The Silent Manor part 16
Dayna Imrose lucky
ফারদিনার চোখের আঁকার বড় হল। তাকে কেন কেউ নিতে আসবে? তাঁর সাথে শত্রুতা কিসের?’
‘আমাকে নিতে আসছে মানে? সিগারেট না টেনে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।’
‘আগে সিগারেট পড়ে সব। তুমি এত পাখির মত ফড়ফড় কর কেন?
‘পাখির মত ফড়ফড় কোথায় করলাম। তুমি কি ঝগড়া বাধাতে চাচ্ছ?
‘মেয়ে মানুষের সাথে ঝগড়া,ভুলেও না। ওঁরা তর্কে হেরে শুধু নাকে চোখে কান্না করতে পারে’
‘এখন থেকে আমি আর কথা বলব না।’
সুফিয়ান সিগারেট ফেলে বলল ‘কথা বলার সময় বিরতি নিতে হয়।থেমে থেমে কথা বললে সামনের মানুষটির প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়া যায়।বুঝলে?
‘বুঝেছি।’
‘কি বুঝেছো?
‘আমাকে ওরা কেন নিতে এসেছে!এই প্রশ্নের পর তুমি যে সময়টুকু চুপ ছিলে ততক্ষণে সঠিক উত্তর খুজেছো।এখন বল!’
‘ওরা হয়ত তোমাদের শ’ত্রু। আমাকে দেখে সামনে এগোয়নি।’
‘আমাকে নিয়ে ওঁরা কি করত?
‘তুমি ও যেখানে আমিও সেখানে! ওঁরা কি করত কিভাবে বলব!’
দুজনে অশ্বের পৃষ্ঠায় চেপে বসে। পঁয়ত্রিশ মিনিট এর মধ্যে বাড়ির কাছে তাঁরা পৌঁছে যায়। সুফিয়ান অশ্ব থেকে নেমে লাগাম ধরে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল।ফারদিনা অশ্বের পৃষ্ঠায় বসে আছে। সুফিয়ান চুপচাপ। তাঁর নিরবতা ফারদিনার ভালো লাগে না।বলল ‘তুমি জানো আমি একটা মহৎ কাজ করেছি?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘কি করেছো?
‘গোলাপ ফুলের চারা লাগিয়েছি।ছাদের উপর।আমি রোজ ওদের যত্ন নেই।’
‘হঠাৎ গোলাপের গাছ লাগালে?
‘গোলাপের গন্ধ স্নিগ্ধ। আমাদের অনেক ফুল গাছ আছে। গোলাপ ছিল না।তাই আমি গোলাপের ঘাটতিও পূর্ণ করলাম। ভালো হয়েছে না?
‘ভালো হয়েছে। ওদের যত্ন নিতে হবে।নয়ত মরে যাবে।’
‘আমি যত্ন নেব। তুমি গাছ গুলো দেখে এসো একদিন’
‘আচ্ছা’ যাব।’
‘একটা কথা বলব?
‘বলো!’
‘তুমি আমার উপর বিরক্ত?
‘হ্যাঁ। আজকাল খুব জ্বালাতন করছো আমায়।’
‘আমি যেদিন তোমাকে বিরক্ত করা বন্ধ বন্ধ করে দেব সেদিন তুমিই বিরক্ত হবে।’
সুফিয়ান প্রসঙ্গ পাল্টে বলল ‘গোলাপ ফুটলে সর্বপ্রথম কাকে দিবে?
‘যেদিন দেব সেদিন জানতে পারবে’
‘জানি না তোমার দেয়া গোলাপ কাকে দাও দেখতে পারব কি না!” রসিকতা করে বলল সুফিয়ান।ফারদিনা কোমল কন্ঠে বলল ‘পারবে। কিন্তু তুমি তো আমার উপর বিরক্ত।যেদিন গোলাপের পাপড়ির মত আমিও ঝড়ে যাব সেদিন বুঝবে।’
‘তখন থেকে উল্টো পাল্টা কি বকছো?
