Tell me who I am part 34

Tell me who I am part 34
আয়সা ইসলাম মনি

সেদিন হুড়পরী বলা ছেলেটা প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে। তার মনে একটাই চিন্তা, বাঘের ভয়াবহ চোখের সামনে তার অস্তিত্ব নড়ে উঠেছে। এর ফলস্বরূপ নিশ্চিত ধ্বংস। ছেলেটা ছুটতে থাকে, শুধুই ছুটতে থাকে। তার পিছু পিছু মৃ*ত্যু আসছে। আর একমাত্র পালিয়েই সে প্রাণ রক্ষা করতে পারে। দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় শ্বাস বন্ধ হতে থাকে। তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, আর সে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে বসে যায়।
চারদিকে ঘন অন্ধকার। মেঘলা আকাশও তার ভীতির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু সে জানে, থামলে চলবে না। কারান যদি একবার তার নাগাল পায়, তবে কোনোভাবেই বাঁচার উপায় থাকবে না। এই ভয় তাকে আবার গতি দেয়। দেহের সব শক্তি একসঙ্গে যোগ হয়ে তার পায়ের তলায় ঝড় তুলে দেয়। কিন্তু একটু পরই এক বলিষ্ঠ শরীরে ধাক্কা খেয়ে নিচে বসে পরে।

ঘাড় ঘুরিয়ে তার চোখে পড়ল অজ্ঞাত এক লোকের মুখ। গভীর ঠান্ডা গলায় লোকটি বলে উঠলো, “আদিম।”
শব্দটা শুনে ভয় ছেলেটার গলা চেপে ধরে। আদিম স্থির হয়ে ঢোক গিলে, কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে উপরে ধরতেই চোখে পড়ে, কারানের বিশাল দেহ। তার হাতে কুঠারের ঝলকানি দেখে আদিমের হৃদপিণ্ডে প্রবল আতঙ্কের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আদিম কাঁপতে কাঁপতে কারানের পা জড়িয়ে বলে, “ভা… ভাই। আমি যদি জানতাম উনি আপনার বউ, আমি চোখ তুলে তাকানোর সাহস তো দূর, ভাবির থেকে এক হাজার হাত দূরে থাকতাম। পি..প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন, ভাই।”
কারান হেসে এক পায়ে বসে, আদিমের চুল মুঠোয় ধরে বলে, “আদিম, তোকে আমি আগেই বলেছিলাম, আমাকে ফলো করিস না। কারণ আমি ভালো মানুষ নই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদিম চোখে জড়তা নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “ভাই, দয়া করে ক্ষমা করে দিন। বিশ্বাস করুন, আমি চলে যাব। শুধু এখান থেকে নয়, আমি পুরো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাব… মা*রবেন না, ভাই। প্লিজ, মার*বেন না।”
কারান তীক্ষ্ণ হাসি দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে, “এত ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি তো আগের কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”
এ কথা শুনেই আদিম কেঁদে উঠে। অন্ধকারের মাঝে তার শরীর আরও অসহায় হয়ে পড়ে। আদিম বুঝতে পারে, এ যাত্রা আর রক্ষা নেই। তাই নিজেই কারানের হাত থেকে কুঠারটা কেড়ে নিয়ে নিজের বাম হা*ত কে*টে ফেলে। আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে, “আআআআআআ!”
বলা বাহুল্য, এ কাজের পেছনে একটাই উদ্দেশ্য; কারান যেন এটা দেখে তাকে মে*রে না ফেলে। আদিম যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মাটিতে গড়াতে থাকে। অথচ কারান ঠান্ডা চেহারায় আদিমের র*ক্তাক্ত হাতটা তুলে বলে, “এটা দিয়ে গল্ফ স্টিক বানানো যাবে, কি বলিস?”

আদিম কাঁদতে কাঁদতে আর্তনাদ করে বলে, “ভাই, আম… আমি এত তাড়াতাড়ি ম*রতে চাই না।”
কারান চোখে তীক্ষ্ণ, শীতল দৃষ্টি নিয়ে ঠান্ডা হেসে বলে, “কিন্তু তোকে দিয়ে কি করবো বল? এখন তো আর তোকে কোনো কাজে লাগবে না। তার উপর আমার বউকেই… মেয়ে পেলি না আর?”
এ কথা বলেই কারান নিজের ফোন থেকে মিরার একটি ছবি বের করে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্ষণকাল মিরার ছবিটি দেখে। এরপর ছবিটি আদিমের সামনে ধরে বলে, “দেখ, শুধু চেহারাটা দেখ।”
আদিমের সমস্ত শরীর একসাথে থরথর করে কাঁপতে থাকে। তার শরীরের প্রতিটি র*ক্তকণিকা বুঝতে পারে, সে যে ভয়াবহ পথে এগিয়ে গিয়েছিল। আর এই মুহূর্তে তার অস্তিত্বের শেষ প্রহর শুরু হয়ে গেছে। সে জানে, এখন আর পালানোর কোনো উপায় নেই।
আদিম ভয়ে ভয়ে ফোনের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই, কারান পকেট থেকে কলম বের করে ওর চোখের মধ্যে ঢু*কিয়ে দিল। র*ক্ত ছিটে কারানের মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। আদিম তীব্র যন্ত্রণায় ছ*টফট করতে করতে মাটিতে গড়াতে থাকে।

কারান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, “তোর সাহস দেখে অবাক হলাম। আমার বউয়ের ছবি দেখার সাহস করিস! আমার বউকে যে তোর চোখ দুটো দিয়ে দেখতে পেরেছিস, এটাই তো তোর পরম সৌভাগ্য, পিস অফ শি*ট।”
কারান হাসতে হাসতে আবার বলে, “মিরা শুধু আমার ভালোবাসা নয়, ও আমার প্রাণভোমড়া। আজকে তোর ব্রেনে মিরার যতগুলো ছবি তৈরি হয়েছে, সবগুলো আমি মুছে দিব।”
এই বলে কুঠার হাতে নিয়ে আদিমের মাথায় আঘাত করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু আদিম তার আগেই ভয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, “ভা..ভাই, আরেকটা সুযোগ দিন। আপনি তো সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেন। ভাই, প্লিজ।”
এটা শুনে কারান কুঠারটা থামিয়ে দিয়ে, ক্ষণকাল কপাল ঘষে তীক্ষ্ণ গলায় বলে, “কিন্তু তোর শাস্তিটা অনেক ছোট হয়ে যাচ্ছে।”

এরপর সে আরেকটি কলম আদিমের অন্য চোখে ঢু*কিয়ে দেয়। আদিমের চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, তার কোটরের মাঝ দিয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। কারান গভীর নিশ্বাস নিয়ে বলে, “জাস্টিস ডিম্যান্ডস ব্যালেন্স। যদিও ইচ্ছে করছে তোর মাথাটাই ভে*ঙে ফেলতে কিন্তু…তোকে ক্ষমা করলাম।”
কারান প্রস্থান করে।
কারান বাড়িতে ফিরে পোশাক বদলে নিজেকে পরিষ্কার করে এসে, মিরার ঘুমন্ত মুখটি দেখে। আর এখানেই কারানের সমস্ত শান্তি। মিরার দিকে ঝুঁকে আপনমনে বলে, “আজকে তোমার প্রতিটি চুমু, আমি খুব গভীরভাবে অনুভব করেছি, মিরা।”

