The Silent Manor part 6
Dayna Imrose lucky
আমিলনগর গ্রামের পশ্চিমপ্রান্তে যে ধোঁয়াময় নিস্তব্ধতা নেমে আছে,সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো কাপড়ের কারখানা।আহির কারখানার পেছনে গুদাম ঘরটাতে উপস্থিত হয়। সেখানে নো এন্ট্রি সিল দেয়া। আহির ডিটেকটিভ দেখে প্রবেশ করতে পারল।আহির এর সাথে গ্রামের দু’জন লোকও আসে। সফিকুল,তারেক।মিলন এর কাছের বন্ধু ছিল ওরা।
গোটা গ্রাম এখনো স্তব্ধ। কেউ বলে দুর্ঘটনা, কেউ বলে ঈর্ষা, কেউ আবার ফিসফিসিয়ে বলে“ও এমন কিছু দেখে ফেলেছিল যা দেখা তার কথা ছিল না।” নানান লোকের নানান ধরণের ধারণা। মন্তব্য।আহির মির্জা আলিমনগর আসার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে,যেন স্বয়ং বিচার এসে নেমেছে আমিলনগরে। কিছু গ্রামবাসী তাকে দেখে মৃদু হাসেন।তো কিছু লোক মুখে বিব্রতকর ছাপ আনে।আহির ঘুরে ঘুরে স্পটটি দেখছে। চারদিকে র’ক্তের ছিটেফোঁটা। আশপাশ টা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে সে।স্পট এর বাইরে তাঁর চোখ গেল। সেখানে কিছু একটা পড়ে আছে। আহির সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে জিনিসটা হাতে তুলে নিল। এখনই বোঝা না যাচ্ছে এটি কিসের অংশ।আহির খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।একটি রুপার খন্ড।কাজে লাগতে পারে খন্ডটি। পকেটে রেখে দিল।
গুদামঘর থেকে বাইরে আসে। কারখানাটার দিকে তাকাল।গেটের ওপর লোহার অক্ষরে লেখা আলিমনগর তাঁতশালা। স্থাপিত ১৮৮৯”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনেক পুরানো কারখানা। এককালে হয়ত এতটা উন্নত ছিল না,যতটা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই জমিদারদের পূর্ব পুরুষদের গড়া কারখানা। আহির নিশ্চিত।
আহির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সফিকুল তাকে লক্ষ্য করে বলল “বাবু, এখানে রাতে কেউ বের হয় না। আমাদের কারখানা বিকেল পাঁচটায় ছুটি হয়। কিন্তু ওদিন রাতে আমি একজন কে এদিক থেকেই যেতে দেখেছি।”
“কে সে?
“বাবু, আশরাফ। বৃদ্ধা। বেশিরভাগ সময় রাতে মাঝ ধরতে যায়। ওদিন রাত তিনটার দিকেই বাড়ি ফিরেছে। আমার সন্দেহ হয়। ওনার আসা যাওয়ার পথ এটাই।”
“ওনাকে এখন কোথায় পাব?
“বাবু,কয়েক মিনিট হেঁটে গেলেই ওনার বাড়ি।”
আশরাফ এর বাড়িতে পৌঁছে তাঁরা। মাটির ঘর। উঠোনে বসে এক বৃদ্ধা পাখা তৈরি করছে।শীত শেষ হলেই গরম শুরু। এখনই সময় পাখা তৈরি করে রাখার। বৃদ্ধা চোখ তুলে দেখল।চারজন লোক। তিনি বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চাইলেন। কিন্তু তার আগেই আহির তাঁর সামনে গিয়ে বলে ‘চাচি আপনার উঠতে হবে না।আমিই বসছি এখানে।’ আহির পাটিতে বসে। বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করল ‘তোমরা কারা?
“আমি শহর থেকে এসেছি। কিছুদিন আগে মিলন যে খু’ন হল,ওর ব্যাপারে একটু কথা বলতে এসেছি।’
বৃদ্ধা এ কথা শুনে চোখ তুলে সফিকুল,তারেক এর দিকে দেখল। সফিকুল বলল ‘চাচারে একটু ডাকেন।ওনার সাথেই কথা বলতে এসেছে।’
তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে আশরাফ। কাঁধে গামছা।পরনে লুঙ্গি। আহির উঠে দাঁড়ালো। আশরাফ এর সামনে এসে দাঁড়ায়। আশরাফ সবার দিকে একবার তাকাল।খুব উদাসীন দেখালো তাকে। “আপনারা? শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল।
“আমি ডিটেকটিভ আহির মির্জা।মিলন এর হ’ত্যার তদন্ত করছি। আপনার সাহায্য দরকার।” “আমি কেমনে তোমাগো সাহায্য করমু?
