Tell me who I am part 32

Tell me who I am part 32
আয়সা ইসলাম মনি

সন্ধ্যার আকাশে মেঘের ঘনঘটা। দূরে কোথাও বিজলির আলো চকিতে দেখা যায়। ঘরের জানালা দিয়ে আসা ম্লান আলো আর বাইরে ঝিরঝিরে হাওয়ার শব্দে সন্ধ্যাটি আরও গভীর মনে হয়। এসবের মধ্যেই শুভ্র বিষণ্ন চোখে গিটারটি হাতে নিয়ে সুর তুলল। সেই মায়াবী কণ্ঠে ভেসে এল-
“দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব।
বাঁধনবিহীন সে যে বাঁধন-অকারণ
মায়াবন বিহারিণী।”
এরপর গিটারের তারে শেষবার আঙুল ছুঁয়ে গিটারটি পাশে রেখে গভীর শূন্যতায় তাকিয়ে রইল। খানিক পর ভারী কণ্ঠে সে বলল, “তুমি হয়ত আমার জন্য সৃষ্টি হওনি, মিস ক্যালিস্তা। (থেমে) তবুও তোমার স্মৃতির ভার মনে গেঁথে রয়েছে, যা চাইলেও মুছে ফেলা সম্ভব না। কিন্তু না, তোমাকে অভিশাপ দিতে পারব না। ভিতরটা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও, তোমার জন্য একটাই প্রার্থনা থাকবে; সুখে থেকো।”

ইলিজা তাদের তিনজনকে দেখেই আর কিছু না ভেবে পাগলের মতো দৌড়াতে শুরু করল। পিছন থেকে ভেসে আসা তাদের ভয়ানক হাসি তার রক্ত হিম করে দিচ্ছে। সে দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে, তবুও পথ যেন ফুরায় না। আশপাশে কোনো মানুষের দেখা নেই, এমনকি একটি কুকুর বা বিড়ালও নেই। ভয় আর ক্লান্তিতে কাঁদতে কাঁদতে ইলিজা ফিসফিস করে বলল, “আল্লাহ, আমাকে বাঁচান… আল্লাহ বাঁচান আমাকে।”
কিন্তু তার পাগুলো ভারি হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে মাটি তাকে আটকে ধরেছে। ঠিকভাবে এগোতে পারছে না। অনেকটা দূর যাওয়ার পর ইলিজা চারপাশে তাকাল। পরিবেশ আরও নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গতার ভয় তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। থামার উপায় নেই। তারা যে আসছে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইলিজা আবার দৌড় শুরু করল। ভয়ে আর ক্লান্তিতে তার প্রাণ যেন এখানেই বেরিয়ে আসতে চায়। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “হে আল্লাহ, আজ বাঁচিয়ে নাও। আর কখনো গাড়ি ছাড়া বের হবো না।”
এই কথা বলতে বলতেই তার পা হঠাৎ পিচ্ছিল মাটিতে হড়কে পড়ে গেল। পরে গিয়ে তার জুতো ছিঁড়ে গেছে। কিন্তু জুতোর কথা না ভেবে খালি পায়েই দৌড় লাগাল। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখল; তারা সত্যিই আসছে! কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে সে জঙ্গলের দিকে ছুটল। পায়ের তলায় কাঁটা-ফোটা বেঁধে রক্তাক্ত হলেও থামার উপায় নেই। তার একমাত্র লক্ষ্য; বাঁচতে হবে!

ইলিজার শরীর প্রায় অবশ হয়ে আসছে। দম ফুরিয়ে গেছে, পায়ের পেশিগুলো আর এক মুহূর্তও চলতে রাজি নয়। তবুও ভেতরের অব্যক্ত আতঙ্ক তাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে। কিছুক্ষণ বনজঙ্গল পেরিয়ে সে বুঝতে পারলো, এই অন্ধকার বনের যত গভীরে প্রবেশ করবে, ততই তার মৃত্যু এগিয়ে আসবে। কারণ সামনে কেবল গাঢ় অন্ধকার আর বনাঞ্চল। হাত বাড়িয়ে নিজের আঙুলও দেখা যায় না।
পরে উলটো দিকে ছুটতে গিয়ে দেখতে পেল, তারা ঠিক তার কাছাকাছি। ইলিজা বুঝতে পারল, তারা ইচ্ছে করেই তাকে ধরে ফেলছে না। অর্থাৎ এটুকু খেলা তাদের নির্মম আনন্দ। ইলিজার শরীর থেকে সমস্ত শক্তি হারিয়ে যেতে চাইছে, হাত-পা ঘামে ভিজে একেবারে অবশ। কিন্তু থেমে থাকার উপায় নেই। সে আবার রাস্তায় ছুটল।
হঠাৎ পায়ের নিচে কুচো ইটের ফলা গেঁথে গেল। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়ে ইলিজা মাটিতে বসে পড়ল। ডান পা উঁচিয়ে দেখতে পেল, রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। সে কাঁদতে কাঁদতে ফিসফিস করে বলল, “আল্লাহ, আমাকে বাঁচাও।”
ঠিক তখনই সামনে একটা ছায়া দুলে উঠল। ছায়াটা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে পড়ল ইলিজার শরীরের ওপর। ইলিজা মুহূর্তেই বুঝে গেল; এ যাত্রা আর নিস্তার নেই। ভয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠল, “পি… প্লিজ, আমাকে মা… মারবেন না। হে আল্লাহ, আমাকে বাঁচাও!”

“মিস ইলি।”
শীতল অথচ গভীর পুরুষালি কণ্ঠস্বর বাতাসে ভেসে এলো। চমকে উঠে চোখ খুলতেই ইলিজার দৃষ্টিতে ধরা পড়ল কাব্য। আর এটাই এই অন্ধকারে একমাত্র আলোর অস্তিত্ব। মুহূর্তে সে সমস্ত শক্তি দিয়ে কেঁদে উঠল, মনে হলো জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে।
কাব্য ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করল, “কি হয়ে…”
কথা শেষ করার আগেই ইলিজা উঠে কাব্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার কান্নার বাধ ভেঙে গেল। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। এদিকে কাব্য পুরোপুরি হতভম্ব। ইলিজা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেও কাব্য নিজে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। তার চোখে-মুখে একরাশ বিস্ময়।
কিছু বলার জন্য সে ঠোঁট খুলল, কিন্তু তার আগেই ইলিজা ভাঙা গলায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠল, “আমাকে বাঁচান… প্লিজ প্লিজ। ওরা… ওরা আমাকে মেরে ফেলবে!”

কাব্য বিস্ময়ে চোখ বড় করে বলল, “কি? কি বলছেন আপনি? কে মে*রে ফেলবে?”
ইলিজা মাথা তুলে অসহায় কণ্ঠে বলল, “না না… চলুন, তাড়াতাড়ি চলুন। ওরা মেরে ফেলবে।”
এই বলে সে আবার কাঁদতে শুরু করল। কাব্য অস্থির হয়ে বলল, “শান্ত হন, প্লিজ। কে মা*রবে? কী হয়েছে? একটু পরিষ্কার করে বলুন।”
“ওরা… ওরা…” ইলিজা কথাগুলো বলতে বলতে পেছনে তাকাল।
আর মুহূর্তেই চিৎকার করে উঠল, “ওরা মে*রে ফেলবে, কাব্য। ওরা আমাকে…”
তার ভয়ে কাঁপতে থাকা আঙুল পিছনের দিকে নির্দেশ করতেই কাব্যও চোখ ঘুরিয়ে দেখল। অন্ধকারে তিনটি বিশাল অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে অস্ত্রের ঠান্ডা ঝলক, আর পেশিবহুল দেহের ভয়ানক উপস্থিতি দেখে কাব্যের শরীর শীতল হয়ে গেল। সময় নষ্ট না করে সে ইলিজার হাত ধরে ছুটতে শুরু করল। দৌড়ানোর মাঝেই কাব্য দ্রুত জিজ্ঞেস করল, “এরা কারা? কেন আপনার পেছনে লেগেছে?”

ইলিজা হাঁপাতে হাঁপাতে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি জানি না… আমি কিচ্ছু জানি না। আমি ওদের চিনি না।”
তারা তখনো কয়েক মিটার দূরে, কিন্তু তিনজনের মধ্যে একজন ছুরি চালানোর দক্ষতায় নিখুঁত। দূর থেকেই সে ছুরিটি ছুড়ে মারল কাব্যের পায়ের দিকে।
ছুরিটি সোজা গিয়ে কাব্যের গোড়ালিতে ঢুকে পড়ল। তীক্ষ্ণ ব্যথায় কাব্য আর্তনাদ করে উঠল, “আআআ… মা!”
তবুও সে থামল না। ক্ষণকাল পা চেপে ধরে রেখে আবার ইলিজার হাত শক্ত করে ধরে দৌড়াতে লাগল। তার চোখে তখন একটাই লক্ষ্য; যেভাবেই হোক, ইলিজাকে নিরাপদে রাখা।
ইলিজা চোখ ভরা জল নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল, “আপনার পা… কাব্য, র… র*ক্ত…”
কাব্য দ্রুত দৃঢ় গলায় বলল, “চুপ করুন। পালান। আমার শক্তি আছে, কিন্তু গন্ডারের মতো এদের সঙ্গে লড়াই করার মতো নয়।”

কিন্তু ইলিজার পা ততক্ষণে অসাড় হয়ে এসেছে। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে সে মাটিতে বসে পড়ল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “আমি আর পারছি না। আর দৌড়াতে পারব না।”
কাব্য আর এক মুহূর্তও দেরি না করে তাকে কোলে তুলে নিল। সাধারণ সময়ে এই পরিস্থিতিতে ইলিজা হয়ত তীব্র লজ্জায় মুখ ঢাকত বা রাগে বিস্ফোরণ ঘটাত। কাব্যও হয়ত কখনো এমন কাজ করার সাহস পেত না। কিন্তু এখন সময়ের দাবি আলাদা। বাঁচার তাড়নায় এই ব্যতিক্রম স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইলিজা কাব্যের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পরিস্থিতির গভীরতায় তাদের লজ্জা বা অস্বস্তির জায়গা নেই। মাঝে মাঝে সে পেছনে তাকিয়ে দেখে, আর কাব্য ছুটে চলে। কিন্তু তার নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠল। পায়ের গভীর ক্ষত তাকে বাধা দিচ্ছে।

অবশেষে কাব্য আর পারল না। ইলিজাকে নিচে নামিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বলল, “আসুন, ধীরে ধীরে হাঁটি।”
রাস্তা ছেড়ে দুজনে বনের ভেতরে গিয়ে একটি ঘন ঝোপের আড়ালে লুকাল। ইলিজা কাঁপতে কাঁপতে বলল, “ওরা… ওরা তো ধরে ফেলবে, কাব্য।”
কাব্য হাত তুলে ইশারায় তাকে থামাল। কাছে এসে ইলিজার মুখ চেপে ধরে বলল, “একটা শব্দও করবেন না। নিশ্বাস নিন, তবে যতটা কম শব্দে সম্ভব।”
ইলিজা থেমে গেল। কাব্য ততক্ষণে পকেট থেকে রুমাল বের করে দাঁতে কামড়াল। এরপর ক্ষতবিক্ষত পা থেকে ছুরিটি টেনে বের করল। রুমাল না থাকলে হয়ত তার আর্তনাদ বনের নীরবতা চিরে দিত। ব্যথার তীব্রতা তার মুখে ছাপ ফেলে গেল, কিন্তু সে মুখে শব্দ হতে দিল না।