‘ঠিকই বলছি।যেদিন দেখবে আমার গোলাপ গুলো অযত্নে ঝড়ে পড়ে গেছে,সেদিন ভাববে আমিও ঝড়ে গেছি।’
সুফিয়ান বেশ বিরক্তি হল। অতি কষ্টে বিরক্ত স্বর আড়াল করে নম্র কন্ঠে বলল ‘আমি বিরক্ত হচ্ছি না।আমি বিনামূল্যে আনন্দ পাচ্ছি। বিনা বিরতিতে। ভালো না?
ফারদিনা মুখ ভেংচে দিল। তালুকদার বাড়ি সোজা গিয়ে ডান দিকে। তাঁর আগে সুফিয়ান এর বাড়ি।ফারদিনা চাইছে না সুফিয়ান কে ছেড়ে যেতে। সূর্য ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর সাথেই থাকতে চাইছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। সুফিয়ান বলল – অশ্ব থেকে নেমে আসো।অশ্ব নেয়া যাবে না।ওকে আমার বাড়িতে রেখে তোমাকে দিয়ে আসছি।’
এটাই চেয়েছিল ফারদিনা। তাঁর বাড়িতে গিয়ে আর আসবে না আজ।সে বায়না ধরলে সুফিয়ান ঠিক রাজি হয়ে যাবে। প্রত্যেক নাছোড়বান্দা মেয়েদের জন্য একজন ধৈর্যশীল পুরুষ সৃষ্টি করা হয়।ফারদিনা বিশ্বাস করে তাঁর জন্য সুফিয়ান কে সৃষ্টি করা হয়েছে ।একদিন আদিব ভাই কথায় কথায় বলেছিল সুফিয়ান এর অনেক রাগ।ওর সামনে কেউ অন্যায় করতে পারে না। অকাজের কথাও বেশি বলা যায় না।অথচ ফারদিনা বিনা বিরতিতে এটা ওটা বলতে থাকে। সুফিয়ান সেগুলো মন দিয়ে শোনে। তাঁর খুব ভালো লাগে।
অশ্ব থেকে নামল। সুফিয়ান আগে আগে যাচ্ছে।ফারদিনা পেছন পেছন হাঁটছে। হঠাৎ মনে হল পেছনে কেউ আছে। ঘুরন্ত গতীতে পেছন ঘুরল।একটা লন্ঠন এর আলো হঠাৎ যেন গাছের আড়ালে চলে গেল। চোখের ভুল।এত রাতে কেউ বাইরে থাকে না। সামনে ঘুরে চুপচাপ হাঁটা ধরল। সুফিয়ান ঘরের সামনে পৌঁছে অশ্ব কে বেঁধে রাখল একটা খুঁটির সঙ্গে।ঘুরে ফারদিনার দিকে তাকিয়ে বলল ‘চলো, তোমাকে দিয়ে আসি। প্রতিদিন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তোমাকে নিয়ে বের হই,কবে না জানি ধরা খেয়ে যাই।’
‘এত রাতে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ!ঘরে ঢুকতে দিবে না?
‘ঘরে ঢুকতে দেব মানে?এই রাতে অচেনা একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরে থাকব?লোকে দেখলে পাথর নিক্ষেপ করে মারবে।জানো?
‘জানি না।পাথর কেন মারবে?
