The Silent Manor part 25

The Silent Manor part 25
Dayna Imrose lucky

রশীদ জেবুন্নেছার কথাটি অগ্রাহ্য করে গুন গুন করতে করতে নিজের ঘরের দিকে হাঁটল। জেবুন্নেছা বিরক্ত হয়ে রশীদ এর সামনে এসে পথ রোধ করে দাঁড়াল।বলল “ভাই,কি হয়েছে তোর?মেলায় যে কান্ডটা হয়েছে শুনেছিস তো, আমাদের দুর্নাম হবে,তোর দুর্নাম হবে।”
রশীদ বলল “আজ আমার মনটা ভালো নাই।ঐ কালু আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। আমার মূল্য বুঝে নাই।খুব কষ্ট লাগছে। আগামীকাল এই বিষয়ে কথা বলব।” বলে রশীদ ঘরের দিকে চলে যায়। জেবুন্নেছা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।তাঁর ভাইয়ের আচরণ তাঁকে বিস্মিত করল।

কুদ্দুস ঘর থেকে বের হয়।আজ মহা বিপদ থেকে বেঁচেছে।একেবারে বেঁচে গেছে বিষয়টি তা নয়। বিপদের আশঙ্কা এখনো রয়ে গেছে।রশীদ এর উপর জাদুর প্রভাব আছে। কাটাতে হবে।নয়ত সকলের সামনে দেখা যাবে কুদ্দুস কে নিয়ে টানাটানি করছে। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে।যা বলতে হয় একজন নারী কে। নিজের বউ অথবা প্রেমিক কে।এমন কথা একজন পুরুষ হয়ে পুরুষ কে বললে মান সম্মান শেষ।কালীচরণ তান্ত্রিক বলেছে যদি বস এর প্রভাব খারাপ এর দিকে চলে যায়,তবে ওকে আর একটা কাজ করতে হবে।পরিশ্রুত ঝরনার জল বা পুকুরের জল, প্রায়ই আধা লিটার নিতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার মধ্যে এক চিমটি লবণ।পাঁচ ধরণের হার্ব অথবা পাতা, তুলসী, মেথি, পুতুলের পাতা, রজনীগন্ধা পাপড়ি, এবং আর্শাক পাতা দিয়ে মন্ত্র পাঠ করে ফুক দিতে হবে। কুদ্দুস মন্ত্র মনে করার চেষ্টা করল।মনে পড়ছে না। কঠিন শব্দ মনে পড়ার কথা নয়। কিছু মনে না পড়লে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হয়। শান্ত পরিবেশে যেতে হবে। নিজেকে স্থির করতে হবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাজ বাজ এর কথা মনে করতে হবে যা আজ করেছে। কুদ্দুস চেষ্টা করছে।হাতে তৈরি কৃত জল নিয়ে পায়চারি করছে।আর ভাবছে।
রাত ঠিক দশটা। কুদ্দুস এর মন্ত্র মনে পড়েছে।

“ওঁ বিমুক্তায় নমঃ,
মোহবন্ধ নাশ নাশ,
চেতনা হউ নির্মল,
হৃদয় হউ শূন্যাশ্রয়
পড়ে জলে ফুক দিল। আনন্দ লাগছে। রশীদ এর বস কেটে যাবে।জাদুবিদ্যা সত্য। কুদ্দুস জানত। কিন্তু জাদুবিদ্যা পাপ।কুদ্দুস পাপ করেছে।মনে মনে স্বীকার করল।দেরি করলে চলবে না। রশীদ এর ঘরে যেতে হবে। কুদ্দুস হাতে জল নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে তাঁর ঘরের দিকে।
রশীদ এর ঘরের দরজা খোলা।ঘরের বাইরে দু’জন অনুচারী বুক টান করে হাতে খঞ্জর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ গুলো বড় বড়।মনে হচ্ছে কুদ্দুস এর দিকেই দেখছে। কুদ্দুস গামছা দিয়ে ঘাম মুছল।অথচ তীব্র শীত এখন। কিন্তু ও ঘামছে ভয়ে, আতঙ্কে।

