The Silent Manor part 17

The Silent Manor part 17
Dayna Imrose lucky

আজ বৃহস্পতিবার।রশীদ তালুকদার এর আজ রাগ দেখানোর দিন।সকাল সকাল ঘুম থেকে বেশ চেঁচিয়েছেন বাড়ির সকলের সাথে।এই রাগের কারণ কেউ জানে না। মাঝেমধ্যে তাঁর মেজাজ হঠাৎ ই বিগড়ে যায়।তখন কারো সাথে রাগ না দেখালে যেন ভেতরের ভাব টা সরে না। মানুষ যখন রেগে যায় তখন কি করে? চেঁচামেচি করে,কেউ ভাংচুর করে,কেউ অন্যকে আঘাত করে বসে। না’এটা চরম অন্যায়। কারণে রাগ দেখানো যায়।সবাই এটা মেনে নিলেও অকারণে রাগ দেখালে সেটা কেউ মেনে নেয় না। অকারণে রাগ দেখালে লোকে তাকে গর্ধুব বলে।

আজ সূর্যের দেখা মিলেনি। শীতের সময় প্রতিদিন সূর্য উঠবে এর কোন মানে নেই। সূর্যর তাপ ছাড়া প্রকৃতি আজ শীতল হয়ে আছে। চারদিকে ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। কুদ্দুস হাতে খেজুরের রস, কলসিতে করে নিয়ে রান্না ঘরের দিকেই যাচ্ছিল। রশীদ বসার ঘর থেকে দেখলেন।ডাকলেন কুদ্দুস কে। ‘কালু,ঐ কালু এদিকে আয়’। কুদ্দুস বিরক্ত হয়ে দাঁড়ায়। রশীদ এর কথার পাল্লায় সে পড়তে চাইছিল না। কিন্তু এখন উপায় নেই।কলসি হাতে নিয়েই বসার ঘরে গেল। ভেতরে ওর প্রচুর রাগ। আজমাত এর কাছ থেকে কিরগিজ ভাষায় সহজ গালি শিখেছে।আজ তা রশীদ এর উপরে প্রয়োগ করবে বলে নিশ্চিত করল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হাতে কি? রশীদ এর কন্ঠস্বর মোটা লাগল।
‘জ্বী, খেজুরের রস। ছোট্ট দাদারা খেতে চেয়েছে।তাই এনেছি।”
“সবাই ঘুম থেকে উঠেছে?
“ফারদিনা আপা এখনও উঠে নাই।আমি তাকে জেগে তুলব?
“আমি বলেছি জাগাতে?
“না।’
“আজ সবাই একসাথে খাবার খাব। আমার ছেলেদের ডেকে নিয়ে আয়।আর হ্যাঁ, আমার মেয়েকে ডাকতে। ভুলিস না যেন’
“আজ্ঞে,একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম!বলব?
‘বল’

কুদ্দুস আশেপাশে দেখল। কোথাও আজমাত আছে কিনা দেখছে।সে তাঁর ভাষা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলবে।ফারদিনাও নেই।সেও হয়ত বুঝে ফেলত।
“কি হল চুপ করে আছিস যে!’
“কিরগিজ ভাষায় একটা কথা বলব।বলি?
“তুই ও এই ভাষা শিখেছিস?
“হু’
রশীদ অস্পষ্ট ভাবে বলল “এই বিলাতি দেখছি আমার পুরো বংশ বিলাতি করে ফেলবে। সাংঘাতিক। শিগগিরই কিছু করতে হবে।’ তুই চুপ করে আছিস কেন বল”
‘সেন আকমাক,আংকো, আকিলসিসসিন।”
রশীদ কিঞ্চিত অবাক হল। হাতের ছড়িটা ঘোরাল মেঝের উপর।গলা পরিষ্কার করে বলল ‘এটার অর্থ কি?
“এটার অর্থ, আপনি চালাক,সৎ জ্ঞানী একজন মানুষ।’