এদিকে তাদের শত্রুরা বনের মধ্যে পা রেখেছে। ঝোপঝাড়ের শব্দে যেন নীরবতা আরও গাঢ় হয়ে উঠল। দুজনেই নিশ্বাস আটকে অপেক্ষা করতে লাগল; এ মুহূর্তে একটুখানি শব্দও জীবনের সমাপ্তি টেনে আনতে পারে। একজন গভীর ভারী কণ্ঠে বলল, “ওরা দুজন কোথায় গেল?”
ডার্ক ঠোঁটে কুৎসিত হাসি এনে উত্তর দিল, “চিন্তা করিস না, ব্লাডশেড। আজ অবধি আমাদের হাত থেকে কোনো শিকার ছাড়া পায়নি।”
অবস্কিউর ঠোঁটে ব্যঙ্গাত্মক এক চিলতে হাসি এনে যোগ করল, “২০০৭ সালের সেই মেয়েটাও না। ওকেও সেদিন ঠিক জায়গামতো পৌঁছে দিয়েছি।”
এসব কথা শুনে ইলিজার গলা বুজে আসতে শুরু করল। চোখের জল বাঁধ ভেঙে নামতে চাইল। কিন্তু কান্নার বেগ বাড়ার আগেই কাব্য তার মুখ চেপে ধরে, বুকের সঙ্গে শক্ত করে চেপে রাখল। তবুও ইলিজার কাঁপা শরীর আর অসহায় ফোঁপানি থামছে না।

অবস্থা বেগতিক দেখে কাব্য দ্রুত ইলিজার গলা থেকে ওড়নাটা খুলে ইলিজার মুখ শক্ত করে বেঁধে দিল। এরপর নিজের ঠোঁটের ওপর তর্জনী রেখে তাকে নীরব থাকার ইশারা করল। ইলিজা এবার তার শরীর গুটিয়ে কাব্যের বুকে লুকিয়ে রইল। তীব্র আতঙ্কে কাব্যের টিশার্ট খামচে ধরল এমনভাবে যেন কাপড় ছিঁড়ে যাবে।
কাব্যের মুখেও ভয়ের ছায়া। তার মনে হতে লাগল, মৃ*ত্যু যেন তাদের জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে OWL গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের খুঁজতে বনের ঘন ঝোপঝাড় তন্নতন্ন করে অনুসন্ধান করছে। তাদের পায়ের শব্দগুলো বুকের ধুকপুকানি বাড়িয়ে দিল।
এরই মধ্যে ডার্ক তাদের দিকেই এগিয়ে এলো। ইলিজা আর কাব্য, দুজনেই পায়ের ধ্বনি শুনতে পেল। মুহূর্তে ইলিজার শরীর ভয়ে শক্ত হয়ে গেল। তার হৃৎপিণ্ডও যেন থেমে যাচ্ছে।
তখনই অন্য দিক থেকে অবস্কিউরের কণ্ঠ শোনা গেল, “ডার্ক, ওরা এখানে নেই।”
ডার্কের মনোযোগ সরে গেল। তবু তার মনে হলো, একবার এদিকটা দেখে যাওয়া উচিত।
সাথে সাথে ঝোপ সরিয়ে দেখল, কিন্তু কিছু না পেয়ে সে আবার অন্যদিকে হাঁটা দিল। অর্থাৎ এরই মধ্যে কাব্য ইলিজাকে নিয়ে আরেক প্রান্তে সরে গেছে। ব্লাডশেড একটি বড় গাছে তীক্ষ্ণ কো*প মে*রে বলল, “এটাই প্রথমবার, আমাদের শিকার হাতছাড়া হলো।”

অবস্কিউর তাচ্ছিল্যের হাসি ফেলে বলল, “উঁহুঁ, OWL এর হাত থেকে আজ পর্যন্ত কেউ পালাতে পারেনি। ওকেও ঠিক খুঁজে বের করব। কিন্তু এখন চল, সময় অপচয় করার কোনো মানে নেই।”
এই কথা বলেই তারা কয়েক কদম এগিয়ে থেমে গেল। তাদের আচরণে বোঝা গেল, এটা ছিল তাদের সুপরিকল্পিত ফাঁদ। তারা অপেক্ষা করতে লাগল, যদি শিকার লুকিয়ে থেকে কোনো শব্দ করে ফেলে, তখনই ধরে ফেলবে।
কাব্য আস্তেধীরে ইলিজার মুখ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে দিল। ইলিজা ফিসফিসে কণ্ঠে ভয়ার্তভাবে বলল, “ওরা বোধহয় চলে গেছে। এবার চলুন।”
কিন্তু কাব্য তৎক্ষণাৎ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলল, “না, চুপ।”
তার কান আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। কাব্য বুঝল, কিছুদূর যাওয়ার পর পায়ের আওয়াজ হঠাৎ থেমে গেছে। সম্ভবত তারা থেমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ যদি সত্যিই তারা চলে যেত, তবে পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে দূরে মিলিয়ে যাওয়ার কথা।

এরপরও চারপাশ গভীরভাবে খতিয়ে দেখে OWL দলের সদস্যরা ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করল। যদিও তাদের অদৃশ্য হতে দেখার পরেও কাব্য পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারল না। তাই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করল ঝোপের আড়ালে।
যখন আশপাশ একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে এলো, কাব্য ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াল। ইলিজাও দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু হাতের ইশারায় কাব্য তাকে থামিয়ে দিল। মৃদু স্বরে কাব্য বলল, “আপনি এখানেই থাকুন। আমি আগে গিয়ে দেখছি ওরা সত্যিই গেছে কি না। যদি আমি ফিরে না আসি, ধরে নিবেন আমি আর নেই।”
এই কথা বলেই কাব্য সাবধানে সামনে পা বাড়াতে শুরু করল। কিন্তু তখনই ইলিজা জড়সড় হয়ে কাব্যের পা জাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “আপনার যদি কিছু হয়ে যায়, আমি কিন্তু মরে যাব। প্লিজ, আমিও আপনার সঙ্গে যেতে চাই।”

কাব্য নীচু হয়ে বসে ইলিজার কাঁধে হাত রাখল। শান্ত স্বরে বলল, “এখন আবেগ দেখানোর সময় নয়, মিস ইলি। আপনি এখানেই থাকুন। ইন শা আল্লাহ কিছু হবে না। আপনি শুধু দোয়া করতে থাকুন।”
কথা শেষ করে কাব্য জোর করেই ইলিজার হাত সরিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। ইলিজা হতাশ ও বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে গুটিসুটি মেরে হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে রইল। চারপাশের নিস্তব্ধতা তার শ্বাসকেও ভারী করে তুলছে।
বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল, তবুও কাব্যের কোনো চিহ্ন দেখা গেল না। আশঙ্কা আর আতঙ্ক একে অন্যকে পেরিয়ে ইলিজার মনে ভয়াবহ অস্থিরতা ছড়িয়ে দিল। এদিকে রাত গড়িয়ে সাড়ে দশটার বেশি বেজে গেছে।

অন্যদিকে মমতাজ ও আব্দুর রহমানের মাথায় বিপদঘণ্টা বাজছে। মমতাজ তো প্রতিটি মুহূর্তে তার বুকের মধ্যে অস্থিরতা নিয়ে চোখের জল ফেলেই চলেছেন। যে মেয়ে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে, সেই মেয়ের আজ কোথাও দেখা নেই। স্নেহার বাসাতেও ফোন করা হয়েছে, কিন্তু কোনো খবর মেলেনি। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মমতাজ ভেঙে পড়া গলায় বললেন, “ওগো, চলো না, থানায় যাই। আমি আর থাকতে পারছি না। আমার মাথা আর কাজ করছে না।”

আব্দুর রহমানও দ্রুত উঠে বললেন, “হ্যাঁ, তাই তো। আর অপেক্ষা করা মানায় না।”
ঠিক তখনই দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজে মমতাজ ইলিজাকে ভেবে খুশিমনে দৌড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ফেলেন। কিন্তু দরজা খুলেই দেখেন সামনে স্নেহার বাবা-মা। স্নেহার মা চোখে অশ্রু নিয়ে মমতাজের বুকে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে ফেললেন। স্নেহার বাবা আব্দুর রহমানের হাত ধরে বললেন, “ভাই, মেয়েগুলো কোথায় চলে গেল? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কী করতে হবে তাও জানি না।”

আব্দুর রহমান বললেন, “চলুন ভাই, দ্রুত থানায় যাই। জিডি করতে হবে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না।”
তারপর তিনি পা বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। মনে হলো, ইসহাকের কাছ থেকে বিষয়টা জেনে নেওয়া জরুরি। আসাদ চৌধুরীকে ফোন করে বললেন, “হ্যাঁ, আসাদ।”
ওদিক থেকে আসাদ হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, “কি হে, আব্দুর রহমান? খবর কি?”
“খবর পরে বলব। আমাকে ইসহাকের নাম্বারটা দে। মিসিং রিপোর্ট করতে হবে। আমার দুই মেয়ে, স্নেহা আর মাহিমাকে সন্ধ্যা থেকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।”
আসাদ কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললেন, “কি বলছিস! এ তো চিন্তার বিষয়। তবে শোন, দুই দিন না হলে মিসিং রিপোর্ট করা যায় না। আমি ইসহাকের সাথে কথা বলছি। তুই একটা কাজ কর, আজ রাতটা অপেক্ষা কর, হয়ত ওরা ফিরে আসবে।”
মমতাজ কাঁদতে কাঁদতে বলে ফেললেন, “কি বললো ভাই?”
আব্দুর রহমান কল কেটে দিয়ে সঙ্গিনীর দিকে চোখ রেখে বললেন, “আজকের রাতটা অপেক্ষা করতে বললো।”

এদিকে ইলিজা দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল মুছতে শুরু করল। তার অপেক্ষার সময় একে একে খসে পড়ছে অথচ কাব্যের কোনো খবর নেই। তার কাঁপানো শরীর থেকে কান্নার শব্দ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। তখনই কিছুটা দূরে একটি মিষ্টি পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে এলো, “ও ইলিজা…”
শব্দগুলো শুনেই ইলিজা এক দৌড়ে কাব্যের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, অশ্রুসমৃদ্ধ কণ্ঠে বলে, “আপনি এমন কেন? এতক্ষণ আমাকে অপেক্ষা করালেন কেন?”
কাব্য তার কাঁধে এক হাত রেখে শান্তস্বরে উত্তর দিল, “সরি, মিস ইলি। এই বনটা অত্যন্ত রহস্যময় যেন এক গোলকধাঁধা। পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম, বারবার একে অপরের সাথে মেলানো জায়গায় ফিরে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত আপনার কাছে ফিরে আসার পথ পেলাম, আর বের হওয়ার পথও শনাক্ত করে এসেছি। এখন চলুন।”
এবার কাব্য ও ইলিজা ধীরে ধীরে বনের অন্ধকার রাস্তা পেরিয়ে সেই পার্কে পৌঁছাল। পার্কে কয়েকজন মানুষজন দেখতে পেয়ে, অবশেষে দুজনেই এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ইলিজা চোখ বন্ধ করে বলল, “থ্যাংক ইউ, আল্লাহ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

