The Silent Manor part 33

The Silent Manor part 33
Dayna Imrose lucky

মেহের সুফিয়ান এর দিকে একবার তাকিয়ে দ্বিতীয়বার রাঙার দিকে তাকিয়ে বলল “অশ্ব কিনলেন কবে?
সুফিয়ান বিপদে পড়েছে। বাইজি দের সাথে রাতে কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে মনে করল সে।বিশেষ করে ফারদিনা জানতে পারলে সুফিয়ান কে ভুল বুঝবে।সেদিন রাতে মদ্যপান করার পর মেহের তাঁকে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর শরীরে স্পর্শ করেছে,পা থেকে জুতা খুলতে দেখে ফেলাতে ফারদিনা রেগে গিয়েছিল। ঝিলমিল সুফিয়ান কে সে-ই কথা বলেছিল।ফারদিনাও তা জানে না।সুফিয়ান সতর্কতার সাথে চারদিকে তাকাল। মেহেরও চারপাশে তাকিয়ে বলল “কি দেখছেন?
সুফিয়ান হেঁয়ালিপূর্ণ ভাবে হেঁসে বলল “এমন সময় শয়’তান আশেপাশে ঘুরঘুর করে।তাই দেখছিলাম ওঁরা আদৌও আসল কিনা।”

‘শয়’তান কে কেউ দেখতে পারে?
“অবশ্যই পারে।এই যে আমি দেখছি।”
‘মানে?
“মানে হলো আপনারা এই সময়ে এখানে?আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাদের?
“সাহায্য তো অনেক ভাবেই করতে পারেন। আপাতত জল খাওয়ালে খুশি হব।”
সুফিয়ান সংকোচ বোধ করল। কিন্তু কেউ জল খেতে চাইলে খাওয়ানো উচিত। সুফিয়ান জল আনতে ঘরে গেল।জল খাওয়া নিয়ে সুফিয়ান একটা ঘটনা মনে পড়ল। তাঁর দাদার কাছ থেকে শোনা। চৈত্র মাসের রোদে পুড়ছে মাটি, আকাশে মেঘ নেই একটুও।পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এক ক্লান্ত ভ্রমণকারী।মুখ শুকিয়ে গেছে, ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। অসুস্থ ছিল বৃদ্ধা।সে থেমে দাঁড়াল এক ঘরের সামনে, গলা কাঁপতে ছিল তাঁর ক্লান্তিতে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘরের দিকে তাকিয়ে অচেনা কারো কাছে জল চাইল।ঘরের ভেতর থেকে এক গরিব লোক বেরিয়ে এলো।নিজের মাটির কলসিটা ছিল প্রায়ই খালি। যতটুকু জল ছিল তা তাঁর দরকার ছিল। তবুও সে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করল না।মাটির গ্লাসে তুলে দিল ঠান্ডা জল। বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে নাও ভাই, আল্লাহ্‌ তৃষ্ণা মিটিয়ে দিক।”
ভ্রমণকারী জলটা খেল, এক নিঃশ্বাসে। চোখ বুঁজে বলল, “আল্লাহ্‌ তোমাকে জান্নাত দিক।”
লোকটা হাসল, মনে মনে বলল“জান্নাত না দিক, কিন্তু যদি এ জল কারও প্রাণ বাঁচায়,তবে সেটাই আমার পুরস্কার হবে।”কিন্তু সে জানত না,এই তৃষ্ণার্ত পথিক ছিল এক ফেরেশতা, মানুষের ছদ্মবেশে পাঠানো।এবং তার সেই এক পেয়ালা জল তার নাম লিখে ফেলল জান্নাতের তালিকায়।
সুফিয়ান মাটির কলসি থেকে জল গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলল “এঁরা ফেরেশতা না। মানুষ রুপী শয়’তান। যাইহোক, অন্তত এখন জল খাইয়ে বিদায় করতে হবে। সুফিয়ান জল হাতে বাইরে বের হয়ে আসে। মেহের এর দিকে জলটা এগিয়ে দিল। মেহের জলটা নিতে নিতে বলল “বসতে বলবেন না।”

