Tell me who I am part 9

Tell me who I am part 9
আয়সা ইসলাম মনি

শারমিন গভীর আগ্রহভরে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরার ঠোঁটে এক ঝলক হাসি খেলে গেল।
শারমিন জিজ্ঞাসার চাপা উত্তেজনা লুকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলো,
“ম্যাডাম, তারপর কি হলো? আমার কিন্তু শুনতে দারুণ লাগছে। স্যার তো খুব রোমান্টিক ছিলেন! কিন্তু ম্যাডাম, স্যার যখন আপনাকে এত ভালোবাসতেন, তাহলে খুন করতে চাইলেন কেন? আগে যা করেছিলেন, সেজন্যে?”
মিরা কিছুক্ষণ নীরব থেকে গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর শান্ত স্বরে বলল,
“না, পরে যা করেছে, সেই জন্যে।”
শারমিন বুঝে গেল, এর পেছনে কোনো গভীর এবং ভয়াবহ সত্য লুকিয়ে আছে। তাই আর কোনো প্রশ্ন করল না।
কিছুক্ষণ পর আমান দ্রুত কয়েদখানায় প্রবেশ করে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, “সুসংবাদ আছে। কারান স্যার বেঁচে আছেন।”

শুনে মিরার চোখে আনন্দের জোয়ার নামে। সে আবেগে কেঁদেই ফেলল।
কিন্তু আমান তার অনুভূতিতে জল ঢেলে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, “তবে তিনি কোমায় চলে গেছেন। কিন্তু আপনি কেন কাঁদছেন? আপনার তো খুশি হওয়ার কথা। ফাঁসির হাত থেকে তো বেঁচে গেলেন!”
মিরা নিজের চোখ মুছে আবেগ সংযত করল। এরপর প্রশান্ত করুণ হাসি দিয়ে গভীর, ভারী কণ্ঠে বলল,
“ফাঁসির হাত থেকে রেহাই পেলেও মনে হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চেই দাঁড়িয়ে আছি। কেউ যেন আমার মুখে কালো কাপড় পরিয়ে দিয়েছে। চারদিকে শুধু অসীম অন্ধকার। ফাঁসির দড়ি আমার গলায় বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে। আরেকটু… আরেকটু পরই জল্লাদ লিভারে টান দিয়ে শেষ করে দেবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিরার কথাগুলো শুনে শারমিনের চোখ থেকে অজান্তেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কেন জানি, মিরার প্রতি শারমিনের অন্তরে অনির্বচনীয় মায়া জন্ম নিয়েছে। আমান নির্বিকারভাবে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
শারমিন রুমাল দিয়ে চোখ মুছে মিরার হাত ধরে বলল, “ম্যাডাম, এখন কিছু খেয়ে নিন। আমি কাল আবার আপনার খবর নিতে আসব। কথাবার্তা বলতে বলতে কখন যে সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে, খেয়ালই করিনি। আর স্যারের কিচ্ছু হবে না ইনশাল্লাহ।”
মিরা শারমিনের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। শারমিনের কথায় যেন একটি সান্ত্বনা খুঁজে পেল। বিশেষ করে ‘স্যারের কিছু হবে না’ কথাটি মিরার অন্তরে গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হলো। শারমিন মিরার গায়ে হালকাভাবে হাত রেখে চুপচাপ জেল থেকে বেরিয়ে যায়।

মিরা তার রক্তমাখা শাড়ির আঁচল ধরে শান্ত স্বরে বলল, “একটা মুহূর্ত তুমি তোমার বেগমকে ছাড়া থাকতে পারতে না। সেই বেগমকে ছাড়া দুইটা দিন কীভাবে কাটালে কারান? অভিমান করেছো?”
এরপর সামান্য হেসে স্বগতোক্তি করল,
“দেখেছ, তোমাকে মারতে গিয়ে আমি নিজেকেই শেষ করে ফেললাম।”
এরপর কারানের রক্তে ভেজা শাড়ির এক টুকরো অংশে চুমু খেয়ে মিরা স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
শারমিন হঠাৎ ফিরে এসে বলল,
“ম্যাডাম, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি শাড়ি পালটে নিন, আর গোসল করে আসুন। শরীরের প্রতিটি অংশে রক্ত লেগে একদম মাখামাখি হয়ে গেছে।”
মিরা স্থির চোখে শাড়ির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“না। এই রক্ত আমার শরীরেই শুকাতে দিন। এই রক্ত আমারই, শুধু শরীরটা আমার স্বামীর।”
এ কথা শুনে শারমিন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ ভার করে বেরিয়ে যায়।