জল হাতে ঘরে ঢুকল। রশীদ চেয়ারে বসে আছে।চোখ তাঁর বন্ধ কন্ঠে তাঁর গান। তাঁকে দেখে বেশ আনন্দিত মনে হচ্ছে। আনন্দ এর কারণ কুদ্দুস জানে।ও রশীদ এর সামনে দাঁড়াল।রশীদ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকাল। কুদ্দুস কে দেখে খুশি হল।গান বন্ধ করল। ঠোঁটে হাঁসি এনে বলল “তুই এসেছিস কালু, আমি অপেক্ষায় ছিলাম।বোস।”
“বসতে আসি নাই।”
“কেন, আমার কাছে বসবি না তো, কোথায় বসবি?
“আপনার মাথায় সমস্যা হয়েছে।আমি সমস্যা দূর করতে এসেছি।”
“আমার মাথায় সত্যিই সমস্যা হয়েছে? রশীদ এর মুখটা কালো হয়ে গেল।
“হুঁ,হয়েছে।এই জলটা খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

রশীদ চুপচাপ থাকল। দৃষ্টি নিচু করে কিছু ভাবছে। কুদ্দুস মেঝেতে বসে রশীদ এর দিকে দেখছে।সে কান্না করছে। কুদ্দুস জিজ্ঞেস করল “আপনি কান্না করতেছেন কেন?
“আমার সন্তানদের জননীর কথা মনে পড়ছে। তাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।আর সে আমাকে কি বলতো জানিস?
“কি বলতো?
“পা’গল বলতো।’ রশীদ এর চোখে জল জমল। কুদ্দুস তাঁর চোখে জল দেখে নিজেও মুখে গামছা চেপে ধরে কান্না শুরু করল। রশীদ ওর কান্না দেখে বলল “তুই কাদছিস কেন?
“আপনার কষ্টের কথা শুইনা আমার ভীষণ খারাপ লাগতেছে। অনেক কষ্ট আপনার”
“তুই কাঁদিস না।তোর কান্না দেখে আরো খারাপ লাগছে। এক কাজ কর, দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আয়।”
কুদ্দুস ভ্রু কুঞ্ছিত করে বলল “দরজা বন্ধ করব কেন?

“যাতে তোর আমার কান্না কেউ না দেখে।”
“আপনি এই জলটা খেয়ে নেন। তাহলে আর আপনার কষ্ট লাগবে না।”
“এটা কিসের জল? রশীদ ছড়ি ঠুকে বলল।
“ঔষধি জল। আপনার শরীর টা ভালো নাই।আমি দেখতে পাচ্ছি।হাকিম বলছে এই জল খেতে।” তান্ত্রিক এর বলা যাবে না।তাই কুদ্দুস মিথ্যা বলছে।
“বলেছে?
“হুঁ।”
“কিন্তু আমার তো এখন জলতেষ্টা পায়নি।”
কুদ্দুস বিরক্ত হল। রশীদ কথা বাড়াচ্ছে। কুদ্দুস বিরক্ত স্বরে বলল “এটা ঔষধি জল। তেষ্টা না পেলেও খেতে হবে।”

রশীদ কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকল। এরপর বলল “দে,জলটা খাই।” কুদ্দুস খুশি মনে এগিয়ে দিল। রশীদ রুপার পাত্র থেকে জল ঢেলে হা করে এক ঢোঁক গিলেই বাকিটা থু থু করে ফেলে দিল। বিভিন্ন পাতার গন্ধ।তেতো।মুখ তেতোয় ভরে গেছে। রশীদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কঠিন গলায় বলল “হতচ্ছাড়,কালুর ঘরে কালু,মূর্খ,কি সব খাওয়াচ্ছিস আমায়!”
কুদ্দুস দাঁত বের করে হে হে করতে করতে বলল “আমার কাজ হয়ে গেছে।এখন আপনি যত খুশি বকেন।”
“মূর্খ এর মত আচরণ করছিস আজকাল। কি সব খাওয়াচ্ছিস,মনে হচ্ছে তুই আমাকে মেরেই ফেলবি।’
“আপনি শিক্ষিত?

