The Silent Manor part 18
Dayna Imrose lucky
আজ শুক্রবার। জুমার নামাজ শেষ করে ঘরে ফিরেছে সুফিয়ান। খাওয়া দাওয়া শেষ করে দিঘীর পাড়ে বসে রইল।আজ ধবধবে সাদা রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে। সূর্যের সোনালী আলো গাছের পাতা ফাঁক করে মাথার উপর পড়েছে।কালো চুল গুলো ঝলমল করছে।হাতে খাতা এবং নিব কলম। মনোযোগ দিয়ে লিখছে। লিখতে লিখতে মুখের কোণে মসৃণ হাঁসি চলে আসল।বই পড়ার সময় মজাদার কিছু পেলে নিঃশব্দে হাসে।খাতায় মজাদার কিছু লেখার সময় অজান্তে মুখের কোণে হাঁসি চলে আসে।এটা যেন সবার বেলায়।
সুফিয়ান এর দাদা।নিজাম হায়দার। তিনি লেখালেখি করতে ভালো বাসতেন। প্রতিদিন যা ঘটত লিখে রাখতেন।মনের ভেতর প্রশ্ন জমলে প্রকাশ না করতে পারলে লিখে রাখতেন। তিনি ব্রিটিশদের প্রচুর ঘৃণা করত। তাঁদের কে না ঘৃণা করত?সবাই ঘৃনা করে।নিজাম হায়দার একদিন ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে একটা কবিতা লিখেছিল।
British rule, stealing our land,
The fields we sow, they take away.
In Indigo fields, they force and suppress,
Yet our voices rise, strong and kind.
Your crown will crack, your walls will fall,
In the kingdom of injustice, no time remains.
Freedom will bloom, like light at last,
The call of victory will echo in every field.
Whether today or tomorrow
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় যার অর্থ
ব্রিটিশের শাসন, জমি ছিনিয়ে,
কৃষকের র’ক্ত, শ্রমের দাম।
নীল চাষে বাঁধা, দমন তারা চালায়,
সংস্কৃতি তিলে তিলে মুছে যেতে চাই।
তোমাদের রাজা ভাঙবে, তোমাদের প্রাচীর পড়বে,
অন্যায়ের রাজ্যে আর থাকবে না কাল।
মুক্তির ফুল ফোটবে, আলো ছড়াবে,
গ্রামের মাঠে বিজয়ের ডাক শুনবে সবাই।
আজ হোক বা কাল।
ব্রিটিশ বাহিনী থেকে দু’জন লোক একদিন সিন্ধুতলি গ্রামে আসেন।নিজাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।রাগে আক্রোশে তাঁর লেখা কবিতাটি ছুড়ে দিয়েছিল ওদের উপর। তাঁর উদ্দেশ্যই ছিল ওদের দেয়া।কবিতা পড়ে ওঁরা দু’জন দু’জনের মধ্যে চাওয়াচাওয়ি করে নিজাম হায়দার কে বন্দি করে। তাঁকে অ’ত্যাচার করে।এক পর্যায়ে তিনি মা’রা যান। সুফিয়ান এর বাবা সিলমন হায়দার।তখন তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ষোল কি সতেরো বছর।