সকালে শারমিন আবার আসে। এসে দেখে মিরা আগের দিনের সন্ধ্যায় যেভাবে বসেছিল, সেভাবেই নিথর হয়ে বসে আছে। একটুও জায়গার পরিবর্তন হয়নি, অর্থাৎ মিরা রাতটা জেগেই কাটিয়েছে। শারমিন নীরবে মেঝেতে মিরার পাশে এসে বসে।
মিরার গালে এক হাত রেখে শারমিন বলল, “চাঁদের গায়ে কলঙ্কের ছাপ রয়েছে, কথাটা সবসময় শুনে এসেছি। কিন্তু সেদিন যখন আপনাকে ওভাবে রক্তমাখা বেশে দেখলাম, কথাটা মনে মনে বিশ্বাস করে নিলাম। (থেমে) ম্যাডাম স্যারের রক্তে আপনার শরীর এমনভাবে ডুবে গেছে যে আপনাকে দেখলেই আমার ভয় করে। যদি রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতেন, আমার কথা বলতে সুবিধা হতো।”
মিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল, “ঠিক আছে, তবে শাড়িটা ধুয়ে ফেলবেন না। এটা আমার কাছে থাকবে।”

ক্ষণকাল পর গোসলখানায় শারমিন মিরার শরীর থেকে রক্ত ধুতে শুরু করল। রক্তের ছোট ছোট কণাগুলো ধীরে ধীরে পানির সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছে। আর মিরা স্থির চোখে সেদিকে তাকিয়ে আছে।
মনে মনে শুধালো, “কারান বেঁচে আছে।”
এরপর এক বিশাল স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
গোসল শেষে মিরাকে জেলের কাপড় পরানো হয়। শারমিন এবার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “আপনি ঠিক আছেন ম্যাডাম?”
মিরা নিরুত্তর, শারমিনের পানে তাকিয়ে থাকে।
শারমিন আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “ম্যাডাম খাবারটা খেয়ে নিন।”
এরপর শারমিন নিজ হাতে মিরাকে খাবার খাওয়াতে থাকে। খাওয়া শেষে মিরা তাকে আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে বলে।

সেদিন মিরার মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তে কারানের বুকটা সত্যিই একান্ত নিরাপদ। শীতল স্বস্তির পরশ যেন মনের অন্তঃস্থলে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই শান্তির আগুন নিভে যেতে দেরি হলো না। কারান আর রাশার চুম্বনের মুহূর্তের স্মৃতি হঠাৎ ভর করলো মিরার উপর। রাগে, অপমানে মিরা কারানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে কারান কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।
মিরা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, “দূরে থাকুন আমার থেকে।”
কারান হতভম্ব হয়ে কাতরস্বরে জিজ্ঞাসা করে, “এইটুকু শান্তিও নিতে দিলে না?”
মিরা অবজ্ঞামিশ্রিত তিক্ত হাসি হেসে আওড়ায়, “যে ব্যক্তি আমার জীবনের প্রতিটি শান্তি নিঃশেষ করেছে, সে এখন নিজেই শান্তির জন্য ছটফট করছে? আপনাকে আমি কোনোদিনও মেনে নিতে পারব না,” বলে মিরা পা বাড়িয়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করে।

কিন্তু তৎক্ষণাৎ কারান গভীর যন্ত্রণায় ডুবে বলে ওঠে, “তুমি কি বুঝতে পারো না মিরা? আমার ভালোবাসা, আমার সহধর্মিণী আমার এত কাছে থেকেও যেন আকাশের দূর নক্ষত্র হয়ে আছে। তাকে ছুঁতে না পারার এই যন্ত্রণা আমাকে ছিঁড়ে ফেলছে। তুমি কি আমার কষ্টটুকু অনুভব করতে পারছো না?”
মিরা ভারী কণ্ঠে বলে, “এই কষ্ট আমি এগারোটা মাস ধরে সয়েছি। আপনার তো সবে কয়েকটা দিন পার হলো,” বলে মিরা ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু কারান অকস্মাৎ মিরার হাতে হেঁচকা টান দিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
মিরার দুই হাত এক করে নিজের শক্ত মুঠোয় আটকে রেখে বলে, “But I can no longer endure this wait Mira.”
(অর্থ: “কিন্তু আমি আর এই অপেক্ষা সহ্য করতে পারছি না মিরা।”)

