Violent love last part 

Violent love last part 
Mariam akter juthi

“রাতের আঁধারের মতো কাটছে সময়। না কেউ থামিয়ে রাখতে পারছে? না কারো জন্য থেমে আছে? শুধু পোলাহে পোলাহে পার হচ্ছে। ঠিক তেমনি আরও একটি সুন্দর সকালের সূচনা পেরিয়ে মধু রোদ উঁকি দিল দুনিয়ার বুকে। কত সুন্দর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। তাদের না আছে কোন পাওয়ার বেদনা? আর না আছে কোন কিছু হারানোর হতাশা? তারা মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে ব্যস্ত। শহরের ছোটাছুটি কত গাড়ির তীব্র হর্নের শব্দ। তারাও পাখিদের মত সবাই যে যার নিজ কাজে ব্যস্ত। তেমনি খান মহলের কর্ত্রীরা সকালে সবার ব্রেকফাস্ট এর জন্য রান্নাঘরে খাবার বানাতে ব্যস্ত। কিন্তু ঘুম নেই ফারির চোখে। ফারি সেই কালকে সন্ধ্যার পর লুসিয়ানের কথায় ব্যথিত হয়ে ছাদ থেকে নেমে এসে, যে দরজা আটকে নিজেকে রুমবন্দি করেছে। সেই সময় থেকে এখন সকাল আটটা অব্দি একইভাবে মেঝেতে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আছে। সারারাত সে শুধুই নীরবে চোখের জল ফেলেছে। কাউকে শুনতে দেয়নি তার আর্তনাদ বুকফাটা কষ্টের বেদনা। তবে তার মন তখন চিৎকার করে কেঁদে বারবার একটা কথাই বলতে চাইছিল,

“ভালোবাসা অন্যায় না, তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা অন্যায়” আর আমি জেনে শুনে কেন সেটা করলাম? হে আল্লাহ! আমার এত কেন কষ্ট হচ্ছে? কেন আমি সহ্য করতে পারছি না? হে আল্লাহ হয়তো আমাকে আপনার কাছে নিয়ে নিন। নয়তো আমার হৃদয়ের ব্যথাটা কমিয়ে দিন।
ফারি যখন অজস্র যন্ত্রণায় কাতরিয়ে কান্না করছিল। তখন সময় পেরিয়ে কখন যে রাত্র হয়ে গেছিল এটা সে স্মরণে আনতে পারিনি। রাতের খাবার নিয়ে মেহজাবিন খান যখন ওকে ডাকতে ওর রুমে এসে দরজা নক করেছিল। তখন ফারি অনেক কষ্টে নিজের কান্নাটাকে আটকে, কোনরকম বলেছিল, — ‘আম্মু আমি খাব না তুমি নিয়ে যাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেহজাবিন খান মেয়ে খাবেনা শুনে ফের দ্বিতীয়বার আর কথা বললেন না। ফারি কেন খাবে না সেটা ওনার জানা? কারণ লুসিয়ান যখন ফারিকে কথাগুলো বলছিল তখন উনি ছাদের দরজার দাঁড়িয়ে ওদের সব কথাই শুনছিলেন। যখন ওদের কথা শেষ হয়ে আসে ঠিক সেই সময় উনি ছাদ থেকে নেমে আসেন। মেহজাবিন খান পুনরায় হাতের খাবারগুলো নিয়ে চলে যেতে। ফারি আবারো কান্নায় ভেঙে পড়ল। সেই থেকেই এখন সকাল আটটা। ফারির চোখে এখন কান্নাটাও যেন আসছে না। কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে ছোট্ট শরীরটা। চোখ দুটো অতিরিক্ত কান্নার কারণ ফুলে টয়টুম্বুর হয়ে গেছে। চোখের ভিতর সাদা আবরণটা যেন লাল আবরণে আবদ্ধ হয়েছে। চেহারাটা কেমন শুষ্ক হয়ে গেছে। চুলগুলো হয়ে আছে এলোমেলো। ফারি তখনো অনুভূতি শুন্য হয়ে মেঝেতে বসে বিছানায় হাত দুটো রেখে তার উপর হেলান দিয়ে মেঝেতে দৃষ্টি স্থির করে রাখল। হঠাৎ করে আনমনে তাচ্ছিল্য হেসে ওঠে আওড়ালো,

“যে এই দুনিয়ার বুকে আর থাকবেই না, তার আর কিসের কষ্ট? জার দেহটা অন্যের নামে পরিপূরক, সে কি করে সেটা আড়ালে রাখবে?”
ফারির কথাগুলো হয়তো খুবই সামান্য তবে এর মর্মার্থ বিশাল আকাশের মত। সে শুধু ফারি নিজেই জানে।
“আজও প্রতিদিনের মতো, শরীরে নিজের থেকেও ভারী কিছু অনুভব করতে জুথি তেতে উঠে তেজ দেখিয়ে শরীরের উপর থেকে আরিশের হাত পা সরিয়ে নেমে যেতে নিলে আরিশ ওর হাত ধরে টেনে আবারো বিছানায় ফেলে টেনে বুকের মধ্য নিয়ে বলল,
‘কই যাচ্ছ?
‘,,,,,,,।
‘আচ্ছা চুপ থাকো! বলতে হবে না। তবে আমার বুকের মধ্যে এভাবেই থাকো।
‘থাকবো না আমি আপনার বুকের মধ্য।
‘ঠিক আছে যা! — বলে আরিশ জুথি কে ছেড়ে দিতে জুথি উঠে সেখান থেকে চলে আসতে, আরিশ সেদিক তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। অতঃপর মনে মনে আওড়ালো,

