ে বলল, “এখানে নরেন রায় আমাকে স্পষ্টভাবে বলেছে, ‘আপনার ডিজাইনগুলি আমার কাছে এনে দিন, আমি সেগুলি নিয়ে কাজ করব। এসব শুধু আমাদের মধ্যেই থাকবে, বাইরে কেউ জানবে না।’”

এরপর আরিয়ান তার ল্যাপটপ থেকে একটি সার্ভার লগ ফাইল খুলে দেখায়, “এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, নরেন রায়ের আইপি অ্যাড্রেস থেকে কে.ছি কোম্পানির ডিজাইনগুলো ডাউনলোড করা হয়েছে।”
এখন কারান চোখে ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে নরেন রায়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে, কানের কাছে গিয়ে নীচু স্বরে বলে, “বোম্ব!”
নরেন রায়ের চেহারা মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং তার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যায়। মুখের ক্রূর হাসি এক লহমায় মিলিয়ে গিয়ে সে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

আরিয়ান একটি ফাইল বের করে বলে, “এখানে নরেন রায়ের সাথে আমার গোপন লেনদেনের পুরো ইতিহাস রয়েছে। এতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে যে উনি বেআইনি উপায়ে এসব ডিজাইন আমার কাছে চেয়েছেন এবং মূল্য পরিশোধ করেছেন।”
কারান হেসে বলল, “এবার সবকিছু স্পষ্ট। এখন কি বলবেন, মিস্টার রায়?”
নরেন রায় থতোমতো খেয়ে গলা কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, “মিথ্যা! এগুলো সব মিথ্যা! টু ব্রাদারস আর কন্সপায়ারিং অ্যাগেইনস্ট মি। ইট’স ইজি টু ক্রিয়েট থাউজ্যান্ডস অফ সাচ ভিডিওজ ইউজিং এআই!”
কারান ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসি ফুটিয়ে শান্তস্বরে জবাব দিল, “Then, are the documents fake as well?”

“হতেই পারে! কিন্তু এতে প্রমাণিত হয় না যে ডিজাইনগুলো কে.ছি টেক্সটাইল কোম্পানির।”
ততক্ষণে চারপাশে থাকা রিপোর্টাররা নরেন রায়কে ঘিরে ফেলেছে। প্রশ্নের ঝড় তার চারপাশের বাতাসকেও ভারী করে তুলছে। ক্যামেরার লেন্সগুলো তার প্রতি স্থির রাখা। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে আরো বিচলিত হয়ে পড়ে।
তখনই কারান রিপোর্টারদের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“প্লিজ কাম ডাউন এভরিওয়ান। ফাইন, লেটস সে অল অফ দিস ইজ আ লাই। বাট মিস্টার রায়, ইফ দ্যাটস দ্য কেস, দেন শো আস দ্য কালেকশন ফ্রম ইয়োর কোম্পানি। দেখান আপনার সৃষ্টিকে। যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আমি সবার সামনে আপনার কথাই মেনে নেব।”
কারানের কণ্ঠের আত্মবিশ্বাস নরেন রায়ের আত্মাকেও ধাক্কা দিল। তার কথার ভঙ্গি সহজ, অথচ তাতে লুকিয়ে আছে এক ধ্বংসাত্মক তীর। নরেন রায়ের চোখে-মুখে ধরা পড়ল অব্যক্ত আতঙ্ক।

