ভোরের শিশির পর্ব ১০ || সাদিয়া সিদ্দিক মিম

ভোরের শিশির পর্ব ১০
সাদিয়া সিদ্দিক মিম

হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে সোজা হামিমের রুমে চলে যাই।গিয়ে দেখি উনি ল্যাপটপে কাজ করছেন,আমি রেগে উনার সামনে দাঁড়াই।
“আহমেদ কোম্পানিটা তবে নীলা আপুদের।আর এসব কিছুর পিছনে তবে নীলা আপু আর তার হাসবেন্ড জড়িত তাই না!”
উনার কোন ভাবান্তর হলো না,এমন ভাব করছেন যেন এটা হওয়ারই ছিল।
“চুপ করে না থেকে উওর দিন।”
“তোমার স্যারত জানালই ত এখন আমাকে এসব প্রশ্ন কেন করছো?”
“আপনাকে এসব প্রশ্ন করছি কারন আমি সবটা আপনার থেকে জানতে চাইছি।”
“তবে শুনো যা জানো তুমি সবটাই সত্যি,এসবের পিছনে আপু আর তার হাসবেন্ড জড়িত।আহমেদ কোম্পানিটা আপুদেরই,আর কোম্পানিতে ঐ বিষাক্ত গ্যাস অরাই দিয়েছিল যাতে করে শ্রমিকদের ঐ অবস্থা হয়েছে।”
“কেন এসব করল অরা?কেন এতগুলো মানুষের ক্ষতি করল?”
“শ্রমিকদের সাথে বেতন নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল তাই অরা এমন করেছে।আর অরা ত ওদের শাস্তিও পেয়েছে,পুলিশ ওদের গ্রেফতারও করেছে।”
“জানি আমি কিন্তু আপনি এসব লুকিয়েছিলেন কেন?”
উনি মুচকি হেঁসে বসা থেকে উঠে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি ভ্রু কুঁচকে উনার থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে যাই।

“আমি ত লুকাতে চাই নি,তুমি বাধ্য করেছো।”
“আমি বাধ্য করেছি মানেহ?”
“তুমিই ত সেদিন আমার ফোনে বলা কয়েকটা কথা শুনে ভুল বুঝে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে।তাই আমাকে তোমার থেকে অনেক কিছু লুকাতে হয়েছে।”
“এমন হেয়ালি না করে সোজাসুজি উওর দিন।”
“সেদিন ফোনে আমি অন্য একটা কেস নিয়ে আলোচনা করছিলাম।আমার জুনিয়র অফিসার কিশোর ঐদিন একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিল। তখন দেখতে পায় একটা মেয়েকে দুইটা ছেলে জোড়াজুড়ি করে গাড়িতে তুলছে।কিশোরের বুঝতে বেশি সময় লাগে নি যে ছেলেগুলো ভালো কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়েটাকে নিচ্ছে না।সে গিয়ে আটকায় কিন্তু তারা উল্টো কিশোরকে মারতে আসে।আর কিশোর বাধ্য হয়ে গুলি চালায় যেখানে একজন মারা যায় আরেকজন পালিয়ে যায়।সেটা কিশোর আমার সাথে শেয়ার করলে আমি ওকে জানাই এক্সিডেন্ট কেস বলে চালাতে।আর যা প্রমান আছে সব নষ্ট করে দিতে।”
“তবে ঐদিন যে বললেন শ্রমিকদের দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে।”
উনি হাসলেন,
“ওটা ত আমি এমনি বলেছি।”
“ওহ আচ্ছা বুঝতে পারছি।”
“হুম আর কোন প্রশ্ন আছে কী তোমার?”
“আপু আর ভাইয়াকে যে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো তাতে আপনার খারাপ লাগছে না?”
“না খারাপ লাগছে না,তারা তাদের কর্ম ফল পেয়েছে।এসব বাদ দিয়ে আর কিছু জানার থাকলে বলে।”(রেগে)
“না আর কোন প্রশ্ন নেই,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“আচ্ছা।”