তারপর মিরার পাশে নিঃশব্দে শুয়ে, মিরার ঠোঁটের কোনে অবিনাশী চুম্বন দিয়ে পুনরায় তাকিয়ে থেকে বলে, “তোমার শরীরের প্রতিটি দাগ হবে আমার সৃষ্টি। তোমার প্রতিটি শ্বাসে আমি থাকবো। আমি তোমার জীবনের সেই হিরো, যে তোমাকে নিয়ে যুদ্ধে বারংবার জয়ী হবে। আবার আমিই সেই অন্ধকার ভিলেন, যার ছায়া নিঃশব্দে তোমাকে তাড়া করে। আমি তোমার শুরু, আবার আমিই তোমার শেষ সীমানা।”
তারপর নেশালো গলায় ফিসফিস করে বলে, “When I make love to you passionately, and your voice calls my name, it takes me to a place where only the warmth of our connection exists, baby.”
এরপর ঠোঁট কা*মড়ে বাঁকা হাসি দিয়ে মিরাকে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের দিকে টেনে নেয়। মিরা অনন্ত অবচেতনে তাকে জড়িয়ে ধরে। আর কারানও মিরাকে উষ্ণতার সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে, “Love you, sweetheart,” বলে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে আদিম দীর্ঘ সময় কান্নায় ভেসে গিয়ে, অবশেষে নিজের শরীর চলাতে শুরু করে। যদিও তার চোখ বেয়ে পানির বদলে র*ক্ত ঝড়ছে। কিন্তু এর মধ্যেই তার কানে ক্রাং ক্রাং চেইনশোর শব্দ ভেসে আসে। আদিম বুঝে যায়, কারান তাকে ছেড়ে যায়নি। সে তাকে ঠিকই মেরে ফেলবে। আদিম ভয়ার্ত গলায় প্রার্থনা করে বলে, “ভাই, প্লিজ। একটা সুযোগ দিন। আমি তো সারাজীবন আপনার কথা শুনে এসেছি। প্লিজ, ভাই… এবারের মতো ছেড়ে দিন। ভা..ভাই…”
কিন্তু অজ্ঞাত লোকটা চুপ করে থাকে। লোকটা লম্বায় ছয় ফুট, গায়ে কালো ট্রেঞ্চ কোট পরিহিত। তার মুখ কালো মাক্স দিয়ে ঢাকা। তবে তার হান্টার চোখ দুটি দেখা যায়। একটির বর্ণ সবুজের সাথে ধূসর, আর অন্যটির বর্ণ নীলের সাথে ধূসর। বাম চোখের নিচে তীক্ষ্ণ একটি দাগ স্পষ্ট দেখা যায়। তার বাম হাতে টুলবক্স এবং ডান হাতে চেইনশো। আর পায়ে কালো চামড়ার বুট।

আদিম যন্ত্রণায় নিজের আত্মশক্তি হারিয়ে মাটিতে ভেঙে পড়ে। তার চোখে এখনও কলম গেঁথে রয়েছে। লোকটা আস্তে আস্তে আদিমের মুখের দিকে ঝুঁকে, এক পলক তার পুরো মুখশ্রী পরখ করে নিল।
এরপর আদিমকে জোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিল। আদিম উঠে দৌড়ানোর চেষ্টা করতেই, কোমরে বিশাল একটি করাতের আ*ঘাত হানে। আর তাতেই কোমর থেকে ভলভলিয়ে র*ক্ত প্রবাহিত হতে থাকে।
“আআআআআ!”
আদিমের ভয়ংকর চিৎকারে বনভূমির নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল। এরপর আদিমের প্রতিটি হাতের আ*ঙুলে পেরেক ঢুকিয়ে মাটির সাথে গেঁথে দেওয়া হলো। তার শরীর থেকে টেনে টেনে কাপড় ছিঁ*ড়ে ফেলা হলো। লোকটার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না, কেবল শ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সে আদিমের পায়ের কাছে গিয়ে, পায়ের প্রতিটি আঙুলে লোহার পেরেক গেঁথে দিল। র*ক্তে মাটি ভিজে যেতে থাকল। তবে আদিমের চিৎকার থামছে না।
লোকটার আঘাতের ধরন দেখে আদিম গর্জে উঠলো, “এ… এটা কা..কারান ভাইয়ের কাজ হতে পারে না। কে..কে তুমি?”

কারণ কারানের আ*ঘাতের পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। তবে কোনো উত্তর এলো না, বরং লোকটার মুখাবয়ব কিছুটা কুঁচকে গেল। বোঝা গেল যে সে বিরক্ত হয়েছে। সে টুলবক্স খুলে একটি প্যাকেট থেকে কয়েকটি বিশাল লোহার টুকরা বের করল। আদিমের মুখের ধ্বনি তার ধৈর্য ভঙ্গ করল। তাই সে তার জি*ভকে শক্ত করে টেনে ধরে একটি লোহার রড ঢু*কিয়ে দিয়ে জি*ভটি গালের সাথে গেঁথে দিল। আবারও র*ক্তের স্রোত দরদর করে বয়ে যেতে থাকলো।
এবার আর আদিমের চিৎকারের কোনো পথ নেই। ধীরে ধীরে লোকটি তার মাথার কাছে ঝুঁকে, ধপ করে চোখ থেকে কলমটি বের করে আনল। ক্যাচ শব্দে চোখের র*ক্ত ছিটে উঠলো। এরপর দুটি লোহার টুকরো আদিমের চোখের গহ্বরে প্রবেশ করাল, সাথে সাথে লোহার টুকরোগুলি মস্তিষ্কে গিয়ে ঠেকল। যেখানে যন্ত্রণার অবিনাশী শৃঙ্খলা সৃষ্টি করল। তার তাজা র*ক্তের গন্ধ বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ল। তারপর আদিমের পুরু*ষা* টে*নে ধরে, তার আ*গায় একটা লো*হার পে*রেক ঢুকানো হল। এমন এক বিভীষিকাময় অবস্থা আছড়ে পড়ল যে, জীবন আর মৃ*ত্যুর মাঝে আর ফারাক রইল না। অথচ আদিমের চিৎকার করারও উপায় নেই। অজ্ঞাত ব্যক্তিটি শীতল দৃষ্টিতে কেবল তার অসহায় দেহটি অবলোকন করল। তারপর শক্ত হাতের স্পর্শে, আদিমের অন্ড*কো* বরাবর দুটি পে*রেক ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।

পরে সে ধীর গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে, এক হাতে আদিমের কোমর আঁকড়ে ধরে তাকে তুলে আনতে থাকে। এমনভাবে তাকে তোলা হচ্ছে, যেন কোমরের পাজরগুলো ক্রমশ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। লোহার পে*রেক গেঁথে থাকা পায়ের আঙুলগুলো মাটির সাথে ছিঁ*ড়ে থেকে গেল। অতঃপর তার দেহটি এক হাতে কাঁধে তুলে নিয়ে লোকটা চুপচাপ হাঁটতে শুরু করল। কিছু সময় পরে সে তাকে গাড়িতে তুলে নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছাল।
অনেকক্ষণ পর গাড়িটি এক নির্জন রেস্টুরেন্টের সামনে এসে থামল। বাইরে নেমেই নিঃশব্দে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করল সে। তারপর দৃঢ় পদক্ষেপে গাড়ির দরজা খুলল।
আদিমের নিথর দেহটিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে নিয়ে চলল রেস্টুরেন্টের নিচতলার এক অন্ধকার, গোপন কক্ষে। কক্ষটির দেয়ালে ঝুলছে ছু*রি-কাঁচির ছটা, বাতাসে ভাসছে কাঁচা মাং*সের গন্ধ। কক্ষের কেন্দ্রে রাখা ভারী কাঠের বুচার ব্লকের ওপর আদিমের দেহটি স্থাপন করতেই কেমন যেন ভয়ানক একটা শব্দ হলো।
আদিমের শরীরটা ছটফট করতে থাকে। সে অসহায়ভাবে প্রাণপণ লড়াই করে। কিন্তু এদিকে লোকটার মুখে কোনো অনুভূতি নেই। তার পরেই একটি নিষ্ঠুর প্রত্যাশা পূর্ণ হয়। লোকটি আদিমের দুটি না*কের ছিদ্র বরাবর চা*রটি লো*হা গেঁ*থে দেয়। লোকটার পিণ্ডের ভেতরে কোনো মানবিকতা নেই, তার ভিতর শুধু ভয়ংকর প্রতিশোধের দৃশ্য রচিত হয়।