-এভাবে দীর্ঘ সময় পাড় হয়ে যায়।জন্ম নিল সুফিয়ান। সুফিয়ান বড় হতে শুরু করলে তাঁকে তাঁর দাদার আদর্শের গল্প শোনাতেন তিনি। হাসিখুশি ভরা জীবন ছিল তাদের। সুফিয়ান এর বাবা মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সে নিতান্তই একা হয়ে যায়। সিন্ধুতলি গ্রাম ছেড়ে আলিমনগর চলে আসে। কৃষি কাজ শুরু করে। চিন্তা ও চেতনা মুক্ত জীবন গড়ে।
লিখে পাতাটা শেষ করল।ফারদিনার কথা মনে পড়ল। তাঁর চঞ্চলতা চোখের সামনে ভাসছে।ঘন ঘন প্রশ্ন করে বিরক্ত করলে বিরক্ত সে মোটেই হয় না। গতকাল থেকে তাঁর সাথে দেখা হয়নি। বিরক্ত করছে না।এটা ওটা প্রশ্ন করছে না। সুফিয়ান বিরক্ত হল। প্রচন্ড বিরক্ত হল। সিগারেট বের করল। সিগারেট ধরিয়ে ফুঁকল।ফারদিনা সূর্যের মত আলোকময়। অন্ধকার ঘরে চেরাগের দরকার নেই, যদি আঁধারের মাঝে তাকে দাড় করিয়ে দেয়া হয়।
সুফিয়ান এর মাথায় দাদা জান এর মত কবিতা এসেছে। ব্রিটিশদের নিয়ে কবিতা না। প্রেমের কবিতা।হাতে খাতা আর নিব কলম তুলে নিল। সাদা পৃষ্ঠা বের করল।কলমটি কালির দোয়াতে ডুবিয়ে লিখতে শুরু করল।
“তোমার চোখে নীল নদীর ঢেউ,
চেয়ে থাকি চুপ করে, কিছু না বলেই।
চুলে তোমার রাতের ছায়া খেলে যায়,
মনটা আমার হারিয়ে যায়, বুঝে না কেন তাই।
ফারদিনা, তুমি যেন পূর্ণিমা রাতের গান,
তোমার হাসি ছুঁয়ে যায় প্রাণের জানালা খান।
তোমার কণ্ঠে মিশে থাকে মধুর বাতাস,
তোমায় দেখলে থেমে যায় সময়ের নিশ্বাস।
তুমি যদি রোদ হও, আমি তোমার ছায়া,
তুমি যদি সাগর হও, আমি তার মায়া।
তুমি যদি স্বপ্ন হও, আমি সেই ঘুম,
তোমার নাম শুনলে কাঁপে আমার মনরুম।
আজ হোক বা কাল,
তোমাকে ভালোবাসতে চাই চিরকাল।
ফারদিনা, তুমি আমার হৃদয়ের নাম।
চাঁদও হিংসে করে তোমার আলোয়,
তুমি আমার কবিতা, স্বপ্ন, ভালোয়।-
খাতা রেখে দিল।কলম কালির দোয়াতে রেখে দেয়। সিগারেট নিভে গেছে। সিগারেট এর নেশা ছাড়তে হবে।
সোলেমান উপস্থিত হয়।পরনে ফতুয়া।একদম ময়লায় ভরপুর। লুঙ্গি একপাশ থেকে উঠানো। চোখের নিচে কালো দাগ। সুফিয়ান চেয়ে জিজ্ঞেস করল ‘দিনে তোর কাজ নেই।এসেছিস কেন?
“আপনিই তো বললেন,রাতে গ্রামে টহল দিতে। সন্দেহজনক কিছু ঘটলে যেন আপনাকে জানাই।”
“কিছু জানতে পেরেছিস? সুফিয়ান এক পা তুলে ঘাটের উপর রাখল। সিগারেট ধরিয়ে সেই পায়ের উপর ভর রাখল।
“আমাদের গ্রামের আলিরহাট বাজারে গতকাল রাতে কিছু লোক উপস্থিত ছিল।ওদের আমার সুবিধার মনে হয় নাই। ওদের সাথে ভারি কিছু একটা ছিল। ওদের থেকে দূরে থাকায় আমি পরিষ্কার দেখি নাই।” সুফিয়ান চুপচাপ রইল। সোলেমান সুফিয়ান কে কঠিন দৃষ্টিতে দেখে বলল “আপনি এভাবে বসবেন না?
‘কেন?
“ব্রিটিশ রা এমনে বসে। আপনি সত্যিই কৃষক তো?