“মিলন যেদিন খু’ন হয়েছে ঐদিন রাতে আপনি ঐ রাস্তা থেকে এসেছেন।এমন কিছু দেখেছেন যা আপনার কাছে সন্দেহ জনক মনে হয়েছে?
আশরাফ কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেল। চোখে ভয়,আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। একজন ডিটেকটিভ এর চোখ থেকে এরুপ অভিব্যক্তি লুকানো মুশকিল। “নির্ভয়ে বলুন’
‘হ’ওদিন রাইতে আমি ঐখান দিয়েই আইতে ছিলাম। হঠাৎ কারখানার গুদামঘর থেইকা একটা কিছু ভাঙ্গনের শব্দ আসে।আমি কৌতুহলবশত ঐহানে যাই।আর তখন একটা মেয়ের তির্যক কন্ঠের চিৎকার শুনতে পাই।আমি ভয় পাইয়া যাই। এরপর আমি চইলা আইয়া পড়ি। পরদিন শুনি মি’লন নাই।”
আহির নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তারেক বলল “বাবু মেয়ে মানুষ খু’ন করে নাই তো? কিন্তু মিলন এর সাথে তো কোন মেয়ের সম্পর্ক ছিল না। বিবাহিত ছিল।যদিও ওর বউ মা’রা গেছে।”
সন্ধ্যার দিকে আহির মির্জা পৌঁছালো পশ্চিমপাড়ার ধানখেতের পাশের এক কাঁচা ঘরে।সেটিই ছিল মিলনের ঘর।ছোট্ট, মাটির দেয়াল, খাটের পাশে একটি পুরোনো লণ্ঠন। জানালার ধারে রাখা একটি ছবি।এক তরুণী, মিলনের স্ত্রী নিশ্চয়ই, চোখে গভীর স্নেহের ছায়া।
আহির খাটের নিচে চোখ বুলিয়ে পেলেন একখানা পাতলা কাঠের বাক্স। খুলতেই ভেতরে কিছু কাগজ, শুকনো ফুল, আর একখানা ডায়েরি।পাতাগুলো হলদে। লেখাগুলো অস্পষ্ট।
বাইরে তখন সন্ধ্যা। কুয়াশা নামতে শুরু করেছে। গ্রামের গাছপালা নিস্তব্ধ, কেবল দূরে এক পেঁচার ডাক।আহির,তাঁর সহকারী অরুন, সফিকুল, এবং তারেক ঘরের বাইরে বের হয়। মিলনের ঘর থেকে তেমন কিছু পায়নি। হঠাৎ দেখল দূর থেকে এক বৃদ্ধ মানুষ লণ্ঠন হাতে এগিয়ে আসছে।এসে থামে আহির এর সামনে ।কাঁপা গলায় বলল,
“আপনি কি মির্জা বাবু?”
“হ্যাঁ, কিছু হয়েছে?”
বৃদ্ধ একটু থেমে বলল, “ও মিলনের মৃত্যুর রাতে আমি জেগে ছিলাম, বাবু। রাত ছিল ঘন কুয়াশার, হঠাৎ গুদামঘর এর ভেতর থেকে এক নারীর কান্নার শব্দ শুনি। তারপর যেন কেউ দরজা ঠেলল, লোহার ধাক্কা পড়ল, আর সব চুপ।ঐ রাইতে আমিও ওদিক দিয়া আসছিলাম।শহর থাইকা।”
“নারীর কান্না?” আহির বিস্ময়ে বলল।
“হ্যাঁ, বাবু।”
আহিরের চোখে রহস্যের আভা জ্বলে উঠল।
“তুমি কাউকে বলেছিলে এ কথা?”
“কে শুনবে, বাবু?
