তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১০ || Anika Fahmida

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১০
Anika Fahmida

অনুকে অবাক হয়ে তাকিয়প থাকতে দেখে পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–কি হলো কিছু বলছেন না কেন?
অনু গম্ভীর স্বরে বলল,
–কি বলবো?
–এই যে আপনি কোনো বিষয়ে কষ্টে আছেন কিনা?
–আমার কোনো কস্ট নেই।
–রিয়েলি?
–হ্যা।
আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–আপনার নাম কি?
অনু বিরক্তি স্বরে পল্লবকে বলল,
–আমার নাম অনু।
পল্লব হাসিখুশি ভাবে অনুকে বলল,
— অনু! নাইস নেম।
বেশ অনেক্ষণ নিরবতার পর পল্লব আবারও অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন না?
অনু পল্লবের মুখের দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। পল্লব হেসে অনুকে বলল,
–আমার নাম পল্লব।

–ওহ। হ্যা একটু আগে আপনার নাম শুনেছিলাম।
–তাই নাকি? কই আমাকে তো বললেন না। শুধু শুধু কষ্ট করে নিজের নামটা বলতে গেলাম।
–তাহলে নাম না বললেই পারতেন।
পল্লব অনুকে আবারও বলল,
–আজকে আমার ছোট বোনের বিয়ে।
অনু অবাক হয়ে পল্লবকে বলল,
–নেহা আপনার আপন বোন?
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
–হ্যা নেহা আমার আপন বোন।
পল্লবের কথা শুনে অনু চুপ করে রইল। আর কিছু বলল না। একটি টেবিলে অনেকগুলো জুস আর কোল্ড ড্রিংকস। পল্লব সেখান থেকে অরেঞ্জ জুস হাতে নিয়ে অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
–অরেঞ্জ জুসটা খেয়ে দেখুন। আপনার ভালো লাগবে।
অনু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল,
–না, লাগবে না।
পল্লব বিরক্ত স্বরে অনুকে বলল,
–আপনি মেয়েটা একটু বেশি চুপচাপ। এতো চুপচাপ আর রাগী কেন আপনি? প্রেমে করে ছ্যাকা খেয়েছেন?

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

অনু পল্লবের কথা শুনে পল্লবের দিকে তাকিয়ে বলল,
–মানে? কি বলছেন আপনি? আমি কোনো প্রেম করে ছ্যাকা খাই নি।
পল্লব মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–তাহলে একটু হাসুন। হাসলে আপনাকে দারুন লাগবে।
অনু বিরক্ত হয়ে পল্লবের সামনে থেকে চলে গেল। পল্লব অনুর পেছন পেছন হাঁটতে লাগল। অনু দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগী স্বরে পল্লবকে বলল,
–সমস্যা কি আপনার? আমার পেছন পেছন আসছেন কেন? আমার পেছন পেছন আসবেন না।
পল্লব অবাক হয়ে অনুকে বলল,
–আমি কই আপনার পেছন পেছন আসলাম?
–এই যে এখন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।
–আমি ঐদিকটায় একটু যাচ্ছিলাম কারণ আমার বন্ধুরা ঐদিকেই দাঁড়িয়ে আছে।
অনু সামনে তাকিয়ে দেখল বেশ কিছু দূরে অনেকগুলো ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। অনু ভুল বুঝতে পেরে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে পল্লবকে শান্ত স্বরে বলল,
–আই এম সরি।
–ইটস ওকে অনু।
অনু তাড়াতাড়ি করে সামনের দিকে হেঁটে চলে গেল। পল্লব মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
–মেয়েটা অদ্ভুত, রাগী সাথে পাগলও।

