অনুভবে তুমি পর্ব ৩২
লিজা মনি
ইয়ানা রুমে এসে রাগে ফুসফুস করতে থাকে। ইচ্ছে করছে ঝর্না মেয়েটাকে ইচ্ছে মতো কয়েক ঘা দিতে। লজ্জা বলতে তো কিছু নেই। ভালোবাসিস সেটাকে আমি সম্মান করি কিন্তু তাই বলে আরেকজনের স্বামীর দিকে নজর দিবি।ইয়ানা রেগে বিরবির করতে করতে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
এরপর চলে যায় আহিয়ার রুমে। আহিয়ার রুমে সামনে গিয়ে ইয়ানা বলে।,,,,,
“” আহিয়া আমি আসবো? “”
আহিয়া ইয়ানার কন্ঠ পেয়ে দরজার দিকে তাকায়
এরপর মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” হুম বউমনি এসো ”
ইয়ানা আহিয়ার কাছে গিয়ে বলে,,,,
“” তুমি এখনো কার্টুন দেখো? “”
আহিয়া এক গাল হেসে বলে,,,,
“” হুম এই নিয়ে দাদুমনি বকা দেয়। আর দাদাভাই সবসময় বলতো আহিয়া তুই এখন বড় হয়েছিস পড়াশুনায় মনযোগী হ। এখনো কি বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছিস।””
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা আহিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। ইসস মেয়েটা কত মিষ্টি একদম আহানের মতো দেখতে। কেউ বলবে না তারা দুইজন কাজিন হয়। দেখলে যে কেউ বলবে তারা একি বাবা মায়ের সন্তান।যাকে সে বাবা ডাকে সে তার বড় আব্বু। আর আহান তার নিজের ভাই নয় ওর কাজিন হয়। মেয়েটা তো জানে ও না তার বাবা মা বেঁচে নেই। খুব ছোট থাকতেই ওকে রেখে চলে গেছে। যখন সত্তের মুখমুখি হবে সহ্য করতে পারবে তো। নাকি ভেঙ্গে পড়বে। নিজের দাদাভাইয়ের মতো নিজেকে না সামলিয়ে ভুল ধিকে অগ্রসর হবে।
আহিয়া ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়ানার চোখে পানি। তাই হালকা একটু ঘাবরে গিয়ে বলে,,,,,
“” একি বউমনি তুমি কান্না করছো কেনো? “”
ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে আহিয়াকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,
“” কান্না করছি না ননদিনি। সত্যি কথা বলবো আমি ও কার্টুন দেখি। একটা কথা মনে রাখবে আহিয়া মনুষ্য জীবন অনেক পরিক্ষার মধ্য দিয়ে পার হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই বলে আমাদের কখনো ভেঙ্গে পড়লে চলে না। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। তোমার জন্য তোমার দাদাভাই আছে যে সবসময় তোমাকে আগলে রাখবে। কখনো যদি কোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হও তাহলে মনে রাখবে তোমার কেউ হারায় নি সবাই তোমার সাথে আছে।”””
আহিয়া অবুঝের মতো ইয়ানাকে বলে,,,,,
“” সেটা তো আমি জানি বউমনি কিন্তু আমাকে এইসব বলছো কেনো? “”
ইয়ানা —- না এমনি বলছিলাম। আমার কথাগুলো শুধু মনে রাখবে। হয়তো জীবনে কাজে লাগতে পারে। ঠিক আছে পড়তে বসো।
আহিয়া —- ওকে মনে থাকবে।
এরপর ইয়ানা আহিয়ার রুম থেকে চলে যায়। আহিয়া ইয়ানার কথামতো পড়তে বসে বসে।
আহান নিজের রুমে বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো।আহান বার বার ফোনের শব্দে বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে। অনেক্ষন রিং হওয়ার পর ও আহানকে ফোন ধরতে না দেখে আরিফ বলে,,,,,
“” ভাই ফোনটা ধরুন। হতে পারে ভাবি ফোন দিয়েছে””
আহান মুখে “চ” শব্দ করে আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” রুম থেকে বের হ “”
আরিফ রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আহান ফোন রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ওইপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়। আহান কপাল কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“”এখন ওইতো ফোন দিতে দিতে ঘূর্নিঝর চালাচ্ছিলো এখন আবার কি হলো””
আহান দুইবার ফোন দিতেই ওইপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসে,,,,
“” আমার ফোন যখন ধরতে ইচ্ছুক না তখন আবার ফোন দিচ্ছেন কেনো?