আদিমের কান আর নাক থেকে র*ক্ত ও রুদ্ধশ্বাস বের হতে থাকে। অজ্ঞাত লোকটি একপাশে দাঁড়িয়ে, অদ্ভুত আনন্দের সাথে তার কষ্ট দেখতে থাকে। এরপর নি*ম্বের রে*কটামে একটা লোহার টুকরো প্রবাহিত করে গর*ম তেল ঢে*লে দিল। আদিমের ছ*টফটানি আরো তীব্র হয়ে ওঠে। কিন্তু অজ্ঞাত লোকটির মুখে অদৃশ্য আনন্দের উজ্জ্বলতা স্পষ্ট। এরপর সে সময় নিয়ে চাপাতির ধার বাড়াতে লাগল, প্রতিটি ঘষায় ছু*রির ফলা আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠল। শান দেওয়ার কটকট শব্দ অন্ধকার কক্ষের নিস্তব্ধতাকে চিরে বেরিয়ে এলো। সে শব্দ যে কারো মস্তিষ্ক বিদীর্ণ করতে বাধ্য। তীক্ষ্ণ, কর্কশ প্রতিধ্বনি যে কারো শিরা-উপশিরায় আতঙ্ক ঢেলে দেওয়ার মতো।
কিন্তু আদিম কিছুই শুনতে পায় না। কারণ তার কানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল গলিত লোহা। আবার চোখেও দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু তার নিশ্বাস জানান দেয়, সে এখনো বেঁচে আছে এবং মৃ*ত্যুর অপেক্ষায় আছে।

ধার দেওয়ার পর আদিমের পুরো শরীরে এক ধরনের জ্বালাময় মশলা ঢেলে দেওয়া হয়। মশলার তীব্র গন্ধে আদিমের মাথা ঘুরতে শুরু করে। এর ফলে, সে নিজের শরীরটাকেই খাবারের মতো অনুভব করে। সে তার নিজের গা ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য পা*গল হয়ে উঠে। তার নিজস্ব শারীরিক জ্বালা তাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যায়।
এদিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি আদিমের উৎকণ্ঠা দেখে তার হাতে থাকা পেরেকগুলো তুলে, তার জি*ভের দিকে অগ্রসর হয়। জিভ থেকে পে*রেকটি তুলে দিতেই আদিম পুরোপুরি পাগলের মতো আচরণ শুরু করে।
নিজেই চোখের লোহার সাথে চোখ দু*টো বের করে নিল। তারপর নিজেই সেই চোখে কা*মড় বসাতে শুরু করল। তার এমন ভয়াবহ খাওয়া দেখে অজ্ঞাত পুরুষটি অবাক নয়, বরং অদ্ভুত সন্তুষ্টিতে ভরে উঠল। সে আরও বেশি করে মশলা ও কেমিক্যাল মিশিয়ে তার শরীরে ঢেলে দিল।

আদিম অন্ধকারে ডুবে গিয়ে নিজের শরীরের প্রতি অবাধ ক্ষুধা অনুভব করতে শুরু করলো। সে নিজেই নিজের মাং*স ছিঁ*ড়ে খেতে লাগলো; যেখানে র*ক্তের প্রতিটি ফোঁটা তার অভ্যন্তরের অজানা বাসনাকে উদ্দীপ্ত করছে। সে নিজেই নিজের শত্রু হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে লোকটা আদিমের ফোন থেকে তার বোন সেজুতির ফোনে একটি বার্তা পাঠাল, ‘একটা জরুরি কাজের জন্য শহরে ফিরে যাচ্ছি। সবাইকে জানিয়ে দিস, যেন তারা চিন্তা না করে।’
এদিকে আদিম একে একে নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করতে শুরু করল। তার প্রতিটি দংশনে শিরশির করে অনুভূতি, প্রতিটি আঘাতে গা থেকে বেরিয়ে আসা র*ক্ত সে নিজেই গ্রহণ করতে থাকে। সেসব ক্ষতবিক্ষত শিরাগুলোর গলি দিয়ে তীব্র আর্তনাদ ভেসে আসে। অর্থাৎ আদিম এখন সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন। এক নিঃশেষিত প্রাণী, যে আর কোনো ব্যথা অনুভব করে না, শুধু অন্ধকারের মধ্যে অবগাহন করছে। পেট ন*খ দিয়ে কে*টে কে*টে, কিড*নি টেনে বের করে খাওয়া শুরু করে দিল। সেই কি*ডনির শাঁস তার জিভে গলে গলে স্বাদের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। আর ধীরে ধীরে তার পেট থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। এরপর নিজের পুরু*ষা* টে*নে কে*টে ফেলে, খাওয়া শুরু করে দিল।

অজ্ঞাত লোকটি আদিমের পেট থেকে উদ্ভূত র*ক্তের তীব্র স্রোতটিকে একটি গ্লাসে সযত্নে সংগ্রহ করতে শুরু করলো। তারপর লোকটি নিজের মাস্ক খুলে গ্লাসে ভরা তাজা র*ক্ত এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।
এদিকে আদিম অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে, নিজের অ*কো*ষের মাং*সকে টে*নে ছিড়ে ফেলল, ঠিক তখনই তার প্রাণ পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। তার শরীর ধীরে ধীরে সেই টেবিলের উপর শুয়ে পড়ল।
তারপর শুরু হলো আদিমের শরীরে অমানবিক কর্মযজ্ঞ। করাতের ধারালো দাঁত একে একে তার নীরব শরীরের ওপর খাঁ খাঁ শব্দে আঘাত করতে লাগল, তার হাত পা একে একে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তার য*কৃৎ নিষ্ঠুরভাবে হাত দিয়ে বের করে আনা হলো। অতী দক্ষতার ছোঁয়ায় চাপাতির মাধ্যমে তার শরীরের মাংস টুক*রো টুক*রো করা হলো। এক এক করে এগুলো একটা পাত্রে জমা হলো। আর র*ক্তের ধারা অন্য পাত্রে সঞ্চিত করা হলো।

