The Silent Manor part 15

The Silent Manor part 15
Dayna Imrose lucky

আজ বুধবার।গত দুই দিনে আজমাত এর সাথে ফারদিনা সহ বাড়ির সকলের বেশ ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কুদ্দুসের সাথে।ও সারাদিন আজমাত এর আশেপাশে থাকতে চায়।এটা ওটা বাংলায় বলে,আর সেটাকে কিরগিজ ভাষায় অনুবাদ করে দিতে বলে।আজমাত দিয়েছে। তাঁর কাছে কুদ্দুস শেষ জানতে চেয়েছে,আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা কিরগিজ ভাষায় বলেন।আজমাত বলেছিল “মেন সিনি জাখ্শি কোরোম”।কিরগিজ ভাষায় কথাটি শুনে কুদ্দুস ভীষন খুশি হয়েছিল।ওর উদ্দেশ্য এই কথাটি ফারদিনাকে সে বলবে। এরপর আর একটি কথা জিজ্ঞেস করেছিল। ‘আপনি একটা গর্ধুব,বোকা, বুদ্ধিহীন।এটা কিরগিজ ভাষায় বলেন। আজমাত বলেছিল ‘সেন আকমাক,আংকো,আকিলসিসসিন।’ কুদ্দুস এবেলায়ও হেসেছিল।এটা বলবে রশীদ কে।খুব কষ্টে এই কথা দুটি ও শিখে নেয়।

কুদ্দুস ফারদিনার ঘরের দিকে হাঁটল। বিড়বিড় করে ভালোবাসি লাইনটা জপ করতে থাকল।ফারদিনার দরজা হাট করে খোলা ছিল। কুদ্দুস উঁকি দিয়ে দেখল।ফারদিনা গুনগুন করে গান গাইছে। কুদ্দুস গলায় কাশি দিল।কাশির শব্দ পেয়ে ফারদিনা বলল “ভেতরে এসো।আজ হঠাৎ অনুমতি চাইছো কালু দা!’ কুদ্দুস ভেতরে প্রবেশ করল।পরনে ওর নতুন ফতুয়া।সাথে দ্যুতি।চুল গুলো বা দিকে হেলে রাখা।বেশ লজ্জাবোধ করছে কুদ্দুস।ফারদিনা ভ্রুকুঞ্চিত করল। ঝিলমিল পাশের চেয়ারে বসা।বলল ‘কিরে কালু, কিছু বলবি নাকি?’
“বলতে তো চাই, কিন্তু বলতে পারছি কই, মনে হচ্ছে কেউ পেছন থেকে কেউ টেনে ধরছে!”
“তোমাকে পেছন থেকে কেউ টেনে ধরে নেই।” বলল ফারদিনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কুদ্দুস মাথা নিচু করে বলল “আসলে আপনাকে একটা কথা বলতে আসছি। অনুমতি দিলেই বলব।”
“কি কথা বল। এমন ভাব করতাছিস যেন প্রেমে প্রস্তাব নিয়া আইছোছ” বলল ঝিলমিল।
ফারদিনা তাড়া দিল। কুদ্দুস সাহস করে বলল “মেন সিনি জাখ্শি কোরোম।” কথাটি শুনে ফারদিনা তীর্যক আওয়াজে হেসে উঠল। সে-ই সাথে ঝিলমিল ও হাসল। কুদ্দুস তাঁদের হাঁসি দেখে থ হয়ে গেল।বলল “হাসছেন কেন?’
ফারদিনা হাঁসি থামিয়ে বলল ‘এটা তুমি নিশ্চয়ই আজমাত এর থেকে শিখেছো। আমি তোমার আগেই শিখেছি। একজনকে বলার জন্য।”