আহান গম্ভির কন্ঠে বলে,,,,
“” আমি তো কাজে থাকতে পারি তাই না।””
ইয়ানা অভিমানী কন্ঠে বলে,,,,,
“” ওহহ সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি যখন ফোন দেই তখন আপনার কাজ থাকে। ঠিক আছে এখন থেকে আর ফোন দিবো না।
এরপর ইয়ান ফোন কেটে দিতে নেই তখন আহানের রাগী কন্ঠ ভেসে আসে,,,,,
“” খবরদার যদি ফোন রেখেছো থাপরিয়ে গাল লাল করবো বিয়াদপ মেয়ে।””
ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে আহান কপাল কুচকে নেয়।
আহান — কি হলো কথা বলছো না কেনো?
ইয়ানা — কি বলবো?
আহান — তাহলে ফোন করেছো কেনো?
ইয়ানা — আপনি খেয়েছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করতে।
ইয়ানার কথা শুনে আহান একটা মেকি হাসি দেয়।তাহলে বউ তার খবর নিচ্ছে।
আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” হুম আমার সেহজাদী আমি খেয়েছি আপনি খেয়েছেন। “”
ইয়ানা —- হুম।
ড্রয়িং রুমে বড়দের সমাবেশ বসেছে। মিসেস নাফিসা, আহিয়া, রেশব, দাদুমনি আর ঝর্না তারা কথা বলছিলো
এক পর্যায়ে ঝর্না চেচামেচি শুরু করে। চৌধুরি ভিলাই এক প্রকার হট্টগোল লেগে যায় ঝর্নার চেঁচামেচিতে।ইয়ানা এতক্ষন রুমে ছিলো বিধায় শুনতে পাই নি। রুমের সামনে এসে ঝর্নার চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে নিচে নামে। ঝর্না ইয়ানাকে দেখে ইয়ানার দিকে তেরে আসে। এরপর সামনে গিয়ে বলে,,,,,,,
“” সবকিছু তোমার জন্য হয়েছে। তোমার জন্য আহান আমার হতে পারলো না। আমি তোমার থেকে আহানকে ছিনিয়ে নিবোই। কারন ঝর্না জীবনে যা চেয়েছে তা সে আদায় করেছে।””
ইয়ানা সবকিছু শুনে দাদুমনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” দাদমনি কিছু বলবো “”
দাদুমনি — তর যা ইচ্ছে। আমরা সকাল থেকে ওকে বুঝাচ্ছি যে আহান বিয়ে করে নিয়েছে। আর সে ইয়ানাকে ভালোবাসে তুই চেষ্টা করলে ও পাবি না। শুধু শুধু আহানের রাগের স্বীকার হবি। ওর রাগ যে খুব ভয়ংকর।
ইয়ানা একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,
“” ঝর্না তুমি যেনো কি বলছিলে ওহহ তুমি যা জীবনে চেয়েছো তা পেয়েছো। কখনো কি আগুনে ঝাপ দিতে পারবে। পারবে না তুমি নিজে ঝলসে যাবে। কিন্তু পানিতে হাজার বার ঝাপ দিতে পারবে। সাতার না পারলে ও ঠেলেঠুলে তুলতে পারবে। কিন্তু আগুনে ঝাপ দেওয়া মাত্র টাটা বাইবাই। পানি যেমন ঠান্ডা আগুন তেমনি ধ্বংসাত্বক। তাই আগুন আর পানিকে এক ভেবো না। তুমি জীবনে যা চেয়েছো তাই পেয়েছো এইগুলো সপিজ মাত্র। কিন্তু এখন তুমি একজন নারীর স্বামীকে চাচ্ছো। আগুনে ঝাপ দিতে যেও না প্লিজ ঝালসে যাবে। তখন কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না।”””