তারপর সেই মাংস কিমা করার মেশিনে প্রবাহিত করা হলো। মেশিনের গর্জন তার যন্ত্রণার চেয়েও আরো জোরালো হয়ে উঠলো। কিমা হয়ে আসা মাংস মশলা দিয়ে মাখিয়ে, রসুন, মরিচ ও ধনে পাতা মিশিয়ে দক্ষতার সাথে কাবাব প্রস্তুত করা হলো। তেলচর্চিত কাবাবগুলো তাপে পাকিয়ে নিতেই, সোনালি রং ধারণ করল। শেষমেশ আদিমের রক্ত দিয়ে তৈরি এক বিশেষ সসে একটা কাবাব ডুবিয়ে নেওয়া হলো।
এরপর সেই লোকটি কাবাবটি মুখে তুলল। আর মুহূর্তের মধ্যে তার ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হাসির রেখা ফুটে উঠল।
তার ঠোঁট থেকে বেরিয়ে এলো ভারী কণ্ঠস্বর, “yummy!”
তারপর কাবাবগুলো আলাদা আলাদা বক্সে প্যাকিং করে নিল। কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এগুলো এখন প্রস্তুত। লোকটার চেহারায় শ*য়তানি হাসি ফুটে উঠলো। অর্থাৎ সে জানে তার হাতের তৈরি খাবারে যে অদ্ভুত রসকথা লুকিয়ে আছে, যা তার কাস্টমারদের পছন্দের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। সে হাড্ডিগুলো অন্য একটি মেশিনে দিয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো করে নিল। সেই হাড্ডির পাউডার আটার সাথে মিশিয়ে তুলতুলে পাউরুটি তৈরি করল। যেটি তার রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে মূল্যবান খাবার হয়ে উঠবে। তবে এর আসল ঘটনা তার কাস্টমারদের অজানা। কিন্তু ক্ষণিকের জন্যও যদি তারা বুঝতে পারত, তবে হয়ত ভয়াবহ সত্যটি তাদের চোখ শিহরিতো করে তুলতো।

আয়লা একরাশ কৌতূহল নিয়ে কারানের দিকে তাকায়। তারপর মিষ্টি হেসে বলে, “My curiosity to see your wife has only grown, Karan. Who is that enchanting beauty?”
(অনুবাদ: তোমার বউকে দেখার কৌতূহল শুধু বাড়ছেই, কারান। সেই মোহনীয় সুন্দরী কে?”)
কারান মুচকি হেসে কথা না বাড়িয়ে আকস্মিকভাবে আয়লার হাতটা চেপে ধরলো। তার মুখে গভীরতার ছাপ স্পষ্ট। সে আয়লার চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বলল, “Uh-uh. Your tricks won’t work on me, Ayla.”
আয়লার ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি ফুটে উঠল। অর্থাৎ কথার ছলেই সে ইতিমধ্যে কারানের গাড়ির চাবি নিজের দখলে নিয়ে ফেলেছে।

আয়লা এক চিলতে হাসি ছড়িয়ে নিজের জিন্সের পিছনের পকেট থেকে কারানের ফোনটা বের করে, কারানের হাতে দিয়ে বলে, “Watch out, Karan. I might end up stealing you along with your phone.”
(অনুবাদ: “সাবধান, কারান। তোমার ফোনের সাথে সাথে আবার তোমাকেও চুরি করে ফেলতে পারি।”)
কারান হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখে বিস্ময়ের রেখা স্পষ্ট। এতটুকু সময়ের মধ্যে পকেট থেকে ফোনটা কীভাবে গেল, তা নিয়ে কারানের বিস্ময়ের শেষ নেই। আয়লার প্রতিটি কাজেই রয়েছে অনবদ্য সুনিপুণতা।
কারান কণ্ঠে মুগ্ধতার ঝিলিক নিয়ে বলে, “When did you do this? How did you do it?”
তবে আয়লা সময়ের সঙ্গে খেলতে অভ্যস্ত। সে হাসিমুখে কারানের রুমালটা নিজের পকেট থেকে বের করে ঠোঁটের কোণে আলতো ছোঁয়া দিয়ে, কারানের জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিল।
“I had also taken your handkerchief, but you didn’t notice.”
(অনুবাদ: “আমি তোমার রুমালটাও নিয়ে নিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি বুঝতে পারোনি।”)

আয়লার গলায় আত্মবিশ্বাসের মিশেল স্পষ্ট। এবার কারান আর কিছু বলল না। তার ভেতরে ভেতরে অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করে। ফারহান যে ভুল কাউকে আনেনি, তা এতক্ষণে সে নিশ্চিত। এই মেয়ে শুধু প্রতিযোগী নয়; সে এক চলমান রহস্য, যে টেক্কা দেওয়ার জন্যই এসেছে।
কারান আয়লার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার চোখের পেছনে হাজারো প্রশ্ন আর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আয়লার হাসির মধ্যে লুকিয়ে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, “You don’t seem Bangladeshi. Where are you from?”
আয়লা মৃদু হাসল।
“Did you figure out at a glance that I’m not Bangladeshi? Or is your observation skill exceptional?”
(অনুবাদ :”এক পলক দেখেই বুঝে গেলে আমি বাংলাদেশি নই? নাকি তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ?”)
একটু থেমে আবার বলল, “তুর্কি।”
কারানের কপালে ভাঁজ পড়ল।
“Then why are you here?
“একটা কাজে এসেছি।”

কারান ভ্রুকুঞ্চন করে আওড়ালো, “তার মানে তুমি বাংলা জানো?”
“শুধু বাংলা কেন? টার্কিশ, হিন্দি, স্প্যানিশ, ইটালিয়ান, কোরিয়ান; অনেক ভাষাই জানি।”
কারান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কারান চৌধুরীর চোখ কখনো ভুল বলে না। তুমি এখানে এমনি এমনি আসোনি। কোনো মিশন নিয়ে এসেছ, তাই তো?”
আয়লার হাসিতে একটা বিদ্রূপের আভাস দেখা গেল। আপনমনে বলল, “তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বেশ ভালো। কিন্তু এভাবে আমাকে মুগ্ধ করো না, কারান। আমি জানি, তোমার স্ত্রী আছে।”
তারপর একটু উচ্চস্বরে বলল, “হ্যাঁ, মিশনেই এসেছি। তবে সেটা বাংলাদেশে নয়, ভারতে। ফারহানের বলাতে এখানে আসতে হয়েছে।”

কারান এবার আরো সন্দিগ্ধ হয়ে বলল, “কী ধরনের মিশন?”
“ভারতে একটা গ্যাং আছে, ন*রখাদক ও প*শুখাদক। তারা শিশুদের কাঁ*চা মাং*স খায়। মানুষদের জীবন্ত ধরে রান্না করে ফেলে। কুকুর-বিড়াল থেকে শুরু করে, মানুষের চোখ, জি*ভ, যকৃ*ৎ, হৃৎ*পিণ্ড, ম*স্তিষ্ক, এমনকি নারীদের ও পুরুষদের বিশেষ অঙ্গ মানে যৌ*না*, পু*রুষা*, অ*ন্ড*কো* পর্যন্ত খেয়ে ফেলে।”
এমন ভয়ংকর কথা শুনে কারান আর ফারহান দুজনেই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।
কারান যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
কারান কপাল কুঁচকে বলল, “আর ইউ নাটস? এসব তুমি কী বলছো?”
“আই অ্যাম নট, বাট এটা সত্যি।”

ফারহান ধমক দিয়ে বলল, “তুমি আমাকে এসব কিছু বলোনি কেন?”
আয়লা হালকা হেসে বলল, “বেবি, তোমার সঙ্গে আমার সেই সম্পর্ক নেই যে তোমাকে সব কিছু জানাতে হবে।”
এদিকে কারানের দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হয়ে গেল। তার গলায় দৃঢ়তা, “আর তুমি কে? আমি জানি, সাধারণ কেউ তো নও।”
আয়লা গম্ভীর মুখে উত্তর দিল, “আমি RAW-এর একজন এজেন্ট। আমাদের টিম এই গ্যাং নিয়ে কাজ করছে। Interpol আমাদের সঙ্গে রয়েছে।”
ফারহান হতভম্ব হয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো জানতাম…”
তার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই আয়লা হেসে উঠল। এদিকে কারানের চোখে তীক্ষ্ণতা ও সংকল্পের ছাপ স্পষ্ট। সে আয়লার দিকে গভীরভাবে চেয়ে প্রশ্ন করে, “কি কি ইনফরমেশন পেয়েছো ওদের ব্যাপারে?”
“যেতে যেতে বলি?”

