তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১৭ || Anika Fahmida

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১৭
Anika Fahmida

আদ্র রাগী স্বরে অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–অনু তোর পাশে দাঁড়ানো এই ছেলেটি কে?
আদ্র রেগে কথা বলায় অনু ভয়ে কেঁপে উঠল। আদ্রের চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হিংস্র বাঘের মতো আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় আদ্রকে বলল,
–আদ্র ও হলো আ.. আমার বন্ধু পল্লব।
আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলল,
–বাহ্ অনু। আমি বিদেশ যাওয়ার পরেই আবার নতুন ছেলে বন্ধু জুটিয়েছিস। খুব ভালো তো। তোকে আমি এবার বুঝাবো এর ফল কি হতে পারে।
অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিললো।এদিকে পল্লব কিছু বুঝতে পারছে না। পল্লব আদ্রকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। আদ্রকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আদ্র ভীষণ স্মার্ট ও রাগী ছেলে। আদ্র দেখতেও পল্লবের থেকে বেশি সুদর্শন। আগে পল্লব ভাবতো পল্লবের থেকে বেশি সুন্দর ছেলে মনে হয় কেউ নেই। কিন্তু আজ আদ্রকে দেখে পল্লবের নিজের প্রতি অতি সুন্দরের ধারণা ভেঙে গেল।কারণ পল্লবের থেকেও আদ্র দেখতে বেশি সুন্দর ও স্মার্ট। তাই পল্লব আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,

–আপনি অনুর কে হন?আর এভাবে কেন অনুর সাথে কথা বলছেন?
আদ্র পল্লবের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,
–আমি অনুর হবু স্বামী। আমার নামটা বলবো?বলেই ফেলি নাহলে আবার চিনবেন কি করে?আমার নাম সম্রাট হোসেন আদ্র। ও হ্যা আমি অনুর হবু স্বামী তো বটেই তার সাথে আমি অনুর একমাত্র প্রেমিক। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আমি অনুর কে হই।
পল্লব মন খারাপের করে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্রকে পল্লব ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।
এদিকে আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে অনুর হাত শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলল,
–মিস আনিকা ফাহমিদা অনু। আপনার সাথে বোঝাপড়া আমার বাকি আছে। চলুন তাহলে।
–আদ্র আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
আদ্র অনুকে ভার্সিটির সামনে থেকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। পল্লব এখন বুঝতে পারল এই সেই অনুর ভালোবাসার মানুষ আদ্র। যাকে অনু ভীষণ ভালোবাসে। পল্লবের বুকে হাজারও কষ্ট নিয়ে অনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আদ্র অনুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পল্লব কিছু বলতেও পারল না। কি বলবে? অনুর উপর যে পল্লবের কোনো অধিকার নেই। এদিকে অনু আদ্রের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আদ্র এমনভাবে অনুর হাত শক্ত করে ধরেছে যার কারণে অনুর হাতে ভীষণ ব্যথাও করছে।
আদ্র গাড়ির দরজা খুলে অনুকে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলল। অনু গাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অনু ব্যথা পেলেও কিছু বলল না। অনুর ভীষণ ভয় করছে। অনু আদ্রের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আদ্রকে ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। আদ্র গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই বলল,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

–তাই তো বলি আমাকে কেন তুই বিয়ে করতে চাস না! নতুন প্রেমিক জুটিয়েছিস।এজন্যই আমাকে আর ভালো লাগে না তাই না?
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–এসব তুমি কি বলছো আদ্র? পল্লব শুধু আমার বন্ধু। এর বেশি কিছু নয়।
–একদম চুপ। পল্লব যদি তোর বন্ধুই হয় তাহলে তুই আমাকে বিয়ে করতে চাস না কেন? এই পল্লবের জন্যই তো নাহলে কার জন্য? তোর বাবার জন্য? তোর বাবাকে কি আমি ভয় পাই? তুই আমাকে তোর বাবার মেনে না নেওয়ার কথা বলে মিথ্যে বলেছিস। আসলে তুই পল্লবের সাথে প্রেম করিস। তাই আমাকে বিয়ে করতে তোর এতো আপত্তি। কিন্তু অনু তুই আমাকে চিনিস না। আমি আজই তোকে বিয়ে করব।আমার অগোচরে অন্য ছেলের সাথে তুই মধুর আলাপ করে বেড়াবি আর আমি বসে বসে ললিপপ খাবো তাতো হয় না ডেয়ার অনু।
অনু বিরক্ত স্বরে চোখ বন্ধ করে আদ্রকে বলল,
–আদ্র তোমর মুখের ভাষা ঠিক করো। আমি পল্লবকে জাস্ট আমার বন্ধু মনে করি। আর কিছু মনে করি না। তুমি বুঝতে কেন চাইছো না?
আদ্র গাড়ি থামিয়ে দিল৷ অনুর কাছে মুখ নিয়ে এসে অনুর গাল চেপে ধরে আদ্র বলল,
–আমি সবই বুঝতে পারছি।আমার কথাও এখন তোর কাছে বিষ মনে হচ্ছে? ঠিক তো?
অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। কিন্তু আজ যেন আদ্রের অনুর প্রতি কোনো মায়া হচ্ছে না বরং ভীষণ রাগ হচ্ছে। আদ্র অনুর গাল ছেড়ে দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