সন্ধ্যা ঘনিয়ে ধীরে ধীরে রাতের উল্ককীতর আঁধার ধেয়ে আসছে।এমন সময় রাফিদ পথে হেঁটে একা একা বাড়ির দিকে ফিরছে। রাস্তার দুই ধারে শুধু জঙ্গল। চারদিক নিস্তব্ধ। শিউলির স্নিগ্ধ শোভন গন্ধ।সে হেঁটে যাচ্ছে খুব দ্রুত পায়ে।আজ তাদের কারখানায় অনেক কাজ ছিল।যার বেশিরভাগই সে সামলেছে। আমজাদ বিকেলের দিকে বাড়িতে ফিরে যায়।রাফিদের গাড়িতে হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ে আসতে পারেনি।অশ্ব ও আনেনি। উপায় না পেয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তার। আশেপাশে কাউকে দেখাও যাচ্ছে না।এমন সময় বাইরে কেউ থাকে না বললেই চলে। রাফিদ শালটা ভালো ভাবে পেঁচিয়ে নেয়। আশেপাশে তাকাচ্ছে বারবার।
তাৎক্ষণিক রাফিদ এর সামনে কিছু মুখোশধারী উপস্থিত হয়।ছ’জন লোক।কারো হাতে মোটা লাঠি,কারো হাতে চাপাতি। ওদের কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না।রাফিদ নিরস্ত্র। হঠাৎ তাঁর সামনে অস্ত্র হাতে কাউকে উপস্থিত দেখে মর্মাহত হয়। রাফিদ ঢোক গিলে বেশ রেগে বলল “পথ ছাড়’
“পথ ছাড়তে তো আহিনাই।তোর জান লইতে আইছি। অনেকদিন পর বাগে পাইছি তোরে।তোর বাপ অনেক জালাইছে।তোগো পূর্ব পুরুষেরাও অনেক নিকৃষ্ট মানুষ আছিল।গরীব বইলা দাম দিত না। সংস্কার সংস্কার বইলা আমগো আপনজনের প্রাণ নিছো।আজ তোরে মাইরা এর প্রতিশোধ লমু।দেহি,তোর বাপ কতটা ছটফট করতে পারে।”
রাফিদ বলল “দেখ, আমার সাথে ঝামেলা করিস না।এতে তোদের ই লস।”
তখন একজন মুখোশধারী বলে উঠলো “ঐ ওরে শেষ কর। বেশি কথা কয়’ একজন রাফিদের দিকে এগিয়ে আসে।
রাফিদ ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে মুখোশধারী ঝাঁপিয়ে পড়ল। ধারালো ছুরির ঝলক চোখে পড়তেই সে পাশ ফিরে গেল।বজ্রগতিতে।আর আঘাতটা গিয়ে পড়ল বাতাসে। পরের মুহূর্তে রাফিদ তার ডান কনুই দিয়ে আক্রমণকারীর বুকে এমন আঘাত করল যে লোকটা ছিটকে পড়ল ফুলবাগানের ধারে।
দ্বিতীয় জন পেছন থেকে লাঠি ঘোরাতে এল, কিন্তু রাফিদ নিচু হয়ে এক ঝটকায় লোকটার পা টেনে নিল। গাছের শিকড়ে আঘাত পেয়ে সে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। তৃতীয় আক্রমণকারী এবার রাগে চোখ লাল করে দৌড়ে এল, ছুরি উঁচিয়ে।
রাফিদ নিরস্ত্র, কিন্তু চোখে আগুন। ছুরিটা যখন প্রায় তার বুকের কাছে, সে হাত বাড়িয়ে আঘাতের দিক ঘুরিয়ে দিল, আর ছুরিটাই উল্টো ঘুরে আক্রমণকারীর হাত কেটে দিল। লোকটা চিৎকার করে উঠল।
রাফিদের নিঃশ্বাস ভারী, কিন্তু চোখ স্থির।
তিনজনই মাটিতে লুটিয়ে কাতরাচ্ছে। তখন একজন মুখোশধারী বলল “জমিদারের র’ক্ত তো ভালোই ত্যাজ(তেজ) দেখছি।ঐ তুই যা’ বলে পাশের জনকে ইশারা করে। কিন্তু রাফিদ এর কাছে সেও হেরে যায়। আক্রমণকারী মাটিতে পড়ে যায়। রাফিদ ক্রোধে লোকটার উপর ভর করে বসে তার মুখ দেখতে চাইলো। তখনই বাকি দুজন এসে রাফিদ এর পিঠে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর তাকে ধরে ফেলে।দু হাত শক্ত করে চেপে ধরে। রাফিদ ছুটতে পারল না।মাটি থেকে উঠে আক্রমণকারী হাতে চাপাতি তুলে নেয়। এরপর রাফিদের দিকে এগিয়ে গেল। রাফিদ হাত ছোটানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।সে চোখের সামনে নিজের মৃত্যু কে দেখতে পেল।