‘আমার বোকা মৌ পোক তোকে ঘুরে ফিরে সেই আমার বুকেই আসতে হবে।
“সময়টা মনে হয় মধ্য দুপুর! খানমহলে সবার ব্যস্ততা। আজ ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিন উনারা নিজ দেশে ফিরে যাবেন। সেই সুবাদে উনাদের আপ্যায়নিক, যথাযথভাবে করায় বিভিন্ন খাবার নিজ হাতেই করছেন বাড়ির কর্ত্রীরা। উনারা দুপুরের খাবার সবাইকে খাইয়ে, নিজেদের রুমে রেস্ট নিতে বললেন। বিশেষ করে ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিন উনাদের। কারণ উনাদের সন্ধ্যা সাতটায় ফ্লাইট। তবে এখনো খান মহলে ফেরেনি আরিশ। সেই সকালে উঠে না খেয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল। আয়ান কেও সাথে করে নেয়নি। কি কাজ আছে বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। সানজিদা খান পরপর মহলের মেইন দরজার দিক তাকাচ্ছেন ছেলেটা আসলো কিনা দেখার জন্য। সানজিদা খানকে পরপর দরজার দিক তাকাতে দেখে পাশাপাশি কাল সন্ধ্যার পর থেকে, লুসিয়ানের হাবভাব সব মিলিয়ে মেহজাবিন খান সেদিক তাকিয়ে ঘুমড়ানো মুখেই বললেন,

‘বড় ভাবি! আরিশ আব্বু মনে হয় না এখন আসে। ওর খাবারগুলো তুমি বরং ঢেকে রাখো।
‘কি হয়েছে তোমার? কেমন মুখটা ফ্যাকাসে লাগছে?
‘না বড় ভাবী তেমন কিছু না! আসলে মনটার মধ্যে কেমন জানি করছে। কিছু ভালো লাগছে না।
‘আচ্ছা একটু স্যালাইন গুলে খাও ঠিক হয়ে যাবে।
‘হুম।

“কেমন থমকানো পরিস্থিতি, ডুমরে আছে। খান মহলের ছেলে মেয়েদের ছোটাছুটি আজ যেন তার কও নেই। থাকবে কি করে? চঞ্চল জুথি সে নিজের রুমে দরজা আটকে ঘাপটি মেরে বসে আছে। রোদ তাহলে সে তো বরাবরের জন্যই ঠান্ডা প্রকৃতির। বাকি রইল ইভা? সে তো তার জামাই এর সাথে জামাইয়ের বাড়িতে। যদিও সেও রোদের মতো ঠান্ডা প্রকৃতির। তবে ভাই বোনদের সাথে থাকলে সেও টুকটাক গল্প করে। আর রইল বাকি ফারি? সে যেখানে থাকবে, সেখানে মানুষ মন মরা হয়ে থাকতেই পারবে না। আর তার সাথে যদি হয় জুথি তাহলে তো কোন কথাই নেই। কিন্তু আজ দুজনার কেউই নেই। ফারি দুপুর এলিয়ে যেতে বিছানার উপর থেকে হেলিয়ে রাখা মাথাটা তুলে মেঝে থেকে উঠতে নিলে হঠাৎ চোখের সামনে সব কিছু কালো অন্ধকার হয়ে যেতে বিমুড়ি খেয়ে পুনরায় মেঝেতে পড়ে বিছানার চাদরটা খামচে ধরলো। হয়তো এমনটা হওয়ার কারণ সন্ধ্যা থেকে এই দুপুর অবধি না খেয়ে একইভাবে বসে থাকা।

আস্তে আস্তে চোখের সামনে থেকে অন্ধকার কেটে যেতে ফারি উঠে বিছানায় বসে কিছু একটা মনে মনে আবারো ভাবলো। ভাবা অনুযায়ী কভারের কাছে গিয়ে একদম নতুন ভাঁজ না ভাঙ্গা একটা গোল ফ্রক হাতে নিয়ে ম্যাচিং সবকিছু নিয়ে গোসলের জন্য ওয়াশরুমে চলে গেল। বেশ সময় নিয়ে গোসল শেষ করে ফারি বের হয়ে আয়নার সামনে এসে নিজেকে একবার দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো। অতঃপর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে, ভিজে টপ টপ পানি পড়া চুলগুলো আঁচড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে তার পাশে রাখা চুরির কাতার থেকে এক মুঠো গাড়ো নীল রঙের চুড়ি নিয়ে দুই ভাগে দুই হাতে পড়ে নিল। সাথে হালকা সাজ। ঠিক ততটুকুই, যতটুকু মৃত্যুর পর অন্য মানুষ তাকে সাজিয়ে দিত কবরে সজ্জিত করার জন্য। সেটাই ফারি নিজা হাতে নিজেকে সাজিয়ে নিল।

মানুষ দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকে, কত সুন্দর করিই না নিজেকে সাজায়? কিন্তু দিনশেষে চরম সত্য মৃত্যু টাকে বেছে নিতেই হয়। হয়তো স্বইচ্ছায় নয়তো অনিচ্ছায়। তবে সেটা সেও। দুনিয়ার চরম তিতা সত্যি। ফারি নিজেকে শেষ দেখায় যখন অতি ব্যস্ত তখন অপর প্রান্তের লুসিয়ান ঠিক তার উল্টোটা। এখন বেলা প্রায় ৩.২৩ মিনিট। লুসিয়ান সারা ঘরে পাইচারি করছে, তো কারো একটা ফোনের অপেক্ষা করছে। ওরে এমন আরো কিছু মিনিট পাইচারি করার মধ্য হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির ফোন পেয়ে দ্রুত সেটা রিসিভ করে কানে ধরতে অপর পাশে বলল,

‘ঠিক চারটা বাজে হেলিকপ্টার চলে আসবে।
‘তমি কখন অসবে?
‘আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসছি।
‘অচ্ছা।
আরিশের সাথে কথা হয়ে গেলে লুসিয়ান ফোনটা রেখে সোজা হাটলো ফারির রুমের দিকে। ফারি যখন নিজেকে দেখতে ব্যস্ত, এমন সময় দরজায় করাঘাতের শব্দ পেয়ে সেদিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে আবারো আয়নায় তাকাতে পুনরায় দরজায় করাঘাত করে লুসিয়ান বলল,
‘‘ওপেন দ্য ডোর ফারি’’

ফারি দরজার বাহিরে মায়ের জায়গায় লুসিয়ানের গলা পেয়ে নাক ফুলিয়ে চোখ থেকে পানি ফেলে ঠোট কামড়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সেখান থেকে উঠে দরজার কাছে এসে বলল,
‘প্রয়োজন তো ফুরিয়ে গেছে। তাহলে কেন এসেছেন?
“আই’ল সে দ্যাট লেটার, ফার্স্ট ওপেন দ্য ডোর”
~অর্থ: সেটা পরে বলছি আগে দরজা খোলা।
‘বললাম তো প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তাহলে কেন? আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান, যেহেতু চলে যাচ্ছেন শেষবারের জন্য আবারো কি আপনার ইচ্ছে হলো ওই,,
‘ফারিররর!
‘কেন সত্যি কথাটা গায়ে লাগলো বুঝি?

