অনুভবে তুমি পর্ব ১৮

অনুভবে তুমি পর্ব ১৮
লিজা মনি

সবাই সেই আগত্য ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। ইয়ানা এতক্ষন কান্না করছিলো। তাই সে নিজে মাথা তুলে তাকায়। তাকাতেই তার অন্তর আত্না কেপে উঠে। সাথে সাথে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। কারন দরজার সামনে ব্লু কালারের হুডি পরে দারিয়ে আছে সয়ং অগ্নি চৌধুরি।
ইয়ানা অস্ফুর্ত ভাষায় বলে,,
” মি, চৌধুরি”
বিয়ে বড়িতে সবাই কানাঘুষা লেগে যায়। কে এই ছেলে?
আর হল্লাপার্টি তারা ভয়ে এক একজনের আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে। কারন তারা অগ্নি চৌধুরির রাগ সম্পর্কে অবগত।
আসাদ হোসেন এইবার রেগে বলে উঠে,,,,,

” এই ছেলে কে তুমি? বিয়ের মাঝখানে বরের জায়গায় তুমি এসে কবুল বলছো।”
আহান দুইহাত পেন্টের পকেটে গুজে আসতে আসতে বলে,,,
” কেনো শশুর আব্বু আমি আপনার মেয়ের জামাই।”
আসাদ হোসেন: মেয়ের জামাই মানে? আমার কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি তোমায়?
আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” বয়স হয়েছে ঠিক আছে তাই বলে এখনকার কথা এখন ওই ভুলে যাবেন। একটু আগেইতো কবুল বলে বিয়ে করলাম”
আসাদ হোসেন বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“এই ছেলে কি ফাইজলামি করছো? তোমার সাথে কি আমার ফাইজলামির সম্পর্ক। এখনি বের হও নইতো পুলিশ ডাকবো।”
আহান এইবার আস্তে আস্তে মুখের কাঠিন্য ভাব বজায় রেখে বলে,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” মেইন পয়েন্টে এসেছেন। শশুর আব্বু হন আপনি আমার এইটা তো আর মজার সম্পর্ক নয়। ”
আসাদ হোসেন এইবার চরম রেগে গিয়ে বলেন,,,
” এই ছেলে তুমি যদি এখন বের না হও তাহলে পুলিশ ডেকে এনে বের করাবো।তারপর জেলের মুখ দেখতে হবে। তাই বলছি বের হয়ে যাও”
আহান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আসাদ হোসেনের উদ্দেশ্যে বলে,,,
” দেশে এমন কোনো জেল এখনো হয় নি যেখানে অগ্নি চৌধুরিকে বন্দি করবে”
এই কথাট সবার কানে বাজের ন্যায় ঠকলো। ওনি তাহলে অগ্নি চৌধুরি। যেহেতু এইটা চট্টগ্রাম তাই অনেকে চিনতে পারে নি।আর তাছাড়া আহান আজ সম্পূর্ন অন্নভাবে এসেছে যেইভাবে ও মাফিয়া জগতে উপস্থিত হয়।
ইয়ানা এইবার আহানের সামনে এসে দড়ায় আর বলে,,,,

” এখানে কেনো এসেছেন মি, চৌধুরি। দেখুন এইটা একটা ভদ্র ফেমিলি তাই হাত জোর করছি এইখান থেকে চলে যান। আপনার মাফিয়াগিরি অন্য কোথা ও গিয়ে দেখান”
ইয়ানা বলতে দেড়ি কিন্তু আহানের হাতের চর পরতে দেড়ি হয় নি।পর পর শক্ত হাতের চর খেয়ে সামলাতে না পেরে ছিটকে পরে।
একটু আগে যে বাড়িটা খুশিতে মেতে উঠেছিলো। কিন্তু এখন এইটা যেনো একটা মৃত্যু পুরিতে রুপ নিয়েছে।
আহানের পৈশাচিক রুপ দেখে এক একজন ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দেয়।
সাহিল এতক্ষণে চুপ থাকলেও এখন আহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,,

