The Silent Manor part 24

The Silent Manor part 24
Dayna Imrose lucky

ফজরের বাতাসটা স্নিগ্ধ শোভন হয়। ফজরের সময়ের বাতাসে মুনাফিকদের নিঃশ্বাস এর দুর্গন্ধ থাকে না।ঘুম থেকে উঠে ভোর বেলা হাঁটাহাঁটি করা শরীর এবং মনের জন্য উত্তম। মুসুল্লিরা দলে দলে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে যাচ্ছে।পরনে জুব্বা।সাদা রঙের।হাতে তাসবিহ। মাথায় পাগড়ি। বিড়বিড় করে হালকা শব্দে জিকির করতে করতে যাচ্ছে। তাঁদের শরীর থেকে আতরের গন্ধ আসছে।।আতর ব্যবহার করা সুন্নত।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।ভোরের বাতাসটা যেন আতরের গন্ধে মিশে গেছে।

সুফিয়ান এর নাকে আতর এর গন্ধ ভেসে আসে।সে আতর ব্যবহার করেনি, কিন্তু আতরের গন্ধ নাকে আসতে আসতেই তাঁর মনটা কিছুটা হলেও স্বচ্ছ হল।সে উদ্ভ্রান্ত পথিক এর মত ক্ষেতের আইলে হাঁটছে। গতকাল রাতেও সে আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে।তবে পরিষ্কার করে মনে নেই। গতকাল মেলা থেকে ফারদিনা চলে যাওয়ার পর আর তাঁর সাথে দেখা হয়নি। রশীদ তালুকদার তাঁর দুই ছেলে রায়ান ও আরিব কে নিয়ে শহরে গেছে আজ সকালে। প্রতি রাজস্ব তোলার পর সে শহরে যান।কি কাজে যান সুফিয়ান জানে না। ফারদিনা সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেখা করতে আসবে বলেছে।এখনো আসছে না। আজকাল তাঁর জন্য সুফিয়ান উদাসীন হয়ে থাকে।আত্মার সম্পর্ক এমনি হয়।আত্মার সাথে কেউ মিলে গেলে তাকে ভাবতে না চাইলেও তাঁর ভাবনা চলে আসে।তাই হয়ত ব্রিটিশ লেখক জর্জ এলিয়ট তাঁর গ্রন্থে বলেছেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দুই মানুষের আত্মার চেয়ে বড় কি হতে পারে, যদি তারা জীবনের জন্য একত্রিত হয়,সব কাজের মধ্যে একে অপরকে শক্তি দেয়া, সব দুঃখে একে অপরের উপর নির্ভর করা, সব কষ্টে একে অপরের সহায়তা করা, শেষ বিদায়ের মুহূর্তে নীরব ও অমোঘ স্মৃতিতে এক হওয়া।”
জর্জ এলিয়ট প্রথম গ্রন্থের প্রধান চরিত্রে ছিল ডেরোথিয়া ব্রক। যিনি ছিলেন ভালোবাসার পা’গল।নারী হয়েও সে ভালোবাসার মানুষটির জন্য পথে পথে হেঁটেছে পাগ’লের মতন।আজ সুফিয়ান হাঁটছে।তবে সে পুরুষ। পুরুষেরা ভালোবেসে বেশি পা’গল হয়। পুরুষের দেহ শক্তিশালী। কিন্তু দেহের ভেতরে থাকা বারো সেন্টিমিটার এর হৃদয় টা যে দুর্বল। শুধু একজন কে ঘিরে।ফারদিনা।কাল আজমাত ফারদিনার হাসির প্রশংসা করেছিল। আজমাত একজন পর্যটক, এবং একজন অতিথি বলে বেঁচে গেছে।নয়ত যে চোখ দিয়ে ফারদিনার রুপ দেখেছে সে চোখ উপড়ে ফেলত।মুখ দিয়ে প্রশংসা করছে।সেই মুখ ভেঙ্গে দিত।ভিনদেশীদের নিজ দেশে সম্মান করতে হয়।বলেছে নিজাম হায়দার। সুফিয়ান কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছিল।সে জানে ফারদিনা তাকে ইচ্ছে করে রাগায়।ফারদিনা জানে না, সুফিয়ান এর ঠিক কতটা কষ্ট হয়।

