The Silent Manor part 34

The Silent Manor part 34
Dayna Imrose lucky

ঊনষাট মিনিট পাড় হয়ে গেছে।আকাশের চাঁদ তারারা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। প্রকৃতি আপছা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক মডেল পাঁচশ টেলিফোনটি ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠল।আহির,মীর,রাফিদ তিনজনই ফোনের শব্দে বইয়ের, বাস্তব নামক কল্পনার রাজ্যে থেকে বেরিয়ে আসে। মাঝরাতে ফোন কেউ ফোন করা মানে আতঙ্কগ্রস্ত সৃষ্টি করা। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ দরকার।আহির ফোনটি রিসিভার থেকে তুলে নিল। ধীরস্থির কন্ঠে সালাম দিল। ফোনের ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিল তাঁর সহকারী অরুণ।বলল “স্যার, মিলনের ব্যাপারে আরো একটি তথ্য জোগাড় করতে পেরেছি।শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।’

“ডিটেকটিভ এর কাজই অবাক হওয়া।এখন বলো কি জোগাড় করেছো?
“স্যার,মিলন কে খু’ন করার আগে ইথার দেয়ার চেষ্টা করেছিল তাঁকে। কিন্তু মিলন পুরোপুরি অচেতন হয়নি।কেননা ইথার যতটুকু পরিমাণে দেয়ার দরকার ছিল যতটুকু দিতে পারেনি। এরপরই হয়ত তাঁকে এলোপা’থাড়ি ছু’রির আঘা’তে মে’রে ফেলেছে।’
আহির চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল ‘গুড,আমরা শীঘ্রই এই খু’নিকে খুঁজে বের করব।আর কিছু জানতে পেরেছো?”
“না স্যার। তারপরও চেষ্টা করছি আরো গভীরে যাওয়ার।’
“দেখো,বেশি গভীরে যেতে গিয়ে আবার তুমিই ডুবে যেও না।”
অরুণ এর হাঁসির শব্দ শোনা গেল।বলল ‘কি স্যার, যতক্ষণ আপনি আছেন, ততক্ষণ আমিও ভেসে আছি, এবং থাকব।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আচ্ছা,লাইন কেটে দিচ্ছি। সাবধানে থাকবে।আর যখনই যা জানতে পারবে, আমাকে সাথে সাথে জানাবে।” আহির এর কন্ঠে যেন আদেশের সুর।
আহির ফোনটি রেখে দেয়। পরিবেশটা আশ্চর্যজনক নিস্তব্ধ।রাফিদ বলল “পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলো পড়ে ফেল তাড়াতাড়ি। ঘুমঘুম পাচ্ছে।” আহির মীর এর দিকে তাকাল।মীর তাঁর বা হাতের কনুই চেয়ার এর হাতলে রেখে হাতের ভাঁজের উপর থুতনির ভর রেখে দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটির দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ তাঁর বইয়ের দিকে থাকলেও সে তলিয়ে আছে ভাবনার জগতে।আহির মীরের অভিব্যক্তি দেখে বুঝতে পারল।সে কিছু ভাবছে।তাঁর ভাব-ঘিরে প্রশ্ন করল “কি ভাবছিস তুই?”

মীর শুনেনি প্রথমবার আহির এর প্রশ্ন। দ্বিতীয়বার বলল ‘এই মীর,কি ভাবছিস?”
মীর অস্পষ্ট ভাবে বলল ‘ফারদিনা।’ থেমে আবার বলল “আমি ভাবছি ফারদিনার ভাই গুলো এতটা নিষ্ঠু’র কেন? ওঁদের হাতে কি সেদিন ফারদিনা আর সুফিয়ান ধরা পড়ে গিয়েছিল? তাঁর ভাইয়েরা কি করেছে তাঁদের সাথে কি করেছে?কেনই বা তাঁদের প্রেম অসম্পূর্ণ ছিল? আমার তো ভয় করছে।শুনেই ভয় করছে, না জানি তাঁদের কি হয়েছিল।” মীর এর মুখে হালকা আ’তংকের ছায়া নেমে এল।আহির বলল “হুম। তাঁদের কথা ভেবে আমার ভেতরে কেমন একটা উদ্ভ্রান্ত ঝড়ের মত স্রোত বইছে।কি হয়েছিল এর শেষ পরিণতি!’
রাফিদ বলল “এর শেষ কি হয়েছে, সে-ই অজানা রহস্য উন্মোচন তুই করবি।”
‘আমিত ভাবছি, কিভাবে কি করব? মাথায়ই ঢুকছে না।এই প্রথমবার কোন সত্য উদঘাটনে আমার মস্তিষ্ক যেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।”

