Violent love part 44 (2)

Violent love part 44 (2)
Mariam akter juthi

“খান মহলের প্রতিটা রুমে নীরবতা বিরাজমান। কোন রুমে না আছে আলো আর না আছে কোন শব্দ, শুধু হাওয়া হয়ে যাচ্ছে মহলের প্রতিটা মানুষের গভীর ঘুমের নিঃশ্বাস। তবে ঘুম নেই খান মহলের দুটি মানুষের চোখে। ছটফটতা মানসিক দুর্বলতা, বুকে ব্যথা, নিয়ে দুই কাপত কাপতী অস্থিরতায় ভুগছে। একজন যে রাগে দরজা ভেঙে কাছে গেলে পরিস্থিতি বিগরে যাবে ভেবে নিজেকে যথাসম্ভব আটকে রাখছে। তো অন্যজন মনের উপর যুদ্ধ করে অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছে। জুথি তখন কোলবালিশ টা ছুঁড়ে ফেলে, ওটার উপর রাগ জারছিল তখন সব ভুলে স্বামীর বুকে ঘুমাবে বলে বিছানা থেকে নেমে দরজা পর্যন্ত আসতে, পরক্ষণে জামার দুই সাইড খামছে ধরে, আরশির দেওয়া থাপ্পড়, রুমবন্দি করে রাখার কথাগুলো মনে আসতেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়।

মন তাকে আরিশের কাছে যেতে বললেও মস্তিষ্ক বলছে, – ‘যাস না জুথি, ওই লোকটা তোকে কষ্ট দিয়েছে। তারও শাস্তি পাওয়া উচিত। তোর তাকেও শিক্ষা দেওয়া উচিত। জুথি মনের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিল না। বরং মস্তিষ্কের কথাগুলো স্মরণে রেখে পুনরায় মেঝেতে পড়ে থাকা কোলবালিশটা তুলে বিছানায় শুয়ে এপিট ওপিট করতে লাগলো। এই ভেবে, দেরী হলেও ঘুম ঠিকই আসবেই। হলও তাই, বেশ কিছুক্ষণ সময় যেতে জুথি একসময় গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে যায়। অপজিট সাইডে, আরিশ চোয়াল শক্ত করে মুখো ভঙ্গিমা কেমন করে, *চ এর মত উচ্চারণ করে, রুমের বারান্দায় পেতে রাখা বেতের চেহারাটা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে রুমে এসে টি টেবিলে রাখা অর্ধ-পানিভর্তি গ্লাসটা তুলে মেঝেতে আছাড় মারতে মুহূর্তেই সেটা ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল। এতেও আরিশ ক্ষ্যান্ত হলো না, অতিরিক্ত রাগ মস্তিষ্কে বিচরণ হতে পরপর দুটি ঘুসি লাগালো দেয়ালে। যার দরুন আরিশের হিংস্রতা কেবল কমছে নয় বরং বেড়েই চলছে। আরিশ তার রেশ ধরে হিংস্র মানবের মতো রাগের তোপে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘হাফফুটের বাচ্চা, আমাকে রাগাস? খোদার কসম, তোকে একবার হাতের নাগালে পাই, কথা বলার সুযোগ টুকু দিব না। তোর ঘাড় ত্যাড়ামির স্বভাব, যদি পিটিয়ে না কমাই, তো…আর রইল বাকি অবাধ্য হওয়ার কথা? তাহলে অবাধ্য হওয়ার সেই বাঁকা রগটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে, তোর সাথে যা করব, স’ইচ্ছায় বারবার সপে দিবি নিজেকে আমার কাছে। — আরিশ এতোটুকু বলে পুনরায় নিশ্বাস ফেলে চুলগুলো খামচে ধরে চেঁচিয়ে বলল,