‘নিজেকে খুব বেশি চালাক মনে করিস না।যা এখন।রস রেখে চা নিয়ে আয়।’ কুদ্দুস চলে যায়।
গতকাল আজমাত আদিব এর সাথে আলিমনগর গ্রামের সুন্দর সুন্দর জায়গা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছে‌।আদিব এর থেকে গ্রাম সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে। সেগুলো খাতায় লিখে রেখেছে।বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। রশীদ রাতে হিসাব নিকাশ করেন। তাঁর মতে হিসাব নিকাশ করার জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে রাত। হিসাব নিকাশ শেষ করে শুতে যাওয়ার সময় আজমাত এর ঘরের দিকে চোখ পড়েছিল।সে সজাগ আছে। রশীদ তাঁর ঘরে গেলেন।আদবের সাথে আজমাত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বলল ‘আপনি আমার ঘরে!

রশীদ কঠিন গলায় বলল ‘আমার অতিথি কেমন আছে এটা জানতে এসেছি। তোমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো‌?
“না।বরং আমার বেশ ভালোই লাগছে। ভিন্ন দেশের ভিন্ন ধরনের মানুষ। এখানকার সবাই খুব ভালো।”
“সবাই ভাল না।এটা ভুল বললে।কার মনের ভেতরে কি আছে,সেটা আমরা জানি না।’
আজমাত রশীদ এর সাথে আর কথা বাড়ায়নি। বিচিত্র গলায় কথা বলছিল।ভেতরে কোন কারণে রাগ ছিল।দমন করার চেষ্টা করছিলো। আজমাত কিছু লিখছিল। রশীদ বলল “তুমি বোকা, গর্ধুব, বুদ্ধিহীন।” আজমাত ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল। রশীদ বলল “তোমাকে বলিনি।এই কথাটুকু আমাকে তোমার ভাষায় অনুবাদ করে দাও। আজমাত হেসে বলল “সেন আকমাক,আংকো, আকিলসিসসিন।”

রশীদ কুদ্দুস এর কথার অর্থ জানে। কিরগিজ ভাষায় তাকে বোকা লোক বলেছে।ওর কথা বুঝে ফেলেছে জানলে কুদ্দুস ই জিতে যাবে। সবসময় কোন না কারণে তিনি কুদ্দুস কে গালমন্দ করতেই থাকেন। বেচারা আজ বিদেশি ভাষায় গালি দিয়ে শান্ত হয়েছে। রশীদ রাগ করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ব্যর্থ হল।রাগ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো।
কুদ্দুস চা নিয়ে এলো।চায়ে চুমুক দিল রশীদ। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। তিনি মিথ্যা বলেন না কখনো।নয়ত চায়ে চিনি কম দুধ বেশী বলে কুদ্দুস কে গালমন্দ করা যেত।ও বেঁচে গেছে। রশীদ দৃঢ় কন্ঠে বলল ”
“সবাইকে ডেকে নিয়ে আয়। একসাথে বসে খাবার খাওয়া যাবে।”
“আজ আপনার মনটা বেশ ভালো মনে হচ্ছে?
“তুই কি চাস, আমি অশান্তি তে থাকি?

‘তা কখন বললাম। আপনি আমার সব কথায় দোষ ধরেন।এত দোষ ধরা ভালো না।’
‘কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এখন তুই আমাকে শিখাবি? রশীদ এর মেজাজ বিগড়ে গেল।সকাল থেকেই রেখে আছেন। মাত্রই রাগ টা কমেছিল।এখন আবার বেড়ে গেছে।

