Tell me who I am part 33 (2)

Tell me who I am part 33 (2)
আয়সা ইসলাম মনি

মিরা গভীর নিশ্বাস নিয়ে শান্ত স্বরে উত্তর দেয়, “নো।”
কারান হাসির ঝিলিকের সাথে মিরার ঠোঁট কামড়ে ধরে এক অদ্বিতীয় মিলনে আবদ্ধ হয়। কয়েক মুহূর্ত পর মিরার কানের কাছে এসে গভীর স্নিগ্ধতা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, “ইজ ইট পারফেক্ট, বেবি?”
মিরা চোখ বন্ধ করে, একটি গভীর নিশ্বাস নিয়ে কারানের পিঠে আঙ্গুলের শানিত চাপ প্রয়োগ করে। তারপর পিঠের চামড়ায় অপ্রতিরোধ্যভাবে খামচে ধরে বলে, “উফফ, আই কান্ট, কারান।”
কারান গলায় মাদকতা মিশিয়ে বলে, “সে ইয়েস অর নো?”

“ইয়েস।”
কারানের আলতো হাসির মাঝে এক ধরনের দুর্নিবার আকর্ষণ মিশে থাকে। তাদের মিলনের কোমল মুহূর্তগুলো আর কিছু সুখকর আওয়াজে ঘরের প্রতিটি কোণ যেন জীবন্ত হয়ে উঠল।
ক্ষণকাল পর কারান কোমল পানীয়ের গ্লাস থেকে চুমুক দিয়ে স্বাদ নিতে নিতে মিরার দিকে ঝুঁকে আসল। কিন্তু মিরার ভ্রূ কুঁচকে গেল। চোখে গভীর প্রশ্ন ঝলকাচ্ছে; এটি মদ নয় তো? কিন্তু কারানের আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে তা মুহূর্তেই গলে গেল।
“এটা সফট ড্রিংক, তেমন কিছু না। (থেমে) আর ইউ কন্টেন্ট উইথ দ্য লাভ আই গিভ ইউ, সুইটহার্ট?”
মিরা হাসল, তার ঠোঁটের কোণে গভীর তৃপ্তির ছোঁয়া স্পষ্ট।
“are you exhausted, baby?”
“ugh no. Once more.”
সাউন্ড বক্সে ধীরে ধীরে মায়াবী সুর ভেসে এল। গানের প্রতিটি শব্দ এই মুহূর্তের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রং ছিল ফাল্গুনি হাওয়াতে।
সব ভালো লাগছিল চন্দ্রিমায়,
খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে।
গানের সুরে সুরে কারান মিরার দিকে আরো ঝুঁকে এলো। তার ঠোঁট স্পর্শ করল মিরার কপাল, গাল এবং ধীরে ধীরে গলার কাছটায়। মিরার শ্বাস ধীরে ধীরে গাঢ় হতে লাগল। মিরার আঙুলের আলতো স্পর্শে কারানের চুলে ভালোবাসার জোয়ার বইতে থাকে।
চাঁদের আলোতে কারানের চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে নিবিড় মুগ্ধতা, যা মিরাকে আরো গভীর আবেশে ডুবিয়ে দিল।
কারানের প্রতিটি স্পর্শ মিরার হৃদয়ের প্রতিটি কোণ ছুঁয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আলো, ফাল্গুনের হাওয়া এবং তাদের ভালোবাসার মুগ্ধতা মিলে এই মুহূর্তটিকে অমর করে তুলছে।
দুজনে আবারও মধুর সঙ্গমে এক হয়ে গেল। আর পূর্ণিমার আলো তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইল।

সকালে মিরা ধীরে ধীরে চোখ মেলে কারানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারানের ঠোঁটের কোণে তীক্ষ্ণ একটি ক্ষত, যে ক্ষত মিরার নিজের দাঁতের আঁচড়ে সৃষ্টি হয়েছিল। মিরা মৃদু হেসে কারানের ঠোঁটের নিচে একটি মধুর চুম্বন রাখে। তারপর চাদর গায়ে জড়িয়ে উঠে পড়ে। আয়নার সামনে এসে চাদরটি সরিয়ে নিজের প্রতিবিম্বে তাকায়। পুরো শরীরে কারানের দাঁতের দাগ আর নখের চিহ্ন স্পষ্ট।
মিরা নিজের সঙ্গে নিজেই আলাপে মুগ্ধ হয়ে বলে, “মিরা, তুমি ঠিক কতটা অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী, যে কারান চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বকেও সম্পূর্ণ মুগ্ধতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে পেরেছ?”
এটা ভেবে সে কিঞ্চিৎ হাসে। অর্থাৎ নিজের সৌন্দর্যের কাছে সে পরাজিত।
কিছুক্ষণ পর জানালার পর্দাটি অল্প একটু সরিয়ে দিতেই কারান মৃদু চোখ খুলে, হাতের রেখায় নিজের চোখ ঢেকে ফেলে। মিরা স্বচ্ছ হাসি ফেলে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে, গভীর আবেগের সুরে বলে, “গুড মর্নিং, মিস্টার কারান।”
কারান ধীরে ধীরে চোখ মেলে তার ঘুমের মাদকতা ভরা চোখে মিরাকে দেখে কিঞ্চিৎ হাসে। অর্থাৎ কাল রাতের স্মৃতি তার চোখে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তাই সে মিরাকে এক টান দিয়ে শুইয়ে দেয়।
তারপর তার উপরে এসে বলে, “Was I able to make my better half feel truly special last night?”

