The Silent Manor part 11

The Silent Manor part 11
Dayna Imrose lucky

মজিদ মিয়া এতটুকু বলে থামল। সুফিয়ান কোন প্রতিক্রিয়া করছে না।ঘরের ভেতরে ফারদিনা।সে যদি এরকম ঘটনা শুনে নিশ্চয়ই ভয় পাবে বলে ধারণা করল সুফিয়ান। সুফিয়ান ঘরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে এরপর মজিদ এর দিকে দেখল। “এই বিষয় আমি দেখছি কি করা যায়।আজকে রাতেই আদিব তালুকদার এর সাথে কথা বলব। পাঁচুর বিষয়। আপনি বাড়ি ফিরে যান।” মজিদ মিয়া মাথা কাত করে সম্মতি জানালো।সে চলে যায়।
সুফিয়ান ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল।ফারদিনা একটা বই হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে। সুফিয়ান পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল “কেউ দেখে ফেলার আগে আপনি চলে যান।”

“আমি তোমার থেকে ছোট্ট। আপনি আপনি কেন করছো’ তুমি বলে সম্বোধন কর।”
“তুমি বললে কি হবে?
“কি আর হবে, আমার শুনতে ভালো লাগবে।”
সুফিয়ান বলল “তাহলে বলাই যায়।’
“সত্যি?
“আমি মিথ্যে বলি না।’
ফারদিনা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল “তুমি এত প্রেমের গল্প পড়, আচ্ছা বলো তো প্রেম ভালোবাসা মানে কি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভালোবাসা তোমাকে,একা করবে ভাঙবে। তারপর নতুন করে গড়ে তুলবে।’
“এটাই তোমার কাছে ভালোবাসার মানে?
“আমি তোমাকে এখনি বলতে পারব না ভালোবাসার ব্যাখা কি!আপাতত এতটুকু থাকুক’
“এখন কেন নয়’
“প্রেমের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হলে আগে প্রেমে পড়তে হবে।’
তখনি ঘরে উপস্থিত হয় ঝিলমিল।ও বেশ হন্তদন্ত হয়ে যেন ছুটে এল। “ফারদিনা, অনেক সময় হইছে।এখন চল।’
কোন এক অজানা কারণে ফারদিনার এ ঘর থেকে যেন যেতে ইচ্ছে করছে না। ইট পাথরের গড়া প্রাসাদের থেকে মাটির এবং বাঁশের কঞ্চির ঘরে যেন এক স্বর্গীয় সুখ পাওয়া যায়।কথাটি বলেছিলো ফারদিনার দাদী। তাঁর সে-ই কথার সাথে যেন আজ ফারদিনা মিল পেল।

‘কি হল চল’ তাঁরা দিল ঝিলমিল।
সুফিয়ান বলল “যেতে ইচ্ছে করছে না? ফারদিনা মাথা আওড়ালো ‘না।’
সুফিয়ান চেয়ারের কাঁধের উপর হাতের ভর রেখে বলল ‘আমাকে ভরসা করো?
এবারো মাথা আওড়ালো ‘হ্যাঁ’!
দুই দিনের পরিচয়ে কতটা ভরসা করতে পারলে?

ফারদিনা দু হাত দিয়ে দেখালো ‘অনেক টা। সুফিয়ান এবার একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল।হাত দুটো ঘঁষে নিয়ে গরম করল। এরপর বলল “কতটা ভরসা করো এখনি প্রমাণ হয়ে যাবে। ঝিলমিল তুমি ঘর থেকে যাও তো। আমার একটু কাজ আছে।” বলতেই ফারদিনা ঝিলমিল এর হাত ধরে দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে আসে।ফারদিনার ভয়ের মুখশ্রী দেখে সুফিয়ান সশব্দে হেসে উঠল।সেও ঘরের বাইরে আসল। বারান্দার খুঁটির সঙ্গে হেলানে দাঁড়ালো।ফারদিনা উঠোন পেরিয়ে যেতেই পেছন ঘুরে দেখল সুফিয়ান কে। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। এরপর সুফিয়ান কে লক্ষ্য করে বলল “যখনই তোমার বাঁশির সুর পাব আমি কিন্তু ছুটে আসব। অপেক্ষায় থাকব।”