তারপর নিজের আরেক হাতে মিরার গলার পেছনটা শক্তভাবে চেপে ধরে। চোখ বন্ধ করে নিজের ওষ্ঠ মিরার ওষ্ঠের সাথে মিলিয়ে দেয়। মিরা চমকে গিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কারানের উষ্ণ শ্বাস মিরার শ্বাসে মিশে যেতে থাকে।
কারান অপ্রতিরোধ্যভাবে মিরার ওষ্ঠ নিজের দখলে নিতে থাকে। তার শ্বাস যেন চেপে বসছে মিরার উপর। কয়েক মিনিট পর সে মিরার ওষ্ঠ থেকে নিজের ওষ্ঠ সরিয়ে নেয়। মিরা হাঁপাতে হাঁপাতে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
কারান ধীরে ধীরে চোখ মেলে, মিরার গভীর চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর কিছুতেই নিজের আবেগ দমন করতে না পেরে, আবার মিরার অধরে নিজের অধর ডুবিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর কারান মিরার ওষ্ঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও মুখটি ঠিক কাছেই রেখে হিসহিসিয়ে বলে, “কিছু বলো মিরা।”
মিরা নিশ্চুপ, চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

কারান গম্ভীর কণ্ঠে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বলল, “আমি কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারাতে চলেছি মিরা। কিছু একটা বলো, প্লিজ।”
তার গাঢ়, ভারী শ্বাস মিরার মুখমণ্ডলে বারবার আছড়ে পড়ছে।
অনেকক্ষণ পরে মিরা অস্পষ্ট, শান্ত কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল, “পানি খেয়ে নিন।”
কারান হালকা হাসল। মিরার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে আরো কাছে এগিয়ে গেল। এখন তাদের দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণে দূরত্ব।
কারান গুনগুনিয়ে বলে, “কারান চৌধুরি এত তাড়াতাড়ি টায়ার্ড হয় না সোনা।”
এতক্ষণ বাদে মিরা চোখ তুলে কারানের দিকে তাকাল। তার চোখে জমে থাকা জল অশ্রুসজল পাতার ভার বাড়িয়ে তুলেছে।
মিরা ঢোক গিলে ভাঙা কণ্ঠে বলে, “আমার কষ্টটা কোথায় লাগে জানেন? এই ঠোঁট শুধু আমার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি হতে পারত অথচ এগুলো অন্য নারীকেও স্পর্শ করেছে।”
কারানের কর্ণকুহরে কথাগুলো বজ্রাঘাতের মতো আছড়ে পড়ে। মুহূর্তে তার মুখের সমস্ত উত্তেজনা গলে যায়। মিরার হাত ও ঘাড় থেকে নিজের হাতগুলো সরিয়ে নিয়ে পেছনে সরে দাঁড়ায়। তার চোখ মাটিতে নিবদ্ধ। মিরার দিকে তাকানোর সাহস যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।

মিরা তাকে এড়িয়ে বিছানার এক পাশে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে। কারান তার ভারী পায়ের শব্দে ধীরলয়ে স্টোর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেয়ালের সামনে থমকে দাঁড়ায়। এরপর চার আঙুল দিয়ে নিজের গলা ঘষতে থাকে, যেন শ্বাসরুদ্ধ অনুভূতিটা মুছে ফেলতে চাইছে। হঠাৎ তার মুখে তীব্র ক্ষোভ জমে ওঠে। আঙুলগুলো রাগে মুষ্টিবদ্ধ করে প্রচণ্ড জোরে দেয়ালে ঘুষি মারে। ঘুষির শব্দের প্রতিধ্বনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
এভাবে কয়েকশো বার দেয়ালে আঘাত করতে করতে সে চিৎকার দিয়ে প্রবলকন্ঠে বলে, “মিরাআআআ, সেদিন কেন আমি তোমার মুখখানি দর্শন করলাম না? উফফ! এখন মনে হচ্ছে, সব কিছু অচিরেই অবসান ঘটাই। একবারও যদি তোমার অপরিসীম সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারতাম, হয়ত আজকের মোড়টাই অন্যরকম হতো। পাহাড়সম অনুতাপ ও ক্লিষ্ট দুঃখবোধের অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে হতো না আমায়,” বলেই পরিত্যক্ত কাঠের টেবিলটিতে একের পর এক লাথি মারতে থাকে।