এটা শুনে মিরার মধ্যে এখন লজ্জা ভর করে। তাই সে চাদরের তলায় মুখ ঢেকে ফেলে। কারান তার লজ্জার ইশারাকে অগ্রাহ্য করে চাদরটি সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মিরা এক অদৃশ্য শক্তিতে তাকে প্রতিরোধ করে। কারান মিরার দিকে তাকিয়ে এক প্রেমিকের মায়াময় শব্দে বলে, “Now I have the license, my love. So why be shy about it?”
মিরা চাদরের তলায় থেকে গুনগুনিয়ে বলে, “কারান, তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসো। এভাবে ঘুমের মাদকতায় কথা বলো না। আমি কিন্তু পাগল হয়ে যাব।”
এটা শুনে কারান দ্রুত মিরার চাদরটি তার মুখ থেকে সরিয়ে নিল এবং মিরার লাল হয়ে যাওয়া মুখাবয়বের দিকে চোখ মেলে তাকাল। মিরা তৎক্ষণাৎ তার শারীরিক সংকোচে কারানের বুকে মাথা লুকিয়ে ফেলল।
কারান গা থেকে স্নেহময়ী গন্ধ ছড়িয়ে মিরাকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “মাত্র দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়েছি, জান। এখন আমার ঘুমের প্রয়োজন। সরি, আমার না, আমাদের। সো ঘুমাও, সুইটহার্ট।”
মিরাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

কিছু ঘণ্টা পর মিরা ঘুম থেকে উঠে কারানের কপালে একটি নরম চুম্বন রেখে নিজেকে প্রস্তুত করতে চলে যায়। গোসল করে শাড়ি পরা অবস্থায় ফিরে আসে। এদিকে কারান তখনো গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। মিরা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে বিছানার পাশে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই চিৎকার দিয়ে বলে, “কারান!”
ঘুমের মধ্যে চিৎকার শুনে কারান সজোরে লাফিয়ে উঠে, তার মস্তিষ্কে অবশিষ্ট ঘুম বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর মিরার মুখের হাসি দেখে সে বুঝতে পারে, এ যে দুষ্টুমির খেলা। তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা নেমে আসে, “তুমি একজন সিইওর লজ্জাহরণ করেছ মিরা, তোমাকে তো জেলে নিয়ে যাওয়া উচিত। ইশ, এই মুখ আমি কাউকে কীভাবে দেখাবো?”

মিরা মুখ চেপে হাসতে থাকে। সে আপনমনে মন্তব্য করে,
“কি নাটকটাই না করছে! অথচ কাল রাতে আমাকে এক মুহূর্তও ঘুমাতে দেয়নি।”
তারপর কণ্ঠে গম্ভীরতা নিয়ে বলে, “তাহলে তো বছরের অর্ধেক সময় আমাকে জেলেই থাকতে হবে। প্রতিরাতে যে আপনার লজ্জাহরণ হবে।”
কারান তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে উঠে মিরার গলা দুই হাতে পেঁচিয়ে নেয়, “হ্যাঁ, তোমাকে আমার জেলে বন্দি করবো। তবে আমার বউয়ের সাহস তো বেড়েই চলেছে। দেখেছ, জঙ্গলী বিড়ালের মতো আমার শরীরটাকে কীভাবে খেয়েছ? কত কত আঁচড় কেটেছ, মিরা।”
মিরা কারানের গলায় তার নিজের দাঁতের কামড় দেখে ধীরে ধীরে সেখানে হাত বোলাতে বোলাতে এক আলতো চুমু খেয়ে বলে, “এটা আমার পছন্দের, মলম লাগাবে না।”
কারান মৃদু হেসে নেশাকর গলায় বলে, “মিরা, তোমার ত্বকের রং কেমন?”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবনায় নিমজ্জিত হয়ে বলে, “হয়ত হোয়াইট চকোলেটের মতো।”
“Then I’d love to eat white chocolate.”
এ কথা শেষ করেই সে মিরাকে এক ঝটকায় শুইয়ে দিয়ে তার ঠোঁটে অপার্থিব চুম্বন ছড়িয়ে দেয়।