“ডিটেকটিভ হয়ে এই কথা বলছিস? মীর জিজ্ঞেস করল।
“আমি সুফিয়ান কে নিয়ে ভাবছি।ওই হায়’না গুলো তাঁকে কিছু করল না তো!’ রাফিদ বলল।
‘করতেই পারে।ফারদিনার ভাইয়েরা সংস্কার খুব ভালো মানত। রীতিনীতি মেনে চলত।ওদের পথ ভুল ছিল, কিন্তু তখনকার সময়ে এই পথই যেন সঠিক ছিল ওদের কাছে।’ আহির বলে বইটি হাতে নিল।
রাফিদ মীর এর রেশ টেনে বলল ‘আমার তো মনে হচ্ছে,ফারদিনার চার ভাই হয়ত সুফিয়ান কে মে’রে ফেলেছে। সাথে ফারদিনাকেও।”

মীর বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল “কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তাঁরা এখনো বেঁচে আছে।”
আহির বলল “আমাকে যে এই বইটা পড়তে বলেছে,সে শুধু রশীদ তালুকদার এর কব’র দেখিয়েছিল।আরো অনেকের। কিন্তু ফারদিনা আর সুফিয়ান এর কব’র ছিল না।এর মানে হয়ত তাঁরা বেঁচে আছে।”
মীর ধীর পায়ে পায়চারি করতে করতে বলল “বেঁচে থাকলে কোথায় আছে?
“সেটা আমরা বইটি শেষ করলেই বুঝতে পারব।যে প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে না, তাঁর উত্তর আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।” আহির বইটির পৃষ্ঠা উল্টাল।মীর চেয়ারে বসে।আহির গম্ভীর মুখে বলল “পরবর্তী পর্ব গুলো আমি পড়তে পারছি না।’ মীর এর দিকে বইটি এগিয়ে দিয়ে বলল “তুই বাকিটুকু পড়ে ফেল।”
মীর আনন্দের সাথে বইটি নিল।যেন তাঁকে খুশি করার জন্য বিশেষ কিছু উপহার দেয়া হয়েছে।বলল “ফারদিনা আর সুফিয়ান এর সম্পর্কের ইতি আমি টানব।” বলে নিঃশব্দে হাসল। রাফিদ বলল ‘তোর আনন্দ হচ্ছে,আর আমার তাঁদের কথা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
“তুই তোর পা গরম করার ব্যবস্থা কর।আমি বইটি ততক্ষণে শেষ করছি‌।”

দূর থেকে একাধিক লন্ঠন এর আলো দেখা গেল। একাধিক লোকের শরীরের দোল দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বেশ ক’জন লোক হাঁটছে। ঝিলমিল দেখল তাঁদের।ফারদিনার ভাইদের সন্দেহ করে ফারদিনার কাছে দৌড়ে চলে আসে।বলল “মনে হচ্ছে তোর ভাইয়েরা আসছে।এখান থেকে চল।’
ফারদিনা এবং সুফিয়ান ঝিলমিল কে ছেড়ে দূরে পথের দিকে তাকাল। একাধিক লোকগুলো এদিকেই আসছে। সুফিয়ান নিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল “তোমার দুই ভাই,আর অনুচারীগন আসছে।এক কাজ করো, তুমি আর ঝিলমিল আমার ঘরের ভেতরে লুকিয়ে পড়ো।” আজমাত বলল “আমাকে দেখলেও তো সন্দেহ করতে পারে”
“ওদের কাজই হচ্ছে সবাইকে সন্দেহ করা।”