তারপর আবার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেয়ালে আঘাত করতে থাকে। একটা সময় দেয়াল বেয়ে রক্ত ঝরে পড়ে, আর কারানের হাতও রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।
নিজেকে কোনোভাবেই শান্ত করতে না পেরে চোখ-মুখ ডলে অস্পষ্টভাবে বলে, “মিরা ছাড়া আমি কোনোভাবেই প্রশান্তি অনুভব করতে পারব না। আমার বউকে লাগবে।”
এরপর স্টোররুম থেকে বেরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে। মিরা যেখানে শুয়ে আছে তার পাশেই পালঙ্কে গিয়ে বসে পড়ে। অন্যদিকে মিরা শুয়ে শুয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে।
কারান তীব্র কণ্ঠে বলে, “মিরা।”
মিরা কারানের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গুনগুনিয়ে উত্তর দেয়, “হুম।”
“আমার সামনে এসো।”

মিরা উঠে না। কারান বিছানার কাপড় হাতে শক্ত করে মুচড়ে ধরে ফের কটমট করে বলে, “কী বলেছি, শুনতে পাওনি? আমি এক কথা দুইবার পুনরাবৃত্তি করি না।”
মিরা ধীরে ধীরে উঠে কারানের কাছে আসে।
কারান কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এরই মধ্যে মিরা চমকে উঠে বলে, “এ কি, আপনার হাতে কি হয়েছে? এত রক্ত!”
“কিছু হয়নি, তুমি পাশে বসো। আমার কিছু কথা তোমার সঙ্গে শেয়ার করা দরকার, যেগুলো তুমি ভুল বুঝে বসে আছো।”
মিরা হাঁসফাঁস করে বলে, “কথা পরে হবে। ইশ, আপনার হাতের কি অবস্থা। আমি এক্ষুনি ফার্স্টএইড বক্স আনছি।”
মিরা চলে যেতে উদ্যত হলে কারান দ্রুত মিরার হাত ধরে বলে, “বললাম তো, কিছু হয়নি। এই সামান্য যন্ত্রণায় আমার কিছু যায় আসে না।”
মিরা তার হাত ছাড়িয়ে দ্রুত ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে আসে। এরপর আদেশমূলক ভঙ্গিতে বলে, “আপনি একদম চুপচাপ বসে থাকবেন। আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি।”

“তুমি বুঝো না কেন, কিচ্ছু হয়নি। তুমি বসো।”
“তাই না? পুরো হাতে রক্ত। উফ! দেখলেই শরীরের মধ্যে কাটা দিয়ে উঠছে।”
কারান কিঞ্চিৎ হেসে বলে, “তুমি এতটা টেনশনে কেন মিরা?”
কারানের সেই মিষ্টি হাসি দেখে মিরার চোখে অশ্রু জমে ওঠে। কারানের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে, “প্লিজ কারান। আমাকে ড্রেসিংটা করতে দিন। আমি রক্ত সহ্য করতে পারি না।”
কারান ডান হাত দিয়ে মিরার অশ্রুপূর্ণ চোখ মুছে দিয়ে বলে,
“আর কখনো যেন এই চোখে আমি পানি দেখতে না পাই।”
এ বলে মিরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে, রক্তাক্ত বাম হাতটা বাড়িয়ে দেয়।
মিরা মেঝেতে বসে রক্ত পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে বলে,
“খুব জ্বালাপোড়া করছে তাই না?” বলে কারানের দিকে একপলক তাকায়।
কিন্তু কারান কোনো শব্দ উচ্চারণ না করে শুধু মিরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কারানের এমন গভীর দৃষ্টিতে মিরা কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করে। তাই কারানের দিকে না তাকিয়ে তার হাতের দিকে মনোযোগ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