তারপর কণ্ঠের গম্ভীরতা বাড়িয়ে, শ্বাসের সাথে গলার আওয়াজ স্পষ্ট করে বলল, “অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি না থাকলে…”
এর মধ্যেই ইলিজার চোখে গভীর আতঙ্ক দেখা দিল। সে আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলল, “সে..সেনু? সেনু…”
কাব্য ভ্রূ কুঁচকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, “সেনু কে?”
“স্নেহা। আমার সাথে যে থাকে। ও কোথায়?”
কাব্য মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “কই, আমি তো আপনার সাথে কাউকেই দেখলাম না।”
এবার ইলিজা চোখের জল মুছতে মুছতে দুঃখ ও শঙ্কায় কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ওকে নিশ্চয়ই ওরা নিয়ে গেছে। সেনু…”

“আপনি কাঁদবেন না। এখন বাসায় চলুন, কাল থানায় গিয়ে রিপোর্ট করা যাবে। চলুন, ইলিজা।”
এরপর ইলিজা বাসায় ফিরলে, মমতাজের কান্না থামে না, তার সাথে বকাঝকার শব্দও অবিরাম। অন্যদিকে কাব্য নিশ্চুপ হয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। বাড়ির সবাই ইলিজাকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, কাব্য কারোর নজরেই পড়ে না। এক সময় চুপচাপ দরজা থেকে বেরিয়ে যায়।
স্নেহার মা ইলিজার উপস্থিতি দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও, স্নেহার অনুপস্থিতি তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
সে দ্রুত ইলিজার কাছে এসে প্রশ্ন করল, “স্নেহা কোথায় রে, মা?”
ইলিজা চোখের জল মুছে, সন্ধ্যার পর থেকে ঘটিত সমস্ত বিবরণ খুলে বলল। সব শুনে স্নেহার মা স্তব্ধ হয়ে মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।

তারান্নুমের তীব্র চিৎকার শুনে, কারান তড়িঘড়ি করে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে, তরু? মিরা কোথায়?”
তারান্নুম প্রায় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, “ভা… ভাবিরে… ভাবিরে ভূত টাইনা নিয়া গেছে, ভাই। এইহানে ভূত আছে। একটা র.. রক্তাক্ত হাত…”
কারান বিরক্তির রেষ দেখিয়ে বলল, “একদম চুপ কর। কিসব আজেবাজে কথা বলছিস? কোথায় নিয়ে গেছে?”
“ওই… ওই মাটির নিচে।”
কারান দ্রুত সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে একটা গভীর গর্ত দেখতে পেল।
অন্যদিকে নিচে মিরার চোখে পড়ল এক ভয়াবহ দৃশ্য; একটি দুর্গন্ধময়, প্রায় ১৩ বা ১৪ বছরের একটি ছেলের পুরো শরীরে সূচের দাগ। তার হাতের মাংস কামড়ে কামড়ে খাওয়া, তার পেটের এক পাশের মাংসপেশির ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখা যাচ্ছে। সেখানে একটি কিডনি নেই, সেই শূন্যস্থান থেকে ক্রমাগত রক্ত ঝরছে। তার চেহারা ক্ষতচিহ্নে ভরা।

এই ছেলেটিই মিরার পা টেনে মাটির নিচে নিয়ে এসেছিল। অন্য কেউ হলে এমন ভয়াবহ অমানবীয় অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই চেতনা হারাত, কিন্তু মিরা তো চোখের সামনে নিষ্ঠুরতম ধর্ষ*ণ ঘটতে দেখেছিল। তাই যদিও তার শরীরের মধ্যে তীব্র ভয় ছুটে চলে, কিন্তু বাইরে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ছেলেটি কষ্টের সঙ্গে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে আওড়ে উঠল, “আ… আমারে বাঁচান, আপা। ওরা… ওরা আমারে মাইরা ফেলবো। বাঁচান…আপা।”
এদিকে কারান গভীরভাবে ভাবতে থাকলো। তারপর তারান্নুমকে গম্ভীরভাবে বলল, “তরু, তুই বাড়িতে যা। এসব কিছু বাড়িতে গিয়ে বলিস না, সবাই চিন্তা করবে। আমি মিরাকে নিয়ে আসছি।”
তারান্নুম ভয়ের সঙ্গেই কাঁপতে কাঁপতে বলল, “ভাই, সাবধানে।”
“হুম, তুই যা,” বলে কারান তারান্নুমকে পাঠিয়ে দিল।
তারান্নুম চলে গেলে, কারান ধীরে ধীরে মাটির দিকে ঝুঁকে নিচে নেমে এলো। ছেলেটির দুর্বিষহ অবস্থা দেখে তার চোখ বড় হয়ে গেল। মিরা কারানকে দেখতেই দ্রুত তার দিকে ঝাঁপিয়ে পরে সিক্ত কণ্ঠে বলল, “ওর… ওর এই অবস্থা। কারান, আমি…আমি আর তাকাতে পারছি না।”
কারান মিরাকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে শান্ত কণ্ঠে বলল,

“তোমার তাকানোর দরকার নেই।”
কিন্তু ছেলেটি কারানকে দেখে ভয় পেয়ে গুটিয়ে গিয়ে বলল,
“আমারে মা*রবেন না… ছাইড়া দেন, দয়া কইরা ছাইড়া দেন… আমি ছাড়া আমার মায়ের কেউ নাই… মারবেন না…” বলতে বলতে ছেলেটি বিরাট কান্নায় ভেঙে পড়ল।
তার শরীরের অবস্থা এবং তার কাঁদতে কাঁদতে বলা কথা শুনে, কারান বুঝতে পারল এখানে কিছু গুরুতর ঘটনা লুকানো আছে। তাই সে মিরাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কোমলভাবে বলল, “তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাই।”
মিরা মাথা তুলে ভয়ার্ত গলায় বলে, “কিন্তু ও এসব কেন বলছে, কারান?”
“বলছি, আগে উপরে চলো।”

এরপর মিরার কোমর দৃঢ়ভাবে ধরে কারান তাকে উপরে তুলল। মিরাও মাটি ধরে উপরে উঠে গেল। এবার কারানও উপরে উঠে মিরাকে বাড়ি পৌঁছানোর পথে যেতে যেতে বলল, “শোনো মিরা, ও হয়ত ড্রাগ অ্যাডিক্টেড। দেখছো না, শরীরে ইঞ্জেকশনের চিহ্ন। আর এই কারণেই ও নিজেকে ধ্বংস করেছে, আর উলটো পালটা বকবক করছে। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাব, তুমি চিন্তা করোনা।”
মিরা চোখমুখ কুঁচকে বলল, “কিন্তু কারান, এমন তো হতে পারে না যে কেউ নিজের কিডনি বের করে ফেলবে।”
“তুমি জানো না, নেশায় আসক্ত মানুষ কত ভয়ংকর কিছু করতে পারে। মাদকাসক্ত হলে তারা শরীরের ব্যথা অনুভব করে না।”
তবে মিরা একেবারেই শান্ত হচ্ছিল না, কিছু একটা তার মধ্যে খটকা সৃষ্টি করছিল। তাই কারান দাঁড়িয়ে মিরার দু’টি বাহু শক্ত করে ধরে বলল, “এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই, জান। বাড়ি ফিরে যাও। আর যা দেখেছ, সব ভুলে যাও। লাভ ইউ।”

মিরার কপালে এক স্নেহময় চুম্বন এঁকে দিয়ে কারান বাকি পথ পাড়ি দিতে শুরু করল। মিরা কিছুক্ষণ স্থির চোখে তার চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইল। তারপর গভীর শ্বাস নিয়ে সমস্ত ভাবনাকে সরিয়ে রেখে ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে চলে গেল।
মিরাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই কারান আবার সেই স্থানে ফিরে এসে নিচে নেমে গেল। ছেলেটার উদ্দেশ্যে শান্ত কণ্ঠে বলল, “তুমি যাদের মনে করছো, আমি তাদের কেউ নই। এখন পুরো ঘটনা বলো।”
ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে বলে, “স্যার, তারা আমারে মাইরা ফেলবো।”
“কারা মারবে? কেন মারবে? আচ্ছা, আগে তুমি উপরে চলো, তোমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।”
“না স্যার, তারা দেখলেই আমারে শ্যাষ কইরে ফেলবো।”
“তোমাকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না, আমি আছি,” বলে নিজের শার্ট খুলে ছেলেটিকে পরিয়ে দিল।
এবার কারান ছেলেটিকে কোলে তুলে নিল।
“আচ্ছা, এখান থেকে তুমি উপরে হাত নিলে কীভাবে? তোমার হাত তো উপরে ওঠার কথা ছিল না।” কারান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

“স্যার, নিচে ইটগুলানের উপর ভর দিয়া।”
কারান এবার নিচে তাকিয়ে ইটগুলিকে পর্যবেক্ষণ করল, তারপর ধীরে ধীরে ছেলেটিকে উপরে তুলে নিজেও উঠে গেল।
নিজের গায়ের ময়লা হাত দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, সে ছেলেটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেল।
চিকিৎসার পর ডাক্তার কারানকে বলল, “স্যার, আমাদের গ্রামে এত উন্নত চিকিৎসা নেই। ওকে শহরে স্থানান্তরিত করতে হবে। আর যা মনে হচ্ছে, সে বেশি দিন বাঁচবে না।”
এ কথা শুনে কারানের হৃদয়ে বিষাদ ছড়িয়ে পড়ল।
“না, ওর কিছু হবে না ডাক্তার, আমি তাকে বাঁচিয়ে রাখব।”
এরপর ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে শহরে চলে গেল।

সেখানে একটি উন্নত হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলল, “Money is not an issue. Please proceed with the treatment, whether it’s dialysis, a kidney transplant, or any other method to help him survive without one kidney. He must survive, doctor.”
(অনুবাদ: “টাকা কোনো সমস্যা নয়। ডায়ালাইসিস হোক, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হোক বা অন্য কোনো উপায় হোক না কেন তাকে একটি কিডনি ছাড়াই বাঁচতে সাহায্য করার জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যান। তাকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে, ডাক্তার।”)

“we will do our best, Mr Karan,” বলে ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করতে চলে গেল।
এরপর কিছুক্ষণ পর, আবার ডাক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ শেষ করে বাড়িতে ফোন করল। তার গলার স্বরে ক্লান্তি স্পষ্ট, তবুও দৃঢ় থাকতে চেষ্টা করল। কারান বলল, “হ্যাঁ মিরা, আমি ওকে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। ডাক্তার বলেছেন দু’দিন পরেই কথা বলা যাবে। এখানে দু’দিন আমাকে থাকতে হবে। তুমি চিন্তা করো না।”
মিরা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল, “কিন্তু, কারান…”
কারান বাধা দিয়ে বলল, “কোনো কিন্তু নয়, মিরা।”
তারপর কোনো অপেক্ষা না করেই ফোন কেটে দিল।

