অনুভবে তুমি পর্ব ৩৪

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৪
লিজা মনি

আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে নিজের দৃ্ষ্টি ফিরিয়ে নেয়। তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,
“” আজ থেকে সে যাতে আর রান্না না করে । যদি রান্না করার ইচ্ছে হয় তাহলে রান্না করে আমাকে খাওয়াবে। আর আমি যদি বাসায় না থাকি তাহলে ফেলে দিবে তারপর ও কারোর জন্য রান্না করবে না। “””
ইয়ানা ঠিক বুঝতে পেরেছে রেশব একটু প্রশংসা করেছে বলে এইসব বলছে ওকে । আজব লোক একটা। আহান এরপর আড়চোখে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানাকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অন্যদিকে ফিরে হালকা ধমক দিয়ে বলে,,,,,,

“” যাকে বলেছি সে নিষ্চয় মাটির নিচে কোনো গুপ্তধন লুকিয়ে রাখেনি। এইভাবে নিচে তাকিয়ে থাকার মানে হয় না। আমার কথাটা কি শুনতে পেয়েছে।
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” জি যাকে বলেছেন তার কান ঠিক আপনার মনের মতো পরিষ্কার। তার দিকে তাকিয়ে কথা না বললে ও সে বুঝতে পেরেছে। “”
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,
“” মানে? “”
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” কিছুনা। বলেছি যে সে শুনেছে “”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহান ইয়ানার দিকে তাকায় দেখে কালো কুর্তি পরেছে। ফরসা রঙ্গের সাথে কালো কুর্তির মন্দ লাগছে না। যেনো ইয়ানার জন্য জামাটা তৈরি করা হয়েছে। আহান আড়ালে একটা হাসি দিয়ে সেই যায়গা থেকে প্রস্থান করে।
ইয়ানা আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
আর সবাই আহানের কথার মানে বুঝার প্র‍্য়াস চালাচ্ছে। কি থেকে কি বলে গেলো? আর এই ছেলে এইভাবে কথা বলছে কেনো?

দাদুমনি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” তোদের মধ্যে কি কোনো ঝগরা হয়েছে। এইভাবে কথা বলছিস কেনো তোরা। “”
ইয়ানা দাদুমনির দিকে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” না দাদুমনি তেমন কিছু হয় নি। “”
ইয়ানার ও খারাপ লেগেছে আহানের ব্যবহার। ইয়ানা আজ রান্না করেছে একবার প্রসংশা ও করলো না। আহানতো খেয়েছে সবাই প্রসংশা করেছে উনি করলে কি ওনার আভিজাত্য চলে যেত। হ্যা মানছি ফার্স্ট যেদিন রান্না করেছিলাম ওইদিন আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক ছিলো না তাই হইতো করে নি। কিন্তু আজ তো সব ঠিক ছিলো। ওনার পছন্দ করে এনে দেওয়া জামা পড়েছি
একবার তাকালো ওনা তার দিকে। আস্তে আস্তে সব ইন্টারেস্ট উঠে যাচ্ছে। আহানের এই এরিয়ে চলা রুপ দেখে ইয়ানার চোখে পানি চলে আসে। কেউ দেখে ফেলার আগে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে ফেলে। আসতে আসতে ড্রয়িংরুম খালি হতে থাকে। রেশব ও আহানের ভয়ে ইয়ানাকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।
সবাই চলে গেলে ইয়ানা কাজের খালাকে ডাক দেয়।

খালা — কি হইছে মা।
ইয়ানা — বসুন খালা একসাথে খাবার খেয়ে নেয়।
খালা — না না মা তুমি খাও। আমরা একটু পরে খাইমু।
ইয়ানা — কেনো খালা আমাকে কি আপনার পছন্দ নয়?
খালা — ছিহহ ছিহহ মা এইডা কি কও। তুমি তো খুব ভালো একটা মাইয়া। তোমারে অপছন্দ করমু কেন।
ইয়ানা — তাহলে চুপচাপ বসে পড়ুন। আর সার্ভেন্ট কাকু আপনারা ও আসুন।
সার্ভেন্ট — তুমি খাও মা। আমাদের জন্য এই আলিশান টেবিল না। আমরা পরে খেয়ে নিব।
ইয়ানা তাদের কথা শুনে তাদের সামনে দাড়ায়। এরপর কমরে হাত রেখে ভাব নিয়ে বলে,,,,
“” আমি চৌধুরি ভিলার মি. ঘোমরা থুক্কু আহান চৌধুরির একমাত্র বউ মিসেস ইয়ানা চৌধুরি তোমাদের কে আদেশ করছি এখনি আমার সাথে খেতে বসবে।””