কুদ্দুস মিটিমিটি হাসছে। “এখনি জানাতে হবে না কিছু।পড়ে জানালেই হবে।” বলে চলে গেল ও।ফারদিনা ও ঝিলমিল একে অপরকে দেখে হাসল।ফারদিনা বলল “আমার প্রেমে কত কেই না ডুবল। কিন্তু ঐ শালা সুফিয়ান,কিছুই বলছে না।আর আমাকেও হয়ত বোঝার চেষ্টা করছে না।হয়ত বুড়ি হলে বুঝবে।”
“এত অধৈর্য হইলে তো হইবে না।” ঝিলমিল বলল।
“চল,ছাদে যাই।ঘরে আর ভালো লাগছে না। প্রকৃতির শীতল হাওয়া খেয়ে আসি।”
রাত ঠিক সাড়ে দশটার কাছাকাছি। গ্রামে এখন অনেক রাত।এত রাতে কেউ বাইরে থাকে না। কাউকে আনাগোনাও করতে দেখা যায় না। কাউকেই যে দেখা যায় না এটা ভুল। কিছু চাষীরা রাতেও ক্ষেতের ধারে আসে।লন্ঠন হাতে প্রায়শই দেখা যায় তাদের।কখনো আইলের উপর, কখনো ক্ষেতের মধ্যেই কারণে অকারণে হাঁটে।একে বলে কৃষকের ভালোবাসা তাঁর চাষের উপর।

ফারদিনা ও ঝিলমিল বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। ঝিলমিল মনের সুখে ভুট্টা ভাজি খাচ্ছে।ফারদিনা রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।ছাদের চারপাশে মশাল এবং লন্ঠন জ্বলছে।বেশ আলোকিত ছাদটা।ফারদিনা গতকাল গোলাপ ফুলের চারা এনেছিল।দশটি চারা।নিজের হাতে চারা গুলো লাগিয়েছে।একবার গাছ গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। সুফিয়ান এর গোলাপ পছন্দ। তাঁর পছন্দ বলেই সে গোলাপ চারা লাগিয়েছে।

ছাদ থেকে বাড়ির পেছনের দিকটা পরিষ্কার দেখা যায়। পেছনের প্রাচীরে একটা ছোট্ট দরজা আছে।সেখান থেকে বেড়োলেই বড় মাঠ। মাঠের কিছুটা সামনে একটা বটগাছ।আজ পূর্ণিমার তৃতীয় দিন। দৃষ্টিগত পূর্ণিমা। চাঁদের মসৃণ আলোয় মাঠ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কোথায় কি আছে বেশ ঠাহর করা গেলো।ছাদ থেকে ফারদিনা দেখল মাঠের দিকে কেউ যাচ্ছে। যেতেই সামনে আরো কেউ এগিয়ে এল। তাঁরা নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কিছু বলাবলি করল। এরপর সবাই চলে গেলেও বাড়ির ভেতর থেকে যিনি গেল সে বাড়ির দিকেই আসছে।ফারদিনার সন্দেহ হল।সে দৌড়ে নিচে আসল।ঘরের পেছনের দিকে এসে গোপন নজরে দেখল সে কে?ঘরের ভেতরে ঢুকে আদিব।ফারদিনা চমকে গেল।আদিব কে খুব উদ্বিগ্ন দেখাল।ফারদিনা টেবিলের আড়ালে থেকে বেরিয়ে আসল।আদিব কোথায় যায়?ঠিক আজ থেকে কিছুদিন আগেও সে কোথাও গিয়েছিল! তখন তাকে দেখা গিয়েছিল বাড়ির সামনের দিকে।আজ পেছনের দিকে। আশ্চর্য হল সে।

ছাদ থেকে ঝিলমিল তখন যায়নি।বসে বসে ভুট্টা ভাজা খাচ্ছে। ভুট্টা প্রায়ই শেষ এর দিকে।ফারদিনা এসে তাঁর পাশে বসে।আদিব ভাই নিশ্চয়ই কোন মহৎ কাজ করছে। আব্বার আড়ালে।উনি মহৎ কাজ খুব একটা পছন্দ করেন না।যদি হয় টাকা পয়সার বিষয়ে।’ফারদিনা’ নিজেকে বুঝ দিল। ঝিলমিল বলল “ওদিন এর গল্প টা তোরে বলা হয়নাই,আইজ বলি,শুনবি?