রশীদ এবার পুরোপুরি রেগে গেল। “আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করার সাহস কোত্থেকে হয় তোর? বেয়াদব। মূর্খ।”
কুদ্দুস দাঁড়িয়ে বলল “আমার আব্বাও মোটামুটি শিক্ষিত ছিল। হয়ত আপনার মত এত শিক্ষিত ছিল না। কিন্তু কথায় কথায় অন্যকে সে মূর্খ বলতো না।” রশীদ চোখ ছোট্ট করে কুদ্দুস এর দিকে দেখল। মেজাজ শীতল করল। এরপর পায়চারি করতে করতে বলল “শোন, আমার আব্বা ছিলেন একজন শিক্ষিত, প্রতাপশালী জমিদার। ব্রিটিশ প্রসাশনদের সাথে তাঁর ওঠা বসা ছিল। আমাদের রাজস্ব আদায় করার পর ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাঠাতে হয়। ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে হয়, রাজস্ব সংগ্রহ ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়। এগুলো শিক্ষিত না হলে হয় না।

আমার আব্বাও একজন শিক্ষিত জমিদার ছিলেন। আমাদের বসবাস এক সময় শহরে ছিল। আব্বা চলে যাওয়ার পর আলিমনগর চলে আসি।তোর কাছে এসব কেন বলছি,তুই এসব কখনোই বুঝবি না।যা,তোর কাজ কর। আমাকে একা থাকতে দে।” কুদ্দুস কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
জেবুন্নেছা ঘরের বাইরে হাঁটছেন।হাকিম আবুল কালাম বলেছেন,রাতে খাওয়া দাওয়ার পর যদি কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করা হয় তবে হজম শক্তি বাড়ে।জেবুন্নেছা হাঁটছে।বাড়ির ফটকের দিকে যাচ্ছে,ঘুরে আবার ঘরের সামনে আসছে। গালভর্তি পান। হাঁটছে আর পিক ফেলছে। তখনই তাঁর সামনে পড়ে সুফিয়ান। সুফিয়ান কে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না।মনে হচ্ছে হন্তদন্ত হয়ে কোথাও থেকে ছুটে এসেছে। জেবুন্নেছা তাঁকে দেখে অখুশি হল। সুফিয়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে পিক ফেলল।বলল “তুমি এই রাতে এখানে?

“দরকার আছে। রশীদ চাঁচার সাথে।”
“দরকার সব রাতেই থাকে তোমার?
“সেটা আপনাকে কেন বলব?
“এটা আমারও বাড়ি,এ বাড়িতে আসতে হলে আমাকেও বলতে হবে!’
“কি বললে খুশি হবেন?” রাগে গা জ্বলছে সুফিয়ান এর।মুখেও প্রকাশ পাচ্ছে।চোখ যেন দগ্ধ হচ্ছে। জেবুন্নেছার নজরে তা আসল না।বলল “যা সত্যি তাই বলো।ঐদিন জমি বর্গা নেয়ার কথা বলছিলা।পড়ে আর আসো নাই। বিষয়টি কিন্তু গড়মিল লেগেছে।আমি কিন্তু সব বুঝি,হয়ত বলি না।”
“জমির দরকার নাই,পড়ে সেটা বুঝতে পারি।” বলে সুফিয়ান পাঞ্জাবির হাতা ভাঁজ করল।
“মিথ্যের গন্ধ পাচ্ছি। সত্যিটা বলো।”
সুফিয়ান হাঁফ ছাড়ল।এই মহিলা জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আশেপাশে তাকাল।অনুচারীগন বসে বসে তাস খেলছে। সুফিয়ান জেবুন্নেছা কে আস্তেধীরে বলল “আপনার মেয়ের সাথে প্রেম করতে এসেছি।”
“কিন্তু আমার তো মেয়েই নাই।”

“আপনার মেয়েই যখন নাই, তাহলে আমাকে নিয়ে এত সমস্যা কিসের?কি সন্দেহ করছেন?
“আমার মেয়ে নাই তো কি হয়েছে, ভাইয়ের মেয়ে তো আছে।”
“তাহলে ওর সাথেই প্রেম করতে এসেছি।পথ ছাড়ুন।”
“আমি আজই রশীদ কে সব বলে দেব। একজন কৃষকের সাথে জমিদারের কন্যার প্রেম হতে পারে না।”
সুফিয়ান জেবুন্নেছার দিকে ঝুঁকে বলল “আমি কৃষক না। আমার আসল পরিচয় আপনারা জানেন না।”
“সত্য পরিচয় দাও, তোমাকে আগে থেকেই আমার সন্দেহ হইতেছে।”
সুফিয়ান বিরক্ত হয়ে জেবুন্নেছার পাশ কেটে আসতে আসতে বলল “আমি ব্রিটিশ।”
ঘনঘন তালুকদার বাড়িতে আসা মোটেই ভালো দেখায় না। সুফিয়ান জানে। কিন্তু আজ আসতেই হত।তখন ফারদিনা রাগের মাথায় মিথ্যা বলেছে, রশীদ শহরে যায়নি।এখন যদি রশীদ তালুকদার তাঁর সামনে পড়ে কি জবাব দিবে? ভাবতে পারছে না।কোন জবাব দেয়ার মত শব্দ নেই। তাঁর প্রার্থনা ঝিলমিল সামনে পড়ুক।অন্য কেউ না।

