অনুভবে তুমি পর্ব ২৯

অনুভবে তুমি পর্ব ২৯
লিজা মনি

ইয়ানা রুমের ভিতরে ডুকে। কিন্তু আহান কোথাও নেই। কিন্তু আহান তো এই মাত্র রুমে এসেছিলো। এইটুকু সময়ে কোথায় যাবে। হঠাৎ করে বেলকনির বারান্দার কথা মনে পড়তেই বেলকনির দরজা বন্ধ। হঠাৎ করে অজানা ভয়ে বুকটা ধুক করে উঠে। ইয়ানা দরজার বাহির থেকে
আহানকে ডাকতে থাকে,,,,,,,

“” আহান আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন। যদি শুনতে পান তাহলে দরজাটা খুলুন না প্লিজ। ”
আচমকা ইয়ানা বাহির থেকে কোনো কিছু ভাঙ্গার শব্দ পায়। ইয়ানার আর বুঝতে বাকি নেই আহান বাহিরে ঘূর্নিঝর চালাচ্ছে। একটু পর দেয়ালে আঘাত করলে যেমন শব্দ আসে ইয়ানার কানে এইরকম শব্দ এসে বাড়ি খায়। ইয়ানা ভয়ে একটু শুকনো ঢুক গিলে। ওনি নিজেকে আঘাত করছেন না তো? ইয়ানা আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। বাহির থেকে একাধারে দরজা ধ্বাক্কাতে থাকে। কিন্তু সেই ধ্বাক্কা আজ আহানের কান অব্দি পৌছাচ্ছে না। ইয়ানা দরজা থেকে সরে গিয়ে বারান্দার গ্লাস থেকে পরদা সরাতেই ওর আত্না কেপে উঠে। আহান বেল্ট দিয়ে নিজের শরীরের আঘাত করছে। পুরো শরির রক্তাক্ত হয়ে পড়েছে কিন্তু আহানের থেমে যাওয়ার কোনো হেলদুল নেই। ইয়ানা চিৎকার দিয়ে বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” আহান স্টপ। শান্ত হন আপনি প্লিজ। এইভাবে নিজেকে আঘাত করবেন না। আহান এতে আপনার তো কোনো অন্যায় ছিলো না। আপনি ভুল বুঝার গুটি ছিলেন মাত্র। আসল কালপ্রিট তো অন্য কেউ। প্লিজ আহান থামুন। আপনার এই ভয়ংকর রুপ আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার আর্তনাদ কি আপনার কান অব্দি পৌছাচ্ছে না আহান। ”
কিন্তু ইয়ানার আর্তনাদ আর চিৎকার আহান আদও শুনতে পেয়েছে কিনা তা জানা নেই। সে নিজেকে নিজে আঘাত করতে ব্যস্ত। ইয়ানা যখন দেখতে পাচ্ছে আহানের অবস্থা খারাপের দিকে কিন্তু সে থামছে না তখন হাতে একটি ফল কাটার ছুরি নেয়। ইয়ানা ছুরুটা হাতের শিরার উপর রেখে বলে,,,,,

“” আহান আপনি যদি এখন না থামেন আমি নিজেকে শেষ করে দিবো। আপনার এই রুপ আমি নিতে পারছি না কষ্ট হচ্ছে খুব। এর চেয়ে ভালো হবে আমি মরে গিয়ে একটু শান্তি পাই।”
ব্যাস ইয়ানার এই কথাটাই ছিলো আহানের জন্য সবচেয়ে বিষাক্ত। হাত থেকে বেল্ট ফেলে দিয়ে ইয়ানার দিকে রাগী দৃষ্ট নিক্ষেপ করে। ইয়ানা মিররের বাহিরে আহানের চোখ দেখে ভড়কে যায়। এই কথার জন্য নিশ্চয় আজ ওর কপালে শনি আছে। কিন্তু যাই হোক আহানকে তো আটকাতে পেরেছি। এইসব ভেবেই ইয়ানার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। ইয়ানার ভাববার মাঝেই আহানে দরজা খুলে ইয়ানার হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বারান্দার রেলিং এর উপর বসিয়ে দেয়। হঠাৎ আক্রমনে ইয়ানা ভড়কে যায়। নিজের হাতের ব্যাথা অনুভব করে নাক মুখ খিচে ফেলে। মনে হচ্ছে হাতের মাংস ভেদ করে আহানের আঙ্গুল গুলো ডুকে গেছে। ইয়ানা আহানের হাত নিজের হাত থেকে সরাতে সরাতে বলে,,,,

