The Silent Manor part 37

The Silent Manor part 37
Dayna Imrose lucky

বিকেলের রোদটা আজ অদ্ভুত ম্লান। তালুকদার বাড়ির পুরোনো ছাদের কার্নিশে সোনালি আলোটা গিয়ে লুটিয়ে পড়েছে। হালকা বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে বাগানপথ পেরিয়ে ছাদে, ঠিক সেখানে বসে আছে ফারদিনা একলা।অন্যমনস্ক।
সুফিয়ান কোথাও চলে গেছে আজ সাতটি দিন।
সাত দিন আগে সুফিয়ান বলেছিল,

“আমি একটা কাজে যাচ্ছি, দু’দিন পরই ফিরব। তোমার জন্য বিয়ের বেনারশি নিয়ে ফিরব।’
তখন সে হেসে বলেছিল, “তোমাক ছাড়া এ ক’দিন কিভাবে থাকব!’
সুফিয়ান মৃদু হেসে বলেছিল ‘বিয়ের কণে, বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।
এরপর সে চলে গিয়েছে নদীপথে।সাথে ছিল তাঁর প্রিয় অশ্ব।রাঙা।তারপর থেকে কেটে গেছে দীর্ঘ সাতদিন।
প্রতিদিন বিকেল নামলে ফারদিনা ঠিক এই ছাদেই বসে,তাকিয়ে থাকে পশ্চিম আকাশের দিকে।দূরে নদীর দিকটায় যখন সূর্য ডুবে যায়,মনে হয় তখন এই বুঝি আর একটি দিন পাড় হল। সুফিয়ান এর ফেরার সময় বুঝি হয়ে গেছে।হয়ত ফিরেই এসেছে। কিন্তু না!সে ফিরছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সন্ধ্যা নামছে।ফারদিনা এক রকম উদাসীন ভঙ্গিমাতে বসেই আছে।চুলে লেগে থাকা কুয়াশা, চোখে হালকা আর্দ্রতা, আর হৃদয়ে এক অজানা শূন্যতা,সব মিলিয়ে যেন এই বিকেলটিও সুফিয়ান এর অপেক্ষায় ক্লান্ত।নিচে উঠোনে দাসীরা পানের বাটা সাজাচ্ছে, হালকা হাসির শব্দ উঠছে, অথচ ফারদিনার মনে কোনো সাড়া নেই।চন্দনের গন্ধ মিশে যাচ্ছে সন্ধ্যার আলোয়, কিন্তু তার বুকের ভিতরটা নিঃশব্দ।
সাত দিনের এই প্রতিটি বিকেল যেন একেকটা দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।সে ভাবে,সুফিয়ান হয়তো কোনো দূর শহরে আটকে গেছে, হয়তো কোনো চিঠি আসবে আজ কিংবা কাল। কিন্তু তাঁর অপেক্ষা বৃথা।কোন চিঠি আসেনি।
সব কিছু আগের মতোই নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।যখন সুফিয়ান তাঁর জীবনে ছিল না ঠিক সে-ই সময়ের মত।তখন সে ছিল বড়ই একা।সূর্য অস্ত যায়,আলো ফিকে হয়ে আসছে।ফারদিনা উঠে দাঁড়ায়, শাড়ির আঁচলটা বাতাসে উড়ল।তার চোখে শুধু একটাই প্রশ্ন