এরপর ইয়ানা সবার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“” আচ্ছা আমার আদেশ দেওয়া কি হয়েছে। নাকি আর ও ভাব নিয়ে দেয়।””
ইয়ানার কান্ড দেখে সবাই হেসে দেয়। তারা ভেবে পায় না আহানের কপালে এত মিষ্টি প্রানবন্ত একটা মেয়ে পড়েছে। একই মুদ্রা কিন্তু এপিঠ ওপিঠ।
এরপর ইয়ানা সবাইকে নিয়ে খাওয়া শেষ করে চলে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ইয়ানা দরজার সামনে যেতেই ড্রাইবার বলে,,,,,
“” ম্যাম উঠুন আমি আপনাকে পৌছে দিচ্ছি।””
ইয়ানা ড্রাইবারের সামনে গিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” না চাচা আমাকে পৌছে দিতে হবে না আমি রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারব।””
ড্রাইবার ভয়ে ঢুক গিলে বলে,,,,

“” না না ম্যাম আপনি একা গেলে স্যার আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবে। আমার ঘরে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। চাকরি চলে গেলে তারা না খেয়ে মরে যাবে।””
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” আমাকে আপনার কোন স্যার বলেছে পৌছে দিতে? বাবা বলেছে?
ড্রাইবার —- না ম্যাম ছোট স্যার বলছে। আপনাকে যাতে সময়মতো পৌছে দেয়। এরপর আবার সময়মত নিয়ে আসি””

ইয়ানা আহানের কথা মনে পড়তেই মনটা বিষিয়ে যায়। ওনি নিয়ে দিয়ে আসলে এমন কি হত। এখন আসছে নেকামো করতে। রাতে এত বড় কান্ড ঘটিয়েছে কোথায় আমি রাগ দেখাব। কিন্ত সেই জায়গায় ওনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন। ড্রাইভারকে বলে গিয়ে এখন আলগা পিড়িত দেখাতে আসছে হুহহ।
এরপর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“” কি চাচা কখন থেকে ম্যাম ম্যাম করছেন। আমাকে দেখে কি কোনো দিক দিয়ে ম্যামের মতো লাগে।আমি আপনার মেয়ের বয়সী। আমাকে ইয়ানা বলে ডাকতে পাড়েন।

ড্রাইবার —- না মা এইডা ডাকা যাইবো না। তাইলে সবাই রাগ করবে।
ইয়ানা —- ওমম তাহলে মামুনি বলে ডাকবেন।
ড্রাইবার হাসি দিয়ে বলে,,,,
“”” আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন গাড়িতে উঠ।।”””
ইয়ানা —- না চাচা আমি যাব না। দরকার নেই ওনার দয়ার।
ড্রাইবার —– মামুনি তুমি যদি এহন না যাও তাহলে স্যার আমাকে চাকরি থেকে বের কইরা দিবে।
ইয়ানা মনে মনে ভাবে,,,,,
ইয়ানা না গেলে যদি সত্যি সত্তি খারাপ কিছু করে। এই মাফিয়াকে তো আর বিশ্বাস নেই। এরপর ইয়ানা অনেক কিছু ভেবে গড়িতে উঠে বসে।উদ্দেশ্য ভার্সিটিতে যাওয়া।

আহান, রায়ান আর ইউভি একটা ফাইভ স্টার রেস্টোরেন্টে অনেক্ষন ধরে বসে আছে। আহান এইবার বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,
“” আর এক মিনিট ও যদি চুপ থাকিস তাহলে আই সয়ার ইউভি তোকে আমি আমার জঙ্গলের ভিতর যে টর্চার সেল আছে ওইখানে রেখে আসব।””
ইউভি আহানের কথা শুনে সাহসা বলে,,,,,
“” খবরদার খেতে বসেছি ওই জঘন্য টর্চার সেলের নাম নিবি না। দেখলেই বমি আসে ওয়াক। “”
আহান ইউভির নাক মুখ ছিটকানো দেখে সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,
“” তোর বমি আসে কেনো? কোনো খুশির খবর আছে নাকি। কিন্তু তুইত মেইল। তাহলে কিভাবে কি? “”
ইউভি আহানের কথা শুনে থমথমে খেয়ে যায়। রায়ান মুখ চেপে নিজের হাসি বন্ধ করার প্র‍য়াস চালাচ্ছে। জোড়ে হাসি দিলে নির্ঘাত ইউভির মাইর খেতে হবে।
ইউভি রায়ানের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে।,,,,