সুফিয়ান ঘরের ভেতরে পা রাখতেই ঝিলমিল সামনে পড়ে। সেজেগুজে কোথাও যাচ্ছে মনে হল। সুফিয়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে ঢং করে বলল “এই রাতে তুমি?কি ব্যাপার?
সুফিয়ান আশেপাশে দেখল। বৈঠকখানায় কেউ নেই।আদিব এমন সময় ছাদে থাকবে। গতকাল থেকে আদিব চুপচাপ।বাকি তিন ভাইয়ের কথা বলা মুশকিল। সুফিয়ান এর জন্য সুবিধাজনক সময়। সুফিয়ান দৃঢ়তার সাথে বলল “ফারদিনা কোথায়?
“ক্যান,আমি কি কম সুন্দর নাকি,খালি ফারদিনা ফারদিনা করো ক্যান, চোঁখের সামনে আস্ত একটা সুন্দরী মাইয়া দাঁড়াই আছে, তোমার মনে অনূভুতি জাগতেছে না?

“তুই মোটেই সুন্দর না।বল ও কোথায়?আর ঐ ইংরেজ এর বাচ্চা কোথায়?
“তুমি সত্যিই পুরুষ তো? ঝিলমিল সুফিয়ান এর আর একটু ঘনিষ্ঠ হল!
“তোর কি আমার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে?
“একবার ও তো আমার দিকে চোখ তুইলা ভালো কইরা দেখতেছো না,বুঝি কেমনে?”
“ফারদিনাকে নিয়ে আয়,ওকে দিয়ে বুঝিয়ে দিব। তোকে দিয়ে রুচিতে আসছে না।”
“রাগ করতাছো কেন?
“মাথা গরম আছে।ফারদিনার কাছে নিয়ে চল”

“ফারদিনা অতিথিশালায় আছে।তোমারে নিয়া যাইতে পারি, কেউ দেখলে আমারে কিছু কইতে পারবা না।”
“আগে চল।” ফারদিনা অতিথিশালায় আছে শুনে সুফিয়ান এর মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। কিন্তু বহিঃপ্রকাশ করল না।কার উপর করবে? ঝিলমিল এর উপর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই।
আজমাত কিরগিজ ভাষায় ফারদিনার সাথে কথা বলছে।ফারদিনা আনন্দ পাচ্ছে।সে একটার পর একটা প্রশ্ন করছে।আর সেগুলো আজমাত কিরগিজ ভাষায় অনুবাদ করছে।ফারদিনা শেষ জানতে চেয়েছে “তুমি একটা মিথ্যাবাদী। আমার সাথে মিথ্যা বলেছো।” এটা কিরগিজ ভাষায় অনুবাদ কর। আজমাত বলেছে “সেন মেন মেনেন জালগান আইততিন”।

এটা সে শিখেছে সুফিয়ান এর জন্য। সুফিয়ান তাঁর সাথে দেখা করতে আসলেই এটা বলবে। সুফিয়ান তাঁর সাথে মিথ্যা বলেছে। কিছু লুকিয়েছে সে নিশ্চিত।আজমাত এর সাথে হেসে খেলে কথা বললেও তা নকল হাঁসি।ভেতরে একরাশ নিস্তব্ধা।
আজমাত লিখছিল আর কথা বলছিল। ফারদিনা হঠাৎ করে নীরব হয়ে গেছে। তাঁর নীরবতা দেখে আজমাত বলল “তোমার কোন কারণে মন খারাপ?
“ওর মন খারাপ কি-না তা জেনে তুমি কি করবে? সুফিয়ান এর কন্ঠ।ফারদিনা পেছন ঘুরল। আজমাত চোখ তুলে তাকাল।ফারদিনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সুফিয়ান এর সম্মুখে গিয়ে বলল “তুমি এখানে কেন আসলে?কেউ দেখে ফেলবে।আর আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না।” ফারদিনা মিথ্যা বলছে।বরং সকালে সুফিয়ান এর কাছ থেকে চলে আসার পর থেকে তাঁর মন বিষিয়ে আছে।