‘উফ, ভুলভাল কাজ করলে মারে।এটা পূর্ব নিয়ম।’
‘এসব নিয়ম টিয়ম আমি মানি না।কবে ম’রে যাই কে জানে! আমার শখ করেছে আজ তোমার সাথে থাকব মানে থাকব!’ সুফিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে চেয়ে রইল।সে যেন হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ল। আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো।মেয়ে মানুষের আবদার পূরণ না করলে চিৎকার দিয়ে উঠতে পারে। মেয়েদের বিশ্বাস নেই।ফারদিনা সুবিধার নয়। সুফিয়ান নিজের থুতনিতে হাত বুলিয়ে বলল ‘এসো ভেতরে’
ঘরটিতে ঢোকা মাত্রই ধুপের গন্ধ আসল। সুফিয়ান লন্ঠন ম্যাচ দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।ফারদিনা বিছানার উপর পা তুলে বসল। সুফিয়ান বলল ‘মনে হয় তোমার বাড়ি। যেভাবে বসেছো।’
‘তুমি জানো, ছোট্ট ঘরেও যে শান্তি পাওয়া যায়,বড় বড় রাজপ্রাসাদেও তা পাওয়া যায় না।’
‘কেউ রাজপ্রাসাদ চায়,আয়েশের খোঁজে।
কেউ মাটির ঘর খোঁজে,প্রিয় মানুষের মন পিঞ্জরের মাঝে।’ বলল সুফিয়ান।হাতে ভাতের থালা।বসল ফারদিনার সম্মুখে।
ফারদিনা জিজ্ঞেস করল ‘ছন্দটার সাথে বাস্তবতার সম্পর্ক আছে। প্রিয় মানুষ টি কে ভালোবেসে মাটির ঘরেও থাকা যায়।’
সুফিয়ান তাঁর রেশ না টেনে ভাত মাখাতে মাখাতে বলল ‘আমার জন্যই রান্না করেছিলাম। একজনের খাবার।খেয়ে নাও”
‘এগুলো কিসের তরকারি?
‘সুটকি, আমার সুটকি মাছ ভীষণ পছন্দ।এই মাছের কিছু ভালো দিক আছে।’
‘কি?
‘দীর্ঘদিন সংগ্রহ করা যায়। রান্না করতে ঝামেলা হয় না। তাছাড়া এই মাছে আছে প্রোটিন। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ।এতে সামান্য নুন এবং তেল থাকায় শরীরে শক্তি জোগায়।শক্তি দরকার কি না বলো?
‘দরকার। কিন্তু আমি শক্তি দিয়ে কি করব!আমি খাব না, তুমি খাও!’
‘তুমি আমার অতিথি। সুতরাং অতিথিকে খাবার খাওয়াতে হয়।নয়ত বরকত কমে যায়।জানো তো নাকি?
“জানি।’
সুফিয়ান ফারদিনা কে এক লোকমা খাবার তুলে দিল।ফারদিনা ভাতটা গিলে বলল ‘তোমার পছন্দের খাবার এর তালিকায় প্রথম কোনটা?
‘সুটকি দিয়ে ভাত,ঝাল ঝাল হাঁস ভুনা’
‘মিষ্টি?
‘আমি মিষ্টি পছন্দ করি না। আমার সাথে কেউ মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও অসহ্য লাগে। মিষ্টি কথায় আর মিষ্টি খাওয়া,দুটো জিনিস ই ক্ষতিগ্রস্ত।একটায় হয় মধুমেহ,অন্যটায় বিশ্বাস নষ্ট!’
‘তুমি ভুল কেও যুক্তি দিয়ে সঠিক প্রমাণ করবে। তোমার সাথে আর কথা বাড়াচ্ছি না।’
‘আমি ভুল কে ভুল, সঠিক কে সঠিক বলার ক্ষমতা ও যুক্তি দুটোই রাখি।’
ফারদিনা সুফিয়ান এর কথা গুলো উড়িয়ে দিয়ে বলল ‘যুক্তিতে উক্তি তৈরি হয়। উক্তি তে জীবন চলে না।বুঝেছো?
সুফিয়ান জবাব দিল না। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হয়।ঘরের বাইরে এসে সুফিয়ান একবার অশ্বের দিকে দেখল।অশ্ব ঠিকঠাক আছে।ওর কাছে তিনটে লন্ঠন জ্বলছে।আশেপাশে দেখল। কাউকে দেখা যাচ্ছে না।এত রাতে সবাই ঘুমে।
ফারদিনা টেবিলের উপর বসল।একটা বই খুলল।বইটির নাম নূরজাহান।দুটো বইয়ের পাতা উল্টালো। গল্পের শুরুতে সেলিম নাম দেখা গেল।ফারদিনার ধৈর্য কম।বই পড়ার মত ধৈর্য তাঁর নেই। সুফিয়ান কিভাবে পড়ে?নিজে গল্পও লিখে। অনেক ধৈর্যশীল একজন পুরুষ। সুফিয়ান দরজা লাগিয়ে দিল।ফারদিনার পাশে দাঁড়ালো। ‘বই পড়ছো?
