অনুভবে তুমি পর্ব ১৭

অনুভবে তুমি পর্ব ১৭
লিজা মনি

ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে আসে। আর ভাবছে কিভাবে নিজের আব্বু আম্মুকে রাজি করাবে। তারা কি সত্তিই রাজি হবে নাকি আমাকে নিরাশ করবে। যা হওয়ার হোক বললে তো আর মেরে ফেলবে না। বলেই সে তার আব্বু আম্মুর রুমের দিকে যায় তারপর দরজার সামনে গিয়ে বলে,,,,
“” আমি কি ভিতরে আসতে পারি।””
আসাদ হোসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“” বাবা মায়ের রুমে ডুকতে অনুমতি নিতে হয় না। ভিতরে আয়।”
ইয়ানা ভিতরে আসতে আসতে বলে,,,

” যার রুম ওই হোক না কেনো আব্বু অনুমতি নেওয়া একটা ম্যানার্স।আর সেটা তুমিই আমাদের শিখিয়েছো।”
আসাদ হোসেন মেয়ের কথায় প্রফুল্ল হেসে বলেন,,,
” ঠিক আছে আমার মা। কিন্তু এত রাতে আমাদের রুমে।কোনো দরকার নাকি?”
ইয়ানা যেনো এই প্রশ্নের ওই অপেক্ষাই ছিলো। সে এইবার আমতা আমতা করে বলে,,
” হুম আব্বু কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে”।
আসাদ হোসেন : ” হুম বল কি বলবি। এতে ঘাবরানোর কি আছে। কখনো তোর কথাকে অমান্য করেছি। কারন আমি জানি আমার মেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ওই নেবে।নিজের বাবা কে কখনো নিরাশ করবে না।”
ইয়ানা নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
” থেংক ইউ আব্বু এতটা বিশ্বাস করার জন্য। আর তোমার বিশ্বাসের মর্যাদা সবসময় রাখার চেষ্টা করবো।”
আসাদ হোসেন : ওকে বল কি বলবি।
ইয়ানা একটা শ্বাস নিয়ে বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” আসলে আব্বু আমি ভাবছিলাম আমাদের এইখানে তো তেমন কেউ নেই। আমাদের সমস্ত আত্নীয় চট্টগ্রামে। তাই বলছিলাম বিয়েটা ঢাকায় না হয়ে চট্টগ্রামে হলে হয় না।দাদা দাদু মারা যাওয়ার পর আমরা আর ওখানে যায় নি। এই বিয়ে উপলক্ষে আমরা সবার সাথে দেখা করে আসতে পারবো। তাই বলছিলাম বিয়েটা ঢাকায় না হয়ে চট্টগ্রামে হলে ভালো হতো যদি তুমি রাজি থাকো”””
ইয়ানা ভয়ে ভয়ে আসাদ হোসেনের দিকে তাকায় আব্বু নি আবার রাগ করে কিন্তু ইয়ানা অবাক কারন আসাদ হোসেনের মুখে হাসির ঝিলিক।
আসাদ হোসেন ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” একদম আমার মনের কথাটা বলেছিস। আমি ও ভেবেছিলাম কিন্তু কিছু একটা মনে করে তা আর প্রকাশ করে নি। কত দিন ধরে নিজের বাসভিটা দেখি না। বুকটা যেনো হাহাকার করছে।”
ইয়ানা খশিতে নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
” তার মানে তুমি রাজি।ধন্যবাদ আব্বু”

আসাদ হোসেন : ” হুম তোর বিয়ে উপলক্ষে তর দাদা দাদির কবরটা ও জয়ারত করে আসবো। ”
ইয়ানা : “ঠিক আছে তাহলে আম্মু নিচ থেকে আসলে এই নিয়ে আলোচনা করো। খাবার সময় ওই তোমাদের দুইজনের সামনে বলতাম কিন্তু কোনো এক কারনে বলিনি। এখন তুমি আম্মকে জানিয়ে দিও।”
ইয়ানা নিজের বাবা মায়ের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে যায়। আর মনে মনে বল,,,,,
“” আমি জানি মি, চৌধুরি আপনি সর্বক্ষন আমার দিকে নজর রাখেন। তার জন্য সিসি ক্যামেরা ও লাগিয়েছেন পুরো ঘর জুরে। কিন্তু বাবা মায়ের রুমে নিশ্চয় লাগান নি। কারন আর যায় হোক ওনাদের এইখানে লাগাবেন না আমি জানি। তাইতো কথাটা খাবার টেবিলে না বলে সোজা আব্বু আম্মুর রুমে গিয়ে বলে আসলাম। দেখি এইবার কিভাবে আমার যাওয়া আটকান, আর আমার বিয়ে।