ব্যান্ডেজ শেষ করে উঠতে যাবে, তৎক্ষণাৎ কারান মিরার হাত ধরে এক টানে তাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে, মিরার কোমরের উপর এক হাত রাখে। অন্য হাতে মিরার মাথার পেছন ধরে সামান্য সামনে ধাক্কা দিয়ে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে নেয়। মিরার শরীর শিহরণের ঝোঁকে কেঁপে ওঠে। একদিনে এতবার এই আক্রমণ, তাও আবার হঠাৎ! এগুলো কি বারবার সহ্য করা যায়?
কারান চোখ বন্ধ করে বারেবারে মিরার ঠোঁটকে তার দখলে নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর মিরার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ রেখেই নেশালু গলায় বলে, “তুমি আমার কাছে এসো না মিরা। আমি জানি না আজ তোমার সাথে কি না কি করে ফেলবো।”

মিরা ধীরে ধীরে চোখ মেলে কারানের অনুভূতি অনুভব করে। বুঝতে পারে, কারান এখন নিজের মধ্যে নেই; পুরোপুরি মিরার মধ্যে ডুবে গেছে। তাই মিরা হঠাৎ ধপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। কারান চোখ খুলে দেখে মিরা শাড়ির আঁচল ধরে বারবার কচলাচ্ছে। বুঝতে পারে, মিরাও এক নতুন অনুভূতির আলোতে সিক্ত হয়ে অজানা পথে পা বাড়াচ্ছে। মিরা দ্রুত বারান্দায় গিয়ে গ্রিল ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কারান হেসে নিজের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বলে, “আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে,” বলে আবার হাসে। ক্ষণকাল পর বিছানার একপাশে শুয়ে প্রশান্তিকর নিশ্বাস ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে মিরা পোর্চে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে, “এটা কি হলো? ইশশ…” বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিল।
কিছু সময় পর, কারানের আগের অপমানদায়ক মুহূর্তের কথা মনে করে রেগে গিয়ে বলে, “এতটুকুই। শুধু জোর করে করেছেন বলে… আপনাকে এত সহজে আমি মেনে নেবো না, কোনোভাবেই না। অনেক কিছু করেছেন আপনি। এরপর যদি আর কাছে আসতে দেই!”
আবার লজ্জা পেয়ে বলে, “সবসময় বাঁদরামো করবে। এভাবে কেউ কিস করে? ধুর ধুর, আবার লজ্জা লাগছে।”
অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে উলটো-পালটা চিন্তাভাবনা করে, কক্ষে ফিরে যায়। কারানের কাছে গিয়ে নজর রেখে দেখে যে, কারান ঘুমিয়েছে। না ঘুমালে আবার কি না কি জানি করে বসে তার ঠিক নেই! নিশ্চিত হয়ে মিরা অন্য পাশে শুয়ে পড়ে।

প্রভাতে নাস্তা শেষে মিরা মায়ের রুমে প্রবেশ করল। দেখল, মমতাজ কিছু শাড়ি গুছিয়ে রাখছেন।
মিরা হালকা হাসি ছুঁড়ে জিজ্ঞেস করল, “বাবা কোথায় মা?”
মমতাজ মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,
“মিরু তুই! আয় বস। তোর বাবা, কারান আর মাহি মনে হয় ছাদে বসে গল্প করছে।”
মিরা মায়ের পাশে বসে তার কাঁধে মাথা রেখে, লজ্জায় একরকম মুখ লুকানোর চেষ্টা করল।
মমতাজ মিষ্টি হাসি ধরে রেখে বললেন, “আজ আমার সোনা মা বেশ খুশি দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে, কি ব্যাপার?”
মিরা লজ্জায় একটু হেসে নীচু গলায় বলল, “না মা, তেমন কিছু নয়।”
নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলল, “তুমি পরের কাহিনি বলো না।”
মমতাজ শাড়িগুলো পাশে সরিয়ে রেখে গভীর স্মৃতিমগ্ন কণ্ঠে বললেন, “আচ্ছা শোন। সেদিন মায়ের ধমক খেয়ে মনপ্রাণ দিয়ে পড়ায় মন দিলাম। পাঁচটা মাস একটুও সময় নষ্ট করিনি। আলহামদুলিল্লাহ, পরীক্ষাগুলোও বেশ ভালোই হয়েছিল। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল শেষ পরীক্ষার দিন,” বলে তিনি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চুপ হয়ে গেলেন।