“সুফিয়ান, তুমি ফিরছো না কেন?”।
আজ থেকে সাতদিন আগেও সে সেজে গুজে থাকত। কপালে কালো টিপ,পায়ে আলতা,নূপুর,চোখে থাকত কাজল। তাঁর সৌন্দর্য বহিঃপ্রকাশ এর একমাত্র কারণ ছিল সুফিয়ান।আজ সুফিয়ান নেই বলে সে সাজেনি।কপালে টিপ পড়েনি।চোখে কাজল দেয়নি।পায়ে আলতা দেয়নি।শোকের ছায়া তাঁর হৃদয় ছেড়ে বেরিয়ে আসছে যেন।
‘তোমার জন্য বিয়ের বেনারশি আনতে যাচ্ছি।ফিরে এসে তোমাকে বিয়ে করব।’ সুফিয়ান এর শেষ কথাটা ফারদিনার চারপাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।চোখ তুলে কখনো সামনে চাইছে, কখনো রেলিঙ ধরে খোলা মাঠের দিকে দেখছে, কখনো ঝিলমিল কে দিয়ে খোঁজ পাঠাচ্ছে সুফিয়ান এসেছে কি না? প্রতিবারই তাঁকে হতাশ হতে হয়। সুফিয়ান ফিরেনি বলে।
গত কয়েকদিন ধরে ফারদিনার তীব্র জ্বর ছিল।আজ মোটামুটি কমেছে।মাথা ব্যথা ছিল প্রচন্ড। ঝিলমিল মাথা টিপে দিয়েছিল। পুরোপুরি কমেনি।আদিব জিজ্ঞেস করেছিল ‘কি হয়েছে তোর? আজকাল এত চুপচাপ থাকিস কেন? কিছু নিয়ে কি ভাবছিস?’

ফারদিনা মিথ্যা বলেছিল। ‘আমি কোনো কিছু নিয়েই ভাবছি না, শুধু শরীরটাই খারাপ।’
আদিব তখন বলেছিল ‘তুই কোন কিছু নিয়ে মাত্রারিক্ত ভাবছিস,যার ফলে তোর এই অবস্থা, আজকাল সুন্দর রুপটাও তোর পাল্টে যাচ্ছে। যত্ন নে।’”

কার জন্য যত্ন নিবে?যার জন্য সে নিজেকে সর্বদা পরীর মত করে সাজিয়ে রাখত আজ সে দীর্ঘ সময় ধরে নেই।সুফিয়ান চলে গেছে আজ সাতটি দিন। কিন্তু ফারদিনার কাছে মনে হচ্ছে শতকোটি বছর।ফারদিনা প্রচন্ড বিষণ্নতায় ভুগছে। নিজেকে হাঁসি-খুশি রাখার জন্য এতটুকু চেষ্টা করছে। হচ্ছে না। বাইজি মেহের এসেছিল, সে বলেছে সুফিয়ান হয়ত আর ফিরবে না।যদি ফেরার হত তাহলে এ ক’দিনে নিশ্চয়ই ফিরত। তাঁর মা, বাবা,ভাই, বোন কেউ নেই, তাহলে তাঁর এমন কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে,যার জন্য এতটা দিন সে তোমাকে ছেড়ে দূরে আছে?আমি শুনেছি, সুফিয়ান এর এই পৃথিবীতে আপন বলতে তুমিই আছো,যে মানুষটিকে সবচেয়ে বেশি আপন মনে করে তাঁকে ছেড়ে এতটা দিন কিভাবে পাড় করছে?একটি চিঠি অন্তত পাঠাতে পারত।পাঠায়নি।” মেহের এর বলা কথাগুলো ফারদিনাকে ভেঙ্গে চুরে দিয়েছিল। খানিকক্ষণেই নিজেকে নিজেই শান্তনা দিয়েছিল। সুফিয়ান হয়ত কৃষি কাজ এর জন্যই কোথাও আটকে আছে। তাঁর পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ত,যার জন্য কোন সংবাদ পাঠাতে পারেনি।ফারদিনা এই ভেবে নিশ্চিত হয়েছিল।

সন্ধ্যার আঁধারে পরিপূর্ণ প্রকৃতি ঢেকে গেছে। ঠান্ডা বেড়ে যাচ্ছে।ফারদিনার পরনে শীতের কোন পোশাক নেই। পরক্ষনেই মনে হল কেউ পেছন থেকে তাঁর শরীরে একটা শাল পেঁচিয়ে দিয়েছে। সুফিয়ান কে ভেবে মুখে একরাশ হাঁসি নিয়ে ঘুরে পেছনে তাকাল। তাৎক্ষণিক মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ঝিলমিল এসেছে।ফারদিনার সামনে বেঞ্চে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ে। খুরমা চিবোতে চিবোতে বলল “সুফিয়ান এর কথা ভাবছিলি?
ফারদিনা দু হাঁটু,দু হাত দিয়ে জড়িয়ে তাঁতে,গালের ভর রেখে দূরে গোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে নিচু কন্ঠে বলল “আর কার কথা ভাববো?
“জানি, তারপরও জিগাইতে ভালো লাগে।আজ এক সপ্তাহ হইয়া গেছে।রাত পোহালেই আটদিন।কই তোর বাঁশিওয়ালা?আইছে, আমি কইছিলাম না আর আইবো ও না। দেখলি তো,এই ঝিলমিল এর কথা বাসি হইলে মিষ্টি হয়।”