‘আমার বই পড়ার অভ্যাস নেই। ধৈর্য নেই। নূরজাহান কে?
‘সম্রাট জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী। সম্রাট জাহাঙ্গীর এর নাম ছিল সেলিম। পরবর্তী তে উনি যখন শাসন কার্য পরিচালনা করার দায়িত্ব পান তখন,সেলিম বাদ দিয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর বলে সম্বোধন করা হয়।সম্রাট জাহাঙ্গীর- তার সঙ্গে প্রেম হয় মেহেরুন্নেসার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মেহেরুন্নেসার বিয়ে হয় অন্য একজন এর সাথে। তিনি ছিলেন সৈন্য শের আফগান খান। তাঁদের বৈবাহিক বন্ধন ছিল মাত্র তেরো বছর। এরপর শের আফগান খান এক যুদ্ধে মারা যান। এবং পরবর্তী সময়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর মেহেরুন্নেসা কে বিবাহ করেন। তাকে বিয়ে করার পর জাহাঙ্গীর মেহেরুন্নেসা থেকে নূরজাহান নাম দেন। নূরজাহান যার অর্থ বিশ্বের আলো।’
সুফিয়ান থেমে পুনরায় বলল ‘ভাগ্যর কি লিলা খেলা দেখেছো, বিচ্ছেদের তেরো বছর পরেও পূর্ণতা পেল।আর এটা গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা।”
ফারদিনা টেবিলের উপর চোখ বুলাল। সুফিয়ান এর লেখা গল্পটা খুঁজছে। পাঁচ্ছে না। জিজ্ঞেস করল ‘তুমি যে গল্পটা লিখেছো সেটা কোথায়? গল্পের নাম কি? তুমি ও কি বাস্তব প্রেমের গল্প লিখছো?
“সত্যই একসময়ে কাল্পনিক রুপ নেয়। বাস্তবতা থেকেই লিখছি। গল্পের নাম সময় হলে জানবে।’
সুফিয়ান সিগারেট ধরাল।ফারদিনা বলল ‘আমি একটান দেব’
সুফিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল ‘মেয়েদের কোমল ঠোঁটে আ’গুন মানায় না।’
‘তুমি কেন খাচ্ছ?
‘অভ্যাস’
‘অভ্যাস’ ত্যাগ কর।’
‘খারাপ অ’ভ্যাস ত্যাগ করার জন্য ভালো অভ্যাসের দরকার হয়।’
‘আমি কি তোমার ভালো অভ্যাস নই,এত সময় আমার সাথে পাড় করছো,অথচ সিগারেট এর কথা ভুলছো না’
সুফিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে নিল।জবাব দিল না।
ফারদিনা জানালার দিকে এগিয়ে গেল। জানালার পর্দা ফাঁকা।শো শো করে বাতাস ঢুকছে।দূরে মশাল হাতে কাউকে দেখা যাচ্ছে। কৃষক তাঁর চাষ দেখছে। সুফিয়ান ফারদিনার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়।ফারদিনা বলল ‘সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং নূরজাহান এর প্রেমের মত আমার খুব আপন একজন মানুষের প্রেম হয়েছিল।সে ব্যর্থ হয়। জাহাঙ্গীর এর মত তার আর প্রাক্তনের সাথে দেখা হয়নি।’
‘সে নিশ্চয়ই তোমার আদিব ভাই’
‘তুমি কিভাবে জানলে?