” এইরকম অভদ্রতার মানে কি মি, চৌধুরি। আপনি আমার হবু স্ত্রীর গায়ে হাত তুলছেন কেনো?”
আহানের রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অতিরিক্ত রাগের কারনে শরিরের রগগুলো ভেসে উঠেছে।সাহিলের কথা ছিলো রক্তে আগুন ধরার মতো।সে সাহিলের উদ্যেশ্য দাতে দাত চেপে বলে,,,
“‘ তুই এইখানে ওই দাড়া। তোর ব্যবস্থা অনেক আগেই করা উচিৎ ছিলো। আর তুই কার জন্য কাজ করছিস সেটা ও আমি খুজে বের করবো।”
তারপর কাজি সাহেবকে ডাক দিয়ে বলে,,
“” কজি সাহেব বাকি বিয়ের কাজ শেষ করুন।””
ইয়ানা নিজের চুল থেকে আহানের হাত সরাতে সরাতে বলে,,,
” কখনো আপনার মতো জানোয়ারকে আমি বিয়ে করবো না। যদি আপনি আমার জীবন ও নিয়ে নেন তার পর ও না।”

আহান ক্ষেপে গিয়ে ইয়ানার চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
” ভয় করছে না? জানের মায়া নেই তর? অকালে মরার শখ জেগেছে। বারন করেছিলাম না আমাকে ছাড়া অন্য পুরুষকে কল্পনা করতে তাহলে বউ সেজেছিস কেনো?
ইয়ানা ব্যথা নাক মুখ খিচে ফেলে। আহানের শক্ত হাতের কাছে ইয়ানার গালটা তুলার সমতুল্য।
ইয়ানা —- আপনার বারন কেনো শুনতে হবে আমাকে? আমি মরে গেল ও আপনাকে বিয়ে করব না।
আহান ইয়ানার কথা শুনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,
“” জানতাম তুমি এত সহজে রাজি হবে না। তাই অন্যদিক দিয়ে তীর ছুরেছি। আর এই জানোয়ারের সাথেই সারাজীবন কাটাতে হবে।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,

” মানে”?
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“আরে বেইবি এত তাড়া কিসের।
এরপর আহান ইয়ানার দিকে দৃষ্টি রেখে রায়ানকে ডাক দেয়। রায়ানের নাম শুনেই ইয়ানা চমকে উঠে। রায়ান আসতেই ইয়ানা তার দিকে নেত্র মেলে তাকায় আর বলে,,,
“” ভাইয়া আপনি তো আহান ভাইয়ার ফ্রেন্ড তাহলে আপনি ওনার সাথে কেনো? আপনাকে ওনি জোর করে নিয়ে আসেনি তো। আপনারা সবাই ঠিক আছেন তো ইউভি ভাইয়া আহান ভাইয়া তাদের কোনো ক্ষতি করেনিতো এই সাইকো? প্লিজ ভাইয়া কিছুতো বলুন। বলেই ইয়ানা কান্নায় ভেঙে পরে।
রায়ান নিশ্চুপ কারন আজ ও নিজে এক ধাধার মধ্যে পরে আছে। কি বলবে সে?
আহান এইবার ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

” ক্ষতি তো তখন হবে বেইবি যখন আহান আর অগ্নি আলাদা কেউ হবে। আর অগ্নি চৌধুরির বন্ধুদের দিকে তাকালে তার চোখ খুবরে নেই আমি। সেখানে কেউ ক্ষতি করাতো বিলাসিতা জান।
এইকথা শুনে ইয়ানা দুই পা পিছিয়ে যায়। এইদিকে হল্লাপার্টি সবাই জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তারা কিছু বলতে পারছে না কারন আহান সবার মাথায় বন্দুক তাক করে রেখেছে।
ইয়ানা অস্ফুর্ত ভাষায় বলে,,,
” মা.. মানে কি বলতে চাইছেন কি আপনি? দুইজন এক ব্যক্তি মানে?আর ওরা আপনার বন্ধু মানে?”
আহান ইয়ানার খুব কাছাকাছি আসে। এতটায় কাছাকাছি যেখানে একজন আরেকজনের শ্বাস শুনতে পাচ্ছে।
আহান এইবার মাথা থেকে নিজের হুডিটা নামিয়ে নেয়। আর মুখ থেকে মাক্স খুলে ফেলে।
ইয়ানা যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। এত বড় প্রাতারনা। কি করে পারলো সে এই প্রাতারনার গুটি হতে। ইয়ানা আহানের কাছ থেকে দুরে সরে গিয়ে মাথায় হাত রেখে কান্না করতে করতে বলে,,,