“আজ আপনারা লোক সংখ্যায় বেশি।ঘরে জায়গায় হবে না।”
মেহের হেসে বলল “আপনি ভালো কথা জানেন।”
“খা’রাপ কথাও জানি।যখন যেটা দরকার সেটাই ব্যবহার করি।” সুফিয়ান এর কথা শুনে মেহের শব্দ করে হাসল। তাঁর হাঁসি নিঃসন্দেহে সুন্দর। সুফিয়ান মেহের এর দিকে একবার তাকিয়ে দ্বিতীয়বার দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল। মেহের থেমে বলল “আপনি সত্যিই অসাধারণ।নয়ত ফারদিনার মত মেয়ে আপনার প্রেমে পড়ত না।”
“ফারদিনা সেরা কোন দিক থেকে?” সুফিয়ান যেন অজানার মত জানতে চাইল। মেহের স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল “রুপেগুনে, বুদ্ধিমত্তা,ধনসম্পত্তি,সবদিকেই সে সেরা।”
“কিন্তু আমার কাছে সে একটা গাধা।’
‘এমনটি মনে হওয়ার কারণ কি?

সুফিয়ান লম্বা শ্বাস ফেলে বলল “আজ ওর সাথে আমার দেখা হয়নি।সন্ধ্যার পরে শুধু দূর থেকে একবার দেখেছিলাম।চাইলেই কি একটাবার আমার কাছে আসতে পারত না’
“হয়ত তাঁর সুযোগ হয়নি।”
“এইজন্যই বলেছি গা’ধা। বুদ্ধিমতী হলে কোন না কোন ভাবে দেখা করতে আসত।”
‘ফারদিনা কখনো রাতে আপনার সাথে দেখা করেছিল’,গভীর রাতে?
‘হু কেন?
“ভালোবাসার টান।গভীর ভালোবাসা থাকলেই রাতে ঝুঁকি নিয়েও ছুটে আসা যায়।”
“বাঁশির সুরে ছুটে এসেছিল। প্রথমবার। ভালোবাসার টানে না।”
“আজকেও বাঁশির সুর ধরুন।চলে আসবে।’
“আসবে না।’
‘আসবে। মিলিয়ে নিবেন। যদি না আসে, আমার বাড়িতে এসে বলে যাবেন।আমি ভুল বলেছি। ঠিকানা নিশ্চয়ই সেদিন রেখে দিয়েছিলেন?’
“আপনি লিখে দিয়েছিলেন।’
‘জানতে চাইলেন না,এত রাতে এখানে কেন এসেছি?
“প্রশ্ন করেছিলাম তো”
“আজ একটা নিমন্ত্রণ ছিল।সেখানেই গিয়েছিলাম।পথে আপনার বাড়ি ছিল। ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই।”

“শুধু এইজন্যই?
‘ দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম। কখনো আপনাকে নিয়ে ভাবি না,লোকে বলে ভাবনা থেকে স্বপ্ন তৈরি হয় ঘুমের ঘোরে।”
“কি স্বপ্ন দেখেছিলেন?
“আপনার উপর কেউ আক্র’মণ করেছে। সেখানে আপছা আপছা বা’ঘ দেখেছিলাম।আর কিছু মনে পড়ছে না। ভাবলাম, মানুষটি ঠিক আছে তো? এইজন্যই আপনাকে দেখতে আসা।”
“আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য শুকরিয়া। আসলে আমি এতিম। আমার কখনো কখনো মনে হয় আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য বোধহয় কেউই নেই।”
“ফারদিনা আপনাকে নিয়ে যথেষ্ট ভাবে। আপনাদের প্রেম সফল হোক।এই কামনা রইল।আজ আসি। অনেক দেরি হয়ে গেছে ‌”
“এত রাতে আপনারা মেয়ে হয়ে এত দূরের পথে যেতে পারবেন?’
“কত রাত এভাবে পার করেছি। চিন্তা করবেন না।আসছি।”