তবে কারান এখানেই থামল না। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুনরায় বলল, “আপনি যদি এতটাই নিশ্চিত হন, তাহলে আপনার কোম্পানির ডিজাইনগুলো আমাদের আইনি ব্যবস্থার সামনে উপস্থাপন করুন। আদালত আপনাকে সেই ডিজাইনগুলোর মৌলিকতা প্রমাণ করার সুযোগ দেবে। আর আমি নিশ্চিত, আদালতই সত্যিটা বের করে আনবে।”
নরেন রায়ের চেহারায় শ্বাসরুদ্ধকর শিথিলতা ফুটে উঠে। কারানের কথায় তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু কারান আরো এক পা এগিয়ে গেল, “আর যদি ডিজাইনগুলো আসল হয়, তবে কেন আপনার কোম্পানির পেটেন্ট বা ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন নেই? যদি এগুলো আপনার প্রকৃত ডিজাইন হয়, তাহলে তো অবশ্যই সেগুলো রেজিস্ট্রেশন করা উচিত ছিল। তাছাড়া আপনি যেহেতু বলছেন যে এই ডিজাইনগুলো আপনার কোম্পানির, তাহলে আমি আশা করব যে আপনার কোম্পানি সেগুলো বাজারে প্রদর্শন করেছে। কেন আপনি সেগুলো আজ পর্যন্ত বাজারে উপস্থাপন করেননি?”
সবশেষে কারান ঠান্ডা মাথায় বলল, “আপনার ডিজাইনগুলোর উৎপত্তি হিস্ট্রি দেখান। ডিজাইনগুলো কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে তৈরি হয়েছে এবং কারা তার পেছনে ছিল? আপনি যদি সত্যিই এগুলো তৈরি করে থাকেন, তাহলে এসবের প্রমাণ আপনি সহজেই দিতে পারবেন।”

এই প্রশ্নগুলো ছিল একের পর এক তীরের মতো, যেগুলো নরেন রায়ের আত্মবিশ্বাসকে একে একে শূন্যে পরিণত করল। রিপোর্টারদের ক্যামেরাগুলো এবার তার মুখের প্রতিটি ইঞ্চি ধরল। এখন সে পুরোপুরি পরাজিত। কারানের প্রমাণ চাওয়ার এই কৌশল নিঃসন্দেহে তাকে দারুণভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছে।
নরেন রায় এবার কি করবে বুঝে না পেয়ে ক্ষীণ হাসি দিয়ে আরিয়ানকে ফাঁসানোর চেষ্টা করল।
গভীর নিশ্বাস নিয়ে সে বলল, “ইমসে মেরি কেয়া গালতি হ্যায়? যাঁহা আপকা খুদ কা ভাই হি কোম্পানি কে সাথ গাদ্দারি কড় চুকা হ্যায়!”
কিন্তু কারান কোনো উত্তেজনা ছাড়াই ঠান্ডা মাথায় বলল, “He will face the punishment, but what will you do?”

এরপর ইশারায় পুলিশের দিকে আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করল। পুলিশ এসে আরিয়ানকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। নরেন রায় সেদিকে এক পলকও না তাকিয়ে, দ্রুত মুখ লুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সে বুঝতে পারল, তার পালানোর পথ বন্ধ, কারণ ইতোমধ্যে সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ফেলেছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে তার চিন্তা ও স্নায়ু একাকার হয়ে গেল। কোন দিকে পা ফেলবে, কিছুই বুঝতে পারল না।
কিছু ঘণ্টার মধ্যে রাজলক্ষ্মী টেক্সটাইল লিমিটেড কোম্পানি মাটির সাথে মিশে গেল এবং সারা দেশের সংবাদ চ্যানেলগুলোতে উঠে এল আর.টি.এল কোম্পানির বিরুদ্ধে ঝড় তোলানো প্রতিবেদন। এরপর একে একে সবাই কথা বলতে শুরু করল কে.ছি টেক্সটাইল কোম্পানির পক্ষে।

“কারান স্যারের কাছে অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই, এটা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। নিজের ভাইকেও ছেড়ে দেননি!”
সব জায়গায় শুধু একই কথা শোনা গেল, “কারান চৌধুরির বুদ্ধি, তার কৌশল, তার দূরদর্শিতা; অতুলনীয়।”
নরেন রায়ের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আর কারান চৌধুরীর কৌশলে কে.ছি টেক্সটাইলের শেয়ারবাজার আকাশচুম্বী হয়ে উঠল। কারানের নিখুঁত কৌশল এবং আত্মবিশ্বাসের ফলস্বরূপ, ব্যবসায়ী মহল ও শেয়ারহোল্ডাররা তার প্রতি নতুন আস্থা ও সম্মান প্রকাশ করেছে।

