অনুভবে তুমি পর্ব ১৪

অনুভবে তুমি পর্ব ১৪
লিজা মনি

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে যায়।এর মধ্যে আহানের আর কোনো খুজ নেই। আজ ইয়ানার ইঙ্গেজমেন্ট। ইমতিয়াজ মির্জা তার ওয়াইফ হিয়া মির্জা আর সাহিল মির্জা তাদের বাড়িতে আসে।
ইয়ানাকে তাদের সামনে বসানো হয়। পরিধানে তার পিঙ্ক কালারের সিম্পল কারুকাজের মধ্যে শাড়ি,, মুখে হালকা মেকআপ,, এই সামান্য সাজেই যেনো ইয়ানাকে অসামান্য লাগছে।
ইমতিয়াজ মির্জা : আমাদের ইয়ানা মামুনীতো মাসআল্লাহ খুব সুন্দর।এমনি এমনি তো আমার ছেলে তোমার জন্য পাগল হয় নি।

ইয়ানা কিছুটা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে।
মিসেস হিয়া মির্জা কিছুটা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,, উফ তুমি ও না ইমতিয়াজ মেয়েটাকে শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছো।এখন আমরা আংটি বদলের কাজটা সেরে ফেলি।
তারপর হিয়া মির্জা দুইজনের হাতে দুটি আংটি দেয়।সাহিল ইয়ানার হাতে রিং পরিয়ে দেয়। কিন্তু ইয়না সাহিলকে রিং পরাতে গেলে ওর হাত কাপা শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে রিং নিচে পরে যায় কিন্তু তার আগেই সাহিল ধরে ফেলে।
সাহিল : কি হলো ইয়ানা এইভাবে ভয় পাচ্ছো কেনো। এত ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই ধীরেসুস্থে পারাও।
তারপর ইয়ানা ও সাহিলকে রিং পরিয়ে দেয়। সামাপ্তি হয় তাদের ইঙ্গেসজমেন্ট।
[কিন্তু একজন কি তা মেনে নিবে। যদি সে জানতে পারে ইয়ানা অন্যজনের নামে রং পরেছে কি করবে ও?🤔]

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতের শেষ প্রহর চলমান। আকাশে খুশিমনে উড়ন্ত পাখিরা ও ক্লান্ত হয়ে চোখ বুজে ফেলে।চারদিকে হুতুম পেচার ডাক। নিস্তব্ধ এই জঙ্গলে হুতুম পেচা আর একটি লোকের নিশ্বাস ছাড়া একটা পাতার ও শব্দ নেই। একজনের নিশ্বাস আরেকজনের ডাক এই নিস্তব্দ পরিবেশে যেনো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এই অমাবস্যাকে কাটিয়ে আলোর কোনো সন্ধান নেই। হঠাৎ সামনে থাকা গাড়ির হ্যাডলাইন জলে উঠে। কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হয় মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করা এক মানব। যার কালোর মধ্যে হালকা নীল চোখ দুইটা ভাসমান।হাতে আগুন আর সিংহের মাথার ট্যাটু করা,,, হাত দুইটাকে দেখতে একটু ভয়ংকর লাগলো।শুধু তাই নয় ঘাড়ে একটা সাপের ট্যাটু,,, সামনে ফনা তুলে ধরেছে। এতদিন আবৃত ছিল বলে কেউ লক্ষ্য করে নি। আর আজ লোকটির সামনে পরনের হুডিটা খুলে ফেলে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মাটির দিকে এক ধ্যনে তাকিয়ে আছে,,, হয়তো কিছু একটা ছক কষছে।
সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটি ভয়ে এক পাশে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