আজও ফজরের নামাজ শেষে ফাতিমা বাগানের দিকে পাড়ি জমাল। এবার মিরা আর দেরি না করে চুপিসারে ফাতিমার পিছু নিল, যদিও ফাতিমা মিরাকে লক্ষ্য করেনি। এর মধ্যেই হঠাৎ করেই ফাতিমা মিরার চোখের আড়ালে চলে গেল।
“কোথায় গেল, ফুফিজান?”
কিছুক্ষণ দিগ্‌বিদিক খুঁজে মিরা যা দেখল, তা তাকে হতবাক করে দিল। মিরা দেখল, বাড়ির ড্রাইভার আকবর এবং ফাতিমা একে অপরকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃশ্যটি দেখে মিরার স্তম্ভিত হওয়ার আর কোনো জো ছিল না; সে অবিলম্বে পিছন ফিরে ঘুরে রইলো। কিন্তু এর মধ্যেই আকবরের নজরে পড়ে গেল মিরা। দ্রুত ফাতিমাকে সরিয়ে দিয়ে সে বিব্রত হয়ে পড়ল। একে অপরকে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে রেখে, ফাতিমা কিছু বলার আগেই মিরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল।
“তুমি যা ভাবছো, তেমন কিছু না বৌমা,” ফাতিমা তার কাছে এসে দ্রুত বলল।
“ফুফিজান, আমি আসছি। সরি, এভাবে মানে… সরি,” বলেই মিরা এগিয়ে যেতে থাকলে, ফাতিমা তার হাত ধরে থামিয়ে বলল,

“বৌমা, তুমি ভুল বুঝতাছো। হে আমার স্বামী।”
এই কথা শুনে মিরা আরেকটি ধাক্কা খেল। ভ্রূ কুঁচকে অবাক হয়ে বলল, “কি? কি বলছেন, ফুফিজান? আমি তো জানি, ফুফা প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মানে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“এদিকে আহো, তোমারে কইতাছি।”
এরপর মিরাকে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটি পুরোনো বেঞ্চে বসতে বলল।
মিরা বসলে, ফাতিমাও তার পাশে বসে কিছুক্ষণ নীরব থেকে শান্ত গলায় বলে, “আকবর আমারে, আমার বিয়ার আগে হইতেই পছন্দ করতো। কিন্তু বাড়ির ড্রাইভারের ছেলের লগে আব্বা বিয়া দিতে চাইবে কোনোদিনও, এইটা আকবর জানতো। তাই উনি কোনোদিন আমারে প্রস্তাবও দেয় নাই। তারপর আমার বিয়া হইয়া গেল। শউর বাড়ির একটা মানুষও ভালা ছিল না। শাউড়ীটা মাঝে মধ্যে ভালা পাইতো, তাও আমার জামাইয়ের কারণে তিনিও কিছু বলবার সাহস পাইতো না। পরে আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর, আমারে শউর বাড়ি দিয়া ননাস, ভাসুররা বাইর কইরা দেয়। তহন আমার কূল কিনারা ছিল না। কই যাইয়ুম, বুঝবার পারতেছিলাম না। বাড়িতে আইলেও আম্মা রাগ করবে, এই ভাইবা তিন ছেলে-মেয়ে নিয়া রাস্তায় থাকলাম কয়দিন। তারপর আকবররে দিয়া আম্মা খোঁজ নিতে আমার শউর বাড়ি পাঠাইলে জানতে পারে, আমি বাড়ি নাই। হে আমারে খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় দেখলো। তারপর তার বাড়িতে নিয়া গেল। কিন্তু সবাই ভাববে পরকীয়া করতাছি, তাই আমরা বিয়া কইরা নিলাম। তারপর আম্মারে আকবর শউর বাড়ির কথা বুঝাইয়া কওয়ার পর, আমারে এই বাড়িতে আনল। কেউ জানে না, আকবর আমার স্বামী। আম্মাও জানেন না।”

সব শুনে মিরা ফাতিমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“কিন্তু ফুফিজান, এইভাবে লুকিয়ে কতকাল চলবে? এখন দাদিজানকে জানিয়ে দিন। আমি নিশ্চিত, দাদিজান আপনাদের সম্পর্ককে মেনে নিবেন। আর আমার বদলে যদি তুব্বা বা তারান্নুম এই পরিস্থিতি দেখতে পেত, কী হত ভাবুন একবার! তাছাড়া তুব্বা এখনো অত্যন্ত ছোট, তার বাবার প্রাপ্য সান্নিধ্য দরকার। বাবা থাকতেও এমন পরিস্থিতিতে কেন থাকবে, ফুফিজান?”
ফাতিমা ভারাক্রান্ত মনের সঙ্গে বলল, “তুমি যতখানি সহজভাবে বিষয়টা ভাবতাছো, ততখানি সহজ নয়, বৌমা। তারা কখনোই আকবরকে বাপ হিসাবে মাইনা নিবো না।”
“একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, ফুফিজান। আপনাদের সম্পর্ক তো হালাল, তাহলে ভয় পাওয়ার তো কিছুই নেই।”
ফাতিমা গভীর এক নিশ্বাস ফেলল, কিন্তু তার ঠোঁট থেকে আর কোনো শব্দ বের হলো না।

সকালে ইলিজা, স্নেহার বাবা-মা এবং আব্দুর রহমান দ্রুত থানায় চলে গেল। ইলিজা গিয়ে পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিল। আমান শান্ত গলায় প্রশ্ন করল, “ওরা কেমন দেখতে ছিল?”
“স্যার, আমি ঠিক করে বলতে পারছি না, তবে তিনজনই বেশ লম্বা ছিল। একজন ৬ ফুটের বেশি, আরেকজন ৬ ফুটের কাছাকাছি এবং তৃতীয়জনের উচ্চতা ছিল মাঝারি। তাদের হাতে ছিল ছুরি, চাপা’তি, রামদা। তারা সবাই কালো হুডি পরেছিল, তিনজনের পোশাকও ছিল একই রকম।”
আমান তার বর্ণনা মনোযোগ দিয়ে শুনে গভীর চিন্তা করল।তারপর তার মনের মধ্যে একটু পরই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল; এরা আর কেউ নয়, স্বয়ং OWL। এর মানে স্নেহার আর কোনো নিস্তার নেই।
এবার আমান কণ্ঠ আরও শানিত করে বলল, “তুমি মিথ্যা বলছো না তো? নাকি তোমার বান্ধবী কোনো ছেলের সঙ্গে ভেগে গেছে? আমাদের বোকা বানিয়ে এখানে এসে কী লাভ?”
এটা শুনে স্নেহার বাবা গর্জন করে বললেন, “চো*দনার ফো চো*দনা! তোর মাথা যদি না ভাঙি। আমার মেয়ে নিখোঁজ আর তুই…আমার মেয়ে এমন না।”

তিনি আমানের দিকে তেড়ে আসতে গেলেন, কিন্তু আব্দুর রহমান দ্রুত তাকে আটকে ধরে থামানোর চেষ্টা করলেন।
স্নেহার বাবা আবার উচ্চস্বরে বললেন, “দেখ, আমার মেয়েটা নিখোঁজ। আর তুই এসব উলটো পালটা বকবক করিস, হা*রামজাদা?”
এবার আমান রাগে টগবগ করে দাঁড়িয়ে বলে, “অন-ডিউটি পুলিশদের সঙ্গে এমন বিহেভিয়ার! আলেয়া, ওকে এক্ষুনি লকাপে ঢুকিয়ে দিন।”
ইলিজা চোখে জল টেনে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “স্যার, আপনি ভুল ভাবছেন। আমার পায়ের কাটা দেখেও কি আপনার মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি? যদি আপনি বিশ্বাস না করেন, কাব্যকে ডেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।”
আমান ঠান্ডা হাসি দিয়ে বলল, “ওহ, এবার তাহলে আসল কথা বেরিয়ে গেল। যাও যাও, তোমার লাভারকে ডেকে আনো।”

এবার আব্দুর রহমানেরও মাথা গরম হয়ে গেল। তবে নিজের রাগ দমন করে, তিনি ইসহাককে ফোন করে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর আমানকে ফোনটা ধরিয়ে দিল। আমান কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে শেষে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “ওকে, স্যার। আমি দেখছি।”
ফোন কেটে দিয়ে বলল, “আলেয়া, মিসিং রিপোর্টটা লিখুন। আর আপনারা চিন্তা করবেন না, ওকে আমরা খুঁজে দেখবো। তুমি যেটা বললে আআ.. কাব্য…তার নাম্বারটা দাও।”
ইলিজা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “স্যার, নাম্বার তো আমার কাছে নেই। তবে আমি চেষ্টা করে জোগাড় করে দেব। আর তিনি শুধু আমাকে বাঁচিয়েছেন, এতটুকুই। আমি তো ওনাকে জানিও না।”
“হয়েছে, বুঝলাম বুঝলাম। এখন নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরে যাও।”
সবাই চলে যাওয়ার পর, আমান দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছাড়লো। ঠান্ডা হেসে বলল, “ওই চিন্তা বাদ দিন, ওই মেয়ে আর ফিরে আসবে না।”

রোমানা জামাকাপড় গোছাতে ব্যস্ত ছিল। একেকটি শার্ট, প্যান্ট হাতে নিয়ে খুবই বিচক্ষণতার সাথে সেগুলো নাক দিয়ে শুঁকে গুছিয়ে রাখছিল। কিন্তু হঠাৎ আরিয়ানের একটি শার্টে পারফিউমের সুগন্ধ পেল। রোমানা চোখ বন্ধ করে, নিজের রাগকে অতি কষ্টে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তারপর সোঁদা গলায় বলে, “আজকে তুই শেষ, বু’লশিট।”
এদিকে আরিয়ান এসে রোমানাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রোমান্টিক চেহারায় বলল, “আজকে আমার মন খুবই বউ বউ করছে, জান। চলো, খেলা যাক।”
রোমানা কনুই দিয়ে আরিয়ানের পেটে ঘুসি মেরে রেগে গিয়ে বলে, “আজকে যদি তোর মেইন পয়েন্টে ঘুসি না মারি, তাহলে আমার নাম রোমানা না।”
আরিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, মুখ কুঁচকে বলল, “তোর মধ্যে কখনো কি রোমান্টিক মুড আসে না, রোমানা? শালি, তোকে ভালোবেসে শান্তি পাই না দেখছি।”

রোমানা রাগে উত্তাল হয়ে ঠান্ডা চোখে বলল, “জানিসই তো আমার মুড সবসময় তেতোই থাকে, তাও আসিস কেন, শা’লারপুত? আর তোর ভালোবাসা তোর কাছে থাক। আগে বল, মেয়েটা কে?”
আরিয়ান ভ্রূ কুঁচকে বলে, “ফালতু কথা বন্ধ কর, রোমানা।”
“তোর শার্টে এই পারফিউমটা কোন মেয়ের? তুই তো এটা ব্যবহার করিস না।”
এবার আরিয়ান ড্রেসিং টেবিল থেকে পারফিউমের বোতল তুলে, তা রোমানার গা, মুখে, নাকে ছড়িয়ে দিল। রোমানা চোখ বন্ধ করে বলল, “আরিয়ানের বাচ্চা, চোখে ধোয়া দেখছি। বাপের টাকার একটু মূল্য দে। এভাবে পারফিউম ছড়াচ্ছিস কেন, পাগল?”
আরিয়ান ঠান্ডা হাসি দিয়ে পারফিউমের বোতল তার হাতে দিয়ে বলল, “তোর কুকুরের মতো নাক দিয়েও কি বুঝতে পারলি না, এটা মেইল পারফিউম।”

রোমানা পারফিউমের ঘ্রাণ শুঁকতে শুঁকতে বলে, “ব্র্যান্ড চেঞ্জ করেছিস নাকি? আর এখন তো এসব মেয়েরাও দেয়।”
আরিয়ান ঠোঁটে কামড় দিয়ে হেসে রোমানার মাথায় একটা চাটি মেরে বলে, “এই একটা কাজ ছাড়া জীবনে তো তোর আর কোনো কাজ নেই।”
রোমানা ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরে রইলো। এবার আরিয়ান রোমানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, কিছুক্ষণ স্থির থেকে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, “তোমার সুখের আকাশ আমি সাজিয়েছি, আমার ইচ্ছেতে তা মেঘলাও হতে পারত। যা কিছু ভালো, তা আমার দেওয়া; ইচ্ছা করলে সবকিছু ছিনিয়ে নিতে পারতাম, প্রিয়দর্শিনী।”
আরিয়ানের এরকম কবি সুলভ কথায় রোমানা হেসে বলল, “কথাটা কিন্তু তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, আরিয়ান। কিন্তু হঠাৎ কবি হয়ে গেলে কি করে?”