‘আদিব এর সাথে যখন পরিচয় হয়,ও তখন ই সব খুলে বলে আমার সাথে।’
‘আচ্ছা, শত্রুদের সাথে কখনও বন্ধুত্ব হয়?এই ধরো, তুমি আমাকে আক্রমন করতে আসলে, এরপর আমার রুপ থেকে থমকে গেলে।’
সুফিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল ‘হ্যা সম্ভব। কেননা, সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সুন্দর সৃষ্টিই হচ্ছে মেয়েরা।তিনি মেয়েদের এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন, শুধু হাতের আঙ্গুল দেখেও প্রেমে পড়া সম্ভব।সেখানে সুন্দরী, মায়াবতীর রুপ দেখে একটা পুরুষ থমকে যেতেই পারে।’
ফারদিনা উৎফুল্ল হয়ে বলল ‘ইশ, আমার সাথে ও যদি এমন হত,কতই না ভালো হত।হয়ত আমি ততটা সুন্দরী নই। তাছাড়া, আব্বার শত্রুদের এখন আর দেখাই যায় না।’
সুফিয়ান বলল ‘সেসব ছাড়ো।চল।ঘরের পেছনের দিকে একটা দীঘি আছে।কাছেই। সেখানে যাই। বন্ধ ঘরে বসে থাকা ঠিক হবে না।’
‘কেন? আমার তো বন্ধ ঘরই ভালো লাগে।’
সুফিয়ান নিঃশব্দে হাসলো। ‘তুমি সরল। আমার দেখা মতে তোমার মত সরল আর কেউ নেই।’
‘আমি কোথাও যাচ্ছি না। তোমার ঘরেই থাকব।’
সুফিয়ান ফারদিনার হাত ধরে বলল ‘আরে মেয়ে চলো, বন্ধ ঘরে থাকলে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।’
মেঘের ওপারে চাঁদের বসবাস। তাঁর সঙ্গী হিসেবে আছে লক্ষ লক্ষ তারারা। দিঘীর পাড়ে বড় বড় গাছ।গাছের পাতার ফাঁক ভেদ করে জলে পড়েছে চাঁদের আলো। মাছের সাঁতারে জলে একটু পর পর ঢেউ খেলে।রাত ঠিক তিনটের কাছাকাছি।ফারদিনা সিঁড়ি বেয়ে জলের ধারে গেল।বসে জলে পা ভেজালো। সুফিয়ান ঘাট থেকে দেখছে। পকেট থেকে বের করল সিগারেট।ম্যাচ দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে নিল। ম্যাচের আলোয় তার চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। সিগারেট টানতে টানতে পায়চারি করল। দৃষ্টি তাঁর ফারদিনার দিকে।বেশ আকর্ষণ নিয়ে তাকে দেখছে।ফারদিনা হাত ভিজিয়ে উপরে চলে আসে। সুফিয়ান স্থীর চোখে তাকিয়ে রইল ফারদিনার চোখের দিকে।ফারদিনা বলল ‘কি দেখছো?
সুফিয়ান জবাব দিল না।চোখের ভাষাতেও জবাব পাওয়া গেল না।ফারদিনা ঢোক গিলে বলল ‘এভাবে কি দেখছো?
সুফিয়ান সবে যেন হুশে ফিরল। থতমত খেয়ে বলল ‘তোমাকে দেখছিলাম। তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি।চলো।হয়ত আর কিছু সময়ের পর ভোরের আলো ফুটবে।কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘তুমি আবার আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ।যখন আমি থাকবো না তখন বুঝবে, তুমি কি হারিয়েছো!’
‘তার আগে আমিই তোমার জীবন থেকে হারিয়ে যাব।’
ফারদিনা বিস্ময়ে বলল ‘মানে?
সুফিয়ান হাসল।হাসির এক পর্যায়ে চোখের জল মুছল আড়ালে।বলল ‘মানুষ কত কারণেই তো হারিয়ে যায়।তাই না?আজ আমি আছি কাল নাও থাকতে পারি!’