কুদ্দুস কিছু না বলে ফারদিনা সহ সবাইকে ডেকে নিয়ে আসছে। জেবুন্নেছার মুখে হাঁসি নেই।হতাশ দেখাচ্ছে। কপালে একটা টিপ পড়ত।আজ টিপ নেই। নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে। খাবার টেবিলে বসেছে সবাই।ওয়ালনাঠ কাঠের তৈরি টেবিল। নতুন বানিয়েছে।দেখতে বেশ সুন্দর। টেবিলের উপর কয়েক পদ খাবার সাজানো। খাবার রান্না করেছে ঝিলমিল। ওকে সাহায্য করেছে দু’জন দাসী। ঝিলমিল এর রান্নার হাত ভালো। যেকোনো মাংস রান্না স্বাদ হয়।তালুকদার বাড়ির ঐতিহ্য হচ্ছে ভাত। সকালে সবাই হালকা খাবার খান। কিন্তু তারা ভাত খান।সাথে হরেক রকম তরকারি।
টেবিলের এপ্রান্তে রশীদ।ওপর প্রান্তে জেবুন্নেছা।দু পাশে আদিব ও তাঁর তিন ভাই।আদিব এর সামনে বসা ফারদিনা। রশীদ সর্ষে ইলিশ থেকে এক পিচ মাছ নিল। তাঁর পছন্দের খাবার।অন্য কারো দিকে তাকাল না।খেতে শুরু করল।সালাদ হিসেবে রাখা হয়েছে টাটকা টমেটো আর শসা। রশীদ শসায় কচরমচর করে কামড় দিল।রাগ সব শসার উপর দেখাচ্ছে।ফারদিনা বলল ‘আব্বা, বৃহস্পতিবার হলেই আপনি রেগে থাকেন।রাগের কারণ আমি জানি না। আমার উপর রাগ দেখাতে পারেন। শসার উপর দেখাচ্ছেন কেন?

“চুপ, বেয়াদব মেয়ে। বিরক্ত করছিস কেন! চুপচাপ ন
খাবার খেয়ে নে।
“খেতেই আছি। আপনার মত রাগ দেখিয়ে খাচ্ছি না।’
‘আমার মাথা আছে।যার মাথা আছে তাঁর চিন্তা আছে।যার চিন্তা আছে তাঁর রাগ আছে। আমি রাগ দেখাচ্ছি। তোর মাথা খাটিয়ে তো দেখাচ্ছি না।”
ফারদিনা কথা না বাড়িয়ে সুটকির হাঁড়ির দিকে হাত বাড়াল।সুটকির তারকারি দিয়ে ভাত মাখাতে শুরু করল।আদিব,রায়ান,আরিব, সায়েম সবাই একে অন্যের সাথে চাওয়াচাওয়ি করল। জেবুন্নেছা ভ্রু আধভাজ করে বলল “তুই সুটকি কবে থেকে খাওয়া শুরু করলি!তোর জন্য শুকনো মাছ খাওয়া ঠিক নয়।”
রশীদ বিচিত্র গলায় বলল “তুই সুটকি কেন খাচ্ছিস,রেখে দে।মাছ নে।”

“আব্বা সুটকি খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শক্তি বাড়ে।’
“শক্তি বাড়ে,তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস’ খুব বড় জ্ঞানী হয়ে গেছিস। বেয়াদব মেয়ে। চুপচাপ খাবার খা।’
“আমিত চুপচাপ খাচ্ছি। তুমি চুপচাপ খাচ্ছ না। বেহুদা ঝগড়া করছো!’
আদিব ফারদিনা কে ইশারায় চুপ করতে বলল।ফারদিনা হাসলো। রশীদ জেবুন্নেছা কে লক্ষ্য করে বলল ‘দেখেছিস, আজকাল আমার মেয়েও আমার সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলছে। ওদের আমি এই শিক্ষা দিয়েছিলাম?
জেবুন্নেছা হতাশ ভঙিতে বলল ‘মা না থাকলে মেয়েরা বেয়াদব হয়। কোথায় কিভাবে কথা বলতে হবে,জানে না।”
ফারদিনা বলল ‘ফুফু তোমাকে তো দাদুই বড় করেছে। তোমার সংসার ভাঙলো কেন? তোমার শাশুড়ি, স্বামী তোমার দোষ দিয়েছে।”