বিকেলের রোদের আলো ম্লানভাবে ঘরটি পূর্ণ করে রেখেছে। তখন কারান বিছানায় শুয়ে মিরার কথা ভাবছে আর ফল চিবাচ্ছে। এদিকে ক্ষণকাল পর, মিরা শুভ্র বডিকন ড্রেসে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। পোশাকটি কোমর থেকে নিচে আঁটসাঁট। আর বা পায়ের মাঝখান থেকে কাটা। ড্রেসটির উপরের অংশটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ডিজাইন করা। আর কোমরের কাছ থেকে সুরক্ষিত ভাবে বেঁধে নেওয়া। তার চুলগুলো আধুনিক স্টাইলে মাথার উপরে সাজানো। যা তার স্নিগ্ধ এবং গাঢ় মুগ্ধতায় অতিরিক্ত আকর্ষণ যোগ করেছে।
মিরাকে দেখেই কারানের অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কারানের কণ্ঠে গহিন আকাঙ্ক্ষার সুর ভেসে আসে।
“Your outfit is igniting my deepest desires, my beloved.”
মিরা লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কিঞ্চিৎ হাসে। অথচ তার শরীরের প্রতিটি রেশে প্রেমের অগ্নি জ্বলছে। কারান উঠে মিরার নিকটে গিয়ে, তার হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে যায়। কারানের ঊর্ধ্বাংশ উন্মুক্ত। আর নিচে একটি ট্রাউজার। দুজন দুজনকে দেখে, তাদের চোখ দুটো একে অপরের মধ্যে হারিয়ে যায়।
মিরা পিছনে ফিরে হালকা কণ্ঠে বলে, “আজ আমি যদি তোমার প্রেমে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাই, তাহলে সেটা আমার দুর্বলতা, তোমার মায়ায় বাঁধা পড়ার অপরাধ।”

কারান হেসে মিরার গলায় এক গভীর চুম্বন দিয়ে বলে,
“আমি ভাবছি, আপনার শরীরে আমার ভালোবাসার চিহ্ন আঁকা একান্ত জরুরি।”
মিরা কিছু না বুঝে সন্দেহমাখা দৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকায়। কারান তৎক্ষণাৎ মিরাকে কোলে তুলে বিছানায় ফেলে দেয়। এরপর একটা রং তুলি নিয়ে এসে মিরার পেছনের জিপ খুলে তার গায়ে নকশা করে ‘AK’ লিখে দিল।
কারান ঠান্ডা গলায় বলে, “হয়ে গেছে।”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে আয়নার দিকে ফিরে তার পিঠে দুইটি অক্ষর দেখে, একটু হতভম্ব হয়ে বলে, “একে?”
কারান ঈষৎ হেসে বলে, “আবরার কারান।”
এবার মিরা কারানের গলা জড়িয়ে বলে, “কিন্তু এটা তো গোসল করলেই ধুয়ে যাবে।”
“তাহলে ছুরি দিয়ে কেটে লিখে দেই?”
এই কথায় মিরা তার গলা ছেড়ে দিয়ে একেবারে বিস্মিত দৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে প্রশ্ন ওঠে, এটা কি কথা বলল, কারান? এই অস্থির এবং অপ্রত্যাশিত মন্তব্যে মিরার অবাক হওয়ার পাশাপাশি অস্বস্তিও তৈরি হয়। কারান বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “ভয় পেয়েছ?”

মিরা সংকোচ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে, “ন.. না।”
কারান মিরার ঠোঁটকে ক্ষণস্থায়ী আবদ্ধতায় তার ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নেয়। পরে মিরার ঠোঁটের কাছাকাছি থেকেই বলে, “আপনার ঠোঁটে যে মধু সঞ্চিত আছে, তা পৃথিবীর কোনো ফুলের মুকুলে খুঁজে পাওয়া যাবে না, বেগম।”
এ কথা শুনে মিরা লাজুক হাসি ছড়িয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে, কারান পিছন থেকে তার দুটি হাত একত্রে শক্ত করে ধরে মিরার পিঠের সাথে নিজের শরীর চেপে ধরে বলে, “এই মেয়ে, পালাচ্ছো কার থেকে? তোমার শরীরে যতগুলো দাগ বসিয়েছি, তার চেয়েও ভয়ংকর দাগ দিতে পারি আমি।”
মিরা স্বচ্ছ হাসি দিয়ে বলে, “আচ্ছাআআ, আমি তোমাকে ভয় পাই নাকি!”
কারান হেসে মিরার উন্মুক্ত বাহুতে এক চুম্বন ছড়িয়ে বলে,
“ঠিকাছে, আজ রাতে দেখা যাবে।”