–জানিস অনু? তুই সকাল থেকে কিছু খাস নি শুনে তোর জন্য আমি নিজের হাতে খাবার বানিয়ে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে গাড়িতে এনে বসিয়ে নিজ হাতে খাওয়াবো। কিন্তু তুই? তুই কি করলি? আরেক ছেলের সাথে ভাব জমিয়েছিস? ঐ পল্লবটা তোর বন্ধু কি করে হলো? এজন্যই কি আমি বিদেশ থাকাকালীন তুই আমার ফোন ধরতি না অনু?
অনু কাঁদতে কাঁদতে আদ্রকে বলল,
–আদ্র তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। পল্লব শুধু আমার বন্ধু। তুমি চলে যাওয়ার পর একটা বান্ধবীর বিয়ে বাড়িতে ওর সাথে আমার দেখা হয়। পড়ে আবার ভার্সিটিতে গিয়ে জানতে পারলাম সে আমার ভার্সিটিতেই পড়ে। পল্লব আমার অনেক ক্লাস সিনিয়র। আমি তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই নি আদ্র। বিশ্বাস করো? সে আমাকে একবার গুন্ডার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল তাই তার প্রতিদান স্বরূপ সে শুধু আমার বন্ধু হতে চেয়েছে। তাই আমি বন্ধু হয়েছি। আর কিছু নয় আদ্র।
অনু কান্না করতে করতে কথাগুলো বলছিল। আদ্র বুঝতে পারল সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে অনুকে এতোগুলো কড়া কথা বলে। তাই আদ্র অনুর চোখের জল মুছে দিতে লাগল। অনু আদ্রের দিকে কান্না জড়ানো টলমল চোখে তাকিয়ে রইল। আদ্র শান্ত স্বরে অনুকে মন খারাপ করে বলল,
–আর কখনও যেন তোর আশেপাশে পল্লব নামের ছেলেটিকে না দেখি। আমার কথা মনে থাকবে তো?
অনু মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যা জানাল। আদ্র অনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–এখন আর কাঁদিস না অনু। আই এম সরি। সবটা না জেনে আমি তোর উপর বেশি রাগ দেখিয়ে ফেলেছি।

অনু আদ্রের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–তুমি আমাকে অনেক ভয় পাইয়ে দিয়েছ। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম এই ভেবে যে তুমি আমাকে হয়তো অনেক ভুল বুঝে ফেলেছ। আমাকে হয়তো আর বিশ্বাস করবে না।
–আমি তোকে অবিশ্বাস করি নি৷ কিন্তু এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল তুই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিস।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাহলে অন্য কারও সাথে কেন প্রেম করতে যাবো? কেন তোমাকে ধোঁকা দিব?
–তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস অনু?
–হ্যা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে অনুর গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
–তাহলে আমার একটা কথা রাখবি?
–কি কথা বলো?
–তোকে আজ আমাকে বিয়ে করতে হবে।
–আদ্র আমি তোমাকে সেদিন কি বললাম? আমার সামনে পরীক্ষা!
–আমি তোকে বিয়ের পরেও পড়তে দিব। তোর পড়াশোনায় কোনো অসুবিধা হবে না।বিয়েটা করে ফেললে আর কোনো ভয় থাকবে না। কেন বুঝছিস না?
অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আদ্র অনুর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় করে অনুরোধ করে বলল,
–প্লিজ অনু আমি তোকে আজ বিয়ে করতে চাই। আমাকে তুই ফিরিয়ে দিস না।
আদ্র এমনভাবে তাকিয়ে অনুকে কথাগুলো বলছে যে অনু কিছুতেই না করতে পারছে না। এতো নিষ্পাপ মুখ করে কেউ বললে কিভাবে কেউ না করবে? তাই অনু আদ্রকে বলল,
–ঠিক আছে।