ফারদিনা রেগে বলল ‘হয়েছে, বিরক্ত হচ্ছ।থাকো তুমি।আমি চলে যাচ্ছি।’ বলে ফারদিনা পথের দিকে হেঁটে যেতেই সুফিয়ান পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল ‘ওহে আমার রাগিনী,রাতে এভাবে কোন মেয়ের সাথে থাকিনি।’ ফারদিনা যেতে যেতে বলল ‘আর থাকতে হবে না।আমি চললাম।’
সুফিয়ান দ্রুত হেঁটে ফারদিনার পথ রোধ করে দাঁড়ায়।ফারদিনা দাঁড়িয়ে গেলো। সুফিয়ান ঢং করে বলল ‘তোমার আব্বা রশীদ তালুকদার তো? সত্যিই কি উনি তোমার আব্বা, নাকি তোমার মা..!’ ফারদিনা চোখ কপালে তুলে তাকাল। সুফিয়ান বলল ‘আসলে আমি বলতে চাইছিলাম, তোমার যে রাগ,একটু হলেই অজগর সাপের মত ফসফস শুরু কর। রশীদ চাচা তো এত রাগী না।’
‘আপনার খুব হাঁসি পাচ্ছে তাই তো।হাসুন আপনি।আমি গেলাম।’
“আরে বাহ, তুমি থেকে আপনি হয়ে গেলাম।কি মেয়ে মানুষ রে। সাংঘাতিক। তোমাকে যে বিয়ে করবে সে তো গেল।পান থেকে চুন খসলেই গর্দান কেটে নিবে।’ বলে হাসল।ফারদিনা হঠাৎ চোখ বড় করে তাকালো। সুফিয়ান তাঁর দিকে দেখল।ফারদিনা সুফিয়ান কে অতিক্রম করে তাঁর পেছনের দিকে চেয়ে আছে।চোখের সামনে ভ’য়ংকর দৃশ্য দেখলে মানুষ খানিকক্ষণ এর জন্য থ’হয়ে যায়। চোখের আঁকার বড় হয়ে যায়। স্থবির হয়ে যায়। “কি দেখছো? সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল!
‘তোমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে’
সুফিয়ান ধীর স্থির হয়ে পেছনে ঘুরল। দূরে কেউ লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো সাদা সাদা। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দশ থেকে পনেরো হাত দূরে লোকটি। সুফিয়ান লোকটির দিকে এগোতে চাইল।ফারদিনা সুফিয়ান এর হাত ধরে বলল ‘যেও না।আব্বার লোক হতে পারে।দেখে ফেললে নির্ঘাত শেষ।’
‘ইতিমধ্যে আমাদের দেখে ফেলেছে।ছাড়ো আমাকে।ও ওভাবে দাড়িয়ে আছে কেন জিজ্ঞেস করি। কিছু বলার থাকলে তো বলবে।’
সুফিয়ান গেল।ফারদিনা তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটল।
মজিদ মিয়া লন্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর শরীরের রং কালো।কালো মানুষের চোখের মনি সাদা থাকে । চোখের চারপাশ কালো থাকায় চোখের মনি বেশ সাদা দেখায়।এর আলাদা কোন বৈশিষ্ট্যতা নেই। সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল “চাচা, আপনি এখন?এই রাতে বাইরে কেন? কিছু হয়েছে?
মজিদ মিয়া নিশ্চুপ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সুফিয়ান একবার ফারদিনার দিকে দেখল। এরপর মজিদ মিয়ার দিকে চেয়ে বলল ‘চুপ করে আছেন যে, কিছু বলবেন?
“বাবা, আমার মাইয়াডা, কিছুক্ষণ আগে মা’রা গেছে। দাফন কাফন এর লইগা কিছু টাকা দরকার।’
সুফিয়ান অবাক চোখে বলল ‘কি বলছেন, কিভাবে মা’রা গেলো!চলুন আমিও যাব আপনার সাথে।’
মজিদ আপত্তি স্বরে বলল ‘না। তুমি সময় কাডাও’।মাইয়া মানুষ।রাইতে দাফন কাফন করাই ভালো।’
‘এত রাতে কাফনের কাপড় কিনতে পারবেন বলে মনে হয় না।দোকান বন্ধ।’
The Silent Manor part 15
‘মানুষ এর মরনের সময় নাই। দোকান খোলাই আছে।’
সুফিয়ান কথা না বাড়িয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে দিল।টাকাটা নিয়ে মজিদ মিয়া পথে হাঁটা শুরু করে। কিছুদূর গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরল।সুফিয়ান ও ফারদিনা নিশ্চুপে চেয়ে রইল। মজিদ মিয়ার আচরণ অস্বাভাবিক মনে হল। ফারদিনা বলল ‘মেয়ে চলে গেছে তো। এইজন্য হয়ত মাথা ঠিক নেই।…