জেবুন্নেছা রাগে গজগজ করতে করতে বলল ‘দেখেছিস ভাই, আজকাল ওর ময়ূরের পালক গজিয়েছে।বড্ড সাহস বেড়েছে।যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে বিদায় কর।’
রায়ান বলল ‘তোমরা আজকের দিন হলেই ঝগড়া কর কেন?মনে হয় শয়তান আজই ছাড়া পেয়েছে।ছাড়া পাওয়া মাত্রই তোমাদের উপর ভর করেছে।’
‘তোর বোনকে সামলা। মুখে মুখে তর্ক করছে!’ বলল রশীদ।
ফারদিনা বলল ‘তর্ক তো মুখে মুখেই করতে হয়।হাত দিয়ে কেউ তর্ক করে? বলে চাপা স্বরে হাসলো।আদিব হায় বলে মাথায় হাত ঠেকাল।

রশীদ বলল ‘আজকাল ও নিশ্চয়ই বেয়াদব কারো সাথে মেলামেশা করছে। তোদের আড়ালে।ঐ বেয়াদবটাই ওকে এসব শেখাচ্ছে।খোঁজ নে বেয়াদব টা কে?
ফারদিনা ভাত চিবুতে চিবুতে সুফিয়ান এর কথা ভাবল।সে বেয়াদব না। আদবকায়দা ভালো করেই জানে। তাঁর সাথে মেশার পর সাহস টা বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে ।আগের মত কাউকে ভয় পাচ্ছে না।কথা পেটে চেপে রাখছে না। যাকে যা ইচ্ছা বলে দিচ্ছে।
আদিব রশীদ এর রেশ টেনে বলল ‘ঠিক বলেছেন আব্বা,ঐ ঝিলমিল একদম সুবিধার নয়।বেশ চালাক আর চঞ্চল।আমি ওর সাথে কথা বলব।’ বলে আদিব ফারদিনাকে চোখ মারে।ফারদিনা কে বাচিয়ে দিয়েছে।যাতে কেউ তাঁর উপর নজর না রাখে।

কুদ্দুস আজমাত এর ঘরে খাবার দিয়ে এসেছে। রশীদ বলল “আজমাত কে বলবি এরপর থেকে আমাদের সাথে খেতে।ও এখন আমাদের একজন।ছেলেটা কে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।খুব শিক্ষিত, এবং জ্ঞানী।ফারদিনা বলল ‘কিরগিজ বসবাস করলেই শিক্ষিত আর জ্ঞানী হয় না। কৃষকরাও শিক্ষিত এবং জ্ঞানী হয়।’
‘এই প্রথম শুনলাম কৃষকরা শিক্ষিত হয়।তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা।তোকে দেখলেই আমার গা জ্বলে উঠছে।” ফারদিনা দ্বিধা না করে উঠে গেল। জেবুন্নেছা মনে মনে বলল ‘এই মেয়ের অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।’

ফারদিনার পেছন পেছন আসল কুদ্দুস।হাতে একটা চিঠি। আজমাত পাঠিয়েছে।ফারদিনাকে চিঠিটা দিতে দিতে বলল ‘আপনার জন্য আজমাত সাহেব পাঠিয়েছে।’
কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল চিঠির দিকে। আস্তে ধীরে খুলল। প্রতিটি চিঠির শুরুতে প্রিয় লেখা থাকে।প্রিয় লেখা নেই। দরকারি কথাটুকু লেখা। দরকারি কথাটুকু হল – সন্ধ্যায় তোমার জন্য শিমুল গাছের নিচে অপেক্ষা করব। আমি আজ প্রথম শিমুল গাছ দেখেছি।তুলা দেখেছি। এখানে আসার পর তোমার সাথেই ঘুরতে ভালো লাগছে।অন্য কারো সাথে নয়।
ইতি
আজমাত ।
অদ্ভুত।চিঠির শুরুতে প্রিয় নেই। শেষে ইতি আছে। কিরগিজস্তান লোক গুলো অদ্ভুত হয়। কুদ্দুস বলল ‘একটা কথা বলি?