জমিদার বাড়ির আঙিনাটা আজ যেন অন্য রকম। সন্ধ্যা নামার আগেই আলোর মালা জ্বলেছে বারান্দা থেকে উঠোন পর্যন্ত। প্রাচীন সিন্দুক থেকে বের করা পিতলের ঝাড়বাতি ঝুলছে ছাদের মাঝখানে, ঝিকমিক করছে আলোয়। বাতাসে আতরের গন্ধ, ধূপের ধোঁয়া ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে জোনাকির ঝলকানির সাথে।রাতটা যেন কেমন করে অচেনা হয়ে উঠেছে।বাড়ির চারপাশের নিস্তব্ধতা আজ কেবলই গানের অপেক্ষায়।
রশীদ তালুকদার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য শহরে গেছেন।তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁর ছেলে রায়ান,আদিবও সায়েম আজ আয়োজন করেছে এক রাতের রঙ্গমঞ্চ। এককথায় বলা ভালো, বাইজিদের রাত।
মাঝ আঙিনার উপর ঘেরা একটি হলঘর, যেটি এক সময় ছিল অতিথিদের জন্য। আজ তার প্রতিটি কোণ সাজানো লাল মখমলে, দেয়ালের গাঁথুনি ঘেরা আলোকমালায় সোনালি ঝলক। ঘরের মাঝখানে কার্পেট পাতা, চারপাশে রূপার গ্লাস, পানীয় আর নানা রকম মিষ্টান্নের পসরা।

রায়ান বসে আছে উত্তর দিকের আসনে।গায়ে হালকা সোনালী বেনারসি পাঞ্জাবি, চুলগুলো পেছনে আচড়ানো। হাতে ক্রিস্টালের গ্লাসে হালকা রঙের পানীয়, ঠোঁট স্থির,কিন্তু উদাস হাসি যেন মেখে আছে।পাশে ছোট ভাই আরিব,তার চোখে মৃদু কৌতূহল, যেন এই জগত তার কাছে নতুন কোনো স্বপ্নের মতো।সায়েম পানীয় খাচ্ছে।সে যেন সর্বদাই সুখি।আদিব এরকম পরিস্থিতিতে আসতে চায়নি। তাঁকে জোড় করে আনা হয়েছে।
“সব প্রস্তুত?”রায়ান জিজ্ঞেস করল।
কোনো এক দাসী মাথা নিচু করে বলল, “জি, হুজুর। তাঁরা এসে গেছেন।”
হল ঘরের বাইরে তখন পায়ের শব্দ।মেঝেতে আলগোছে বাজছে পায়জামার ঝুনঝুন, আর তার সঙ্গে মিলছে তবলার প্রথম আঘাত।

তারপর ধীরে ধীরে প্রবেশ করল তারা।
তিনজন বাইজি, যেন রাতের আলোয় ফুটে থাকা রজনীগন্ধার মতো। তাদের পরনে গাঢ় লাল রঙের ব্রোকেড লেহেঙ্গা।হাতের সূচিকর্ম মিরর ওয়ার্ক দ্বারা পূর্ণ।প্রথমেই আসলো সায়রা।কপালে লাল টিপ, চুলে গোলাপ গোঁজা।আরেকজনের চোখে কাজল, ঠোঁটে মৃদু হাসি।তাঁর নাম কাশমিরা।তৃতীয়জন,সবচেয়ে তরুণী, হয়তো কুড়ি বছরও হয়নি। তার নাম মেহের।
আদিব বেশ অস্বস্তি বোধ করছে। কিন্তু বাকি তিন ভাইয়ের সাথে যোগদান যেন করতেই হল তাঁদের মন রক্ষার্থে।রায়ান,আরিব,সায়েম তাঁরা হাতে পানীয় নিয়ে তবলার শব্দের সাথে সুরের সাথে বলে উঠলো নাচো..
বাইজিরা নাচ শুরু করল। তবলার তালে তালে শরীর দুলে উঠল।গানের ছন্দ ভেসে উঠল, “দূর কোথায় যাস প্রিয়ে, ফিরে আয় মোর ঘরে”

