The Silent Manor part 14
Dayna Imrose lucky
দেশীয় ছেলে মিজানুর রহমান। আলিমনগর গ্রামের বাসিন্দা। রশীদ তালুকদার এর পরিচিত। মিজানুর রশীদ কে বলল ‘চাচা,আজমাত কিরগিজ। একজন পর্যটক।গ্রামটি ও ঘুরে ঘুরে দেখবে।আর এই গ্রামটি সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করবে। তাঁর জন্য আপনার সাথে কথা বলা দরকার ওর”
রশীদ গলা পরিষ্কার করে বলল ‘কিসব ভাষায় কথা বলছে,মনে হচ্ছে আমায় গালাগালি করছে।ওর সাথে কথা বলব কিভাবে?
‘আজমাত বাংলা বলতে পারে!’
‘কি বলছিস?’
‘হ্যাঁ।আমাদের দেশে আসার জন্যই বাংলা শিখেছে।’
রশীদ বলল ‘আমি এখন কথা বলতে পারব না। আমার সাথে দারোগা সাহেব একটা বিষয় আলাপ করতে এসেছে। তাঁকে এখন সময় দেব।’ থেমে কুদ্দুস কে লক্ষ্য করে বলল ‘কালু অতিথি কে অতিথিশালায় নিয়ে যা। ভালো মন্দ আপ্যায়ন কর।বুঝেছিস?
‘বুঝেছি।’ আজমাত নুরবেক কে কুদ্দুস অতিথিশালায় নিয়ে যায়। মিজানুর এবং সাথে আর একজন রাইডার্স চলে যায়।রশীদ পুনরায় চেয়ারে বসেন। ওপাশে বসল নুরুল। রশীদ মুখে পান ভরে বলল ‘আমি বরাবরই অতিথিদের সম্মান করি। যেমন আপনি ও আমার অতিথি। এখন আপনাকে ছেড়ে যদি আজমাত এর সাথে কথা বলি, তাহলে আপনার অপমান হবে কি হবে না?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নুরুল দৃঢ় কন্ঠে বলল ‘হয়ত হত।’
‘যাক গে, আপনার প্রশ্ন করুন?
‘আপনার গ্রামে বেশ অনেকদিন হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। তিনদিন আগে সামসুল নামের এক কৃষকের ছেলে নিখোঁজ হয়, এরপর ওর লাশ পাওয়া যায়। এগুলো কি হচ্ছে?
রশীদ পিকদানিতে পিক ফেলে বলল ‘এগুলো কি হচ্ছে আমি কি করে বলব! আপনি দারোগা আপনি তদন্ত করুন।তবেই না উত্তর মিলবে ‘
“আপনি বরাবরই অপ্রীতিকর কথা বলেন কেন? মুখের ভাষায় যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ।’
রশীদ নীরব কন্ঠে বলল ‘দারোগা সাহেব, মুখের ভাষা টানছেন কেন?যা সত্যি তাই বলছি।’
“এতে আপনার গ্রামের দুর্নাম হবে। এরকম ঘটতে থাকলে সবাই আপনার দিকেই আঙুল তুলবে।’
‘এরকম সাহস কারো নেই।আর সামসুল এর ছেলের জন্য খুবই খারাপ লাগছে। অবুঝ শিশু ছিল।” রশীদ এর কন্ঠে ব্যাকুলতা। নুরুল বলল ‘আজ আমি আসি। আপনি আপনার অনুচারীদের আজ থেকে আরো সতর্ক করে দিবেন।আমিও তদন্ত করছি।’ বলে চলে যায় নুরুল।
সায়েম এবং রায়ান রশীদ এর কাছে আসে।সায়েম বলল ‘আব্বা আপনি শুধু একবার আদেশ দেন,ঐ দারোগার মুন্ডু টা আলাদা করে দেই।”
রশীদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল “অস্থির হলে হবে না। গ্রামের মানুষদের দেখা শোনার দায়িত্ব আমার। তাঁদের অসুবিধে হলে আমার কাছেই আসবে।মাথা ঠান্ডা রাখ।”
রায়ান বলল “আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি, কিভাবে ওর ছেলেটা মারা গেল।আর এ আমাদের দিকেই আঙ্গুল তুলছে।”
রশীদ বলল “ছাড়। নতুন অতিথি এসেছে, তাঁর খেয়াল রাখ।কিরগিজ ছেলে।এখানে আপ্যায়নে ত্রুটি থাকলে বিদেশে গিয়ে আমাদের নামে দুর্নাম করবে।’”
“আমরা তাঁর খেয়াল রাখব।’
রশীদ একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল ‘আচ্ছা’ ছেলেটির সঠিক উদ্দেশ্যে কি রে?