মিরা উদ্বিগ্ন হয়ে মায়ের আরও কাছে এসে বলল, “কি হয়েছিল মা?”
মমতাজ গলায় ভার এনে ধীরেসুস্থে বলতে শুরু করলেন,
“খুব ধনী পরিবারের ছিলাম না রে, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিলাম। তবে আমার রূপের গুণে আমাদের বাড়িটা আলোর আভায় ভরা থাকত। আর এ কারণেই শিকদার বাড়ির নাম আশপাশের গ্রামে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল। আম্মা চেয়েছিলেন শেষ পরীক্ষার দিন আমাকে স্কুল থেকে নিজে নিয়ে আসবেন। কিন্তু তার আগের দিন এক ঝড়ে হাঁস-মুরগিগুলো সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। সেগুলো খুঁজতে গিয়ে আর আমাকে নিতে আসা হলো না।
আবার আমি নিজেই বলেছিলাম, ‘প্রতিদিন তো শিমু, মাহাফুজা আর নিপার সাথে ফিরি। চিন্তা কোরো না আম্মা, ঠিক চলে আসব।’

কিন্তু পরদিন কি হলো! শিমু আর মাহাফুজাকে তাদের পরিবারের লোকজন এসে নিয়ে যায়। ফলে আমি আর নিপা একসাথে ফিরছিলাম। নিপার বাড়ি চলে আসায়, সে বিদায় জানিয়ে চলে গেল, আর আমার বাড়ি তখনো প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিটের পথ। নিপা চলে যাওয়ার পর থেকেই আশেপাশের জনমানবহীন পরিবেশ দেখে কেন জানি হচ্ছিল। বুকের মধ্যে ভয় চাপতে চাপতে আয়াতুল কুরসি পড়তে শুরু করলাম। কথায় আছে না, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়’। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো।
পাশে জঙ্গলের ঝোপ থেকে ইকরাম আর ওর সঙ্গীরা বেরিয়ে এসে আমার মুখ চেপে ধরল। আশরাফুল আমার হাত ধরে জোর করে টেনে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেল। ইকরাম আমার বুকের ওড়না ছিনিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে নিজের মুখ মুছতে শুরু করল। ভয়ে আমি কাঁপছিলাম, চোখ দিয়ে অবিরাম জল ঝরছিল। একসময় এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি যে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে পাজামায় প্রস্রাব করে দিই। ওরা সংখ্যায় চারজন ছিল। সাইফুল আমার গলায় শক্ত করে ধরে, খামচে নখ বসিয়ে দেয়। তখনই যন্ত্রণায় আর আতঙ্কে আমি জ্ঞান হারাই।

চেতনা ফিরল রাতে। দেখি, আমি আমার ঘরে শুয়ে আছি। পাশে আম্মা দোয়া পড়ছেন। হঠাৎ উঠে আম্মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। আম্মা আমাকে বুকের মধ্যে টেনে নিলেন। দুজনেই অঝোরে কাঁদলাম। আম্মা আমার মাথা আর মুখে চুমু খেয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেদিন রাতে আমার আর ঘুম এলো না। সেই ভয়ংকর মুহূর্তগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। পাশে আম্মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি কিন্তু একবারও প্রশ্ন করিনি আমি এখানে কি করে। আমি শুধু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছিলাম যে, শরীরে কোনো ব্যথা বা পরিবর্তন অনুভব করিনি।
শেষ রাতের দিকে সামান্য চোখ লেগে গিয়েছিল। সকালে ঘুম ভাঙতেই শুনি বাইরে হৈ-হুল্লোড়। বড় আপারাও এসে উপস্থিত। আমি বিছানা থেকে উঠে চুপচাপ দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান পাতি। শুনি, আমার ঘটনা নিয়ে গ্রামে তোলপাড় চলছে। কেউ বলছে, ‘মাইয়ার চরিত্র ভালা না।’ কেউ কেউ বলল, ‘এত বড় বিয়ার বয়সী মাইয়া ঘরে রাখলে এমন তো হইবেই। ওর মত মাইয়ারা দুই তিনটা ছাওয়াল লইয়া ঘুরে।’ আবার কেউ সরাসরি বলল, ‘মাইয়াই ইচ্ছা কইরা ওদের কাছে গেছে।’