“হতে আর পারলাম কই? আমার বউ তো আমাকে কখনো ভালোবাসলো না।”
রোমানা মুচকি হেসে বলল, “না, আমি তোমাকে ভালোবাসি না, আরিয়ান। আর বাসবোও না।”
আরিয়ান কিছুটা বিষাদে ভরা হাসি দিয়ে বলল, “তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে, হয়ত আমি ভালো হয়ে যেতাম, রোমানা। (একটু থেমে) তবে আর যাই বলো, আজকে তোমাকে কাঁদিয়ে ছাড়বো।”
শয়তানি হাসি দিয়ে রোমানাকে কাঁধে তুলে নিল।
“দেখ আরিয়ান, যদি উলটো পালটা কিছু করিস, আমি কিন্তু ছুরি দিয়ে তোর বেকার জিনিসটা কেটে দেব।”
আরিয়ান হাসতে হাসতে রোমানাকে নিয়ে ছাদে চলে গেল।
রোমানা তো ভয়ে কাঁপছে। মনে মনে ভাবছে, আরিয়ান আবার ছাদ থেকে তাকে ফেলে দিবে না তো? রোমানা কাঁপানো গলায় বলল, “আরিয়ান, খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। নামাও বলছি।”

এদিকে আরিয়ান হাসতে হাসতে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই, এক অপ্রত্যাশিত ঝটকায় রোমানাকে পুলে ছুড়ে ফেলে দিল। এবার আরিয়ানও পরিহিত শার্ট-প্যান্ট খুলে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিল। রোমানার চোখে আগুনের শিখা জ্বলে উঠল। সে রেগে চিৎকার করে বলল, “আমাকে কাঁদাবি? দেখ কে কাঁদে।”
আরিয়ানের হাতে জোরে কামড় দিল সে। আরিয়ান চিৎকার করে বলল, “শালীর ঘরের শালি! প্যাঁচার ঘরের প্যাঁচা! কু’ত্তার ঘরের কু’ত্তা! ছাড় পেত্নী, আআআআ…”
রোমানা হাসতে হাসতে তার হাত ছাড়লো, তারপর শান্তভাবে সাঁতার কাটতে মনোযোগী হলো। কিছু সময় পর দুজনেই পুল থেকে উঠে এলো।
আরিয়ান রেগেমেগে রোমানার নিতম্ব বরাবর এক তীব্র লাথি মারার কারণে রোমানা বসে পড়ল। এদিকে সে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে, আরিয়ানের কোমরের তোয়ালেটা টেনে নিয়ে, পাশে রাখা শার্ট-প্যান্ট তুলে বলল, “এবার তুই উ’লঙ্গ থাক শালা, আমি চলে যাচ্ছি।”

আরিয়ান রেগে গর্জে উঠলো, “এই, রোমানা! আমার ইজ্জত আজ শেষ হয়ে যাবে। আশেপাশের কেউ যদি দেখলে খবর হয়ে যাবে। শালীর ঘরের শালি, টাওয়ালটা দিয়ে যা।”
রোমানা হাসতে হাসতে দৌড়ে নিচে চলে গেল, কিন্তু আরিয়ান কিছুই করতে পারল না। এবার আরিয়ান হেরে গিয়ে, হাত দিয়ে শরীরের নীচের অংশ ঢেকে নিচে নামতে শুরু করল।
এমন সময় দূরের ছাদ থেকে একটা বাচ্চা ছেলে চিৎকার করে বলল, “এ হে, নেংটা ছেলে লজ্জা নাই! এ হে, দামড়া ছেলে লজ্জা নাই! মম, ফোন নিয়ে এসো, ভিডিও করবো।”
আরিয়ান লজ্জায় মাথা নীচু করে, জিভ কামড়ে বলল, “একটা পাতা থাকলে, তা দিয়ে হলেও ঢেকে নিতাম। হায়, খোদা! আজকে এইভাবে আমার ইজ্জত আমার বউ সাথে নিয়ে গেল!”
বলেই মনে মনে নিজের পরিণতি নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে নিচে নামতে লাগল।

দু-দিন পর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা ছেলেটির চেতনা ফিরে আসে। এই দীর্ঘ সময় ধরে, কারান তার অফিসের তাড়াহুড়া সামলে, হাসপাতালেও প্রতিদিন এসে ছেলেটির খবর রাখছিল। অবশেষে যখন ছেলেটি কিছুটা জ্ঞান ফিরে পায় কারান দ্রুত অফিসের কাজকর্ম সেরে, কাগজপত্র গুছিয়ে ছুটে আসে।
সে হাসপাতালে ঢুকতেই, ডাক্তার মুখে উদ্বেগ ও দুঃখবোধ নিয়ে বললেন, “ওর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু শরীরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আমি চাইনি যে ও কথা বলুক, কিন্তু ও বারবার আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছে, তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে ডাকলাম। তবে বেশি সময় নিবেন না, ওর শরীর এখনও খুব দুর্বল।”
“ঠিক আছে ডাক্তার,” বলে কারান দ্রুত কেবিনে প্রবেশ করে।
কেবিনে ঢুকতেই ছেলেটি কারানকে দেখেই একটু হাসে, যদিও তার মুখের ওপর ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কারান তাকে দেখে, তার মাথায় হাত রেখে কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গে বলে,
“তুমি প্রথমে সুস্থ হও। তারপর আরাম করে কথা বলা যাবে, কেমন?”
এতটুকু বলেই কারান উঠতে যায়, কিন্তু ছেলেটি তার হাত শক্তভাবে ধরে বলে, “না স্যার, আমি অহনই কইতাম।”
কারান কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে, কারণ এই অবস্থায় তার কথা বলা ঠিক না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলেটির পাশে বসে বলে, “ঠিক আছে, বলো।”

ছেলেটি নিজের শরীরের কষ্ট সহ্য করে, অনেক কষ্টে কথা বলতে শুরু করে, “আমগো গ্রামটা একেবারে নরক হইয়া গেছে, স্যার। কিছু মানুষ আছে, তারা আমগো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাইটা নেয়; চোখ, কলিজা, হৃৎপিণ্ড সবকিছু। তারা আমার মতো মাইয়া পোলা গো মাইরা ফেলে, স্যার। আমি একদিন তাগো হাতে পইড়া মৃত্যুর মুখে চইলা গেছিলাম। তারা আমার পেট থেকে কিডনি কাইটা নিয়া গেছে। তবে আমি বালি মাইরা পালাইয়া বাঁচি। কিছুদিন মাটির নিচে লুকাইয়া আছিলাম। খাওনের অভাবে নিজের শরীরের মাংস কামড়াইয়া খাইতে হইছে। ওই মানুষগুলা গ্রামবাসীদের শরীরে কি এক বিষক্রিয়া ঢুকাইয়া দেয়। কিন্তু অহন যদি তারা আমারে দেইখা ফেলে, তারা আমারে মাইরা ফেলবো, স্যার। আমার চোখ, হৃৎপিণ্ড; সবকিছু নিয়া যাইবো।”

কেঁদে কেঁদে বলল, “স্যার, আমি বাঁচবার চাই। আমার মা আমারে ছাড়া মইরা যাইবে। স্যার, আমারে বাঁচান।”
এবার সব কিছু বুঝতে পেরে কারান কিছু সময় চুপ হয়ে থাকে। তারপর কণ্ঠে নির্ভীকতা এনে ছেলেটিকে শান্ত করে বলে, “তুমি চিন্তা করো না। তোমার কিচ্ছু হবে না। বিশ্রাম নাও, আমি তোমার জন্য ব্যবস্থা নেব।”
কারান মাথা নত করে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। তার মনে অটুট সংকল্প গড়ে ওঠে, ছেলেটির মতো আরও অনেকের জীবন রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সে। এরপর ফারহানকে ফোন দেয়, “শোন, দুবাইয়ের ব্যাপারটা তোর কাছে বিস্তারিত বলব, তবে এখন অন্য এক কেসে আটকে পড়েছি।”

ফারহান অবাক হয়ে কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে, “আবার কী হয়েছে, ব্রো?”
“পুষ্পানগরে অনেক রহস্য ঘনীভূত হয়েছে, ফারহান। আমি এখনও এটাই ভাবছি, কতটা নিষ্ঠুর হলে একজন মানুষ জ্যান্ত একটা বাচ্চার শরীর থেকে অঙ্গ কেটে নিয়ে যেতে পারে। যেখানে এসব কাজ সেন্সলেস করে করা হয়।”
ফারহান চমকে গিয়ে বলে, “কি বলছিস? তোদের ওখানে কি অবৈধ অঙ্গ পাচারের কাজ চলে?”
“সেটাই মনে হচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে, রাখছি।” বলেই ফোন কেটে দেয়।
এরপর কারান ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে, “ওর চিকিৎসায় কোনো প্রকার ত্রুটি যেন না হয়। আমি ইমনকে বলবো, মাঝে মাঝে দেখে যাবে। যখন ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে, আমাকে জানাতে ভুলবেন না।”
ডাক্তার সম্মতির সঙ্গে মাথা নাড়ে। কারান হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গ্রামের পথে পা বাড়ায়।
কারান বাড়িতে ফিরে কোনো কথা না বলে দ্রুত কক্ষে ঢুকে, ল্যাপটপ খুলে কাজ করতে বসে যায়। মিরা তার এমন আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কিছু সময় পর মিরাও কক্ষে প্রবেশ করে কারানের পাশে বসে বলে, “তুমি ঠিক আছো?”

