অনুভবে তুমি পর্ব ২৮

অনুভবে তুমি পর্ব ২৮
লিজা মনি

ইয়ানা রুমে বসে বসে মোবাইলে কোরিয়ান ড্রামা দেখছিলো। কিন্তু আজ ড্রামা দেখতে ও ভালো লাগছে না। কাল থেকে ভার্সিটি যাবে এইটা ভাবলেই যেনো খুশি খুশি লাগে। তারপর চলে যায় দাদুমনির রুমে। রুমের সামনে গিয়ে টুকা দিয়ে বলে,,,,
“” দাদুমনি আসবো? “”
দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” হ্যা আয়। বলে ডুকার কি আছে। ”
ইয়ানা রুমে ডুকে দাদুমনির পাশে বসে বলে,,,

“” বলে ডুকা ভালো। হতে পারে তুমি সপ্নে দাদাজানের সাথে প্রেম করছো “”
দাদুমনি ইয়ানার কানে মুচর দিয়ে বলে,,,
“” প্রেম করার বয়স আমার না তোদের। খুব তারাতারি যাতে বড় মা হতে পারি। একটা বাচ্চা আসলে দেখবি আহান একদম ঠিক হয়ে যাবে। ”
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইসস কি লজ্জা কি লজ্জা। দাদুমনি ইয়ানার লজ্জামিসৃত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” আর লজ্জা পেতে হবে না। আমার নাতিটাকে ঠিক করার দায়িত্ব কিন্তু তোর।”
ইয়ানা দাদুমনির কথায় তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,
“” তোমার মনে হয় ওনি আমার কথা শুনে। কিছু বলতে গেলে ধমকাধমকি আর সাথে থাপ্পর ফ্রি।
তারপর ইয়ানা মাথা থেকে উড়না সরিয়ে গাল দেখায়। যাতে কেউ না দেখে তাই ডেকে রেখেছিলো। ইয়ানার গালে থাপ্পরের দাগগুলো এখনো বুঝা যায়।
আহান কিভাবে বিয়ে করেছে ইয়ানাকে তা সম্পর্কে দাদুমনি সব জানে। ইউভি আর রায়ান ওনাকে সবকিছু বলেছে। কিন্তু ইয়ানার গালে থাপ্পরের দাগ দেখে চোখে পানি চলে আসে। ইয়ানার গালে হাত দিয়ে বলে,,,,,

“”আমার দাদুভাই এমন ছিলোনারে। বাকি বাচ্চাদের মতোই চঞ্চল হাসিখুশি ছিলো। কিন্তু কোনো এক মিথ্যার প্ররোচনায় পড়ে ও কালো দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।””
ইয়ানা দাদুমনির দিকে তীর্যক দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,
“” কি এমন হয়েছিলো ওনার জীবনে যে ওনি এইসবের দিকে ধাবিত হয়ে পড়ে । আর দাদুমনি ওনার মা কোথায়। আজ ওনার মা যদি থাকতো নিশ্চয় ওনি এইভাবে বিগরে যেতেন না। ওনার মা কি বেঁচে নেয়।”
দাদুমনি ইয়ানার মাথায় হাত রেখে বলে,,,,

“” সময় হলে সব জানতে পারবে। এখন এইসব জানার প্রয়োজন নেই। “”
ইয়ানা —- তুমি মানা করেছিলে যাতে আহানকে ওনার মা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বা করি তাই আমি ও করিনি। কিন্তু এখন তোমায় বলতে হবে। প্লিজ দাদুমনি প্লিজ বলো না।
আমি ও জানতে চাই কে ওনার মা? কেনো ওনি কালো দুনিয়ায় যেতে হয়েছে?আর কেনোইবা বাবাকে এইভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলে? ওনাকে বাবা বলে ডাকে না? কি হয়েছে ওনার অতীতে? সবকিছু বলো দাদুমনি।
দাদুমনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলবে ইয়ানাকে এখন।
দাদুমনির নিরবতা দেখে ইয়ানা বলে,,,,