“” আহান ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি। ইসস এইভাবে কেউ ধরে।”
আহান এখনো নিজের চোখ বন্ধ করে রেখেছে। রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। এই মেয়েকে কত বার বলেছে যে মরার কথা যাতে মুখে না নেই। আজ ওই জানতে পারলো নিজের মা বেঁচে নেয়। যে মাকে এত দিন ভুল বুঝে এসেছে। কিন্তু সেই কথা ভুলতে না ভুলতেই এই মেয়ে আবার মৃত্যুর কথা বলে। সত্যি এই মেয়ে বঁচে থেকে কি হবে এমনিতে ওর কারনে অনেক চিন্তায় থাকতে হয়। মেরে দিলে একদম চিন্তা মুক্ত। না এই মেয়েকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। বারান্দা থেকে একদম নিচে ফেলে দিবো এক ধাক্কাতেই নিশ্বাস বন্ধ। কিন্ত অগ্নি চৌধুরি এই মেয়েকে মারতে পারে না কেনো। আহান ইয়ানার গাল চেপে ধরে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” মরার শখ জেগেছে খুব। কতবার বারন করেছি এই শব্দ মুখে ও না আনতে। এক কাজ করি মরার যখন এত ইচ্ছে তাহলে ছাদের রেলিং থেকে ফেলে দেয়। পড়া মাত্রই দেহ থেকে রুহ আলাদা হয়ে যাবে। ট্রাস্ট মি বেশি কষ্ট ও হবে না। “”

আহানের কথা শুনে ইয়ানা খিল খিল করে হেসে উঠে। আহান কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” আশ্চর্য হাসছো কেনো? তুমি কি আমায় ভয় পাচ্ছো না? আমি কিন্তু সত্যি সত্তিই ফেলে দিবো। “”
ইয়ানা আহানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“” নো মি. অগ্নি চৌধুরি আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি না। নিজের স্বামীকে কেউ ভয় পাই নাকি আশ্চর্য। আপনি যদি আমাকে ফেলে দিতে পারেন তাহলে আমি ইয়ানা সেই মৃত্যু গ্রহন করে নিবো। কিন্তু কথা হচ্ছে যেই অগ্নি চৌধুরি সামান্য মৃত্যুর কথা শুনলেই এতটা রেগে ডেম্পারেট হয়ে যায় সে কিভাবে নিজের অনুভবের সাহজাদীকে আঘাত করবে শুনি। পারবেন না আমাকে ফেলে দিতে মারার হলে অনেক আগেই মেরে দিতে পারতেন।””
আহান ইয়ানার যুক্তি শুনে ভড়কে যায়। সত্যি এটাই সে কখনো ইয়ানাকে মারতে পারবে না। ইয়ানাকে মেরে ফললে ও কাকে নিয়ে বাঁচবে। আহান ইয়ানাকে রেলিং থেকে নামিয়ে অন্যদিকে ঘুরে বলে,,,,

“” অতিরিক্ত বিশ্বাস করা ঠিক না আমি কিন্তু ভালো মানুষ নয়। ”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” বিশ্বাস করিতো খুব বিশ্বাস করি। এতটা বিশ্বাস করি যে আপনার হাতে আমি মরতে ও রাজি আছি। ”
আহান আর কথা বলে না। এই মেয়ে শুধু দু্র্বল জায়গায় কথা বলে। আহান বারান্দা থেকে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ইয়ানা ও আহানের পিছু পিছু যায়। আহানকে বিছানায় শুতে দেখে রেগে বলে,,,,
“” শরীরের যে নিজে নিজে এত যখম করেছেন সেই খেয়াল আছে আপনার। পুরো শরীরে আঘাত করে নকশা বদলে ফেলেছেন। উঠে বসুন আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি”
আহান চোখ বন্ধ করে বলে,,