পরেরদিন মিরা আর কারান দুজনেই মালদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ে। প্রথমে তারা ভ্রমণ করে মালদ্বীপের বিখ্যাত সোনালি সৈকতগুলোতে। যেখানে সমুদ্রের নরম ঢেউ এবং স্বচ্ছ পানির মাঝে তাদের ছায়া পড়ছিল। সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে তারা মালদ্বীপের ‘সান্দি বিচে’ পা রাখে। সেখানে সাগরের জলরাশির সাথে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রঙিন হাউসবোটের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকে। মিরা সেখানে কারানের হাত ধরে কিছুক্ষণ হাঁটে, মাঝে মাঝে নরম বালির ওপর ছুটে চলে।
এরপর তারা চলে যায় ‘হান্না লাক্স’ দ্বীপে, যেখানে মিষ্টি খাবার ও স্থানীয় দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁর সেরা আয়োজন তাদের মুগ্ধ করে। কারান একটি চকলেট মুস মুখে নিয়ে মিরার দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলল, “এটা যে কত সুস্বাদু, ঠিক তোমার মতো, বেইবি।”

মিরার মুখে লজ্জার লালিমা খেলে গেল। মিরা সেখান থেকে হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করে। সে যেন একটা ছোট শিশু, আর কারান পিছু পিছু তার সঙ্গ দেয়, দুজনেই একে অপরের পেছনে ছুটে যাচ্ছে।
অবশেষে তারা ঘরে ফিরে। মিরা বলে, “কারান, আমার ক্লান্ত লাগছে, আমি একটু বিশ্রাম নেই।”
“ওকে, সুইটহার্ট।”
মিরা বোরকা খুলে পাশের ঘরে চলে গেল। এদিকে কারান ড্রিঙ্কের ক্যানটি হাতে নিয়ে ডাস্টবিনের দিকে এগোল। ক্যানটি ফেলতেই ভাঙা ফুলদানির টুকরোগুলোর ওপর তার চোখ আটকে গেল। তার কপালে গভীর ভাঁজ পড়লো।
সে কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে বলল, “রোজই তো রুম পরিষ্কার হয়, অথচ এই ভাঙা টুকরোগুলো এখনো এখানে কেন?”

তার দৃষ্টি হঠাৎ আটকে গেল। ভাঙা টুকরোগুলোর মাঝে কালো কিছু একটা লুকিয়ে আছে, যা ঘরের আধো অন্ধকারে অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। কৌতূহল তাকে টানল। দ্রুত হাত বাড়িয়ে ফুলদানির ভাঙা অংশ তুলতেই কারান চমকে উঠল। ফুলদানির ভেতর ছোট্ট একটি হিডেন ক্যামেরা!
তৎক্ষণাৎ কারানের মুখ অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। দাঁত চেপে, গভীর ক্রোধে ফুঁসে উঠল সে। তার ঠোঁট থেকে চাপা গর্জনের মতো শব্দ বেরিয়ে এল, “ফা’কিং জা’র্ক!”
তপ্ত মুহূর্তে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল। কারানের চোখে নেমে এলো প্রতিশোধের অগ্নি। অর্থাৎ তার অন্তরঙ্গ গোপনীয়তা নিষ্ঠুরভাবে পদদলিত হয়েছে।
ক্যামেরাটা হাতে তুলে দ্রুত পায়ে ম্যানেজারের কক্ষে প্রবেশ করল কারান। কিন্তু সেই ঘরের সবকিছু শান্ত।
তবে একটু পরই একটা অন্ধকার কক্ষ থেকে ভেসে এলো পাঁচজন মানুষের আর্তচিৎকার। প্রতিটি চিৎকার ঘরের দেওয়ালগুলোকেও কাঁপিয়ে তুলল।

কারান অনিয়ন্ত্রিত শক্তির মূর্তি হয়ে উঠল। তার চোখে আগুন জ্বলছে। যা কিছু সামনে পেয়েছে, কাচের বোতল, চেয়ার; সবকিছু তার ক্রোধের অস্ত্র হয়ে উঠল। প্রতিটি আঘাতে সে নিজের সমস্ত ক্রোধ উগড়ে দিচ্ছে। পাঁচজনের শরীর লাল হয়ে উঠল, রক্তের গন্ধ ঘরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ল।
শেষমেশ ম্যানেজারের দিকে ধেয়ে গেল কারান। লোকটার কলার চেপে ধরে কটমট করে বলল, “Why did you do all this?”
লোকটি কান্না ভরা গলায় বলল, “I..I’m sorry Sir… please let us go, it..it won’t happen again…”
কিন্তু কারানের চোখে শুধু প্রতিশোধের অগ্নি জ্বলছে। অতিরিক্ত রাগের মাথায় কারান নানাচাকু দিয়ে মার্শাল আর্টের দক্ষতায় একের পর এক আঘাত করে তাদেরকে বেদম পিটিয়ে চলে। ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হেসে কারান বলে, “আমি তুচ্ছ শত্রুদের পেছনে সময় নষ্ট করি না। আমার লক্ষ্য আরো বড়, আমাকে সিংহের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। ইঁদুর কিংবা বিড়ালকে পরাস্ত করার জন্য হাত ময়লা করার কি দরকার!”
এরপর একে একে পাঁচজনের হাত ভেঙে দেয় সে, ছুরি দিয়ে প্রত্যেকের আঙুলগুলো কেটে ফেলে। তারপর ছুরির আগায় প্রতিটি অ*ন্ডকোষ কেটে ফেলে। সাথে সাথে বিশাল এক চিৎকারে পুরো ঘর কেঁপে ওঠে। এরপর সবগুলো অন্ড*কোষ ধরে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে একে একে প্রত্যেকের মাথায় গুলি করলে, এখানেই তাদের গল্পের অন্ধকার পরিসমাপ্তি ঘটে।