সুফিয়ান দিঘীর পাড়ে অন্ধকারে কিছুক্ষণ বসে ছিল। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনেছিল।দূর থেকে ভেসে আসছিল শেয়াল এর ডাক।রাতের অন্ধকারকে মানুষ ভয় পায়। কিন্তু সুফিয়ান যেন অন্ধকারে নিজের ব্যথা গুলোকে একান্তে মনে করার চেষ্টা করছিল। কখনো কখনো নিজের সাথে কথা বলে। মা বাবার কথা মনে পড়ছে। ভীষণ। তাঁর মায়ের মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে বারবার। তাঁর আদর, যত্ন।মা বলে ডাকে না আজ বহুদিন।বাবা বলে ডাকতে পারে না। এতিম হওয়ার কষ্টটা বোধহয় দুনিয়ার সমস্ত কষ্টকে হার মানায়। সুফিয়ান এর মনটা বিষিয়ে উঠছে।টেবিলে বসে মোমবাতির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দুঃখকে কল্পনায় ভাসাচ্ছে।হাতে নিব কলম।কালির দোয়াতে ডুবাচ্ছে। কিন্তু কিছু লিখছে না।লেখার শক্তি যেন ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।শব্দ তৈরি করতে ভুলে গেছে। সুফিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। যদি কখনো প্রশ্ন করা হয় দীর্ঘশ্বাস কখন আসে? উত্তর হবে,কষ্ট, গভীর য’ন্ত্রণা থেকে দীর্ঘশ্বাস সৃষ্টি হয়। সুফিয়ান এর শ্বাস পড়ল মোমবাতিতে।অমনি মোমবাতিটা নিভে গেল। সুফিয়ান লুসিপার ম্যাচ দিয়ে মোমবাতিটা জ্বালাতে জ্বালাতে বলল “তুইও আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাসে নিভে গেলি। তাহলে বুঝতে পারছিস, ভেতরে কতটা চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেরাই! দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার জন্য যদি রাজ্যের রাজা হওয়া যেত, তাহলে আমিই হতাম দুঃখের রাজ্যের রাজা।

মোমবাতি জ্বালাল।দমকা হাওয়াতে নিভু নিভু করছে। দরজা খোলা। হাওয়া আসছে। সুফিয়ান দরজাটা বন্ধ করতে যাবে তখন চোখ পড়ল রাঙার দিকে।রাঙাও যেন সুফিয়ান এর মত একা।বড্ড একা। টেবিলের উপর রাখা বাঁশিটার দিকে চোখ গেল সুফিয়ান এর।বাঁশিটা নিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়। মেহের বলেছে বাঁশি বাজালে ফারদিনা আসবে।এটা হাস্যকর ব্যাপার। কেননা বাঁশির সুর ফারদিনা অবধি পৌঁছাবে না বলে মনে করল সুফিয়ান।আজ বাঁশি বাজাবে ঘরের বারান্দায় বসে।আজ সুর শুনবে শুধু রাঙা। সুফিয়ান বারান্দার খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বসে।ফারদিনার দেয়ার বাঁশিটা ঠোঁটে ছুঁয়ে নিল।আজ সুর আসছে। স্নিগ্ধ সুর। প্রকৃতি শুনবে। শুধু ফারদিনা শুনবে না। কষ্ট হচ্ছে সুফিয়ান এর। কষ্টের একটি অংশই যেন সুরের মাধ্যমে তুলে ধরল।