রায়ান এর দৃষ্টি চলে গেল মেহের এর দিকে।ঘরের আলোয় যেন তার চোখের দীপ্তি ছিটকে পড়ছে মেঝেতে।ছেলেরা একে একে নিঃশব্দ হয়ে গেল।রায়ান চোখের পলক ফেলল না।মদ এক চুমুক নিয়ে বলল “গানটা যেন মদের চেয়েও মধুর’আর ওর নাচ।” বলে হাসল। বাইজি দের মুখে হাঁসি।কিন্তু সেই হাসির ভেতরে যেন এক ধরনের শূন্যতা।তার চোখে বাইজিদের শরীর নয়, তাদের চোখের ক্লান্তি ধরা পড়ে।কত রাত এমন কেটেছে, কত দরজায় নাচতে হয়েছে,সে ভাবনাটাই যেন রায়ান কে কেমন করে নরম করে তুলল।
তবলার তালে তালে তাঁদের পায়ের নূপুর বাজে।রায়ান এর চোখে রক্তের আভা দেখা দিল হঠাৎ।সে বলল, “এই জীবনের আনন্দও বড় অল্পস্থায়ী, তাই না আরিব?” আরিব চুপ করে রইল।তার মনে হচ্ছিল, এই গান, এই হাসি, সবকিছুই যেন চিরস্থায়ী না হলেও এর মত শান্তি আর কিছুতে নেই।।
নাচের মাঝে মেহের একবার তাদের দিকে তাকাল।তার দৃষ্টিতে ক্লান্তি, তবু সে হাসল,যেমন ফুল ঝরে পড়ে তবু গন্ধ ছড়ায়।
রায়ান গ্লাসে আবার ঢালল মদ, ধীরে ধীরে বলল,

“এই রাতে কোনো শোক নেই, শুধু আনন্দ।”
কিন্তু বাইরে তখন ঘন কুয়াশা জমেছে।সাথে দমকা হাওয়া।দূরের কুকুরের ডাক শোনা যায়, যেন প্রকৃতি নিজেই প্রতিবাদ করছে এই আড়ম্বরের।বাইজি মেহের সবচেয়ে সুন্দরী।সে গানের সুর ধরছিল।সুর শেষ করে বসে পড়ল কার্পেটে।সে জল চেয়ে নিল, মৃদু কণ্ঠে বলল,
“গান গাইলে মন ভালো হয়, কিন্তু শেষে কে শুনে কান্না?”
রায়ান শুনতে পেল। কিছু বলল না। গ্লাসের তলায় তার নিজের মুখ প্রতিফলিত হলো।এক ধরনের নিঃসঙ্গতা নিয়ে।আরিব শুধু বলল, “গান থামিও না, মেহের। এই রাতের নীরবতা গানেই ঢেকে থাকুক।”
তখন তবলার তালে তালে আবার উঠল সুর, কিন্তু এবার গানটা একটু ভারী। “এই দেহখানি মাটির হইবে, রবে কেবল নাম…”

এক মুহূর্তে ঘরের ভিতর কেমন যেন নেমে এল এক বিষণ্ন আবেশ।বাইরের বাতাস থেমে গেল, প্রদীপের আলো দুলে উঠল।মদের গন্ধের নিচে ছড়িয়ে পড়ল চন্দনের গন্ধ, আর তার মধ্যেই কেউ যেন নিঃশব্দে কেঁদে ফেলল।
মেহের গানের শেষ লাইনটায় কণ্ঠ থামিয়ে চেয়ে রইল রায়ান এর দিকে।দুটো চোখে অদ্ভুত এক বার্তা।হয়তো মুক্তির,নয়ত অজানা বেদনার।
রায়ান তখনও হাসছে, কিন্তু সেই হাসিতে সুখ নেই।তার চোখে একরাশ ক্লান্তি।রাত বাড়তে থাকে। একে একে মদের গ্লাস খালি হয়, বাইজিদের সুর নরম হয়ে আসে।শেষে শুধু তবলার ক্ষীণ আওয়াজ পাওয়া গেল।
অন্যদিকে সুফিয়ান জমিদার বাড়িতে হাজির হয় আদিব এর খোঁজে।বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। দ্রুত পায়ে হেঁটে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। কাউকেই দেখা গেল না।তখন ঝিলমিল উপস্থিত হয়। ‘কাউরে খুজতেছো নাকি!’ ঝিলমিল এর চোখে মুখে যেন উতালা ভাব।