জানিস, কথাগুলো শুনে মাথাটা ভনভন করে ঘুরে উঠল। মনে হচ্ছিল, ওই মুহূর্তেই উনিশ বিশ কিছু একটা করে ফেলি। কিন্তু আম্মা দমে যাওয়ার মানুষ ছিলেন না।
সবার সামনে জোর গলায় বললেন, ‘আমার ছেড়ি, আমি দেখমু। তোগো কাউরে আইতে কই নাই। মাইয়ার দোষ থাকলে এতদিন রাকতাম না ঘরে। অক্ষনি সবগুলা বিদায় হবি।’
কিন্তু সবাই সবার মতো মুখ চালাতে থাকে। কেউ কেউ বলে, ‘মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে গ্রাম ছাড়া করো’। কেউ বলে, ‘আমাদের একঘরে করবে’।
আম্মা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে আঁশবটিটা নিয়ে এসে বলে, ‘বটে? বজ্জাত হা*রামজাদানগুলান, আমার মাইয়ারে গ্রাম ছাড়া করবি? অক্ষুনি বাইর হবি আমার উঠান থেইক্কা (থেকে)। আমার বাইত্তে (বাড়িতে) আইয়া আমারেই ধমকাস? আইজকা যদি দুই তিনটার গলা না কাটছি, আমার নাম আমেনা না।’
আম্মার তুমুল রাগের হাবভাব বুঝে সবাই লাফ দিয়ে উঠে। এরপর যে যার মত টুপ করে কেটে পড়ে। আমি ঘরের কোনে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকলাম।

আম্মা এসে আমার মাথায় হাত রাখতেই উঠে আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বলি, ‘আম্মা বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করি নাই। ওরা জোর করে…’ বলেই আবার হু হু করে কান্না শুরু করে দেই।
আম্মা আমাকে বুকের মধ্যে নিয়ে বলেন, ‘অগো মুখ কেমনে বন্ধ করোন লাগে, এই আমেনা ভালা কইরাই জানে। তুই কান্দিস (কাঁদিস) না।’
এরপর পরের দিনই আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। কয়েকদিন পর যখন উঠিয়ে নিবে, আমি অপলক আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকি। বুঝলাম আম্মার ঘাড় থেকে চিন্তার বোঝা নেমে গেল। জানিস, ঐ দিন আম্মার চোখে আমি এক ফোটা পানিও দেখিনি, শুধু আনন্দ দেখেছি। তার সবচেয়ে আদরের কন্যা বিদায় হচ্ছে, কিন্তু তার চোখমুখে কোনো বিরহের ছাপ ছিল না।

আমি জানতাম যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে আমার থেকে বয়সে দশ বছরের বড়। তখন আমি সবে ষোলোতে পা দিয়েছি। লোকটার নামটাও জানতাম, আব্দুর রহমান হাওলাদার।
বাসর ঘরে লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়িতে ঘোমটার নিচে চুপ করে বসে ছিলাম।
আমার ননদিনি মানে তোর ফুফু রহিমা এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘স্বামী যেমনে আদর করতে চাইবে, তেমনে করতে দিবা। আমার ভাই কিন্তু অনেক ভালা মানুষ। তোমার কাছে আইতেও লজ্জা পাইতে পারে, তুমিও তারে সায় দিও।’
আমি ঘাড় কাত করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে আর কোনো জবাব দিলাম না। বাহিরে সবার কথা শুনতে পাই। হই হই গলায় সবাই বলে, ‘ঘরে চাঁদ আইছে’। আরও কত কথা। পাশে গোলাপ আর রজনীগন্ধার সুবাসে ঘরটা একদম ম ম করছিল। এরমধ্যেই তোর বাপের আগমন ঘটে। ঘরটা দেয়ালঘড়ই ছিল, দরজাটা কাঠের। তোর বাপ এসে দরজাটা আটকে দেয়। তারপর সুন্দর করে খাটের একপাশে বসে বড় একটা সালাম দেয়।
‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’