ঝর্না রেগে ইয়ানাকে থাপ্পর দিতে নেয়। ইয়ানা দুই কদম পিছিয়ে বলে,,,,,
“” নো এই ভুলটা জীবনে দ্বিতীয় বার করার চেষ্টা ও করো না। সামান্য গরম পানি ফেলার কারনে তোমার হাতটাকেই পুরিয়ে দিয়েছে। যদি আমার গায়ে হাত তুলার চেষ্টা ও করো কে বলতে পারে নিজের জীবনটাই হারিয়ে ফেললে। তাই এমন ভুল পরের বার করার মতো বোকামি করো না”””
ঝর্না ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,,,,,
“” তোমরা বস্তির মেয়েরা যাস্ট দুইদিনের জন্য। তোমাদের সাথে টাইমপাস করা যায় কিন্তু সংসার করা যায় না। এই যে এত অহংকার করছো না একদিন সেটা ও শেষ হয়ে যাবে। যার জন্য এত গলা উচিয়ে কথা বলছো সেই তোমাকে টিস্যুর মতো ছুরে ফেলে দিবে।””””
দাদুমনি এইবার ভীষন রেগে যায়। ইয়ানার কান্না আসলে ও অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকিয়ে রেখেছে। সত্যি কি আহান তাকে কখনো ছুরে ফেলে দিবে। কিন্তু আহান তো ইয়ানাকে ভালোবাসে। ওনি তো বলেছেন ইয়ানা ওনার অক্সিজেন ওকে ছাড়া বাঁচবে না। আহান কখনো ইয়ানার সাথে এমন কিছু করবে না। যে যাই বলোক না কেনো তাকে কখনো আহান ঠকাবে না। হ্যা হয়তো আহান একজন হৃদয়হীন মানুষ জীবন নিয়ে প্রচুর অগাছোলো। জীবন নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। হাজারটা খুন করেছে কিন্তু দিনশেষে তো আহানকে সে ভালোবেসেছে। এই হৃদয়হীন মানুষটা তার সাথে এত অন্যায় করার পর ও তার মনের গহিনে জায়গা দিয়েছে। বাধ্য করেছে নিজের সুপ্ত মনে প্রেমের ফুল ফুটাতে। তাহলে আহান কেনো ইয়ানাকে ছেড়ে দিবে তা কখনো সম্ভব নয়।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। দাদুমনি মিসেস নাফিসার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” নাফিসা তোর মেয়েকে সামলা। এমন পাগলামি যাতে আর করতে না দেখি। শিক্ষিত হয়ে ও এমন অশিক্ষিতদের মতো ব্যবহার করছে কেনো? আর দ্বিতীয়বার যাতে ইয়নাকে এইসব না বলে। ভুলে যাস না ও চৌধুরি বাড়ির বউ। “”
মিসেস নাফিসা —- আমি কি করবো খালা। আমার মেয়েতো আহানকে ভালোবাসে। তুমি নিজেইতো বলেছিলে ঝর্না দেশে আসলে আহানের সাথে ওর বিয়ে দিবে তাহলে এখন এইসব কি দেখছি।
দাদুমনি —- বলেছিলাম কারন আমি ভেবেছিলাম আহান আর ঝর্না যেহেতু এক সাথে পড়াশুনা করেছে হয়তো তাদের মধ্যে মিল আছে। কিন্ত আহান ইয়ানাকে বিয়ে করে নিয়েছে। ভাগ্যে যা ছিলো তা হয়েছে।”””
ঝর্না রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,
“” ভাগ্য মাই ফুট। কোন দিক দিয়ে তোমার এই মেয়েকে যোগ্য মনে হচ্ছে। না আছে স্ট্যাটাস আর না আছে ব্যক্তিত্য। বস্তির মেয়ে কোথাকার। “””
—- কে বস্তির মেয়ে শুনি?