রায়ান বলল ‘ও একজন পর্যটক।সারা দেশেই ঘুরে ঘুরে দেখে। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে।’
“তোরাও যা ওর ঘরে। গিয়ে কিরগিজ সম্পর্কে কিছু জান। শুনেছি কিরগিজস্তান অনেক সুন্দর।পাহাড়, হ্রদ সবমিলিয়ে আকর্ষণীয় জায়গা।’
‘আপনি যা বলবেন” আদবের সাথে বলল সায়েম।
ঝিলমিল হাতে সকালের খাবার নিয়ে ফারদিনার ঘরে উপস্থিত হয়।ফারদিনা আয়নার সামনে বসে চুল বাধছে।কালো রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে। কপালে কালো টিপ।ফারদিনা নুপুরের শব্দ পেল। ঘুরে তাকাল। “এতক্ষনে তোর আসতে হল।’
“সারাদিন ঘরে বইসা থাক। ওদিকে বিলাতি এক বাবু এসেছে।’
‘কি বলছিস,কে এসেছে?
“কিরগিজ যুবক।আজমাত নুরবেক। অনেক সুন্দর।মনে হয় পর্যটক।”
“কোথায় আছে এখন?
“অতিথিশালায়।’
‘কোন ভাষায় কথা বলে?
‘তাদের ভাষায়। শুনেছি বাংলাও বলতে পারে’
‘সুফিয়ান থাকলে এখন ভালো হত।কিরগিজ ছেলে দেখতে পেত। ভালো হত না বল?
“সব কিছুতেই ওরে টানতেছো দেখছি।ভালো বাইসা ফালাইছো, তাইতো?
ফারদিনা থুতনি বুকের দিকে নিয়ে মৃদু হাসল। এরপর মাথা ঝাঁকাল। ‘হুম’
‘ওরে কইতাছো না কেন,কহন কে আইসা খোলা জায়গায় ফসল ফলায় কে জানে’ বলে খাবারের থালা থেকে খাবার তুলে নিজের মুখে দিল।
“ভয়ে।’
‘কার?
“যদি আব্বা,ভাইয়েরা জানতে পারে, সুফিয়ান কে তারা খুব বিশ্বাস করে। কিন্তু সে একজন কৃষক।এই সম্পর্ক যদি মেনে না নেয়!’
ঝিলমিল বলল ‘ধুর, আগেই খারাপ কিছু হবে ভাবতাছিস কেন? ভালো কিছুও হইতে পারে।”
“ভালো কিছু হবে?
“হইবো। শোন,তুই আগে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সুফিয়ান তোরে ঘুরাইতে পারে।ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। তাঁর চেয়ে সুফিয়ান এর মুখ থেকে সত্যটা বের কর।”
“কিভাবে?
“তোর মামাতো ভাই তো আইলো না।আইলো কে,কিরগিজ ব্যাডা।তুই ঐ বিলাতির সাথে সুফিয়ান এর সামনে ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলবি। পারবি না?
‘পারব। কিন্তু এতে লাভ কি হবে?
“ঈর্ষা হইবো। সুফিয়ান এর।দেখবি আগুনের মত জ্বলব।আর জ্বলতে জ্বলতে মুখ ফসকে সত্যটা বলে দিবে।’
“তাহলে এখন আমাদের কি করতে হবে?