চাপাতি হাতে আক্রমণকারী রাফিদ এর দিকে এগিয়ে গেল। তাঁকে চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করবে ঠিক তখনই রাফিদ চোখ বুঝে ফেলে। গভীর শ্বাস নিচ্ছে। ঘেমে গেছে সে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল তাঁর শরীরে চাপাতির আঘাত লাগেনি।সে চোখ মেলে তাকাল। চাপাতি তাঁর পেট বরাবর ছিল ঠিকই কিন্তু,একটা ফর্সা রঙের হাত চাপাতিটি ধরে রেখেছে। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আহির মির্জা।ঠিক সেই মুহূর্তে আরো একজন,হঠাৎই রাফিদ কে ধরে রাখা আক্রমণকারী কে লাত্থি মেরে ফেলে দেয়।রাফিদ ঘুরে তাকাল। মীর কে দেখল।
এক মুহূর্তেই বাতাসের গতি পাল্টে যায়। আক্রমণকারীরা রাফিদের দিকে ছুটে আসতেই আহির মির্জা ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক আঘাতে তার কোট উড়ে যায় পাশে, আর লাথিতে ছিটকে পড়ে এক দুষ্কৃতী। মীর লাঠি ঘুরিয়ে আরেকজনের হাত থেকে অস্ত্র ছিটকে দেয়।“রাতের অন্ধকারে মুখোশ পরে এসেছ, এখন চেনা যাবে তোমাদের আসল মুখ!” বলে মীর।
রাফিদও তখন নিজেকে সামলে আবার দাঁড়িয়েছে। তিনজনের মধ্যে নীরব বোঝাপড়া। একদিকে রাফিদ, একদিকে আহির, অন্যপাশে মীর।ত্রিভুজ আকারে ঘিরে ফেলে শত্রুদের।
ঝড়ের মতো লড়াই শুরু হয়। ছুরি, লাঠি, মুষ্টির ঝলকানি।বাগানের ফুল উড়ে যায়, বাতাসে ধুলা ও রক্তের গন্ধ মেশে।
আহির মির্জা দ্রুত এক ঘুষিতে এক আক্রমণকারীর নাক ভেঙে ফেলে। মীরের লাঠির আঘাতে আরেকজন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। রাফিদ শেষজনকে ধরে গাছের সাথে ঠেসে ফেলে গর্জে ওঠে,
“কে পাঠিয়েছে তোদের?”
লোকটা গোঁ গোঁ শব্দ করে, তারপর মাটিতে ঢলে পড়ে অচেতন হয়ে।বাতাস আবার নিস্তব্ধ হয়। কেবল দূরে কুকুরের ডাকে ভাঙে সেই নীরবতা। রাফিদ নিচু হয়ে একজনের মুখোশটা খুলে দেখে তারপর ধীরে বলে ওঠে
“এই খেলা বড় গভীর,মীর। এখন থেকে সাবধানে থাকবে।এরা পুরানো শত্রু।”
মীর রাফিদ এর দিকে তাকিয়ে বলল “তুই ঠিক আছিস?
“আমি ঠিক আছি।” ঘুরে তাকাল আহির এর দিকে।হাত থেকে তাঁর র’ক্ত ঝড়ছে।মীর ও রাফিদ ছুটে আসে। মীর খুব চিন্তিত হল। “আহির তোর হাত থেকে র’ক্ত ঝড়ছে।”
“কত আর ঝড়বে। এমনিতেই থেমে যাবে। র’ক্তের সখ মিটলেই।”
“অদ্ভুত’দ্রুত বাড়ি চল’ বেশি রক্ত বের হলে সমস্যা হবে।’ বলল রাফিদ।মীর এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল “ঐতো একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে।চল ওখানে। আপাতত জায়গাটা পরিস্কার করে,কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।বাড়ি অবধি যেতে সময় লাগবে। ততক্ষণে অনেক র’ক্ত ঝড়বে।”
রাফিদ তখন কিঞ্চিত অবাক হয়ে বলল “তোরা এখানে কেন এসেছিলি?