কেটো গেলো এর মাঝে দুই দিন। আজ ইয়ানা তারা চট্টগ্রামে যাচ্ছে। সাথে সুমু ও রয়েছে। শুধু ও জানে কেনো তারা সবাই চট্টগ্রামে যাচ্ছে । হল্লাপর্টির সবাই জানে। কিন্তু তারা এখন যাবে না। বিয়ের আগের দিন উপস্থিত হবে।সুমুর বর্তমান অভিবাবক যেহেতু আসাদ হোসেন তাই সুমু ইয়ানার সাথেই যাচ্ছে।
ইয়ানা তারা সবাই আগেরদিন ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলো। তাই এখন আর কষ্ট করতে হচ্ছে না।
ঠিক তখনি আননোন নাম্বার থেকে সুমুর ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে। দেখে এইটা সেই নাম্বার যেটা ওকে প্রতি রাতে বিরক্ত করে। তবে আস্তে আস্তে এখন ভালো লাগতে শুরু করেছে। আগের মতো বিরক্ত অনুভব হয় না।অনেকটা বন্ধুত্বের মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সুমু কিছুক্ষন চ্যাটিং করে ফোন ব্যাগে ডুকিয়ে ফেলে। আশেপাশের সবাই জানে ইয়ানা তারা বেড়াতে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ জানে না ওইখানে বিয়ের জন্য যাচ্ছে।ইয়ানা ওই সবাইকে বলতে নিষেধ করেছে যাতে কেউ না জানে।
তারা প্রায় আট ঘ্ন্টা জার্নি করার পর চট্টগ্রামে পৌছায়। অনেক দিন পর সবাই সবাইকে দেখে কিছুটা আবেগপ্লুত হয়ে পরে।
তারপর খাওয়া দাওয়া করে এক এক করে ঘুমাতে চলে যায়। সারাদিন জর্নি করার ফলে সবাই ভীষন ক্লান্ত।

এইদিকে আরও দুইদিন কেটে গেলো। আহান এই দুইদিনে ইয়ানার কোনো খোজ পায় নি। শহরের ওলিতে গলিতে লোক লাগানো হয়েছে ইয়ানাকে খোঁজার জন্য। কিন্তু বরাবর সবাই নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। আহান নিজের বিলাশবহুল বারে বসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে। কিছুতেই তার মাথা ঠান্ডা হচ্ছে না। ইয়ানাকে হাতের কাছে পেলে জ্যন্ত কবর দিতো। ঠিক তখনি এইখানে আরিফ এসে বলে,,,,,
“” স্যার ইয়ানা মেম তারা চট্টগ্রামে গিয়েছে নিজের দাদা বাড়ি। একটু আগেই খবরটা পেলাম”
আহান আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” শুধুইকি বেড়াতে গিয়েছে নাকি অন্যকিছু?”
আরিফ আহানের প্রশ্নে আমতা আমতা করে বলে,,,,
” স্যার যতটুকু খবর পেয়েছি সবাই তাই বলল। তার বেশি কেউ কিছু জানে না।”
এরপর আহান বলে,,,
” ঠিক আছে যা তুই”
আরিফ চলে যেতেই আহান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,
” কাজটা তুমি ঠিক করোনি আমার অনুভবের সেহজাদি । সাবধান করেছিলাম শুননি। অবাধ্য হতে বারন করেছিলাম কিন্তু অবাধ্য হয়েছো। অন্য কারোর হওয়া চিন্তা করতে বারন করেছিলাম কিন্তু মানোনি। এবার বুঝবে অগ্নি চৌধুরি কি জিনিস।বলেই ওয়াইনের গ্লাসটা চেপে ধরে। এতটায় জোরে ধরেছিলো যে গ্লাসটা ভেঙ্গে বাজেভাবে হাতে গেথে গিয়েছে। কিন্তু আহানের এইসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও বিশ দিন। এই বিশ দিনে নাতো আহান ইয়ানার কোনো খুজ নিয়েছে আর নাতো ওকে আনতে গিয়েছে।
আজ ইয়ানার গায়ে হলুদ । যেহেতু বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে তাই কোনো মেহেন্দি অনুষ্ঠান বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। হল্লপার্টি তারা সবাই চলে এসেছে। এত দুরে আয়াত আর ইয়ানার বাবা তারা দিতে চাই নি তবে তারা কোনোরকম রাজি করিয়ে এসেছে।
তারা সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে রুমে চলে যায়। অনেক দিন পর সব বন্ধুরা এক সাথে হওয়ায় তারা ইয়ানার রুমে গিয়ে আড্ডায় মেতে উঠে।
আয়াত : আমরা কখনো ভাবতে ও পারে নি তোর বিয়ে এইরকম ঘরোয়া উপায়ে হবে। কত ইচ্ছে ছিলো মজা করবো আনন্দ করবো। নাচ হবে গান হবে।
ইয়ানা : এখন ঘরোয়া উপায়ে হচ্ছে তারপর উনি নিজের কাজটা শেষ করে আসলেই সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবো।
আরু : ওহ মাই গুডনেস ইনু এখনি জিজুকে উনি বলা শুরু করেছিস। বলেই সবাই হাসা শুরু করে।
​​​​​
রুহান : সব ওইতো বুঝলাম কিন্তু তোরা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস অগ্নি চৌধুরি আসার পর থেকে রায়হানের কোনো খুজ নেই। এমনকি একবারের জন্য ও দেখি নি। তোদের কি একটু খটকা লাগছে না।
সুমু : হুম এইটা আমার মাথায় অনেকবার এসেছিলো। কন্তু এক হিসাবেতো ভালো হয়েছে এখন ইয়ানাকে আর কেও বিরক্ত করে না।
আকাশ : বিরক্ত করে না মানে? ভুলে গেছিস দ্যা গোল্ডেন অফ মাফিয়া গ্রুপের লিডার অগ্নি চৌধুরির কথা। ওনি রায়হানের থেকে অনেক ধাপ এগিয়ে।কিন্তু ইয়ানা অগ্নি চৌধুরি তোর বিয়ের খবর জেনেও কেনো এত চুপ রয়েছেন?
আয়াত : হয়তো মোহ কেটে গেছে তাই।
ইয়ানা : “না মোহ কাটেনি। কারন মি, চৌধুরি জানেন ওই না কাল আমার বিয়ে। একবার ও তোদের মনে হয় না যেই চট্টগ্রামে দাদা দাদু মৃত্যুর পর আব্বু আম্মু জোর করলে ও আসতাম না আজ কেনো নিজ ইচ্ছায় এইখানে বিয়ে করতে চাইলাম। কারন ঢাকায় বিয়ে করলে উনি কোনোভাবেই জেনে যেতো। কিন্তু চট্টগ্রামের কথা কোনোভাবেই জানবে না আর যদি জেনে ও থাকে তাহলে ভাব্বে বেড়াতে এসেছি। হয়তো জানে নি জানলে এতক্ষনে চলে আসার কথা।”