” খুব হাসি পাচ্ছে তাই না। হাসা বন্ধ কর ইডিয়েট। “”
রায়ান হাসি থমিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
“” সত্যি কি এমন কোনো ঘটনা আছে ইউভি। কয় মাস চলছে তোর প্লিজ বল। আচ্ছা বাচ্চাটার বাবা থুক্কু মা কে? “”
ইউভি রায়ানের দিকে কটমট চোখে তাকায়। এরপর ক্রুদ্ধ হয়ে বলে,,,,,,,
“” হ্যা, খুশির খবর অবশ্যয় দিবো। তবে প্রেগনেন্সি আমার নয় আমার বউয়ের হবে ইডিয়েট। তার জন্য আগে আমার বউ প্রয়োজন। তার জন্য তোদের ডেকেছি? “”””
আহান ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” এত হিয়ালি না করে তাড়াতাড়ি বল। রুয়ানার কথা বলবি তাইতো? “”
ইউভি হাসি দিয়ে বলে,,,

“” এইত বুঝেছিস। কিন্তু কি করব আমি? রুয়ানা আর আমার বয়সের ফারাক অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত নিজের অনুভবের সাথে লড়াই করছি। কিন্তু যখন ওকে আমি আমার সামনে দেখি তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রনহীন লাগে। ওর উপস্থিতি বুকের ভিতর ঘূর্নিঝর বয়ে যায়। সামলাতে পারছি না নিজেকে। খাপছাড়া লাগছে নিজের অস্তিত্বকে।
আহান ভাবলেশহীনভাবে বলে,,,,,,
“” কি করবি আবার বিয়ে করে ফেলবি। যদি রাজি না হয় তাহলে তোলে এনে বিয়ে করে নিজের বন্ধিনী করে রাখবি। এতে এইভাবে ভাবার কি আছে। “””
ইউভির ইচ্ছে করছে দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকাতে। নিজে তো একটা সাইকো অন্যদের পরামর্শ ও দিবে সাইকোদের মতো। ভালো কথা এর মুখ দিয়ে বের হওয়া মানে সূর্যে গিয়ে বসবাস করা। ইউভি নিজেকে সংযত করে বলে,,,,,
“” দেখ ভাই আমি সিরিয়াস মুডে আছি””

আহান —- আমি কোন সময় নাচার মুডে আছি। চিন্তা করিস না সঠিক সময় আসলে সব মেনেজ করে নিব । তুই ও রুয়ানাকে নিজের করে পাবি।
ইউভি খুশিতে আহানের হাতে চুমা দিয়ে বলে,,,,,,
“” ধন্যবাদ দোস্ত সাহায্য করার জন্য। “”
ইউভি জানে আহান যা বলে সেটা যেভাবেই হোক করে দিবে।
আহান বিরক্তি নিয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,
“” ছেহহ কি সব করছিস তুই। তুই কি মেয়ে এইভাবে এসে চুমু খাচ্ছিস। মেয়েদের মতো স্বভাব হয়েছে কবে তোর। আগে তো রায়ান ছিলো সাথে তুই ও যুক্ত হয়েছিস ,,

ইউভি কিছু বলার জন্য রায়ানের দিকে তাকাতেই দেখে রায়ান গালে হাত দিয়ে অসহায়ের মত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অন্যদিকে। ইউভি রায়ানের দৃষ্টি অনুসরন করে তাকায় কিন্তু সেখানে কিছু নেই। ইউভি রায়ানের পায়ে লাথি দিতেই রায়ান ধরফরিয়ে উঠে। ইউভি রায়ানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,
“” কোন দুনিয়ায় পড়ে আছিস তুই। আমি যে এত সময় ধরে বক বক করছি কিছু শুনেছিস। ”
ইউভির ধমকে নিজের অবস্থান বুঝবে পারে রায়ান সে এতক্ষন সুমুর কথা ভাবছিলো। ইদানিং মেয়েটা মন মস্তিষ্ক জুড়ে আধিপত্য স্থাপন করে নিয়েছে।
রায়ান ইউভির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে,,,,