‘’মৌ আমার তোকে ছাড়া খালি খালি লাগে, সবকিছু কেমন শেষ করে দিতে মনে চায়। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তো তোকে ছাড়া, বিলিভ ইট, আমার তোকে চাই, মানে তোকেই। এট এনি কস্ট, আমার তোকেই লাগবে। — শেষ কথাটা বলতে বলতে আরিশ আর পারলো না নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে ততক্ষণে মেঝেতে হাটু ঘিরে বসে পড়ে মাথা ঠেকালো খাটের সাথে, তার সত্যিই এবার শ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কিছুর একটা অভাব ফিল করছে। নিজেকে কেমন উন্মাদ মনে হচ্ছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো ব্রেন স্টোক করতে পারে। আরিশের কেমন হাত কাঁপছে চোখ দুটো কেমন রক্ত বর্ণ ধারণ করছে। ঘাড়ের রগ হাতের রগ কেমন নীলচে বর্ণ হয়ে ফুলে উঠেছে। চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হয়তো অতিরিক্ত রাগে এমনটা হয়ে গেছে।
আরিশ অনেক কষ্টে, বুকে হাত চেপে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে জুথির রুমের সামনে এসে দরজা নক করে কাতর কণ্ঠে বলল,

‘ও মৌ? মৌরে? আমার তোকে ছাড়া দম নিতে কষ্ট হয় তো, দরজাটা খোল না জান। দরজাটা খুলে আমার শূন্য বুকে পূর্ণ করে দেনা বউ। — তবে আরিশের এমন কাতর কন্ঠে বলা কথাগুলো হয়তো ঘুমন্ত জুথি শুনলো না। যদি শুনতো তাহলে হয়তো সব রাগ ইগো ফেলে ছুটে এসে আরিশের বুকে হামলে পড়তো। আরিশ ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ না পেয়ে জুথির বন্ধ দরজার সামনে বসে পড়ে পুনরায় একই কন্ঠে বলল,

‘ওইটুকু শরীরে এত রাগ অভিমান আসে কোথা থেকে? মানুষটা তো ওইটুকু তাহলে আমি বা এমন পাগল হলাম কেন, এই টুকু মেয়ের জন্য? — বলে কিছুক্ষণ মাথাটা দরজাটার সাথে ঠেকিয়ে, কিছু একটা ভেবে বলল,
‘ঠিক আছে, তোকে যেহেতু আমি মেরেছি, জোর করে বাসর করে অজ্ঞান করেছি। তাহলে তুইও বরং আমার সাথে জোর করে বাসর কর, বাসর করে আমাকে অজ্ঞান করে দে। আর আমি যদি অজ্ঞান হয়ে না পড়ি তো, মিথ্যা মিথ্যা তিন দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবো। তাহলে তো হিসাব সোদ বোধ। — উক্ত কথাগুলো বলে আশা নিয়ে দরজার দিকে থাকতে আরিশ আবারো হতাশ হল, ভেতর থেকে জুথির কোনরূপ সারাশব্দ না পেয়ে। তাই শরীরের সব ভর ক্লান্তিতে দরজার উপর ছেড়ে দিয়ে আবদার করার মত করে বলল,

‘ও বউ রাগটা ফেলে দিয়ে আমার শূন্য বুকে ফিরে আয় না, কথা দিচ্ছি তোকে ভালো রাখতে আমার যতদূর যাওয়া লাগে আমি যাব। তবুও আমাকে এভাবে দূরে রেখে কষ্ট দিস না। তোর দূরত্ব টা আমার দিন শেষ বুকে কুরে কুরে খায়। ফিরে আয় বউ। — কথাগুলো একনাগারের বলে মাথাও এলিয়ে দিল দরজার সাথে। এমন বেশ কিছুক্ষণ সময় যেতে আরিশ জুথির বন্ধ দরজায় মাথা রেখেই ঘুমিয়ে যায়।