সুফিয়ান বাঁশির সুর থামিয়ে দিল।রাঙা হ্রেষাধ্বনি তুলল সাথে সাথে।ও যেন সন্তুষ্ট হয়েছে। সুফিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বলল “তোর নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে?আরেক দফা সুর তুলি,কি বলিস?
“অনুমতি চাইছো কেন,তোমার বাঁশির সুরে গোটা প্রকৃতিই মুগ্ধ হয়।” সুফিয়ান আকস্মিক হকচকিয়ে উঠল। কন্ঠটা ফারদিনার। তাঁর কন্ঠ ধরে সুফিয়ান ঘুরে তাকাল।সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে তাঁর দিকে দুটো ভয়ং’কর চোখ তাকিয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি ফারদিনা হতে পারে না। সুফিয়ান নিশ্চিত। রাত এখন একটা ছুঁই ছুঁই।এত রাতে ফারদিনা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। আজকাল তাঁর ভাইয়েরা তাকে বেশিই চোঁখে চোখে রাখছে। সুফিয়ান আন্দাজ করতে পেরেছে। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা চোখ দুটো গভীর রহস্যময় ‌। সুফিয়ান আড়ালে বলল “আজকের দিনে সব মেয়ে রুপী শয়’তান গুলো আমার পেছনে পড়েছে কেন? সুফিয়ান সমস্ত দোয়া একসাথে পড়তে শুরু করল। এরপর বারান্দা থেকে ঘরের ভেতরে যেতেই ফারদিনা তাঁর হাতটা ধরে ফেলল। সুফিয়ান থ’ হয়ে দাঁড়ায়। ধীরস্থির ভাবে পেছন ফিরে বলল ‘আপনি সত্যিই ফারদিনা?

ফারদিনা চাদরটা সরিয়ে ফেলল। কর্কশ শব্দে বলল “তুমি কি নাটক করছো আমার সাথে?
সুফিয়ান ঠিক ভাবে ফারদিনার দিকে ঘুরে বলল “তারমানে তুমি ফারদিনাই,মানে আমার বউ।”
“তুমি প্রথম আমাকে আপনি বললে কেন?
“এত রাতে, তুমি আসবে আমি ভাবতেও পারিনি। বিশ্বাস হচ্ছিল না।”
“কেন,এর আগে আমি আসিনি?
“বাঁশির সুর টেনে নিয়ে এসেছিল।”
“এসেছি তো‌।আজ অবাক হলে কেন?
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে,ঘরে এসো।বাইরে ঠান্ডা।”
ফারদিনা সুফিয়ান এর শোয়ার খাটে বসে। সুফিয়ান সম্মুখে বসল।ফারদিনার দু হাত ধরে বলল “তুমি এসেছো,আমি খুশি হয়েছি।চলো গল্প করি।’

“আগে বলো, আমাকে দেখে অবাক হয়েছিলে কেন?
“আসলে হয়েছে কি, আজকে তিনজন পেত্নির সাথে আমার দেখা হয়েছিল। ওঁরা চলে গেছে বেশ অনেক্ষণ।আর ওঁরা আমাকে একটা দুঃস্বপ্ন এর কথা বলে গেছে।তাই একটু একটু ভয় ভয় করছিল।মেয়ে মানুষ সব দিকেই ভ’য়ংকর।হোক ভূত, শয়’তান,পেত্নি। কিন্তু তুমি আমার হবু পত্নী।”
“হবুই কি থাকবো, নাকি চিরস্থায়ী হব?
“ভাগ্যে থাকলে হবে।”
“চেষ্টা তো করতে হবে।নয়তো ভাগ্য পরিবর্তন হবে না।”
“চেষ্টা করব। ভাগ্যে পরিবর্তন করে হলেও যদি তোমাকে পাওয়া যায়,তবে ভাগ্যে পরিবর্তন করার চেষ্টা করব। আল্লাহর কাছে দোয়া করব।”

ফারদিনা মাথা নুইয়ে ফেলল।চোখে জলের আগমন। সুফিয়ান ফারদিনার মন ভালো করার জন্য উৎফুল্ল হওয়ার চেষ্টা করল।বলল “আচ্ছা, তুমি এসেছো কিভাবে,এত রাতে একা বের হলে কিভাবে? মানে সুযোগটা করলে কিভাবে?
“ঝিলমিল আর কুদ্দুস।সে অনেক কথা।সময় কম।অন্য একদিন বলব। ঝিলমিল এসেছে। সাথে আরো দু’জন দাসী। এবং আজমাত।ওঁরা রাস্তায় নজর রাখছে।”
“আমি ভেবেছি বাঁশির সুরেই বোধহয় তোমাকে টেনে এনেছে।”
“তবুও শুনতে পেয়েছি।’
“তোমাকে দেখে নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে। তুমি ঠিক আছো তো?
“খেতে পারছি না।হয়ত চিন্তায়।”
“কিসের এত চিন্তা?
“তোমাকে পাব তো?