“” তুমি যদি না বলো তাহলে তোমার নাতিকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবো। ”
ইয়ানার কথা শুনে দাদুমনি আতকে উঠে। আহানকে জিজ্ঞাসা করলে বাড়িতে ঘূর্ণিঝড় শুরু হবে নিশ্চিত।
দাদুমনি —- খবরদার এই প্রশ্ন কখনো জিজ্ঞাসা করবি না।
ইয়ানা — ঠিক আছে বলবো না যদি তুমি বলো? ইয়ানা এইবার দাদুমনি পায়ে ধরে ঠোট উল্টে বলে,,,,,
“” বলবে না আমাকে? বুঝেছি আমাকে তোমার নাতি মনে করো না। ”
দাদুমনি ইয়ানাকে বুকে জড়িয়ে বলে,,,,
“” ভালোই বসে আনতে জানিস দেখছি। এত মায়া বাড়াস না পড়ে তোদের রেখে শান্তিতে মরতে ও পারবো না।””
ইয়ানা দাদুমনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

“” যদি আর কখনো মরার কথা বলো তাহলে তোমার সাথে কথা বলবো না। এখন দাদাজানের লক্ষ্মী বউয়ের মত সবকিছু বলো।
দাদুমনি একটা গম্ভীর নিশ্বাস ফেলে। আজ ওনি ইয়ানাকে সেই সত্যের সম্মুখীন করবে যাকে উনি আগেই পেছনে ফেলে এগিয়ে এসেছে। সেই সত্য যা আজ ও আহান ভালোভাবে জানে না। দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” তোকে আজ সব বলবো কিন্তু তার আগে কথা দে তুই এইসব আহানকে বলবি না। কারন এই সত্য আহান জানে না। সঠিক সময় হলে আমি ওকে সব বলবো। “”

ইয়ানা — তুমি চিন্তা করো না দাদি আমি কাউকে কিছু বলবো না। ”
তারপর দাদুমনি ইয়ানাকে অতীতের সত্যের সম্মুখীন করাতে থাকে,,,
“” দিনটি ছিলো বর্ষাকাল যখন আহানের জন্ম হয়। আমাদের বাড়ির প্রথম বংশধর ছিলো ও। আহানের মায়ের নাম লিখা আর ওর একটা বোন ছিলো তার নাম লিনিয়া। লিনিয়া শিখার থেকে এক দেড় বছরের ছোট ছিলো। আহানকে যেদিন হসপিটাল থেকে চৌধুরি বাড়িতে নিয়ে আসে সেইদিন থেকে লিনিয়া ও আমাদের বাড়িতে থাকতে শুরু করে। আহানকে নিয়ে আমাদের জীবন শুখে শান্তিতে চলছিলো। হঠাৎ একদিন জানতে পারি লিনিয়ার রানবীর শেখ নামক এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক। শুনেছি ওর অবৈধ সন্তান নাকি ওর গর্ভে। এই নিয়ে লিনিয়াকে বৌমা মেরেছিলো এমনকি চৌধুরি বাড়িতে থাকা নিয়ে ও অনেক কথা শুনায়। লিনিয়া মার আর এত অপমান সহ্য না করে রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

কিন্তু রোড দিয়ে যাওয়ার সময় অন্যমনস্ক থাকায় এক গাড়ির সাথে ধ্বাক্কা খায়। এই খবর সাজিদের কানে আসা মাত্র দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্ত ওর বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারে নি। এইটা লিনিয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। ওর বাচ্চার মৃত্যুর পিছনে বৌমাকে দায়ী করতে থাকে। রনবীর ও তখন দেশের বাহিরে ছিলো ব্যবসায়ী কাজে। লিনিয়ার প্রায় পাগলের মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। তারপর ও সময়ের সাথে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে পড়ে। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো ও নিয়তি মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। লিনিয়া শান্ত থাকার অভিনয় করে বৌমাকে ধ্বংস করার ধ্বংস করার ছক কষতে থাকে। শুরু হয় তার প্রতিশোধের আদিম খেলা। নিত্য দিন একটা না একটা জামেলা লেগেই থাকতো। কিন্তু আমরা বুঝতেই পারে নি এইগুলো লিনিয়া করেছে। আরেক টা কথা আমার শুধু এক ছেলে না। আমার আরেকটা ছেলে ছিলো মাজিদ চৌধুরি আর ওর বউ হেনা চৌধুরি। আহানের যখন ১২ বছর বয়স তখন মাজিদ আর হেনার ঘর আলো করে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আমাদের আনন্দ দেখে লিনিয়া হিংসায় জলছিলো।