হঠাৎ করে সামনে হুডি পড়া ব্যক্তির বিচ্ছিরি হাসিতে সহসা সবাই কেপে উঠে। লোকটির এমন অট্টহাসি সামনে পড়ে থাকা ছেলেটির গলা শুকিয়ে দিচ্ছে। পরপর করে কাপতে থাকে ছেলেটি।
কালোতে আবৃত থাকা ব্যক্তিটি এইবার সামনে মেজেতে পড়ে থাকা ছেলেটির দিকে ঘাড় কাত করে তাকায়। এই চোখ থেকে যেনো আগ্নেয়গিরির লাভা বের হচ্ছে। লোকটির দৃষ্টি সামনে থাকা ব্যক্তির হৃদয়ে তীরের ফলার মতো বিধছে। সামনে থাকা ব্যক্তিটি এইবার ভয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।
হুডি পড়া লোকটি সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,,,,
” সাহস আছে বলতে হবে তোর। অগ্নি চৌধুরীর লোক হয়ে বাহিরে খবর পাচার করিস। এক সপ্তাহ দেশের বাহিরে ছিলাম তার মানে এইটা ভাবিস না কোনো খবর রাখি না। পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকি না কেনো আমার দৃষ্টি সবসময় তোদের উপর নিক্ষিপ্ত। এইবার ভালো ছেলের মতো বলে ফেল এই সপ্তাহ কার কাছে খবর পাচার করেছিস।তাহলে হইতো শাস্তিটা কম পেতে পারিস”

,,আহান এতদিন দেশে ছিলো না। ওইদিনকার ঘটনার পড়েরদিন ওকে কোনো কারনে কানাডায় যেতে হয়। আজকেই বাংলাদেশে ব্যাক করে। এসেই জানতে পারে তার ওই লোক তার আগোচরে বাহিরের ব্যক্তিদের সাথে হাত মিলিয়েছে,,,
লোকটি ভয়ের কারনে কথা বলতে পারছে না,,,
আহান এইবার রেগে ছেলেটির গাল চেপে ধরে বলে,,,,,,
“নাটক কম করে সত্তিটা বল নয়তো কি করবো তোর ধারনার বাহিরে। এতদিন আমার কাছে ছিলি আশা করি আর বুঝাতে হবে না”
ছেলেটি এইবার ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,

“স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। টাকার লোভে পড়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর কখনো এমন করবো না। আমি মরে গেলে আমার বউ বাচ্চা না খেয়ে মরবে স্যার”
আহান মুখে চু চু শব্দ করে দাতে দাত চেপে বলে,,,
” এতদিন আমার সাথে ছিলি কাউকে দেখেছিস একবার অগ্নি চৌধুরির টর্চারসেলে ডুকলে সে অক্ষত অবস্থায় বাহিরের আলো দেখে। বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা আর যাই হোক অগ্নি চৌধুরি করে না। বউ বাচ্চার চিন্তা তোর মতো
বিশ্বাসঘাতকের না করলে ও চলবে।যার ছায়ার তলে এতদিন ছিলি তার পিঠেই ছুরি মারলি।
এইবার এই কাপাকাপি বন্ধ কর আর সত্তিটা বল।
আহানের এই হুংকারে লোকটি ভয়ে ভয়ে বলে,,,

” স… স.. স্যার আ.. আমাকে যেই ব্যক্তিটি শুধু বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। কাজ হিসাবে আমি সব খবর ব্যক্তিটিকে যেনো দেয়। তাছারা আমি আর কিছু জানি না। তবে লোকটি বাংলাদেশে থাকে না।
আহান এইবার কপাল কুচকে বলে,,,,,
– মানে?
“” জি স্যার ব্যক্তিটি বলেছিলো কয়েকদিনের মধ্যে ও বাংলাদেশে ব্যাক করছে। আপনি নাকি ওর সবথেকে মূল্যবান জিনিস কেরে নিয়েছেন। তাই ও আপনার সবচেয়ে কাছের জিনিস কেরে নিবে”
আহান কিছুটা একটা ভেবে ঘম্ভির হয়ে বলে,,,,,,

” যদি আমি তার ভয়েস শুনায় বুঝতে পারবি লোকটির কন্ঠ।
– জি স্যার বুঝলে ও বুঝতে পারবো। কারন অনেকবার ওর সাথে কথা হয়েছে।
“আহান এইবার একটা রেকর্ড ওপেন করে”
লোকটি এইবার আশ্চর্য হয়ে বলে,,,
” জি স্যার এটা ওই ব্যক্তিটার ভয়েস। কিন্তু স্যার আপনি চিনলেন কিভাবে? তার মানে আপনারা পূর্ব পরিচিত?
আহান একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” শুধু পরিচিত নয় খুব পরিচিত ও আমার। আমার পিছনে পুনরায় লেগে কাজটা ভালো করলো না। এইবার অগ্নি চৌধুরির হিংস্রতা দেখবে”
লোকটা কান্না করতে করতে বলে,,,,,