“গার্লস’ ননসেন্স টক। দেয় ওভারথিঙ্ক থিংস ফর নো রিজন। হোয়াট ইজ নট ইম্প্লাইড, তারা আন্ডারস্ট্যান্ড টু মাচ দ্যাট’স দেইর নেচার।”
~অর্থ: মেয়েদের ফালতু কথা। শুধু শুধু বেশি বোঝা। যেটা বোঝানো হয় না, সেইটা বেশি বোঝা মেয়েদের স্বভাব।
‘দেখুন যেটা বুঝেছি,,
‘উইল ইউ ওপেন দ্য ডোর, অর শুড আই কল এভরিওয়ান ইন দ্য হাউস অ্যান্ড টেল দেম একজ্যাক্টলি হোয়াট আওর রিলেশনশিপ ওয়াজ?’
~অর্থ: তুমি দরজা খুলবে নাকি আমি বাড়ির সবাইকে ডেকে বলে দিব তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কেমন ছিল?
‘ম মানে’? ঘাবড়ে গিয়ে।

‘মাই হেড ইজ গেটিং হট, বাট ওপেন দ্য ডোর। অদারওয়াইজ, রাইট নাউ,
~অর্থ: আমার মাথাটা গরম হচ্ছে কিন্তু,দরজাটা খোলো। নয়তো এক্ষুনি, — ততক্ষণে ফারি রাগের বসে দরজাটা খুলে দিতে লুসিয়ান ভিতরে আসতে না আসতে পুনরায় ওর গালে ঠাটিয়ে চড় লাগিয়ে বলল,
‘লজ্জা হওয়া উচিৎ। আপনার মতন মানুষদের।
ঘেন্না করি আমি আপনাকে! ঠিক ততটাই ঘৃণা করি যতটা ঘৃণা করলে একটা মানুষের মুখে থুথু ফেলতে মনে চায়। – বলে লুসিয়ান কে বের করে দিতে নিলে, লুসিয়ান হুট করেই ফারির দুই বাহু চেপে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে কন্ঠ রেনিয়ে বলল,
‘সুযোগ থাকলে থাপ্পরের প্রতিশোধ রোমান্স করে মিটিয়ে নিতাম। জাস্ট এখন সময় নেই হাতে। তাই দ্রুত চলো। – বলে ওর বাহু ছেড়ে ডান হাতটা ধরে বের হতে নিলে ফারি ঠাঁয় জায়গায় দাঁড়িয়ে বলল,
‘মানে? এই দাঁড়ান দাঁড়ান, কোথায় যাব?

‘শ্বশুরবাড়িতে!
‘বেইমান অর্ধ পাগল লোক আমার হাত ছাড়ুন।
‘হাত একবারে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরই ছাড়া পাবে।
‘আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। কোন বেইমানের সাথে আমি দ্বিতীয়বার – ফারি আরো কিছু বলতে নেবে তার আগেই লুসিয়ান ওর হাত টেনে রুম থেকে বের করে করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ি থেকে নেমে আসলো।
“বিকেল হয়ে আসার দরুন বাড়ির সব মানুষই বসার ঘরে সোফায় বসে টুকটাক কথাবার্তা বলছিলেন। আজ সাফওয়ান খান সাইফুল খান দুজনই বাসায়। দুজনার কেউই অফিসে যান নি। শুধু রাদিফ মাহমুদ খান দুজনে গিয়েছে। দুপুরে খেতে আশায় উনারাও আর যাননি। রাদিফ দুপুরে খেয়ে আর নিচে নামেনি। ক্লান্তিতে বিছানায় শুতে রোদ কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে। আয়ন রাজনৈতিক কাজের জন্য পার্টি অফিসে গেছে সকালে এখনো ফেরেনি। তাই চার ভাই, কর্ত্রীরা। এক জায়গায় বসে ঘোষ গল্প করার মধ্য লুসিয়ান হঠাৎ ফারির হাত ধরে এভাবে টেনে সবার সামনে থেকে নিয়ে যেতে ফারি লুসিয়ানের ধরে রাখা হাতটা ছাড়ানোর জন্য বলল,

‘হাতটা ছাড়ুন বলছি!
ওদের এভাবে দরজার দিক যেতে দেখে মেহজাবিন খান উঠে তাড়াতাড়ি ওদের সামনে আসতে নিলে হঠাৎ বাগানের দিকটা থেকে ঝপঝপ আওয়াজ পেয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে তৎক্ষণে লুসিয়ান ফরিকে নিয়ে বাগানে চলে আসতে ওনারা সবাই এমন শব্দের উৎস খুঁজতে বাগানে আসতে ততক্ষণে তীব্র শব্দের ঝংকার তুলে মাত্র হেলিকপ্টারটা ল্যান্ড করল আরিশদের বিশাল বাগানটায়। গাছের চিকন চিকন ঠাল গুলো হেলিকপ্টারের তীব্র বাতাসে ভেঙ্গে বাগানে বাতাসের ন্যায় উড়িয়ে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে সবাই তাকালো গাড়ির পার্কিং এরিয়ায়। সেখান থেকে আরিশ শাহাদাত আঙ্গুলে বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বাগানের দিকে আসছে। আরিশ কে আসতে দেখে সবাই ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে লুসিয়ানের দিক তাকিয়ে বলল,