আগত্য কন্ঠস্বর শুনে সবাই ভড়কে যাই। দরজার দিকে তাকাতেই ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছতে ভুলে যায়। ভয়ে নিজের হাত দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলে।
“”” হায় আল্লাহ এ তোমার কি নিয়তি ভুল সময় ভুল জায়গায় এন্ট্রি নেওয়া কি ওনার কাজ। বুঝি না ভাই এমন পরিস্থিতিতে তুমি কিভাবে উদয় হও।”
সবাই আহানের দিকে তাকিয়ে ভয়ে তটস্ত হয়ে পড়ে। সামান্য কফি ফেলেছে বলে যে ছেলে হাত পুড়িয়ে ফেলতে পারে। সে এখন কি করবে কে জানে? ঝর্না ও ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে।
মিসেস নাফিসা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” না বাবা এমন কিছুই হয় নি। তুই গিয়ে রুমে ফ্রেশ হ।””
আহান সবার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। তারপর রুমের দিকে অগ্রসর হয়। ইয়ানার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,
“”” মিসেস ইয়ানা চৌধুরি আপনার চোখে পানি খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু কি জানেনতো এই চোখের পানিটা দেখলে কেউ হিংস্র হায়েনা হয়ে উঠে। ইচ্ছে করে সব শেষ করে দিতে। আর যার জন্য এই চোখের পানি ঝরে তাকে চিরজীবনের জন্য ওপারে পাঠাতে। “”
ইয়ানার এই হিংস্র হুংকারে সহসা সবাই কেপে উঠে।ওপারে পাঠাতে মানে কি বলতে চাইছেন ওনি।
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” কি.. কি সব বলছেন আপনি। আমার চোখে পানি কোথা থেকে আসবে। আফিস থেকে এসেছেন এখন রুমে চলুন ফ্রেশ হবেন। “”
আহান ইয়ানার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝর্নার দিকে ঘার কাত করে তাকায়।
এরপর ঝর্নার সামনে গিয়ে বলে,,,,,
“” কি বলছিলে তুমি আবার বলো। আসলে আমি কানে একটু কম শুনতে পাই। তাছাড়া বউ এর চোখের পানি দেখে মনটা অস্থির হয়ে পড়েছে। তাই তোমার বলা সব কথা ভুলে গেছি। তারাতারি বলো আমার হাতে একদম সময় নেই।””
ঝর্না আহানের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢুক গিলে বলে,,,,,
“” আমি কিছু বলে নি আহান। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি এই বস্তির মেয়ের জন্য আমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারো না'””
ইয়ানা নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। বিপদ যদি সেই ব্যক্তি নিজে ডেকে আনে তাহলে তাকে আহাম্মক ছাড়া আর কিছুই বলে না। ইয়ানা ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” প্লিজ ঝর্না চুপ হয়ে যাও। তুমি আমাকে পড়ে যা ইচ্ছে তাই বলো এখন অন্তত চুপ থাকো। “”
ঝর্না ইয়ানার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,,,,,
“” এই তুই চাপ থাক। একদম নাটক করতে আসবি না থার্ড ক্লাস মেয়ে। এই বলে সাথে সাথে নিজের আঙ্গুলে ধরে চিৎকার করে উঠে।ঝর্নার গগনবিধায়ী চিৎকারে ওর দিকে তাকাতেই আত্না কেঁপে উঠে।ঝর্নার রক্তে পুরো ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। সামনে আহান আয়েশি ভঙ্গিতে ছুরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঝর্না যেই আঙ্গুল দিয়ে ইয়ানার দিকে তাক করেছিলো সেই আঙ্গুলকে দেহ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। “””
ঝর্না আঙ্গুলে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