তারপর সেই গোপন কক্ষে বসে থেকে কম্পিউটারে অসংখ্য গোপন ভিডিও দেখতে পায়, যার মধ্যে মিরা ও কারানের ঘরে প্রবেশের কিছু ভিডিও রয়েছে। কিন্তু ফুলদানির ভাঙার ঘটনায় বিশেষ কিছু রেকর্ড হয়নি। তবে স্ক্রিনে মিরাকে দেখে কারানের ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠে। এরপর কম্পিউটারের স্ক্রিনে মিরার কোমর, ঠোঁট, বক্ষস্থলে কারান আঙুলের সহিত আলতোভাবে ছুঁয়ে দিল। একটুপর নিজের ভাবনায় ফিরে এসে কম্পিউটারটি তুলে সজোরে ভেঙে ফেলে।
কারান জানে, যেহেতু ম্যানেজারসহ অনেকেই উধাও হয়ে গেছে, সুতরাং পুলিশ আসবে। সে তাই পাঁচটি লাশে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই দৃশ্য দেখতে দেখতেই ফারহানকে কল দিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “ফারহান, একটা কাজ কর। তোকে ইমেইলে বিস্তারিত পাঠিয়েছি,” বলেই ফোনটি কেটে দেয়।
তারপর ফারহানকে দিয়ে হোটেলের সিসি ক্যামেরাগুলো হ্যাক করায়, যাতে তার আগুনের কৌশলগুলি ক্যামেরায় ধরা না পড়ে। কিন্তু একটু পর ফায়ার অ্যালার্ম বাজতেই হোটেলের সবাই হুড়োহুড়ি করে পালাতে থাকে।
এরপর কারান মিরার কক্ষে এসে বলে, “মিরা, চলো তাড়াতাড়ি।”

ফায়ার অ্যালার্মের আওয়াজ শুনে মিরাও আর কোনো কথা না বলে কারানের হাত ধরে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসে দুজনেই দাঁড়িয়ে যায়। চোখের সামনে রিসোর্টটি দাউদাউ করে জ্বলছে, আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে। আশপাশের শোরগোল, আতঙ্কের চিৎকার; সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশটা এক দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠল। মিরার কণ্ঠ কাঁপতে থাকে, “হে আল্লাহ, এটা কীভাবে হলো? কারান আমার ভেতরটা কেমন যেন অশান্ত লাগছে। ফিরে চলো।”
কারান চুপচাপ আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে কোনো আবেগ নেই, শুধু ভারী গম্ভীরতা। কারান বলে, “হুম।”
তারা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে দ্রুত এয়ারপোর্টের দিকে পা বাড়ায়।
ফ্লাইটের ভিতরে বসে মিরার মন ছটফট করে। সে জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কারান এক পাশে বসে উপরের দিকে তাকিয়ে কোনো এক অজানা পরিকল্পনার ধোঁয়াশায় ডুবে থাকে।
মিরা চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে থাকে। এই ভয়াবহ আগুন কি শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি কিছু গোপন গল্পের ইঙ্গিত? তা সে জানে না। জানে শুধু এই যাত্রা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চলেছে। অর্থাৎ তারা বেঁচে গেছে।

দুজনে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে পা রাখতেই ঘরে হাসির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, সেই হাসি দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর পাওয়া আনন্দের নিশ্বাস। আম্বিয়ার চোখের তারায় খুশির ছোট ছোট ফুল ফুটে উঠেছে। মিরার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “এইবার তাইলে পুতির মুখখানা দেহন চাই।”
মিরার মুখে লজ্জার স্বচ্ছ ছায়া খেলে যায়। সে চুপচাপ চপল পায়ে নিজের কক্ষে চলে যায়। কারান তখন হাসতে হাসতে আড়মোড়া ভেঙে বলে, “তুমি চিন্তা করতে থাকো, জান। এত তাড়াতাড়ি তোমার পুতির দেখা মিলবে না। সবে তো শুরু হলো।”
তার কথায় সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়। আম্বিয়া ঠাট্টার ছলে তার কান ধরে মাথা নুইয়ে বলে, “পাজি পোলা! এক্কেবারে নির্লজ্জ!”