কারন সে সংসার করতে পারে নি তাই বৌমাকে হিংসে করতো। এইভাবে নিত্যদিনের ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো দিনগুলো। চৌধুরি বাড়ির সুখ শান্তি যেনো কিভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। বৌমা আর সাজিদের মাঝে প্রায় ঝগড়া হতো। আর আহান এইসব দেখতে না পেরে আমার সাথে এসে শুয়ে থাকতো। একদিন হেনা তার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনিতে যায়। তখনি দেখে লিনিয়া বাহিরে মুখে উড়না পেচিয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে। লিনিয়ার উপর হেনার সন্দেহ হয়। তাই সে রুমে এসে মাজিদকে ডেকে তুলে। মাজিদ আর হেনা তাদের মেয়েকে ঘুমে রেখেই লিনিয়ার পিছু করে। লিনিয়া বুঝতে পারে নি তার পিছনে হেনা আর মাজিদ আছে। সে একটা পরিত্যক্ত গোডাউনে প্রবেশ করে কাউকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,

“” ইসস কতদিন পর তোমার দেখা পেলাম। কাজ প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরির মাঝে প্রতিনিয়ত ঝগড়া লাগিয়ে রেখেছি। বুঝাতে পারবো না তোমাকে কি যে শান্তি লাগে। তোমার সাথে আমার সংসার করতে দেয় নি। শিখা চৌধুরি যদি ওইদিন আমাকে কথা না শুনাতো তাহলে আমি ওইদিন আমি বাড়ি থেকে বের হতাম না আর না আমাদের সন্তানের কিছু হতো। এখন শুধু চৌধুরি বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি আমাদের নামে করে নিলেই হবে। পরে একেকটাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলবো। ”
এরপর লিনিয়া আর তার সামনে থাকা ব্যক্তিটি বিশ্রিভাবে হাসা শুরু করে। মাজিদ আর হেনার বুঝতে বাকি নেয় সামনে থাকা ব্যক্তিটি কে। এইটা রানবির শেখ ছিলো। লিনিয়ার প্রেমিক।
একটু পর মাজিদ আড়াল থেকে বের হয়ে আসে । মাজিদ রেগে গিয়ে রানবিরকে বুক বরাবর লাথি মারে। শুরু হয় তাদের মধ্যে সংঘর্স। এক পর্যায়ে লিনিয়া গিয়ে মাজিদের বুক বরারবর ছুরি ডুকিয়ে দেয়। হেনা ও চিৎকার মেরে আড়াল থেকে বের হয়ে আসে।

দাদুমনি হু হু করে কেদে উঠে। ইয়ানার ও কান্না করে দেয়। দাদুমনির আরেকটা ছেলে ছিলো? আহানের খালার খারাপ হওয়ার সাথে আহানের মায়ের র প্রতি এত ঘৃনার কারন কি? ইয়ানা কাপাকাপা কন্ঠে বলে।,,,,
“” এরপর কি হয়েছলো। কাকাই আর কাকিয়ার মেয়ে কোথায় এখন? ”
দাদুমনি চোখের পানি মুছে আবার বলা শুরু করে,,,,,
“” মাজিদ লিনিয়ার ছুরি আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু এতেই তারা শান্ত হয় নি তারা হেনাকে প্রচুর আঘাত করে। মাজিদের মাথায় আঘাত করতে গেলে হেনা তদের পায়ে পর্যন্ত পড়েছিলো । কিন্তু তারা শুনেনি মাজিদ কে মারে ফেলে। আমার আদরের দনকে আমার কাছ থেকে দুরে করে দেয়। হেনার চিৎকার ওইদিন মাটি পর্যন্ত কেঁপে ছিলো। কিন্তু ওই নরপশুদের দল হেনার কান্না শুনে নি। তাদের চিন্তা ছিলো চৌধুরি বাড়ির সম্পত্তি। মাজিদ যদি মারা যায় তাহলে চৌধুরি বাড়ির একজন উত্তরাধীকারি কমে যাবে। তাই তারা এই সোজোগ হাতছাড়া করে নি। মাজিদ মৃত্যুর আগে হেনাকে পালিয়ে যেতে বলেছিলো। কিন্তু হেনা মাজিদকে একা রেখে যায় নি। মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত স্বামীর পাশে ছিলো। হেনার প্রায় মৃত্যু দশা ছিলো। লিনিয়া আর মাজিদ সেই মৃত্যুকে এক্সিডেন্টের রুপ দেয়। চলন্ত গাড়ির নিচে ফেলে দেয় ”