“পাখিদের কিচির মিচির আওয়াজ সেই সকাল সকাল মিঠা আলোতেই থেমে গেছে। আর এখন বেলা ৮ এর ঘরে। আরিশ সে রাতে জুথির বন্ধ দরজার সামনে ঘুমালেও সকালের আলো ফোটার সাথে সাথে ছয়টা নাগাদ নিজের রুমে চলে গেছে। রুমে গিয়ে কোমরটা টানটান করে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমানো সিদ্ধান্ত নিল। রাতে মশার কামড়ে তার ঘুম হয়নি ভালো করে। তাছাড়া আজ শুক্রবার তেমন কোন পলিটিক্স চাপও নেই। যদিও যতটুকু বা আছে, সেটা ঘুমিয়ে উঠেও করা যাবে ভেবে দুঘন্টা ঘুমিয়ে নিল। আর এখন বেলা ৮ টা বেজে গেছে। জুথি তার আজ কি হল কে জানে? এক ঘুমে তার বেলা ৮ টা বেজে গেছে। আজ ফজরের নামাজ কালাম পর্যন্ত পড়তে পারল না। জুথি চোখ ডলতে ডলতে উঠে বিছানায় বসল।

যদিও সে ঘুমালে অবশ্য আরেকটু ঘুমাতে পারতো তার চোখে এখনও ঘুম। কিন্তু নিচে বসার ঘরের আওয়াজ তার সুন্দর ঘুমে এখন তালা দিতে হবে। এইতো ১০-১৫ মিনিট হয় ফারি এসে দরজা ধাক্কে বলে গেল, তানিশা এসে বসার ঘরে তোর জন্য অপেক্ষা করছে। হয়তো কাজিন মহল তাকে নিয়ে আড্ডায় আরো মেতে উঠেছে। তাই হয়তো আওয়াজ একটু জোরই শোনাচ্ছে, যার দরুন কথা হাসাহাসির শব্দ উপর ঘর অব্দি চলে আসছে, ভেবে জুথি আর বিছানায় গা এলিয়ে বসলো না। উঠে ওয়াশরুমে যাবতীয় কাজ শেষ করে, ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে একটু ক্রিম আর সাথে সান্সস্ক্রিম মেখে নিলো। অতঃপর চুল আঁচড়ে গার্ডার দিয়ে বেঁধে ওড়নাটা জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে বসার ঘরে আসতে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ওমা সূচি? তুমি কখন এলে? আন্টি ও এসেছে?
‘হুম মাও এসেছে।
‘এর জন্যই তো বলি এখানে এত আওয়াজ কেন? – বলে ওদের কাছে যেতে নিলে চোখ পড়ে তানিশার পাশে বসা আশিকের উপর। জুথি আশিককে দেখা মাত্র দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে গাল টেনে দিয়ে আফসোসের সরে বলল,
‘ও,রে আমার জামাইটা আসছে, তোরা আমাকে বলবি না? ইশ মিস করে গেলাম কত টাইম।
‘তোমাকে না বলছি? তুমি আমায় জামাই বলবা না? জামাই ডাক শুনলে আমার কেমন যেন লাগে।
জুথি আশিকের কথায় মুখ টিপে হেঁসে বলল,

‘কিন্তু তোমাকে তো আমার জামাইয়ের মত লাগে, এখন আমি কি করতে পারি বলো?
‘এত জামাই জামাই লাগে যখন, যখন সত্যিই বিয়ে করতে চাইবো? বিয়ে করবে তো আমায়? তখন আবার আমার স্বামী আছে বলে কেটে পড়বে না তো? – দুই হাত বগল ধাবা করে একটু ভাব নিয়ে।
‘না, না একদম না। বিয়ে তো আমি সবাইকে রেখে তোমাকেই করব।
‘সত্যিই?
‘হুম।

‘তাহলে কাছে আসো তো তোমার ওই সুন্দর গালগুলোতে টপ টপ দুটো চুমু খাই।
আশিক কথাটা বলতে জুথি ফিক করে হেসে দিয়ে গালটা এগিয়ে দিতে, হঠাৎ এমন সময় আরিশ হুট করে পিছন থেকে জুথির বগলের দুই সাইড ধরে বাচ্চাদের মত করে ওখান থেকে অন্য পাস সরিয়ে আশিকের দিক হাত বাড়িয়ে দিতে আশিক ও হাসি মুখে আরিশের হাতে হাত দিতে আরিশ বলল,
‘অন্যের জিনিসে চোখ দিতে নেই।
‘একদম ঠিক।