“তাহলে আমিও তোমার ঘরে চলে যাই? আজমাত এর প্রস্তাব। সুফিয়ান কপাল কুঁচকে ফেলল।এক ঘরের মধ্যে আজমাত আর ফারদিনাকে পাঠাবে না।যদিও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ঝিলমিল আছে। কিন্তু ভরসা করতে পারল না।আজমাত ফারদিনার দিকে তাকাবে। যতক্ষণ ফারদিনার ভাইয়েরা এই পথ অতিক্রম না করবে তাঁরা ঘরের মধ্যে থাকবে, এবং আজমাত ফারদিনাকে দেখবে। সুফিয়ান এর এটা ভেবেই সহ্য হচ্ছে না।বলল “তুমি ধান ক্ষেতের মধ্যে চলে যাও।ওঁরা যতক্ষণ না যায় তুমি বেরোবে না।”
“আমি আর ধানক্ষেত?
“অসুবিধে কোথায়! জলদি যাও।ওঁরা চলে আসছে।”
ফারদিনা বলল “তুমি কি করবে?

সুফিয়ান আলসে ভেঙ্গে বলল “আমিও তোমার ভাইদের সাথে তোমার বিরুদ্ধে তালে তাল মিলাব।যাও।” ফারদিনা ঝিলমিল সুফিয়ান এর ঘরের দিকে চলে যায়। আজমাত সুফিয়ান এর কথামতো ধান ক্ষেতের মধ্যে চলে যায়। সুফিয়ান পকেট থেকে সিগার বের করল।ম্যাচ দিয়ে ধরিয়ে পায়চারি করতে করতে টানতে শুরু করল। ততক্ষণে রায়ান এবং সায়েম সুফিয়ান এর কাছাকাছি চলে আসে।সুফিয়ান তাঁদের দেখেও না দেখার ভান করে উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করল।
রায়ান সুফিয়ান এর কাছে এসে দাঁড়ায়। সুফিয়ান তাঁর দিকে তাকাল।এত রাতে তাঁদের দেখে অবাক হওয়ার নাটক করল।বলল “তোরা এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস?

রায়ান বিস্ফারিত চোখে জবাব দিল “ফারদিনা ঘরে নেই,আজকাল ও রাত বেরোতে কোথাও যাচ্ছে। গ্রামের লোকজন যদি এসব জানতে পারে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস! তোকে বিশ্বাস করি বলে তোর কাছে বললাম।”
“সাংঘা’তিক বিষয়। কিন্তু কোথায় যেতে পারে?’ সুফিয়ান এর অভিনয় হচ্ছে।জেনেও না জানার ভান ধরার অভিনয় এ তাঁকে বেশ মানাচ্ছেও।রায়ান বলল “তুই এত রাতে বাইরে কেন?
“আমার ঘুম আসছিল না।তাই ঠান্ডা হাওয়া সাথে চাঁদনী রাত উপভোগ করছিলাম।”
“তুই ফারদিনাকে আশেপাশে কোথাও দেখেছিস?
সায়েম জিজ্ঞেস করল। এরপর আশেপাশে তাকাল।
সুফিয়ান বলল “কিছুক্ষণ আগে ঘর থেকে বের হতে হতে ঐ দিকে কাউকে যেতে দেখেছিলাম।’ হাত দিয়ে ভুল পথের দিকে দেখিয়ে দিল।

“কিন্তু,ফারদিনা সে কিনা,তা নিশ্চিত নই।’
“তুইও চল আমাদের সাথে।আজ যদি ওকে হাতেনাতে ধরতে পারি, তাহলে জ’বাই করে ফেলব।’ বলল সায়েম। তাঁর মুখে এমন কথা শুনে সুফিয়ান এর রাগ উঠল। প্রচন্ড। হাতের মুষ্টি শক্ত করল।রাগ কে প্রকাশ করল না।বলল “নিজের বোনকে জ’বাই করতে হাত কাঁপবে না? সুফিয়ান স্বাভাবিক কন্ঠে বলল।
রায়ান বলল ‘ সংস্কার এর বাইরে গেলে বেঁচে থাকার অধিকার থাকে না। সম্মানটাই আগে। মানসম্মান একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না।”