“তোর কি মনে হয়,সে কোথায় যেতে পারে?
“আমার তো মনে হয়,সে বিয়াইত্তা বেডা।বউয়ের কাছেই গেছে।এই গ্রামের জমি ভালো,ফসল ভালো হয় বইলা সে এইখানে আইছিল। কিন্তু তাঁর আরো একখান পরিচয় আছে। সে-ই পরিচয় হইলো সে বিয়াইত্তা।বউ আছে।বাঁচ্চাও আছে।”
“তুই আবার মন ভাঙ্গছিস মুচমুচি। সুফিয়ান কখনোই প্রতারণা করবে না আমার সাথে।সে মিথ্যাবাদী না।”
“এই ঝিলমিল এর ধারণা কোনদিন মিথ্যা হয় না।যদি তাই না হইতো, তাইলে এতদিন ধইরা সে কই?
“হয়ত কোন কাজে আটকে আছে।”
“আহ্,কি কাজ,মনে হয় অনেক বড় ব্যবসায়ী সে, বানিজ্য গেছে।যারা বানিজ্যে যায় তাঁরাও অন্তত একটা চিঠি পাঠায়।বার্তা পাঠায়।কেউ কাউরে সত্যিকারের ভালোবাসলে তাঁর লইগা দুই লাইনের চিঠি লেইখা পাঠান যায়।এই সময়টুকু জোগাড় করন যায়”

ফারদিনার হৃদয়ের আষ্টেপৃষ্টে ঝিলমিল এর কথাগুলো যেন লাগল। ঝিলমিল ভুল বলেনি।একটা চিঠি পাঠানোর মত সময়ও কি সুফিয়ান এর হয়নি? না কি সে ইচ্ছে করেই পাঠায়নি?
ফারদিনা আবারো চিন্তায় ডুবে গেল। উদ্বেগ ও মানসিক চাপে শরীরের নানান ক্ষতি হয়।ফারদিনা আর ছাদে থাকতে চাইল না।বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো।গোলাপ ফুল গাছটার দিকে তাকাল। ঘুরে একবার খোলা মাঠ,দূরে শিমুল গাছের দিকে তাকাল। ফাঁকা সবকিছু। কোথাও সুফিয়ান এর ছায়া অবধি নেই। চোখের কোণে জল জমতে চাইল, কিন্তু জল পরিপূর্ণ জমার আগেই ছাদ থেকে নিচে চলে যায়।

বৈঠকখানায় রশীদ বসে আছেন জেবুন্নেছার সাথে। কুদ্দুস পাশেই দাঁড়ানো।টেলিবে রাখা দু কাপ চা এবং পান।রশীদ চায়ে এক চুমুক দিয়ে পান মুখে দেন।একটু পর পর পিকদানিতে থুথু করে পিক ফেলছেন।ফারদিনা ক্লান্ত ভঙ্গিতে রশীদ এর পাশে বসে। জেবুন্নেছা ফারদিনাকে দেখেই ভ্রু কুঞ্ছিত করে ফেললেন।ফারদিনা কিছু বলার আগেই জেবুন্নেছা বললেন “ভাই,শুনছি আমাদের গ্রামটা ধীরে ধীরে মানবশূন্য হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু হঠাৎ করে একটা গ্রাম মানবশূন্য হয় কিভাবে?কেউ কি ইচ্ছে করেই গ্রামবাসীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে?নাকি অদৃশ্য কোন কারণ?
রশীদ পায়ের উপর পা তুলে বলল “অদৃশ্য বলতে কোন বাস্তবতা নেই।যে বা যারা এগুলো করছে তাঁদের নিশ্চয়ই কোন না কোন উদ্দেশ্য আছে। কিন্তু কারা এসব করছে!