নেহার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে অনু নিজের বাড়িতে চলে আসে। পল্লবের ব্যাপারে আর কোনো কিছু জানার আগ্রহ নেই তাই অনু জানতেও চাইল না। রাতে অনু বিছানায় শুয়ে আছে। প্রতিটা মুহুর্তে অনু আদ্রকে অনুভব করে কিন্তু কখনও প্রকাশ করে না। রাত হলেই অনুর বুকের ভিতরে চাপা কষ্ট ভর করে। আদ্রের কথা ভীষণ মনে পড়ে। আদ্র আজও অনুর ফোনে কল দেয় কিন্তু অনু ফোন ধরে না। অনু মনে মনে বলল,
–কেন আদ্র তুমি সেদিন আমার জন্য একটুও অপেক্ষা করলে না? যাওয়ার আগে আমাকে দেখার জন্য তোমার মন কি একটুও উতলা হয় নি? আমি সেদিন তোমাকে দেখতে পেলাম না। একটু জড়িয়ে ধরে কাঁদতেও পারলাম না। সেদিন আমার মনের অবস্থা কি হয়েছিল তুমি কি জানো? জানো না। তোমার ফোন আমি ধরবো না। যতদিন পর্যন্ত না তুমি দেশে ফিরছো ঠিক ততদিন পর্যন্ত আমি তোমার ফোন ধরবো না। তুমিও আমার মতো কষ্ট পাও। আমার সাথে কথা বলার জন্য নিশ্চয়ই তুমি ছটফট করছো। সেই ছটফট সেদিন এয়ারপোর্টে আমিও করেছিলাম কিন্তু তুমি চলে গিয়েছিলে। কেন চলে গেলে তুমি লন্ডনে? আমাকে ফেলে রেখে যেতে তোমার বুকটা একটুও কাঁপল না?

অনু চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল ঠিক কিছুক্ষণ পর ফোন বেজে উঠল। অনু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল আদ্র ফোন করেছে তাই অনু রিসিভ করল না। ঐদিকে আদ্র অনবরত ফোন দিতে দিতে একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। আদ্র নিজমনে বলল,
–দুইটা বছর চলে গেল। কিন্তু আমার ফোন তুই রিসিভ করলি না অনু। প্রতিদিন তোকে ফোন দেই তাও তুই ফোন ধরিস না। তাও আশা করে বসে থাকি একদিন হয়তো তুই ফোন ধরবি। কিন্তু তুই ফোন ধরিস না। ঠিক আছে অনু জাস্ট ওয়েট। আমি খুব শীগ্রই ফিরছি তোর কাছে।তোর সাহস হয়তো একটু বেশিই বেড়ে গেছে। আদ্রের ফোন রিসিভ না করার ফল তুই ঠিক টের পাবি। আমি আসছি তোর কাছে।
আদ্র সিগারেট হাতে নিয়ে দেশলাই থেকে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খেতে লাগল। ধোঁয়া চারিপাশে ছড়িয়ে গেল। সিগারেটটি পোড়ার সাথে সাথে একটু একটু করে আদ্রের বুকের ভিতরটাও পুড়তে লাগল।
সকাল হলে অনু ভার্সিটিতে চলে যায়। ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে আবারও অনুর কারও সাথে ধাক্কা লাগে। মেজাজ খারাপ হয়ে উপরে তাকিয়ে পল্লবকে দেখে অনু অবাক হয়ে যায়। অনু অবাক হয়ে বলল,

–আপনি এখানে?
পল্লব অবাক হলেও পরমুহূর্তেই হেসে বলল,
–হেই অনু আপনি এখানে?
অনু বিরক্ত স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
–আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে বলছে।
পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–কিছু বললেন অনু?
অনু হাসার চেষ্টা করে বলল,
–না, না কিছু না।
–আপনি কি এই ভার্সিটিতেই পড়েন?
–হ্যা। আপনি এখানে কেন?
–আমিও এই ভার্সিটিতেই পড়ি। আপনি কোন ইয়ার পড়েন?
–অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। আপনি?
–আমি মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার। আপনার থেকে অনেক বড় আমি। তাই আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?যদি আপনি কিছু মনে না করেন!
অনুর মনে মনে বিরক্ত লাগলেও হেসে বলল,
–হ্যা বলতে পারেন। কিছু মনে করব না।
পল্লব তাড়াহুড়ো করে অনুকে বলল,
–আমার একটু কাজ আছে। আমি আসি। ওকে।
–হুম ওকে।
পল্লব তাড়াতাড়ি করে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। অনু এখনও দাঁড়িয়ে আছে। তারপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনুও ভার্সিটির ভিতর চলে গেল। ক্লাস শেষ করে অনু বাসায় যাচ্ছিল তখন রাস্তায় পল্লব ডেকে উঠল,
–হেই অনু দাঁড়াও।
কন্ঠটা আগেও শুনেছে অনু। তাই পেছন ফিরে পল্লবকে দেখে একটু ঘাবড়ে গল। অনু দাঁড়িয়ে পড়ল। পল্লব অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–বাসায় যাচ্ছো নিশ্চয়ই?
অনু গম্ভীর স্বরে বলল,
–হ্যা।
–আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই?
–দরকার নেই।