“কারো জীবনের থেকে সম্মান আগে না।”সুফিয়ান বলল।
সায়েম আঙ্গুল তুলে কিছু বলতে চাইল।রায়ান বাঁধা দিয়ে বলল “এসব নিয়ে কথা বলতে আসিনি।চল, ওদিকে যেয়ে দেখি।” বলে সুফিয়ান এর কাছ থেকে তাঁর দেখানো পথের দিকেই চলে গেল। সুফিয়ান তাঁদের যাওয়ার পানে দেখতে দেখতে বলল “আমার ফুলকে যদি ঝড়ে ফেলিস,তবে তোদের জানই কেড়ে নেব।’ বলল তিক্ত স্বরে।
আজমাত ক্ষেত থেকে থেকে বেরিয়ে আসে।সে বেশ হাঁপাচ্ছে। সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল “তুমি হাপাচ্ছ কেন? মানুষ দৌড়ালে হাপায় আর তুমি বসে থেকে হাপাচ্ছ?

“আমি মশার কামড় খেয়ে শেষ।শরীরের সবটুকু র’ক্ত ওঁরা ছিনিয়ে নিয়েছে।”
“আহ্ তোমার ভাষায় শেষ কথাটুকু অনুবাদ করো তো? সুফিয়ান আজমাত এর কাঁধে বন্ধুসূলভ হাত রেখে বলল। আজমাত বলল “মেনিন দেনেমদাকি বার্দিক কাণিঁরদি আলার তার্তিপ আলিশ্তি”
সুফিয়ান তাঁর কথা শুনে হাসল। ততক্ষণে ফারদিনা আর ঝিলমিল চলে আসে। ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল “তাঁরা কি সত্যিই ফারদিনার ভাইয়েরা ছিল?আমিত আন্দাজ কইরা কইছিলাম।”

“হুম।আমি ভুল পথ দেখিয়ে দিয়েছি। ওঁরা ওদিকে গেছে।তোমরা চলে যাও।” সুফিয়ান বলল। আজমাত সুফিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল “তোমরা আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করো না। তোমার যদি ফারদিনাকে নিজের করে নেয়ারই হয়,তবে শিগগিরই কিছু কর।দরকার হয় তোমার হবু শশুর এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাও।”
সুফিয়ান কিছু বলছে না।নীরব হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পা দিয়ে ঘাসের উপর আঘা’ত করল।ফারদিনা সুফিয়ান এর দিকে এগিয়ে এল। “তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো? আমার তো মনে হচ্ছে না তুমি আমাকে ভালোবাসো। কতদিন থেকে আমি বলছি, আমাকে দূরে হয় নিয়ে চল,নয়ত আব্বার সাথে কথা বলো।”
ঝিলমিল ফারদিনার মুখের কথা কেড়ে বলল “হুঁ ঠিকই কইছো,আমারতো তাঁরে অহন বিশ্বাস ই হইতেছে না।তোরে ব্যবহার করছে।” সুফিয়ান রাগে ঝিলমিল এর দিকে তাকাল।বলল “তুই অনেক বেশি কথা বলিস।”
ফারদিনা দ্বিধা নিয়ে বলল “আমার আবদার এর দাম দিচ্ছ না। তোমার ইচ্ছে নেই আমাকে নিজের করে নেয়ার।”
সুফিয়ান বলল “আমি আগামী সপ্তাহে তোমার আব্বার সাথে কথা বলব।”

“এতদিন অপেক্ষা কেন?
সুফিয়ান সময় নিয়ে বলল “কিছু দেনাপাওনা আছে। সেগুলো মিটিয়ে দিলে ঝামেলা শেষ।”
“কিসের দেনাপাওনা?
“গ্রামের কিছু লোক আমার কাছে টাকা পাবে। কিছু বর্গা জমি আছে। আমার চারজন খাস কৃষক এর পারিশ্রমিক।কারো দেনাপাওনা পরিশোধ না করে পালাতে নেই।”
“পালাবে মানে?
সুফিয়ান হেসে বলল “আরে গা’ধা মেয়ে, তোমার আব্বা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন এটা আমার বিশ্বাস। তিনি চাইবেন তোমার ভাইদের মানাতে।যদিও তোমার ভাইয়েরা অবাধ্য।কখন কি করে বসে বলা যায় না,হয়ত তোমাকে নিয়ে পালাতেও হতে পারে। তখন পাওনাদাররা আমাকে পাবে না,বলে অভিশা’প দিবে। নিশ্চয়ই অভি’শাপ আমাদের ভালো থাকতে দিবে না।বুঝেছো?”