কারান কাজ করতে করতেই তার দিকে না তাকিয়ে এক শব্দে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”
“আর ওই ছেলেটা এখন কেমন আছে?”
কারান মিরার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ভারী কণ্ঠে বলে, “আমি জীবনের সমস্ত বোঝা, সমস্ত দুশ্চিন্তা সহ্য করতে পারি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কিছু একটা শূন্যতা আমাকে ক্রমশ গ্রাস করছে। আমার খুব একা লাগছে, সবকিছু কেমন যেন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। (থেমে) মিরা, তুমি কি আমার হারানো প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে?”
মিরা কারানের ভিতরের অস্থিরতা অনুভব করে তৎক্ষণাৎ তার মাথা নিজের বক্ষস্থলে জড়িয়ে ধরল। কারানও নিবিড়ভাবে মিরাকে জড়িয়ে নেয়। মিরা আপনমনে বলল,
“না, আর কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করব না, কারান। এখন থেকে শুধু তোমার জন্য বাঁচতে চাই। তোমার মুখে একটুকু তৃপ্তির হাসি ফুটানোর জন্য আমি আমার সমস্ত অস্তিত্বও বিলীন করতে প্রস্তুত। আমি জানি, তুমি জীবনে কখনো সেই প্রশান্তি বা পরিতৃপ্তি পাওনি, যা তোমার প্রাপ্য। তবে এবার আমি সেই অপূর্ণতাগুলো পূর্ণ করব। তোমাকে গভীর ভালোবাসায় আবৃত করে রাখবো।”

মিরা কারানের চুলের উপর এক কোমল চুমু খায়।
কারান মাথা তুলে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে, “মিরা, তোমাকে ছাড়া গত দু-দিন আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। আজ তোমার বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে হারিয়ে যেতে চাই।”
মিরা হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। এরপর কারান মিরাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে, “মিরা…”
মিরা আস্তে করে হেসে বলে, “হুম…”
“কখনো আমাকে ভুলে যাবে না তো? এই একটাই ভয়, যা আমাকে ক্রমশ কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।”
মিরা হেসে কারানের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, “আমি নিজের চেহারা ভুলে যেতে পারি, কিন্তু তোমার স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়, কারান।”
কারান হেসে মাথা তুলে মিরার ঠোঁটে এক কোমল চুম্বন রেখে বলে, “আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, মিরা। সত্যিই খুব বেশি। এই অনুভূতি কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”
মিরা হেসে বলে, “আমি বুঝি।”
মিরার দুই শব্দেই কারানের সমস্ত কষ্ট মুছে যায়। শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে কারান মিরার বুকে গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয়।

রাত তিনটার দিকে, হঠাৎ এক বাজে স্বপ্নের প্রভাবে কারানের ঘুম ভেঙে যায়। এদিকে মিরা গভীর ঘুমে ডুবে রয়েছে। কারান শব্দহীন ধীরে ধীরে মিরার পাশ থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। একটা সিগারেট ধরিয়ে ঠোঁটে রেখে সামনে হাঁটতে থাকে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে বাগানের গভীরে চলে যায়। তবে তার মন অন্য কোথাও ডুবে আছে।
“ওদের মাস্টারমাইন্ড কে? কে সেই নিষ্ঠুর ব্যক্তি, যে বাচ্চাদের অঙ্গ নিয়ে যাচ্ছে?” বলতেই বলতেই সে ধোঁয়ার প্রবাহ ছেড়ে দেয়।
এর মধ্যেই সে হঠাৎ এক ব্যক্তিকে সামনে দিয়ে হাঁটতে দেখে। যিনি কারানের চিন্তা ভাবনায় মুহূর্তেই ব্যাঘাত ঘটায়।
লোকটা সাদা লম্বা কাপড় পরা। বনের অন্ধকারে ডুবে থাকা একটি রহস্যময় উপস্থিতি তার। সে বনের গভীর থেকে আরও গভীরে চলে যাচ্ছে। কারান অবাক হয়ে ভ্রূ কুঁচকে ফেলল। আপনমনে বলল, “অদ্ভুত। এত রাতে কে যেতে পারে বনের ভেতরে?”

পরে গলা উঁচু করে ডাকল, “এক্সকিউজ মি।”
কারানের ডাকে লোকটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কারান সিগারেটটি হাত থেকে ফেলে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, “কে আপনি?”
হঠাৎ লোকটা মাথা ঘুরিয়ে ফেলল। তার মাথা পিছন দিকে ঘুরে গেল অথচ শরীরটা সামনের দিকে। লোকটি কারানকে দেখেই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। কারান শিহরিতো হয়ে দেখল লোকটির চোখ নেই, মুখটি আগুনে পু*ড়ে গেছে। চোখের কোটর থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে, আঙুলগুলো কা*টা, আর গলার ওপর ছু*রির দাগ থেকে র*ক্ত ঝরছে।
কারান কপাল কুঁচকে বলে উঠল, “ফুফা…”

কিন্তু মৃত মানুষের উপস্থিতি এমনভাবে তার সামনে আসবে, এটা সে ভাবতেও পারেনি। তাই একবার চোখ বন্ধ করে নিজের মুখে হাত বুলিয়ে নিল। চোখ খুলতেই দেখল, লোকটি আর নেই। অর্থাৎ এটা হ্যালুসিনেশন। অতিরিক্ত চাপ ও দুশ্চিন্তার ফলস্বরূপ, এসব অদ্ভুত দৃশ্য তার সামনে উদয় হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো; কেন সে হ্যালুসিনেশনে নিজের ফুফাকেই দেখল? কারান কপাল ঘষতে ঘষতে বলল, “হচ্ছেটা কি আমার সাথে?”
তখনই তার মনে পড়ে গেল, কিয়ৎক্ষণ আগে সে ফুফা, ফুফি আর এই চৌধুরি বাড়ি নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল। তাই সে ভেবে নিল যে, এসব অপ্রকাশিত চিন্তা ও মানসিক চাপের ফল।
কারান চুলগুলো পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে পৌঁছাল, “না, এখানে দাঁড়ানো যাবে না। চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।”
এবার দ্রুত কক্ষে ফিরে এসে কিছুক্ষণ মিরার দিকে তাকিয়ে থেকে, সমস্ত চিন্তা ও উদ্বেগের ঝড় ধুয়ে ফেলল। তারপর মিরাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। কারণ একমাত্র মিরার কাছেই সে শান্তি খুঁজে পায়।

সকালেবেলা তারান্নুমের মনে শহরে শপিং করতে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগলো। তারান্নুম বারবার কারানকে বলেই চলল, “ভাই, প্লিজ। চলো না।”
কারান বিরক্তি নিয়ে চোখ মচকালো। তারপর তারান্নুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর এই বাচ্চামো কবে শেষ হবে, তরু? বললাম তো হাজার কাজ বাকি, এখন এসবের টাইম নেই।”
তারান্নুম আর কোনো কথা না বলে মন খারাপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। এটা দেখে মিরা স্নিগ্ধ হাসিতে বলল, “এমনভাবে বলছো কেন? চলো না, যাই।”
এবার কারান অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হতে বাধ্য হলো; যেহেতু বউ বলেছে, মানতে তো হবেই। তবে তার মূল উদ্দেশ্য শপিং নয়। কারানের মনে ঘুরছে আরেকটি গোপন ইচ্ছা; সেই ছেলেটিকে এক নজর দেখা। এই ইচ্ছার টানেই সে শেষমেশ আর আপত্তি করল না।

শহরে শপিং করতে যাওয়া নিয়ে বাড়িতে তুমুল হইচই শুরু হলো। এই কোলাহলের মধ্যেই কারান নিজেকে খানিকটা উচ্ছ্বসিত মনে করল। সবাইকে হাসিখুশি দেখে তার মুখেও চাপা হাসি ফুটে উঠল।
শেষ পর্যন্ত আম্বিয়া ছাড়া সবাই শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। মলে পৌঁছেই যে যার মতো কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এদিকে তারান্নুম যেন জীবনের সেরা দিনটি অনুভব করছে। সে একটি শাড়ি হাতে নিয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হাসল। পরে ভাবল, ফারহান কি এটি পছন্দ করবে? তৎক্ষণাৎ ফোন হাতে তুলে ফারহানকে কল করলো।
ফারহান ফোনে অবাক হয়ে বলল, “হায় আল্লাহ! কী সুন্দর মানিয়েছে আমার গোবরচারিণীকে। উফফ! আমি কি আসবো, আমার কুইন গোবরচারিণী?”
তারান্নুম কপাল কুঁচকে লাল হয়ে বলে, “আপনাকে না বারবার কইলাম, আমারে ওই নামে ডাকবেন না। ধুরো, রাখলাম ফোন।”
ফারহান হাসতে হাসতে বলল, “আরে না না, কেটো না। (থেমে) কবে যে তোমাকে শাড়িতে দেখতে পাবো, আর যে সইতে পারছি না।”

তারান্নুম লজ্জায় হেসে মুখ নীচু করে চোখ নামিয়ে বলল, “দেখবেন তো। প্রথম যেইদিন আমারে দেখতে আইবেন, সেইদিন এই শাড়িটাই পরুম।”
“ইশ! আমার যে আর তর সইছে না, বেবি। কবে যে তোমাকে বউ করে এই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে নিয়ে আসবো।”
“ওহ আচ্ছা, ওইটা বুঝি কুঁড়ে ঘর?”
এর মধ্যেই মিরা তারান্নুমকে ডাক দেয়। তারান্নুম দ্রুত বলে,
“আচ্ছা, রাখছি রাখছি। আর এই শাড়িটাই নিলাম,” বলে ফোন কেটে দিয়ে মিরার দিকে এগিয়ে গেল।
অন্যদিকে ফারহান হেসে বলে, “তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা করবো, সেদিন তুমি সারপ্রাইজ হয়ে যাবে, গোবেচারিনী। একদম বাবা-মা নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যাব। খান বাড়ির একমাত্র বউ হবে, আমার কুইন।”
সে তার ভবিষ্যৎ সঙ্গিনীকে নিজের পাশে দেখতে পাবে সেটা ভেবেই বিশ্ব জয় করার আনন্দ উপভোগ করছে।
এদিকে মিরা তারান্নুমকে বলল, “দেখো তো, এটা কেমন লাগছে তোমাকে? এই ইয়ার রিংটা আমি তোমার এনগেজমেন্টের জন্য পছন্দ করেছি। তবে এটা কিন্তু আমার টাকায়, আবার ভেবো না যে তোমার ভাই দিয়েছে।”
তারান্নুম লাজুক হেসে বলল, “তুমিও না ভাবি। এহনো তো দেখতেই আইলো না।”

এটা বলে সে একটু লজ্জা পেয়ে দূরে সরে গেল।
এদিকে মিরা হেসে একটি শাড়ি হাতে নিয়ে ট্রায়াল রুমে ঢুকল। সাথে সাথে কারানও তাড়াহুড়া করে ঢুকে পড়ল। মিরা হঠাৎ করেই তাকে দেখে চিৎকার করতে মুখ খুলল, তৎক্ষণাৎ কারান মিরার মুখ চেপে ধরল। কিছুক্ষণ তারা একে অপরকে নিরবভাবে দেখতে থাকলো। তারপর কারান মিরার মুখ ছেড়ে দেয়। মিরা মৃদু হাসি দিয়ে বলল, “সিইও সাহেব এখানে কি করছেন? এভাবে মেয়েদের ট্রায়াল রুমে ঢুকলেন, কেউ দেখলে কি বলবে, ভেবেছেন?”
কারান চোখে রোমান্টিক চাহনি নিয়ে বলল, “না, ভাবিনি। আর ভাবতেও চাই না। আমার বউ যেখানে, আমি সেখানে।” মিরার হাত থেকে শাড়িটি তুলে নিল সে। তারপর মিরার বোরকা এবং শাড়ি খুলে পাশে রেখে, নিজ হাতে মিরাকে শাড়ি পরিয়ে দিল। শাড়ির কুচি যত্নের সাথে গুছিয়ে দিতে দিতে বলল, “এবার দেখো, কেমন শাড়ি পরিয়েছে তোমার স্বামী।”

মিরাকে ঘুরিয়ে দিল। মিরা আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগল। আর কারান মিরার কাঁধে থুতনি রেখে কোমর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মিরা মুগ্ধ চেহারায় নিজেকে দেখে বলল, “একদম পারফেক্ট।”
এরপর ঘুরে কারানের দুই কাঁধে দুই হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে বলল, “তুমি কি আগে শাড়ি পরানোর কাজ করতে নাকি?”
কারান ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে জিভ দিয়ে গাল ঠেলে ধীর কণ্ঠে বলল, “করতাম তো।”
এই কথা শেষ করেই, আচমকা মিরাকে ধরে আয়নার দিকে ঠেলে দিল। পর মুহূর্তেই মিরার ঠোঁটকে গভীরভাবে আয়ত্তে নিতে শুরু করলো। আয়নার প্রতিবিম্বে তাদের প্রতিটি স্পর্শ আর আবেগ জীবন্ত হয়ে উঠল। মিরাও সেই আবেগে সাড়া দিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলল কারানের বাহুডোরে।
এদিকে অনেকটা সময় পার হয়ে যাওয়ায় সোফিয়া ট্রায়াল কক্ষের বাহিরে দাঁড়িয়ে, ঠান্ডা কণ্ঠে বলল, “Mira, have you put on the saree? I’ll change now too.”