বদরু,হাবলু,লাল মিয়া আজ একসাথে ক্ষেতে এসেছে।আজ ওদের কাজ ছিল না।কাল সুফিয়ান আসতে বারণ করেছে। একদিন ছুটি দিয়েছে। পারিশ্রমিক দিয়েছে। ওঁরাও বলেছে আসবে না। কিন্তু ওঁরা এসে বাদবাকি কাজ শুরু করেছে।
সুফিয়ান নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে বসে আছে।বদরু তাঁর অভিব্যক্তি দেখে বলল “ঐ যে আপনার রানী চলে আসছে।”
সুফিয়ান উল্লসিত হল না।ধীর স্থির দৃষ্টিতে ঘুরে তাকাল ফারদিনার দিকে।আজ সে আগে আগে হাঁটছে ঝিলমিল পেছনে।ওর সাথে আজমাত। সুফিয়ান স্থির হয়েই ছিল, হঠাৎ যেন রাগ উঠতে শুরু করল। না’ অকারণেই রাগ দেখানো যাবে না। মেয়েরা হয় ফুলের মত,ফুল তীব্র বাতাসে ঝড়ে পড়ে।ফারদিনা তাঁর কাছে শুধু ফুল নয়,একটি নক্ষত্র।ফারদিনার হাতে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। সোনালী কাপড়ে মোড়ানো।
ফারদিনা সুফিয়ান এর কাছে এসে ক্ষীণ গলায় কাশি দিল।যেন সুফিয়ান তাকে দেখেনি। সুফিয়ান আইলের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো।বলল “খোলা মাঠ থেকে চলো।”

“কোথায়?
“এমন জায়গায় যেখানে তোমাকে আমাকে কেউ দেখবে না”
“সে-ই জায়গা কোথায়? ফারদিনার কন্ঠে খেলাখোলা ভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
“নীরব ঘরে? সুফিয়ান এর মুখে হাঁসি নেই। একরাশ স্তব্ধতা।
“সেখানে কি করবে?
সুফিয়ান দু কোমরে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে বলল “অন্যরা যা করে আমরাও তাই করব। বেয়াদব মেয়ে একটা।সব বুঝেও বাচ্চা সাজে।” বলে ফারদিনার বা হাত ধরে তাঁর বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। ঝিলমিল ও আজমাত হা করে তাকিয়ে রইল।বদরু হাবলু লাল মিয়া নিজেদের মধ্যে বলল ‘এদের প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাই আমরাও’
ঝিলমিল বলল “নিজেদের প্রেমে ভাসো।অন্যরডার দিকে নজর দিও না।”
সুফিয়ান ফারদিনাকে নিয়ে ঘরে চলে আসে।ফারদিনা চেয়ারে বসে আছে।সুফিয়ান চোখ তুলে দেখছে ফারদিনার হাতের সোনালী কাপড় টা।জিজ্ঞেস করেনি ওটা কি?টেবিল থেকে একটা বই বের করল সুফিয়ান। কিছু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একটা লকেট বের করল। স্বর্ণের লকেট।ফারদিনা চোখ কুঁচকে বলল “এটা তুমি কোথায় পেলে?

“আমার মায়ের ছিল।লকেট এর ভেতরে খোদাই করা দুটো অক্ষর আছে।”
“অক্ষর দুটো কি?
“স’ফ’”
“এর দ্বারা কি হত?
“স’ আমার আব্বার নামের প্রথম অক্ষর। আমার মায়ের নাম ছিল ফারহিনা।’
“ঠিক আমার নামের মত। এতটা মিল” ফারদিনা শীতল হয়ে গেল।
“হয়ত এটা কাকতালীয়। কিন্তু এক হিসেবে ভালোই হয়েছে‌। আমাদের নাম আর আলাদা করে খোদাই করতে হয়নি।”
“এটা তুমি কি করবে?ফারদিনা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
“তোমাকে দেব। আমার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবে।”
“স্মৃতি হিসেবে রেখে দিব মানে।” ফারদিনা নড়েচড়ে বসল।কেউ কাউকে ছেড়ে চলে গেলে তার স্মৃতি হয়।হয় দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য,নয় দুনিয়ার কোন অজানা স্থলে চলে গেলে। সুফিয়ান এর স্মৃতি দিয়ে সে কি করবে? সুফিয়ান তাকে ছেড়ে চলে যাবে?
সুফিয়ান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল “আমি বলতে চেয়েছিলাম তোমাকে দেয়া আমার প্রথম উপহার। যত্নে আগলে রেখো।”