‘ঐ বিলাতি আইছে ঘুরতে।ওরে ক্ষেতের ওদিকে ঘুরতে নিয়ে যা। সুফিয়ান কে দেখাই দেখাই কথা বলবি।”
তাঁরা অতিথিশালায় গেল।আজমাত নোটে কিছু লিখছে। দু’জন দাসী তাঁর ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখছে। মেয়েদের নুপুরের আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলে তাকায়।ফারদিনা আগ বাড়িয়ে বলল _আমি ফারদিনা।এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে। আপনি নিশ্চয়ই কিরগিজস্তান। একজন পর্যটক।ঠিক বললাম তো?
“হ্যাঁ। তোমাদের গ্রাম অনেক সুন্দর। পুরোটা দেখা হয়নি।তবে এখন যখন এখানে এসেছি দেখে নেব।”
“আপনি কিরগিজস্তান এর কোথায় থাকেন?
“আমি বিশকেক থাকি। তোমার রিয়া হচে?
ফারদিনা আজমাত এর কথা শুনে হেসে উঠলো।বলল ‘ওটা রিয়া নয়,বিয়া অথবা বিয়ে।আর হচে না। হয়েছে হবে। তোমার বিয়ে হয়েছে? এভাবে হবে।নিন একবার বলুন!”
“তোমার বিয়ে হয়েছে?
“এবার ঠিক আছে। না হয়নি।”
“এখানে আসার পর,খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। এখন তোমাকে পেয়ে মনে হচ্ছে একজন সঙ্গী পেলাম।”
“চলুন। আপনাকে আমাদের আশপাশ টা দেখাই।”
“তোমরা যাও।আমি পোষাক বদলে আসছি।
রশীদ তালুকদার দুশ্চিন্তায় আছেন। নতুন জমি ফসলের জন্য উন্মুক্ত করেছে।এখনি সময় সারা বছরের জন্য ধান,শাক সবজি, ফলমূল রোপণ করা।আজ চারজন কৃষক অনুপস্থিত।কাজে আসেনি। আজকে বিচ রোপণ না করলে আর একটা দিন পিছিয়ে যাবে। রশীদ এটা মানতে পারছেন না। তিনি সোফায় বসলেন। কুদ্দুস কে ডাকল। লম্বা কন্ঠে। কুদ্দুস হাজির হয়। বলল “এত জোরে ডাকলেন, কিছু হয়েছে?
“কিছু হলে কি খুশি হতিস, হতচ্ছাড়া।আমার মাথাটা টিপে দে। ভীষণ ব্যথা করছে।”
কুদ্দুস মাথা টিপতে টিপতে বলল “এত চিন্তা কিসের?কি ভাবেন এত?
“চারজন কৃষক আজ ক্ষেতে আসেনি।আজকেই বিচ রোপণ করতে হবে।বাকি যারা এসেছে ওঁরা সব সামলাতে পারবে না।এটা দুশ্চিন্তার কি না?
“হুম। দুশ্চিন্তার বিষয়”
“সমস্যার কথা তো শুনলি, এখন সমাধান দে।’
কুদ্দুস ঢোক গিলল।ও কিভাবে সমাধান দিবে? রশীদ এর বিচক্ষণ প্রশ্ন। কিন্তু তাঁর প্রশ্নের না দিতে পারলেও যে,কটু কথা শুনতে হবে।
‘কি হলো’সমাধান দে”
কুদ্দুস তাকায় সিঁড়ির দিকে।রায়ান,আরিব,সায়েম নিচে নামছে। কুদ্দুস বলল “আপনার চার ছেলেকে দিয়েই তো কাজটা সম্পন্ন করতে পারেন।’ রশীদ ওর দিকে কটমট করে তাকালো। কুদ্দুস এর হাত সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কুদ্দুস ভয় পেল। রশীদ বলল “তোকে আমার মাঝেমধ্যে খুব ভালো লাগে।তুই গাধা হলেও বুদ্ধিমান।ঠিক বলেছিস। ওদের দিয়েই আজ বাকি কাজ সেরে নেব।এতে করে মজুরি ও বেঁচে যাবে।”
“কিসের মজুরি আব্বা? জিজ্ঞেস করল সায়েম। রশীদ বলল ‘তোরা এখনি পোশাক বদলে নে। এরপর ক্ষেতে গিয়ে বিচ রোপণ কর।’
‘এটা আপনি কি বলছেন আব্বা? বলল আরিব।
‘পিতার আদেশের উপর প্রশ্ন ছুড়া পাপ। জানিস তো।আজ যে চারজন কৃষক আসেনি ওদের কাজ তোরা করবি।পারবি না?