মীর জবাব দিল “তোর আসতে দেরি বলেই এদিকে হাঁটতে হাঁটতে এসেছিলাম।”
আহির বলল “আমি এখনই বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু গাড়ি সাথে ছিল না। আমার সহকারী গাড়িটা নিয়ে একটা কাজে দূরে গেছে।”
রাফিদ বলল “ এখন কথা না বাড়িয়ে ঐ বাড়িটায় চল,ওর রক্ত পড়া বন্ধ করতে হবে।”
আহির বারণ করল। কিন্তু মীর ও রাফিদ শুনল না।
রাত নেমেছে ধীরে ধীরে, যেন কেউ আলতো করে কৃষ্ণচাদর মেলে দিয়েছে আকাশজুড়ে।চাঁদের আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে পুরোনো খড়ের চালা, মাটির দেয়ালে পড়ছে নরম রূপালি ছায়া।আঙিনায় একটা নিমগাছ, তাতে বাতাস লাগলে পাতা নড়ে।সাঁ সাঁ শব্দে যেন রাত কথা বলে উঠছে।দরজার সামনে রাখা মাটির প্রদীপের আগুন টিমটিম করছে, কখনো জ্বলে, কখনো নিভে যায়।দূরে কুকুরের হালকা ঘেউ ঘেউ, আর কোনো কোনো সময় বাঁশঝাড়ে ঝিঁঝি পোকার ডাক।সব মিলিয়ে নিস্তব্ধতাটাও যেন একধরনের সঙ্গীত।বাড়ির ভেতর থেকে শোনা যায় কেরোসিন বাতির দপদপ শব্দ,কেউ হয়তো ঘরের কোণে বসে কাপড় ভাঁজ করছে,
বাতাসে গরুর ঘ্রাণ, শুকনো খড়ের গন্ধ, আর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা ধোঁয়ার গন্ধ মিশে গেছে।দূরে নদীর ধারে ব্যাঙের ডাক গু গুউঁ গু গুউঁ।আর তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে পেঁচার ডাক।
সব কিছুই শান্ত, অথচ কোথাও যেন একটুখানি অজানা ভয়, একটুখানি রহস্য লুকিয়ে আছে।
নিস্তব্ধ একটা বাড়ি যেন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে উপস্থিত হয় রাফিদ,মীর ও আহির।
মাটির স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটির সামনে গিয়ে রাফিদ উচ্চস্বরে ডাকে “কেউ কি ভেতরে আছেন, সাহায্য দরকার।”
মীর বাড়িটি দেখে চিনতে পারে, রহিমাদের বাড়ি।
রাফিদ ডাকার কয়েক সেকেন্ড পর বেরিয়ে আসে রহিমা।লাঠির উপর ভর দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কোমড়ের ব্যথায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। রাফিদ দেখল সে রহিমা। রহিমা রাফিদ কে দেখে চিনতে পারে।
“খালা আপনি?
“বাবা, তুমি এইহানে,এত রাইতে, কিছু হইছে?”
“আমরা কারখানা বাড়ি ফিরছিলাম।গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হেঁটে হেঁটে ফিরছিলাম। কিন্তু মাঝপথে অন্ধকার এর জন্য আমার বন্ধুর হাতটা কেটে যায়। র’ক্ত ঝড়ছে।বাড়ি অবধি এভাবে গেলে অনেক টা রক্ত ঝড়বে।”
রহিমা চোখ তুলে আহির এর দিকে দেখল।ডান হাতটা রক্তে মাখা। “তোমরা বারান্দায় বস।”
মীর আহির কে নিয়ে বারান্দায় উঠে বসে। খুঁটির সাথে হারিকেন ঝোলানো। উঠোনে কিছু গাছের সাথে মশাশ জ্বলছে। চারপাশ টা বেশ সোনালী রঙে রঙিন দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে।
রহিমা ঘরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ডাকল। “গৌরী, জমিদার বাড়ির এক বাবুর হাত কাইটা রক্ত ঝড়তাছে।তুই একটু দেখ মা’আমিতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেছি না।”
আহির মীর কে লক্ষ্য করে বলল “আমার কিছু হয়নি। এতটুকু রক্ত ঝড়লে কিছু হবে না।চল, চলে যাই এখান থেকে। শুধু শুধু ওনাদের বিরক্ত করছি।” মীর,রাফিদ শুনল না। এরপর মিনিট পাঁচেক পর ঘরের ভেতর থেকে গৌরী বেরিয়ে আসে।মাথার ওড়না নাক অবধি ঝুলছে।গৌরী এসে আহির এর সামনে বসে।হাতে ছিল জলের জগ।জল দিয়ে আহির এর হাতটি পরিষ্কার করে কয়েক সেকেন্ড বসে।আহির এর হাতের ক্ষত এর দিকে দেখল।ছুরি অথবা চাপাতির আঘাত।দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই কোথাও থেকে মারামারি করে এসেছে। গৌরী নিশ্চিত।