“” এইভাবে ঘোড়ার মত চেচাচ্ছিস কেনো?
ইউভি —- মনে রং লেগেছে তাই চেচাচ্ছি। এতক্ষন আমি এত বকবক করে যাচ্ছি কিন্তু তর কোনো
আ্যাটনশন নেই। আ্যাটেনশন তো দুর তর মুখ দিয়ে হু হা শব্দ ও বের হচ্ছে না।বোবার মত বসে থাকার জন্য তোদের ডেকেছি আমি।
“” সব শুনেছি ভাই। তুই যে সাগরে ডুবেছিস আমি ও সেই সাগরেই ডুবে আছি। আমারটার কি হবে? আহান আমাকে কিছু টিপস দে ভাই। “”
আহান ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,,,,

“” আমি কি বিয়ের ঘটক। আমি কি করব এখানে? তোরা আমার পিছনে লেগেছিস কেনো? “”
রায়ান —- তুই বিয়ের ঘটক না। কিন্তু তুই আমাদের ভাইরা ভাই এইটা ভুলে যাস না।
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,
“” What the.. কি বলছিস এইসব?
রায়ান —- কি ভুল বললাম তুই ইয়ানার হাজবেন্ড। আর আমি আর ইউভি সুমু আর রুয়ানার ভবিষ্যত হাজবেন্ড। সো সম্পর্কে তুই আমাদের ভাইরাভাই।
আহান রায়ানের কথার পরবর্তীতে বলে,,,,,,
“”” মি,, শেখ কাল দেশে আসছে। ওর সাথে আমার অনেক দিনের হিসাব বাকি। সাথে রয়েছে ওনার স্ত্রী লিনিয়া শেখ। আমার সাতাশ বছরের হিসাব তিলে তিলে নিব তাদের থেকে।”””
আস্তে আস্তে আহানের অবয়ব পাল্টাতে থাকে। রাগে চোখ দুটি প্রচুর লাল হয়ে যায়। রায়ান আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

“” তাহলে তুই এতক্ষন মোবাইলে এইটা দেখেছিস। কি করবি তুই তাদের সাথে। দেখ আহান এমন কিছু করিস না।
আহান সামনের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” কিছু করব না। আজ পর্যন্ত যারা অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসার স্বীকার হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুন ভালোবাসা দিব ওদের আমি।
ইউভি আর রায়ানের কথার মানে বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যায়। তারা বুঝতে পেরেছে আর ও একটা ভিবৎস মৃত্যুর সম্মুখীন হতে চলেছে।

ইয়ানা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। ভিবানে দাদুমনিকে দেখে তার পাসে গিয়ে বসে। দাদুমনি ইয়ানার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে বলে,,,,
“” শরীর খারাপ লাগছে বেশি? এক কাজ কর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইয়ানা সম্মতি জানিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে গিয়ে একটা হট শাওয়ার নেই। আবহাওয়া আজ প্রচুর ঠান্ডা।
শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুতেই শান্তি লাগছে না। অনুভুতি এমন একটা জিনিস যা মানবকুলকে নিজের দিকে গ্রাস করে নেয়। অনুভতির প্ররোচনায় পড়ে মানুষ এমন কাজ করে বসে যা তার নিয়ন্ত্রনহীনের বাহিরে। আহানের সাথে সারাদিনে একবার ও দৃষ্টি বিনিময় হয় নি শুনতে পায় নি তার কন্ঠস্বর। খুব মনে পরছে নিজের বাবা মায়ের কথা। মা নামক ব্যক্তিটির কোলে কতদিন ধরে মাথা রাখা হয় না। এত বিলাসিতা ও হৃদয়কে প্রশান্তি করে না যতটা বাবা মায়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলোর মধ্যে করে। এইভাবে ইয়ানা বিষন্যতা নিয়ে সময় কাটায়। এরপর মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে মনটা হালকা করে নেয়।
গোধুলিকে বিদায় জানিয়ে তিমিরের আবির্ভাব ঘটে। ইয়ানা দাদুমনির রুমের দিকে অগ্রসর হয়। দাদুমনি ইয়ানকে দেখে প্রশ্ন করে,,,,,,