‘হুম তুমি বরং আমার সাথে গরম গরম হেলদি খাবার খাবে চলো।
আরিশ কথাটা বলতে আশিক ও তাতে সায় জানিয়ে উঠে চলে যেতে বেকুব হল ওখানে বসে থাকা ৬-৭ টা মুখ। ওরা চলে যেতে নিজেরা একে অপরের দিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল – “হল টা কি? তবে সবার এমন মনোভাবের মধ্যে সূচি হাসিমুখে সেখান থেকে উঠে আরিশের পাশের চেহারাটা টেনে বসতে বসতে বলল,
‘ব্রো, সবকিছু মিটমাট হল?
আরিশ বুঝলো সূচি তাকে কি বুঝাতে চাইছে। তাই প্রসঙ্গে পাল্টে বলল,
‘থাকবি কিছুদিন?
‘বেশি পারবো না। ওই ৩ কি ৪ দিন। কলেজের চাপ বেশি।
‘তাতেই হবে।
‘মানে?
‘কিছু না।

আরিশ কিছু না বলতে, সূচিও আর কথা বাড়লো না। গরম গরম খাবারের গন্ধ পেয়ে প্লেট নিতে জুথি তানিশা এসেছে ভুলে ভ্রু কুঁচকে টেবিলে এসে আরিশের মুখোমুখি বিপরীত সাইডে বসে প্লেট নিতে নিতে আড় চোখে সূচির দিক তাকিয়ে মনে মনে আওরালো, – ‘এই সূচিটা তো আমার দলে ছিল‌। এখন আবার পাল্টি খেয়ে হাঁদারামটার সাথে যোগ দিয়েছে নাকি? কিন্তু রাগ থাকলে তা আমি বুঝবো, তাই বলে আমার সামনে এই হারামজাদা অন্য কারো সাথে এভাবে হেসে এসে কথা বলবে? – ওর এভাবে মনে মনে বকাবকি করার মধ্যে আরিশ হঠাৎ বেসম খেতে সূচি পানির গ্লাসটা আরিশের হাতে তুলে দিয়ে মাথা পিট চাপড়ে দিতে জুথি চোখ জোড়া সরু করে হা করে হাত মুঠো করে রাগী রাগী চোখে দুজনার দিক তাকাতে, সূচির হঠাৎ চোখ পরল জুথির মুখে। জুথির হঠাৎ এমন চেহারা দেখে সূচি মাথা চুলকে মেকি হেসে চেহারে বসে হালকা ঝুঁকে আরিশের কানে ফিসফিস করে বলল,

‘ব্রো, তোর মৌ মনে হয় তোর উপর এখনো ক্ষেপে আছে তাই না?
‘হুম বড্ড অভিমানী যে। – কথাটা বলে আরিশ জুথির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলটা মুখের সামনে থেকে আস্তে সরিয়ে নিল। জুথি এভাবে ওদের কানে মুখে হেসে কথা বলতে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে টেবিল থেকে উঠে চলে আসতে আসতে বলল,
‘তানু আমার রুমে আয়, যা বলবি বা বলব আমার রুমে। – বলে জেদ দেখিয়ে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে আসতে, তানিশাও উঠে জুথির রুমে এলো। তানিশা রুমে আসতে জুথি শব্দ করেই রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিল। যার শব্দ অল্প হলেও নিচে সবার কানে যেতে আরিশ খাবার মুখে দিতে দিতে পুনরায় বাঁকা হাসলো। জুথি চলে যেতে আরিশ ও খাবার রেখে উঠে যেতে সানজিদা খান বললেন,