‘বল।’
‘এক ছিল রাজকুমারী। সে-ই রাজকুমারীর প্রেমের সম্পর্ক হয় একজন যোদ্ধার সাথে। যোদ্ধার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজকুমারীর বংশ ধ্বংস করা। রাজকুমারী কে না দেখা অবধি তাঁর কাছে রাজকুমারীদের বংশ ছিল শত্রুর বংশ।লক্ষ্য ছিল তাদের বংশ ধ্বংস করা। কিন্তু যোদ্ধা একদিন কৌশলে রাজকুমারীদের রাজ্যে আসে। অলিগলি চেনার জন্য।আর ঠক সেদিন ই যোদ্ধা রাজকুমারী কে দেখে।দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়। এরপর রাজকুমারী কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। পুরুষ মানুষ মেয়ে পটাতে ওস্তাদ বলে রাজকুমারী কেও পটিয়ে নেয়। কিন্তু এরপর জানা যায়..!
ঝিলমিল পুরো গল্প শেষ করার আগেই বাঁশির সুর ভেসে আসে। সুফিয়ান এর বাঁশির সুর।ফারদিনা নিশ্চিত হল।সে হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।রেলিঙ এর সংস্পর্শে আসল।সুরটা আসছে বাড়ির ঠিক সামনের কোনাকুনি শিমুল গাছের দিক থেকে। ঝিলমিল বলল “দাঁড়ায় আছিস কেন,যা।আমি এদিক টা সামলে নেব।আর শোন, তাঁর সামনে ঘুরেফিরে আজমাত এর প্রশংসা করবি।দেখবি তাঁর প্রতিক্রিয়া কি।বুঝছিস তো?
‘বুঝেছি।তুই দেখিস,কেউ যাতে টের না পায়।’

সুফিয়ান এর বাঁশির সুরে যেন ফারদিনাকে টেনে আনল।ফারদিনা লন্ঠন হাতে এগিয়ে এল সুফিয়ান এর কাছে।লন্ঠন এর সোনালী রঙে তার চোখ দুটো ছলছল করছে।সুফিয়ান সুর থামিয়ে দিল।আজ তাঁর পরনে গাঢ় মেরুন রঙের পাঞ্জাবি,পাজামা। তাঁর উপর মোটা শাল পেঁচানো। তাকে ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে। শ্যামবর্ণ এর পুরুষ নিখুঁত সুন্দর হয়। তাঁর প্রমাণ সুফিয়ান।ফারদিনা পাশে বসল।বলল “তোমার আজকের সুরে কি ছিল?
“অপ্রকাশিত অনূভুতি প্রকাশ করার চেষ্টা।’
‘সুরে নয়,মুখেই প্রকাশ কর।’
“এখনি নয়।সময় হোক।’
ফারদিনা সেকেন্ড দুয়েক চুপ থাকল।লন্ঠন টা পাশে রাখল। এরপর নির্বাক হয়ে বলল ‘তুমি জানো,আজ কি হয়েছে?
‘কি হয়েছে?

‘কালু,মানে কুদ্দুস। আব্বার বিশ্বস্ত কাজের লোক।ও কি করেছে শোনো।’ ফারদিনা বলার জন্য প্রস্তুত হল। সুফিয়ান ও ঘুরে ফারদিনার দিকে তাকিয়ে কুদ্দুস এর কাহিনী শোনার জন্য প্রস্তুত হল।
‘আজ ও আমাকে কিরগিজ ভাষায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।কি লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলেছিল। আমার ভীষণ হাঁসি পেয়েছিল।” বলে অট্টহাসিতে তলিয়ে গেল ফারদিনা। সুফিয়ানও তাঁর রেশ টেনে মৃদু হাসল।বলল “ও কি বলল কিরগিজ ভাষায়?
ফারদিনা থেমে গেল।নিরব আবেগের স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
‘তাতো বুঝেছি।কিরগিজ ভাষায় সেটাকে কি বলে?
ফারদিনা ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হল।তবে তা বহিঃপ্রকাশ না করেই বলল ‘মেন সিনি জাখ্শি কোরোম’
‘মেন সিনি জাখ্শি কোরোম’।’ সুফিয়ান ও একই সাথে বলল।
“সত্যি?ফারদিনা জিজ্ঞেস করল।

সুফিয়ান চোখের পাতা ফেলে নড়েচড়ে বসল। “আমিত ওর ভাষাটা বললাম মাত্র।’
ফারদিনা চুপচাপ। তাঁর ধারণা সুফিয়ানও তাকে পছন্দ করে।অথচ বলছে না।সে আগ বাড়িয়ে বলার পর সুফিয়ান যদি কোন কারণে প্রত্যাখ্যান করে? না’। খারাপ কিছু হবে এটাও সে ভাবতে পারছে না।সে প্রত্যাখ্যান করলে সত্যিই কি খারাপ কিছু হবে? এমনটা কেন ভাবলো ফারদিনা?নিজেই যেন নিজের কাছে প্রশ্ন করল। সুফিয়ান বলল ‘চলো’
‘কোথায়?