“তুমি ভুল বলনা কখনো,আজ কেন ভুল বললে?
“কখনো কখনো ভুল বলতে হয়,অপর মানুষটির সত্যতা যাচাই করা যায় না।”
“কেমন সত্য?
“এই যে, তোমার চোখে হঠাৎ আমাকে হারানোর ভয় ফুটে উঠল।” বলে লকেট এর দিকে তাকাল।লকেট টা বইয়ের মধ্যে ছিল,ফারদিনার কাছে বিষয়টি অদ্ভুত লাগল। স্বর্ন অলংকার দামী জিনিস,গোপন জায়গায় রাখতে হয়।বইতে যে কেউ হাত দেয়। সুফিয়ান একা থাকে। তাঁর ঘরে কারো আসার সম্ভাবনা নেই।তবুও..! ফারদিনার মনে প্রশ্ন জমলো!বলল “লকেট বইয়ের মধ্যে কেন রাখলে? তোমার সাথেই তো চো’র থাকে,যদি ওরা নিয়ে যেত।”
“শোনো,দামী জিনিস দামী জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয় না।এমন জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়,যে জায়গাটি সবার সন্দেহের বাইরে থাকে”

“আমি তোমার বুদ্ধিমত্তা এবং কথার ধরনে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। তুমি সত্যিই একজন কৃষক, একজন রাখাল তো?
“তোমাদের জন্যই কৃষকেরা পিছিয়ে। কৃষকেরা কি মানুষ না! তাঁদের জ্ঞান থাকতে পারে না, সুন্দর করে কথা বলতে পারে না? অবশ্যই পারে। তাঁরা চাইলে সব পারে। মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষি কাজ।তুমি মানো আর না মানো।”
“তুমি ভুল বললেও, সেই ভুলকে আমি সঠিক বিচার করি।লকেট টা হাতে রাখবে?
সুফিয়ান লকেট টা ফারদিনার গলায় পড়াতে যেয়ে ফারদিনার ঘারের দিকে তাকাল। বাদামি রঙের একটা তিল।যেটা ফারদিনার সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।ফারদিনা হাত দিয়ে ধরে দেখল লকেট। সুফিয়ান একটা মাটির পাত্রে জল নিয়ে আসল।ফারদিনার সামনে ঝুঁকে বলল “নিজেকে দেখো কত সুন্দর দেখাচ্ছে! একদম পরীর মত।” ফারদিনা জলে দেখছে নিজেকে। সুফিয়ান বলল “ চলো দিঘীর পাড়ে যাই।”

দিঘীর পাড়ে বক পাখি বসে ছিল। তাঁদের দেখেই পাখনা মেলে উড়ে গেল।আজ সূর্য উঠেছে।সবেই সূর্য এর দেখা মিলেছে।সকাল থেকে কুয়াশায় ঘেরা ছিল। তখনকার সাথে এখনকার আবহাওয়া পার্থক্য অনেক। পরিবেশ টা শান্ত, শীতল কিন্তু কোন এক কারণে যেন রোদেরা উজ্জ্বল হাসছে। রোদের সৌন্দর্য আজ পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠেনি।ফারদিনা দেখছে তীব্র আলো।সুফিয়ান দেখছে না সে-ই আলো। তাঁর চোখে ফারদিনার রুপ সূর্যের আলোর থেকেও দ্বিগুণ উজ্জ্বল।ফারদিনার গলার লকেটটা রোদে পড়ে চিকচিক করছে।রোদেরা যেন ঝিলিক মারছে।
ফারদিনা হাতে সোনালী কাপড়টা মোরাচ্ছে। লম্বা লাঠি জাতীয় কিছু একটা। সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল “এটা কি? কখন থেকেই দেখছি হাতে।”
ফারদিনা টান টান চোখে সুফিয়ান কে দেখে বলল “তোমার জন্য একটা উপহার এনেছি।”