‘আরে আরিশ আব্বু খাবার না খেয়ে যাচ্ছ কই তুমি?
ততক্ষণে আরিশ ফোনে কাউকে টেক্সট পাঠিয়ে,ফোনটা টেবিলের উপর রেখে, বেসিনের দিক যেতে যেতে বলল,
‘আম্মু আর্জেন্ট কাজ আছে, সেটা সেরে জুমার আগে বাড়ি ফিরতে হবে। —আরিশ কথাটা বলতে উনিও আর কথা বাড়ালেন না।
ওদিকে জুথি রুমে এসে গায়ের ওড়না টা ছুড়ে ফেলে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
‘কত বড় সাহস… জুথিকে শুধু শুধু এভাবে ফুঁসতে দেখে তানিশা বেকুব বনে বলল,
‘আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি বলতো?
‘কিছু না *বাল তুই চুপ করে বসে থাক তো।

তানিশার আর কি করার? বেচারি ফোনটা নিয়ে বিছানায় বসতে,জুথি হুট করে ওর হাত থেকে ফোনটা ছো মেরে ছিনিয়ে নিয়ে আরিশের নাম্বারটা উঠিয়ে কল দিতে আরিশের রেখে যাওয়া ফোনটা টেবিলের উপর বেজে উঠতে, সানজিদা খান ফোনটা হাতে নিতে কি মনে করে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলেন। যদিও উনি সচারাচার আরিশের ফোন ধরেন না আজ কি মনে করে রিসিভ করলেন কে জানে? তবে উনি রিসিভ করে এমন একটা কথা শুনবে খুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। কারণ জুথি ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে অপোর সাইডে হ্যালো বলার আগেই বলল,

‘হারামজাদা লজ্জা করে না? আমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে হেসে এসে কথা বলতে? তোরে তো আমি… ওর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই সানজিদা খান বললেন,
‘কিন্তু আমি তো তোমার হারামজাদা না, হারামজাদার মা বলছি। মানে তোমার শাশুড়ি।
‘কিহহহহহহ? – বোকা বনে গিয়ে।
‘হ্যা। কারণ সানজিদা খান জুথির কন্ঠ পেয়েই বুঝতে পেরেছিলেন এটা তার গুণধর ছেলের গুনধর বউ মৌ।
জুথি ততক্ষণে ফোনটা কেটে দিতে সানজিদা খান কানের থেকে ফোনটা সরাতে আরিশ ও হাত ধুয়ে চলে এসে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল,
‘কে কল করেছিল আম্মু?

‘রং নাম্বার। – সানজিদা খান কথাটা বলতে আরিশ উনার থেকে ফোনটা নিয়ে চলে যেতে উনি একবার দোতলা জুথির রুমের দিক তাকালেন অতঃপর নিঃশ্বাস ফেলে নিজ কাজে রান্না ঘরে চলে গেলেন। — ‘হে আল্লাহ সব দুঃখ কি আমার কপালেই থাকে? কেন আমি কল করতে গেলাম? –আহাজারি করে কথাগুলো বলতে বলতে মাথায় হাত রেখে তানিশার কাছে বিছানায় বসে পড়তে তানিশা ওর ভাবসাব দেখে মুখ ভেটকে বলল,
‘তখন থেকে দেখছি এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ার করছিস কেন?
‘তুই বুঝবি না।
‘ও আমি না বুঝলে আপনি তো বুঝেন? তাহলে এভাবে করছেন কেন?
‘আমি ফেঁসে গেছি *মাইনকার চিপায়। চোখ ছলছল করে।
‘মানে?
‘আমাকে নিচে যেতে হবে।