এবার কারান আর মিরা একে অপরকে আলাদা করলো। মিরা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তাড়াতাড়ি বোরকা পরিধান করে, দরজা খুলে দ্রুত সোফিয়ার পাশ থেকে চলে গেল। একটুপর কারানও দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে এলো। এবার সোফিয়া মিরার এতক্ষণে দেরি হওয়ার বিষয়টি বুঝে মুচকি হাসল।
কারান একে একে বাকিদের শপিং করা দেখতে থাকল, কিন্তু হঠাৎ কোথাও তারান্নুমকে নজরে এলো না। তৎক্ষণাৎ তুব্বাকে দাঁড় করিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, “তুব্বা, তরু কোথায়?”
“এইহানেই তো ছিল। অহন কোথায়, তা জানি না।”
কারান চিন্তিত হয়ে কপাল কুঁচকে পুরো মলটি খুঁজতে লাগল। কোথাও তারান্নুমকে না পেয়ে, তার ফোনে কল দিল। কিন্তু আশ্চর্য! ফোনটা তার কানে বেজে উঠল। আশেপাশে তাকিয়ে একটি টেবিলের উপর তারান্নুমের ফোনটি পেল। তখনই কারানের চিন্তা বেড়ে গেল। হাঁসফাঁস করতে করতে সে দ্রুত দোতলায় উঠে যেতে যেতে বলল, “মিরা, তারান্নুমকে খুঁজে…”

ঠিক তখনই দেখল, তারান্নুম মিরার সঙ্গে দাঁড়িয়ে। কারান রাগে তেতে উঠে দ্রুত তারান্নুমের কাছে গেল। এদিকে তারান্নুম হেসে বলল, “দেখো তো ভাই, এই পাঞ্জাবিটা তোমার বন্ধুরে মানাইবে কি না?”
অথচ কারান রাগে আগুনের মতো গর্জে ওঠে বলে, “কোথায় গিয়েছিলি?”
তারান্নুম পাঞ্জাবিটা পাশে রেখে কিছুটা অবলীলায় বলে,
“আহ, ওই একটু বাইরে বেরিয়ে দেখছিলাম, ঢাকা শহর কেমন।”
কারান তীব্র কণ্ঠে বলে, “একটা থাপ্পড় মেরে তোর সবগুলো দাঁত ফেলে দেব, বেয়াদব মেয়ে। এত বড় দামড়ি হয়েও এতটুকু জ্ঞান নেই! তুই কি চিনিস এখানে?”
কারানের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে, মিরাসহ বাকিরাও হতবাক হয়ে যায়। সবাই চোখ বড় করে তার পানে তাকিয়ে থাকে। তারান্নুম কাঁপতে কাঁপতে গলায় রুদ্ধ কান্না নিয়ে বলে, “আমি… মানে… একটু দেখতে মন চাইছিল, ঢাকা শহরটা কেমন, তাই…”
কারান কটমট করে বলে, “ফোন কোথায় তোর?”
তারান্নুম অস্থিরভাবে ফোনটি খুঁজতে শুরু করে, যদিও ভয়ে তার হাত কাঁপছে। কারান সময় নষ্ট না করে, তারান্নুমের হাতে ফোনটি গুঁজে দিয়ে দৃঢ়তায় বলে, “আর কখনো না জানিয়ে এমন কিছু করবি না, বুঝেছিস?”
কারানের এমন রাগ দেখে মিরা সহ সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে, কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।

সেদিন স্নেহাকে OWL-রা নিয়ে গেল। ওকে একটার পর একটা ভারী শিকল দিয়ে টেবিলের উপর বেঁ*ধে রাখা হলো। স্নেহার শরীর থেকে খা*মচে খাম*চে কাপড় ছি*ড়ে ফেলে উল’ঙ্গ করে ফেলল। এরপর পরাপর কয়েকবার ধর্ষ*ণ করা হলো।
যখন ওরা জানতে পারলো স্নেহার বাবা-মা পুলিশে রিপোর্ট করতে গেছে, তখন র*ক্তপিপাসু হাসি দিয়ে ডার্ক স্নেহাকে বলল, “এখন তুমি তোমার মা-বাবাকে ফোন করে বলবে যে তুমি ঠিক আছো। কীভাবে বুঝাবে, সেটা তোমার চয়েজ। তবে এক মুহূর্তের জন্যও যদি তারা অনুভব করে যে তুমি বিপদে আছো, তাহলে তোমার বাবা মা চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। আউলদের নাম শুনেছো? উই আর আউল, বেইবি।”

তাদের হাসির দম্ভে বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। এদিকে OWL শব্দটা স্নেহার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকায় শিহরন সৃষ্টি করলো। তার মনে পড়ে গেল, একদিন তার বাবা-মা তাকে ২০০৩ সালের OWL-এর ভয়াবহতার কথা বলেছিল। এদিকে স্নেহার শরীরে কোনো কাপড় নেই। কাঁদতে কাঁদতে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, “তাদের কিছু করবেন না। প্লিজ… আমি কাউকে কিছু বুঝতে দেব না, প্রোমিস। পি..প্লিজ আমার মা-বাবাকে কিছু করবেন না।”
কাঁদতে কাঁদতে সে আরও অবশ হয়ে পড়লো, তার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো। স্নেহার কান্না দেখে তারা আরও তীব্র হাসিতে গা ভাসিয়ে দিল। স্নেহার গলা শুকিয়ে যাওয়ায় পানি চাইল। কিন্তু অবস্কিউর ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে বলল, “পানি চাও? নিজের ই*উরিন খাও, তাতেই তেষ্টা মিটাও। আর কিছু পাবে না।”

নিজের প্রস্রাব খাওয়ার কথা শুনে স্নেহার গা গুলিয়ে উঠলো। তবে সে কোনোভাবে নিজেকে শান্ত রেখে শ্বাস টেনে চুপ রইলো। ডার্ক স্নেহার হাতে মোবাইল দিয়ে পুনরায় সতর্ক করে বলল, “ঘুণাক্ষরেও যেন তারা কিছু টের না পায়। তাহলে তুমিসহ তোমার মা-বাবাকে তো শেষ করবোই, সাথে তোমার কচি ভাইকেও উড়িয়ে দিব, সোনা।”
এটা শুনে ভয়ে স্নেহার থুতনি কাঁপতে থাকে। তাই নিজের কান্না আর আবেগকে সংবরণ করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মায়ের নম্বরে কল করে বলল, “হ্যালো, মা…”
স্নেহার কণ্ঠ শুনে স্নেহার মা একেবারে অশান্ত হয়ে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “স্নেহা…আমার লক্ষ্মীটি… মা, কেমন আছিস? তুই কই, সোনা?”
স্নেহা হাসার চেষ্টা করে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রেখে বলে, “আমি ঠিক আছি, মা। আসলে দিপার বাসায় এসেছি। সেদিন মাহির সাথে হাঁটতে হাঁটতেই হঠাৎ সামনে দিপার সাথে দেখা হলো। আর দিপা আমাকে জোর করে ওর সাথে নিয়ে গেল। মাহিকে কিছু বলতেও পারিনি। সরি মা, এই দু-দিন তোমাদের কিছু জানাতে পারিনি। আসলে দিপার বাসায় নেট ছিল না। তুমি বাবাকে চিন্তা করতে নিষেধ করো, আর তুমিও চিন্তা বন্ধ করো।”
স্নেহার মা নাকের পানি চোখের পানি মুছতে মুছতে মিষ্টি হেসে বলল, “জানিস, এতক্ষণে প্রাণটা ফিরে পেলাম। দুটো দিন তোর বাবা না আমি, কেউ কিচ্ছু মুখে তুলিনি। কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছিল তোর জন্য। আলহামদুলিল্লাহ! তুই ঠিক আছিস।”

এসব শুনে স্নেহার গলা চেপে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো, কিন্তু ডার্ক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্নেহার দিকে তাকিয়ে রইলো। এটা দেখে সে গলা কেশে নিজেকে আবার শান্ত করলো। অন্যদিকে স্নেহার মা চিন্তিত কণ্ঠে বলেন, “আর দিপা কে রে, সোনা? আমরা তো তোর সব ফ্রেন্ডের বাসায় গেলাম। জানিস, মাহি তোর জন্য কত কেঁদেছে! মেয়েটা দুই দিন ধরে তোর পেছনে কত ঘুরেছে।”
“মা, দিপা আমার ইংরেজি কোচিংয়ের বান্ধবী। তোমরা বা মাহি হয়ত চিনবে না। আচ্ছা মা রাখছি, ভালো থেকো।” বলেই স্নেহা আবার কাঁদতে শুরু করে।
“তুই ঠিক আছিস, এতেই খুশ…”
স্নেহার মায়ের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই ডার্ক কলটা কেটে দিল। সে জানে, স্নেহার কান্নাভেজা কণ্ঠ শুনলে তার মায়ের সন্দেহ হতে পারে।

এরপর দশ দিনে স্নেহাকে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বার ধ*র্ষ* করা হলো। স্নেহা কিছুতেই নিজের শরীরের দুঃসহ যন্ত্রণাকে সইতে পারছে না। তার প্রতিদিনের খাবার হিসেবে ছিল মাত্র ২ টা রুটি। তার প্রতিটি রাত একেকটি দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠল। দশ দিন পর অবস্কিউর এসে স্নেহার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“চলো, বেবি। তোমার সাথে খেলা করা যাক।”
স্নেহার স্ত*বৃন্ত কাটার দিয়ে টে*নে উপরে ফেলে। স্নেহা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে তার মা-বাবাকে ডাকতে থাকে।

এদিকে ইসহাকের কঠোর নির্দেশে আবার তদন্ত শুরু হলো। কারণ কোচিং এ গিয়ে দিপা নামে কোনো মেয়ের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি। দশ দিন কেটে গেল নিঃসংবাদে। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে স্নেহার বাবা-মা একসময় উপলব্ধি করলেন, তাদের মেয়ে অপহৃত হয়েছে। আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তার ভারে ক্লান্ত হয়ে শেষমেশ তারা সেই নাম্বারে কল করলেন, যেটি থেকে স্নেহা শেষবার যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু সিমটি বন্ধ হয়ে গেছে।
এক ঝলকে যেন সমস্ত আশা ফিকে হয়ে গেল। তবু হাল ছাড়লেন না তারা। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে খোঁজ নিলেন সিমটির নিবন্ধন সম্পর্কে। কিন্তু সে প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হলো। কারণ সিমটি অবৈধভাবে তোলা হয়েছিল।
অপরদিকে OWL রা বুঝতে পারলো যে এখন আর নতুন মেয়ে নিয়ে ধ*র্ষ*ণের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি প্রান্তে পুলিশ টহল দিচ্ছে। প্রথমে তাদের পরিকল্পনা ছিল স্নেহাকেও বাকিদের মতো নির্মমভাবে মেরে ফেলবে। কিন্তু পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যতদিন না পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে, ততদিন স্নেহাকে তাদের অমানবিক যৌ*ন ক্ষুধা মেটানোর জন্য ব্যবহার করবে।