সুফিয়ান শব্দ করে হাসল।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাঁসি থামাল।সোলেমান এর কাঁধে হাত রেখে বলল “আমি মিথ্যা বলি না।আমি একজন কৃষক, কখনো জমিতে চাষ করি। আমি একজন রাখাল, কখনো দূর দূরান্তে গরু,মেষ চড়াই।সখের বসে বাঁশি বাজাই।’
“আপনি বাসি কখন বাজান?শিখলেন কিভাবে? কখনো তো শুনি নাই!’
সুফিয়ান দু হাত পেছনে নিয়ে সাহেবের মত দাঁড়াল।বলল “গরু মহিষ যখন চড়াতাম,একা একা নির্জন বনে বসে থাকতাম।বাঁশির সুর ধরলাম।সঙ্গী হল বাঁশির সুর।” সুফিয়ান এর কন্ঠে ব্যাকুলতা। সোলেমান প্রসঙ্গ পাল্টে বলল “গত পরশু রাতে আরো একটা জিনিস দেখেছি।’ সোলেমান এর চোখে মুখে লাজুকতা। সুফিয়ান তাঁর দিকে ঘুরে তাকালো।চোখের ভাষায় হুংকার ।সোলেমান মাথা নত করে ফেলল। সুফিয়ান চোখ সতেজ করে বলল ‘আমায় আর ফারদিনাকে দেখেছিস তাই তো? লন্ঠন হাতে তুই লুকিয়ে লুকিয়ে অনুসরণ করেছিলিস আমাদের।আমি বিষয়টি লক্ষ্য করেছি।”
“আপনি এত কিছু কিভাবে লক্ষ্য করেন?
“আমার চোখ চারটে। কয়টা?
‘জ্বী চারটে! আপনাকে আর ঐ জমিদার এর মেয়েরে সুন্দর মানাইছে!” বলে দাঁত বের করে হেসে উঠলো।
“মানাইছে না।মানিয়েছে হবে।মাঝেমধ্যে গুলিয়ে ফেলিস। শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করবি। কৃষকদের উচিত শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করা।অন্যর খাবারের ব্যবস্থা আমরা করি, আমাদের মূল্য বেশি কি না?
“বেশি।’
‘হালাল টাকায় বরকত বেশি।তোর বউ অসুস্থ ছিল। গুরুতর রোগ হয়েছিল।চু’রির টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিস, ভালো হয়নি। চুরি করা ছেড়ে দিয়েছিস পর,তোর বউ এখন সুস্থ। এটাই হচ্ছে হালাল আয়।বুঝেছিস?
সোলেমান এর হৃদয় ভেদ করল কথাগুলো।হালাল টাকায় বরকত আছে।ক’দিন হয় বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এতদিন চুরি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।ঘরে ভালো ভালো খাবার এসেছে। কিন্তু হজম হয়নি। মানসিক শান্তি ছিল না। আজকাল সোলেমান সে শান্তি টুকু পাচ্ছে। বিনয়ের সাথে বলল “আল্লাহ আপনার ভালো করুক। আমাদের চাইলে আপনি কঠিন শা’স্তি দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে, সঠিক পথে আনতে চাইছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার ভালো করবে।” ওর চোখে জল আসল। পাপড়ি ভিজেনি।মনি অবধি এসে আটকে গেল। সুফিয়ান বলল “কখনো যদি তোদের ছেড়ে চলে যাই, আমার উপদেশ গুলো ভুলে যাস না।এতেই আমার ভালো হবে।”
ঘাট থেকে খাতা কলম নিয়ে ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটল সুফিয়ান।পাশে সোলেমান। কৌতুহল নিয়ে বলল
“আপনি সারাদিন কি লিখেন?