তারা তিনজন নিজেদের মধ্যে চাওয়াচাওয়ি করল।এরকম কাজের জন্য তাঁরা যেন মোটেই প্রস্তুত নয়। কুদ্দুস আড়ালে হাসল। জমিদার এর ছেলেরা ক্ষেতে চাষ করবে।ওর বেশ আনন্দ হচ্ছে।
রশীদ বলল “কি হল,কথা কানে গেল না।শিগগিরই যা।রায়ান কে দেখতে পাচ্ছি না ও কোথায়?
‘ওর শরীর টা ভালো নয়।শুয়ে আছে ঘরেই।’বলল আরিব। রশীদ বলল ‘ওসব বায়না চলবে না।ওকেও নিয়ে যা।’
চার ভাই পোশাক বদলে লুঙ্গি পড়ল।সাথে স্যান্ডো গেঞ্জি।মাথায় গামছা বাঁধল। এরপর রওনা হয় ক্ষেতের দিকে।ফারদিনা আজমাত, ঝিলমিল, তাঁরাও ক্ষেতের দিকে চলে যায়।ক্ষেতের অন্যান্য কৃষকরা জমিদার এর ছেলেদের দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।ফারদিনা, ঝিলমিল একে অপরের সাথে চাওয়াচাওয়ি করল। রশীদ উপস্থিত হন ক্ষেতের ধারে।সাথে অনুচারীগন।ফারদিনা আশেপাশে তাকাল। সুফিয়ান কোথাও নেই।হাবলু,বদরু ওঁরা ক্ষেতে কাজ করছে। রশীদ গলা উঁচিয়ে বলল ‘কি হল আমার পুত্র রা,ক্ষেতে নেমে পড়।সময় কম।’
তাঁরা ক্ষেতে নামল।হাতে ফসলের বিচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তবে ঠিক কিভাবে বিচ রোপণ করবে তারা জানে না। কুদ্দুস রশীদ কে বলল ‘সরদার একটা কথা বলি?
‘বল’
‘আপনার ছেলেরা ক্ষেতে চাষ করছে, আপনার খারাপ লাগছে না, না মানে আশেপাশের সবাই তো দেখছে।”
“কর্মে লজ্জা নেই।কর্ম,কর্মই হয়।সৎ কাজে সম্মান বাড়ে।কি বাড়ে?
‘জ্বী, সম্মান।’
আদিব হাতে ধানের রোপণ চারা নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। কিভাবে এটি রোপণ করতে হবে সে জানে না। ধীরে ধীরে নিচের দিকে চারা নিয়ে ঝুঁকল।ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর হাত কেউ ধরে ফেলে।চোখ তুলে তাকায় আদিব। সুফিয়ান।আদিব বলল “তুই এখানে!যা তোর কাজ কর।আমি সামলে নিতে পারব।”
সুফিয়ান বলল “রোপণ চারা আমার কাছে দে।শুনেছি তোর শরীর খারাপ। বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নে।” সুফিয়ান হাত থেকে রোপণ চারা নিয়ে গেল। রশীদ তালুকদার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলেন। ঝিলমিল ফারদিনাকে ফিসফিসিয়ে বলল “তোর বাঁশিওয়ালা চইলা আইছে।রাখাল হইলেও ব্যাটার মধ্যে একটা ভাব আছে।কি বলিস?
“নজর দিস না।তোর দুলাভাই।’
আজমাত বলল ‘তোমার ভাইয়ের থেকে যে চারা নিল সে কে?