“” তুই এখানে? “”
“” হুম আজ আমি তোমার সাথে ঘুমাব। “”
দাদুমনি হেসে বলে,,,,
“” জামাইকে রেখে এই বুড়ির সাথে ঘুমাতে এসেছিস কেনো? এখানে ঘুমালে আহান রাগ করবে। একটু পর ও অফিস থেকে এসে পড়বে। তোকে রুমে না দেখতে পেলে রেগে যাবে। রাতের বেলা শুধু শুধু ছেলেটার মাথা গরম করিস না। “””
ইয়ানা মন খারাপ করে বলে,,,,,,
“” আমি একটু থাকি না দাদি। ভালো লাগছে না। “”
ইয়ানার মন খারাপ দেখে দাদুমনি ও কিছু বলে না। থাক না মেয়েটা সমস্যা কি?

রাতের আধারে এক বিলাসবহুল গাড়ি এসে চৌধুরি ভিলায় থামে। আহান নিজের হাতে থাকা ডুপ্লেক্স চাবি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। পুরো ড্রয়িংরুমে পিন পিন নিরিবতা।
আহান নিজের রুমে ডুকে চারদিকে কিছু একটা খুজতে থাকে। আগত্য জিনিসটা কে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে নেয়। মনটা এমনি ছটফট করছে এক নজর দেখার জন্য। মেয়েটা বারান্দায় যায় নি তো? এই ঠান্ডার মধ্যে যদি বারান্দায় যায় তাহলে ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিবে। আহান ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে যায়। হঠাৎ মনের মধ্যে একটা ভয় জেকে বসে। মেয়েটা গেলো কোথায় এত রাতে? আহান রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। সামনে পেলে থাপরিয়ে লাল করবে বিয়াদপ মেয়ে। আহান কিছু একটা চিন্তা করে দাদুমনির রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রকমে ডুকে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এমনি মেয়েটাকে নিয়ে সারাদিন চিন্তিত থাকতে হয়। চব্বিশ ঘন্টা নজরে রাখতে হয়। শত্রুরা সুজোগ বুঝে আছে কখন তীর ছুরবে। আহান রুম থেকে রেগে বেরিয়ে আসলে ও ইয়ানার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। ঠোঁট উল্টিয়ে দাদুমনির শরীরে এক পা উঠিয়ে ঘুমিয়ে আছে। লম্বা চুল গুলো খাটের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দোল খাচ্ছে। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বির বির করে বলে,,,,,

“” তোমার এই ঘুমন্ত অবয়ব তোমায় বাঁচিয়ে দিয়েছে আমার অনুভবের সেহজাদী। নয়তো আজ তোমার সাথে কি হতো তুমি নিজে ও জানো না। এই মায়াবী মুখশ্রী দিয়ে তুমি আমাকে পাগল করে রেখেছো। কিন্ত তুমি দাদুমনির রুমে কেনো এসে ঘুমিয়েছো? তুমি তো জানো আমি আসব। তার জন্য একটু শাস্তি পেতে হবে।
আহান এইসব ভেবে ইয়ানাকে পাজা কোলে উঠিয়ে নেয়। এরপর কোলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দেই। ইয়ানার শরীরে হালকা পানি পড়তেই ধরফরিয়ে উঠে। চিৎকার করতে যাবে তখন আহান ইয়ানার মুখ চেপে ধমক দিয়ে বলে,,,,,

“” চুপ। এত চিৎকার কিভাবে দিতে পারো তুমি। এইটা দাদুমনির রুমে ঘুমানোর জন্য ছোট্ট একটা শাস্তি। আশা করি এমন ভুল আর রিপিট করবে না। “”””
ইয়ানা আহানকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কথা বলবে না এই হৃদয়হীন লোকের সাথে। অফিসে গেলেই তার কথা ভুলে যায়। বাড়িতে যে একটা মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করে এটা ওনি কি বুঝে না। অফিসে গেলে একটা ফোন দেওয়ার ও প্র‍য়োজন মনে করে না। অফিসে এত এত সুন্দরি মেয়ে থাকলে বউয়ের কথা মনে থাকে নাকি।
আহান ইয়ানার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে। নিজের চেষ্টায় সফল হয়ে ঠোঁট কামরে হাসি সংবরন করে। এখন হাসি দেখলে আরও অভিমান করবে। যেটা আহান এখন চাইছে না। অফিসের কিছু কাজ আছে কমপ্লিট করতে হবে। আহান ইয়ানাকে ওয়াশরুমে রেখে চলে আসে। ইয়ানা রেগে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। এতক্ষন কান্না পেলেও এখন রাগ লাগছে। আহানের এড়িয়ে চলাটা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। ইয়ানা রেগে শব্দ করে ওয়াশরুমের দরজা লাগায়। আহান দেখে ও না দেখার মতো করে নিজের কাজে মনযোগ দেয়। ইয়ানা এইবার বিছানায় বসে রেগে ফুসতে থাকে,,,,,,