গৌরী আহির এর হাতটি ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নেয়। এরপর সেখান চা পাতা ভাটা দিল।আহির কিছুটা ব্যথা পেল। গৌরী চা পাতা দিয়ে তাঁর উপর একটা সাদা রঙের কাপড় দিয়ে হাতটা পেঁচিয়ে বেঁধে দেয়। মীর গৌরী কে লক্ষ্য করে বলল “শুকরিয়া। আপনি না থাকলে হয়ত ওর শরীরের সমস্ত রক্ত ঝড়েই যেত।’ আসি তাহলে আমরা” বলে উঠে দাঁড়ালো। আহির স্তব্ধ নজরে চেয়ে রইল গৌরীর দিকে।গৌরী দূরে সরে দাঁড়ায়।আহির, রাফিদ,মীর রহিমাদের বাড়ি থেকে চলে আসে।আহির যেতে যেতে বারবার পেছন ঘুরে দেখল।
রাত বাড়ছে।রাতটা যেন রুপোলি।চাঁদ মাথার উপর জ্বলছে, তার আলো পড়ছে জমিদার বাড়ির পুরোনো ছাদের উপর।খড়ের চালা, পুরোনো টালি, দোতলার জানালা, সবকিছু যেন ভিজে উঠেছে শান্ত আলোয়।চারদিক নিস্তব্ধ, তবু এই নীরবতার মধ্যেই আছে এক অদ্ভুত মিষ্টি সুর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, দূরে ধানের ঝিরিঝিরি শব্দ, আর মাঝেমাঝে হালকা বাতাসের ছোঁয়া।
আঙিনায় বড়ো একটা নিমগাছ।তার পাতা থেকে টুপটাপ শিশির পড়ছে,আর তার নিচে একটা পুরোনো পাথরের বেঞ্চ।সেখানে বসে আছে আহির,রাফিদ।দূরে গরুর খামার থেকে হালকা ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে আসে। ঠন ঠন ঠন’
গরুগুলো ঘুমাচ্ছে নিশ্চিন্তে, তাদের নিঃশ্বাসের শব্দটাও যেন এই রাতের অংশ।
বারান্দার এক কোণে স্ফটিক ঝাড়বাতি টা জ্বলছে মৃদু আলোয়।বাড়ির দোতলার একটা ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে লালনগীতি কারো মিষ্টি কণ্ঠে গাওয়া, খুব নিচু স্বরে
“সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে…”
সেই সুরটা ঘুরে বেড়ায় উঠোন জুড়ে,
চাঁদের আলোয় মিশে যায় ধীরে ধীরে। সুরটি আহির কানে এসে বাঁধে। জিজ্ঞেস করল ‘কে গাইছে ?
রাফিদ বলল “দাদী। তাঁর লালনগীতি পছন্দ।”
বাগানের বিভিন্ন গাছের ডালে হালকা বাতাস লাগে, পাতা দোলে আলতো করে।রাতরানীর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।মনে হয় যেন গোটা বাড়িটাই ঘুমাচ্ছে সেই গন্ধে মাতাল হয়ে।
ঘরের ভেতর থেকে শেফালী বেরিয়ে আসে, হাতে দু কাপ চা।চুপচাপ এসে রাফিদ,ও আহির কে চা দিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে সময় গড়ায়।আহির তখন বলল “চল,বাড়ির পেছনে পুকুর পাড় থেকে ঘুরে আসি।”
বাড়ির পেছনের পুকুরে জলের ওপর চাঁদের প্রতিফলন।যেন দুটি চাঁদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।বক পাখি ঘুমিয়ে আছে ঘাটের ধারে।জলের হালকা ঢেউ পড়ছে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।
রাতের এই প্রশান্তি এমন যে মনে হয়,জগতের সব অস্থিরতা যেন বাইরে কোথাও থেমে গেছে।
এই বাড়ির ভেতর শুধু বাতাসের গন্ধ,
মাটির শান্তি, আর একটা পুরোনো সুর বাজছে খুব নরমভাবে।যা শুনলে মনটা নিজের অজান্তেই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আহির খুব চিন্তিত। ঘাটের পাড়ে দু’জন বসে পাশাপাশি। রাফিদ একটা সিগারেট ধরাল।আহির এর দিকেও একটা ধরিয়ে দিল।সন্ধ্যায় তখন তাঁরা তিনজন বাড়িতে ফিরলে আমজাদ তাদের অবস্থা দেখে কিছু বুঝতে পেরে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিল ‘কিছু হয়েছে, তোমাদের?
মীর তখন সত্যটা লুকিয়ে মিথ্যা বলেছিল আমজাদ কে। শালুক আহির এর হাতের অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করে।সে তখন বলেছিল “ডঃ এর ব্যবস্থা করছে’ কিন্তু আহির নাকোচ করল।
মীর তাদের মাঝে এখন উপস্থিত নেই।রাফিদ এবং আহির কে বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে কোথাও একটা চলে যায় কাউকে কিছু না বলে।আহির সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে বলল ‘ মীর কোথায় গেছে?
“হয়ত দিঘির পাড়ে।’
“কেন?