“কি এনেছো?
“স্বর্ণের বাঁশি। তোমার কন্ঠে অনেক দিন সুর শুনি না।আজ এখন নয়।অন্য কোন সময় তুমি তোমার অনূভুতির সুরে বাঁশি বাজাবে।”
ফারদিনা কাপড় থেকে বের করল। বাঁশিটা সুফিয়ান হাতে নিল। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। সুফিয়ান বাঁশি রেখে দিঘীর জলের দিকে তাকাল। নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ।যেন সময় থমকে গেছে। তাঁর দৃষ্টি জলের দিকে। কিন্তু ভাবনার পাতায় অন্য কিছু।ফারদিনা কিঞ্চিৎ বিস্ময়ে ডাকল “সুফিয়ান”।সুফিয়ান তাঁর ডাক খেয়াল করেনি।ফারদিনা এবার গায়ে হাত দিয়ে ডাকল।ঠিক তখনই সুফিয়ান হুঁশে ফিরে যেন। হঠাৎ করে ঝাপসা কন্ঠে বলল বিন্তি।ফারদিনা সুফিয়ান এর মুখে এরকম নাম শুনে আঁতকে উঠল।বলল “বিন্তি কে?
“কেউ না।জলে থাকা ছোট্ট মাছ কে বিন্তি বলে। ওদের দেখছিলাম।” সুফিয়ান এর চোখ এলোমেলো।
ফারদিনা চিন্তার ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেল। বলল ‘মিথ্যা বলছো কেন?আমি তোমার সামনে বসা, তোমার জন্য একটা উপহার নিয়ে আসলাম,আর তুমি ছোট্ট মাছ দেখছো!কি হয়েছে তোমার?

“তোমার বাঁশিটা সুন্দর।তবে তোমার থেকে বেশি নয়।”
“মানুষ ভাবনার জগতে তখনই যায় যখন, বর্তমান মুহুর্তের সাথে অতিতের স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।”
“কি সব বলছো তুমি, ছোট্ট মাছ কে বিন্তি বলে। বিশ্বাস না হলে তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করে নিও।”
“তুমি আজ মিথ্যা বলছো না। কিছু একটা বলতে গিয়ে তোমার কন্ঠ আটকে গেছে।”
“ধুর বোকা,আমি কখনো কথায় আটকে যাই না।”
ফারদিনা একদম চুপ হয়ে গেল। বিন্তি কোন মেয়ের নাম। সুফিয়ান এর মুখ থেকে হঠাৎ ওর নাম বেরিয়ে গেছে।ছোট্ট মাছের নাম বিন্তি হয় না। চোখের কোণে জল জমল।সুফিয়ান ঝুঁকে ফারদিনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল “ইশ,আজ আমি শেষ।রাগিনী আজ রাগ করেছে,এই রাগ ভাঙ্গানো মুশকিল। বিশ্বাস কর, আমি সত্যিই মাছের নাম বলেছি। মাছের আরো নাম আছে,বলব?

“আব্বা শহর থেকে ফিরে এসেছে।আমি আজমাত এর সাথে বের হয়েছি বলে আসতে দিয়েছে। এখন চলি।”
“ঐ বাঁদর’টাকে আজ রাঙার সাথে বেঁধে ছেঁড়ে দেব।রাঙা ছুটবে ও মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।”
“তোমার কোন অধিকার নেই আজমাত কে কিছু বলার। দ্বিতীয় বার আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।দেখাও করতে আসব না।” কথা বলতে পারছে না ফারদিনা।রাগে গলা থরথর করছিলো যেন।বাকি কথা গিলে হনহন করে উঠে চলে যেতে চাইল। সুফিয়ান দাঁড় করিয়ে বলল “শুধু শুধু আমার উপর রাগ করে এভাবে চলে যেওনা।”
“তুমি তোমার বিন্তি কে নিয়ে থাকো।আমি আজমাত এর সাথে এখন থেকে কথা বলব।রাতেও তাঁর সাথে মিশব।তার ঘরে যাব। দরকার হয় বিয়ে করে বিদেশ চলে যাব।তবুও আর তোমার কাছে আসছি না।”