“সে সুফিয়ান।রাখাল বাঁশিওয়ালা।”
সুফিয়ান একবার ঘুরে ফারদিনার দিকে দেখল। এরপর চারা রোপণ শুরু করে। তাঁর দেখাদেখি সবাই বিচ,চারা রোপণ করতে শুরু করে। রশীদ বিড়বিড় করে বলল “এই ব্যাটা খুব বুদ্ধিমান।’ থেমে কুদ্দুস কে লক্ষ্য করে বলল “সবার জন্য জলের ব্যবস্থা কর। ওদের পিপাসা লাগবে।আজ রোদ খুব কড়া।”
সূর্য একদম মাথার উপরে।রোদ খুব কড়া। সুফিয়ান গলা উঁচিয়ে বদরু কে বলল ‘জল নিয়ে আয়।খুব জল তেষ্টা পেয়েছে।’
ফারদিনা বলল “আমি নিয়ে আসছি।”
সায়েম,রায়ান,আরিব বলল আমাদের ও দে।’
ফারদিনা কুদ্দুস এর হাত থেকে জল নিলো। রশীদ শুধু তাকিয়ে রইল। কিছু বলতে চেয়েও পাড়ল না।ফারদিনা জল নিয়ে তাঁর ভাইদের অতিক্রম করে সুফিয়ান এর দিকে গেল। সায়েম আরিব সহ সবাই অবাক হয়ে গেল। সুফিয়ান হাতে চারা নিয়ে বলল “জল তোমার কাছে চাইনি। তুমি নিয়ে আসলে কেন,সবাই দেখছে।”
“দেখুক।জল খেয়ে নাও।’
সুফিয়ান ঘুরে আজমাত এর দিকে দেখল।বলল “বিলাতি কে?
“ও হচ্ছে আজমাত নুরবেক। কিরগিজস্তান এর। পর্যটক একজন।
“তুমি ওর সাথে গা ঘেঁষে কথা বলছো কেন?
“গা ঘেঁষে কোথায় বললাম।
“আমার চোখ চারটে।কয়টা?
‘চারটে।’
‘হ্যাঁ,আমি চার চোখ দিয়ে সব দেখি।যাক,পাগলে পাগলে ভালোই মানাবে।’
ফারদিনা রেগে বলল “তোমার জল খেতে হবে না।’ বলে মুখ ভেংচে দিল।
‘হাতে কাঁদা লেগেছে। কিভাবে খাই?
“আমি খাইয়ে দেই?
“না।কলঙ্ক লাগবে।’
“পূর্ণতার প্রথম ছোঁয়া কলঙ্ক।কলঙ্ক থেকেই পূর্ণতা আসবে।” সুফিয়ান চোখ ভাজ করে বলল “এর মানে?
ফারদিনা থতমত খেয়ে বলল “তুমি বুঝবে না। তুমি তোমার কাদা মাখা হাত আমার শাড়ির আঁচলে মুছে নাও। এরপর জল খাও” সুফিয়ান সবার দিকে তাকাল। তাদের দিকে কেউ তাকিয়ে নেই। রশীদ তালুকদার আজমাত এর সাথে কথা বলছে।এই সুযোগে জল খাওয়াই যায়। সুফিয়ান ফারদিনার শাড়ির আঁচল এ হাত মুছল।জলের পাত্র উঁচিয়ে হা করে জল খেয়ে নিল।ফারদিনার কাছে দৃষ্টতি আনন্দদায়ক ছিল।সে নিঃশব্দে হাসলো।
সায়েম কাঁদার মধ্যে ধব করে বসে পড়ে।বলল “এইসব কাজ আমার দ্বারা হবে না। কাঁদায় মেখে গেছি।ধুর।’
“আব্বা দেখলে বকাবকি শুরু করবে। উঠে দাঁড়া।’রায়ান বলল।
সুফিয়ান তাঁদের কথোপকথন শুনে বলল ‘তোরা চলে যা।আমি সামলে নেব।”
“পাক্কা তো? সায়েম জিজ্ঞেস করল।খুশিও হল।
“আমি মিথ্যে বলি না।”
সায়েম খুশি মনে উঠে দাঁড়ালো।ক্ষেত ছেড়ে গেলেই একগাদা কথা শুনতে হবে।সে কথা শোনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু কাঁদার মধ্যে থাকতে না।কোন কাজে অভ্যস্ত না থাকলে সে কাজ কিভাবে করে? অসম্ভব রকম কঠিন মনে হয় সে-ই কাজ।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার আগমন। সুফিয়ান বৈঠকে বসেছে। সোলেমান, লাল মিয়া,বদরু,হাবলু তাঁর সামনেই।আজ তাঁরা খোলা মাঠের উপর অবস্থান করছে। সুফিয়ান একটা গাছের মুগুর এর উপর বসা।একটা সিগারেট ধরাল।সিগারেট এর ধোঁয়া নিজের দিকেই আসছে।বাতাস বয়ে তাঁর দিকেই যাচ্ছে। সুতরাং সিগারেট এর ধোঁয়া ও যাবে।বদরু বলল “এত সিগারেট খাওয়া ঠিক না।পড়ে শরীরের ক্ষতি হবে।”