“বুঝেছি।” ফারদিনা নীরব কন্ঠে জবাব দিল।
সুফিয়ান চারদিকে তাকাল।বলল“এখন চলে যাও। তোমার ভাইয়েরা চলে আসবে।”
ঝিলমিল আজমাত আগে আগে হেঁটে যাচ্ছে।ফারদিনা ওদের থেকে কিছুটা পেছনে।যেতে যেতে কয়েকবার পেছনে তাকাল।প্রতিবার তাঁর আশা ছিল সুফিয়ান বোধহয় তাকে দেখছে। কিন্তু না, সুফিয়ান পথে নেই।বাড়ির ভেতরে চলে গেছে।ফারদিনার কাছে বিষয়টি অসন্তোষ লাগল।সে এত রাতে ছুঁটে এসেছিল সুফিয়ান এর জন্য। কিন্তু সুফিয়ান অন্যদিন এর মত আজ তাঁর যাওয়ার পানে দেখছে না।ফারদিনা পথের মাঝে থমকে দাঁড়ায়। উদ্বেগ প্রকাশ করল। আজকাল ঝিলমিল এবং সুফিয়ান এর অভিব্যক্তি মিলিয়ে তাঁর মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।অথচ বহিঃপ্রকাশ করতে পারছে না।

ঝিলমিল দেখল ফারদিনা দাঁড়িয়ে আছে।ও বিরক্ত কন্ঠে ডাকল ফারদিনাকে।ফারদিনা আর কিছু ভাবতে চাইল না। ঝিলমিল এর সাথে হাঁটছে শুরু করল। ঝিলমিল ঘাড় হালকা ঘুরিয়ে ফারদিনাকে জিজ্ঞেস করল “কি ভাবতেছো?
“ভাবছি, সুফিয়ান এর আদৌও আমাকে নিজের করে নেয়ার ইচ্ছা আছে?

“সে আদৌও তোরে ভালোবাসেতো! তাঁর চোখ মুখে না আছে তোকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, না আছে হারানোর ভয়।”
আজমাত বলল “আমার সুফিয়ান কে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।সে ফারদিনাকে সত্যিই ভালোবাসে।আজ থেকে কিছুদিন আগে ফারদিনার দেখা না পেয়ে প্রায়ই পা’গলের মত আচরণ করছিল।সে তোমাকে ভালোবাসে। তবে কাউকে ভালোবাসলে, ভালোবাসার মানুষটিকে যত দ্রুত সম্ভব নিজের করে নেয়া উচিত। যাতে হারিয়ে না যায়।”
রাত গভীর, চাঁদ সাদা আলো ছড়াচ্ছে নীরবতার ওপর। চারপাশে কুয়াশার মতো মৃদু আভা, বাতাসে ঠাণ্ডা ঝাপটা। গাছের পাতার হালকা কড়মড় শব্দ শুধু শোনা যাচ্ছে।যেন রাতও নিস্তব্ধ নয়।মহল ঘরের জানালা দিয়ে ফেলে আসা চাঁদের আলো মেঝের উপর নরম ছায়া তৈরি করেছে।বাড়ির উঠোন থেকে পোষা কুকুর এর ডাক ভেসে আসছে। সাথে পাখির নিঃশব্দ কিচিরমিচির শব্দ। গ্রামের রোশনি ধীরে ধীরে নিভে আসছে।