“নাচনেওয়ালীর উত্তরের আসায়।’ আহির শুনে হাসে। রাফিদ পুনরায় বলল “ও মেয়ে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হবে না।আমি জানি।”
“কেন? আহির রাফিদ এর দিকে তাকাল।
“এই গ্রামের সাধারণ মানুষেরা মনে করে, জমিদার বংশের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হলে তাদের ও উচ্চ বংশের হতে হবে।”
“ধারণা তো সঠিক।আজ তুমি যদি একজন সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করতে চাও, তোমার পরিবার সেটা মেনে নিবে?’
রাফিদ নিঃশব্দে হেসে বলল “পরিবার, সংস্কার, নিয়মনীতির জন্য কত সম্পর্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। যেখানে ভালোবাসার মানুষ দুটো একে অপরকে চাইলেও পূর্ণতা পায় না। পরিবার,সমাজ পূর্ণতা পেতে দেয় না।”
পেছন থেকে তাদের কথোপকথন শুনে নেয় বুলবুল।সে সময় না নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে মায়ার ঘরে যায়। মায়া ঘরে একা ছিল। তাঁকে বুলবুল জানায় ‘শুনেছি মীরবাবু মাস্টার এর মেয়ের কাছে চিঠির উত্তর আনতে গেছে। ছেলেটা মোটেই সুবেদার না। গ্রামের কোন মেয়েকে বিয়েও করবে না, শুধু শুধু মজা নিতেছে সহজ সরল মেয়ে গুলোর সাথে। দেখবেন আপা, তাঁর কপালে মেয়ে জুটবে না।”
মামা বুলবুল এর কথার কোন প্রতিক্রিয়া করল না। বুলবুল মায়ার কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।মায়া তাকিয়ে আছে শূন্য মনে আকাশপানে। বুলবুল যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে গেল। মায়ার মনটা বিষিয়ে উঠল। চোখে জল জমল।জলের ফোঁটা গড়িয়ে গালে পড়তেই হাত দিয়ে মুছে ফেলল। তখন হঠাৎ হাউ শব্দে মায়া লাফিয়ে উঠে। তাকিয়ে দেখল মীর।
“আপনি এত রাতে এখানে?
“দেখতে আসলাম, তোমার জ্বর কমলো কিনা।দেখি তো জ্বর কমেছে কিনা’ বলে মায়ার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতেই মায়া সরে গিয়ে বলল “আপনার অধিকার নেই আমার শরীর স্পর্শ করার।পর পুরুষ আপনি।’
“ও আচ্ছা, তোমাকে ছুঁতে বুঝি দলিল লাগবে! দলিল তো আমার কাছে নেই,আর দলিল আমি তৈরি করতেও পারব না।যাও ছুঁয়ে দেখব না।’
মায়া দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তাঁর মুখটা গম্ভীর। মীর বলল “মন খারাপ? মায়া নিরুত্তর। মীর তখন কন্ঠ খাদে নামিয়ে মোহময় কন্ঠে বলল ‘তোমার সবকিছু আছে তবুও তোমার মন খারাপ।আর দেখো, আমার কিছুই নেই। তারপরও আমি হাসছি।’
“আপনারও তো সব আছে’কি নেই আপনার!
মীর ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে বলল ‘তোমরা দেখো আমার সব আছে, কিন্তু আমি দেখি আমার কিছুই নেই। সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু আমার মা’ নেই’ এই বাক্যটিই সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।’ মীর থামে। তাঁর কথা আটকে যাচ্ছে। পুনরায় বলল ‘আমি এই দুনিয়াতে আমার মাকে খুব কম সময়ের জন্য পেয়েছি। মায়ের আদর, স্নেহ আমি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য পেয়েছি। মায়ের মায়া ভরা মুখ, মলিন হাঁসি, তাঁর আদর, তাঁর শাসন, সবকিছু আমার মনে পড়ে।তোমরা যখন রাতে খুব আরাম করে ঘুমোয়,আমি তখন মায়ের কথা ভাবি। তোমরা যখন মায়ের সাথে অভিমান কর, তখন আমি আফসোস করি’একটা বাক্য তখন আমার চারপাশে ঘুরে, আমার মা নেই।সে তো কবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।” মীর এর কথা গুলো দুঃখে মাখা।মায়া দেখল মীর এর দিকে। তাঁর চোখে জল।