আরু : যাই হোক কিন্তু ইয়ানা অগ্নি চৌধুরি একজন মাফিয়া। ওনি এমনি এমনি কারোর পিছু নেয় না। এমন ওতো হতে পারে যে ওনি তোকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে এইটা কোনো মোহ বা কামনা নয়।
হল্লাপার্টির সবাই আরুর কথায় সম্মতি জানায়।ইয়ানা তখন তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,
“” ভালোবাসা মাই ফুট। ওনি কখনো বলেছেন যে ওনি আমাকে ভালোবাসে। আমি হাজার বার জিজ্ঞাসা করেছি ওনি হাজার বার না করেছেন। আর যদি ভালো ওই বাসতেন তাহলে নিশ্চয় খোজ করতেন তাই না”
আকাশ : ওকে ঠিক আছে রাগ করিস না। বাদ দে এইসব কথা। কাল তোর বিয়ে এইটা নিয়ে ভাব। তারপর তারা আরো কতক্ষন আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
” কিন্তু দুইজিন ব্যক্তির চোখে ঘুম নেই ”

সকালে বাড়ির মহিলা তারা হাতে হাতে কাজে লেগে পড়ে। একটু আগেই ছেলের বাড়ির সবাই উপস্থিত হয়েছে। তাদের বাড়ি থেকে শুধু সাহিল মির্জা তার বাবা আর মা ইমতিয়াজ মির্জা আর হেনা মির্জা আর কয়েকজন আত্নীয় আসে। বাহিরের কোনো লোক আসে নি। তাদের আপ্যায়ন পর্ব শেষ করা হয়। এখন বিয়ের জন্য কাজি চলে আসে। ইয়ানাকে নিয়ে এসে সাহিলের সাথে বসানো হয়।
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে,,,
“” ইমতিয়াজ মির্জার একমাত্র ছেলে আব্রাহাম সাহিল মির্জার সাথে আসাদ হোসেনের বড় মেয়ে ইয়ানা বিনতে আসদের বিশ লক্ষ টাকার দেনমোহরে বিয়ের ধার্য করা হয়েছে। এখন তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে বলো মা কবুল।
ইয়ানার ভিতর ছেদ করে উঠে। বার বার শুধু আহানের অবয়ব ভেসে উঠছে। কান্না আসছে প্রচুর। নিজেকে খাপছাড়া লাগছে।

অনুভবে তুমি পর্ব ১৬

ইয়ানার ভাবনার মাঝে কাজি সাহেব পুনরায় বললেন বলো মা কবুল,,,
ইয়ানা কিছু একটা ভেবে নিজের মনকে শান্ত করে নেয়। তার পর বলে দেয় তিনটি শব্দ ” কবুল, কবুল, কবুল”
তারপর সবাই একটা স্বশ্তির নিশ্বাস ফেলে। কাজি সাহেব পুনরায় সাহিলের কাছে গিয়ে বলে তুমি বলো বাবা কবুল। সাহিল কবুল বলতে যাবে ঠিক তখনি দরজার কাছ থেকে তিনটি শব্দ ভেসে আসে।
“” কবুল, কবুল, কবুল”
সবাই সেই আগত্য ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। ইয়ানা এতক্ষন কান্না করছিলো। তাই সে নিজে মাথা তুলে তাকায়। তাকাতেই তার অন্তর আত্না কেপে উঠে। কারন….

অনুভবে তুমি পর্ব ১৮