‘তোর আবার কি কথা!আজ কথা শুনতে শুনতেই শেষ।বল’
‘আমি যে প্রস্তাব দিয়েছি তাতে আপনি রাজি কিনা!কিছুই জানালেন না।আমি অপেক্ষায় আছি। যদি মুখে বলতে লজ্জা হয় তাহলে ইশারায় বোঝালেই হবে। আমার দিকে তাকিয়ে দূর থেকে হাসি দিলেই বুঝব আপনি রাজি’
ফারদিনা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল ‘আচ্ছা’ জানাব।’ কুদ্দুস চলে যায়।একই সময় হাজির হল আদিব।ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। চেয়ারে আরাম করে বসল। সিগারেট বের করে ধরাতে ধরাতে বলল ‘তখন তোকে বাঁচিয়ে দিয়েছি কেন জানিস?

‘কেন?
‘বাক-স্বাধীনতার জন্য। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে।নিজের মত ঘুরতে,সময় কাটাতে, সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করতে।তোর স্বাধীনতায় আমি বাধা দিতে চাইনা। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সম্মান খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সবকিছু ভেবেচিন্তে করতে হয়।যাতে কলঙ্গ আমাদের ছুঁতে না পারে।’
সিগারেট টানতে শুরু করল।ফারদিনা আদিব কে ক্ষীণ দৃষ্টিতে দেখছে। সৌন্দর্যের দিক থেকে আদিব ভাই নিখুঁত। ধনসম্পত্তি কি নেই তার? তারপরও তাঁর প্রেম সফল হয়নি।আদিব ভাই একটু আধটু আন্দাজ করতে পেরেছে।ফারদিনা আজকাল সুফিয়ান এর সাথে মেলামেশা করছে।ফারদিনা তাঁর ভাবনা প্রমাণ ব্যতীত নিশ্চিত করল।মুখ ফুটে কি জিজ্ঞেস করবে? তুমি কি সবটা জেনে গেছো? না।’সে কিছুই জানে না।জানলে সময় নিত না।বলে ফেলত।আদিব ভাই তাকে কিছু বলার জন্য সময় নেন না।

ফারদিনা নিচু স্বরে বলল ‘ভাই, তুমি কি চাও আমি সুখি হই?
‘প্রতিটা ভাই চায় তাঁর বোন সুখি হোক।’
‘তুমি আমার জন্য কেমন ছেলে আশা কর,সে দেখতে কেমন হবে, তাঁর অর্থসম্পত্তি!’
আদিব দু হাঁটুতে ভর দিয়ে মেঝের দিকে ঝুঁকে বলল ‘ অর্থসম্পত্তি দিয়ে মানুষ সুখি হতে পারে না। পূর্ণতা আনতে পারে না।অর্থ যতটুকু হোক,মনের অর্থের দিক থেকে বড় হতে হবে। চরিত্র বান হতে হবে। সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।’
আদিব অর্থসম্পত্তির কথা বলেনি। সঠিক সৎ জ্ঞানের কথা বলেছে। সুফিয়ান ঠিক তাঁর চাওয়া ছেলের মত।ফারদিনা আড়ালে হাসল। সুফিয়ান তাঁর জন্য উপযুক্ত। রশীদ এবং তাঁর বাকি তিন ভাই এই সম্পর্ক এত সহজে মানবে না।আদিব ভাই ঠিক রাজি করিয়ে নিবে।ফারদিনা পুনরায় চেপে হাসল।