দুই দিন পর কারান আলবার্ট স্টিফের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে বসলো। মিটিংয়ের প্রথম পর্বে, কারানের পিএ প্রজেক্টরের মাধ্যমে পুরো ডিজাইন ও কালেকশন বিশদভাবে উপস্থাপন করলো। আলবার্ট স্টিফ সমস্ত উপস্থাপনা পর্যালোচনা করে এবং শর্তাবলি নিয়ে গভীর আলোচনা করে, অবশেষে কে.ছি টেক্সটাইলের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সম্মত হলো।
আলবার্ট হেসে বললেন, “These are extraordinary, Karan. Your designs and strategies have truly opened up a new horizon.”
(অনুবাদ : “এগুলি অসাধারণ, কারান। আপনার ডিজাইন এবং কৌশল সত্যিই একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছ।”)

কারান হাসল, “Thank you, Mr Albert. But it’s not just the designs, the foundation of business and the right planning are equally important. I’m confident this deal will be profitable for both of us.”
(অনুবাদ: ধন্যবাদ, মিস্টার আলবার্ট। তবে শুধু ডিজাইন নয়, ব্যবসার ভিত্তি এবং সঠিক পরিকল্পনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিশ্চিত যে এই চুক্তিটি আমাদের উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে।”)
এরপর উভয়ের মধ্যে পেশাদারি করমর্দন হলো এবং পরে চুক্তি পত্রে সাইন করে ডিলটি নিশ্চিত করা হলো।
৭৫০ কোটির এই বিশাল ডিল নিশ্চিত হওয়ার পর, কারান উল্লসিত হয়ে উঠল। এটি শুধুমাত্র তার কৌশল এবং নেতৃত্বের সফলতার প্রমাণ নয় বরং তার কঠোর পরিশ্রম এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। তবে এই চুক্তি বাস্তবায়নে তাকে আরো বহু পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। যেগুলোর মধ্যে শর্তাবলি মেনে চলা, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ডেলিভারি সময়সূচি অন্তর্ভুক্ত।

কারান বাসায় প্রবেশ করে পোশাক পরিবর্তন না করেই তার পেশীবহুল বাহু দিয়ে মিরাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরল। দীর্ঘ সময় তাকে বুকের গভীরে জড়িয়ে রাখলো। মিরা হাসিমুখে একটু নরম গলায় বলল, “কনফার্ম হয়ে গেছে, তাই না?”
কারান চোখ বন্ধ করে গভীর স্বরে প্রতিউত্তর করল, “হুম।”
মিরা হেসে বলে, “বুঝলাম, আজকে আপনি অনেক খুশি। তা আর কতক্ষণ?”
“সারাজীবন। সারাজীবন তোমাকে আমার বুকের মধ্যে আগলে রাখবো।”
“ঠিক আছে, এখন ড্রেস চেঞ্জ করে খেয়ে নিন। গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে, তাও নাক দিয়ে শুকে যাচ্ছি।”
কারান মলিন হেসে বলে, “মিরা, তোমার কি সবসময়ই আমার রোমান্সে পানি ঢেলে দিতে ভালো লাগে?”
মিরা হেসে একটু তাচ্ছিল্যপূর্ণ কণ্ঠে বলে, “হ্যাঁ, অনেক মজা। এখন চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন।”