‘সাগর পাড়ে।বালির উপর বসে সময় কাটানো যাবে!যাবে তুমি?
“যাব। কিন্তু অনেক টা দূরে তো, হেঁটে যাব?
‘না।অশ্বের পিঠে চড়ে।’
‘তুমি অশ্ব কোথায় পেলে?
‘বাবার রেখে যাওয়া কিছু স্বর্ণের মুদ্রা ছিল। সেগুলো থেকে একটা মুদ্রা বেচে দিয়ে অশ্বটি কিনেছি।যাতে তোমায় নিয়ে দূরে চলে যেতে পারি।’
‘মানে?
সুফিয়ান মাথা চুলকিয়ে বলল ‘মানে, দূরে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি।কথাই বলবে না যাবে?
‘চলো’

অশ্ব দাঁড়িয়ে ছিল শিমুল গাছের কাছেই। সুফিয়ান এসে অশ্বের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে।ফারদিনাকে বলল ‘আমার হাঁটুতে ভর দিয়ে ওঠো।’ ফারদিনা অশ্বের পৃষ্ঠায় চেপে বসে। সুফিয়ান উঠে তার পেছনে বসে। অশ্বের লাগাম টেনে ধরল।চোখ তুলে ঘুরে সুফিয়ান এর দিকে দেখল ফারদিনা।
রাতটা আজ নরম রুপালি আলোয় মোড়া। আকাশে আধখানা চাঁদ, তার চারপাশে মেঘের নরম চাদর ভেসে আছে। দূরে সাগরের ঢেউ গুনগুন করে উঠছে। যেন কোনো প্রাচীন প্রেমের সুর।
সুফিয়ান অশ্বের পিঠে বসে লাগাম ধরে আছে, সাথে ফারদিনা বার বার ঘুরে দেখছে সুফিয়ান কে। তাঁর পরনের শাল টা বাতাসে উড়ে এসে সুফিয়ানের গাল ছুঁয়ে গেল হালকা করে। দুজনের চোখে মিলল এক চিলতে হাসি।
অশ্বটি ধীরে ধীরে সাগরের ধারে এগিয়ে চলল। চাঁদের আলোয় তাদের ছায়া পড়ল বালির উপর। দুটো ছায়া, পাশাপাশি, যেন সাগরও চুপচাপ তাদের গল্প শুনছে।

“তুমি জানো, এই সাগর নাকি সব কথা শুনে রাখে,” ফারদিনা বলল মৃদু স্বরে।
সুফিয়ান তাকাল দূরে, ঢেউয়ের গর্জনের ভেতর হারিয়ে যেতে যেতে বলল,
“তাহলে আজ আমাদের নীরবতাটুকুও ও শুনুক।”
অশ্বের খুরে খুরে বালির গন্ধ উঠছে। তাঁরা অশ্ব থেকে নেমে দাঁড়াল।দূর থেকে সাদা ঢেউ এসে তাদের পায়ের কাছে ভিজিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা জলেতে। ফারদিনা হঠাৎ হাত বাড়িয়ে সেই ঢেউ ছুঁয়ে ফেলল।একফোঁটা জল গিয়ে পড়ল সুফিয়ানের হাতে।
সুফিয়ান হাসল, বলল,