আহিয়া মনে মনে খুশি হলেও ঝর্নার অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে।রেশব ও ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। হ্যা মানছে তার বোনের দোষ তাই বলে আহান এমন করবে তাদের কল্পনার বাহিরে।
ইয়ানা আহানের দিকে না তাকিয়ে ঝর্নার দিকে যেতে নেয় তখন আহান ইয়ানার হাত ধরে বলে,,,,,,
,,, নো এক পা ও এগোবে না। এক পা এগোলে পা কেটে রেখে দিবো। তুমি নিজেই জানো অবাধ্যতা আমার পছন্দ নয় “”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“”হৃদয়ে কি একটু ও মায়া নেই। মানুষ এতটা নৃশ্বংস ভাবে কাউকে কিভাবে আঘাত করতে পারে। তাকিয়ে দেখুন আহান মেয়েটা কিভাবে ব্যথায় ছটফট করছে।।”
আহান রেগে ইয়ানার হাত শক্ত করে চেপে বলে,,,
“” যাস্ট সেট আপ তোমাকে বলেছি ওর হয়ে ওকালতি করতে। ওর জান খেয়ে ফেলবো আজ আমি।
আহান ঝর্নার সামনে গিয়ে বলে,,,,
“” তুমি বস্তি বলছিলে তাইতো। আচ্ছা ঝর্না তুমি এই পর্যন্ত কত জনকে নিজের দেহটা বিলিয়ে দিয়েছো বলোতো। যদি হিসাব না থাকে তাহলে হিসাব করে দেখতে পারো। আচ্ছা এই পর্যন্ত কয়টা বাচ্চা নষ্ট করেছো বলোতো? তোমার সম্পর্কে কি সবাই জানে। আস্তে আস্তে আহানের ঘারের রগ গুলো ফোলে উঠতে থাকে।
ঝর্নার কিছু রেসপন্স না পেয়ে রাগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,,
“” আনসার মি ডেম ইট। আরে বস্তি তো তুই। যে নিজের সতিত্বটুকু ও ধরে রাখতে পারিস নি। বিলিয়ে দিয়েছিস বাজারের পন্যের মতো সবার কাছে। আর সেখানে তুই একটা পবিত্র ফুলকে বস্তি বলিস।
এরপর আহান ছুরি নিয়ে ঝর্নাকে পুনরায় আঘাত করতে যাবে তখন আকস্মিক ইয়ানা আহানকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“” আল্লাহর দোহায় লাগে আপনার শান্ত হোন প্লিজ। আর হিংস্রতা দেখাবেন না আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি ঝর্নার কথায় কিছু মনে করি নি প্লজ শান্ত হোন।
আহান নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। আচমকা নিজের রাগটা যেনো নিভে যায়। আহান ইয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে।,,,,,,
“” আমাকে শান্ত করার সুন্দর পদ্ধতি বের করেছো তুমি””
ইয়ানা নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আহানের বক্ষ থেকে মাথা তুলতে নিলে আহান আরো চেপে ধরে বলে,,,,
“” নো যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো।
সবাই আহানের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।এইতো দেখলো রেগে ঘূর্নিঝর চালাচ্ছিলো এখন সব শেষ। কিন্তু কি বলছে এইসব ঝর্না সম্পর্কে। মিসেস নাফিসা ঝর্নাকে সবরকম ফ্রিডম দিয়েছেন কিন্তু ঝর্না যে এমন করে তারা জানে না। ঝর্না ব্যথায় ঙ্গান হারাবার উপক্রম। তাদের ফ্যামেলি ডক্টর মিসেস অঞ্জলিকে ফোন করা হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।
রেশব আহানের দিকে তাকিয় আহানের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টি মেলে বলে,,,,,,
“”হেই ব্রো কি বলছো ঝর্না সম্পর্কে মাথা ঠিক আছে। “””
আহান রেশবের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
“” তোমার কেনো মনে হচ্ছে আমি মিথ্যাে বলছি। নিজের বোনকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। “”
এরপর আহান ইয়ানকে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” আপনি যান আমি পড়ে যাচ্ছি “””
আহান ইয়ানার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,
“” কেনো এখানে কে আছে তোমার?