দাদুমনি কান্নার কারনে কথা বলতে পারছে না । ইয়ানার ও কান্নার কারনে হেচকি উঠে গেছে।
— এরপর কি হয়েছিলো দাদুমনি?
দাদুমনি আবার বলতে শরু করে,,,,,,
“” এরপর লিনিয়া আগে থেকেই রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। আমরা পড়ে জানতে পারি এক্সিডেন্টের কথা। মাজিদ আর হেনার লাশকে তদন্তে পাঠিয়ে দেয় । কিন্তু পুলিশ তেমন কিছু পায় নি। মাজিদ আর হেনার মেয়ে আর কেউ না আমাদের আহিয়া। কিন্তু আহান আহিয়াকে সব সময় আগলে রেখেছে। হেনা আহানকে খুব বেশি আদর করতো। হেনা আর মাজিদের মৃত্যুতে আহান একদম ভেঙ্গে পড়েছিলো। কোনো রকম ওকে সামলে রেখেছি। এইভাবে আরো কয়েকদিন যায়। কিন্তু চৌধুরি বাড়ির শুক এখনো কাটিয়ে উঠেনি। এই মাঝেই লিনিয়া আরেক ষড়যন্ত্র শুরু করে। সাজিদ আর বৌমার সুজোগ নিয়ে আহানের কানে বিষ দিতে শুরু করে। আহানের মায়ের নাকি কার সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে সে নিয়ে ঝগড়া হয়। আহান যেহেতু তখন ছোট ছিলো তারপর লিনিয়া ওকে আদর করতো। সে জন্য আহান লিনিয়ার কথা বিশ্বাস করে নেয়। একদিন সাজিদ আর শিখা ঝগরা করছিলো তখন শিখা রাগের মাথায় বলেছিলো,,,,

“” আমি আর তোমার সংসার করবো না। ”
তখন সাজিদ রাগের মাথায় বলেছিলো,,
“” হ্যা যাও তোমার কোন প্রেমিক আছে তার কাছে। থাকতে হবে না আমার সাথে। ”
আর এই কথার সোজোগ নেয় লিনিয়া। আহানকে বুঝায় তাকে ছেড়ে ওর মা অন্য কোথাও চলে যাবে। বৌমার অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক। আহানের ছোট মস্তিষ্ক এইটাই মেনে নেয়। শিখা ও এইসব ঝামেলায় আহানকে সময় দিতো কম। আর সেই সুজোগ নিতো লিনিয়া। এর মধ্যেই লিনিয়া পড়াশুনার নাম করে চৌধুরি মহলের বাহিরে যায়। সেইখান থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। লিনিয়া চলে যেতে চৌধুরি বাড়িতে শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু লিনিয়া যে অশান্তির কারন ছিলো সেটা কেউ বুঝতে পারেনি।

এইভাবে কয়েকমাস চলে যায়। আহিয়া একটু একটু দাড়াতে পারে। একদিন আহিয়াকে নিয়ে আমি আর আহান দাদুভাই বাগানে খেলা করছিলাম। ঠিক তখনি রুমের ভিতর থেকে আবার ও চেঁচামেচির সব্দ ভেসে আসে। আমি আহান আর আহিয়াকে নিয়ে ভিতরে যায়। ভিতরে প্রবেশ করতেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। বৌমা একটা ছেলের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছে। আমি সাথে সাথে আহান আর আহিয়াকে নিয়ে রুমে দিয়ে আসি। তারা ছোট মানুষ এইসবের সম্মুখীন হওয়া ঠিক না। আমি তাদের রুমে দিয়ে এসে নিচে নামি। দেখি সাজিদ ও অফিস থেকে চলে এসেছে। সাজিদ আর ছেলেটার মধ্যে দস্তাদস্তি হওয়া শুরু করে। আমি শিখার সামনে গিয়ে ওর গালে থাপ্পর দিয়ে বলে,,,,