‘এসব কি হচ্ছে এখানে?
সাফওয়ান খানের কথায় লুসিয়ান কোন উত্তর করল না। মাথাটা নিচু করে ফারির হাত সেভাবেই ধরে হেলিকপ্টার এর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে উপর থেকে ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিন জুথি মনি এত তীব্র কিছুর শব্দ বাগান থেকে পেয়ে উপর থেকে ওঁরাও দ্রুতপায় নিচে এসে এসব দেখে অবাক চোখে তাকাতে লুসিয়ান ততক্ষণে ফারিকে এক প্রকার জোড় করেই হেলিকপ্টারে উঠাতে মেহজাবিন খান দৌড়ে সেদিক যেতে যেতে বললেন,
‘আরে আপনারা চেয়ে চেয়ে কি দেখছেন? আমার মেয়েটা, — ততক্ষণে ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিন ছেলেরা এমন কাজে ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘ওয়াট আর ইউ ডুইং উইথ থিজ? হাউ ডু ইউ ইউজ দেম?
~ অর্থ: কি করছো এগুলো তুমি? এটা তোমার কেমন ব্যবহার?
‘দোজ হু ডোন্ট গিভ ইভেন হোয়েন আস্কড, বউ। দের’জ নো পয়েন্ট বেগিং দেম। ইউ ওয়ান্টেড ইট, বাট দে আর সেয়িং দে ওয়োন্ট গিভ। দ্যাট’স হোয়াই আই টুক মাই উড‑বি বউ ইন সাচ আ ওয়ে দ্যাট নো ওয়ান কুড স্টপ মি।
~অর্থ: যারা চাইলে দেয় না বউ। তাদের কাছে চেইতে নেই বউ। তুমি তো চেয়েছিলে, কিন্তু এরা বলছে দিবে না। তাইতো নিয়ে গেলাম আমার হবু বউকে। যেভাবে নিয়ে গেলে কেউ বাধা দিতে পারবে না। — বলে হেলিকপ্টারে উঠে দরজাটা টেনে দিতে সাথেসাথেই হেলিকপ্টারের পাংখা গোল গোল ঘুরিয়ে সেটা আকাশের দিক উড়তে শুরু করলাম। হেলিকপ্টারটা মাথার উপর উঠে যেতে মেহজাবিন খান চিৎকার করে বললেন,
‘আরে এই ছেলে? আমার মেয়ে! বলে উনি মাটিতে বসে পড়তে সানজিদা খান দ্রুত পায় ওনার কাছে এসে দুই বাহুতে হাত রেখে বললেন,

‘মেহজাবিন তুমি এভাবে,
‘বড় ভাবি আমার মেয়েটা। ওই ছেলেটা নিয়ে গেল। ভাবি,
‘কান্নাটা আগে থামাও!
‘ভাবি আমি বলেছিলাম আমার মনটা কেমন অস্থির লাগছে। আমার মেয়ে,
‘আগে শান্ত হও মেহজাবিন।
এতক্ষণের হুট করে হয়ে যাওয়া ঘটনাটা কারো মাথায় তেমন ঢুকলো না। কি থেকে হঠাৎ কি হয়ে গেল? সবাই যখন মেহজাবিন খানকে থামাতে ব্যস্ত তখন আরিশ উনাদের সবাইকে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
‘কান্না করো না সেজো মা। ফারি ভালো থাকবে। – আরিশ কথাটা বলে উনার কাছে গিয়ে ওনাকে দার করিয়ে কিছু বলবে তার আগে মেহজাবিন খান কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন,

‘আরিশ আব্বু? আমার মেয়ে
‘হ্যাঁ মেজো মা!
‘ওই ছেলেটা একটা বিদেশী ছেলে, ও
‘তুমি চিন্তা করো না।
‘চিন্তা করব না?
‘আমি বলছি তো।
‘আরিশ।
‘হুম, আমি লুসিয়ান কে সাত বছর ধরে চিনি। ও কেমন আমি জানি। শুধু তোমাকে এতোটুকু বলতে পারি আমার উপর যতটুকু ভরসা তোমাদের, তোমরা ঠিক আমাকে যতটা ভরসা করো। ছেলে হিসেবে লুসিয়ান তার থেকেও উর্ধ্বে।

‘কিন্তু,
‘মেঝো মা আমি তোমাকে অনেক আগেই বলতে পারতাম। লুসিয়ান এর সাথে ফারি, কিন্তু বলিনি। আমার জানা ছিল তোমার বিদেশী, ফরেন্ট টাইপ ছেলে পছন্দ নয়। তাই ও এখানে থাকা কালীন কথাটা বললে দেখা যেত তুমি রাজি হতে না। পরিস্থিতিটা জটিল হতো। তাই এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া।
‘মানে?

‘হ্যাঁ সেজো মা! লুসিয়ান কাঁদছিল। তোমার মেয়েকে হারিয়ে ফেলার ভয় কাঁদছিল। ও ভীষণ ভালবাসে তোমার মেয়েকে। আমি ওর হয়ে এতোটুকু কথা দিতে পারি, ফারি ভালো থাকবে। তোমার ভাবনা থেকেও।
আরিশ কথাগুলো বলতে সবাই কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। আরিশ ছেলেটার রাগী উন্মাদ টাইপের। কিন্তু কোন কিছু বলা কিংবা করার আগে ভবিষ্যতে টা পরিকল্পনা করে নেয়। তাই এ নিয়ে মেহজাবিন খান আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে আসতে ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিন সবার মুখোমুখি হয়ে মাথাটা নিচু করে বললেন,
‘আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি কখনো ভাবি নি আমার ছেলে এমন করবে। আমি আপনাদের সবার সামনেই আপনার মেয়েকে আমার ছেলের জন্য চেয়েছিলাম। কিন্তু মেহজাবিন আপু না করায় আমি দ্বিতীয় কথা বাড়ায়নি। কিন্তু,

‘ইন্দ্রিয়া আপু, আপনি দয়া করে এভাবে বলবেন না। মেহজাবিন মেয়েদের ছাড়া থাকিনি তো। তাই ওর মেয়েদের প্রতি একটু বেশি মায়া। দু’দিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে।
ওনাদের কথার মধ্যেও সাফওয়ান খান আরিশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘কাজটা কি ঠিক হলো বাবা?
‘আব্বু, আমি বাবাই কে বলে দিয়েছি। ওরা সুইজারল্যান্ড ল্যান্ড করার সাথে সাথে ওদের বিয়েটা আগে দিবেন। তারপর, –ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফওয়ান খান সাইফুল খানের দিক তাকিয়ে বললেন,
‘ভাই তোর,