মীর জানালার পাশে দাঁড়ায়। শান্ত ভাবে বলল “আমার সামনে কোন মা তার সন্তান কে আদর করলে, স্নেহ করলে, আমার খুব কষ্ট হয়।আমি বুঝতে দেই না। কিন্তু হয়। আমার সব আছে টাকা পয়সা,বাড়ি গাড়ি, কিন্তু তারপরও আমি শূন্য।কারণ আমার মা যে’নেই। ভাবতেই অবাক লাগে, যে মানুষটির গর্ভে আমি ছিলাম,যার দুগ্ধ পান আমি করেছি, আমি হাসলে যে হাঁসতো,আমি কাঁদলে যে কাদতো,সে মানুষ টা আর দুনিয়াতে নেই।”
মীর থেমে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল “আমি এই দুনিয়াতে মাকে সবথেকে বেশি ভালোবেসে’ছিলাম।এখনো বাসি,আর চিরদিন বাসব। মানুষ সব শোক হয়ত কাটিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু আমি আমার মায়ের শোক কখনো কাটিয়ে উঠতে পারব না।”
মায়া কাঁদছে। ওড়নার আঁচল দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে। “আপনি কাঁদছেন? মীর কে বলল।মীর আড়ালে চোখ মুছে বলল “না তো, আমি কাঁদছি না।”
“আঙ্কেল আপনাকে অনেক ভালোবাসে।”
মীর বলল “আমি জানি।মা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, তখন বাবাতো জোয়ান ছিল। চাইলেই দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারত কিন্তু, আমার কথা ভেবে করেনি। তাছাড়া,বাবাও মাকে প্রচন্ড ভালোবাসত। বাবা এখনো মাকে ভুলতে পারেনি।’
“আপনার ছোট্ট মাও কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসে।”
মীর গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলল “আমার মা নেই দেখে, ছোট্ট মা আমার সামনে কখনো তোমাদের আদর করে না।আমি কষ্ট পাব ভেবে। ‘মা থাকার গভীর ব্যথার ওষুধ’ সমস্ত দুনিয়া খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।কত সন্তান মাকে অযত্নে ফেলে দেয়,ওরা হয়ত জানেনা,মা হারানোর যন্ত্রণা।ওঁরা জানেনা মায়ের সাথে জড়িয়ে আছে জান্নাত।”
“কিভাবে আপনার মা মারা গিয়েছিল?
“কিভাবে মারা গিয়েছিল বলে কি হবে’আল্লাহর ফয়সালা ছিল, আল্লাহ আমায় একা করে দিয়েছেন।”
“আপনার পাঞ্জাবিতে মাটি কেন?
মীর মাটির দিকে তাকিয়ে বলল “মায়ের কবরের কাছে গিয়েছিলাম। হঠাৎ তাঁর কথা খুব মনে পড়ছিল।”
মায়া কিছু বলল না।মীর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল “রাত বাড়ছে। আমি ঘরে যাই। তুমি বিশ্রাম নাও।” বলে মীর চলে যায়।
আহির তাঁর ঘরের বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে। দৃষ্টি তাঁর ডান হাতের দিকে।ক্ষত জায়াগাটি সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা। নিশ্চয়ই এটি গৌরীর ওড়নার খন্ড।আহির হাসে। তাঁর হাঁসি দেখে রাফিদ বলল “তুই কাটা হাত দেখে হাসছিস? অদ্ভুত, মানুষ কাতরায়,আর তুই বোধহয় খুশী হয়েছিস।”
“মানুষ কাতরায়, প্রেমিক না।” বলল আহির।
“এর মানে? রাফিদ সিগারেট ধরাল।
“এর মানের ব্যাখা আমার কাছেও নেই।” মীর হাজির হয়।হাতে একটা বই।বইটি নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। রাফিদ মীর কে লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল “তুই না দিঘীর পাড়ে গিয়েছিলিস!কখন আসলি?”
মীর জবাব দেয়ার আগেই আহির মীর এর দিকে তাকিয়ে বলল “মীর, খেয়াল করেছিস ‘আমাকে কিন্তু তোরা,তুই বলে ডেকেছিলিস?
The Silent Manor part 5
মীর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল “বলেছিলাম না, যেকোনো পরিস্থিতিতে তুই টা চলে আসবে।আসলো তো’! বলা শেষে তিনজন ই হেসে উঠল।
হাঁসি থামিয়ে আহির রাফিদ কে লক্ষ্য করে বলল “গৌরীর মা ছাড়া আর কেউ নেই।?”
রাফিদ সিগারেট টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলল “ওর বাবা ছিলো। শুনেছি কিছু বছর আগে আত্মহ’ত্যা করেছে!”
কথাটা মীর এর কানে বিধল।গৌরীর বাবা আত্মহ’ত্যা করেছে’। তবে শেফালী কেন বলেছে ‘একদিন রাতে ঘর থেকে কেউ ডেকে নিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে?’ মিথ্যা কেন বলল?