“এই জলের মতোই তুমি, ফারদিনা।ঠান্ডা, শান্ত, তবু গভীর। তোমাকে দেখে মনে হয় ভেতরে আকাশ পরিমাণ কথা জমিয়ে রেখোছো। কিন্তু বলতে পারছো না।
সাগরের ওপারে যেন রাতটিও থমকে দাঁড়াল। শুধু ঢেউ, চাঁদ আর তাদের নিঃশব্দ ভালোবাসা। সুফিয়ান বালির উপর বসে এক হাতের উপর ভর রাখল। অশ্ব পাশেই দাঁড়িয়ে।ফারদিনা সাগরের জল ছুঁয়ে দেখছে।যেন বহুদিন পর সে জল পেয়েছে। সুফিয়ান বলল ‘যত খুশি আনন্দ করে নাও। এরকম সুযোগ আর নাও হতে পারে।’
‘কেন! এরপর কি আমি মরে যাব?’ বলে হেসে উঠল ফারদিনা।সুফিয়ান নিচু সুরে মলিন গলায় বলল ‘মরবে কেন’ মৃত্যু ব্যতীত কত কে হারিয়ে যায়’
ফারদিনা তাঁর কাছে এসে বালির উপর বসে। বলল ‘কি বললে ফিসফিসিয়ে?এখন বলো?
‘তুমি অনুমতি দিলে একটা সিগারেট ধরাই?
ফারদিনা মাথা আওড়ালো ‘হ্যাঁ।’

ফারদিনা কিছুক্ষণ সুফিয়ান এর দিকে চেয়ে থেকে বলল ‘এত সিগারেট খেলে ফুসফুস পুড়ে যাবে।’
সুফিয়ান ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে বলল ‘অন্তর তো অনেক আগেই পুড়ে গেছে।অন্তর পুড়ে যাওয়ার তীব্র গন্ধ হয় না।নয়ত আমার পাশে কেউ দাঁড়াতে পারত না।”
‘তোমাকে দেখে সুখি মনে হয়। কিন্তু এ কথার মানে বোঝায়, তুমি বড্ড উদাসীন।’
সুফিয়ান সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে বলল ‘সুখ এবং দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন। জীবন যতদিন আছে,সুখ, দুঃখ ততদিন আছে।’

‘তোমার জীবনে এমন কোন ঘটনা আছে যা হৃদয়বিদারক?
‘আছে।সময় হলে একদিন সব বলব।’
‘সে কথা গুলো আমি সহ্য করতে পারব? ফারদিনার কন্ঠস্বর থমকে গেল যেন।
সুফিয়ান হেসে বলল ‘হয়ত।’ এরপর সিগারেট টানার প্রতি মনোযোগ দিল।ফারদিনা দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল। আঙুল দিয়ে বালিতে আঁকিবুঁকি শুরু করল। সুফিয়ান সিগারেট শেষ করে বলল ‘তোমাকে দেখলে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। আমার মা ছিলেন ভীষণ সুন্দরী। ঠিক তোমার মত। তাঁর মন খারাপ হলে আঁকিবুঁকি শুরু করত। তুমি এখন যেভাবে শুরু করলে!’

ফারদিনা হেসে বলল ‘আর তোমার সাথে থাকলে আমি তোমার মধ্যে আদিব ভাইকে দেখতে পাই।আদিব ভাই বেশিরভাগ সময় আমার ঘরে এসে সিগারেট খেত। এইজন্য আমি সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারি।এই গন্ধটা আমার ভালো লাগে!’
‘সবার থেকে তুমি আলাদা ফারদিনা।অন্যরা যে জিনিসটা তে বিরক্ত হয় , তুমি সেটাতে খুশি হও।’
‘আমার ভাগ্যে টাও সবার থেকে আলাদা।’ বলে এক ঘন নিঃশ্বাস ছাড়লো ফারদিনা।

রাতের গভীরতা নেমে আসছে। চাঁদ ঠিক মাথার উপরে। গুঁড়ি গুঁড়ি মেঘ উড়ে যাচ্ছে। দূরের বন থেকে শেয়ালের হুক্কার ভেসে আসছে। সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সাগর এর ঢেউয়ের শব্দ। বাতাসের মৃদু ঘ্রান।এমন রাত শুধু কল্পনা করা যায়। বাস্তবে খুব কম মিলে। এই রাতকে সবাই উপভোগ করতে পারে না।যে বা যারা পারে তাঁরা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান।ফারদিনা আজ নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করল।সে শাড়ি উঁচু করে ধরে এক পা দু পা করে এগোতে এগোতে সাগরের গভীরতার ভেতরে চলে যাচ্ছে। তাকে সাগরের তীক্ষ্ণ ঢেউ ভাসিয়ে নিতে পারে, সেদিকে যেন খেয়াল নেই। সুফিয়ান গলা উঁচিয়ে বলল ‘আর এগিয়ো না।কুমির টেনে নিয়ে যাবে!’ ফারদিনা বলল ‘সাগরে কুমির থাকে না।’
‘কোথায় কি থাকে বলা যায় না।’