ফারদিনা রশীদ এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।আলিমনগর গ্রাম মানবশূন্য হয়ে যাচ্ছে!ফারদিনা কিঞ্চিত স্ফীত হয়ে ভাবছে তাঁর তিন ভাইয়ের কথা।গ্রামের মানুষদের যদি একে একে বাঘের খাদ্য বানানো হয় তাহলে গ্রাম তো মানবশূন্যই হবে।গ্রাম মানবশূন্য হওয়ার পেছনে ফারদিনা তাঁর ভাইদের দায়ী করল।এবং নিশ্চিত হল।মনে মনে ঘৃণিত ইঙ্গিতে একবার বলল ছিঃ।

ফারদিনার রশীদ কে বলতে ইচ্ছে করছে ‘আব্বা আপনার ছেলেরাই গ্রামকে মানবশূন্য করছে। এরপর হয়ত পুরো গ্রামে তাঁরাই রাজত্ব করবে। কিন্তু যে রাজ্যের প্রজারাই থাকে না সেখানে রাজত্ব কিসের?ফারদিনা কোন জবাব পেল না। রশীদ ফারদিনার দিকে তাকিয়ে বলল “তোঁর কোন কারণে মন খারাপ?নাকি শরীর খারাপ?
ফারদিনার বলতে ইচ্ছে করছে, সুফিয়ান তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে রশীদ কে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু পারছে না।তখনই মনে হয়েছিল সুফিয়ান তাঁকে ছেড়ে যায়নি ফিরে আসবে।এখন মনে হচ্ছে আর আসবে না।ভেতরটা কেঁপে উঠছে বারবার। রশীদ ফারদিনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল “কিছু চাই তোর?বল,যা চাইবি তাই এনে দেব।বল!

ফারদিনার খুব করে সুফিয়ান কে চাই, কিন্তু সে-ই অনূভুতি আপাতত অপ্রকাশিত রাখল।ফারদিনা না বোধক মাথা আওড়ালো। এরপর বৈঠকখানা ছেড়ে ঝিলমিল কে নিয়ে ঘরের বাইরে বের হল। চারপাশে মশাল জ্বলায় বেশ আলোকিত উঠোন।কিছুটা সামনে গিয়ে বামে বাগান।আদিব বাগানে বসে বসে সিগার টানছে।ফারদিনাকে দেখে সিগার টা পাশে রাখল।আদিব একা একা বসে ভাবছিল নূরজাহান এর কথা।ফারদিনা গিয়ে তাঁর পাশে বসে নির্দ্বিধায়। ঝিলমিল দূরে দাঁড়িয়ে রইল।
আদিব ফারদিনাকে বলল “তোকে দেখে উদ্বিগ্ন লাগছে। কিছু হয়েছে?

‘,শরীর ভালো লাগছে না।”
“শরীরের সাথে সাথে যদি মনও খারাপ থাকে তবে সেই চেহারা দেখলেই বোঝা হয়। তোর মন খারাপ।এখন বল, কিসের জন্য মন খারাপ?
ফারদিনা সুফিয়ান এর কথা বলতে চাইল।তবু ভেতরের তাঁর আত্মাটা যেন কোন কারণে বাঁধা দিল।ফারদিনা আদিব কে বিশ্বাস করে।আজ বিশ্বাস এর জায়গাটা কোনভাবে পূর্ণ করতে পারছে না।
“আমার কোন কারণে মন খারাপ না। তুমি এখানে বসে কি করছো?বড়,মেজো, ছোট্ট ভাই তাঁরা কোথায়?
“হয়ত আছে কোন কাজে।”
তাঁদের পোষা র’ক্তশোষীর জন্য খাবারের সন্ধান করছে বলে ফারদিনা ধরে নিল। আজকাল তাঁর বাকি তিন ভাইয়ের উপর থেকে বিশ্বাস পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে।যারা মানুষের উপর দয়া করে না,অন্যর কান্নায় বুক কাঁপে না,অন্যকে খু’ন করতে যার হৃদয় কাঁপে না তাঁরা কখনোই সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে পারে না।
আদিব দু হাত ঘষে বলল “চল তোকে আজ একটা গল্প শোনাই।এক রাখাল বাঁশিওয়ালা,আর এক জমিদার কন্যার গল্প।শুনবি?
ফারদিনার শোনার আগ্রহ পেল না।তবু হতাশ ভঙ্গিতে ভাবলেশহীন ভাবে বলল ‘শুনব!