আমি গুনগুনিয়ে সালামের জবাব দেই।
তোর বাবা মৃদু হেসে বলে, ‘আপনার গলার স্বর অনেক মিষ্টি।’
শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম রে। মনে মনে একটু অহংকারও করেছিলাম বৈকি। কতশত সুদর্শন পুরুষ ছেড়ে, শেষে কিনা এক শ্যামপুরুষকে বিয়ে করলাম। আবার এটাও ভেবেছিলাম, কলঙ্কিনী মেয়েকে জেনেশুনে কে-ই বা বিয়ে করতো। তবে জানিস, তোর বাবার গায়ের বর্ণ শ্যাম হলেও চেহারায় এক মিষ্টি মায়া ভাব ছিল।
সে আমাকে ভদ্রভাবে বলে, ‘চলুন দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেই। আর আপনি এই ভারী গহনা, শাড়ি খুলে এসে নর্মাল পোশাক পড়ে আসতে পারেন; ভালো লাগবে। আলমারিতে কাপড় রাখা আছে।’
আমি একরকম হ্যাঁ না মাথা নাড়িয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে পাশের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসি। তখন আর মুখে ঘোমটা দেইনি। দেখি যে তোর বাবা নিষ্পলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
যখনই বুঝতে পেরেছে আমি লজ্জা পাচ্ছি অমনি মাথাটা নুইয়ে দিয়ে বলে, ‘ওজু করে আসুন, পাশেই বাথরুম।’
তারপর দুজন নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ পড়ে দুইজনেই খাটে বসে রইলাম। তোর বাবা খুব লজ্জা পাচ্ছিল, কীভাবে কি শুরু করবে।

কিছুক্ষণ পর তোর বাবা বলে, ‘আপনার যদি ক্লান্ত লাগে আপনি ঘুমিয়ে যেতে পারেন। এমনিতেও আজকে আপনার উপর থেকে অনেক ধকল গেছে।’
আমি বুঝলাম বেটা এতই ভদ্র, আজকে যে বাসররাত সেটাও তার হুঁশে নেই। আমি খপ করে হেসে ফেলি।
তোর বাবা ইতস্তত বোধ করে আমতাআমতা করে বলে, ‘কি.. কিছু ভুল বলে ফেললাম নাকি?’
আমি বললাম, ‘আপনার থেকে আমি বয়সে অনেক ছোট, তাই আপনি করে বলতে হবে না।’
তোর বাবা হেসে বলে, ‘ও এই ব্যাপার! আমি ভাবলাম কি না কি। যদিও আপনার হাসিটা অনেক চমৎকার। শীতলতার একটা ভাব আছে, দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।’
আমি লজ্জা হেসে বললাম, ‘আমি কিন্তু ক্লান্ত না।’
সে ভরসা পেয়ে ধীরে ধীরে আমার হাত ধরে।
মজার কথা কি জানিস? তখন দুজনেরই হাত-পা কাঁপছিল। আমি তখনই বুঝতে পারি, আমিই তার জীবনের প্রথম নারী।

তারপর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির জীবন আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটছিল। তোর দাদা তো আমার আসার আগেই মারা গেছেন। তোর দাদির স্বভাব অবশ্য বেশ রাগী ছিল, কিন্তু তোর বাবার ভালোবাসায় সেই খিটখিটে স্বভাব আমার কাছে তুচ্ছ মনে হতো। চুপিচুপি যে কত জায়গায় ঘুরতে গেছি, সেটা গুনে শেষ করা যাবে না।
বাগানের ভেতর বসে গল্প করা, বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে হেসে ওঠা, এমনকি রাতের আকাশের তারাগুলো গুনতেও তোর বাবা আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। তোর ফুফু রহিমা যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি আসত, তখন আমাকে খুব আদর করত।
গর্ব করে বলত, ‘এমন বউ আর দশটা জমিদার বাড়িতেও পাওয়া যাইবে না।’

Tell me who I am part 8

তার এই প্রশংসায় মনটা ভরে উঠত। তারপর দুই বছর পর আমার কোলে এলো মিষ্টি একটা মেয়ে, আমার মিরু। সেই মুহূর্তটা যেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ হয়ে ধরা দিয়েছিল।”
মিরা মুচকি হেসে বলে, “মা, সেই দিন তোমাকে কে বাঁচিয়েছিল?”
মমতাজ হেসে বলে, “প্রথমে এ নিয়ে তেমন ভাবিনি। কয়েকদিন পর ভেবেছিলাম, হয়ত সোহান খান আমাকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু পরে মায়ের মুখে শুনেছিলাম, কে ছিল আমার ইজ্জত রক্ষার সেই নায়ক।”
মিরার মুখে উদ্বেগ ফুটে ওঠে।
“কে মা?”
মমতাজ গভীর হাসি হেসে বলে, “তোর বাবা।”

Tell me who I am part 9 (2)