কারান মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। তিনজনই প্রাইভেট জেটে উঠে বসে।
আয়লা কারানের পাশের সিটে বসতে চাইলে, কারান দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠে, “কারানের পাশের সিট শুধু মিরার জন্য।”
এ কথা শুনে আয়লা কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে, স্বাভাবিকভাবে অন্য সিটে চলে যায়।
ফারহান হঠাৎ হাস্যরসে ভরা ভঙ্গিতে বলে, “আই মিস ইউ, মাই কুইন গোবরচারিনী। লাভ ইউ, বেবি।”
এটা শুনে কারান ও আয়লা দুজনেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফারহানের পানে তাকিয়ে থাকে। ফারহান বুঝে যায়, তার শব্দগুলো ভুল সময়ে উচ্চারিত হয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি বলে, “ব্রো, তোমার তো লাইসেন্স আছে বউয়ের কাছে যাওয়ার। আমার তো আর সেটা নেই।”
কারান গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, “ফারহান, সিরিয়াস মোমেন্টে মজা করা আমার একদম পছন্দ না।”
তারপর আয়লার দিকে ফিরে বলে, “এবার বলো।”
আয়লা ঠান্ডা গলায় বলে, “হ্যাঁ। ওরা সাধারণ মানুষ নয়, হতে পারে আদিবাসী। কারণ আমরা তাদের আস্তানা খুঁজে দেখতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনোভাবেই পারিনি।”

কারান মনোযোগ সহকারে বলে, “তাহলে কি তাদের ধরার কোনো পথ নেই?”
“আমরা খুঁজছি, তবে এটা এক ধরনের অনুমান; তারা পাহাড়ি এলাকায় থাকতে পারে।”
ফারহান আরো একটু শোনার জন্য উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে, “কিন্তু তোমরা কীভাবে জানলে, তারা মানুষের কোন কোন অংশ খাচ্ছে?”
“আমরা পুরোপুরি জানি না, ফারহান। কিন্তু অনুমান করতে পেরেছি। কারণ প্রতিটি লাশ সমুদ্রের পাড়ে ভেসে আসছে। লাশগুলোতে শুধু হাড্ডি আর কিছু কিছু শরীরের অংশ বাকি থাকে। কিন্তু কামড়ে খাওয়ার দাগ স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত।”
এবার কারান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলে, “সেটা তো জন্তু জা*নোয়াররাও করতে পারে।”
“না, কারণ ফরেনসিক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, ওদের শরীরে মানুষের দাঁতের চিহ্ন, হাড়ের ক্ষত এবং অন্যান্য শারীরিক প্রমাণ থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, মানুষই খেয়েছে। এমনকি কেমিক্যাল ও টক্সিকোলজি পরীক্ষার মাধ্যমেও এটা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।”

এই কথাগুলো শোনার পর কারান ও ফারহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, দুজনের মুখে গভীর চিন্তা ও বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আয়লা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে, “এসব বাদ দাও। এবার বলো, ইব্রাহিম বিন জায়েদের ব্যাপারটা আসলে কি? ফারহানের কাছ থেকে শুনেছি, তারা অঙ্গ পাচারের সাথে যুক্ত। কিন্তু আমাদের ভূমিকা কি এখানে? এগুলো তো পুলিশদের করার কথা, তাই না?”
ফারহান গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয়, “তোমার ধারণা ঠিক, আয়লা। এটা পুলিশের কাজ। কিন্তু বাস্তবতা জানো? পুলিশের অনেকেই হয় তাদের সাথে মিলে যায়, নয়তো ভয় পেয়ে দূরে থাকে। এত শক্তিশালী গ্যাং-এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস তাদের নেই। আর যদি কেউ এগোয়, তাদের কণ্ঠ রোধ করে দেওয়া হয়।”
আয়লা গভীর দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে, “তাহলে আমরা কি করব? এমন শক্তিশালী চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে তো আত্মঘাতী হওয়া।”

কারান চোখ সরাসরি আয়লার দিকে রাখে, তার কণ্ঠে অভিজ্ঞতার ভার, “আত্মঘাতী? হ্যাঁ, হয়ত। কিন্তু কখনো কখনো চুপ করে থাকা আরও বড় অপরাধ। ইব্রাহিম বিন জায়েদ শুধু অঙ্গ পাচারকারী নয়, সে পুরো একটা নেটওয়ার্কের মাথা। এই চক্র শুধু মানুষের অঙ্গ চুরি করে না, এর সাথে যুক্ত আছে মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসা এমনকি রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাচারের মতো বিষয়। তুমি কি জানো, এর শিকড়ে আঘাত করলে কত বড় প্রভাব পড়বে?”
আয়লার কণ্ঠ কিছুটা নরম হয়ে আসে, তবুও দ্বিধার ছাপ স্পষ্ট, “তাহলে তুমি বলো, আমাদের কী করা উচিত?”
ফারহান গভীর শ্বাস ফেলে বলে, “প্রথমত, আমাদের আরও তথ্য জোগাড় করতে হবে। শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, ইব্রাহিমের গ্যাং-এর দুর্বল জায়গাগুলো খুঁজতে হবে। কারণ সব শক্তিশালী কাঠামোতেই ফাটল থাকে। আর তৃতীয়ত…”

এবার কারান আয়লার দিকে নিবিড় দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলে, “আর তৃতীয়ত তোমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে, আয়লা। এই পথ সহজ নয়। এখানে ভয়, পিছুটান এবং বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের হয়ত নিজের নিরাপত্তার চেয়ে অন্যের জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। তুমি কি এই অজেয় লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গী হতে পারবে?”
আয়লা উদ্ভাসিত হাসি নিয়ে উত্তর দেয়, “তোমার আমার সম্পর্কে ধারণা নেই, কারান। আয়লা হারতে শেখেনি। যে যুদ্ধে আমি একবার পা বাড়াই, সে যুদ্ধে জয় ছাড়া ফেরার প্রশ্নই ওঠে না।”
কারান আয়লার দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস দেখে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করে।

প্রাইভেট জেট ল্যান্ড করার পরপরই তারা তিনজন বাইকে চড়ে রওনা দিল। দুবাইয়ের ঝলমলে আলো আর শুনশান রাস্তা ধরে এগিয়ে চলে তিনটি শক্তিশালী সুপারবাইক। কাওয়াসাকি নিঞ্জা এইচ2, ডুকাটি প্যানিগেল ভি4 এবং বিএমডব্লিউ এস1000আরআর। বাইকগুলো একেকটা ধাতব বজ্রপাত, দ্রুতগতিতে ছুটে চলে নিস্তব্ধ শহরের বুক চিরে।

তাদের গন্তব্য দুবাইয়ের অন্যতম বিলাসবহুল আর রক্ষিত জায়গা ‘অ্যাডেম্পায়ার’। তিনজনের মুখ ঢাকা কালো হেলমেটে, হাতে গ্লাভস, গায়ে কালো জ্যাকেট আর পায়ে বুট। সারা শরীরে সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিধান করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার বাঁক পেরোতে পেরোতে আয়লা বলে, “আমরা সরাসরি ঢোকার চেষ্টা করছি না, তাই তো? ইব্রাহিম বিন জায়েদের প্লেসে হুট করে ঢোকার মানে হলো নিজের কবর নিজে খোঁড়া।”
ফারহান সামনের রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
“হুম। আর ওর সাম্রাজ্যে ঢোকার আগে আমাদের পরিকল্পনা নিখুঁত হতে হবে। এই লোক তার টার্ফে অপরিচিত কাউকে সহ্য করে না।”
কারানের হাত শক্তভাবে বাইকের হ্যান্ডেলে রাখা। সে গভীর কণ্ঠে বলে, “পরিকল্পনা দরকার নেই। আমি নিজেই একটা পরিকল্পনা। বিজনেসম্যান কারান চৌধুরি সব দরজা খুলতে পারে। আমার উপস্থিতিই যথেষ্ট হবে ওদের বিভ্রান্ত করার জন্য।”