“” এইসব আঘাতে আমার কিছু হয় না। এর চেয়ে বড় বড় ক্ষত নিজের হাতে নিজে সেলাই করেছি। এইসব সামান্য আঘাতে অগ্নি চৌধুরির কিছু যায় আসে না।”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে রেগে ফুসফুস করতে বলে,,,
” সাইকো লোক আবার কি সুন্দর গর্ব করে বলে। উঠে বসুন আমি আপনার মতো এত বড় দানবকে উঠাতে পারবো না। প্লিজ উঠে বসুন নয়তো খবর আছে।”
আহান চট করে শুয়া থেকে বসে ইয়ানাকে হেচকা টানে নিজের উপর ফেলে দেয়। ইয়ানা ও টাল সামলাতে না পেরে আহানের উপর গিয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,

“” আমাকে তো দেখতে পারতে না। তাহলে আজ এত বউগিরি দেখাচ্ছো কেনো? আমার সামনে একদম বউ সাজতে আসবে না। পরে স্বামী হয়ে অধিকার চেয়ে কিছু একটা করে ফেলবো। আর ভাষা ঠিক করো নয়তো খবর আছে। হাজবেন্ডকে এইসব ভাষায় কেউ ডাকে হুম। মশার সামনে যখন হাতি দাঁড়াবে তখন তো মশা হাতিকে দানব মনে করবেই। ”
ইয়ানা আহানের প্রথম কথায় ভড়কে গেলে ও লাস্টের কথায় হাসি দিয়ে বলে,,,
“” তাহলে আপনি স্বীকার করলেন আপনি একটা হাতি “”
আহান ইয়ানার দিকে রেগে বলে,,,,
” থাপ্পর চিনো থাপরিয়ে আবার অজ্ঞান করবো বিয়াদপ মেয়ে ”
ইয়ানা আহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিরবির করে বলে,,,

“” হ্যা থাপ্পর আর ধমক তো শুধু আমাকেই দিতে পারেন। আমাকে তো আর ভালোবাসেন না। ”
ইয়ানার বিরবির কথা কানে আসতেই একটা মুচকি হাসি দেয়। ইয়ানা যে আহানের জন্য কি সেটা একমাত্র সে নিজেই জানে।
ইয়ানা ফার্স্ট বক্স এনে আহানকে মলম লাগিয়ে দেয়। আহান ও ইয়ানাকে কিছু বলে না। কিন্তু ইয়ানার স্পর্শ আহানকে ভিতর থেকে বার বার নাড়িয়ে তুলছে। অনেক কষ্টে নিজেকে আটকিয়ে রাখছে। একটু পর ইয়ানা এসে আহানের পাশে বসে আহানকে হালকা ডাক দিয়ে বলে,,,,
“” আহান খাবার খাবেন না ”
আহান কোনো রেসপন্স করে নি। ইয়ানা ভেবেছে আহান হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। ইয়ানা ও আহানকে আর ডাকে নি। ইয়ানা শুয়া মাত্রই আহান ইয়ানাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে। ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আহান থেকে নিজেকে ছড়াতে ছাড়াতে বলে,,,