‘না ভাই! আমার কিছু বলার নেই। আরিশ যেহেতু বলছে, তাছাড়া আরিশ ওদের সাত বছর ধরে চেনে। তাছাড়া খারাপ মনে হয়নি। ছেলেটা যথেষ্ট ভালো। তাছাড়া গ্যান্টানার’ যথেষ্ট ভদ্র মানুষ। শিক্ষিত ফ্যামিলি। তাছাড়া উনি কোথায় আর আমি? সম্বন্ধ এমনি তো আসতো না। কপালে ছিল বলে এসেছে। ততটা ভাবিনি, মেহজাবিনের জন্য। ও রাজি ছিল না বিদেশি ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার। তাই বিষয়টা এতটা ভেবে দেখিনি।
ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোন আপত্তি না পেয়ে, সন্তুষ্ট হয়ে ইন্দ্রিয়া ত্যাইনিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আপনি কষ্ট নিবেন না। বিয়ের বিষয়টা আমরা ধুমধাম করেই করব ইনশাল্লাহ। – বলে বিষয়টা স্বাভাবিক নিতে না পারলেও নিঃশ্বাস ফেলে সবাইকে ভিতরে আসতে বলে নিজেও চলে এলেন। সাফওয়ান খান চলে আসছে আরিশ ইন্দ্রিয়া জুথি বাদে সবাই মহলের ভিতর চলে আসেন। সবাই চলে যেতে ইন্দ্রিয়া আরিশের কাছে এসে বললেন,

‘আমার ফ্লাই
‘ক্যান্সেল করে দিয়েছি।
‘তোমার বাবাই
‘তাকেও বলে দিয়েছি। তুমি না হয় কালকের ফ্লাইটে যাবে।
‘আচ্ছা। ধন্যবাদ।
‘কিসের জন্য?
‘সব বড় বড় জটিল বিষয়গুলোকে খুব ছোট করে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য।
ওনার কথায় আরিশ চুপ হয়ে যেতে উনি আর কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ বাড়ির ভেতর চলে গেলেন। উনি চলে যেতে জুথিও ঘুরে চলে আসতে নিলে আরিশ ওর হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে জুথি ওর হাত দুটো নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে পুনরায় চলে আসতে নিলে আরিশ আবারো ওর হাত টেনে কাছে এনে বলল,

‘কি হয়েছে? এমন করছিস কেন?
‘ছাড়ুন আমার হাত।
‘মেজাজ গরম করিস না।
‘যেই মেজাজ সব সময় আগুন হয়ে থাকে তার আবার গরম আছে নাকি?
‘মৌ!
‘কিসের মৌ হ্যাঁ? কোন মৌ নেই আপনার। বলে আবারো ওর হাত ছাড়িয়ে নিতে আরিশ ওর বাহু চেপে একটু জোরেই বলল,
‘মৌ!
‘,,,,।
‘সরি বললাম তো।

‘সরি বললেই কি সব সমাধান হয়ে যায়?
‘মৌ!
‘আমাকে যেতে দিন। হালকা চেচিয়ে।
‘দিবোনা। – আরিশ কথাটা বলতে জুথি আরিশের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোছরা মুছরি করতে আরিশ আবারো বলল,
‘আমি না ছাড়লে কোনদিনও ছাড়া পাবি না। আর যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করিস সেটা তোর ফাও চেষ্টা। – আরিশ এতোটুকু বলে থেমে আবার বলল,
‘যার জন্য সমগ্র পৃথিবীর সাথে লড়াই করতে পারি, সেখানে তাকে ছেড়ে দেওয়া এটা মাথায় আনাও বিলাসিতা।
‘কি করতে পারেন আপনি?
‘এভরিথিং!
‘আচ্ছা? মরতে পারবেন আমার জন্য?
‘,,,।

‘হহুমম মুখে যত কথা। বলে আবারো নিজেকে ছাড়াতে নিলে আরিশ ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘আমার মৌ আমাকে চেনেই না। বউয়ের জন্য মরা আরিশ খানের কাছে ক্ষুদ্র।
‘তাহলে মরুন। মরে গিয়ে দেখান। – বলে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে আসে। বলা তো আর যায় না, এই লোক কখন আবার ক্ষেপে যায়। জুথি চলে তো গেল ঠিকই রেখে গেল এক হিংস্র পুরুষকে। তার ধারণাই নেই এই পুরুষ তার জন্য ঠিক কতটা দূর যেতে পারে। আরিশ আর ঢুকলো না বাড়ির ভেতর। বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল ততক্ষণে।
“সন্ধ্যা শেষ হয়ে এখন প্রায় রাত্র। আরিশ তখন বাড়ির ভেতরে আসেনি দেখে সানজিদা খান ওকে ফোন করতে ফোন বন্ধ পেয়ে আয়ান কে ফোন দিতে আয়ান বলল, — ‘বড়মা ভাই আমার সাথেই আছে। যদি এখন অনেকটা রাত্র তাই চিন্তাটা একটু না বেশি হচ্ছে। বিকালে ওনার সেজোজা মনটা ভালো লাগছে না বলল, তার পর মুহুর্তেই এরকম একটা ঘটনা ঘটলো। এখন তার মনটাও কেমন ভালো লাগছে না। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। তাই জায়েদের রাতের খাবার তৈরি করতে বলে রুমে চলে এলেন। আয়ন সব কাজ সেরে আরিশের বলা লোকেশন অনুযায়ী একটা লেকে যেতে দেখে আরিশ একটা বেঞ্চের উপর পা দুলিয়ে বসে আছে। আয়ান আরিশ কে পা দুলিয়ে বসে থাকতে দেখে সেখানটা এগিয়ে আরিশের পাশে বসে বলল,

‘ভাই!
‘,,,।
আয়ন আরিশ কে কথা বলতে না দেখে, ও চুপচাপ বসে থাকতে আরিশ তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলল,
‘একটা কথা জানিস! – আরিশের কথায় আয়ান ওর দিকে তাকাতে আরিশ বলল,
‘ভালবাসলে কেড়ে নিতে শিখো, রবীন্দ্রনাথের কথা মতো তাকে উরতে দিও না, সে যদি দিন শেষে তোমার কাছে ফিরে না আসে? কারণ বিপরীত পক্ষের লোক যে ফাত পেতে রাখবে না, এটা তুমি কি করে বুঝবে? তখন দেখা যাবে তুমি মানুষটার অভাবে নিঃশেষ হয়ে গেলে।
‘মানে?
‘ভিলেন বুঝিস?
‘হঠাৎ এই কথা বলছ?
‘আমার হয়ে কিছু কাজ করবি?
‘আচ্ছা তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর ঠিক আছে তো তোমার?
‘শাস্তি পাওয়া উচিত।