“” ছিহহ বৌমা এইসব কি? লজ্জা করে না স্বামী সন্তান থাকতে পরপুরুষের সাথে তামাশা করতে। তুমি তো আমাদের আদর্শ বৌমা তাহলে আজ আমি কাকে দেখছি। “”
আমার কথা বলার সাথে সাথে শিখা আমার চুলের মুঠি ধরে বলে,,,,
“” চুপ বুড়ি। একটা কথা ও বলবি না অনেক জালিয়েছিস আর সহ্য করবো না। এখন সম্পত্তি গুলো সুন্দর করে আমাদের নামে করে দে। নয়তো তোর আদরের নাতি – নাতনির লাশ পড়বে। ”
আমি শিখার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলি,,,

“” আচ্ছা আমার নাতি নাতনির লাশ পড়বে । আগে নিজেদেরকে তো বাচাঁ। ”
তখন ওই আমাদের বাড়ির ড্রাইবার হামিদ পুলিশ নিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকে। পুলিশ দেখে শিখা আর তার প্রেমিক ভয় পেয়ে যায়। তারা সাথে সাথে আমার গলায় ছুরি দরে। কিন্ত পুলুশের বুদ্ধির সাথে তারা পেরে উঠে নি। পুলিশ শিখা আর তার প্রেমিক কে থানায় নিয়ে যায়।
ইয়ানা — তার মানে আহানের মায়ের অন্যজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো? আর আহিয়া আহানের নিজের বোন নয়।
দাদুমনি —— না আমার বৌমা ছিলো ফুলের মতো পবিত্র। ওর কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো না।
ইয়ানা —- কিন্ত দাদুমনি তুমি তো বললে ওনি প্রেমিকের সাথে মিলে তোমাদের উপর হামলা করেছিলো।
দাদুমনি — করেছিলো কিন্তু ওইটা শিখা ছিলো না?

ইয়ানা — অর্থাৎ?
দাদুমনি —- মানে লিনিয়া পড়ার জন্য বাহিরে যায় নি। প্লাস্টিক সার্জারি করে শিখার রুপ নেওয়ার জন্য গিয়েছিলো। আর এতে সফল ও হয়েছে। একদিন শিখা লিনিয়ার রুম পরিষ্কার করতে যায় তখন একটি ক্যামারা দেখতে পাই। আর এইটা হলো সেই ক্যামেরা যেদিন মাজিদ ওদের কুকর্মের কথা ভিডিও করেছিলো। তারা মাজিদ আর হেনাকে মেরে ক্যামেরাটা ছিনিয়ে নিয়েছোলো। কিন্তু ভুলবশত লিনিয়া সেই ক্যামেরা নিজের সাথে নিতে ভুলে যায়। সাজিদ বাসায় ছিলো না তাই শিখা ক্যামেরাটা নিয়ে আমার কাছে আসে। পড়ে আমরা ক্যামারাটা ল্যাপটপে ওপেন করি। সেইদিন লিনিয়া আর রানবীরের আসল কুকীর্তি জানতে পারে। ওইদিন শিখা খুব কান্না করেছিলো লিনিয়ার আসল রুপ দেখে। পড়ে আমরা লিনিয়াকে পুলিশে দেওয়ার জন্য ক্যামেরাটা নিয়ে শিখা চুপিচুপি পুলিশ স্টেশনে যায়।আর এইদিকে আমি আহান আর আহিয়াকে নিয়ে খেলা করছিলাম।