কিছুদিন পর ডার্ক পুলিশের কারবারে বিরক্ত হয়ে, সকল ক্ষোভ স্নেহার উপর ঢেলে দিল। এসেই স্নেহাকে ভয়ঙ্করভাবে পেটাতে শুরু করল। এর ফলস্বরূপ, স্নেহার হাতে প্রচণ্ড আঘাত লেগে ভেঙে গেল। অবস্কিউর এসে চোখের মনি, যৌ*না* ও ক্লা*টোরিস লাইটার দিয়ে পু*রিয়ে দিল। সাথে স্নেহার যৌ*না* সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে ফেলল। স্নেহা কাঁপতে কাঁপতে এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে উঠল,
“মাআআআআআআ!”
ব্লাডশেড আগুনের গোলক স্ত* এবং নি*ম্বে সঞ্চালিত করলে, তীব্র যন্ত্রণায় স্নেহা চিৎকার করে কাঁদতে থাকলো।
আবার টানা পাঁচ দিনে ৬০ থেকে ৭০ বার ধর্ষ* করা হলো।
কিন্তু এই পাঁচদিন আর কোনো খাবার প্রদান করা হয়নি। খাদ্য হিসেবে ছিল জীবন্ত তেলাপোকা এবং পানীয় হিসেবে স্নেহার প্রস্রাব। কিন্তু ক্ষুধার অতীভূত যন্ত্রণায় এগুলোই গলাধঃকরণ করতে হলো। স্নেহাকে কখনোই কাপড় পরিধান করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু নতুন কোনো মেয়ের শরীরের নাগাল না পেয়ে, অবস্কিউর পাগলের মতো হয়ে উঠেছে। অবস্কিউর র*ক্তাক্ত চক্ষুদ্বয়ে বললো, “তুই, তোর মতো একটা তুচ্ছ সত্তার জন্য আজ আমাদের এত বিপদ পোহাতে হলো। এখন তোর কি পরিণতি হবে?”

বলেই স্নেহার যৌ*ঙ্গের ভিতর বিয়ারের বোতল ভেঙে ঢুকিয়ে দিল। নাক বরাবর একটি প্রবল ঘু*সি মারলে, নাকটি পুরোপুরি বি*কৃত হয়ে অঙ্গটি ভেঙে গেল। স্নেহা তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে পড়ে। ডার্ক ঠান্ডা চোখে বিয়ারের বোতলের টুকরোটি বের করে তীক্ষ্ণ র*ড বারবার যৌ*ঙ্গের ভিতরে ঢুকিয়ে আবার বের করছিল। স্নেহার শরীরসহ র*ক্তে ভেসে গেল স্থানটি। পরে ব্লাডশেড এসে রডটি বের করে আবার কাচি ঢুকিয়ে দিল, আর ঘৃণার শিকার শরীর আরও একবার র*ক্তাক্ত হয়ে উঠল। এরপর সেই কাচির সহিত যৌ*ঙ্গের ক্লি* কে*টে দিল।
এতেই স্নেহার অবস্থা যেন মৃ*তপ্রায় কোনো ব্যক্তির মতো হয়ে গেল। চিৎকার করার শক্তি ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকল। তার শ্বাসপ্রশ্বাস অসীম যন্ত্রণায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। আরও পাঁচ দিন, মোট বিশ দিন পর যখন আউল-রা বাহিরে বেরিয়ে গেল, স্নেহা সুযোগ পেয়ে বনের এই ঘরের অন্ধকার কোণে পুরোনো একটা টেলিফোন খুঁজে পেল। সেটি হাতে নিয়ে পুলিশের নম্বরে ফোন করল। স্নেহার কণ্ঠে অসহায় কান্না ঝরে পড়ল, “হ্যালো, স্যার। স্যার, আমাকে বাঁচান। স্যার, এই ব…”

‘বনে’ কথাটি শেষ হওয়ার আগেই ডার্ক এসে এক ঝটকায় স্নেহার হাত থেকে ফোনটি ছিনিয়ে নিল। অবস্কিউর স্নেহার চুল শক্ত করে ধরে মুখ চেপে টানতে টানতে তাকে ভেতরে নিয়ে গেল। ডার্ক অশুভ হাসিতে ফেটে পড়ে শান্ত গলায় বলল, “সরি স্যার, আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য। আসলে আমার ছোট বোনটা আপনাদের সঙ্গে একটু প্রাঙ্ক করেছিল।”
“ওহ, আচ্ছা আচ্ছা। আচ্ছা, সমস্যা নেই। তবে দ্বিতীয়বার এ ধরনের কিছু করতে বারণ করবেন।”
“ইয়েস, স্যার। এগেইন সরি ফর ডিস্টার্বিং,” বলে ডার্ক ফোনটি কেটে দিল।
এদিকে অবস্কিউর স্নেহার উপর রেগে স্নেহার দুই স্ত* দড়ি দিয়ে বেধে উপরে ঝুলিয়ে দিল। তারপর পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ঘু*সি দিতে থাকল। একের পর এক আ*ঘাত স্নেহার কোমরের হাড়গুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিল। কিন্তু এতেও যখন শান্তি আসল না, তখন তাকে ঝুলন্ত অবস্থায়ই নিষ্ঠুরভাবে স্ত*টি কে*টে ফেলল। একটি স্ত* কে*টে ফেলতেই, অন্যটা ভার সইতে না পেরে ছিড়ে গেল। ততক্ষণে স্নেহাও মেঝেতে পড়ে যায়, আর এক বিকট চিৎকারে সে এই পৃথিবীকে জাগিয়ে তুলে। স্নেহার কণ্ঠের সেই যন্ত্রণাময় চিৎকার এত তীব্র ছিল যে, ওরা তিনজন নিজের কানে হাত দিয়ে বসে থাকল, যেন সেই শব্দ তাদের মস্তিষ্ককে তছনছ করে না ফেলে।

পুলিশকে ফোন করার মতো বিশাল অপরাধ করেছে বলে ডার্ক স্নেহার পায়ে আ*গুন ধরিয়ে দিল। তীব্র তাপের শিখা তার মাংসকে একে একে গ্রাস করতে থাকে, আর অস্থি উন্মুক্ত হয়ে যায়। তার প্রতিটি আর্তনাদ আরও গভীর হয়। হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে সে মুহূর্তে অস্থির দুর্বলতায় নিমজ্জিত হয়। তার শ্বাস যেন বদ্ধ হয়ে গেছে, নাকের ভিতরে র*ক্ত জমে শক্ত হয়ে উঠেছে। তারপর শুরু হয় আরও অমানবিক অত্যাচারের এক যাত্রা। অসংখ্য সুঁই স্নেহার শরীরে প্রবেশ করিয়ে একে একে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করতে থাকে। তার নি*ম্বের রেকটামে আতশবাজি রেখে এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

এতে স্নেহার নি*ম্ব পুড়ে ভয়ঙ্করভাবে জখম হয়ে গেল। তারপর তার মুখে একটি জ্ব*লন্ত মোমবাতি রেখে দেয়া হলো। মোমের তাপে স্নেহার মুখের ভিতরের চাম*ড়া একে একে খ*সে পড়তে লাগলো, আর জি*ভটাও পু*ড়ে তাপের সাথে লেগে গেল। অভ্যন্তরীণ র*ক্তক্ষরণ আর মুখের ভয়াবহ জখমের কারণে স্নেহার খাওয়া-দাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে সে বমি করে ভিতরের দানাপানি বের করে দিল।
স্নেহার এমন অবস্থা দেখে অবস্কিউর ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “ইউ বি*চ, ঘরটাকে তুই নোংরা করে ফেললি?” এটা বলেই স্নেহার যৌ*না* বরাবর বেল্ট খুলে মারতে শুরু করলো। এদিকে ডার্ক এসে বেলচা দিয়ে স্নেহার বমি তুলে আবার তাকে খাওয়াতে শুরু করলো। ব্লাডশেড স্নেহার দিকে তাকিয়ে চোখগুলো উপড়ে তুলে নিল। স্নেহার অবস্থা ক্রমশ অবনতি ঘটছিল। ক্ষীণ শ্বাসের প্রতিটি ওঠানামাই যেন মৃত্যুর পূর্বাভাস।

ডার্ক চিকিৎসার জ্ঞান রাখত, তবে তা বইপত্রের পাতা থেকে অর্জিত নয়, বরং মা-বাবার অভিজ্ঞতার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা কিছু প্রাচীন শাস্ত্র থেকে পাওয়া। এই মুহূর্তে সে এক চিকিৎসকের ভূমিকায়, যদিও তার উদ্দেশ্য নিখাদ মানবতা নয়। নিস্পৃহ শীতলতায় সে স্নেহার চিকিৎসা শুরু করল। কেননা স্নেহা বাঁচলেই তাদের তৃষ্ণা মিটবে।
৩০ দিন পর স্নেহার কান কে*টে নেওয়া হলো, আর এর ফলে স্নেহা তার শোনার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলল। তার পেটের ওপর একের পর এক ভারী পাথর পড়তে থাকলো, প্রতিটি আঘাতে তার দেহে মর্মন্তুদ ব্যথার সঞ্চার হচ্ছিল। তারপর স্নেহাকে একদিন ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা হলো।
৩৫ দিনের মাথায়, স্নেহা মৃদু কণ্ঠে আকুতি জানিয়ে বললো,
“আ.. আমি মর..মরতে চা.. চাই… প্লিজ…”

এই মিনতির শব্দ শোনার পর, তারা সবাই হেসে উঠলো। এদিকে ব্লাডশেড এসে স্নেহার হাত-পায়ের ন*খগুলো প্লায়ার্স দিয়ে একে একে উপ*ড়ে ফেললো। এরপর একটা স্ক্রু-ড্রাইভার রে*টামে বার বার ঢুকানো হলো আবার বের করা হলো। মাথার চামড়ার কিছু অংশ কেটে ছিলে নিল। পরবর্তীতে স্নেহার যৌ*ঙ্গ কেটে ফেলা হলো।
৪০ দিন পর, স্নেহা নিজের মৌলিক শারীরিক প্রস্রাব করার ক্ষমতা হারাতে শুরু করল। তার দেহ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। মুখ থেকে কোনো শব্দ বের করার ক্ষমতা নেই, শুধু ভিতরে ভিতরে যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে খোদাতায়ালার কাছে মৃ*ত্যু প্রার্থনা করলো।

Tell me who I am part 31

৪৪ দিন পর, তার মাথায় গল্ফ স্টিক দিয়ে আ*ঘাত করলে, সেখানেই স্নেহার জীবনাবসান ঘটল। এই ৪৪ দিনে, তার শরীরের প্রতি অত্যাচারের তীব্রতা ছিল অগণনীয়। ৫০০ বারের বেশি তাকে ধর্ষ* করা হয়েছে।
শেষে স্নেহার নিথ*র দেহটিকে ২০০ লিটারের একটি ড্রামে ভরে সিমেন্ট দিয়ে সিল করে দিল। উপরে খোদিত হলো একটি রহস্যময় চিহ্ন, ‘OWL’। তারপর সেই ড্রামটি ময়লার স্তূপের অন্তরালে লুকিয়ে ফেলা হল। যেখানে কেউ আর তাকে খুঁজে পাবে না।

Tell me who I am part 33