ইয়ানা আর কিছু বলে না এই লোকের সাথে কথা বাড়ানো মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। রুমে গিয়ে আহান ফ্রেশ হতে চলে যায়। তার এখন ফ্রেশ হওয়ার প্রয়োজন। আহান ওয়াশরুমে যেতেই ইয়ানা বিছানায় বসে ভাবতে থাকে।
নিজের জীবন নিয়ে নিজের ওই এখন গল্পের মতো লাগে।
যেখানে কোনো ছেলে তার সাথে গলা উচু করে কথা বলতে পারতো না সেখানে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এখন একটা ছেলের ধমকে সে উঠছে আর বসছে। কোথায় হারিয়ে গেলো সেই সাহকিতা। কেনো ওনাকে আঘাত করতে পারি না ভালোবাসি তাই। কি করে পারলাম এমন একটা হৃদয়হীন মানুষের বেরাজালে আটকে পড়তে। ইয়ানা তো এমন ছিলো না সে অন্যায় দেখলে সবসময় প্রতিবাদ করতো। তাহলে আজ এত অন্যায় দেখেও কিভাবে চুপ করে আছি। মানুষ যে বলে ভালোবাসায় অন্ধ হলে নাকি জীবন পাল্টে যায়। তাহলে আমি ওকি ভালোবাসায় বদলে গেলাম।
আহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ইয়ানা থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে। আহান ইয়ানার সামনে গিয়ে বলে,,,,
“”” এই যে ভাবনা জগতের রানী। আপনি আপনার ভাবনা থেকে বের হতে পারেন।””
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“আপনি বসুন আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি”
আহান — প্রয়োজন নেই আমি খেয়ে এসেছি। আগে বলো তুমি খেয়েছো কি না।
ইয়ানা —- হুম। দাদুমনি জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। বলেছে আপনার নাকি আসতে দেরি হবে।
আহান — গুড গার্ল। এখন থেকে খেয়ে নিবে। আমার জন্য অপেক্ষা করতে গেলে অনেক রাত না খেয়ে থাকতে হবে। আর এইটা আমি কখনো হতে দিব না। তাই সবার সাথে খেয়ে নিবে।
ইয়ায়ানা — হুম।
আহান ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পারি জমায়।
ইয়ানা ও কিছু বলে নি। আহান থেকে ও নিজেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে নি। কি দরকার শুধু শুধু অশান্তি করার। ইয়ানা চাইলেই আহান ছেড়ে দিবে না সেটা সে ভালোভাবে জানে।
গভীর রাত। চৌধুরির বাড়ির চারপাশে পিন পিন নিরবতা।
রাতের এই আধারে কারোর গাড়ি এসে থামলো চৌধুরি ভিলার সামনে। গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে তিন জন যুবক। একজনের মুখ আর হাত পা বাধা আর বাকি দুইজন আহাত ব্যক্তিটিকে ধরে রেখেছে। লোকগুলো গাড়ি থেকে নামতেই তাদের সামনে এক অবয়ব এসে দাঁড়ায়। অবয়বটা তাদের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“”” রাতের এর জোৎসনার আধারে কাউকে আপ্যায়ন করার মজাই আলাদা। তা আবার অগ্নি চৌধুরির স্টাইলে””
আহানের কথা শুনে আরিফ বলে,,,,,
“” স্যার এইটা হলো সেই বদমাইশ ফুচকাওয়ালা যে আহিয়াকে বিরক্ত করেছিলো। শুনেছি ফুচকা বিক্রির নাম করে অনেক মেয়েকে উত্যক্ত করে।”””