আমরা আগে থেকেই হামিদকে সব জানিয়ে রাখি যাতে বিপদে পড়লে সাহায্য করে। হলো ও তাই। বৌমা পুলিশের কাছে গিয়েছিলো তো ঠিক কিন্তু আর ফিরে আসে নি। ওইদিন লিনিয়া শিখার রুপ ধরে এসেছিলো সাজিদকে ফুসলিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিতে। কিন্ত সে জানতো সাজিদ অফিস থেকে রাতে আসবে তাই তার প্রেমিক রনবীরকে হুডির আড়াল করে চৌধুরি বাড়িতে প্রবেশ করায় নষ্টামি করার জন্য। কিন্তু তাদের চাল উল্টে যায় তার আগেই সাজিদ বাড়ি চলে আসে। আমি ও প্রথমে ভেবেছিলাম এইটা শিখা কিন্তু ওর বোনের সাথে হাত মিলিয়েছে। কিন্ত আমি শিখা কে ভালোভাবে চিনি জানি। ও এইসব করতেই পাড়েনা।পড়ে আমি ভালোভাবে পরখ করলাম এতে সফল ও হয়েছে। কারন লিমিয়ার হাতে একটা আঘাতের চিহ্ন আছে যখন সে এক্সিডেন্ট করেছিলো তখন হয়েছে। পরে আমি নিস্চিন্ত হলাম এইটা লিনিয়া শিখা নয়। তাহলে শিখা কোথায়? লিনিয়া আর রানবীরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সব কিছু শেষে সাজিদ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পরে আমি অপারক হয়ে সাজিদকে সব খুলে বলি। সাজিদ সবকিছু শুনে শিখাকে খুজতে বের হয়ে পড়ে। কিন্তু নিয়তি আমাদের সহায় হয় নি। আমরা শিখার মৃতদেহ খুজে পায়।

ওইদিন লিনিয়াকে পুলিশে নিয়া যাওয়ার পড় যখন আমি উপরে আহানের কাছে যায় তখন দেখি আহান অজ্ঞান হয়ে ফ্লুরে পড়ে রয়েছে। ঙ্গান ফেরার পড় শুধু কান্না করছিলো।
আর বলছিলো এমন মা যাতে কারোর না হয়। খুব খারাপ আমার মা। আহান চিৎকার করে বলেছিলো বলেছিলো ,,
“” হ্যা বিধাতা আমার ভাজ্ঞে কেনো এমন মা রাখলে। মা সে হয় যে সন্তানের সমস্ত পাপের ভোজা নিজে বহন করে। কিন্তু আমার মা এমন কেনো খোদা। ও আমাদের মারতে চেয়েছে আমি সহ্য করতে পারছি না আল্লাহ। আজ আমি আহান চৌধুরি বলছি “” আমার কোনো মা নেই। আমার মা মৃত। আমাকে কেউ জন্ম দেয় নি। আজ আমি আমার জন্মদাত্রিকে দর্পন করলাম”

আহানের আর্তনাদ আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিলো। তার মানে আহান নিচে পুলিশ আসার ঘটানা দেখি নি তার আগেই মানসিক চাপে ঙ্গান হারায়। আহানের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আর যেদিন আমরা শিখার মৃত্যুর খবর জানতে পারি আমাদের সাহস হই নি দ্বিতীয়বার ওকে আঘাত করতে। অনেক বার বলার চেষ্টা করেছি যে ওইদিন ওর মা ছিলো না। ওর মায়ের রুপে লিনিয়া ছিলো। কিন্তু আহানকে শিখার বিষয়ে কিছুই বলতে পারতাম না। এই কথা তুললেই সে প্রচুর রেগে যেতো পাগলের মতো ব্যবহার করতো। আমি ওর অবস্থা দেখে চুপ হয়ে যেতাম। সাজিদ ও এইসব সহ্য করতে না পেরে বিদেশে পারি জমায়।

নিজের স্ত্রির মৃত্যু মেনে নিতে পারে নি। সাজিদ চলে যাওয়াতে আহান আর ও ভেঙ্গে পরে। সবকিছু থেকে নিজেকে গুছিয়ে নেয়। আমি আর হামিদ কাজের লোক মিলে আহান আর আহিয়াকে মানুষ করতে থাকি। কিন্তু আহানের মন থেকে মায়ের প্রতি ঘৃনা সরাতে পারি নি। শৈশবে ছোট মষ্তিষ্কে যা ডুকেছে তাই মষ্তিষ্কে গেথে গেছে। শুরু হয় মেয়েদের প্রতি ঘৃনা। সাজিদ চলে যাওয়ায় সাজিদের উপর ও অভিমান করে। অভিমান থেকে এক প্রকার রাগে পরিনত হয়। সাজিদ তো পারতো আহান আর আহিয়াকে আগলে রেখে বাবা আর মায়ের দায়িত্ব পালন করতে। আর এইটাই ছিলো সাজিদের উপর অভিমান করার কারন। আহানের এই ছন্নছাড়া অবস্থা দেখে ওকে কানাডায় পাঠিয়ে দেয় পড়াশুনার জন্য। কিন্ত…. দাদুমনি আর বলতে পারলো না তার আগেই এক বিকট আওয়াজে তারা দুইজনে কেপে উঠে। সেই আওয়াজের দৃষ্টি অনুসরন করে ইয়ানা আর দাদুমনি সেইদিকে তাকায়। ইয়ানা তাকিয়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয়ে ওর কলিজা কেপে উঠে। আহান কোন সময় এসেছে। ও কি সবকিছু শুনে ফেললো নাকি। যদি না শুনে থাকে তাহলে এইভাবে রেগে আছে কেনো।