‘হুম আমাকেও বাড়ি যেতে হবে।
‘কি?
‘বাড়ি যাবো।
‘তাহলে এসেছিলি কেন?
‘তোকে দেখতে।
‘আমি আসতে বলেছিলাম?
‘তুই না বললে আমি আসতে পারি না?
‘এসেছিস যখন এখন যেতে পারবি না।
‘হ জানি তো।
‘তাহলে আন্টিকে ফোন করে বলে দে। ‌
‘মাকে বলতে হবে না, তোদের স্বভাব মায়ের জানা। তবে আজ আমি থাকতে পারবো না।
‘ঠিক আছে যা, তবে মনে রাখিস। গেলে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক এখানেই শেষ। সাথে আমার বাড়ির সবার।
‘এভাবে বলছিস কেন?
‘কথা কিলিয়ার, যদি থাকিস তাহলে সম্পর্ক থাকবে‌। আর নয়তো এখানেই শেষ।
‘আরে বাবা আমার কথাটা তো বোঝ,,
‘কোন কথা শুনবো না, তুই থাকবি এটাই ফাইনাল।
‘আমি কি আসলে থাকি না? কিন্তু আমাকে আজ যেতে হবে।
‘কেন?

‘তোকে সেদিন বলেছিলাম না?
‘ও হ্যাঁ, দাঁড়াও তোমাকে পারমেনান্ট করার ব্যবস্থা করছি।
‘মানে? – ভ্রু কুঁচকে।
‘এ্যাহ আসছে কচি খুকি, মানে জিজ্ঞেস করছে। আমি আয়ান ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ের কথা বলছি।
‘তোকে কে বলল? আমি তোর ভাইকে বিয়ে করবো?
‘হ, আমার জানা আছে, দেখ গিয়ে মনে মনে ভীষণ খুশি হচ্ছে আবার সামনে সামনে ঢং করে। – মুখ চেগিয়ে।
‘তুই একটু বেশিই বলছিস না?
‘সত্যি কথা বললেই দোষ।
‘জুইথাআআআ।

‘দূর *বাল চিল্লাইস না তো। এমনি টেনশনে আছি, আর তোর আর ভাইয়ের বিয়ে কনফার্ম।
তানিশা আর কথা বাড়ালো না,এই পেঁচানো মেয়েটার সাথে যে কথায় পারবে না ভেবে চুপচাপ উঠে দাঁড়াতে জুথি ওর হাত টেন বলল,
‘যাবি ঠিক আছে,দুপুরের ভাত খেয়ে যা।
‘কিন্তু,, — ওর কথার মাঝে জুথির ইনোসেন্ট ফেস দেখে আর না করতে পারল না। সেই থেকেই গেল দুপুর পর্যন্ত। তানিশা থাকতে রাজি হয়ে যেতে জুথি উঠে দাঁড়ালো সানজিদা খানের কাছে যাওয়ার জন্য। জুথি তানিশাকে নিয়ে বসার ঘরে এসে ওকে সোফায় বসতে বলে, নিজে গেলো সানজিদা খানের কাছে। গিয়ে ওনার কাছে ঘুরঘুর করার মধ্যেও সানজিদা খান আড় চোখে একবার তাকিয়ে বললেন,
‘রান্নাঘরে কাজ কি তোমার? — সানজিদা খান কথাটা বলতে জুথি বোকা হাসি দিয়ে সানজিদা খান কে পিছন থেকে জড়িয়ে বলল,

‘বিশ্বাস কর বড় আম্ম,, ও থুরি মা ওই ফোনটা একদম আমি করিনি, হারামজাদা ও আমি বলিনি। আমি কি এইসব বলতে পারি বল?
‘হ্যাঁ তাইতো এসব তো তুমি বলতেই পারো না। – এতোটুকু বলে ঘুরে জুথির ক্যান টেনে বললেন,
‘তাহলে তুমি বুঝলে কিভাবে? কেউ আমাকে কল দিয়ে এই কথাগুলো বলেছে?
জুথি সত্যিই এবার বোকা বনে গেল। কই সে ভেবেছিল একটু চালাক সাজবে সেটা না হয়ে কিনা ধরা পড়ে গেল? জুথি ছলছল চোখে উনার দিক তাকাতে উনি ওর কান ছেড়ে বুকের মধ্য টেনে নিতে জুথিও এবার মুচকি হাসতে সানজিদা খান বললেন,
‘বোকা একটা, টেবিলে খাবার বেড়েছিলাম খাও গিয়ে।
‘হুম। — জুথি উনার কাছ থেকে এলো তো ঠিকই, কিন্তু মনে মনে আরিশের গোষ্ঠ উদ্ধার করল যত যা খামার জানে সেগুলো দিয়ে।