“আমার দাদা লিখতে পছন্দ করতেন। না বলা কথা গুলো উনি লিখে রাখতেন। সুন্দর মুহূর্ত গুলো লিখে রাখতেন। এবং কি কারোর উপর অভিমান,রাগ হলেও লিখতেন।আমি দেখিনি।শুনেছি।আমিও তাঁর মত সবকিছু লিখে রাখি।”
ঘরের সামনে সুফিয়ান এর অশ্ব হ্রেষাধ্বনি তুলল। সুফিয়ান কাছে এগোয়।হাত বুলিয়ে দিল গায়ে। অশ্ব টির গায়ের রং লালচে বাদামি। সুফিয়ান আদর করে নাম দিল রাঙা।বলল “আজ থেকে তোর নাম রাঙা।’ অশ্বটি পুনরায় হ্রেষাধ্বনি তুলল। আনন্দ পেয়েছে।রাঙা মাথা নুইয়ে দিল। ভীষণ আদর দরকার। সুফিয়ান সকাল থেকে একবার ওর কাছে আসেনি।
সোলেমান বলল ‘রাঙা’
দুপুর গড়িয়ে বিকেল এর আগমন ঘটল ধরণীতে। সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। কুয়াশায় চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলল গ্রাম কে।বদরু হাবলু ক্ষেতে এখনো কাজ করছে। সুফিয়ান দু হাত পেছনে রেখে ধীর পায়ে ক্ষেতের আইলে হাঁটছে। কাঁদার গন্ধ আসছে।ভারী টকটকে নোনাধরা গন্ধ।
সুফিয়ান গলা উঁচিয়ে বদরু হাবলু কে লক্ষ্য করে বলল ‘আজ আর করতে হবে না।চলে যা।’ ওরা ক্ষেত থেকে উঠে চলে যায়। সোলেমান সুফিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি ওদের ছাড় দিলেন কেন?
“ভোর বেলা থেকে ওরা কাজ করছে।’
‘আপনার মনে অনেক মায়া!”
সুফিয়ান একরাশ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল “মায়া অত্যন্ত খারাপ জিনিস। মায়া মানুষকে ছায়ার মত জড়িয়ে ধরে।”
সোলেমান তাঁর রেশ টেনে কিছু বলতে চাইল।পারল না।ফারদিনা ও ঝিলমিল আসছে তাঁদের দিকে। সুফিয়ান দেখেনি। সোলেমান বলল “আপনার ছায়া ঐ চলে আসছে” হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল।
ফারদিনার পরনে খয়েরী রঙের শাড়ি।আজ চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। শীতের পোশাক নেই। ঝিলমিল হাঁটছে আর খাচ্ছে।সুফিয়ান বিরক্তিকর ভাব নিল।খুশি হয়েছে বুঝতে দিলেই সর্বনাশ।
ফারদিনা সুফিয়ান এর সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বলল “গতকাল থেকে তোমার সাথে দেখা হয়নি। তুমি গোলাপ চারা দেখতে আসো নি।কেন আসোনি? নতুন কেউ আমার জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে বুঝি?সে নিশ্চয়ই মেহের?আমি জানি,ঐ হবে।আমি তো ওর মত কোমর দুলিয়ে নাচতে পারি না।তাই না?
সুফিয়ান ঠোঁট উল্টিয়ে স্বশব্দে হেসে ফেলল।ফারদিনা তাঁর হাসিতে হা হয়ে রইল।হাসির মাঝেও খুঁত থাকে।হয় হাসলে নাক ছড়িয়ে যায়,মুখ বিশাল বড় হয়ে যায়,নয়ত হাসির শব্দ শুনতে ভালো লাগে না। তাঁর হাঁসি নিখুঁত। মুগ্ধতার সাথে দেখল। সুফিয়ান থেমে গেল।ফারদিনার সাথে গতকাল থেকে দেখা না হওয়াতে বিরক্ত হয়েছে। সত্যটা বলা যাবে না। মিথ্যা বলা পাপ। এমন কিছু বলতে হবে,যাতে মিথ্যে না বলতে হয়। “একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দেব?