“তুমি তখন ওভাবে কেন চলে এসেছো?
“আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না।চলে যাও এখান থেকে”
“তুমি আজমাত এর সাথে এত রাতে এখানে কি করছো?
“সেসব আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।” বলে ফারদিনা অতিথিশালা থেকে যেতেই সুফিয়ান ফারদিনার হাতটা রাগ মিশ্রিত স্পর্শে ধরল।বলল “আমার কথা না শুনে যেতে পারবে না।আগে কথা শোনো আমার।” সুফিয়ান ফারদিনার হাত শক্ত করে চেপে ধরায় ফারদিনার হাত লাল হয়ে গেছে।ফারদিনা দেখল। যতক্ষণ না সুফিয়ান এর কথা শুনবে, সুফিয়ান তাঁর পিছু পিছু ঘুরবে। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।রাগ বা অভিমান কোনটিই নয়।ফারদিনা ধীর গলায় বলল “তুমি যাও,আমি আধঘন্টা পর শিমুল গাছের তলায় আসব।”

“সত্যি আসবে তো?
ফারদিনা ছোট্ট করে জবাব দিল “হুঁ।’
“তুমি না আসলে আমি ভুলভাল কিছু করে ফেলব।” বলে ফারদিনার হাত ছেড়ে একবার আজমাত এর দিকে দেখল। এরপর চলে যায়।
সুফিয়ান শিমুল গাছের তলায় বসে আছে। রাতের ঘণ্টা বারোটা বাজছে। চারপাশে নীরবতা। বাতাসে শিমুলের পাতার হালকা হেঁটে যাওয়া শব্দ। দূরে দূরে কিছু জ্বলন্ত আলোর কণার ঝলক, যেন অচেনা চোখ গোপন গল্প বলছে।

মাটিতে শিশির জমেছে, ঠাণ্ডা বাতাস তার গায়ে লাগছে। শিমুলের নিচ দিয়ে কাঁপন ধরেছে যেন বৃক্ষগুলোও তার ক্রোধ ও অবসাদ অনুভব করছে। দূরে কাঁকড়া ডাকার মতো দূর-দূরান্তের কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসে, মাঝেমধ্যে বাতাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও গভীর করে তুলছে।
কিছু গাছের ছায়া অদ্ভুত ভঙ্গিতে নড়াচড়া করছে, যা তার মনের অশান্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাসে মাটির ও শুকনো পাতার গন্ধ। সব মিলিয়ে রাতের এই নিঃশব্দ পরিধানে সুফিয়ান একাকী, ভাবনার ঘেরাটোপে নিজেকে হারিয়ে ফেলল।ফারদিনা আসছে না। বারবার তালুকদার বাড়ির ফটকের দিকে দেখছে।

সুফিয়ান এর কোমরে গুজে রাখা স্বর্ণের বাঁশি। বাঁশিটা হাতে নিল। চাঁদের আলো পড়ছে বাঁশির উপর। দূরে তাকিয়ে গভীর শ্বাস ফেলল। এরপর ঠোঁটে তুলে নিল বাঁশি। বাঁশির সুরে যেন ব্যথা প্রকাশ পাচ্ছে। মসৃণ কোন সুর নয়।রাতের মতই অন্ধকার।নীরব। নিস্তব্ধ।যেন এ সুর কারো কানে পৌঁছায় না।বিশেষ করে ফারদিনার কানে। সুফিয়ান থেমে গেল। চোখের কোণে জল। পুরোপুরি জল আসতে না আসতেই মুছে ফেলল।লোকে বলে পুরুষ এর চোখে জল মানায় না। পুরুষদের কাঁদতে নেই।কেন, পুরুষের কষ্ট হয় না, তাঁদের হৃদয় নেই! অবশ্যই আছে। তাঁদের কষ্ট আছে। এঁরা শুধু প্রকাশ করে না।