আদ্র অবাকের সাথে খুশি হয়ে অনুকে বলল,
-অনু তারমানে তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি?
অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল,
–হুম।
আদ্র খুশিতে অনুকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল৷ অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আরে আরে কি করছো? ছাড়ো বলছি।
–আই লাভ ইউ অনু।
আদ্রের বলা কথায় অনুর হৃদপিন্ডের কম্পন দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। একই তো আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে তারওপর আবার আদ্র ভালোবাসি বলছে তাই অনু চোখ বন্ধ করে নিজেও আদ্রকে বলল,
–আই লাভ ইউ টু আদ্র।
আদ্র অনুর কপালে চুমু দিল। তারপর অনুকে নিজের কোলের মধ্যে বসিয়ে রেখেই গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র আমাকে ছাড়ো। তোমার গাড়ি চালাতে অসুবিধা হবে।
–আমার কোনো অসুবিধা হবে না।
–কিন্তু আমার তো ভয় করছে। যদি এক্সিডেন্ট হয়?
–কিছু হবে না। বললাম তো।
আদ্র হঠাৎ গাড়িটা একটা পাশে দাঁড় করাল। অনু বাইরে তাকিয়ে দেখল একটা পার্ক। গাড়ি থেকে অনু নামতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে আদ্র অনুর হাত চেপে ধরে অনুকে সিটে বসিয়ে দিল। অনু মন খারাপ করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

–আবার কি হলো?
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–আমি নিজের হাতে তোর জন্য খাবার বানিয়ে নিয়ে আসলাম। আর তুই খেয়ে দেখবি না খাবারটা কেমন হলো?
অনু খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে আদ্রকে বলল,
–তুমি নিজের হাতে আমার জন্য খাবার বানিয়েছো আর আমি খাবো না তা কি করে হয়? দাও দাও আমি খাবো।
আদ্র গাড়ির পেছনের সিট থেকে টিফিন বক্স হাতে নিয়ে খাবার বের করল। অনু হা করে খাবারের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আদ্র অনুর প্রিয় খাবার চিংড়ি মাছের মালাইকারি রান্না করে এনেছে, সাথে ফ্রাইড রাইস, আবার চিকেন ফ্রাইও করে এনেছে। অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল৷ আদ্র অনুর তাকানো দেখে হেসে বলল,
–আরে তাকিয়েই থাকবি নাকি খেয়েও দেখবি? আয় তোকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দেই।
অনুও বারণ করল না। আদ্রের হাতে খাবার খেতে অনুর খুব ভালো লাগে। তাই অনু হা করল।আদ্র অনুকে খাইয়ে দিতে লাগল। খাওয়ার সময় অনুর মুখের চারপাশে খাবার লেগে যাওয়ায় অনু বার বার মুখ মুছে নিচ্ছিল। আদ্র অনুর কান্ড দেখে বলল,
–এভাবে মুখ মুছার কি আছে?
অনু আদ্রকে মন খারাপ করে বলল,
–মুখের চারপাশে খাবার লেগে যাচ্ছে। আমাকে এ অবস্থায় দেখতে নিশ্চয়ই অনেক পঁচা লাগছে?
আদ্র হেসে অনুকে বলল,
–নারে বোকা মেয়ে। তোকে একটুও দেখতে পঁচা লাগছে না। বরং তোকে আরও দেখতে বেশি কিউট লাগছে।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১৬

অনু খেতে খেতে খুশি হয়ে বলল,
–সত্যি?
আদ্র অনুর মুখে খাবার দিয়ে হেসে বলল,
–হ্যা সত্যি।
অনু খেতে খেতেই মুচকি হাসল। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
–তোর এই হাসিমুখটা দেখার জন্য আমি সব করতে পারি অনু। সব করতে পারি।
বিকেলের দিকে আদ্র অনুকে একটা ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল। এটাও আদ্রের নিজেরই কেনা ফ্ল্যাট। কিন্তু এই ফ্ল্যাটে কেউ থাকে না। অনু রুমের ভিতর গিয়ে দেখল আদ্র অনুর বিয়ের জন্য লাল বেনারসি, গয়না আর সাজগোজের সব জিনিস একটা বিছানাতে রেখেছে।
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–একটু পর কি আমাদের বিয়ে হবে?
আদ্র মুচকি হেসে অনুকে বলল,
–হ্যা। তুই এখানে বস। একটু পড় তোকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেয়েরা এসে পড়বে

অনু কিছু না বলে দাঁড়িয়ে রইল। আদ্র অনুর কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। অনু চুপ করে বিছানায় বসে শাড়ি আর গয়নাগুলো দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মেয়েরা অনুকে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল। আদ্র রুমে প্রবেশ করে অনুর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। অনু লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। তবুও অনু চোখ তুলে একবার আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর সাথে মেচিং করে লাল পাঞ্জাবি আর পেন্ট পড়েছে। আদ্রকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে । কিছুক্ষণ পর কাজী আদ্র ও অনুর বিয়ে পড়ানোর জন্য চলে আসলো। আদ্র বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করেছে। এবার অনুর পালা। অনুর রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে যাবে এমন সময় কেউ অনুর হাত থেকে কলম নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১৮