রাতে বিছানায় শুয়ে কারান ফোন স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ মিরার দিকে দৃষ্টি দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিরা নিজের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মাখছে। এই দৃশ্য দেখে কারান মৃদু হেসে বলল, “আমার বউ এমনিতেই চাঁদের টুকরো। ময়েশ্চারাইজার দাও ভালো কথা, তবে উলটো পালটা কিছু দিয়ে আবার চেহারার বারোটা বাজিও না।”
মিরা কারানের কথায় আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর বিছানার পাশে এসে তার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
“তেমন কিছু না বাবা। এইটা না দিলে চেহারার বারোটা না, ২৪টা বেজে যাবে।”
কারান কিঞ্চিৎ হেসে মিরার দিকে গভীর চোখে তাকাল। তারপর, “তাই?” বলেই হঠাৎ হেঁচকা টানে মিরাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।

এবার কারান মিরার উপর উঠে এসে তার পুরো শরীরের ভার দিয়ে মিরার মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ল। কারানের চোখে রোমান্টিক আগুনের ঝলক আর কণ্ঠে সম্মোহনী সুর, “হাউ ডাজ ইট ফিল, বেইবি?”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে মৃদু হেসে বলল, “আপনার কাছে আসা তো দেখছি বেশ বিপজ্জনক!”
কারান হাসল। অর্থাৎ এ কথাটি তাকে আরো তৃপ্তি দিয়েছে।
“হুম, সেটা তো তোমার ক্ষেত্রে সবসময়ই। আমার না এখন অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করছে, মিরা। আপনি শুধু একবার পারমিশন দিন, বেগম।”
মিরা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে ঈষৎ হাসতে লাগল। কারান ভ্রূ জাগিয়ে হেসে বলে, “ওলে বাবা লে! আমার বউয়ের গাল লজ্জায় ব্লাশ করছে।”

এবার মিরার লজ্জা যেন সীমা অতিক্রম করে। চারপাশে কোথাও মুখ লুকানোর উপায় না দেখে, শেষমেশ কারানের প্রশস্ত বক্ষের উষ্ণ আশ্রয়ে নিজের মুখ লুকিয়ে নিল। তার নিঃসংশয় ভঙ্গি কারানের হৃদয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দিল। কারান মিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একরকম পরিতৃপ্তির নিশ্বাস ফেলল।
ঠোঁটে স্বচ্ছ হাসি ফুটিয়ে সে বলল, “এটাও মন্দ নয়। বরং পরেরবার থেকে এমনটাই করবে। যখনই লজ্জা পাবে, সরাসরি আমার বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দিবে, মহারানি।”

মিরা আরো লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে কারানের শক্তপোক্ত বুকের মাঝে মুখ চেপে রাখল। তার সমস্ত লাজুকতা কারানের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে ঠাঁই নিল।
কারান খানিক চুপ থেকে গলায় নেশার ছোঁয়া এনে বলল,
“জান, আরেকটা কাজ করতে পারি। শার্টের বোতামগুলো খুলে দেই, তাহলে তুমি আরো গভীরভাবে আমার বুকে মিশে যেতে পারবে।”

Tell me who I am part 11

মিরা থমকে ঢোক গিললো। লজ্জায় রক্তিম হয়ে ওঠা গালের সঙ্গে, চোখে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কারানের মুখাবয়বের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল। তার স্বামীর এমন বেপরোয়া কথাগুলো তার বুকের ধুকপুকানি আরো বাড়িয়ে দিল।
কারান হেসে ওঠে। কারণ সে মিরার প্রতিটি ভাবনা বুঝতে পেরেছে।
“আরে মুখ তুলতে গেলে কেন? আমার বউ তো একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। চলো চলো, মুখ লুকাও,” বলে ডান হাত দিয়ে মিরার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে, অন্য হাতটি ধীরে ধীরে মিরার পিঠের নিচে ঘুরিয়ে নিয়ে তাকে নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরল। অর্থাৎ মিরার অস্তিত্ব যেন তার শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কারান বলল, “মিরা, বলো না, তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

Tell me who I am part 13