“পাবে তো নিশ্চিত।হয় একালে নয় পরকালে।” বলে সুফিয়ান হাসল। তাঁর হাঁসি রহস্যময় মনে হল ফারদিনার কাছে। কিঞ্চিৎ হতাশ কন্ঠে ফারদিনা বলল “পরকাল টেনে আনছো।বি’চ্ছেদের প্রথম শব্দ তুমিই তৈরি করলে।’
“শোনো’ সুফিয়ান নড়েচড়ে বসল। “বি’চ্ছেদ অর্থ কি তুমি জানো?
“একটা ছোট্ট বাচ্চাও বলতে পারবে।”
‘তবে বলো।’
‘কোন সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়াই বিচ্ছেদ।’

“না বোকা মেয়ে।সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া বিচ্ছেদ নয়। ভালোবাসা হয় দুটি আত্মার জোড়ায়।দুটি আত্মার একটি যদি বেইমানি করে তখন সে-ই সম্পর্কের নাম দেয়া হয় বি’ষাক্তময় সম্পর্ক।আর অন্য কেউ যদি তাঁদের সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলে, দুটি আত্মাকে দুদিকে টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে দেয় তবে সেটাই হচ্ছে বিচ্ছেদ। না চাইতেও বিচ্ছিন্ন হয় দুটি আত্মার মিলন।”
“আমারও ভয় হয় আজকাল। আমার ভাইদের এবং আব্বাকে নিয়ে।”
“তোমার আব্বা যথেষ্ট ভালো মানুষ।উনি উক্তি এবং যুক্তি দুটোই মানেন। জ্ঞানী মানুষ। আশাকরি আমার প্রস্তাব ফেলবেন না।”
“আমার মন সায় দিচ্ছে না।তাঁরা হয়ত মানবেন না আমাদের সম্পর্ক।”
“তুমি নিশ্চিত?

ফারদিনা মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে কাঁদো কাঁদো চোখে সুফিয়ান এর দিকে তাকাল। আজকাল তাঁর ভয় হচ্ছে সুফিয়ান কে নিয়ে।আজ ঝিলমিল এর কাছে সিরী এবং ফারহাদ এর অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী শুনে তাঁর ভয়টা আরো বেড়ে গেছে। সুফিয়ান কে যদি তাঁর ভালোবাসা পূর্ণতার পাওয়ার জন্য শর্ত দেয়া হয়?এমন শর্ত যেখানে সুফিয়ান হেরে যাবে,নয়ত হারিয়ে দেয়া হবে। ভীষণ রকম এর দুশ্চিন্তা তাঁর ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।ফারদিনার শান্ত মুখখানি দেখে সুফিয়ান তাঁকে হাসানোর চেষ্টা করল।বলল “তুমি বসো,আমি লন্ঠন আর মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে আসি।”

“কেন?
“তুমি যেন পূর্ণিমার চাঁদের মতই উজ্জ্বল। আমার অন্ধকার ঘর আলোকিত করার জন্য তোমার রুপই যথেষ্ট।”
“আমি যদি কুৎসিত হতাম? তাহলে এরকম ভাবে ভালবাসতে আমায়?
“সৌন্দর্য দিয়ে ভালোবাসা মাপা যায় না।তবে ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসার শুরু হয়।”
“আজ যদি কোন কারণে আমার রুপ নষ্ট হয়ে যায়? আগু’নে পুড়ে অথবা রোগে ভুগে?”
“তবু আমি তোমাকে আজকের মতই ভালোবাসব।শোনো রুপসী, প্রতিটি মানুষ এর একটি করে দুর্বলতা থাকে।আর আমার সে-ই দুর্বলতা হচ্ছ তুমি।”