“এক ছিল রাখাল। রাখাল এর এই দুনিয়াতে কেউ ছিল না।রাখাল ছিল হতদরিদ্র।রাখাল কিভাবে অর্থ উপার্জন করবে, সেই ভেবে তাঁর গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যায়। কেননা তাঁর গ্রামের কেউ তাঁকে কাজ দিতে চেয়েছিল না। এরপর আরেক গ্রামে চলে যাওয়ার পর অন্যদের গরু মহিষ মাঠে মাঠে চরাত।রাখাল ছিল পুরোপুরি নিঃশঙ্গ। কিন্তু তাঁর সঙ্গী হিসেবে ছিল একটি বাঁশি।সে যখনই মাঠে মাঠে গরু মহিষ চরাত তখন বাঁশি বাজাত। ধীরে ধীরে রাখাল বাঁশিওয়ালা নামে পরিচিত হয়। গ্রামে তাঁর অনেক নামডাক হয়। এভাবে কিছুদিন চলে যাওয়ার পর,গ্রামের জমিদার এর নজরে এলো রাখাল। জমিদার বিশ্বাস করে তাঁর জমিতে চাষাবাদ করার সুযোগ দেয় রাখাল কে। রাখালও বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করল। জমিতে ফসল ফলাল। জমিদার এর মন জয় করল। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। রাখাল বাঁশিওয়ালা দিনে বাঁশি বাঁজাতে সময় পেত না,তাই রাতে বাঁশি বাঁজাতো। এভাবে একদিন রাতে বাঁশি বাজালে তাঁর বাঁশির সুর শুনে জমিদার কন্যা ছুটে আসে। জমিদার কন্যা রাখাল বাঁশিওয়ালার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। এবং রাখালও।শুরু হয় তাঁদের প্রেম কাহিনী। কিন্তু রাখাল বাঁশিওয়ালার মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। তাঁর লক্ষ্য ছিল জমিদার কন্যাকে ব্যবহার করা।” থামল আদিব।

“ব্যবহার মান?
“দুই ধরণের ব্যবহার। জমিদার কন্যার থেকে স্বর্ণের বাঁশি উপহার পাওয়ার লোভ। এবং জমিদার কন্যাকে ভোগ করার লোভ।এক পর্যায়ে রাখাল এর উদ্দেশ্যে হাসিল হয়। জমিদার কন্যাকে ভোগ করতে পেরেছে আর তাঁর থেকে স্বর্ণের বাশিও পেয়েছে।’
‘তারপর?
“রাখাল হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।কোথায় চলে যায় কেউ জানে না। জমিদার কন্যা তাঁকে পাগ’লের মত খুঁজতে থাকে।অথচ কোথাও খোঁজ পায় না তাঁর।”
“তারপর? ফারদিনার মনে হল তাঁর আর সুফিয়ান এর ঘটনা আদিব জেনে গেছে। এবং সব সত্য সে জেনেবুঝে গল্পের মাধ্যমে তাঁকে বোঝাচ্ছে। তবে আদিব এর গল্পের কিছু অংশের সাথে তাঁর আর, সুফিয়ান এর মিল পেল না। সুফিয়ান কে লোভী মানতে পারছে না।
“তাঁরপর,জমিদার কন্যা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে আসলে রাখাল সত্যিই তাঁর সাথে ঝলনা করেছে। এমনটা জমিদার কন্যা জানার পর খুব কষ্ট পায়।একদম ভেঙ্গে পড়ে। সারাদিন কান্নাকাটি করে। এরপর সে নিজেকে কোনভাবে সামলে রাখাল বাঁশিওয়ালা এর উপর জেদ করে এক বিদেশী ছেলেকে বিয়ে করে বিদেশ চলে যায়।”
“সত্যিই এমনটি হয়েছিল?