” আ. আহান কি করছেন। ছাড়ুন আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। “”
কিন্ত আহান এতক্ষনে এক অন্য ঘুরে চলে যায়। আসতে আসতে ইয়ানার গলায় ডুব দেয়। আহানের স্পর্শে ইয়ানা বার বার কেঁপে উঠছে। কিন্তু আহানকে কিছু বলতে পারছে না গলায় কথা আটকে আসছে বার বার। আহান ইয়ানার নিশ্চুপে আরো উন্মাদ হয়ে পড়ে। আহানের ঠোটের ছোয়া গভির থেকে গভির হতে শুরু করে। আহানের এক একটা লাভ বাইট থেকে মনে হচ্ছে রক্ত ঝরছে। ইয়ানা ব্যথা সহ্য করতে না পেরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,
“” আহান ছেড়ে দিন ব্যাথা পাচ্ছি। সহ্য করতে পারছি না”
আহান গলা থেকে মুখ তুলে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আবেদন শুরে বলে,,,,

“” ইয়ানা আমি আজ ভিতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছি । নিরব হলেই শুধু মায়ের কথা মনে পড়ছে। নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না আমার হৃদয়ে প্রশান্তি চাই। আজ তুমাকে চাই। হবে না তুমি আমার? ”
আহানের এই গভীর চাহনি আর গভীর প্রশ্ন ইয়ানার হৃদয়ের শিহরন যেনো তীব্র হলো। আহান নির্বাক দৃষ্টিতে ইয়ানার প্রতিটি মনোভাব গ্রাস করলো। ইয়ানা কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। সেতো আহানকে ভালোবাসে। হ্যা সময়ের ব্যবধানে আর আহানের আচরনে হয়তো সাময়িকের জন্য ঘৃনা করতো। কিন্ত দিনশেষে সে তো আহানের ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে আছে। কিন্তু আহান কি তাকে ভালোবাসে,,
ইয়ানা —- কিন্তু আহান আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।
আহান —–~ না বললে ও তো ভালোবাসা যায়। ভালোবাসা একটি শব্দ মাত্র। ভালোবাসি সবাই বলতে পারে কিন্তু সেটা কয়জনে পালন করে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি না কিন্তু নিজের থেকে ও বেশি চায়। এতটা চায় যে নিজের সাথে পিশে ফেলতে ইচ্ছে করে।তোমাকে ছাড়া আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অক্সিজেন হয়ে গেছো তুমি। আজ আমি তোমাকে উপলব্দি করতে চায়। এতটা কাছ থেকে অনুভব করতে চায় যাতে তোমার সত্তা আর আমার সত্তা এক মিশে যায়। আজ আমি সময়ের সাথে ক্লান্ত। আজ আমি তোমার থেকে একটু প্রশান্তি চায়।
ইয়ানা — একবার শুধু বলোন না ভালোবাসি। আমার অসান্ত মনটাকে একটু শান্ত করুন আহান । আমি আপনাকে খুব কাছ থেকে চাই।

আহান — ঠিক আছে যদি এইটাই যদি ইচ্ছে হয় তাহলে আমি পুরো পৃথিবীকে বলতে চায় ভালোবাসি ইয়ানা খুব ভালোবাসি তোমায় । আমার অনুভবের সেহজাদি তুমি। আমার অনুভবের রানী। আমার অশান্ত হৃদয়ের প্রশান্তি তুমি। যদি তোমার স্পর্শ আমার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টির কারন হয় তাহলে ভালোবাসি তোমাকে। তোমার অনুপস্থি আমার হৃদপিণ্ড থমকে যায় এইটা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে ভালোবাসি আমি তোমাকে। তোমাকে এক মুহূর্ত দেখাটা যদি আমার অস্থিরতা হয় তাহলে ভালোবাসি আমি তোমাকে। এই সাময়িক আর ক্ষনস্থায়ী ভালোবাসার সাথে তোমাকে কখনো তুলনা করতে চাই নি। ভালোবাসি শব্দ টা শুনলে যদি তোমার মনে প্রশান্তির সৃষ্টি হয় তাহলে ভালোবাসি আমি তোমায়। এখন তো আপনার সাথে আমাকে এক করার অধিকার দিবেন আমার অনুভবের মহারানী।
আহানের মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ শুনে ইয়ানার সমস্ত কায়া নড়ে উঠে। সেতো এইটাই চেয়েছিলো আহান তাকে ভালোবাসোক। আজ সেটা স্বীকার করেছে। তাহলে সে তার অধিকার থেকে কেনো বঞ্চিত করবে। সে ও আজ ভালোবাসার অতল সাগরে ডুব দিতে চায়।