কারান মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “লাগছে দিদা, সরো সরো। আমার বউয়ের কাছে যেতে দাও। বউ… বউ কোথায়?”
সে কক্ষের দিকে এগোতে শুরু করে, ঠিক তখনই তালহা পেছন থেকে ঠান্ডা গলায় বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ভাইকে যেতে দাও। অনেক হার্ড ওয়ার্ক করে এসেছে তো! ভাই এখন টায়ার্ড।”
কারান পেছন ফিরে হেসে বলে, “তোর ভাই এত সহজে টায়ার্ড হয় না, কয়েকটা রাউন্ড দেওয়ার স্ট্রেংথ আছে। সুইটহার্ট, কোথায় গেলে?”
তারপরই কক্ষের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে হতে বাইরে থেকে ভেসে আসা হাসির রেশটুকুও সঙ্গ নিয়ে যায়।

রাতে কারান কিছুটা তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেরিয়ে ফারহানের সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে উঠল।
“শোন, কালকেই আমরা দুবাই যাচ্ছি। ওদেরকে জানিয়ে দে।”
“ওকে ব্রো,” বলে ফারহান ফোনটি কেটে দিল।
কারান নিজের অঙ্গীকার সেরে, দ্রুত মিরার কাছে চলে গেল। এদিকে মিরা হাস্যরসে ভরা কথাবার্তায় মগ্ন।
আম্বিয়া তাকে কিছুটা মজার ছলেই আওড়াল, “হুনো নাতবউ, আমার নাতনিটার কথা কানে তুলবা না। পরের মাসেই কিন্তু পুতির ম্যা ম্যা কান্দনের শব্দ হুনবার (শুনতে) চাই।”
এ কথা শুনে মিরা মাথা নীচু করে লজ্জায় রক্তিম আভায় ভরে উঠল। এদিকে কারান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ঠাট্টা মাখা কণ্ঠে বলল, “তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করতে হলে, আগে তো আমার বউকে আমার কাছে পাঠাতে হবে। এদিকে এসো, বউ…” বলেই এক ভ্রূ জাগিয়ে দুষ্টু হাসি দিল। মিরা কিছুটা বিব্রত হয়ে মাথা নীচু করে রাখল। ফাতিমা মুচকি হেসে বলল, “মধুচন্দ্রিমায় যাইয়া তুই শয়তান হইয়া গেছিস, কারান। অহোন বউ এইহানে থাকবো।”
কারান গা ছাড়া ভাব নিয়ে মিরাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

“পাঁচ বছরের আগে তোমাদের আশা পূর্ণ হচ্ছে না। চলো, বেবি।”
মিরা তার কাঁধে চিমটি কেটে দাঁতে দাঁত চেপে আস্তে করে বলল, “নামাও কারান, সবাই দেখছে।”
চিমটির কারণে কারান একটু দুষ্টুমি করে হাসতে থাকল,
“আহ বেবি, লাগছে তো।”
এই কথায় মিরার চোখ চমকে উঠল, লজ্জায় তার মুখ একেবারে লাল হয়ে গেল। অন্যদিকে বাকিরা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। তারপর কারান মিরাকে নিজেদের কক্ষে নিয়ে, বিছানায় শুইয়ে দরজা আটকে দিল। তার চোখে এক ধরনের নির্লজ্জ আগ্রহ ছিল। আর সে ধীরে ধীরে মিরার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
এদিকে মিরা ইচ্ছে করেই কারানকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হঠাৎ শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান করে। এটি দেখেই কারান বাচ্চার মতো কান্নার ভান করে বলে, “বউ, আমি কিন্তু অনশন করবো এমন করলে। এমনিতেই কতদিন তোমার থেকে দূরে থাকতে হবে, তাও জানি না।”