ফারদিনা আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে বলল “যেটাই বল মিথ্যা বলবে না।’
“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। দিনের বেলায় বাইরে বের হয়েছো কেন?কেউ দেখে ফেললে বিপদ।”
‘আব্বা, ভাইয়েরা একটা সালিশে গেছেন।ফুফু ঘরে আছেন। উনি দেখলে আর কি! আমার সারাদিন ঘরে থাকতে ভালো লাগে না”
সোলেমান পেছন থেকে বলল “ঘরে থাকতে ভালো লাগে না,নাকি আমগো সুফিয়ান কে ছাড়া ভালো লাগেনা” বলে দাঁত বের করে হিহি করে হেসে উঠল।ওর রেশ টেনে ঝিলমিলও হাসল।
সুফিয়ান গরম চোখে সোলেমান কে দেখল। সোলেমান চুপ হয়ে গেল। সুফিয়ান ফারদিনার দিকে ঝুঁকে বলল “সারাদিন পাখির মত ফড়ফড় কর। তোমার ফড়ফড়ানি আমাকে বেশ বিরক্ত করে।”
“শিগগিরই আর তোমাকে আমি বিরক্ত করব না দেখো।”
সুফিয়ান থাপ্পড় দেয়ার ভান করে বলল “এক কথা বারবার শুনতে ভালো লাগে না।”
“মারবে আমাকে?
“মারতেও পারি’ সুফিয়ান রেগে গেল।চোখ দুটো লাল হয়ে গেল।বলল “আমার সামনে এই ধরণের কথা আবার বললে মেরেই ফেলব।”
ফারদিনা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল “তোমার হাতেই ম’রতে চাই বাঁশিওয়ালা।”
“তোমার লাজ শরম নেই?
“তুমিই লজ্জা কেড়ে নিয়ছো?
“বেয়াদব মেয়ে।”
ফারদিনা হাসল। সুফিয়ান বিরক্ত হল না।খুব করে চেষ্টা করছে বিরক্তিকর রুপটা ধরে রাখতে। হচ্ছে না। নিমিষেই নরম হয়ে যাচ্ছে কন্ঠস্বর। “হাসছো কেন বেহায়া মেয়ে?
“তুমি জানো,কাল আব্বাও আমাকে বেয়াদব বলেছে।আজ তুমি ও বলছো। দুজনেই আমার প্রিয় মানুষ। প্রিয় মানুষের মুখে বকাঝকা শুনতেও ভালো লাগে।”
“এই মেয়ে শোনো,আমি তোমার কোন প্রিয় মানুষ টানুষ নই।” না। বিরক্তিকর অভিনয় হচ্ছে না। একদমই হচ্ছে না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সিগারেট দরকার। সিগারেট ধরাল।
ফারদিনা বলল “আজ আর তোমাকে সিগারেট খেতে দেব না।” বলে সিগারেট টা টান দিয়ে নিয়ে দৌড়ে ক্ষেত ছেড়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। সোলেমান ঝিলমিল হা করে তাকিয়ে রইল। ঝিলমিল বলল “একি তুমি দৌড়ে ওর পেছনে গেলা না কেন?আমিত ভাবছি তুমি ওর পেছনে দৌড়াইয়া ওরে ধরবা।”
সুফিয়ান ঠোঁট কামড়ে বলল “আমি তোর ভাবনায় চলি না।আর এই মেয়েটা আমায় অযথা জ্বালাচ্ছে।চল আমরা যাই।ও অপেক্ষা করতে করতে চলে আসবে।বোকা মেয়ে”
ঝিলমিল বলল “সত্যিই তোমার ওর লইগা টান নাই?
“না।”
“সত্যিই নাই?
“আমি মিথ্যে বলি না।”
“তিন সত্যি কও তো!”