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আমি একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি উনি খাবার নিয়ে বসে আছেন।
“আপনি খাবার আনতে গেলেন কেন?আমি ত নিচে গিয়েই খেতে পারতাম।”
“এমনি নিয়ে আসলাম,বসো খাবে।”
বুঝি না উনি এমন কেন?এই ভালো ত এই খারাপ।আমি সোফায় গিয়ে বসলে উনি আমার সামনে খাবার ধরে।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাই।উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে খেতে,কিন্তু আমি এক দৃষ্টিতে উনার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।
“এভাবে তাকিয়ে থাকলে পেট ভরবে না।”
উনার কথায় থতমত খেয়ে যাই আমি,আর চোখ নামিয়ে খাবারটা খেয়ে নেই।উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।উনার চোখ কিছু একটা প্রকাশ করতে চাইছে কিন্তু সেটা আমি বুঝতে পারছি না।উনি আমাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নেয়।উনি প্লেট নিয়ে উঠতে গেলে আমি আস্তে করে বলে উঠি।
“Sorry!”
উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আপনাকে ভুল বুঝে অপমান করার জন্য আমি খুব দুঃখিত,ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।”
উনি আমার কথার উওরে শুধু মুচকি হেঁসে আমার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।আর হামিম প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে বাগানে চলে আসে।আর একমনে নিজের সাথে কথা বলে চলেছে।
“তোমাকে ত আমি সেই কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি।খুব ভালবাসি তোমাকে আমি,সেই প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু এতদিন আপুর জন্য তোমাকে কাছে টেনে নিতে পারি নি।তুমি যখন আমার ঐদিনের ফোনে কথা বলা শুনে ভুল বুঝো।সেই ভুলটা আমি সেদিনই ভাঙ্গিয়ে দিতে পারতাম।কিন্তু আমার কাছে উপযুক্ত প্রমান ছিল না তাই তোমার ভুলটাও ভাঙ্গাতে পারি নি।আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তোমার,আপু যখন জানতে পারে তুমি ওদের বিরুদ্ধে প্রমান কালেক্ট করতে চাও।তখন থেকে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে চলেছে।তাই তোমাকে প্রমান দেয়ার নাম করে আমার কাছে নিয়ে আসি।এখানে আপু তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।তারপরও আপু আর দুলাভাই এখানে এসেছিল।কিন্তু আমি তোমাকে ওদের থেকে দূরে রেখেছি।হয়ত খুব খারাপ আচরন করেছি কিন্তু তার পিছনেও কারন আছে।আমি যদি তোমার সাথে ভালো আচরন করতাম ওদের সামনে তবে আপু তোমাকে আমার দুর্বলতা বানিয়ে আমাকে থামিয়ে দিত আমার দায়িত্ব থেকে।এমনটা আপু করতে চেয়েছিল যাতে আমি কেসটা এক্সিডেন্ট কেস বলে চালাই।কিন্তু আপু পারে নি সেটা করতে,আমার রাগের কাছে হার মেনেছিল তখন।আর তুমি আসার পর তোমাকে আমার দুর্বলতা দেখালে আপু সেটা ব্যাবহার করত যা আমি চাই নি তাই এসব করা।কিন্তু শেষ হাসিটা আমিই হাসলাম আমি তোমাকে সেফ রাখতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক বেশি।আপু আর দুলাভাইয়ের থেকে এখন তোমার কোন বিপদ নেই।তাই ওদের থেকে দূরে রাখার জন্যও তোমার সাথে আর খারাপ আচরন করতে হবে না আমাকে।এখন থেকে শুধু ভালবাসব,বলব তোমাকে ভালবাসি।কাল থেকে এক নতুন জীবন শুরু করব আমরা।”

ভোরের শিশির পর্ব ৯

হামিম কথাগুলো বলার সময় চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।হামিম চোখটা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দেখে আদিয়া রুমে নেই,হামিম এবার ব্যালকনিতে যায়।আর গিয়ে দেখে আদিয়া কারো সাথে কথা বলছে ফোনে।কিন্তু হামিম ত ওকে ফোন কিনে দেয় নি,তবে কী নিজেই কিনেছে!হামিম আদিয়ার থেকে ফোনটা কেঁড়ে নেয়।
“আরে ফোনটা নিলেন কেন?দেখছিলেন ত কথা বলছি,দিন ফোনটা।”
“এই ফোন কোথায় পেলে?”
“কুড়িয়ে পাইছি।”
“মজা করো না সত্যি বলো।”
“আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন আমার কাছে ফোন কেনার টাকা নাই।এবার ফোন দিন আমার।”
“দিব না এটা আমার কাছেই থাকবে।”
কথাটা বলেই উনি ফোন নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি দৌড়ে উনার সামনে যাই।উনি দাঁড়িয়ে যায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় আমার দিকে।আমি মুচকি হেঁসে উনার কাঁধে দুই হাত রাখি।উনি খুব অবাক হয়ে যায়,আমি আস্তে করে মাথাটা উনার দিকে এগিয়ে দেই।উনিও কাছে আসার জন্য এগিয়ে আসলে আমি টুপ করে ফোনটা নিয়ে নেই।আর উনি বোকা বনে যায়,আমি খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠি।এবার উনি এক ঝটকায় আমার কোমড়ে ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।আর ঝাপ্টে ধরে গলায় মুখ গুজে নেয়।
“প্লিজ ছাড়ুন আমার অস্বস্তি লাগছে।”
“লাগুক আজ এভাবেই ঘুমাবে,একদম নড়বে না।”
বেশ কিছুক্ষন ছোটার পরও যখন ছুটতে পারলাম না তখন হাল ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুমের মাঝে কেমন যেন শূন্যতা অনুভব হল হামিমের,হামিম ধরফরিয়ে চোখ খুলে বিছানার দিকে তাকায়।আর দেখে আদিয়া বিছানায় নেই,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে।হামিম ভাবল আদিয়া হয়ত বাগানে গাছে পানি দিচ্ছে তাই হামিম ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ফ্রেশ হয়ে বাগানে চলে আসে কিন্তু সেখানে আদিয়া নেই।এবার হামিমের ভয় হচ্ছে,হামিম দৌড়ে বাড়িতে আসে।সারাবাড়ি খুঁজে বেড়ায় কিন্তু কোথাও আদিয়াকে পায় না।তারমানে কী আদিয়া চলে গেছে তাকে ছেড়ে!কথাটা মাথায় আসতেই হামিমের বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

ভোরের শিশির শেষ পর্ব