ইয়ানা আহানের কাছে গিয়ে থমকে যায়। আহানের চোখে পানি। পুরো চোখ লাল হয়ে আছে। তারমানে ওনি এতক্ষন কান্না করছিলো। ইয়ানা আহানের হাত ধরে বলে,,,,
“” আহান প্লিজ শান্ত হন এইভাবে রিয়েক্ট করলে হবে “”
আহান ইয়ানার কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দাদুমনির দিকে এগিয়ে যায় তারপর বলে,,,,
“” কি বললে দাদুমনি ওইদিন মিসেস শিখা চৌধুরি ছিলো না ওইটা লিনিয়া ছিলো। আর মিসেস শিখা বেঁচে নেই।
মানে? মানে ওইদিন আমার মা ছিলো না। আমার মা কি পুরো নির্দোষ ছিলো? আমার মা চরিত্রহীন নয়? বলোনা দাদুমনি কিছুতো বলো? দাদুমনি আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। নিজের মাকে আমি এতদিন কিভাবে এত ঘৃনা করতে পারলাম। যে মায়ের কোনো ভুল ছিলো না। তাহলে তো রায়হানের মা আমার মা নয় ওইটা মিসেস শিখা চৌধুরির বহুরুপী লিনিয়া। রায়হান ও আমার সৎ ভাই নয়। বলো না দাদুমনি যা বলছি সব কি সত্তি।””

আহানের চিৎকারে পুরো বাড়ি কাপছিলো। ইয়ানা ও আজ এক অন্য আহানকে দেখছে। যে কখনো নিজের ব্যক্তিত্য ছাড়া চলাচল করতো না সে আজ বাচ্চাদের মতো কান্না করছে। কে বলেছে ছেলেরা কাদে না।
দাদুমনি আহানের কথায় সম্মতি জানায়,,,
“” হ্যা তুই যা কিছু শুমেছিস সব সত্যি। শিখার কোনো দোষ ছিলো না। তোর কাকা কাকিয়াকে শিখা নয় লিনিয়া মেরেছিলো। ওইদিন পুলিশে শিখাকে নয় লিনিয়া ও রনবীরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্ত মাঝ খান দিয়ে শিখা নিজের প্রান দেয়।”
আহান স্তব্দ হিয়ে গিয়েছে। নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হচ্ছে। আহান তাচ্ছিল্য সুরে বলে,,,,,,

“” ছিহহ অগ্নি চৌধুরি কিনা শেষে নিজের মাকে চিনতে পারলো না। ছেহহহ নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হচ্ছে। কি করে পারলাম এত বছর ঘৃনা করতে। আমার মাতো কোনো দোষ করে নি। ”
এরপর আহান সজোরে দেয়ালে আঘাত করে। হাতের চামরা।ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। ইয়ানা আহানকে ধরতে গেলে আহান ইয়ানকে এড়িয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
ইয়ানা দাদুমনির কাছে গিয়ে বলে,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ২৭

“” দাদুমনি কি করবো এখন। ওনাকে কিভাবে আটকাবো? ওনি যদি নিজেকে নিজে কিছু করে ফেলে?”
দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” চিন্তা করিস না কিছু হবে না। আহানকে সামলানোর জন্য আজ তুই আছিস। পারবি না আহান দাদুভাইকে সামলাতে। নিজের স্বমীকে গিয়ে সামলা ইয়ানা। ”
ইয়ানা —– হ্যা দাদুমনি পারবো। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি ওনার তোমার পাশে আছি দাদুমনি। এরপর ইয়ানা আহানের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।

অনুভবে তুমি পর্ব ২৯