“স্যার আমিতো সব বলে দিয়েছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।
আহান লোকটার দিকে ঘার কাত করে তাকিয়ে বলে,,,,
” জানিসতো আমার মনে দায়া মায়ার ছিটফুটা ও নেয়। আরিফ ওকে এমন অবস্থা করো যাতে সকালের আলো না দেখতে পারে। তবে অন্যদের চেয়ে একটো ভালোবেসে মেরো। আমার লোক ছিলো বলে কথা।
এই বলে আহান এইখান থেকে চলে যায়।
পিছন থেকে লোকটি চিৎকার করতে থাকে,,,,, প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। কিন্তু একবারের জন্য ও আহান পিছন ফিরে তাকালো না।

ইয়ানা আজ ভার্সিটিতে যায় নি। কেনো জানি সব কিছু বিরক্ত লাগছে। কেনো মনে হচ্ছে জীবন থেকে কোনো একটা মুল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলছি। তার ভাবনার ছেদ ঘটে কোনো একটা শব্দে। তাকিয়ে দেখে হল্লাপর্টি হুড়মুড়িয়ে রুমি ডুকছে।
ইয়ানা কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে,,,,,,
” কোন পাগলা কুকুরে তাড়া করেছে তোদের। এইভাবে নেশাখোরদের মতো ডুকেছিস কেনো”
আকাশ: আস্তাগফিরুল্লাহ জীবনে একটা সিগারেটে হাতে নিয়ে দেখলাম না আর তুই নেশাখোর বানিয়ে দিলি।
রুহান : হ্যা একদম ঠিক কথা। ওইদিন লোকিয়ে শুধু সিগারেট খেয়েছিলো আমি কিন্তু কাউকে বলেনি।
আকাশ রেগে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” শালা এইভবে না ফাসালে ও পারতি”
রু্‌হান আর আকাশের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে দেয়। ইয়ানার ও এখন ভালো লাগছে সবাইকে দেখে। সত্যি ফ্রেন্ড হচ্ছে এমন একটা সম্পর্ক যার সান্নিধ্যে গেলে সব মন খারাপ দুর হয়ে যায়।
আয়াত: তুই যে সিগারেট খাস এইটা কি অবনি জানে। না জানলে তো আমাকে জানাতে হবে বল।
আকাশ কাদো কাদো হয়ে বলে,,,,,,

” প্লিজ বইন এমন করিস না। আমি ওকে প্রমিস করেছি আর খাবো না। এখন যদি জানে আমি খেয়েছি আমি শেষ। আর এমনিতে ও আমি খাই না। ওইদিন একটা খেয়েছিলাম”
আরু : এইজন্য ওইতো বলি তোর ঠোট এমন মদখোরদের মতো কালো কেনো।
আকাশ : এমন মিথ্যা বলিস না বইন আল্লাহর গজব পরবো। তুই জানিস আমার ঠোটের প্রসংসা কতো মেয়ে করছে।আর তোদের মতো ময়দা সুন্দর না আমরা😎।
আরু: হে হে সো ফানি। আমরা মোটেও ময়দা সুন্দরী না। তোরা হচ্ছিস এডিট সুন্দর।এডিট করে আক্কাস আলী থেকে ঝাক্কাস আলী হোস।
রুহান : দেখ এডিট এডিট করে অপমান করবি না। তোদের মুখে কিন্তু এখন ময়দা লেগে আছে। ময়দা মেখে জরিনা থেকে শাবানা হোস ।
আয়াত: রুহাইন্নার বাচ্চা😡😡।
রুহান: নাউজুবিল্লাহ আমি এখনো বিয়ে করি নি তুই আমার বাচ্চাকে দেখলি কিভাবে।
তাদের ঝগরার মাঝে সেলিনা হোসেন তাদের খাবারের জন্য ডাক দেয়।