আহান—— ওর বায়োডাটা কি তা জানতে চাই নি। কিন্তু ও অগ্নি চৌধুরির বোনের দিকে নজর দিয়েছে। ফুচকা দিতে গিয়ে ওকে বাজেভাবে টাচ করিস। তুই হয়তো জানিস না ও আমার বোন আমার হার্টবির্ট। ওর নিরাপত্তার জন্য এমন অনেক বডিগার্ড লাগিয়ে রেখেছি। তুই লালসার দৃষ্টি নিয়ে তাকাবি আর অগ্নি চৌধুরি বসে বসে আঙ্গুল চুষবে। কি করব বল বউ মারামারি পছন্দ করে না তাই তোদের মারতে ও ইচ্ছে করে না। কিন্তু তোদের মতো জানোয়ারদের না মেরে ও শান্তি পাই না।
আহান লোকটাকে একটা গাছের সাথে বেধে ফেলে। লোকটার হাত পা বাধা তাই মুখ দিয়ে শুধু উম উম শব্দ করছে।
আহান লোকটার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” এইরকমভবে উম উম করছিস কেনো? ছেহহ কেমন বিশ্রি লাগে। আমি কি তোকে রেপ করছি নাকি আশ্চর্য এইভাবে উম উম করছিস। চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো বসে থাকবি। একদম নড়াচরা করবি না “””
আহান লোকটার সামনে গিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে।
এরপর শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,,,
“”” কোন হাত দিয়ে যেনো আমার বোনকে টাচ করেছিলি। ওহহহ চোখ দিয়ে ওতো তাকিয়েছিলি। ভাজ্ঞিস ও ছোট মানুষ কিছু বুঝতে পারে নি । নাহলে কতটা খারাপ লাগতো ওর বলতো?
আহান লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দেয়। এরপর আরিফের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে। আরিফ আহানের ইশারা বুঝতে পেরে গড়ি থেকে একটা চাকু আর এতক্ষন গরম হওয়া একটা লোহার খন্ড এনে দেয়। আহান এইগুলো হাতে নিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” ডান হাত দিয়ে তুই ওকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলি তাইতো? “”
লোকটার মুখ বাধার কারনে চিৎকার করতে পারছে না। শুধু মাথা এদিক সেদিক নাড়াচ্ছে। আহানকে থামতে বলছে কিন্ত আহান চলে গেছে নিজের হিংস্র রাজ্যে।
আহান এইবার ব্যক্তিটার হাত সযত্নে নিজের কাছে আনে। এরপর চাকু দিয়ে এক কুপ দিয়ে দেহ থেকে হাত আলাদা করে ফেলে। ছেলেটা চিৎকার দিতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে নেয় তখন একজন বডিগার্ড এদে সাথে সাথে ধরে ফেলে।
আহান লোকটার এই অবস্থা দেখে বলে,,,,,,
“” এইটুকুতে এই অবস্থা হলে হবে হুম। “””
এরপর আহান হাতে গরম শিকটা নিয়ে নেয়। লোকটা চোখ দিয়ে ইশারা করছে যাতে এমনটা না করে। আহান লোকটার চোখ দুইটার দিকে তাকিয়ে গরম শিক ডুকিয়ে দেয়। তারপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,
“” এই চোখ দিয়ে লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলি তাই না। “”
অনুভবে তুমি পর্ব ৩১
ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বুক বরাবর শুট করে। ঠিক তখনি কারোর চিৎকারের শব্দ কানে এসে বারি খায়। আহান সাথে সাথে নিজের নেত্রযুগল বন্ধ করে নেয়। এই আওয়াজটা তার খুব পরিচিত।
পিছন ফিরে সে চিৎকার করা ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। আহান তার দিকে তাকাতেই দেখতে পায়………