সিগারেট শেষ পর্যায়ে।দু টান দিলেই শেষ।আদিব শেষ দুটো টান দিল না। এ্যাশট্রে তে রেখে দিল। পুনরায় একটি ধরাল।ফারদিনা কৌতুহল নিয়ে বলল ‘তুমি পুরো সিগারেট শেষ না করেই ফেলে দিলে কেন?
‘ওটা আর টানতে ভালো লাগছিল না।তাই নতুন ধরালাম।’
‘ভাই, মানুষ ও কি তেমন?কারো সাথে দীর্ঘদিন মিশতে মিশতে এরপর আর ভালো লাগে না তাকে। নতুন কারো খোঁজ করে।!
আদিব সোজা হয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল ‘সমাজে একরকম অনেক মানুষ আছে।যারা এক মানুষে,এক পোশাকে,এক পরিবেশে, দীর্ঘদিন থাকতে পারে না।’
ফারদিনার মনটা বিষিয়ে উঠল। সুফিয়ান এর সাথে সে দীর্ঘদিন ধরে সময় কাটাচ্ছে। সেও যদি হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়?

‘পরিবর্তন হব মানে?আমি ঐ ধরনের ছেলেই না। আমার একশোটা রুপ নেই।যে আমি ক্ষনে ক্ষনে রুপ বদলাবো।’ কথা গুলো বলল সুফিয়ান তাঁর চারজন নতুন কৃষকদের সাথে।ঘরের সামনে উঠোনে তাঁরা বৈঠকে বসেছে। কৃষি কাজ করে ওদের কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করছে। অসুবিধা হচ্ছে কিনা জানার চেষ্টা করছে। বদরু ও হাবলু ফসল চাষের জন্য বেশ খানিকটা জমি উপযুক্ত করেছে। মাঝেমধ্যে সোলেমান বলে ‘রাতে আমি একা একা গ্রামে টহল দেই। অনেক চুরি করার সুযোগ পাই।তোরাও একদিন চল আমরা আবার চুরি করি। কৃষি কাজ দিয়ে পেট ভরবে না।’ জবাবে বাকিরা বলেছিল ‘আগে দেখি কি হয় না,হয়।

সোলেমান বলেছিল, ঐ সুফিয়ান আমাদের দিয়ে নিজের কাজ হাসিল করছে।ওর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাদের ঠেলে ফেলে দিবে। মানুষ পরিবর্তন হতে সময় লাগে না।’
আজ বৈঠকের শেষ পর্যায়ে এসে বদরু জিজ্ঞেস করেছে সুফিয়ান কে। ‘আপনি যদি পরিবর্তন হয়ে যান, আমাদের ফেলে দেন‌” সুফিয়ান ভরসা সূচক জবাব দিয়েছে।
সুফিয়ান কিছু টাকা বের করে ওদের চারজন কে দিল। ওঁরা টাকা নিয়ে বেশ খুশি হল।একে অপরের সাথে চাওয়াচাওয়ি করল। সুফিয়ান বলল ‘সবাই খুশি তো?

‘অনেক খুশি।’ সবাই একসাথে বলল। সুফিয়ান মৃদু হাসল। ‘এখন চল।সবাই মিলে মজিদ মিয়ার বাড়ি যাই। গতকাল ওনার মেয়ে মা’রা গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করতে পারল কি না জেনে আসি।’
লাল মিয়া কিঞ্চিত বিষ্ময়কর হয়ে বলল ‘কোন মজিদ,ঐ যে কালা গায়ের রং,মধ্যম বয়স্ক,বেটে? আপনার ক্ষেতেই তো আজ করে? তাঁর কথা বলতেছেন?

The Silent Manor part 16

“হ্যাঁ।’
লাল মিয়া বলল ‘ওনার মেয়ে গতকাল মরছে মানে কি,ওনার একটাই তো মেয়ে ছিল।দশ বছর আগে মারা গেছে।আমি নিজের হাতে কবর খুঁড়ছিলাম।-

The Silent Manor part 18

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here