ইয়ানা লজ্জা পেয়ে আহানের বুকে মুখ লুকায়। ইয়ানা পিছন থেকে আহানের শার্ট শক্ত করে খামছে ধরে। আহান আবেশে নিজের নেত্রযুগল বন্ধ করে নেয়। ইয়ানার লজ্জামিশ্রিত মুখ খানা দেখে বুঝতে পারে তার প্রেয়সীর সম্মতি আছে। আহান ইয়ানার সংকোচ ভেদ করে ইয়ানার নরম ওষ্ঠ জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। ইয়ানার স্নিগ্ধ কোমল দেহ খানা থরথর করে কেঁপে উঠে। ইয়ানার কেপে উঠা আহানকে আরো উন্মাদ করে তোলে।
আহানের হাতের বিচরন চলে ইয়ানার সমস্ত সত্তা জোড়ে। আহানের অধরের দৃঢ়তা আবেগের তিব্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। আজ এই ছোয়াতে না আছে রাগ আর না আছে অবাধ্যতা। এইখানে রয়েছে শাসন, আবেগ, তীব্র অধিকারবোধ। এমন পরিস্থিতিতে ইয়ানার মুখ থেকে একটি শব্দ বের হয়ে আসে,,,,
“”আহান ভয় করছে ”

ইয়ানার এই মৃদু কম্পন মিসৃত কথায় আহানের পুরো সত্তা নিয়ন্ত্রন হারা হয়ে পড়ে।ইয়ানা সরে যেতে চাইলে আহান এর নিয়ন্ত্রনহীন হাতের বেরাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মমতাভরা কন্ঠে বলে,,,,
“” তুমি আমার রাজ্যের সেহজাদী, তুমি আমার অক্সিজেন ভরসা রাখো আমার উপর।
আহানের এই মমতা মিসৃত কথা শুনে ইয়ানা শান্ত হয়ে যায়। ফলে আহানের উন্মাদনা দিগুন বেড়ে যায়। অন্ধকার হয়ে পড়লো পুরো রুম। বারান্দায় চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুটি অবয়ব। ইয়ানার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। সেই জলে রয়েছে লজ্জা ভীতি আর ভালোবাসা।

রাত গভির থেকে গভির হতে থাকে। ভালোবাসার অন্তরালে হারিয়ে যেতে থাকে দুইজন দম্পত্তি। দুইটি দেহের উষ্ণ শব্দ বিচরন করছে সমস্ত রুম জোরে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষনের জন্য সময় থমকে গিয়েছে। অমর হয়ে উঠেছে এই মুহূর্তগুলো। দুইজন শুধু স্বামী স্ত্রী নয় দুইজন একি দেহের ব্যক্তি। ভালোবাসার প্রাপ্তি লাভ করেছে আহান আর ইয়ানা। দুইজন হারিয়ে গেছে ভালোবাসার অতল সাগরে।
রজনীর শেষের দিকে ইয়ানা সহ্য করতে না পেরে নেতিয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

এক বিরাট ভালোবাসায় অধ্যায় শেষে ধরনিতে প্রভাতের আগমন ঘটে। ইয়ানা পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায়। চোখ খুলতেই আহানের অবয়ব ভেসে উঠে। আহান এক দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানাকে নেত্র মেলে তাকাতে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” গুড মর্নিং মিসেস আহান চৌধুরি। ”
ইয়ানা আহানের মুখে মিসেস আহান চৌধুরি শুনে আর রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় ব্লানক্যাটের নিচে মুখ লুকিয়ে ফেলে।
আহান ইয়ানার লজ্জামিশ্রিত মুখ দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমরা আমরাইতো। কি করলে তুমি এইটা। আমার ২৭ বছরের ভার্জিনিটি তুমি এক রাতেই শেষ করে দিলে। এইটা তুমি একদম ঠিক করো নি।
ইয়ানা রেগে আহানের দিকে তাকায়। ইয়ানার তাকানো দেখে আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” এইভাবে তাকাচ্ছো কেনো? এইভাবে তাকাবে না পড়ে রাতের কার্যক্রম আবার শুরু করবো আই রিপিট আবার শুরু করবো। ”
ইয়ানা আর কথা বাড়ায় না এই অসভ্য লোকের কাজ হলো আমাকে লজ্জা দেওয়া।
ইয়ানা চাদর জড়িয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনি ব্যথায় মুখ খিচে বলে,,,,