“” তাহলে আহান আর অগ্নি দুইজন এক ব্যক্তি। কিন্তু আমি বোকা ছিলাম বুঝতেই পারে নি। এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা না করলে ও পারতেন মি, চৌধুরি। বন্ধু সেজে পিঠে ছুরি মারলেন।
এতক্ষনে ইউভি ও চলে আসে। ইয়ানা এইবার ইউভি আর রায়েনের সামনে গিয়ে বলে,,,
” আপনারা দুইজন বলেছিলেন না আমি আপনার বোনের মতো। সবসময় বিপদে সাহায্য করবেন। এই আপনাদের সাহায্যের নমুনা। প্রথমে এর কথায় ভাই সাজলেন আর এখন পিঠে ছুরি মারতে চলে এসেছেন। সত্যি আপনাদের মতো ভাই পেয়ে আমি গর্বিত। অনেক ভালো নাটক করেন আপনারা। বাহ মি, রায়ান আর মি, ইউভি বাহহ।

রায়ান ইয়ানাকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতেই ইয়ানা হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।আর বলে,,,
“” আপনাদের কিছু বলার দরকার নেই। আপনাদের কোনো দোষ নেই। আমিতো আর আপনার আপন বোন নয়। কিছু করলেই বা কি?”
ইউভি এইবার ইয়ানাকে বলে,,,
” ইয়ানা তুমি আমাদের ভুল বঝছো। তুমি আমাদের পুরো কথা শুনো”
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান এক ধমক দেয় তাতে সবাই চুপ হয়ে যায়।
আহান ইয়ানা, রায়ান আর ইউভির উদ্দে্শ্যে বলে,,,,
” আমি কি এখানে ভাই বোনের ভালোবাসা দেখতে এসেছি। তোদের আজাইরা নাটক বাদ দে।
এরপর ইয়ানার উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,
” আর তুমি চলো আমার সাথে। বাকি বিয়েটা করে আসি।
ইয়ানা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলে,,,

” আপনি ভাবলেন কিভাবে আপনার মতো বিশ্বাঘাতককে আমি ইয়ানা বিয়ে করবো। জীবন চলে যাবে, মি, আহান চৌধুরি তবুও আপনার মতো প্রতারককে বিয়ে করবো না।
আহান ইয়ানার দিকে বাকা হাসি দিয়ে রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,
” রায়ান ক্যামেরাটা দেতো। আমার জানপাখিটাকে কিছু দেখায়। ”
রায়ান এইবার আহানের উদ্দ্যেদশ্যে বলে,,,
“” আহান প্লিজ এইটা না। অন্য উপায়ে কিছু কর। ”
আহান রায়ানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,,
” তোকে দিতে বলেছি আমি””
রায়ান আহানের কাছে কেমেরাটা দেয়। তারপর একপলক রুয়ানার দিকে তাকিয়ে সুমুর দিকে তাকায়। দেখে ওর দিকে প্রশ্নসূচক ভাবে তাকিয়ে আছে। রায়ান তাকাতেই চোখমোখ কুচকে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে নেয়।
আহান এইবার ইয়ানার দিকে কেমেরাটা তাক করে বলে,,,
“আবার ও বলছি আমাকে রাগিও না, চলে আসো। নয়তো এই কেমেরায় যা আছে তা সহ্য করতে পারবে না”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,

” কি আছে এতে? নিশ্চয় আমার কোনো বিডিও করেছেন। আর তা নিয়ে এখন ব্লেকমেইল করবেন।শুনে রাখুন মি, আহান আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি আমার ভিডিও দেখাবেন তারপর আমি নিজের ইজ্জত বাচানোর জন্য সুরসুর করে বিয়ে করতে চলে যাবো তাহলে সেই আশা ভুলে যান। আমি পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করবো। তবু ও আপনার মতো জানোয়ারকে নয়।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে,,
” the intillegent girl is so good to you. but এইখানে তোমার কিছু নেই।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ১৭

” তাহলে?”
আহান এইবার বিডিও প্লে করে। যা দেখে ইয়ানা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। একবার নিজের ছোট বোনটার দিকে তাকায়। যে এখনো ভয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
ইয়ানা আহানের হুডি চেপে ধরে বলে,,,,
” কতটা নিচ আপনি অগ্নি চৌধুরি । লজ্জা করে না এইসব করতে। শত্রুতা আপনার আমার সাথে ছিলো । তাহলে..

অনুভবে তুমি পর্ব ১৯