“আর তুমি আমার ভরসা।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, বিশ্বাস করি। আমার আব্বার পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বস্ত হাত হিসেবে তোমার হাতটিই ধরতে চাই। যদি মৃ’ত্যু মানুষের হাতে হওয়ার নিয়ম থাকত। তবে আমি আমার মৃ’ত্যু তোমার হাতেই চাইতাম। সে-ই তুমি আমাকে কখনো ধোঁকা দিলে তা সহ্য করতে পারব না।”
“আমার সামনে কখনো নিজের মৃ’ত্যু চেও না। শুনলে ভেতরটা পু’ড়ে মেয়ে।চলো বাইরে হাঁটি।”

রাতটা তীব্র শীতের। চারপাশে হালকা কুয়াশা নেমে এসেছে। দূরের ক্ষেতের ধান গুলো চাঁদের আলোয় রুপালি ঢেউ তুলেছে,যেন মাটির বুকেও আলো ফুটে উঠেছে। সরু মাটির পথটি সাদা কুয়াশার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে কোথাও। চারদিক নিস্তব্ধ শুধু মাঝে মাঝে শীতল হাওয়ায় ধানগাছের পাতার মৃদু খসখসানি শোনা যায়।
চাঁদের আলো কুয়াশার ফাঁক দিয়ে নেমে এসে পথটাকে রুপার ফিতে বানিয়ে দিয়েছে। পায়ের নিচে শিশিরে ভেজা ঘাস ঠান্ডা লাগছে। ঘাস গুলো মখমলের মত। ভেজা কাঁদার গন্ধ আসছে।সুফিয়ান এর বা পাশে ফারদিনা দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনছে। ঝিলমিল,আজমাত দূর থেকে দেখছে ফারদিনা আর সুফিয়ান কে। ঝিলমিল চেঁচিয়ে বলল “ফারদিনা,তোর রা’ক্ষুসে ভাই গুলা আইলো বলে।তোর সাথে সাথে আমারেও শুঁটকি বানাইবো। তাড়াতাড়ি চল।”

সুফিয়ান লম্বা সুরে জবাব দিল “তুই এমনিতেই শুঁটকি,আর একটু নাহয় হবি।এতে দো’ষের কি”
ফারদিনা হেসে ফেলল। সুফিয়ান বলল “এখন বলো,তো কিভাবে সুযোগ বের করলে?
“রাতে ঘুমানোর আগে সবার দুধের সাথে জয়ফল এর গুঁড়া মিশিয়ে দিয়েছে। ঝিলমিল। কুদ্দুসও একাজে সাহায্য করেছে।তবে ওকে বোকা বানিয়েছি।”
সুফিয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।ফারদিনা নির্বাক গলায় বলল “তুমি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো তো?
সুফিয়ান মোহময় কন্ঠে বলল “আমি তোমার বিন্দু মাত্র ভালোবাসার জন্য সিন্ধু তৈরি করতে পারি। সে-ই আমি তোমাকে মিথ্যে ভালোবাসায় জড়াই কিভাবে?

The Silent Manor part 32

“কিভাবে মানে?ঘর থেকে এত রাতে বের হয়েছে,আর তোরা বলছিস কিভাবে বের হয়েছে জানি না?” রায়ান ক্ষিপ্ত মেজাজে বাড়ির অনুচারীদের প্রশ্ন করল। ওঁরা জবাব না দিতে পেরে ভয়ে চুপসে গেল।রায়ান এবং সায়েম ঘুমোয়নি।দুধ খেলে এমনিতেই ঘুম হয় তাঁরা জানে। দরকারি কাজের জন্য দুই ভাই জেগে ছিল।রায়ান ফারদিনার অসুস্থতার কথা চিন্তা করে কিছুক্ষণ আগে তাঁর ঘরে গিয়েছিল।ফারদিনাকে ঘরে না পেয়ে তার মেজাজ গরম হয়ে উঠে।সায়েম বলল “চলো ভাই, সবাইকে নিয়ে বের হই।আজ ওর কর্মকাণ্ড হাতেনাতে ধরতেই হবে। পাখনা গজিয়েছে ওর।_

The Silent Manor part 34

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here