‘কি হয়েছে ভাই? কি সব বলছো? বুঝতে পেরেছি বুনু অভিমান করে কথা বলছে না তোমার সাথে তাইতো? তোমার হয়ে আমি সরি বলে দিব। যেন তোমার সাথে বনু আবারো কথা বলে।
আয়ন কথাগুলো বলে বোকা বনে আরিশের দিক তাকাতে আরিশ এবার বসা থেকে উঠে বলল,
‘তোকে দুটো জিনিসের তফাৎ বলি। নায়ক আর ভিলেনের পার্থক্য!
১. নায়ক তো সবসময়ই মহান হয় তাই না? সবকিছুই করে, কিন্তু দেখা যায় এদের মূল উদ্যোক্তা ভিলিনি হয়। সমাজ পরিবার পরিজনদের ভিড়ে একদিন এরা হারিয়ে যায়। খুব প্রিয় কিছু হলেও সেটা অন্যের খুশির জন্য দিয়ে দেয়। শুধু মহান ট্যাগ উপাধিটা পাওয়ার জন্য।

২. ভিলেন সবার কাছে সে নামেই ভিলেন। তার শুধু টার্গেট একটাই নায়িকা। কিংবা নির্দিষ্ট একটা জিনিস। জীবন দিয়ে দিবে তবুও শেষ নিঃশ্বাস অবধি তার সেই জিনিসটা চাই। চাই মানেই চাই। সে হোক বৈধ কিংবা অবৈধ। তবে ভিলেন হওয়া এতটাও সহজ নয়, যেখানে মানুষ তোমাকে অনায়াসেই হারিয়ে দিতে পারবে। ভিলেন হলে এমন ভাবেই হও যাতে সবাইকে টকর দিয়ে তুমি তোমার টার্গেটকে নিজের করে নিবে। সামগ্র বিশ্বকে দেখাবে তুমি ভিলেন। আর ভিলেন শেষ অব্দি কতদূর যেতে পারে ইতিহাস করে রাখবে। তাই আমার মতে নায়ক নয় ভিলেন দরকার। তবে জীবন সুন্দর।

আরিশের এমন ঘুর প্যাচের কথায় আয়ান নড়েচড়ে বসে বলল,
‘তোমার কথা বুঝলাম না ভাই! যাই হোক এখন বাড়ি চলো।
‘নায়ক উপাধিতে নিজেকে কখনো হারাতে চাইনি। শুরু থেকে বরাবর ভিলেন ছিলাম সেটাই থাকতে চাই। এতটুকু বলে থেমে আবার বলল,
~ Hero it’s okay. 🚩
But villain his Difference. ☑️
আয়ান আর বসে থাকতে পারলো না। বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরিশ কে নিজের দিক ঘুরিয়ে বলল,
‘কি হয়েছে ভাই তোমাকে আজ এমন লাগছে কেন?
‘আচ্ছা আমার অনুপস্থিতিতে আমার একটা কাজ করে দিবে?
আয়ান আরিশের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে আরিশ বলল,
‘আমার মৌ বলেছে, আমি কি তার জন্য মরতে পারবো? আমার বোকা মৌচাক জানেই না। তার জন্য এই উন্মাদ ব্যালান্স ছাড়া মানুষটা কি করতে পারে।

‘তুমি এখন বাড়ি চলো, তোমার মাথা ঠিক নেই। কেমন অদ্ভুত লাগছে তোমাকে।
‘আমি গুলি খাওয়ার ঠিক পর মুহূর্ত তুই আমার মৌকে কল করে ইনোসেন্ট গলায় বলবি, – ‘ আরিশ ভাই কে, কে বা কারা গুলি করে পালিয়ে গেছে। আরিশ ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। ব্যাস এতোটুকুই।
‘কে গুলি করবে তোমায়? কি বলছো এগুলো তুমি তখন থেকে?
‘আমি করব গুলি!
‘হোয়াট?
‘হুম।
‘তোমার কি মাথা নষ্ট হয়েছে? কি সব আবোল তাবোল বকছো?

‘শোন, গুলি খাওয়ার পর বাঁচি কি মরি জানিনা‌‌। তবে আমি যদি মরে যাই তবে আমার মৌকে আমার কবরের বা পাসটায় কবর দিস। অবশ্যই আমি মরার মুহূর্তের মাথায় তুই আমার মৌকে গুলি করবি।
আয়ন আরিশের এমন কথায় বিরক্ত হয়ে আরিশের হাত ধরে নিয়ে আসতে নিলে আরিশ ওর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,
‘মনে রাখিস আমার মৌ যেন বুঝতে না পারে গুলিটা আমি নিজেই নিজেকে করেছি। – বলে পকেট থেকে ছোট্ট একটা কাগজের টুকরো বের করে আয়ানের হাতে দিয়ে বলল,
‘মৌকে দিবি। – বলে পিছনে গুঁজে রাখা পিস্তলটা বের করে মুখের সামনে এনে ফু দিয়ে, ট্রিগার ওন করে বাঁকা হেসে বলল,

‘অ্যাকশন। – ব্যাস এতটুকু কথা, ততক্ষণে আয়ান বলতে চাইলো, ভাই আমার কথা টা শু, কিন্তু তারপর পরমুহূর্তেই সোনা গেল পিস্তলের চাপ দেওয়া ট্রিগারের শব্দ। ‘ঠুসস’।
শব্দটা হওয়ার সাথে সাথে আরিশ ওহহহ শব্দ করে পিছিয়ে যেতে যেতে তখনো মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে গেয়ে উঠল,
~ “লিখেছি এক সূর্যোদয়”
~আমাকে নে তোর গানে…
~ আর মনের দুনিয়ায়…
~লিখেছি এক সূর্যোদয়…
~তার উষ্ণতা দারুন…
~তোর আবছায়ায়…
~বরবাদ হয়েছি আমি তোর অপেক্ষায়…
আরিশ গানটা গাইতে গাইতে মাটিতে পড়ে যেতে আয়ান বাকরুদ্ধ হয়ে সেটা দেখে চোখ বড় বড় করে চিৎকার করে বলল,