সুফিয়ান রাগে চোখ লাল করে ফেলল।ফারদিনা চলে যাচ্ছে। সুফিয়ান তির্যক কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল “তুমি না আসলে তোমার বাড়ি গিয়ে তোমার সাথে কথা বলব।” ফারদিনা ঘুরে তাকাল না। সুফিয়ান এর কানের কাছে ফারদিনার বলা শেষ কথাগুলো ভাসছে “আজমাত এর সাথে মিশব, তাঁর ঘরে যাব, বিয়ে করে চলে যাব”। সুফিয়ান এর রাগ হচ্ছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।রাগ দমন করার জন্য সিগারেট বের করল। সিগারেট টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে আবার ফেলে দিল।কেউ যখন মাত্রাতিরিক্ত রেগে যায় তখন,হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।রক্তচাপ বেড়ে যায়।রক্তে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল বৃদ্ধি পায়। এতে শরীর যুদ্ধের মতো প্রস্তুত হয়ে যায়। সুফিয়ান রাগ প্রয়োগ করার মত কিছু পেল না।ফারদিনা চলে গেছে,এখন রাগ দেখিয়েও কিছু হবে না। নিয়ন্ত্রণ করছে নিজেকে।মাথা পেছনের দিকে ঝুঁকে সূর্য বরাবর তাকাল। সূর্যের রশ্মি সরাসরি তার মুখে পড়েছে।তাপ সহ্য হচ্ছে। সূর্যের তাপ এর থেকে ফারদিনার শেষ কথাগুলো বেশি তিক্ত ছিল। আশেপাশে তাকাল স্থির চোখে।হাতে বাঁশিটা দেখল।আলতো করে স্পর্শ করল,যেন এটি স্বর্ণের নয় তুলার তৈরি।

সন্ধ্যার সময় কুদ্দুস রান্না ঘরে খুঁটিনাটি কাজ করছে।আজ সারাদিন ভেবেছে ফারদিনাকে কিভাবে পাওয়া যায়।ও যেদিন থেকে এ বাড়িতে প্রথম এসেছে সেদিনই ফারদিনাকে দেখে প্রেমে পড়েছে।ফারদিনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।কিরগিজ ভাষায়।ফারদিনা সেদিন হেসে উড়িয়ে দিলেও বলেছে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু জানায়নি।কুদ্দুস হতাশায় ভুগছে। বিকেলের দিকে একজন তান্ত্রিক এর নাম মনে শোনে।কালীচরণ তান্ত্রিক।সে কালো জাদু করছে আজ দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে।কালীচরণ এর খোঁজ দিয়েছে রশীদ এর অন্যতম বিশ্বস্ত অনুচারী। কুদ্দুস ফারদিনার জন্য তান্ত্রিক এর খোঁজ করছে, বিষয়টি লুকিয়ে মিথ্যা বলে সেই তান্ত্রিক এর সন্ধ্যানে যায়। তাঁর কাছে বিস্তারিত বলার পর একটা মাটির পাত্রে জল দিয়েছে।বলেছে এই জল রাত বারোটার আগেই যেন ফারদিনাকে খাওয়ানো হয়। তাহলে সে কুদ্দুস এর প্রেমে পড়ে যাবে।

কুদ্দুস হাসছে।আজ সে ভীষণ খুশি।ফারদিনাকে নিজের করে পাবে।সময় শুরু হয়ে গেছে,এখনি খাওয়ানো দরকার।হাতে জলের পাত্র নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই দেখল রশীদ তালুকদার বৈঠকখানায় বসে আছে।সাথে রায়ান ও আরিব এবং জেবুন্নেছা। কিছুক্ষণ পর রায়ান,আরিব ও জেবুন্নেছা চলে যায়। রশীদ বসেই আছে। কুদ্দুস জলের পাত্র টা পুনরায় রান্নাঘরে নিয়ে গেল। রশীদ বিষয়টি দেখে ডাকল “কালু, খেজুরের রস নাকি, নিয়ে আয়, গলাটা শুকিয়ে গেছে,রস খেলে ভালোই হবে।” কুদ্দুস মহা বিপদে পড়ল। রশীদ শহরে গিয়েছিল,এত তাড়াতাড়ি শহর থেকে আসার কথা নয়। কুদ্দুস কি করবে বুঝতে পারল না। অপ্রস্তুত ভাবে উত্তর দিল “জল তেষ্টা পেলে জল খেতে হয়,রস না।”
“মাথা গরম করিস না। নিয়ে আয়।” কুদ্দুস নিয়ে আসল। কিন্তু এটা রস নয়,জল।কালো জাদুর জল।এই জল কিছুতেই খেতে দেওয়া যাবে না।প্রসঙ্গ বদলে কোন ভাবে এখান থেকে ছুটে পালাতে হবে। সোজা ফারদিনার কাছে। কুদ্দুস বলল “আপনার না শহরে যাওয়ার কথা?