আহান ইয়ানার অবস্থা দেখে যথাযম্ভব নিজের হাসি আটকিয়ে রাখার প্র‍য়াস চালাচ্ছে। এরপর ল্যাপটপ এ দৃষ্টি রেখে বলে,,,,,,,,
“” আতা গাছের তোতা পাখি ডালিম গাছের মৌ আগে জানলে বিয়ে করতাম না এমন ঘার ত্যারা বউ। “”
ইয়ানা আহানের কথ শুনে রেগে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” নোটন নোটন পায়রা গুলো ঝোটন বেধেছে। আমাকে বিয়ে করতে আপনাকে কে বলেছে। “”
আহান —- কেউ না জানোক তুমি তো জানো তুমি আমার।
ইয়ানা — সবাই জানে আমি কারোর না। আমি কোনো হৃদয়হীন মানুষের বউ হতে চাই না।
ইয়ানা বলতে বলতে রাগে কান্না করে দেয়।আহান ইয়ানার কান্না দেখে বুকটা ধুক করে উঠে করে। এই মেয়ের কান্না যে একটু ও সহ্য হয় না। আহান দ্রুত ইয়ানাকে এসে ঝাপটে ধরে। ইয়ানার আহানের স্পর্শ পেয়ে আর ও জোরে কাঁদতে থাকে। আহান ইয়ানকে বলে,,,,,,

“”প্লিজ ইয়ানা কান্না থামাও। কান্না করলে তোমায় একদম বিশ্রি লাগে”””
ইয়ানা ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। সারাদিনের অভিমান আর রাগ একসাথে চোখের পানি দিয়ে বিসর্জন দিচ্ছে। আহান ইয়ানার মাথায় ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে,,,,
“” আমার উপর অভিমান করে লাভ নেই বউ। আমি কারোর অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না। কিন্তু ঘুরে ফিরে তোমার আমাতেই বসবাস। যতদিন বেঁচে আছি তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা করবো আমি ও দেখবো তোমাকে পাওয়ার শেষটা কোথায়।”””
ইয়ানা কান্না মিশ্রিত ভাঙ্গা কন্ঠে বলে,,,,,,

“” আপনি আমাকে একটুকুও ভালোবাসেন না আহান। নয়তো সারাদিনে একবার ও খুজ খবর নেন না কেনো”””
আহান ইয়নার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,
“” যখন তোমার পুরো অস্তিত্ব আমার দৃষ্টির ভিতরে থাকে তখন আলাদা করে খবর নেওয়ার কি আছে। আর যদি ভালোবাসার কথা বলো তাহলে তোমাকে দেখার পর আমার হৃদস্পন্দন থমকে গিয়েছিলো এইটা ও কি তবে মিথ্যা ছিলো । তথাকথিত ভালোবাসায় আমি বিশ্বাসী নয়, তবুও তোমার খুশীর জন্য আমি বলেছি। তবে এইটা জেনে রাখো আমি তোমার জন্য ভীষন ভাবে আসক্ত। “”

আহান ইয়ানার দিকে তকিয়ে দেখে এখন ও চোখের পানি ফেলছে। আহান ভেবে পায় না এই মেয়ের চোখে এত পানি আসছে কোথা থেকে। সহাসমুদ্রের সব পানি কি আল্লাহ ঢেলে দিয়েছেন।
এরপর আহান ইয়ানার দিকে তকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৩

“” আর এক ফোটা চোখের পানি যদি দেখি তাহলে এখন তোমার শরীরে আমার দেওয়া আঘাত থাকবে। আর এই আঘাত দিব আমার স্টাইলে। আশা করি বুঝতে পেরেছো?”””
ইয়ানা আহানের কথা শুনা মাত্র ওই নিজের হিচকি বন্ধ করে নেয়। এই লোককে নিয়ে বিশ্বাস নেয়।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে…..

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৫