Violent love part 8
Mariam akter juthi
“খান বাড়ির আঙিনায় আজ যেন নিস্তব্ধতার চাদর বিছানো, প্রতিটি দেয়াল যেন নিঃশব্দে কিছু বলছে। বাড়ির পরিস্থিতি নীরবতা এমনভাবে নেমে এসেছে, যেন শব্দও সাহস হারিয়ে পালিয়েছে কোথাও। আর এই সবকিছুর মূল ঊর্ধ্ব হচ্ছে খান বাড়িতে এই প্রথমবার পুলিশ এসেছে। তাও বাড়ির ছেলেকে গ্রেফতার করতে। সবাই এটা দেখে কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছেন না। পারবেন কিভাবে বাড়ির বড়কর্তা সাফওয়ান খান নিজে পুলিশ নিয়ে এসেছেন এখানে কার বা কি বলার থাকতে পারে? সবাই শুধু তাকিয়ে আছেন সাফওয়ান খান মূলত কি করতে চায় সেটা দেখার জন্য। আরিশ তখন বাবার ডাকে, নিচে এসে সবার মত অনেকটা অবাক হয়। পুলিশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাফওয়ান খানের দিক তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
‘উনারা এখানে কি করছে?
‘আমি ওনাদের নিয়ে এসেছি।
‘কেন?
‘তোমাকে তাদের হেফাজতে পাঠাতে।
‘হোয়াটটট? আশ্চর্য হয়ে।
‘না বোঝার তো কিছুই নেই, দিন দিন তোমার যে মানসিক ট্রমা এটা সহ্য সীমার বাহিরে। তোমার কাজকর্ম দিনের পর দিন নিপীড়ন অসহনীয় হয়ে উঠছে, সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে আজকাল। উনি এটুকু বলে থেমে আবার বললেন —‘ তাই আমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি উনারা তোমাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যাবেন, তুমি সেখানে কিছুদিন থাকবে। সেদিন তুমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে ওনারা তোমাকে সেদিন ছেড়ে দিবেন।
‘আব্বু তুমি এসব কি বলছ ভেবে বলছ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘না ভেবে তো আমি তাদের বাড়িতে নিয়ে আসিনি, তাই না? অবশ্যই সবার ভালোর কথা ভেবে চিন্তে নিয়ে এসেছি।
ওনার কঠিন কন্ঠে বলা কথা শুনে সানজিদা খান চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আহাজারি কণ্ঠে বললেন,
‘আপনি এসব কি বলছেন? ছেলে ভুল করেছে মানলাম, তাই বলে বাড়ির ছেলে কে এখন পুলিশের হেফাজতে পাঠাতে চাচ্ছেন?
‘দেখো আমার মুখের উপর কেউ কথা বলুক এটা আমার কোনদিনও পছন্দের ছিল না, আমি যেটা করি সেটা ভেবে চিন্তেই করি।
‘তাই বলে,, উনাকে বাকি কথাটুকু শেষ করতে না দিয়ে সাফওয়ান খান হাত জাগিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন, —‘ ওসি সাহেব ওকে নিয়ে যান।
ওসি সাহেব সাফওয়ান খানের কোথায় উনাদের কিছু লোক দিয়ে আরিশের সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে হাটতে নিলে, আরিশ হাত দুটো মুঠ করে শক্ত কণ্ঠে বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
‘আব্বু তুমি এটা ঠিক করছো না, ওনাদের বল আমার হাত ছাড়তে।
সাফওয়ান খান ছেলের কথা শুনলেন তবে কোনো উত্তর করলেন না, অন্যদিক মুখ করে তাকিয়ে রইলেন। উনাকে অন্যদিক তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিশ আবারো বলল,
‘আব্বু প্লিজ ওনাদের ছাড়তে বলো আমাকে, আমি সত্যিই আমার মৌকে ওমন ভাবে আঘাত করতে চাইনি। তুমি তো জানো আমি আমার মৌকেকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারি না।
তখন আয়ানো ওর বড় আব্বুর নিকট অসন্তুষ্ট গলায় বলল,
‘বড় আব্বু ভাইয়া হয়তো ভুল করেছে, তাই বলে ভাই কে এভাবে শাস্তি দিবে? ওনাদের ভাইকে ছেড়ে দিতে বলো। প্লিজ বড় আপু।
সাফওয়ান খান তখনো একই রকম অন্যদিক তাকিয়ে রইলেন, আয়ানের কথাকে পাত্তা দিল না,আরিশ ওর বাবাকে কিছু বলতে না দেখে পুলিশের দিকে ঘুরে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
‘ছাড়ুন আমার হাত, আমার মৌকে এখানে একলা রেখে কোথাও যাবো না আমি।
‘দেখুন আপনি যাবেন? নাকি আমরা আপনাকে জোর করে নিয়ে যাব?