“মাঝপথে গিয়ে ভাবলাম,আজ না গেলেও চলবে।পড়ে একদিন যাব।কেন,আমি আসাতে বুঝি তুই খুশি হসনি।?
“আপনার বাড়ি, আপনি আসবেন। আমার ভালো লাগা না লাগাতে কি আসে যায়।”
“বকবক না করে রস দে”
“এটা রস না”
“তাহলে কি?
কুদ্দুস এখন কি বলবে! রশীদ এর থেকে এত সহজে পালাতে পারবে বলে মনে হয় না। রশীদ ছড়ি পাত্রে ঢুকে বলল “কি হলো,কি আছে এটাতে? এমন ভাবে ধরে রেখেছিস যেন তোর প্রাণ লুকিয়ে রেখেছিস।”
“হুঁ।তেমনি”
“দে দে দে, জলদি দে,তোর সাথে ঝগড়া করার আমার কোন ইচ্ছা নেই।রস টা দে খেয়ে ঘুম দিতে হবে।রস খেলে ঘুম হয় জানিস তো?

“না।সবে জানলাম।আমি রস দেব না। আমার খাওয়ার জন্য এনেছি।”
“পাত্র টা আমার কাছে দে,তুই হা কর আমি ঢেলে দেই।তুই এক চুমুক খা, বাকিটা আমি খাব।”
“না, কিছুতেই দেয়া যাবে না।”
তাঁদের কথোপকথন এর মাঝে হাজির হয় ফারদিনা।সে বলল “তোমরা কি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছো?
“দেখ মা, কালু আমায় রস খেতে দিচ্ছে না। ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আয় যা।” রেগে গেলেন রশীদ।ফারদিনা কুদ্দুস কে লক্ষ্য করে বলল “কি কুদ্দুস ভাই,রস টা দিচ্ছ না কেন, আব্বা খেতে চাচ্ছে দাও।” বলে ফারদিনা কুদ্দুস এর হাত থেকে জলের পাত্র টা নিয়ে রশীদ এর হাতে দেয়। কুদ্দুস ভয়ে নিজের হাত নিজে কামড়াতে শুরু করল।ফারদিনা অতিথিশালার দিকে চলে যায়। রশীদ রস বুঝে জল খেয়ে বলল “হতচ্ছাড়া,এটা তো জল। এতক্ষণ আমার সাথে মশকরা করেছিস?” কুদ্দুস কিছু না বলে নিজের ঘরে দৌড়ে চলে যায়। দরজা টা কপাট করে বন্ধ করে দিল। বিছানায় ধব করে বসে পড়ে।আজ ওর অবস্থা দফারফা হয়ে যাবে। তান্ত্রিক কালীচরণ বলেছে এই জল যে খাবে সে সাথে সাথে ওর জন্য বস হয়ে যাবে।ওর প্রেমে হাবুডুবু খাবে।কালীচরণ এর কালো যাদুর কাজ কোনদিন বেফলে যায়নি। রশীদ নিশ্চয়ই এখন ওর ঘরে আসবে। কুদ্দুস এর ভাবনা শুরু হওয়ার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসল। নিশ্চয়ই রশীদ।কুদ্দুস কোন মতেই দরজা খুলবে না।