“আদিব ভাই কোথায়?
“উপরে,হল ঘরে বাইজি দের নাচ দেখতাজে।আর মজা লইতাছে।যাও ওদের লগে যোগ দেও।”
সুফিয়ান নীরব হয়ে গেল। বাইজিরা নাচ করছে, সেখানে সে উপস্থিত হতে চায় না। কিন্তু পাঁচুর বিষয় কথা বলাও দরকার।
ঝিলমিল কাঁধ দিয়ে সুফিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বলল “কি হল,এত কি ভাবতেছো?যাও উপরে।’
সুফিয়ান বিড়বিড় করে বলল ‘গায়ে ঢলে পড়া মহিলা।’ বলে উপরে হল ঘরের দিকে হাঁটল।হল ঘরের দিকে যতই যাচ্ছে ঘুঙুর এর শব্দ তত কাছে আসছে।
হল ঘরে প্রবেশ করে। চারদিক বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো।বেশ সুগন্ধি ভেসে আসছে। বাইজি দের দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে আদিব কে খুঁজল।আদিব পুব পাশে আসনে বসে আছে।সুফিয়ান সেদিকে যায়।আদিব দেখল সুফিয়ান কে।রায়ানও চোখ তুলে দেখল সুফিয়ান কে।সে হেসে উঠে দাঁড়ালো। বলল ‘তুই এসেছিস ভালো হয়েছে।আয় মজা কর। পানীয় নে‌। বাইজি দের রুপ উপভোগ কর।’
সুফিয়ান নাকোচ করতেই তিনজন বাইজি মিলে সুফিয়ান কে টেনে নিয়ে কার্পেট এর উপর দাঁড় করিয়ে দিল। এরপর বাইজিরা মিলে সুফিয়ান কে ঘিরে নাচ করতে শুরু করল।অন্যদিকে রায়ান,সায়েম, এবং আরিব বেশ আনন্দ উপভোগ করছে।

মেহের তখন ছন্দের তালে ঘুরে গিয়ে দুই গ্লাস মদ আনল। সুফিয়ান এর দিকে এগিয়ে দিল। সুফিয়ান তাঁদের মাঝখান থেকে সরে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। মেহের,কাশমিরা জোর করে তাকে মদ খাইয়ে দিল।এক চুমুক দেয়ার পরই সুফিয়ান এর মাথা ঝিম ধরে গেল। মেহের পুরোটা খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা করল। সুফিয়ান সরিয়ে দিলেও তাঁরা পুনরায় জোর করে খাইয়ে দেয়। সুফিয়ান বাধ্য হয়ে পুরোটা খেয়ে নিল।আদিব রায়ান কে উদ্দেশ্য করে বলল “ভাই,কিছু বল। সুফিয়ান এসব খায় না পড়ে নেশা হয়ে যাবে।’

“তুই চুপ কর। ধীরে ধীরে এসব খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে।ওকে ভালোই মানাচ্ছে সুন্দরীদের পাশে।কি বলিস?
আদিব কিছু বলল না।সে অসহায় এর মত সুফিয়ান কে দেখল। ইতিমধ্যে নেশায় ধরে গেছে সুফিয়ান কে। তাঁর চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হতে লাগল। ধীরে ধীরে একবারে ই থেমে যায় গানের সুর। বন্ধ হয় তবলার সুর।
সুফিয়ান ঢলে পড়তেই মেহের ধরে নেয়। সুফিয়ান তাঁর টাল সামলে নেয়। দৌড়ে আসে আদিব। সুফিয়ান কে ধরতে চাইলে রায়ান বলল “ওদের থেকে সরে যা।মেহের ওকে আরাম করার জন্য ঘরে নিয়ে যাক।’ আদিব সরে যায় বাধ্য ছেলের মত। মেহের সুফিয়ান কে ধরে একটি ঘরে নিয়ে যায়।তাঁর শরীরের বল শক্তি ক্রমাগত কমে গেল। মেহের তাকে খাটে শুইয়ে দেয়। ঝাপসা চোখে একবার মেহের দিকে দেখল সুফিয়ান। পরিষ্কার দেখা গেল না। মেহের ক্ষীণ দৃষ্টিতে সুফিয়ান কে দেখল। মসৃণ মুখ তার। মাথায় একটা পাগড়ি।মেহের বিছানায় হাঁটু রেখে শরীরের ঝাঁপ দিল সুফিয়ান এর উপর। এরপর পাগড়িটা খুলে ফেলল। সুফিয়ান তখন নড়েচড়ে শোয়। কিছু বলতে চাইছে। মেহের মাথা নিচু করে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল “কিছু বলতে চাইছো?

সে ফিসফিসিয়ে বলল “ফারদিনা।”
মেহের বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। জমিদার এর মেয়ের নাম তাঁর মুখে শুনে খানিকটা চিন্তিত হল। সুফিয়ান পুনরায় বলল ‘ফারদিনা’। এরপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল।
ফারদিনা তাঁর ঘরের এক কোণে বসে গুনগুন করে গান গাইছিল।এমন সময় ঝিলমিল উপস্থিত হয়।ফারদিনার পাশে বসে বলল “তুই কি বাঁশিওয়ালার কথা ভাবতেছিস? মিথ্যা কইলে কিন্তু হইবো না।আমি সবার মনের কথাও টের পাই।”

ফারদিনা চুপচাপ। তাঁর নিরবতায়ই যেন তাঁর উত্তর। সে-ই রেশ টেনে ঝিলমিল বলল “তোর বাঁশিওয়ালা হল ঘরে বাইজিদের সঙ্গে নাইচা মদ পান কইরা হয়ত এতক্ষণে..!” বাকি কথা ঝিলমিল গিলে লাজুক হাসি দিল।
“এসব তুই কি বলছিস? ফারদিনা হকচকিয়ে গেল।
“হ আমি ঠিক ই কইছি।শোন তোরে একটা গল্প কই।এক রাজকুমারী আর এক যোদ্ধার গল্প।তোর লগে মিলতেও পারে।কমু?