আরিশ কে একপ্রকার জোর করে পুলিশ’রা নিয়ে যেতে নিলে আরিশ ওর বাবার দিক তাকিয়ে রক্ত আবা চোখ করে বললো,
‘আজ তুমি যা করলে একদমই ঠিক করনি আব্বু, আমাকে প্লিজ ওনাদের সাথে যেতে দিও না। আমার অনুপস্থিতিতে রাদিফ আমার বউয়ের কাছে যাবে, হেসে হেসে কথা বলবে। আব্বু এটা আমি মানতে পারব না।
পুলিশ রা আরিশ কে জোর করেই খান বাড়ি থেকে নিয়ে যায়, সফওয়ান খান আরিশর কোন কথা কেই গুরুত্ব দিলেন না, বরং আরিশকে নিয়ে যেতে উনিও ওনার রুমে চলে যান।
“পর পর কেটে গেছে, দুটো দিন। জুথি এখন মোটামুটি বেশ সুস্থ, পেটের কাটা জায়গাটা অনেকটা শুকিয়েছে হাতের পোড়া স্থানটাও অনেকটা টেনে গেছে, তবে এই দুইদিনে বদলে গেছে বাড়ির অনেক সিচুয়েশন। সানজিদা খান স্বামীর সাথে দুদিন হয় মুখ ভার করে থাকেন। সাফওয়ান খান নিজেও কিছুটা ক্ষুন্ন। উনি পরিস্থিতি সামাল দিতেই এমনটা করেছেন। তার উপর থানা থেকে কল এসেছে পরপর, আরিশ এই দুইদিনে থানায় বসে পানি ছাড়া কিছু মুখে দেয় নি। তাছাড়া আরিশকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেখানে কোন পুলিশকে ঢুকতেও দিচ্ছে না। বরাবরের পাগলামি টা বেশি করে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে ওসি সাহেব সাফওয়ান খান কে ওর কথা জানাতে উনি আরিশ কে ছেড়ে দিতে বলেন। ওসি সাহেবকে ওকে ছেড়ে দিতে বললে সাথে সাথেই উনি ওকে ছেড়ে দেয়।
আরিশ থানা থেকে সোজা বাড়িতে এসে, কারো সাথে কোন রকম কথা না বলে ওর রুমে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে ঠাস করে বন্ধ করে দেয়। আরিশের আসার খবর পেয়ে ওর আম্মু ছুটে ওর কাছে এসেছিল, কিন্তু আরিশ দরজা খোলেনি। একটা সময় যেতে আরিশ দরজা খুলে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় প্যাক করে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে, সাফওয়ান খান আয়ান সানজিদা খান, লিমা খান মেহজাবিন খান মোমেনা খান, রাদিফ বাদে ভাই বোন সবাই আরিশ কে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে সে যাচ্ছে কোথায়? কিন্তু আরিশ কারো কথায় উত্তর করলো না। নিজের মতো করে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে সবার উদ্দেশ্যে শুধু একটা কথাই বললো,
‘যেই বাড়ির ছেলেকে তার নিজ পিতা পুলিশের আয়ত্তে পাঠায় সেই বাড়িতে আমিই থাকবো না। আর না কোনদিন এই বাড়িতে ফিরব,আর আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা তোমরা কেউ করবে না। কারণ আমি যা বলি সেটা করি।