আহান মাথা নিচু করে নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছে। কিন্তু কিছুতেই কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না। মনের ভিতর কেমন শূন্যতা অনুভব হচ্ছে,,, বিষাদের ছায়া ধরে বসেছে চারপাশ । শান্তির জন্য চোখ বন্ধ করলেই এক রমনীর অস্তিত্ব ভেসে উঠছে। অনেক দিন না দেখার ধরুন তৃষ্নার্তদের মতো ভিতর হাহাকার করছে।
আহানের এইরকম অস্থিরতা থেকে ইউভি মনে মনে ভাবে,,

” তুই কি বুঝতে পারছিস না আহান তুই ইয়ানাকে ভালোবেসে ফেলেছিস। ও শুধু তোর অনুভব নয় তোর অস্তিত্ব হয়ে গেছে ও । যাকে এক নজর না দেখলে তোর ভিতর হাহাকার করে,, তৃষ্নার্তদের মতো ছটফট করিস। তবু ও কেনো স্বীকার করছিস না তুই ওকে ভালোবাসিস।
ইউভিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,,,,,,
– কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
ইউভি মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,,,,
– ভাবছি মানুষ ভালোবাসার জন্য ছটফট করে তবু ও মুখে স্বীকার করে না।
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
– কি বলছিস এইসব?

ইউভি: ভুল কি বললাম বল। তুই ইয়ানাকে ভালোবাসিস কিন্তু সেইটা মানতে পারছিস না। তুই কিন্তু মনে মনে ও জানিস তুই ইয়ানা কে ছাড়া থাকতে পারবি না। তাহলে কেনো এত দুরত্ব।
আহান তাচ্ছিল্য ভাবে বলে,,,,
” ভালোবাসা মাই ফুট। ওই মেয়েকে যাস্ট প্রয়োজন। আর অগ্নি চৌধুরি কোনো মেয়েকে ভালোবাসবে এর চেয়ে হাস্যকর কিছু হতেই পারে না।
ইউভি : “শুধুই কি প্রয়োজন আহান। যদি শুধু প্রয়োজন ওই হতো তাহলে তুই কেনো ওর জন্য এত ডেম্পারেট। কেনো যেই ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় তাকে চিরদিনের জন্য চোখ বন্ধ করে দিস”
ইউভির প্রশ্ন শুনে আহান কিছুটা থমথমে খেয়ে যায়।
কেনো ও এমন করে তার কারন যে ওর ও জানা নেই।
আহান এইবার রেগে ইউভিকে বলে,,,,

“” তোর এইসব কথা বাদ দিবি। এমন কিছুই না। রুয়ানার সাথে কথা হয় তোর।
আহানের কথা শুনে ইউভি চোখ বড় বড় করে তাকায়।
আহান : কি হলো এইভাবে তাকানোর কি আছে। ভুলে যাস না রায়ান আর ইউভি আহানের হ্রদয়ে আছে। তারা কি করে সব কিছু আমার জানা। তাই অবুঝের মতো ব্যবহার করিস না ওকে।
ইউভি : কি করবো বল জীবনে হাজার ও মেয়ের ভীরে থেকেছি। কখনো কোনো মেয়েতে আটকায় নি। কিন্তু কিভাবে বুঝব কোনো এক সময় এক পিচ্চিতে আটকা পড়ব। এক দেখাতেই আমার হৃদয়ে স্রুত ভয়ে যাবে। কি করবো বল ও অনেক ছোট। প্রতিনিয়ত মনের সাথে লড়ায় করছি । ওর বাচ্চামো আমাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে। ইচ্ছে করে নিজের সাথে পিষে ফেলি।কিন্তু বয়সের প্রচুর ফারাক,, বলেই সে কান্নায় ভেঙে পরে।
আহান বিরক্তি নিয়ে মুখে ” চ ” উচ্চারন করে বলে,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ১৩

“আমি আগে জানতাম রায়ান মহিলাদের মতো তুই কবে থেকে এমন হলি বলতো। যাকে ভালোবাসিস তাকে নিশ্চয় পাবি। রাজি না হলে জোর করে আদায় করবি।তবুও মেয়েদের মতো ভে ভে করিস না।
ইউভি আহানের কথা শুনে মনে মনে বলে,,,
” কার কাছে এসে ভালোবাসার গান গাইছিস ইউভি। শালা আস্তো একটা নিরামিষ । আল্লাহ ওই জানে ইয়ানার কপালে কি আছে।

অনুভবে তুমি পর্ব ১৫