“তুই তোর গল্প নিয়ে থাক।” বলে ফারদিনা দৌড়ে হল ঘরের দিকে গেল। সেখানে দু’জন বাইজি বসে মুদ্রা গুনছে। সাথে কিছু দাসীরাও আছে।সে একজন দাসীকে জিজ্ঞেস করল ‘সুফিয়ান কোথায়? সে ইশারায় আরাম করার ঘরটি দেখিয়ে দেয়।ফারদিনা ছুটে গেল ঘরটির দিকে।
সুফিয়ান নিথর দেহে যেন ঘুমোচ্ছে। একজন বাইজি সুফিয়ান এর পা থেকে জুতা খুলে দিচ্ছে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে বলল “এই মেয়ে, তুমি ওকে স্পর্শ কেন করছো?
মেহের উঠে দাঁড়ালো।ধীর পায়ে ফারদিনার সম্মুখীন হল।
‘তুমি নিশ্চয়ই ফারদিনা?

“হ্যাঁ, কিন্তু আমার নাম জানলে কিভাবে?
“এই গ্রামের সবাই তোমার নাম জানে।এর আগে আমি তোমাকে দেখিনি।আজ দেখলাম।’
“ওর সাথে এই ঘরে কেন তুমি?কি করছিলে তোমরা?ও এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন?
মেহের মুখে হাঁসি এনে বলল “ঈর্ষা হচ্ছে!কাউকে ভালোবাসলে ঈর্ষা হওয়ার ই কথা।”
“আমার প্রশ্নের জবাব তো এটা নয়? বলে ফারদিনা সুফিয়ান এর কাছে গেল। তাঁর পাশে বসে।মেহের খোলা চুল গুলো খোঁপা করতে করতে বলল “নেশা জাতীয় পানীয় খেয়েছিল। টাল সামলাতে পারছিল না।তাই আমি এই ঘরে এনে শুইয়ে দিয়েছে।’
ফারদিনা কিছু বলে না। মেহের আগ বাড়িয়ে বলল “সেও কি তোমাকে ভালোবাসে?
“হয়ত না।”
“সেও তোমাকে ভালোবাসে।”

“আমার তেমনটি মনে হচ্ছে না।’ মুখটি ধোঁয়াশা হয়ে গেল ফারদিনার।
“সে নেশার ঘোরে তোমার নাম বলছিলো। নিশ্চয়ই তোমাকে ভালোবাসে।’
“নেশার ঘোরে তো মানুষ হাবোল-তাবোল বলে।এ কথা তুমি বিশ্বাস করলে’
মেহের মুচকি হেসে বলল “পুরুষেরা নেশার ঘোরে কখনো মিথ্যা কথা বলেনা।” ‘সে তোমার নাম বলেছে তাঁর মানে সে তোমাকে খুঁজছিল।’

মেহের থেমে গেল। পুনরায় বলল “তোমাকে একটা গল্প বলি।তবে এটা গল্প হলেও সত্য ছিল। প্রাচীন এক রাজকুমারী ছিল। তাঁর প্রেম ছিল এক যোদ্ধার সাথে…!’ এতটুকু বলতেই একজন অনুচারী এসে হাজির হয়। গম্ভীর গলায় মেহের কে লক্ষ্য করে বলল আপনাদের এখনি এখান থেকে যেতে হবে। দিনের আলো ফুটলে বিপদ।’
মেহের চলে যায় ফারদিনার থেকে বিদায় নিয়ে।

The Silent Manor part 10

ফারদিনা জানালার পর্দা ফাঁক করে বাইজি দের যাওয়ার পানে দেখল।তাঁর ভেতরটা উদাসীন হয়ে গেল।বাইজি এবং ঝিলমিল দু’জনেই কেন তাকে গল্প শোনাতে চাইলো! দু’জনের গল্পের শুরু এক কেন ছিল?

The Silent Manor part 12

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here