আদিব দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে করতে বলল “না,আসলে রাখাল বাঁশিওয়ালা কোন এক সত্য ঘটনা জমিদার কন্যাকে বলতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই সময় আর হয়নি। সুযোগ ও হয়নি। রাখাল আবার ফিরে আসে। জমিদার কন্যার জন্য। তাঁর খোঁজ করে। এরপর জানতে পারে জমিদার কন্যা একজন বৈদেশিক নাগরিক কে বিয়ে করে বিদেশ চলে গেছে।ব্যস। রাখাল বাঁশিওয়ালাও পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে।”
“তারপর কি হয়েছিল?
“তারপর কি হয়েছিল,তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না।আর এটা একটা গল্প। আমি দাদীর কাছ থেকে শুনেছি। বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই।”
ফারদিনার অন্তর বিষিয়ে উঠল।সে আগামীকাল অবধি অপেক্ষা করবে সুফিয়ান এর জন্য। তারপর সেও খুঁজবে সুফিয়ান কে। তবে তাঁর বিশ্বাস সুফিয়ান তাঁর সাথে কোন রকম মিথ্যের আশ্রয় নেয়নি। তাঁকে সে সত্যিই ভালোবাসে।
আদিব বলল “জানিস ফারদিনা, ভালোবাসা ভুল নয়, কিন্তু ভুল মানুষকে ভালোবেসে ঠকে যাওয়াই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।”

থেমে আবার বলল “যেভাবে আমি নূরজাহান কে ভালোবেসে ঠকে গেছি।” আদিব এতটুকু বলে থেমে ফারদিনার সামনে বসল। তাঁর দিকে ঝুঁকে বলল “তুই কাউকে ভালোবাসিস?
ফারদিনা নতজানু হয়ে না বলল।আদিব আর একটু আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল “ভালোবাসা পাপ নয়,তুই কাউকে ভালোবাসলে আমায় বলতে পারিস।আমি তোর ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে সাহায্য করব।”
ফারদিনা একবার ভাবছে বলবে।আর একবার ভাবছে বলবে না।তখন চোখের সামনে ভেসে উঠল অচেনা সে-ই চিঠির বার্তা। ‘তুমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করছো, সেই তোমার জীবনের ইতি টানবে।’ যে চিঠি পাঠিয়েছে সে গর্ধুব। নিজের আপনরা কখনো বেইমানি করতে পারে না বলে ফারদিনা লম্বা শ্বাস ফেলে ভাঙ্গা কন্ঠে বলল “আমি সুফিয়ান কে ভালোবাসি।__

“তোর সাহস তো কম নয়, আমার সামনে এসব বলছিস” উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়ান। তাঁর সামনে দাঁড়ানো সায়েম।আরিব কোলবালিশ সাথে নিয়ে বিছানায় আয়েশ করছে। দু’জন দাসী কিছু পানীয় নিয়ে হাজির হয়েছে।এক গ্লাস রায়ান এর দিকে দিলে সে নিল না।সায়েম নিল। এরপর এগিয়ে গেল আরিব এর দিকে।আরিব পানীয় খেতে খেতে বলল “সায়েম, সুফিয়ান আমাদের গ্রামের একটি নক্ষত্র।তুই কি করে বলতে পারলি ওকে র’ক্তশোষীর খা’বার বানাবো?
“ভাই,আমিত শুধু বলেছি ও নিখুঁত, এবং একমাত্র ছেলে বলে। তাছাড়া ওর দুনিয়াতে কেউ নেই। ওকে বাঁচিয়ে লাভ কি?”
রায়ান পায়চারি করতে করতে বলল “না, সুফিয়ান এর সাথে এরকম করাটা মোটেই ঠিক হবে না। আমি তোর এই প্রস্তাব মানতে পারলাম না।”

The Silent Manor part 36

“ভাই, আমার কথাটা ভেবে দেখো।এতে আমাদেরই লাভ।’ সায়েম বলল।
“সবসময় লাভ-লসের হিসাব করলে চলে না।’ রায়ান জবাব দিয়ে চেয়ারে বসল।
সায়েম কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল “আগামী দু দিনের ভেতরে র’ক্তশোষী কে একমাত্র এবং নিখুঁত কোন ছেলে সন্তান কে খেতে দিতে হবে।আমি বলছিলাম কি, আব্বার বিশ্বস্ত কাজের লোক কুদ্দুস কে দিলে কেমন হয়?
রায়ান ভ্রু পুরোপুরি উঁচিয়ে বলল “কথাটা ভুল বলিসনি ___

The Silent Manor part 38

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here