“বেলা দুপুর, খান মহলের পুরুষরা সব জুমার নামাজ শেষ করে মাত্রই বাড়িতে ঢুকলো। সবার হাতেই দুটো করে জুমার মিলাদের মিষ্টি। ওনাদের মিষ্টি নিয়ে আসতে দেখে জুথি ফারি মনি তিনজনই দৌড়ে নিচে আসতে, জুথি লভো দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে ততক্ষণে আরিশ ও ঢুকলো মিষ্টি হাতে। যদিও তার হাতে করে মিষ্টি আনা পছন্দ নয়। কিন্তু তার মৌ কিনে আনা মিষ্টি খাওয়ার চেয়েও এই জুমার মিলাদে পাওয়া মিষ্টি খেতে বেশি পছন্দ করে বলে নিয়ে আসা। আরিশ মিষ্টি দুটো নিয়ে হাসিমুখে জুথির দিকে বাড়িয়ে দিতে, জুথি মুখ ভেংচি মেরে অন্য পাশ চলে যেতে আরিশ ও আর দ্বিতীয়বার সাধলো না। বরং এগিয়ে সূচির হাতে মিষ্টি দুটো দিয়ে বলল,

‘মৌ যখন খাবে না তাহলে তুই বরং খেয়ে ফেল। – বলে জুথির দিক না তাকিয়ে চলে যেতে জুথি হা করে সে দিক তাকাতে মুহূর্তেই তার কান্না চলে আসে। কই সে ভাবলো তার আরিশ ভাই তাকে মিষ্টি সাধবে, সে একটু না খাওয়ার ঢং করবে। সেখানে এটা কি হলো? জুথি পুরো ঘটনা স্মরণ করে ফুঁসতে ফুঁসতে সূচির কাছে এগিয়ে ওর হাত থেকে মিষ্টিগুলো ছো মেরে ছিনিয়ে নিয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
‘এগুলো আমার, তুমি নিয়েছো কেন? তোমার যদি খেতে ইচ্ছা করে,তাহলে বিয়ে করে স্বামীকে এনে দিতে বলো না। – উক্ত কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত ওখানে না দাঁড়িয়ে মিষ্টিগুলো নিয়ে রাফ পায়ে নিজের রুমে চলে গেল। এদিকে জুথির এমন কাণ্ডে সূচি তো পুরো থ…

Violent love part 44

জুথি মিষ্টি গুলো নিয়ে উপরে আসতে, সেগুলো খেতে খেতে পাইচারি করতে করতে মনে মনে আওড়ালো,
‘আমাকে মারা? জোর করে বাসর করে অজ্ঞান করে রাখা? আবার মিষ্টি গুলো এনে দিল না আমাকে? এর শোধ তো আমি নিবই। কিন্তু, কি করে নেই? কি করে নেই,,, — ওর এমন পাইচারি করার মত হঠাৎ করে সেদিনের কথা মনে পরল। যেদিন আরিশ ওকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিল। ব্যাটা কেমন করে তাকিয়ে ছিল সেদিন। পারলে তো গিলেই খেত। জুথির এ কথা মাথায় আসতে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
‘আমাকে মারা? রুম বন্দি করে রাখা? আমার সাথে এভাবে জোর করে বাসর করা? এবার তোমাকে মজা বোঝাবো চান্দু…

Violent love part 45

5 COMMENTS

  1. অনেকদিন পর এই গল্পটা আসলো,
    অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে পরবর্তী পর্ব প্লিজ তাড়াতাড়ি দিন

  2. আচ্ছা গল্পগুলো একটু তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়না,মানে আমার আবার ধৈর্য কম তো তাই।

  3. 45 পর্ব তাড়াতাড়ি দেন আর কত অপেক্ষা করতে হবে 🥹🥹

Comments are closed.