“” আহহহ ”
আহান ইয়ানার দিকে অপরাধীর ন্যায় তাকিয়ে বলে,,,,
“” বেশি পেইন হচ্ছে। তারপর কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,
“” আমি তোমাকে এতটা কষ্ট দিতে চাই নি। প্লিজ সহ্য করে নাও। কি করবে তোমার স্বামীর ভালোবাসায় এইরকম”
এরপর আহান ইয়ানাকে আচমকা চাদরসহ জড়িয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে। ইয়ানা ও আহানের গলা জড়িয়ে ধরে।
অতি যত্নে আহান ইয়ানাকে শাওয়ারের নিচে দাড়া করাতেই ইয়ানার সমস্ত কায়া জলে উঠে। ইয়ানা ব্যাথায় আহানের শার্ট খামচে ধরে। ইয়ানার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। আহান ইয়ানার চোখের পানি দেখে বক্ষে জাপটে ধরে। এই মেয়ের কান্না ভিতরে ঝর তুলে।
এরপর শাওয়ার শেষ করে ইয়ানার হাতে একটা জামা দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যায়।
ইয়ানা জামা পড়ে এসে দেখে আহান রেডি হচ্ছে। বুঝতে পারে আহান এখন অফিসে যাবে। ইয়ানা সমস্ত সংকোচ রেখে আহানকে প্রশ্ন করে,,,,,

“” আপনি কি অফিসে যাচ্ছেন ? ”
আহান — না তবে খুব খুব গুরুত্বপূর্ন কাজে যাচ্ছি।
ইয়ানা আহানের কন্ঠ শুনে ভড়কে যায়। এই মাত্র ওইতো কত হাসি খুশি ছিলো হঠাৎ কি হলো। এই লোক দেখি গিরগিটির মিতো শুধু রং পালটায়।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। আহান ইয়ানার কাছে এসে বলে,,,,,
“” এইটা খেয়ে নাও ব্যথা কমে যাবে।”
ইয়ানা আহানের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“” শুধু পেইন কিলার খাবো আর ওইটা খাবো না “”
ইয়ানা না খাওয়া সত্তেও আহান ইয়ানাকে জোড় করে পিল আর পেইন কিলার খাইয়ে দেয়।
এরপর আহান ইয়ানার চুল মুছে দিয়ে গায়ে চাদর জরিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।
তারপর কিছু একটা মনে পড়তেই বিরক্তি নিয়ে বলে,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ২৮

“” ওহহ শিট আজ তো তোমার ভার্সিটি ছিল। আমার কারনে আজ তোমার ভার্সিটি মিস গেলো। ”
ইয়ানা — কোনো ব্যাপার না আমি একটু পড়ে চলে যেতে পারবো।
আহান — না তোমার শরিরের কন্ডিশন ভালো না। যে কোনো আমায় জ্বর আসতে পারে। তাই আজ ভার্সিটি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কাল থেকে আমি নিয়ে দিয়ে আসব।
ইয়ানার অনিচ্ছা থাকা সত্তে ও আহানের কথায় সম্মতি জানায়। বেশি কথা বলে কখন রেগে যাবে কে জানে। আহান ইয়ানের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হয়।
ইয়ানা ও কিছু সময়ের ব্যবধানে ঘুমিয়ে পোড়ে।

অনুভবে তুমি পর্ব ৩০