শেষ রাত যেন একান্তে ভেবেচিন্তে সব কিছুর সমাপন ঘটাচ্ছে, নতুন দিনের আগমনের অপেক্ষায়।ফারদিনা মহল ঘরের বারান্দায়। ঝিলমিল তখন বুদ্ধি,দিয়েছে ‘তোর ভাইয়েরা খুঁজতে খুঁজতে মহলঘরে আইবো। সচরাচর তুই মহলঘরে আসোছ না। কিন্তু আজ তোর ঘুম আইতে ছিল না।তাই আইছোছ। এইডা কবি। সাথে আমিও আছিলাম তোর সেবা করার লইগা।’ ঝিলমিল এর বুদ্ধি মত ফারদিনা মহলঘরেই বসে রইল। মিনিট দশেক পর উঠে খাটের উপর শোয়। ঝিলমিল এর কাজ আছে বলে কোথাও গেছে।ফারদিনা ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে শুয়ে পড়ে।ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিলেও ঘুম আর পরিপূর্ণ হয়নি। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাওয়ার আগেই আরিব, সায়েম, এবং রায়ান সহ কিছু অনুচারী মহলঘরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে।

রায়ান বিদ্যুৎগতিতে ছুটে এসেই ফারদিনার চুলের মুঠি ধরে শোয়া থেকে তুলে উঠায়।কোন কিছু না বলে ফারদিনার ডান গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসায়।ফারদিনা ছিটকে খাটের কর্নারে পড়ে যায়।খাটের সাথে মাথা ঠুকল ফারদিনার।ফলে চুলের মধ্যের অংশ খানিকটা পরিমান কেটে যায়।সায়েম দ্বিতীয় বার তুলে বলল “সুফিয়ান এর সাথে তোর সর্ম্পক। আগেই সন্দেহ করছিলাম। সুফিয়ান ভুল পথ দেখিয়েছে, তখনই আমরা তোকে ওর ঘর থেকে বের হতে দেখেছি। কিন্তু আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম তোরা কি করছিস।রাত্রিযাপন করিস পর পুরুষের সাথে, ছিঃ। একটাবার আমাদের সম্মান, সংস্কার এর কথা ভাবলি না?”

ফারদিনাকে কোন জবাব দিতে দিল না। তাঁর গলা টিপে ধরে খাটের উপর শুইয়ে দেয়।ফারদিনার দম বন্ধ হয়ে আসছে। জিহ্বা বেরিয়ে আসছে। অনুচারী গুলো তাঁদের নি’ষ্ঠুর কর্মকাণ্ড দেখে একে অপরের সাথে চাওয়াচাওয়ি করল।রায়ান সায়েম কে সরিয়ে দিতে দিতে বলল “কি করছিস,ম’রে যাবে!ছাড় ওকে।’ রায়ান সায়েম কে সরিয়ে ফেলল।ফারদিনার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।রায়ান ফারদিনাকে উঠে বসিয়ে দিল।ফারদিনার গাল ধরে ডাকল “ফারদিনা,চোখ খোল।কথা বল।’ ফারদিনা চোখ মেলল না।ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল।ঢলে রায়ান এর বুকে পড়ল।রায়ান ফারদিনার নাড়ি পর্যবেক্ষণ করে বলল “জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তুই অতিরিক্ত করে ফেলেছিস” সায়েম কে বলল।
সায়েম রাগে ফেটে বলল “ম’রুক ও। কিন্তু এখন কি করবে? ওকে পাখির মত উড়তে দিলে সব শেষ করে ফেলবে। সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই কিছু করো।”

The Silent Manor part 33

রায়ান সেকেন্ড কয়েক চুপ করে থাকল। এরপর গম্ভীর মুখে বলল “ওকে অন্ধকার বন্দিশালায় নিয়ে যাব।সেখানে বন্দি করে রাখব।দিনের আলো ফুটলেই গোপনে একজন হাকিম কে ডেকে ওর চিকিৎসা করাতে হবে।”
“সুফিয়ান যদি জিজ্ঞেস করে ও কোথায় তখন কি বলবে?
“ওর ব্যবস্থা পড়ে করছি।কৌশলে ওকে শেষ করতে হবে।ততদিন ফারদিনাকে বন্দি রাখতে হবে।”

The Silent Manor part 35

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here