আরিশের মেজ চাচা মাহমুদ খান ও সেজ চাচা সাইফুল খান ও ওকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সে কারো কোন কথা বাধা না মেনেই নিজের মতো করে রাগ দেখিয়ে চলে যায়, এতে বেশ খুশি হয়েছিল রাদিফ। কারন সেটা বুঝা গিয়েছিল তার কোন ভাবান্তর ছিল না। সানজিদা খান রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ছেলেকে চলে যেতে দেখে, সফওয়ান খান ও কম চেষ্টা করেননি আরিশ কে আটকানোর। কিন্তু আরিশ বাড়ি ছেড়ে যাওয়াতে সবাইকে বলে গেলেও ওনাকে বলে যায়নি। আর না জুথিকে দেখা দিয়ে গেয়েছে। সাফওয়ান খান নিজ স্ত্রীকে বোঝান ছেলে রাগ কমলে বাড়ি ফিরে আসবে, হয়তো এখন রাগ করে কোন বন্ধুর বাড়ি গেছে। স্ত্রী ও স্বামীর কথায় কিছুটা হলেও মনকে বুঝান ছেলে বাড়ি ফিরবে।
দিনের পর দিন কেটে মাস হয়ে যায়,খান বাড়িতে ফিরিনি আরিশ। সাফওয়ান খান খোঁজ নিলে জানতে পারেন ছেলে দেশে নেই সুইজারল্যান্ড গেছে। তাছাড়া আরিশ University of Geneva তে ইংরেজি সাবজেক্টের পাশাপাশি politics science সাবজেক্টে রাজনৈতিক তত্ত্ব বিষয়ে ছোটকাল থেকে অভিজ্ঞতা থাকায়,পাশাপাশি তার ভার্সিটি ইংলিশ সাবজেক্টে IELTS-এ ৭.৭ পায় তাই সে এই দুই, ইংলিশ politics science সাবজেক্টে স্কলারশিপ পেয়েছিল। তাছাড়া তার সুইজারল্যান্ডের ভিসা ছিল, তাই খুব সহজেই সে সুইজারল্যান্ড চলে যায়। সফওয়ান খান অনেক চেষ্টা করেছিল ছেলের সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু বরাবর উনি ব্যর্থ। ছেলের সুইজারল্যান্ড যাওয়ার খবর শুনে সানজিদা খান প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওই যে কথায় আছে না যার যায় সেই বোঝে? আর তার সকল দোষ গিয়ে পড়ল জুথির কপালে। যেই সানজিদা খান জুথিকে অনেক ভালবাসতেন, ছেলের চলে যাওয়াতে জুথির উপর কেমন মন উঠে গেলো ওনার। কেমন সব বিষয়ে কিছু হলে খিটখিট করত। পাশাপাশি ওর মা ও খিটখিট করত। যেমন টুকটাক কাজ থেকে শুরু করে সব ওর উপর পড়তো, ওই যে পেয়ে বসলে চেপে ধরে ,হয়তো পরিস্থিতির জন্য নয়তো অন্য কোন কারণে।
Violent love part 7
আরিশ চলে যাওয়ার প্রায় দুমাস পরেই রিদিফ ও accounting সাবজেক্ট এ সুইজারল্যান্ড স্কলারশিপ পায়। এতে বাড়ির সবাই বেশ অবাক হয়েছিল, কারণ রাদিফের কোন কলারশিপ পাওয়ার ওয়ে নেই। তবু যখন কলারশিপ পায় বাড়ির সবাই বেশ খুশি হয়েছিল। সবাই আগ্রহ নিয়েই রিদিফ কে সুইজারল্যান্ড accounting সাবজেক্ট পড়াতে পাঠায়। রাদিফ ও পরিবারের কথামতো অনিচ্ছা থাকা সত্বেও বাহিরে পড়তে যায়। সেই দুই ভাই আবারও একই স্থানে স্থাপিত হয়েছে, কিন্তু তাদের দুজনের গন্তব্য আলাদা। দুজন একই স্থানে থাকলে ও দুজন দু জায়গায়। যেন কারো ছায়া কারো পছন্দ নয়।