আয়লা ব্যঙ্গাত্মক স্বরে হাসে।
“হ্যাঁ, তুমি জানো কীভাবে কারো আত্মবিশ্বাস কাঁপিয়ে দিতে হয়। কিন্তু মনে রেখো, আমাদের শুধু বিশ্বাস অর্জন করলেই হবে না; ইব্রাহিমের মস্তিষ্কেও ঢুকতে হবে।”
ক্ষণকাল পর তারা ‘অ্যাডেম্পায়ার’ বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামল। বিশাল বিল্ডিংটি আকাশ ছুঁয়েছে। গ্লাস আর আলোয় ঝলমল করা এর বাহ্যিক অংশ রাজকীয়তার প্রতীক। তিনজন বাইক থেকে নেমে গভীর দৃষ্টিতে বিল্ডিংটা পর্যবেক্ষণ করে। ফারহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “এটাই ইব্রাহিম বিন জায়েদের প্লেস।”
আয়লা চোখ দিয়ে জায়গাটা স্ক্যান করে বলে, “এই বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি যতটা আঁটসাঁট, ওদের ধাঁধার মতো সিস্টেমও ঠিক ততটাই কঠিন। ভিআইপি ছাড়া তো এখানে ঢোকাই যায় না।”
আয়লার কথা শুনে কারান বাঁকা হেসে বলে, “আমরা ঢুকতে না পারলেও, কারান চৌধুরি ঠিকই ঢুকতে পারবে।”
“কিন্তু রিয়েল পরিচয় নিয়ে ঢুকলে যদি ফেঁসে যাও?”
কারান স্বল্প হাসে। তার চোখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক স্পষ্ট।
“আমার পরিচয়ই আমার ঢাল। আমি এমনভাবে খেলব যে, ওরা বুঝতেই পারবে না, খেলা ওদের নিয়ন্ত্রণে নেই।”
ফারহান হাত তুলে তাদের থামিয়ে দেয়।

“আয়লা, তুমি বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি ছিদ্র খুঁজে বের করো।”
ততক্ষণে কারান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে, “না, এখানে দাঁড়িয়ে থাকা এখন ঠিক হবে না। সিসি ক্যামেরাগুলো আমাদের ইতোমধ্যেই দেখে নিয়েছে। ফারহান, ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণে আন, এই মুহূর্তের সব ফুটেজ মুছে ফেল। আর আয়লা, তুমি লেন্স ক্যামেরা দিয়ে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করো। আমি ইমনের সাথে কথা বলে ইব্রাহিম বিন জায়েদের সাথে বিজনেস মিটিংয়ের ব্যবস্থা করছি। আয়লা থাকবে আমার পিএস, আর ফারহান ম্যানেজার। বাকিটা হোটেলে গিয়ে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
এটা বলতেই তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চলে ‘এটলার হোটেল’-এর দিকে।
তাদের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবার মনোযোগ একটাই; যত দ্রুত সম্ভব সিস্টেমে ঢোকা, সিকিউরিটি কাটানো এবং তাদের প্রোফাইল প্রতিষ্ঠা করা।

হোটেলে পৌঁছানোর পর, তারা প্রত্যেকে আলাদা কক্ষে চলে যায়। তিনজনেই তার নিজ নিজ জায়গায় বসে কাজ শুরু করে দিল। কারান নিজের বিজনেস মিটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগল।
ফারহান তার হাতের ডিভাইসটি নিয়ে সিসি ক্যামেরাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করল। সে জানত, ইব্রাহিমের সাম্রাজ্যে একটা ছোট্ট ভুলও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই সাবধানে কাজ করতে হবে। ক্যামেরাগুলোর সিস্টেমের সমস্ত ফুটেজ মুহূর্তে ডিলিট করতে হবে, যাতে তাদের কোনো ট্রেস না পায়।
আয়লা তার লেন্স ক্যামেরা দিয়ে বিল্ডিংয়ের প্রতিটি কোণার নজর রাখছিল। সে সিকিউরিটির দুর্বলতা খুঁজে বের করার কাজে মগ্ন। বিল্ডিংয়ের ভিতরে কোথায় ঝুঁকি থাকতে পারে, কোথায় সিকিউরিটি সবচেয়ে কড়া, সব কিছু মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল।

ঠিক সন্ধ্যার দিকে, ফোনের পর্দায় ইব্রাহিম বিন জায়েদের নাম দেখে কারান চাপা হাসি দিয়ে কলটি ধরল। ইব্রাহিমের গলার উত্তেজনা স্পষ্ট শোনা গেল।
“আসসালামু আলাইকুম। আমার কাছে এটি সত্যিই আনন্দের বিষয় যে, কারান চৌধুরি নিজে আমাদের সাথে বিজনেসের আলাপ করতে চেয়েছেন।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তবে ইব্রাহিম বিন জায়েদের মুখ থেকে বাংলা শোনাও আমার জন্য বিশেষ সৌভাগ্য। আমি আপনার সাথে সরাসরি কথা বলতে চাই।”
ইব্রাহিম উচ্ছ্বাসের সাথে বললেন, “আপনার ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করছি, সেটাও আমার জন্য সৌভাগ্য। আর হ্যাঁ, কাল সন্ধ্যায় আমার এখানে কিছু নামকরা বিজনেসম্যান বন্ধু আসবেন এবং আপনি আমাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে সেখানে থাকবেন।”
“অবশ্যই।”
“ইন শা আল্লাহ, কাল দেখা হবে।”
ফোন কেটে দেওয়ার পর, কারান তার কল্পনার জগতে প্রবেশ করল। ইব্রাহিম বিন জায়েদের সাথে প্লেসে সরাসরি ঢোকার সুযোগ এখন একেবারে হাতের মুঠোয়।

সকালবেলা কারানের ছবি দেখে মিরার মুখে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। নিজের মনেই সে বলতে থাকে, “কবে আসবে, কারান? এক দিনও তো হলো না, অথচ কিছুই ভালো লাগছে না। কারান, তুমি কি জানো, তোমাকে কতটা ভালোবাসে তোমার মহারানি ভিক্টোরিয়া? অনেক বেশি ভালোবাসি, কারান।”
হাসতে হাসতে সে ফোনে কারানের ঠোঁটে একটি চুমু খেয়ে নেয়। ঠিক সে সময় মিরার ভাবনায় তীব্র আঘাত এনে তুব্বা দৌড়ে এসে বলল, “ভাবি… ভাবি, চিঠি আইছে।”
মিরা চমকে ওঠে। তুব্বা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “আপনের চিঠি, ভাবি।”
মিরা সন্দেহভরে ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে, “চিঠি? কীসের চিঠি? আর তুমি আগে বসো।”
“না, আম্মা ডাকতাছে। আমি যাই,” বলে তুব্বা মিরার হাতে চিঠি তুলে দিয়ে দ্রুত চলে যায়।
মিরা চিঠিটা হাতে নিয়ে চিঠির আশেপাশে ভালো করে দেখে। অবাক করা বিষয়, চিঠির খামের ওপর কোনো নাম বা ঠিকানা নেই। মিরা সন্দিহানভাবে ভেবে বলে, “এই যুগে চিঠি কে দেয়?”