ফারদিনা পায়ের কাছে নরম কিছু ঠেকল। সুফিয়ান কে লক্ষ্য করে বলল ‘আমার পায়ের কাছে কিছু একটা ঠেকল।নরম।’ সুফিয়ান বলল ‘সাপ হবে।চলে এসো।’ ফারদিনা দৌড়ে তীরে চলে আসে।ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ল।সুফিয়ান ঠোঁট চেপে চাপা স্বরে হাসলো।
তাৎক্ষণিক ঢেউয়ে তীরে সাদা রঙের একটা খন্ড এসে উঠল।ফারদিনা বলল ‘ওটাই বোধহয় আমার পায়ে ঠেকে ছিল।’ সুফিয়ান এগিয়ে যায় সাদা খন্ডের দিকে।পা দিয়ে নাড়িয়ে দেখল মৃ’ত্যু বাচ্চার দেহ।সাদা।জলে ফুলে উঠেছে।দেখে বোঝা যাচ্ছে লা’শের বয়স বেশিদিন হয়নি।মুন্ডু নেই।ফারদিনা চোখ তুলে সাগরের দিকে তাকাল।একটা ট্রলার আসছে।ঠিক তাঁদের দিকেই।বলল ‘দেখো একটা ট্রলার আসছে।ডা’কাত হতে পারে।চলো এখান থেকে।’
‘ভয় পেয়ো না।আগে দেখতে দাও।’

ট্রলার টি ধীরে ধীরে তার গতি কমিয়ে নিল।চার পাঁচজন লোকের ছায়া দেখা যাচ্ছে।লন্ঠন জ্বলছে। ট্রলার টি কিনারার কাছাকাছি এসে থেমে যায়। সুফিয়ান ফারদিনা কে নিয়ে অশ্বের দিকে হেঁটে গেল। ট্রলার এর লোকগুলো যেন তাঁদের দিকেই দেখছে। ট্রলার থেকে একটা তীর ফলক ছুটে আসল।বালিতে তীরটি বিদ্ধ হল।ফারদিনা চমকে উঠল। সুফিয়ান তীর ফলক টি হাতে তুলে নিল।সাথে একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে মনে মনে পড়লো।ফারদিনা জিজ্ঞেস করলে কোন জবাব মিলল না।সুফিয়ান চিঠিটা ছিঁড়ে স্ফুলিঙ্গ দৃষ্টিতে তাকালো ট্রলারে থাকা লোক গুলোর দিকে। ট্রলার ছেড়ে দিল।তারা চলে যায় যে পথে এসেছিল সে পথে।ফারদিনা নির্বিকার কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ‘চিঠিতে কি ছিল?

‘কিছু নয়।চলো।বাড়ি ফেরা যাক।’
‘আমি শুনতে চাই বলো।’
‘কথা বাড়াচ্ছ কেন?
ফারদিনা মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট করে বলল ‘ওরা কারা ছিল?কি ওদের উদ্দেশ্যে ছিল?আর ফিরেই বা গেল কেন? কিছু না বলে!”
‘তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।আজ তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসব।আর তোমাকে নিয়ে কোথাও বের হব না।’
ফারদিনা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল ‘আমি তোমাকে খুব বেশি বিরক্ত করছি তাই না!আমি যেদিন থাকব না সেদিন বুঝবে!’

The Silent Manor part 14

‘থাকবে না কোথায় যাবে?
‘মরে যাব’
সুফিয়ান রেগে বলল ‘আর একটা ফালতু কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দেব।’
ফারদিনা একদম নিরব হয়ে গেল। সুফিয়ান অস্বস্তি বোধ করল। পাঞ্জাবির পকেট থেকে সিগারেট বের করল। সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিল। এরপর বলল “চিঠিতে ওরা তোমাকে চাইছিল। তোমাকে নিতে এসেছিল”

The Silent Manor part 16

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here