–কিন্তু কেন? আমি তোমার না শুনবো না। আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তবেই ছাড়ব।
অনু বিরক্তি স্বরে পল্লবকে বলল,
–আজব তো! আপনি সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন থেকেই আমার পিছু লেগেছেন! সমস্যা কি আপনার?
অনুর কথায় পল্লবেরও রাগ হলো। তাই অনুকে বলল,
–আমি তোমাকে মানবতার খাতিরে বাসায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম আর তুমি আমাকে অপমান করলে?
অনুও রেগে চিৎকার করে পল্লবকে বলল,
–কে বলেছে আপনাকে মানবতা দেখাতে? আমি বলেছি? ননসেন্স।
অনু ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেল। পল্লবের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই পল্লব বাঁকা হাসল।
আরও কয়েকটা দিন পাড় হয়ে গেল। আজ দুপুরে শপিংমলে অনু চুড়ি কিনতে যায়। কোনো চুড়িই অনুর পছন্দ হচ্ছে না। অনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ চোখের সামনে অনু লাল ও গোল্ডেনের পাথর বসানো একটা জমকালো চুড়ি দেখতে পেল।কেউ অনুর মুখের সামনে চুড়িগুলো ধরে রেখেছে। অনু মুচকি হেসে চুড়িগুলো ধরতে গিয়েও পারল না। চুড়িগুলো অনুর চোখের সামনে থেকে কেউ সরিয়ে নিল। অনু পেছন ফিরে দেখল পল্লব দাঁড়িয়ে আছে। পল্লব মুচকি হেসে সেই চুড়িগুলো হাতে নিয়ে অনুকে বলল,

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৯

–কি চুড়িগুলো পছন্দ হয়েছে?
অনু অবাক হয়ে বলল,
–এখানেও আপনি?
পল্লব হেসে অনুকে বলল,
–তুমি যেখানে আমি সেখানে।
অনু পল্লবকে জিজ্ঞেস করল,
–আপনি আমাকে ফলো করছিলেন?
পল্লব কথা এড়িয়ে অনুকে বলল,
–চুড়িগুলো তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা এটা বলো?
অনু সাথে সাথেই বলে উঠল,
–হ্যা। চুড়িগুলো আমাকে দিন।
পল্লব দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
–কিন্তু আমি চুড়িগুলো তোমাকে দিব না।
অনু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে পল্লবের দিকে তাকাল। অনুর মন খারাপ হয়ে গেল। পল্লব অনুর মন খারাপ দেখে শান্ত স্বরে বলল,
–এই চুড়িগুলো তোমাকে দিতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে।
অনু পল্লবকে সন্দেহী স্বরে জিজ্ঞেস করল,
–কি শর্ত?
–তোমাকে আমার ভালো বন্ধু হতে হবে। কি রাজি?
অনু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
–আমার কোনো বন্ধুুর প্রয়োজন নেই। আমার চুড়িগুলো লাগবে না।

অনু শপিংমল থেকে বেরিয়ে গেল। পল্লব চুড়িগুলো তাড়াতাড়ি করে কিনে নিয়ে এসে অনুর পাশে পাশে হাঁটতে লাগল। অনু আরও তাড়াতাড়ি করে হাঁটতে লাগল। পল্লব এবার দাঁড়িয়ে পড়ল। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থেকে পল্লব অনুকে বলল,
–তুমি আমাকে এভাবে ভয় পাচ্ছো! আমি কিন্তু কোনো গুন্ডা নই।
অনু হাঁটতে হাঁটতেও পল্লবের কথায় থেমে গেল। পেছন ফিরে একটু মুচকি হেসে অনু পল্লবকে বলল,
–আমি জানি আপনি গুন্ডা নন।
আজ প্রথম পল্লব অনুর মুখে সুন্দর মুচকি হাসি দেখতে পেল। এর আগে অনু হাসলেও পল্লব বুঝতে পারত অনু মন থেকে হাসছে না।পল্লবের মন খারাপ চলে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠল।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১১