এ কথা শুনে মিরা তৎক্ষণাৎ উঠে পরে, তার চোখে অসহায়ের চাহনি রেখে বলে, “মানে?”
এবার কারান মিরার পাশে এসে বসে শান্ত গলায় বলে,
“আ.. মিরা, অনেক জরুরি একটা কাজে আমাকে দুবাই যেতে হবে। জানি না কবে ফিরবো, তবে তোমাকে ভিডিও কলে তো দেখবোই।”
এ কথাটি শোনামাত্র মিরার চোখে জল ঝরতে শুরু করে, সে দ্রুত কারানকে জড়িয়ে ধরে। কারানও মিরাকে আঁকড়ে ধরে বলে, “কি হয়েছে, সোনা?”
মিরা আরও শক্ত করে তার শরীর কারানের সাথে মিশিয়ে দেয়। অর্থাৎ এক বিন্দু ফাঁকও যেন তাদের মধ্যে থেকে না যায়। তার মুখমণ্ডল কারানের গলার কাছে ডুবিয়ে দেয়। তার চোখের কোণে জমে থাকা এক ফোঁটা জল কারানের বুকের দিকে গড়িয়ে পড়ে। কারানের চোখে গভীর নিঃসঙ্গতার ছাপ দেখা যায়, তবু সে মিরাকে শান্ত করার চেষ্টায় বলে, “আরে বাবা! এটা তো অল্প কিছুদিনের ব্যাপার। আমি তো চিরতরে যাচ্ছি না।”
মিরার কণ্ঠস্বর কাঁপতে কাঁপতে ফিসফিস করে ওঠে,

“না, যাবে না।”
কারান মিরার মুখ তুলে ধরে, তার অশ্রুর ক্ষুদ্র কণাগুলো ঠোঁটে গ্রহণ করে। অর্থাৎ সে মিরার বেদনার ভার নিজের মধ্যে ধারণ করতে চায়। কারান বলল, “বাচ্চাদের মতো কথা বলো না, মিরা। আমি তো তোমার কাছে ফিরব।”
কিন্তু মিরা যেন শুনতেই পায় না। তার ঠোঁট কারানের চোখে, গালে, গলায় একের পর এক স্পর্শ রেখে বলে চলে, “বলেছি তো, যাবে না।”
কারানের হৃদয়ের গভীরে অস্থিরতার ঢেউ খেলে যায়। মিরার এই আকুতি, তার এই নির্ভেজাল ভালোবাসার বেদনা, তাকে মুহূর্তে ভেঙে ফেলে। সে মিরার মুখমণ্ডল দুহাতে আবদ্ধ করে, গভীর দৃষ্টিতে মিরার চোখে চোখ রেখে বলে, “এভাবে বলো না, মিরা। তাহলে সত্যিই আমি আর যেতে পারব না। শুধু তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবো।”
“তাহলে হারাও। তাও আমাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া যাবে না।”

কারান তাকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে, নরম কণ্ঠে বলে, “ছেড়ে কোথায় যাচ্ছি, মিরা? তুমি তো আমার সবকিছু, তোমার ভেতরেই আমার পৃথিবী। এই কিছুদিনের বিচ্ছেদ, শুধু তোমার মাঝে ফিরে আসার তৃষ্ণা বাড়াবে।”
মিরা আবারও কারানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তার অস্তিত্বের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে থামিয়ে দিতে চায়। গলাটা কাঁপতে কাঁপতে বলে ওঠে, “আমি কিন্তু কান্না করবো, কারান।”
কারান একটু হেসে ফেলে। কোমল স্বরে বলে, “আমার একটা বাচ্চা বউ।”
কিন্তু কারানের এই নির্বিকার ভাব মিরার মনে অভিমান আর ক্ষীণ ক্রোধের জন্ম দেয়। সে কারানের কোলে বসে পড়ে, তার ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে আসে। তার চোখে বিদ্রোহের অগ্নিশিখা ফুটে ওঠে। ঠোঁটের প্রান্তে এক খণ্ড ঝাঁঝ মিশিয়ে বলে, “আমি এভাবেই বসে থাকবো। উঠবো না। দেখি কেমন করে যাও তুমি।”
কারান মিরার ঠোঁটে মৃদু চুম্বন এঁকে দিয়ে বলে, “আজ রাতে তোমাকে তোমার স্বপ্নের সীমাহীন আকাশে ভাসাবো, মিরা। প্লিজ, এমন করে বলো না। আমাকে যেতেই হবে।”

মিরা এবার আর্ত রাগে ফেটে পড়ে। তার চোখের গভীরে আহত আত্মসম্মান জ্বলে ওঠে। সে কারানের কোল থেকে উঠে জানালার দিকে চলে যায়। বাইরের রাতের স্তব্ধতা আর চাঁদের ম্রিয়মাণ আলো তার মনের ভাঙা প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। সে দাঁড়িয়ে দূরের অজানা কোনো শূন্যতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কারান কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে মিরার অভিমানী নীরবতায় ডুবে যায়। তারপর সে পিছন থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মিরাকে আঁকড়ে ধরে। মিরার কাঁধে থুতনি রেখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলে, “আই লাভ ইউ, মহারানি ভিক্টোরিয়া।”
এই আচমকা উক্তিতে মিরা অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। তার চোখে একসঙ্গে অভিমান, ভালোবাসা, আর অদ্ভুত কোমলতা মিশে থাকে। কারানের দিকে ঝুঁকে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এই আলিঙ্গনে সে সমস্ত দূরত্ব মুছে দিতে চায়। কারানও হেসে মিরাকে বুকে চেপে ধরে।