দরজা এখন ধাক্কাধাক্কি করছে। দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে কুদ্দুস লাফিয়ে উঠল।আজ দরজা ধাক্কানোর কথা ছিল ফারদিনার।হল না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
এবার রশীদ চেঁচিয়ে ডাকল কুদ্দুস কে। কুদ্দুস উত্তর দিল “আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। আপনি আপনার ঘরে যান‌” যতটা সম্ভব জোড় গলায় উত্তর দিয়েছে।দরজায় ওপাশে শব্দ গেছে বলে নিশ্চিত হল না। রশীদ আবার ডাকল। কুদ্দুস ধীরে পায়ে হেঁটে দরজার দিকে গেল। মুখে একটা গামছা চেপে ধরল। রশীদ কে কোন ভাবে মানানোর চেষ্টা করতে হবে।মনে মনে প্রার্থনা করে দরজা খুলে দিল। রশীদ নরম গলায় বলল “তোর এতক্ষণ লাগলো কেন দরজা খুলতে?
“আপনি আমার ঘরে কেন?
“আজ আমি তোর সাথে ঘুমাবো।সর।” বলে কুদ্দুস এর খাটের উপর বসে। কুদ্দুস চোখে মুখে ভেজা ভাব এনে বলল “আমার সাথে কেন ঘুমাবেন?
“তোকে আমি সারাদিন বকাঝকা করি,আজ থেকে আর বকাঝকা করব না। তাছাড়া এতদিন তোর ভালোবাসা আমি বুঝতে পারিনি।”

কুদ্দুস রশীদ এর সামনে গিয়ে বলল “আমায় বকেন,মারেন, বেশি বেশি কথা শোনান,তবুও আমার ঘর থেকে যান”
“তুই আমার সাথে এরকম টা করিস না।আজ..আজ আমি তোর সাথেই থাকব।”
কুদ্দুস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল “ইয়া আল্লাহ এ কি বলে,আমি এখন কি করব,কই যাব?
রশীদ ঠান্ডা গলায় ছড়ি ওর দাড়িতে ঠুকে বলল “তোর কি আমাকে পছন্দ না? আমার অর্থসম্পত্তি কোন কিছুর অভাব নেই।কি নেই আমার?সব আছে।কি চাই তোর বল?
কুদ্দুস মেঝেতে বসে পড়ে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল “এ আমি কি করলাম,এখন আমি কোথায় যাব, আপনি দয়া করে আমার ঘর থেকে যান,কেউ আপনাকে এই অবস্থায় দেখলে হাসাহাসি করবে।”
রশীদ কুদ্দুস এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল “তুই চাস আমি চলে যাই?আমি গেলে তুই সত্যিই খুশি হবি?
“হুঁ,জলদি যান‌।আর আমি দেখতেছি কি করে আমার বস কাটানো যায়।”

“এটা মনের মিল কালু।বস না‌।”
“আপনার ছেলেরা দেখবে, হাসবে। আপনার ঘরে যান‌।”
“তোর ঘরে থাকলে থাকলে সমস্যা তাই না,তুই আমার ঘরে চল।বেশ মজা হবে।”
কুদ্দুস বসা থেকে শুয়ে পড়ল মেঝেতে। কান্না করতে করতে বলল “আমি আর কোনদিন তান্ত্রিক এর কাছে যাব না। আল্লাহ এবার আমায় মাফ করে দাও।”
রশীদ বলল “চুপ,কাঁদিস না,আমি আগে যাচ্ছি।তুই পড়ে আয়।” রশীদ যেতে যেতে কয়েকবার পেছন ঘুরে কুদ্দুস কে দেখল। কুদ্দুস মনে মনে স্বীকার করল, এবারের মত বেঁচে গেছে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব বস কাটাতে হবে।”
রশীদ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি বেয়ে উপর উঠছে।

The Silent Manor part 23

চাঁদের আলোয় তোর মুখ জ্বলে,
হৃদয় আমার শুধু তোরে ডাকে।
বাতাসে ভেসে আসে নাম তোর,
প্রেমের সুরে মন খুশিতে নাচে,
জেবুন্নেছা রশীদ এর সামনে বেশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। রশীদ দাঁড়িয়ে গেল। জেবুন্নেছা ফিসফিস করে বলল “ভাই শুনেছিস,গতকাল মেলা থেকে পনেরো টা বাচ্চা গা’য়েব হয়ে গেছে!….

The Silent Manor part 25

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here