‘কি করলে এটা তুমি আরিশ ভাই? গুলি? – আরিশের পেট থেকে গল গলিয়ে রক্ত বের হতে দেখে আয়ান দৌড়ে ওর কাছে এসে চেঁচিয়ে বলল,
‘আর ইউ রাবিশ? তুমি কি করলে এটা? পাগলও তো নিজের ভালো বোঝে। তুমি তুমি একটা উন্মাদ, তুমি তুমি, – আয়ানের কথার মাঝে আরিশ পেট চেপে বসে পড়তে আয়ান ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
‘ভাই আমার কষ্ট হচ্ছে? এখন হসপিটাল নিয়ে যাব চলো। – বলে আরিশ কে উঠাতে নিলে আরিশ ওর হাত ধরে বলল,
‘তোকে কি বলেছি?
‘ভাই এখন কথা বলার সময় নয়।
‘আমার বউকে কল কর। শ্বাস উঠাতে উঠাতে কথাটা বলল।
‘ভাই

‘কলটা কর আয়ান। — আয়ান আরিশের চোখ থেকে কষ্টে পানি বের হতে দেখে দিক কুল না পেয়ে দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে বাড়ির ল্যান্ড লাইনে ফোন দিতে জুথি বসার ঘরে বসে থাকায় ওঠে ফোনটা কানে ধরতে আয়ান ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,
‘হ হ্যালো!
আয়ানের কন্ঠ এমন অদ্ভুতভাবে শুনে জুথি বলল,
‘আয়ান ভাই,
‘ব বনু, আরিশ ভাই গুলি করেছে।
‘মানে? ভ্রু কুঁচকে।
আয়ান ঠিকমতো বলতে না পারায় আরিশ ওকে কোনরকম শ্বাস তুলতে তুলতে বলল,
‘বল আরিশ ভাই কে কারা যেন গুলি করেছে।
আয়ান আরিশের কথা মত জুথিকে কথাটা বলতে, জুথি অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,
‘ক কি বলছো তুমি? ম মি মিথ্যা বলছো তাই না?

‘বনু বড় আব্বুকে বল তাড়াতাড়ি আসতে। ভাইয়ের অনেক ব্লাডিং হচ্ছে। এরকম ব্লাডিং হলে ভাই হয়তো বাজবে, – ব্যাস জুথির আর শোনা হলো না। ঠাস করে ফোনটা হাত থেকে পড়ে যেতে ভুবন কাঁপানো চিৎকার করে উঠে কান্না করে বলল,
‘আরিশ ভাই। আপনার কিচ্ছু হবে না। আপনার মৌ এক্ষুনি আপনার কাছে চলে আসছে। বসার ঘর থেকে জুথির এমন চিৎকার সাথে কান্নার শব্দ শুনে সবাই বসার ঘরে আসতে জুথির এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে সানজিদা খান ভ্রু কুঁচকে ওর পাশে বসে বললেন,
‘কি হয়েছে মৌ?

‘ম য় মা, অ আ আরিশ ভাই। অ আমার স্বামী, – ওর কান্নার রেশ এতটাই ক্রমশ বারছিল যার দরুন কথাটা পর্যন্ত ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারছি না। জুথিকে এভাবে কাঁদতে দেখে সানজিদা খান পড়ে থাকা ফোন টার দিক তাকিয়ে সেদিকে এগিয়ে ফোনটা কানে ধরতে উনিও স্তব্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পড়েন। মুহূর্তেই খানমহলে নিয়ে আসে ভারী নিস্তব্ধতা। কারো যেন বিশ্বাস হওয়ার মতো না। সবার চোখেই জল এসে বির করেছে সেই অনেক আগেই। সবার এমন নীরবতার মধ্য জুথি চিৎকার করে কেঁদে ওঠে সাফওয়ান খানের কাছে এসে ওনার হাত ধরে বলল,
‘অ আ আব্বু, আমাকে নিয়ে চলো তোমার ছেলের কাছে। তোমার ছেলের আমাকে প্রয়োজন। নিশ্চয়ই উনার অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ আব্বু চলো আমাকে নিয়ে চলো। – জুথিকে পাগলের মত বিহেভিয়ার করতে দেখে ওকে শান্ত করার জন্য ওর মাথায় হাত রেখে বললেন,

‘এইতো মা আমরা যাব। আয়ানের থেকে লোকেশন টা নিয়ে আমারা এক্ষুনি যাব।
সাফওয়ান খান আয়ান কে কল করতে আয়ান জায়গার লোকেশন পাঠিয়ে বলল,
‘বড় আপু আমি ভাইকে হসপিটাল নিচ্ছি তুমি সেখানেই আসো। – উনি আয়ানের থেকে লোকেশন নিয়ে চটজলদি গাড়ি বের করে, লোকেশন অনুযায়ী সেই জায়গায় পৌঁছে যেতে গাড়ি থামানোর সাথে সাথে জুথি গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে আসতে নিলে এতক্ষণ চিৎকার করে কান্নার জন্য হঠাৎ করেই মাথাটা ঘুরে গেল। কেমন ঝাপসা হতে লাগলো। পরক্ষণেই জুথি পড়ে যেতে নিলে রাদিফ পিছন থেকে জুথিকে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,
‘সাবধানে।

জুথির মাথার চক্করটা ছেড়ে যেতে রাদিফের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে হসপিটালের মধ্যে ঢুকে এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে চিৎকার করে বলল,
‘ক কো কোথায় আপনি? এই দেখুন আপনার ম মো মৌ চলে এসেছে। বলে পাশে তাকাতে দেখে আয়ান চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। জুথি আয়ান কে দেখা মাত্র দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে ওর পায়ের কাছে বসে বলল,
‘আয়ান ভাই, আমার আরিশ ভাই কোথায়? আমাকে নিয়ে চলো তার কাছে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে জুথির নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে। হয়তো আর কিছুক্ষণ এমন কান্না করলে সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে।
জুথি যখন অধিক ব্যস্ত হয়ে আয়ান কে বারবার জিজ্ঞেস করছিল তার আরিশ ভাই কোথায়? এখন অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসতে জুথি উনার কোন কথা না শুনেই দৌড় ভিতরে গিয়ে আরিশের পাশে বসে ওর গালে হাত রেখে বলল,