সকালে কারান নিজেকে গুছিয়ে, সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে রওনা হলো। তালহাকে একপাশে ডেকে নিয়ে, ঠান্ডা কণ্ঠে বলল, “যতদিন আমি না ফিরবো, এখানের সব দায়িত্ব তোর। মিরার খেয়াল রাখিস, মানে ভালোভাবে দেখে রাখিস।”
তালহা কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল, “খেয়াল তো রাখবো, ভাই। কিন্তু আমাদের তো আর্জেন্ট সিডনি যেতে হবে।”
“আমি ফিরলেই যাবি।”
এরপর ধীর পায়ে মিরার কাছে এগিয়ে গেল। মিরা নিস্তেজ মুখাবয়বে চুপচাপ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
কারান শীতল হাসল। পরে মিরার কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলল, “তুমি যদি এমন করো, তাহলে আমি কেমন করে যাব, মিরা?”
মিরা হাসার চেষ্টা করল, যদিও চোখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। বলল, “সাবধানে যেয়ো। আর শুনে রাখো, দুবাইয়ের কোনো মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবে না। তাহলে ওই চোখ আমি নিজ হাতে তুলে নেব।”
মিরা মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। কারান মিরার অভিমান দেখে ঈষৎ হাসল। পেছনে তাকিয়ে নিশ্চিত হলো কেউ দেখছে না। তারপর সুযোগ বুঝে মিরার ঠোঁটে কয়েক সেকেন্ডের গভীর চুমু খেয়ে নিল।
“বিরিয়ানি থাকতে পানতা ভাতে নজর দেওয়ার ইচ্ছে বা অভিসন্ধি, কোনোটাই কারান চৌধুরীর নেই।”
এ কথায় মিরা হেসে বলল, “সাবধানে যাবেন। আর মনে রাখবেন, আপনার জন্য আপনার বেগম অপেক্ষা করবে।” এই বলে কারানের কপোলে আলতো চুমু খেয়ে নিল।

কারান শান্ত স্বরে বলল, “আল্লাহ হাফেজ। লাভ ইউ, বউ।”
পরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখে ইতিমধ্যে ফারহান এসে পৌঁছেছে।
ফারহান ডেনিমের প্যান্ট আর কালো জ্যাকেটের নিচে পরা শাইনিং কালো শার্টে দাঁড়িয়ে আছে। তার পোশাকের মধ্যে কোনো অতিরিক্ত আড়ম্বর নেই বরং প্রতিটি উপাদানই আধুনিক ক্লাসিক্যাল স্পর্শে অভিজ্ঞানিত।
তার পাশেই শ্যাম বর্ণের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে, মেয়েটি সাদা গেঞ্জি, আর সাথে কালো প্যান্ট ও কালো লেদার জ্যাকেট পরিহিত। তার স্লিম ও পরিপাটি শরীরের প্রতিটি রেখা ধরে সুন্দরভাবে ফিট হয়েছে। মেয়েটির দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিতে বোঝা যায়, সে আত্মবিশ্বাসের মূর্তি হয়ে চলে।
কিন্তু কারানকে দেখতেই মেয়েটির সমস্ত আভিজ্ঞান হাওয়া হয়ে গেল।
অথচ কারান এক মুহূর্তের জন্যও মেয়েটার দিকে তাকায়নি। ফারহান এগিয়ে এসে আলিঙ্গন করে হেসে বলল, “হেই ভাই, কি অবস্থা?”

কারান আলিঙ্গন করে পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলল,
“চলছে। এখন চল, আমার প্রাইভেট জেটের মাধ্যমে সবাই যাব। এমেকা দুবাইতে সরাসরি আসবে।”
ফারহান মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল। এর মধ্যেই আয়লা কারানকে দেখে অভিভূত হয়ে বলে, “Hello there. I must say, your eyes are truly captivating. Might I ask, Are you single?”
কারান তার দিকে না তাকিয়েই হালকা হেসে দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল, “I’m married.”
“OMG! Your wife must truly be a lucky woman.”

Tell me who I am part 33

কারান এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দেয়, “Ah, no. The fortune is mine, but if you ever catch a glimpse of my wife, you’ll understand why I feel like the luckiest man alive, with the universe itself seemingly favoring me.”
(অনুবাদ: “আহ, না। এই সৌভাগ্য আমার, কিন্তু তুমি যদি কখনো আমার স্ত্রীর একটি ঝলকও দেখো, তাহলে বুঝতে পারবে কেন আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ মনে করি, যেন মহাকাশ নিজেই আমাকে আশীর্বাদ করেছে।”)

Tell me who I am part 34