“এক সত্যি,দুই সত্যি,.. । সুফিয়ান থেমে গেল। তিন সত্যি বলার আগেই জঙ্গল থেকে ফারদিনার তির্যক কন্ঠ ভেসে আসে।সুফিয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল।ফারদিনাকে জঙ্গলে দেখা গেল না। সন্ধ্যার আঁধার ছুঁয়ে গেছে জঙ্গল। সুফিয়ান চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডাকল ‘ফারদিনা’। অস্থির চোখে এদিক ওদিক তাকাল।ফারদিনা একটা গাছের আড়ালে বসে আছে। সুফিয়ান এর সিগারেট টা দেখছে।
সুফিয়ান ক্ষেপে গেল।রাগে মাথার চুল গুলো খাড়া হয়ে গেল।ফারদিনার কাছে হাঁটু আধভাজ করে বসে বলল “তুমি চরম বেয়াদব মেয়ে।সুদরাবে না তাই তো? দিন দিন জ্বালাচ্ছ না, একদিন আমিই তোমার ফড়ফড়ানি একেবারে বন্ধ করে দেব” সুফিয়ান এর কথা গায়ে লাগল না।সে হাসল।তবে নিঃশব্দে। সুফিয়ান রাগ ধরে রাখতে পারল না।বলল “আমার মা মৃ’ত্যুর আগে একটা কথা বলেছিল, চঞ্চল মেয়েদের কপালে সৃষ্টিকর্তা ধৈর্যশীল পুরুষ দেন। আমার মা চঞ্চল ছিলেন।”
“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি রাগের জন্যই আমাকে মেরে ফেলবে।”
“ধুর বোকা মেয়ে। মেয়েরা হচ্ছে ফুলের মত, তাদের আস্তে ধীরে ধরতে হয়। তাঁদের সাথে কোমল আচরন করতে হয়।বুঝেছো?
“বুঝেছি। আমাকে এখনি যেতে হবে!আমি যাই।আজ রাতে আর তোমার সাথে কথা হবে না।’ বলে ফারদিনা ছুটে চলে গেল। সুফিয়ান পেছন থেকে বলল ‘রাতে অপেক্ষা করব।’
সোলেমান ও সুফিয়ান তালুকদার বাড়ির পুব দিকের রাস্তায় হাঁটছে।পুব দিকের রাস্তা থেকে ফারদিনার দোতলার ঘরটা দেখা যায়। প্রতিদিন আলো জ্বলে। লন্ঠন, মোমবাতির আলোয় সোনালী রং টা দেখা যেতো।আজ দেখা যাচ্ছে না।ঘরটা অন্ধকার। সুফিয়ান এর মনটা বিষিয়ে উঠল। উদাসীন লাগছে নিজেকে। সন্ধ্যায় ফারদিনা ছুটে গিয়েছে, গতকাল রাতে তাকে বিরক্ত করেনি,আজ রাতেও আসেনি। হঠাৎ তাঁর কি হল?
হাঁটতে হাঁটতে সুফিয়ান সিগারেট টানছে। সোলেমান সুফিয়ান এর ভাবমূর্তি দেখে বুঝতে পারল।আজ ফারদিনা আসেনি।ঘর অন্ধকার। তাঁর মন খারাপ।সুফিয়ান এর ভাবনা ভাঙ্গানোর জন্য ভিন্ন প্রসঙ্গ তুলল। “মজিদ মিয়ার খবর পেয়েছেন?ও নাকি ম’রা মেয়েকে আবার মারছে! অদ্ভুত লোক।”
The Silent Manor part 17
সুফিয়ান নত স্বরে বলল “হু’আদ পা’গল।বাদ দে তাঁর কথা।’
সুফিয়ান এর কন্ঠ ক্লান্ত। সোলেমান প্রসঙ্গ পাল্টালো।গলায় কাশি দিয়ে বলল “আজ তালুকদার সাহেব এর মেয়ে আইলো না কেন!আমিও ভাবতেছি। আপনার মন উতালা।ভালোবাসেন তারে?
সুফিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে মোহময় কন্ঠে বলল “ আমার অন্ধকার জীবনে ফারদিনা আলো নিয়ে এসেছিল।’ভালোবাসা আমাকে বন্দি করেছে’আর সেই বন্দিশালার চাবি ফারদিনার কাছে” …