সুফিয়ান ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল “ক্ষতি হবে জেনেও জীবনে অনেক কাজ আমরা করি। ঝুঁকি নিতেই হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমাদের সফলতার দিকে ঠেলে দেয়।” অদ্ভুত ভিত্তিহীন মনে হল সুফিয়ান এর কথা। সিগারেট এর সাথে সফলতার দেখা আছে বলে মনে হয় না। তবুও সে যখন বলেছে নিশ্চিয়ই এর মানে আছে। “আজ আমাদের কাজ কেমন লাগলো আপনার? জিজ্ঞেস করল হাবলু।
“মোটামুটি ভালো ছিল।আরো মনোযোগী হতে হবে। যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে হয়।বুঝেছিস?
“বুঝেছি” হাবলু বলল। সুফিয়ান সিগারেট এর পোড়া অংশ ফেলে বলল “সোলেমান, গতকাল রাতে সারা গ্রামে চক্কর দিয়েছিস?
“দিয়েছি’
“কিছু দেখেছিস যা তোর কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে? সোলেমান মাথা আওড়ালো ‘না।’
“চোখ কান খোলা রেখে কাজ করতে হবে।’ সোলেমান বলল “আমি খোলাই রেখেছি। শীতের মধ্যে মাফলার কানটুপিও পড়িনি।” ওর কথা শুনে সকলে বেশ হাহা শব্দে দাঁত বের করে হেসে উঠলো।বদরু বলল ‘খোলা মানে, কাপড় এর আড়ালে থেকে খোলা না।কড়া নজরদারি রাখতে হবে।’
মজিদ মিয়া রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। সুফিয়ান কে দেখে মাঠের দিকে এগিয়ে গেল। সুফিয়ান বলল ‘চাচা আপনি, মুখ চোখ শুকনা লাগছে, কিছু হয়েছে?
মজিদ মিয়া ক্ষীণ শব্দে বলল ‘আর কি হইবো,এই গ্রাম টা অহন জাহান্নামে পরিনত হইছে।অর্থ থাকলে আমি দূরে চইলা যাইতাম।’
‘কি হয়েছে আমাকে বলুন, দুঃখের কথা ভাগ করলে দুঃখ কমে।এটা ছোট্ট বেলায় আপনি আমাকে শিখিয়েছেন।’
‘না বাদ দাও, তুমি এদের সঠিক শিক্ষা দাও।চোর থেইকা ভালো মানুষ হউক।’
সুফিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল ‘ওদের কথা ছাড়ুন। আপনার কি হয়েছে তাই বলুন।’
‘আমি সামসুল এর বাড়িতে গেছিলাম।ওরা অহন শোকে আছে, ভাবলাম একটু শান্তনা দেই।’
“পড়ে কি হল ?
The Silent Manor part 13
‘আমি দেখলাম ওরা অনেক আনন্দে আছে। দুইজন মিলা হাসাহাসি করতেছে।আমারে দেইখা হাঁসি থামাইয়া দিল।কারো সন্তান মারা গেলে তাঁরা এমনে হাসতে পারে আমি আইজ দেখলাম।ওগো মাথাই মনে হয় খারাপ হইয়া গেছে।’
সুফিয়ান বলল “শুনেছি, সামসুল এর বউয়ের শরীর খারাপ।শহরে নিয়ে যাবে ডাক্তার দেখাতে। তাহলে বাড়ি কি করছে?