চোখের কোণ থেকে সোনালী আলো ভেসে আসার মত কিছু দেখা যাচ্ছে। সুফিয়ান তাকাল।ফারদিনা আসছে। চাদর মুড়ি দেয়া।হাতে লন্ঠন। সুফিয়ান স্বাভাবিক ভাবে হাসল।ফারদিনা কে দেখে সুফিয়ান দাঁড়িয়ে যায়।ফারদিনা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলল “সময় নেই,যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
“মিথ্যা বলছো, তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তোমার তাড়া নাই। আমার জন্য সবসময় সময় আছে তোমার।”
“আজ নাই”। লন্ঠন রেখে গাছের শেকড়ের উপর বসল ফারদিনা। সুফিয়ান পাশে বসে।বলল “তোমাকে লাল রঙের শাড়িতে সুন্দর দেখাইতেছে।”
“মিষ্টি কথায় আমি গলছি না।” ফারদিনার কন্ঠে রাগ নেই। সুফিয়ান বুঝতে পারল।বলল “রাগ কমেছে নিশ্চয়ই?
ফারদিনা মাথা নাড়িয়ে বোঝাল কমেনি।সুফিয়ান মৃদু কন্ঠে বলল “কমেছে।মেয়েরা মিথ্যা বলার সময় দৃষ্টি নত রাখে”

“ভুলভাল উক্তি। তোমার উক্তি তে আমি আর গলছি না।” ফারদিনা মুখ ঘুরিয়ে নিল।
সুফিয়ান বলল “তাহলে এসেছো কেন?চলে যাও। এরপর আমিও চলে যাব চিরদিনের জন্য।আর দেখা পাবে না আমার।”
“কতদিন তোমার সাথে এভাবে দেখা করব? ভাইয়েরা জানতে পারলে আস্ত রাখবে না আমায়।”
“যতদিন না তোমাকে আপন করে পাচ্ছি।”
“সে-ই সময়টা কবে আসবে?
“শিগগিরই কথা বলব তোমার আব্বার সাথে।”
ফারদিনা প্রসঙ্গ পাল্টে ফলল “তুমি ব্রিটিশ?
“আমাকে সেরকম দেখায়?
“ফুফু আব্বার কাছে তোমার নামে নালিশ করছে।উনি এখনো আব্বার ঘরে।সেই সুযোগে আমি এখানে এসেছি।”

“তোমার ফুফুর মাথায় সমস্যা আছে।আধা পা’গল।”
“সত্যিই পা’গল?
“হুম। সবসময় আমার পেছনে লেগে থাকে।কবে জানি ঠ্যাং ভেঙ্গে দেই।”
ফারদিনা সুফিয়ান এর কথা শুনে হেসে উঠল। হাঁসির সময়টা দীর্ঘ হয়। সুফিয়ান তাকিয়ে রইল।ফারদিনা থেমে বলল “তুমি কখনো কখনো অদ্ভুত কথা বলো।”
“তোমাকে হাসানোর জন্য।”
“আমার তো মনে হয়, এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলার ধরন তোমার র’ক্তে মাংসে মিশে আছে।”
“র’ক্তে মাংসে মিশে থাকলেই তা সবকিছু মনের ভেতর থাকে না। কিছু জিনিস মনের বাইরের হয়েও মনে জায়গা করে নেয়।”

“যেমন? ফারদিনা কিঞ্চিৎ অবাক হল।
“তুমি হঠাৎ করে,আমার জীবনে এসে আমার জীবনের এর রং পাল্টে দিয়েছো।”
“তুমি অতিতে কাউকে ভালোবাসতে?
“আমার দ্বিতীয় ও শেষ ভালোবাসা তুমি।”
“প্রথম কে? ফারদিনার বুকের ভেতর হঠাৎই চিনচিনিয়ে উঠল
সুফিয়ান নির্বিকার কন্ঠে বলল “আমার মা।”

The Silent Manor part 24

ফারদিনা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।বলল “তোমার মা বাবা খুব কম বয়সে তোমাকে একা ফেলে রেখে গেছেন। তোমার কষ্ট হয়। যেদিন আমি জানতে পেরেছি তোমার মা বাবা অনেক আগেই মা’রা গেছেন,সেদিন আমার তোমার কথা ভেবে খুব কষ্ট হয়েছে।”
সুফিয়ান ক্ষীণ কন্ঠে বলল “মা’রা যায়নি।মেরে ফেলেছে…..

The Silent Manor part 26

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here