চিঠির খাম খুলে প্রথমে চোখে পড়ে সারা চিঠি জুড়ে বোল্ড করে লেখা, ‘হেই গার্ল।’
এরপর মিরা চোখ দিয়ে পরবর্তী অংশ পড়তে শুরু করে,
“তোমার সাথে ফালতু আলাপ করে সময় নষ্ট করতে চাই না। কারণ আমি জানি, তুমি অনেক ভালো আছো। যাই হোক, মিরা তুমি বোকা নও, সেটা তুমিও জানো। কিন্তু একবারও কি ভেবেছো, তোমার ইউনিভার্সিটির তোমার ক্লাসমেটরাই কেন হারিয়ে গেল? কেন ভাবনি? তুমি তো ভালোভাবেই জানো তারা কারা ছিল।”
এটা পড়তে গিয়ে মিরার গলা কিছুটা থমকে যায়। এরপর চিঠির পরবর্তী অংশ পড়তে থাকে, “এরা তারাই ছিল যারা তোমার সাথে অভদ্রতা করেছিল। সেই দুজন টিচারসহ সমস্ত স্টুডেন্ট। তাদের মৃ*ত্যু এতটাই ভয়াবহ ছিল যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কে মে*রেছে তাদের? ভাবনি? চলো, আমি এর উত্তর জানাচ্ছি। তোমার খুব কাছের একজন, যে তোমাকে ভয়ংকরভাবে ভালোবাসে।”

মিরা শিহরিতো হয়ে পড়ল। চিঠির এই অদ্ভুত ভীতি-প্রকাশক বার্তা তার মনকে শীতল দুঃস্বপ্নের মতো ঘিরে ধরল। একে একে তার চিন্তা-ভাবনা ঘূর্ণির মতো ঘুরতে লাগল, একটি প্রশ্নের পেছনে আরেকটি প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই চিঠি কি সত্যিই কোনো পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে, নাকি তার হৃদয়ের গভীরে লুকানো এক বিভ্রান্তি? নাকি কোনো ভয়ংকর রহস্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? সে নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে ব্যর্থ।
মিরার চোখে-মুখে ভয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অস্থির হয়ে, চিঠিটা বারবার উল্টেপাল্টে দেখতে থাকে। কিন্তু চিঠির ভেতর আর কোনো লেখা নেই। মিরার অস্থির গলায় শব্দ বেরোয়, “না, এভাবে চিঠিটা শেষ হতে পারে না। বাকিটা কোথায়? কে সে? সে আমার অতীত জানলো কীভাবে?”
তার গলা শুকিয়ে যায়। ভয়ে তার শ্বাস আটকে যায়। দ্রুত পানির গ্লাসে হাত বাড়ায়, গ্লাসটি তার হাতে থরথর করে কাঁপতে থাকে। চোখের কোণে অশ্রুর আধিক্য নিয়েও পানির দানে শীতলতা খোঁজে। নিজেকে সামলাতে চায়, কিন্তু চিন্তার চাপ অবিরাম বাড়তেই থাকে।

পরে তার সমস্ত অস্থিরতা একত্রিত হয়ে চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়। একটুপর চিঠিটা আগুনে পোড়াতে শুরু করলে, চিঠির ধোঁয়া তার কাছে সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সে জানে, এটা শুধুমাত্র তার অস্থিরতার ক্ষণিকের শান্তি। মিরা চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলেই তুব্বার কাছে চলে যায়।
তুব্বাকে হাতের ইশারায় ডাকতেই, তুব্বা দ্রুত চলে আসে।
“কি হইছে, ভাবী?”
মিরা মাথা নীচু করে কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করে বলে, “এই… এই চিঠি কে দিয়েছে, তুব্বা?”
“একজন বুড়া মানুষ। আমারে চিঠি দিয়া কইছে, এটা মিরাকে দিয়ে আসবে। তারপর সে চইলা গেছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাও।”

তুব্বা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আর মিরা গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। তার মাথায় একের পর এক চিন্তা ছুটে চলেছে। সে জানে, এই চিঠি কিছু ইঙ্গিত করছে; কিন্তু কী? কেনই বা তাকে এসব বলা হলো? কে সেই ব্যক্তি? প্রশ্নগুলো মিরাকে শূন্যতায় ঠেলে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, তার অতীত আর বর্তমান একাকার হয়ে গেছে। আর সে এক বিপদসংকুল পথে চলতে শুরু করেছে, যেখান থেকে ফেরার হয়ত কোনো রাস্তা নেই।

রোমানা আর আরিয়ান বাইক রাইডিংয়ে বের হয়েছে। রোমানা হেলমেট পরিহিত বাইক চালাতে ব্যস্ত। আর আরিয়ান তার পেছনে তাকে শক্ত করে ধরে হেসে বলল, “এটাই হয়ত ইতিহাসে প্রথমবার; যে একটা মেয়ে বাইক চালাচ্ছে, আর একটা ছেলে তার পিছনে বসে আছে।”
রোমানা ঈষৎ হাসল, “শক্ত করে ধরে রাখো, আরিয়ান। এমনিতেই আজকে আমার একটা প্ল্যান আছে; তোমাকে কুয়ায় ফেলে দিয়ে আসবো।”
আরিয়ান তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলল, “আমাকে কি কখনো ভালো হতে দিবে না, প্রিয়দর্শিনী?”

“ওইটা তোমার দ্বারা আর সম্ভব না, তাই আমিও আর সে সুযোগ দিচ্ছি না তোমাকে।”
রোমানার এই কথা আরিয়ানকে এক অতৃপ্তি, এক অজ্ঞাত আকর্ষণে বাঁধে। কিন্তু তাও সে কিছু বলল না।
কিছুক্ষণ পর তারা একটি নির্জন স্থানে বাইক থামিয়ে দিল। সামনে বিশাল সমুদ্রের বিশালত্ব তাদের সমস্ত শব্দকে চুপ করে দিল। রোমানা চোখে উচ্ছ্বাস নিয়ে মুহূর্তেই সমুদ্রের দিকে ছুটে গেল। এক প্রকার উত্তেজনা আর স্বাধীনতার অনুভূতি তার শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ল।
আরিয়ানও তার পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, “ভাবছি, এই সমুদ্রেই তোকে চুবিয়ে মারবো, রোমানা। কোনো প্রুফও থাকবে না।”
রোমানা বালি তুলে এক ঝলক আছড়ে দিল আরিয়ানের মুখে। তারপর হেসে বলে, “সাওদা রোমানা সুইমিং চ্যাম্পিয়ন, ভুলে যেও না।”

এদিকে আরিয়ানের চোখে বালি ঢুকতে থাকলে রোমানার মন কেঁপে ওঠে। আরিয়ান মুহূর্তেই চোখ বন্ধ করে নেয়। রোমানা তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে আরিয়ানের কাছে গিয়ে তার চোখে ফুঁ দিতে দিতে বলে, “সরি সরি, আমার প্রিয় হাসব্যান্ড অরূপে শত্রু। দেখি, হাতটা সরাও।”
হঠাৎ করেই আরিয়ান রোমানাকে নিয়ে বিচে শুয়ে পড়ে। তার শরীরের গতি এবং রোমানার বুকের সাথে তার হৃদয়ের স্পন্দন একসূত্রে বাঁধা পড়ে। আরিয়ান বলল, “আমাকে একটুও কি ভালোবাসা যায় না, রোমানা? আমাকে ভালোবাসলে তো আমি ভালো হয়ে যেতাম। জানো, কারানও আমাকে ক্ষমা করেছে। বলেছে, যতদিন না ফিরবে, অফিসটা সামলাতে। শুধু তুমিই আমাকে ক্ষমা করতে পারো না।”
রোমানা গভীর শ্বাস ফেলে। পরে সে আরিয়ানের গাল কামড়ে দিয়ে বলল, “তোমার মুখে এসব প্রেমালাপ মানায় না, বুঝলে?”

আরিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে গাল ডলতে ডলতে বলল, “শালীর ঘরের শালী… থাক, মুডটা আর নষ্ট না করি। আচ্ছা জান, আমরা একটা বেবি অ্যাডপ্ট নিতে পারি না?”
রোমানা তৎক্ষণাৎ সপ্রশ্নভাবে তার দিকে তাকায়, “কি বললে, শুনি নাই?”
আরিয়ান তার ঠোঁট কামড়ে চুপ থাকে, তারপর এক ঝটকায় রোমানার গালে এক চড় মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “এই চ্যাংড়ি ছাড়া কি আর কোনো মেয়ে পেলি না, আরিয়ান? যদিও আজকে তোকে এই জিন্স প্যান্ট আর জ্যাকেটের আউটফিটটা ভালোই মানিয়েছে।”
রোমানা উঠে দাঁড়িয়ে হেসে বলে, “চলো, ছাগলের থেকে একটা ভালো প্রশংসা তো পেলাম।”
এই কথাটুকু বলতেই আরিয়ান তার পিছনে দৌড়াতে শুরু করে। তাদের মধ্যে অবিরত লুকোচুরি, বিরুদ্ধতা আর অদ্ভুত অনুরাগ অনিবার্যভাবে এগিয়ে চলে।
এই ভালোবাসার খেলায়, যেখানে কখনো শত্রু, কখনো বন্ধু, কখনো প্রিয়তম, আবার কখনো বিস্ময়কর সহযাত্রী; এমনটাই তাদের সম্পর্কের সঙ্গীত।
রোমানা দৌড়ে যেতে যেতে হেসে বলে উঠে, “শোন আরিয়ান, বাচ্চা আনলে তোরই সমস্যা হবে। আমি তো ওকে বলবো যে তোর বাবার মেশিন কাজ করে না।”

আরিয়ান নিজের শারীরিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের পূর্ণতায় আরও দ্রুত দৌড়াতে লাগল। তার মুখে তীক্ষ্ণ আক্রোশ, “হারা’মজাদি বউ আমার, আমার মানইজ্জত খাওয়ার চিন্তায় আছিস।”
এদিকে একটু পরই কিছু ছেলে রোমানাকে ঘিরে ফেলে, তাদের মুখে অশ্লীল হাসি এবং প্রলোভনের চিহ্ন। এক ছেলে বলেই ফেলে, “আজকের রাতটা তোমার সাথেই খেলবো, সোনা।”
রোমানা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে যায়। এদিকে এগুলো দেখে আরিয়ান দাঁড়িয়ে গিয়ে এক বিক্রেতার কাছ থেকে চীনেবাদাম কিনে বালির মধ্যে বসে, মনোযোগ সহকারে চিবোতে থাকে। আরিয়ানের এমন নিরলস ভাব দেখে রোমানা তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি দিয়ে বলে, “কাপুরুষ একটা।”
ছেলেগুলো কাছে এসে তাকে ঘিরে এগোতে থাকে। এদিকে আরিয়ান তাদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজকে আমার বউ ওদের ছত্রিশটা বাজাবে। আহারে, বেচারা!”
তারপর হেসে চেঁচিয়ে বলে, “জান, তোমার খেলা শুরু করো। আমি চিয়ার্স করার জন্য আছি।”

রোমানা আরিয়ানের হাস্যরসে বিরক্ত হলেও কোনো মন্তব্য না করে, তার নিজস্ব শক্তি ও বীরত্বে বিভূষিত থাকে। ছেলেগুলো যখন একে একে তাকে আক্রমণ করতে যায়, তখন সে তাদের হাত, পা, কোমর ভেঙে ফেলতে থাকে।
আরিয়ান এই দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে বলে, “বোকা নাকি তোরা। আগে মেয়েটার কোমরটা ভেঙে দে। আমার বউয়ের সাঙ্গ লীলা খতম হোক।”
এটা শুনে রোমানার মুখে এবার বিরক্তি ভাব প্রকাশ পায়। সে গম্ভীরভাবে ছেলেগুলোকে বলে, “ভাই, এক মিনিট আসছি।”
তার হাতের হাতা ফোল্ড করতে করতে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার নাকে এক ঘুসি মেরে বলে, “শা*লা মা*দারফা*কা।”
আরিয়ানের নাক দিয়ে র-ক্ত পড়তে থাকলেও তার হাসি থামে না। সে রোমানার মারপিট দেখতে দেখতে চুলে চাঁপলিত করে চানামুঠ খেতে থাকে। এদিকে রোমানা হলো আত্মবিশ্বাসী দেবী, কারো হাত বা পা ভেঙে শুইয়ে দিতে থাকে।

হঠাৎ করেই এক ছেলে তার হাত বাড়িয়ে রোমানার বুকে হাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। সাথে সাথে আরিয়ান এসে এক ঝটকায় ছেলেটির হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। তারপর বিদ্যুৎগতিতে তার বাহু চেপে ধরল, গভীর এক চিৎকারের সঙ্গে অসীম শক্তিতে হাতটা টেনে কাঁধ থেকে ছিঁ*ড়ে ফেলল। বিচজুড়ে শুধুই ছেলেটার আর্তনাদ আর মাংস ছিঁ*ড়ে যাওয়ার ভয়ংকর শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো। ব্যথায় ছেলেটির শরীর কেঁপে উঠল, কিন্তু আরিয়ানের চোখে তখন শুধুই র*ক্তখেলা। উন্মত্ত ক্রোধে একের পর এক লাথি চালিয়ে যেতে লাগল সে। প্রতিটি আঘা*তে ছেলেটির হাড়গোড় গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। একসময় কোমরের হাড় বিকট শব্দে চুরমার হয়ে গেল, মুখের ভেতর জমে থাকা র*ক্ত ফিনকি দিয়ে ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ছেলেটির নিঃস্ব কান্না, তার আর্তচিৎকার—কিছুই স্পর্শ করতে পারল না আরিয়ানকে। সে একের পর এক লাথি চালিয়ে যেতে লাগল, যতক্ষণ না দেহটা নিস্তেজ হয়ে পড়ল।

Tell me who I am part 33 (2)

শেষ আঘাতের পর বিচজুড়ে নেমে এলো মৃ*ত্যুর নিস্তব্ধতা। ছেলেটির নিথর শরীর র*ক্তে ভেজা বালিতে পরে রইলো। আরিয়ান তখনো হাঁপাচ্ছে, আগুনভরা দৃষ্টিতে মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার রাগ এখনো পুরোপুরি নিভে যায়নি। ছেলেটির মৃ*ত্যু আর আরিয়ানের এমন গম্ভীর রাগ দেখে, বাকিরা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত পলায়ন করতে থাকে।
কিন্তু রোমানা মুখে কোনো বিচলিত ভাব না রেখেই ঠান্ডা গলায় বলে, “ওকে মারলে কেন?”
আরিয়ান কোনো উত্তর না দিয়ে, আড় হাসি নিয়ে রোমানাকে জড়িয়ে ধরে।

Tell me who I am part 34 (2)