‘আরিশ ভাই, এই যে আমি চলে এসেছি। কথা বলুন। আমাকে বলুন, কে আপনাকে গুলি করেছে? আমি তাকে ছাড়বো না। তাকেও আমি গুলি করে দিব। আরিশ ভাই। – আরিশ কোন সারা শব্দ করছে না দেখে জুথি আবারো ফুফিয়ে কান্না করতে করতে বলল,
‘সরি, খুব করে সরি। তখন ওভাবে না বললে আপনি তো বাহিরে আসতেন না। আর কেউ আপনাকে গুলিও করতে পারত না। এখন কথা বলুন। আর কখনো আপনাকে ফিরিয়ে দিব না। আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন না? তাহলে কথা কেন বলছেন না? এখন কিন্তু আমি কাঁদবো খুব করে কাঁদবো। প্লিজ কথা বলুন।
আরিশ কোন কথাই বলছে না দেখে জুথি আরিশের হাতটা জড়িয়ে ফুপিয়ে বলল,

‘আপনি রাগ করুন না, রাগ করে আমাকে মারুন। থাপ্পর মারুন। রুম বন্দি করে রাখুন। কষ্ট দিন ব্যথা দিন। তবুও চোখটা খুলুন না। আমি অভিমান করব না। আপনাকে ইগনোর করবো না। সত্যি বলছি। চোখটা খুলুন না। – তখনো জুথি আরিশের কোন রেসপন্স না পেয়ে নেতিয়ে গিয়ে আরিশের বুকের উপর পরে ফোপাতে ফোপাতে বলল,
“আরিশ ভাই চোখ টা খুলুন না। এই দেখুন আপনার মৌ চলে এসেছে। আপনার মৌ আর কখনো অভিমান করবে না তো আপনার উপর, তবুও চোখ টা খুলুন না। প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে তো আপনাকে ছাড়া। আপনি জানেন না? আপনার মৌ একটু কাঁদলে শাঁস শ্বাস নিতে পারে। আপনার মৌয়ের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়? তাহলে আপনি কেন আমায় কাঁদাচ্ছেন? ও আরিশ ভাই? চোখ টা খুলুন আমি আর কোনদিন আপনার অবাধ্য হবো না। আপনার বাধ্য বউয়ের মত সবকিছু শুনবো। তবুও আমাকে এভাবে ফেলে রেখে যাবেন না। আমি বাঁচতে পারবো না। আপনি বিহীন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ চোখ টা তো খোল,” — ব্যাস বাকি কথাটুকু আর বলা হলো না জুথির। তার আগেই নিস্তেজ হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলল।

“তখন ডক্টর বের হতে খান বাড়ির সবাই ডাক্তারের কাছে এগিয়ে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে বললেন,
‘ডক্টর আমার ছেলে?
‘,,,,,,,।
‘কথা বলছেন না কেন ডাক্তার?
উনাদের এমন ফ্যাকাশে চুপসে যাওয়া মুখ দেখে ডক্টর ঢোগ গিলে। নিজেকে স্বাভাবিক করে উনাদের বুঝিয়ে বলার জন্য বললেন,
‘দেখুন আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু পেশেন্টের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ব্লাডিং হয়েছে। যা দরুন আমরা এখনো সিউরিটি দিয়ে বলতে পারছি না উনার জ্ঞান আসবে কিনা।
‘মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?
‘যদি চার ঘন্টায় মধ্য জ্ঞান ফিরে না আসে। তাহলে ধরে নিতে হবে,
“শি ইজ ইন আ কোমা”

Violent love part 49

Note: গল্পের অসমাপ্ত টানলাম। আমি এই গল্পটা থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছি। যারা এই গল্পের পাঠক যারা এই গল্পকে মন থেকে ভালোবাসেন। তারা গল্পটার শেষ অব্দি অপেক্ষা করবেন। রয়ে গেল অনেক প্রশ্ন তাই না?
১. আরিশ কি সত্যিই কমার চলে গেল? জুথি? ওর অবস্থা কেমন হবে? কিংবা কেমন হয়েছিল? আরিশ বিহীন জুথির জীবন কতটুকু? কতটুকুই বা আছে? আর জুথি জেনেছিল? ওর কথায় আরিশকে গুলি অন্য কেউ নয় বরং গুলিটা ও নিজেই নিজেকে করেছিল?
২. রাদিফ রোদ ওদের কি অবস্থা? ওরা কি সত্যিই কোন নতুন সম্পর্ক করতে পারবে নিজেদের মধ্যে? নাকি নামেই মাধ্যম? এখানেই সমাপ্তি? তাহলে কি রোদের ইচ্ছাটা পূর্ণ হবে না? রাদিফ রোদ কে একটা বাচ্চা দিবে না?
৩. আয়ান তানিশা ওদের সম্পর্কই বা কতটুকু এগুলো? সেদিনের পর আয়ান কি গিয়েছিল তানিশার সাথে দেখা করতে? তানিশা কি একসেপ্ট করেছিল? আয়ন সে কি তার প্রিয়সি কে আপন করতে পারবে?
৪. লুসিয়ান ফারি ওদের বা কি অবস্থা? লুসিয়ান ফারি কে সুইজারল্যান্ড নিয়ে গিয়ে আদৌ কি বিয়ে করেছিল? নাকি ঠকানোর মাধ্যমটা আরো গভীর থেকে গভীরতা বেড়েছিল? কি হয়েছিল তাদের সম্পর্কে টানা পোড়ন?
৫. রনি ইভা, ওদের মিষ্টি সম্পর্কটা বা কত দূরে এগলো? রনি কতটুকু ভালোবাসা দিয়েছি ইভাকে? নাকি আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মতো ওদেরও সম্পর্ক ওরকম?
৬. ছোট্ট মনি কি বড় হয়ে যাবে? তার সাথে কি কারো বাঁধন হবে? কেউ কি হবে তাকে আপন করার মত? ভীষণ ভীষণ আকাশ সমান ভালোবাসার মতন?
৭. ওই যে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে সূচি? ওও ?
এত এত প্রশ্নের সবকিছুর উত্তর দ্বিতীয় খন্ডে আসবে ইনশাল্লাহ। আর দ্বিতীয় খন্ডে যেই আরিশ ভাই কে আপনারা পাবেন, তার প্রেমে নতুনভাবে অবশ্যই আপনারা পড়তে বাধ্য হবেন। তাই ধৈর্য ধরুন।

প্রথম খন্ডের সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here